> অত্যাচার পর্ব ১ - Bangla Sad Story
-->

অত্যাচার পর্ব ১ - Bangla Sad Story


"বাবা সন্ধ্যা হয়ে এলো অথচ আপু তো এখনো ফেরেনি।
কল রিসিভ করতেই ছোট মেয়ে ঝুমুরের উৎকণ্ঠিত কথাগুলো শুনতে পেলো জাহিদ সাহেব।
" ফেরেনি মানে? কোথায় গেছে ঝিনুক?
" সকালে তো ভার্সিটির জন্য বেড়োলো। বলেছিলো আজ তাড়াতাড়িই ফিরে আসবে। কিছু প্রেজেন্টেশন জমা দিয়েই চলে আসবে। অথচ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো আপু তো এখনও এলো না বাবা।
" ওকে কল করেছিলি?
" করেছি।অনেকবার করেছি। ফোন সুইচডঅফ বলছে।
" ওর ফ্রেন্ডসদের ফোন করে জিজ্ঞেস কর তো।
" করেছি বাবা। আপুর ফ্রেন্ডসরা বললো আপু প্রেজেন্টেশন জমা দিয়েই বেরিয়ে গেছে। আপুর যাদেরকে পড়ায় ওদের ওখানেও কল দিয়েছিলাম।আপু কোনো টিউশনিতেই যায়নি। আমার খুব ভয় লাগছে বাবা। আম্মুও কান্নাকাটি করছে। আপু কোনো আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও নেই। আপু তো কখনওই এমন করেনা। না বলে কোথাও যায়না।আজ কি হলো বলো তো?
" এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? হয়তো কোথাও গেছে আটকে পড়েছে কোনো কারনে। দেখবি ঠিক চলে আসবে।তোর আম্মুকে কান্নাকাটি করতে নিষেধ কর।আমি আসছি বাসায়।
জাহিদ সাহেব একটা হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক। দুই মেয়ে আর ওয়াইফকে নিয়েই তার সংসার।বড় মেয়ে ঝিনুক এবার একটা পাবলিক ভার্সিটিতে অনার্স দ্বিতীয়বর্ষে পড়ে আর ছোট মেয়ে ঝুমুর পড়ে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। স্কুল ছুটির পর দু একটা টিউশনি করেন তিনি। দু মেয়েও টিউশনি করে নিজেদের খরচ চালিয়ে নিচ্ছে। যাতে বাবার ওপর প্রেসারটা কম পড়ে। এছাড়াও দুইতলা বাড়ির নীচতলাটা ভাড়া দিয়ে রেখেছে।এভাবেই চলে যাচ্ছে। বিলাসিতা যেমন নেই তেমনি অভাবও নেই। মোট কথা মধ্যবিত্ত একটা পরিবার।
জাহিদ সাহেব আজও স্কুল শেষে টিউশনিতে এসেছিলেন। টিউশনি শেষ করে বের হতেই ছোট মেয়ের কল পেলেন। ঝুমুরকে চিন্তা না করতে বললেও তার নিজেরই ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। ঝিনুক কোথায় যেতে পারে? এখনো বাড়ি ফিরলো না কেন ও?
বাসায় ফিরেই দেখেন ঝুমুর চিন্তিতমুখে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঝুমুরকে নিয়ে ওপরে চলে এলেন তিনি। ঝিনুকের মা তখনও গুনগুন করে কাদছিলো। ওনাকে দেখে তার কান্না আরও বেড়ে গেলো।
" কি আশ্চর্য! তুমি কাঁদছো কেনো?
" মেয়েটা এখনো ফিরলো না। কখনও তো এমন করে না। কোথাও গেলে আমাকে বলেই তারপর যায়। আর আজ তো বলে গেলো তাড়াতাড়ি ফিরবে। একটা কলও করলো না।ফোনটাও বন্ধ। কোথায় গেলো আমার মেয়েটা? ওর কোনো বিপদ হলো না তো?
" কি অলক্ষুণে কথা বলছো? এসব ভাবছো কেনো। দেখবে একটু পর ঠিকই চলে আসবে ও।হয়তো ফোনের চার্জ শেষ।তাই কল দিতে পারছে না।
ঝুমুর আরেকবার কল দে তো ওকে।দেখতো এবার কল যায় কিনা?
বাইরে প্রকাশ না করলেও জাহিদ সাহেবেরও প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে। বিপদের ভয়টা তিনিও পাচ্ছেন। এখন যা দিনকাল পড়েছে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। ওনি কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
" আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন কেনো? কি চান আপনারা?
প্লিজ ভাইয়া আমাকে যেতে দিন। আমার বাসায় সবাই চিন্তা করবে। প্লিজ যেতে দিন।
" অবশ্যই যাবেন ম্যাডাম। আমাদের কাজ শেষ হলেই আপনাকে যেতে দেওয়া হবে।
" কাজ!! কি কাজ?
" সময় হলে সবই জানতে পারবেন।
" প্লিজ যেতে দিন আমায়। আমাকে কেনো আটকে রেখেছেন? আমার বাবা মা চিন্তা করবে অনেক।
ঝিনুকের সেন্স ফেরার পর ঝিনুক নিজেকে চেয়ারের সঙ্গে হাত পা বাধা অবস্থায় পেলো। ওর অদুরেই দুজন লোক বসে আছে।তাদের কাছেই ওকে ছেড়ে দেওয়ার কাকুতি মিনতি করছিলো ও।কিন্তু লোকগুলো ওর কথা কানেই তুলছে না। ওরা ওদের মতোই ব্যস্ত।
ঝিনুক ভার্সিটির কাজ শেষ করেই বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। কিছুদুর রিক্সা নিয়ে আসার পরই রিক্সাওয়ালা একটা গলির ভেতর ঢুকে যায়। ঝিনুক বারবার রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করছিলো এদিকে কোনো এলো। সে জবাব দিলো ওদিকে অনেক জ্যাম।তাই এদিক দিয়ে বের হবে। গলিতে ঢুকার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা কালো গাড়ি সামনে চলে আসে, ঝিনুক কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে রিক্সা থেকে নামিয়ে গাড়িতে তুলে নেয় দুজন লোক। ঝিনুক চিৎকার করার ফুসরতই পায়নি।সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেছে যে ঝিনুক বুঝতেই পারেনি কি হলো। দুজন লোক ওর মুখে রুমাল চেপে ধরেছিলো।ওকে গাড়িতে উঠানো হয়েছিলো সেটুকু ওর মনে আছে।পরে আর কিছু মনে নেই ওর।
জাহিদ সাহেবের ফোনে রিংটোন বেজে উঠে। ঝিনুকের নাম্বার থেকে কল এসেছে।কল হতেই ওনি তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করেন।
" হ্যালো ঝিনুক কই তুই মা? আসছিস না কেনো? আমাদের কতোটা চিন্তা হচ্ছে জানিস? তোর মা কান্নাকাটি শুরু করেছে।কোথায় আছিস তুই?
" আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
" ওলাইকুম আসসালাম।চিনলাম না তোমাকে,, কে তুমি? ঝিনুকের ফোন তোমার কাছে কেনো?
" আপনি আমাকে চিনবেন না। আমি আপনাকে চিনি। ঝিনুকের ব্যাপারে কিছু বলার ছিলো।
" ঝিনুক! ঝিনুক কোথায়?বল বাবা কোথায় ও।ও বাড়ি আসছে না কেন? ও ঠিক আছে তো?
" ও একদম ঠিক আছে। ও কি করে বাড়ি ফিরবে ওকে যে আটকে রাখা হয়েছে।
" আটকে রাখা হয়েছে? কে আটকে রেখেছে? আর কেন?
" যে ই আটকে রাখুক সেটা কথা নয়।কথা হলো আপনি কি চান ঝিনুক বাড়ি ফিরে আসুক?
" হ্যা চাই। কোথায় আছে ও? বলো আমি আসছি ওকে নিতে
" আপনার আসতে হবে না আঙ্কেল আমরাই ওকে বাড়ি পৌছে দিবো।তার আগে আপনাকে কিছু কথা বলবো সেগুলো মন দিয়ে শুনুন।
" কি কথা? বলো।
" ঝিনুক আজই বাড়ি ফিরবে। একটু লেট হবে।কারণ আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের কাজ শেষ হলেই ওকে বাড়ি পৌছে দেয়া হবে। আপনি এটা নিয়ে আর কারও সাথে কোনোরকম কথা বলবেন। পুলিশি ঝামেলাতেও জড়াতে যাবেন না। এতে ক্ষতি আপনাদেরই। ঝিনুক তাহলে আর আজ ফিরবে না। আর বেশি ঘাটাঘাটি করতে গেলে সবাই জেনে যাবে ঝিনুক বাসায় ফেরেনি। আর এই যুগে একটা মেয়ে বাড়ি না ফেরাটা সবাই কোন চোখে নেবে সেটা নিশ্চয় আপনি বুঝেন। ঝিনুকের কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছে আমাদের নেই। আপনারা বাড়াবাড়ি না করলে আমরাও বাড়াবাড়ি করবো না। আর পুলিশ আমাদের কাছে পৌছাতে পারবে না। কিন্তু মাঝখানে ক্ষতিটা হবে ঝিনুকের। সেটা পুষিয়ে নিতে পারবেন না কখনো।
" ঝিনুকের সাথে তোমাদের কি কাজ? ওকে কেনো আটকে রেখেছো?
" সেটা আপনার জানার প্রয়োজন নেই। যেটা বললাম সেটাই মনে রাখুন। কারও সাথে ঝিনুককে নিয়ে কোনো কথা বলবেন না।
আপনাদের ওপর আমরা নজর রাখছি।তাছাড়াও ঝিনুক এখনো আমাদের হেফাজতে।তাই কোনোরকম চালাকি করবেন না যেন।
" তুমি ঝিনুকের সাথে আমাকে একবার কথা বলিয়ে দাও প্লিজ।
" এখন কথা হবে না ওর সাথে। তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। ও ঠিক আছে।ভালো আছে।
ওপাশ থেকে কল কেটে দিলো।
" কে কল করেছিলো? কি বললো? ঝিনুককে নিয়ে কি বললো?
সাহেলা বেগম ( ঝিনুকের মা) অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে।
জাহিদ সাহেব ওনাকে সবটা খুলে বলে।
সাহেলা বেগম ফ্লোরে বসে আবারো কান্না জোড়ে দেয়।
" মা প্লিজ এভাবে কেঁদো না। কাঁদলে কি সব কিছুর সমাধান হবে নাকি? শান্ত হও তুমি।
বাবা এখন কি করবে ভাবছো?
ঝুমুর এগিয়ে এসে বলে।
" কি করবো বুঝতে পারছি না। এখন কোনো স্টেপ নিতে গেলে যদি সত্যিই ঝিনুকের ক্ষতি হয়ে যায়।
" তাই বলে এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো?
" তুই শুনিস নি ওরা কি বলেছে? আমরা কিছু করতে গেলে ওরা ঝিনুকের ক্ষতি করে দিতে পারে। আর তাছাড়াও জানাজানি হয়ে যাবে সবকিছু। তখন সমাজে মুখ দেখাবো কেমন করে? ঝিনুকেরই বা কি হবে।
ঝিনুকের মা বলে উঠে।
" তোর মা ঠিকই বলছে। ওরা যখন বলেছে একটু অপেক্ষা করেই দেখি নাহয়। পরে না হয় পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আমাদের একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে যদি ঝিনুকের কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করতে পারবো না নিজেদের কে।
" আর যদি তার আগেই আপুর কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?
" আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ। আল্লাহই রক্ষা করবেন ওকে।
ওদের কথার মধ্যেই সাহেলা বেগম উঠে অযু করতে চলে যায়।
নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যায়। এমনিতেও ধার্মিক মহিলা তিনি।নামাজ পড়েন সবসময় ঝিনুককে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বলে নামাজে দাড়ান নি। এখন মনে হচ্ছে আল্লাহই একমাত্র ভরসা। তাই নামাজ পড়ে আল্লাহর সহায়তা চাইতে বসে পড়েন।
" আপনাকে এভাবে দেখে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ম্যাডাম। খুব খারাপ লাগছে।
একজন লোক ঝিনুকের সামনে এসে কথাটা বলে।ঘরটাতে পর্যাপ্ত আলো নেই।আবছা আবছা আলো। ঝিনুক লোকটার দিকে তাকায়। আবছা আলোতেই ঝিনুক তাকে দেখে ঝিনুক বুঝলো লোকটা পরিচিত কেউ না। কখনো ওনাকে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।
" আমাকে কেনো আটকে রেখেছেন? কি চান আপনারা?
" বেশি কিছু না। শুধু আপনার সিগনেচার পেলেই হবে।
" সিগনেচার!
" হুম। দু একটা কাগজে আপনি সিগনেচার করে দিলেই ছেড়ে দিবো আপনাকে।
" কিসের কাগজ?
" সেটা বলার পারমিশন নেই।
" কিসের কাগজ সেটা না জেনে আমি সাইন করবো না।
" করতে যে আপনাকে হবেই।
" কাগজটা দিন। আমি পড়ে দেখি।
" সেটা সম্ভব নয়।দুঃখিত।
" তাহলে আমিও সাইন করবো না।
" কেনো জেদ করছেন বলুন তো? খুব বেশি কিছু তো চাই নি। ছোট্ট একটা জিনিস। আপনি সাইনটা করে দিলেই আপনি চলে যেতে পারবেন।
" ওগুলো কিসের কাগজপত্র সেটা না পড়ে আমি কিছুতেই সাইন করবো না।
" আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করবেন না। এখনো শান্ত ভাসায় বলছি প্লিজ সাইনটা করে দিন।
" বললাম তো পেপারসগুলো আমাকে দিন।আগে দেখবো তারপর ভেবে দেখবো সাইন করবো কি না।
" আচ্ছা ম্যাডাম আপনার ছোট বোনটার কি যেন নাম,,ও হ্যা ঝুমুর।ও তো এবার ইন্টারে পড়ছে সাইন্স নিয়ে তাই না? ওর কলেজটা আপনার বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আপনার বোন পায়ে হেটেই বাসায় ফেরে। এই ধরুন আগামীকাল আপনার মতো সেও বাড়ি ফিরলো না। ব্যপারটা কেমন হবে? আপনিও ফিরলেন না আপনার বোনও নিরুদ্দেশ। আপনার পুরো পরিবারের গতিবিধি আমার নখদর্পণে। আপনার বোনকে আপনার বাড়ি থেকে তুলে আনতেও আমার কোনো প্রবলেম হবে না। সে ক্ষমতাও আমার আছে। আপনার বাবা মায়ের কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন?
আর আপনাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা একরাত বাড়ি না ফিরলে কি হবে ভাবুন একবার।আর আপনার বোনের বাই চান্স কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে তার দায় কিন্তু আপনারই থাকবে। আপনার বাবা সমাজে মুখ দেখাবে কি করে। কতোজন কতোরকম কথা বলবে।ভাবতে পারছেন?আপনার বাবা স্কুল শেষে টিউশনিতে যায়। এখন আপনার বাবা আর বাড়ি ফিরলো না।সেটা কেমন হবে?
" আপনি কেনো এমন করছেন? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার?
" নাহ আপনি কোনো ক্ষতি করেন নি।আর আমিও ক্ষতি করতে চাইনা আপনার। শুধু আমার কথা মতো কাজটা করে দিন।আপনিও ফ্রি আপনার ফ্যামিলিও। আর আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তো ধারণা হলোই আপনার। আপনার বাড়ির সামনে আমার লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। আপনার পুরো ফ্যামিলি আমার নজরবন্দী। ওরাও কিছু করতে পারবে না এখন। আপনার কাছে আমার কথাগুলো শোনাই এখন বেস্ট অপশন।সময় কম। জলদি বলুন কি করবেন?
" দিন কোথায় সাইন করতে হবে।তবে আমার ফ্যামিলির কোনোরকম ক্ষতি করতে পারবেন না আপনি।
" এই তো বুঝেছেন। তবে সাবধান ম্যাডাম।কোনোরকম চালাকি করবেন না যেনো। আমার সাথে পাশের রুমে চলুন।
ঝিনুকের হাত পায়ের বাধন খুলে দিলো লোকটা।
ঝিনুক লোকটাকে ফলো করে পাশের রুমে গেলো। বড্ড অসহায় এখন ও।ওখানে আরো কয়েকজন লোক ছিলো। দু একজন বয়স্ক। দুএকজন এই লোকটার বয়সের।
ঝিনুককে সোফায় বসতে বলা হলো। ঝিনুককে দুটো পেপারস এ সাইন করানো হলো। কিন্তু বুঝতে পারেনি পেপারসগুলো কিসের।লোকটাও ঝিনুকের পাশে বসে ছিলো। পেপারসগুলো তার হাতেই ছিলো। যেখানে সাইন লাগবে সে জায়গাটুকুই ঝিনুকের দিকে এগিয়ে দিয়েছিলো সে। তাছাড়াও এখানেও আবছা আলো ছিলো। লেখাগুলোও বুঝতে কষ্ট হচ্ছিলো। লোকটা তাড়াও দিচ্ছিলো। ওর সাইন করা হলেই লোকটা কাগজগুলো নিয়ে উঠে পড়ে।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেনো বলে কাজ হয়ে গেছে। ওপাশে কি বললো সেটা তো আর শোনে নি। লোকটা বললো যে সে নিজে গিয়ে ঝিনুককে পৌছে দিয়ে আসবে।
" চলুন ম্যাডাম। আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসি।
" আমাকে কিসের কাগজে সাইন করালেন আপনি?
" এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই আপনাকে দিয়ে দেবে। চলুন। রাত অনেক হয়ে যাচ্ছে।
ঝিনুককে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়।
ঝিনুক বাড়ি ফিরে দেখে ঝুমুর ড্রয়িংরুমে পায়চারী করছে। ওর বাবা মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে।
" বাবা,,,
বলেই ঝিনুক কেঁদে ফেললো।
ঝিনুকের কন্ঠ শোনে ওর বাবা যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
বসা থেকে উঠে ঝিনুকের কাছে চলে আসে ওনি।ঝিনুকও বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।
" তুই কোথায় ছিলি মা? তোকে কে আটকে রেখেছিলো?
" আমি ওদের চিনি না বাবা।
" তুই ঠিক আসিছ তো মা?
" আমি ঠিক আছি বাবা।
ঝিনুকের কন্ঠ শোনে ঝিনুকের মা জায়নামাজ ছেড়ে উঠে আসে।
ঝিনুককে জড়িয়ে ধরে ওনিও কেঁদে ফেলেন।
" তুই কোথায় ছিলি মা? তুই ঠিক আছিস তো? আমার কতো চিন্তা হচ্ছিলো জানিস?
" কাদছো কেনো মা? আমি ঠিক আছি তো। কেঁদো না।
" ওরা কেনো আটকে রেখেছিলো তোকে? তোর কোনো ক্ষতি,,
" না মা আমার কোনো ক্ষতি হয়নি মা। ওরা আমাকে দিয়ে কোনো একটা কাগজে সাইন করিয়েছে।এতুটুকুই।
" সাইন করিয়েছে? কিসের কাগজে?
" আমি জানিনা বাবা। ওরা সেটা দেখার সুযোগ দেয়নি আমাকে।
" তুই না জেনেশুনে কাগজে সাইন করে দিলি?
" আমার আর কিছু করার ছিলো না বাবা। আমি সাইন না করলে ওরা তোমাদের ক্ষতি করবে বলছিলো। আমাকেও আসতে দিতো না।
" তাই বলে তুই নিজের কথা ভাববি না। কি না কি লেখা আছে কাগজে।আর ওরা তো তোকে এমনিও ভয় দেখিয়ও কাজ হাসিল করতে পারে।
" আচ্ছা বাবা আমার ওদেরকে দেওয়ার মতো কি ই বা আছে? আর তোমাদের থেকে বড় আমার কাছে আর কিছুই নেই। তোমাদের নিয়ে আমি কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।
" আচ্ছা আপু বাদ দে এসব কথা। তুই ফিরে এসেছিস সেটাই অনেক। পরে কি হবে সেটা পরেই দেখা যাবে। এখন রুমে চল।ফ্রেস হবি। সারাদিন তো নিশ্চয়ই কিছুই খাওয়া হয়নি।
মা তুমি খাবার রেডি করো।
" সেই ভালো। তুই ফ্রেস হয়ে আয়।আমি খাবার দিচ্ছি।
ঝিনুক ঝুমুর রুমে চলে গেলো। সাহেলা বেগমও রান্নাঘরে পা বাড়ালেন।জাহিদ সাহেবই রইলেন ড্রয়িংরুমে। সামনে কোনো ঘোর বিপদ এগিয়ে আসছে সেটা আন্দাজ করতে পারছেন তিনি। সে বিপদ মোকাবিলা করতে পারবে তো ঝিনুক?
রাতে খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো।
রুমে আসার কিছুক্ষণ পরই ঝিনুকের ফোনটা বেজে উঠে। ঝিনুকের ফোন তুলতে ইচ্ছে করছে না। ও জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায়। ফোনটাতে দুবার কল হয়ে কেটে গেছে।
ঝিনুক জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওর জীবনে কোনো ঝড় আসতে চলেছে সেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে। ওর সাথে কোনো এমন হচ্ছে? ওই লোকগুলো কোন কাগজে সাইন করালো ওকে? বেশ ভালোই তো ছিলো বাবা মা কে নিয়ে।
ওর বাবা কখন পেছনে এসে দাড়ালো বুঝতেই পারেনি ঝিনুক। ওর বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ঝিনুক পেছনে ঘুরে দেখে ওর বাবা।
" বাবা তুমি ঘুমাও নি?
" তুই ও তো ঘুমাসনি মা।
" আমি তো ঘুমাবো একটুপর। তুমি কেনো ঘুমাচ্ছো না? কালকে তো স্কুল আছে তোমার।
" ঘুম আসছে না রে মা।
" কেনো বাবা? আমাকে নিয়ে টেনশন করছো? ভয় পেওনা বাবা। তোমরা তো পাশে আছো। আমার কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। এসব নিয়ে একদম ভেবো না।
" আমাকে বলছিস ভয় না পেতে।নিজেই তো ভয় পাচ্ছিস।
" ভয় পাচ্ছি না বাবা। শুধু ঝড়ের তান্ডব কতোটা হবে সেটা ভাবছি।
তুমি আর ভেবো না তো। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।
" তুই?
" আমিও ঘুমাবো এখন।
ঝিনুকের বাবা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ঝিনুকও বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মিসডকল উঠে আছে।
রাফি কল করেছিলো।
রাফি ঝিনুকের বাবার বন্ধুর ছেলে। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জয়েন করেছে কয়েকমাস হলো। ওর বাবা ও তার বন্ধু মিলে সম্পর্কটা আত্মীয়তায় রুপান্তর করার জন্যই ঝিনুক আর রাফির বিয়ে ঠিক করে। রাফিও নাকি বাবার পছন্দ করা মেয়েকেই পছন্দ করেছে। ঝিনুকও বাবার ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে বিয়েতে হ্যা বলে দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই দুই ফ্যামিলি বসে বিয়ের ডেটটা ফাইনাল করে ফেলবে। ঝিনুককে রিং পরিয়ে গেছে রাফির বাবা মা।
রাফির নাম্বারটা দেখে ঝিনুকের মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেছে। রাফি আজকের ঘটনা জানলে কেমন রিয়েক্ট করবে সেটা ভেবে। রাফিকে কি আজকের ঘটনা বলবে?
এসব শুনে কি রাফি বিয়েটা করবে?
একসময় তো ঠিকই জানাজানি হবে। ওই কাগজটাই হয়তো জানিয়ে দেবে সবাইকে আজকের কথা।
ঝিনুক সিদ্ধান্ত নিলো রাফিকে কালকেই সব বলবে।
ও কিছু লুকিয়ে নতুন জীবন শুরু করবে না। পরে এটা নিয়ে আরও অশান্তি ভুল বোঝাবুঝি হবে।
সকালের রোদ মুখে পড়ায় ঘুম ভাঙ্গে ঝিনুকের। আড়মোড়া দিয়ে উঠতেই রাতের কথা মনে পড়ে যায়।মনটাই খারাপ হয়ে যায় ওর।
উঠে ফ্রেস হয়ে বেরুতেই দেখে ওর বাবা নাস্তা করছেন। স্কুলের জন্য বের হবেন একটুপর।
" বাবা একটা কথা ছিলো,
" বল মা কি কথা?
" বাবা আমি ভাবছি কালকের ঘটনা রাফিকে জানাবো।
" কোনো দরকার নেই। এসব কথা ওদের বলার কোনো দরকার নেই।
টেবিলে ডালের বাটিটা রাখতে রাখতে সাহেলা বেগম বলেন।
" কিন্তু মা পরে তো ওরা জানবেই। তখন যদি এটা নিয়ে ঝামেলা হয়?
" কি করে জানবে? কে বলবে ওদের? তুই আর আমরা ছাড়া কেউ জানে এসব?
" জানে তো মা। যারা আমায় কিডন্যাপ করেছিলো তারা জানে। আর মা ওরা যে আমায় একটা কাগজে সাইন করিয়েছে সেটা কিসের কাগজ আমরা জানিনা। সেই কাগজটাই হয়তো সব জানিয়ে দেবে। তখন ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না।
" এতো কথা জানিনা। এসব কথা এখন ওদের কানে তোলার দরকার নেই। পরের ব্যপার পরে বোঝা নেয়া যাবে। আর আমরা তো আছিই।আমরা সামলে নিবো সব।
" কিন্তু মা,,
" আমি বললাম তো,, এসব নিয়ে ওদের সাথে আলোচনা করার কোনো দরকার নেই।
" বাবা তুমি কি বলো?
" তুই ভেবে দেখ। যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করবি। তবে রাফি খুব ভালো ছেলে। তোকে অনেক পছন্দও করে। আমার মনে হয় না পরে কোনো প্রবলেম হবে। ওকে বুঝিয়ে বললে ও ঠিক বুঝবে। তাও তোর যা ভালো মনে হবে তাই কর।
ঝিনুকের বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর ঝিনুকও রেডি হতে চলে গেলো।
" কোথায় যাচ্ছিস তুই?
রেডি হয়ে বের হতেই ওর মা প্রশ্ন করলেন।
" ভার্সিটি যাবো মা।
" কালকে এতো কিছু হলো আজ আবার বের হচ্ছিস। আজ যেতে হবে না।
" মা আমার ক্লাস আছে। যেতে হবে। আর কাল যা হয়েছে তার জন্য কি আমি ঘরে বসে থাকবো নাকি?
আমি বেরুচ্ছি।
" সাবধানে যাস।
ভার্সিটি ঢুকতেই ঝিনুকের ফ্রেন্ডস দের প্রশ্নের মুখে পড়তে হলো। কালকে কোথায় ছিলো, ফোন অফ ছিলো কেন।
ঝিনুক কোনোরকমে বুঝালো একটু কাজে আটকে ছিলো।
"আজকের সকালটা খুব সুন্দর ছিলো তাই না?
ঝিনুক ক্লাসে ঢুকছিলো। প্রশ্নটা শুনে পিছনে ঘুরেই প্রশ্নকর্তাকে দেখে ওর কপাল কুঁচকে গেলো। মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো সাথে ভয়ও।

চলবে,,.

লেখা:- আতিয়া মিম
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner