রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে ইমা। সকালে কিংবা ভোরের আলো ফুটার সাথে সাথেই নিজেকে নরম মাটির কোলে পাখিদের কিচিরমিচির কলতান আর বাতাসের মৃদু আওয়াজের মাঝে আবিষ্কার করে। ব্যাপারটা কি? অভি তার জীবনে আসার পর থেকে এমন নতুন নতুন করে কিছু অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে। চিলেকোঠা তে যেমন একা একা নিজেকে অন্ধকারে আবিষ্কার করে সে, এবার আবিষ্কার করে তারই পরিচিত জায়গায়, নিজের বাসার সামনে যে পথটা দিয়ে কোচিং য়ে যায় আর যেখান থেকে সে কিডন্যাপ হয়েছে এটাই সেই জায়গা।
লাফ দিয়ে উঠে বসে ইমা।
তবে কি সব কিছুই ভুল? অভি বলে কেউ তার জীবনে আসে নি?
এখানে কি অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল ইমা? হঠাৎ জ্ঞান ফিরেছে? তাহলে ওসব কি স্বপ্ন ছিল নাকি?
ঝড়ের মত চিন্তাগুলো ইমার মন টাকে বিধ্যস্ত করে দেয়।
যাহোক, এখন তো বাসার পথ ধরা ছাড়া উপায় নেই। ইমা বাসার দিকে অগ্রসর হয়।
বাসায় পৌঁছে কেমন যেন উল্টো পাল্টে যায় সব কিছু। ইমার মা ইমাকে এসে জড়িয়ে ধরে হাও মাও করে কেঁদে কেটে একাকার। আশ্চর্য কান্ড! বাবাও তার কাঁদছে? কেন? সত্যিই তাহলে অভির দ্বারা কিডন্যাপ হয়েছে ইমা? কিন্তু অভি এভাবেই তাকে রাস্তায় ফেলে যেতে পারে?
- মা, এতদিন তুই ছিলিটা কই বলতো আমাদের? কেউ তোর কি কোনো ক্ষতি করছে?
মায়ের ডাকে ইমা ভাবনার রাজ্য থেকে ফিরে আসে।
মায়ের ডাকে ইমা ভাবনার রাজ্য থেকে ফিরে আসে।
- কই না তো মাম্মি, কোথায় আবার গেছিলাম, এইতো মনে হয় রাস্তায় মাথাঘুরে পড়ে গেলাম, জ্ঞান ফিরতে আবার বাসায় এসে পৌঁছেছি।
পুরো বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইল ইমা।
পুরো বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইল ইমা।
- ইমা, সত্যি করে বল, কোথায় গিয়েছিলে হুটহাট করে?
এবার চোখের কোনের পানি মুছে শক্ত কন্ঠে বলল তার বাবা।
এবার চোখের কোনের পানি মুছে শক্ত কন্ঠে বলল তার বাবা।
- আরে পাপা, তোমার কি মনে হয় আমি তোমাদের ছেড়ে না বলে কোথাও যাব? আর যাবটাই বা কোথায়?
- এ-ই তুমি থামবে! মেয়েটা ফিরে এল বলে...
মিসেস সুলতানা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন জহির ফারুক কে।
মেয়ের দিকে ফিরে আবারো বললেন,
- জ্ঞান হারিয়েছিলে কোথায়? ক্ষিদে পেয়েছে না? খাবে? দু'তিন দিন ধরে কি অজ্ঞান ছিলে মামনি! এসো খাইয়ে দেই।
মিসেস সুলতানা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন জহির ফারুক কে।
মেয়ের দিকে ফিরে আবারো বললেন,
- জ্ঞান হারিয়েছিলে কোথায়? ক্ষিদে পেয়েছে না? খাবে? দু'তিন দিন ধরে কি অজ্ঞান ছিলে মামনি! এসো খাইয়ে দেই।
- থাম, তুমি! মেয়েকে দেখে তো মোটেই ক্ষুদার্ত আর দূর্বল লাগছে না। দু'দিন সে অজ্ঞান ছিল আমার বিশ্বাস হয় না।
জহির ফারুক বললেন।
জহির ফারুক বললেন।
- আমি সত্যিই বলছি বাবা, আমি কিছু জানি না, আমার কি হয়েছে! আর দু'দিন কেন বলছ? এটাতো কাল বিকেলের কথা তাই না মামনি?
- দেখেছ? মেয়ের কোনো দোষ নেই, কিচ্ছু জানে না ও। মামনি ইমা, এসে বসো, একটু জিরাও। আর এসব নিয়ে ভাববেনা ঠিক আছে? আমরা দেখব সব।
মায়ের মন বলে কথা।
সন্তানের বেলায় সর্বদাই মা থাকেন কোমল হৃদয়ের। ইমার বেলায়ও তাই, বাবা যতই খঁটকা ধরছেন মা ততই বিষয়টি ইমাকে সহজ করে দিচ্ছেন। মায়েরা আসলেই এমনই হয়।
মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে খেতে শুরু করল ইমা।
কে জানে এরপর তার আরও কি কি প্রশ্ন শুনতে হয়! এযাত্রা তো বাঁচাই গেল।
সন্তানের বেলায় সর্বদাই মা থাকেন কোমল হৃদয়ের। ইমার বেলায়ও তাই, বাবা যতই খঁটকা ধরছেন মা ততই বিষয়টি ইমাকে সহজ করে দিচ্ছেন। মায়েরা আসলেই এমনই হয়।
মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে খেতে শুরু করল ইমা।
কে জানে এরপর তার আরও কি কি প্রশ্ন শুনতে হয়! এযাত্রা তো বাঁচাই গেল।
[২]
- বাবা কাজটা শেষ করে ফেলেছি।
খাবার টেবিলে বসে অভি বলল।
- বাবা কাজটা শেষ করে ফেলেছি।
খাবার টেবিলে বসে অভি বলল।
- কোন কাজ?
অবাক হয়ে জানতে চাইলেন নাহিদ।
অবাক হয়ে জানতে চাইলেন নাহিদ।
- সেটা জেনে কাজ নেই। ভাইয়ার বিয়েটার দিন তারিখ ঠিক করে ফেল এবার।
মাথাটা নিচু করে রেখে বলল অভি। নতুবা তার চেহারা দেখে বাবা বুঝে ফেলতে পারেন যে কিছু একটা হয়েছে।
মাথাটা নিচু করে রেখে বলল অভি। নতুবা তার চেহারা দেখে বাবা বুঝে ফেলতে পারেন যে কিছু একটা হয়েছে।
- ইমাকে পাওয়া গেছে?
খুশিতে চোখে হাল্কা পানি চলে এল প্রথমে নায়রা বেগমের। পরক্ষণেই সেটা রোধ করে বললেন,
- আচ্ছা কি কারণে ওকে পাওয়া যাচ্ছিল না?
খুশিতে চোখে হাল্কা পানি চলে এল প্রথমে নায়রা বেগমের। পরক্ষণেই সেটা রোধ করে বললেন,
- আচ্ছা কি কারণে ওকে পাওয়া যাচ্ছিল না?
- মামনি ওর কোনো দোষ ছিল না। আর কেউ ওর কিছুই করতে তুলে নেয় নি। আসলে ব্যাপার টা একটা দুর্ঘটনা ছিল মাত্র। মেয়েটা হঠাৎই মাথা ঘুরে পড়ে যায় আর পরে সেখান থেকে এক ভদ্রলোক তাকে উঠিয়ে উনার ঘরে নিয়ে যান। ওর তেমন কোনো সমস্যা ছিল না কিন্তু ওর নাকি 'সাম টাইম মেমোরি লস' হয়েছে তাই কিছুই মনে করতে পারে নি।
- তিন দিন পর তুই ওকে পেলি কোথায়?
- আরে, সেটাই তো আমার ক্রেডিট, বাবা আগে বললেই পারত। তিন দিন লাগত না। সিক্রেট টা বলতে মানা!
চোখ টিপে হাসল অভি।
এতক্ষণ অবধি নিঁখুত অভিনয় করে চলছে অভি। কতক্ষণ এভাবে চলবে জানে না সে। শরীর টা বেশ ক্লান্ত আর দূর্বল লাগছে, ব্যাথাও করছে বুকটা। মাথাটা যেন চৌচির হয়ে যাবে এতটা জালা হচ্ছে।
চোখ টিপে হাসল অভি।
এতক্ষণ অবধি নিঁখুত অভিনয় করে চলছে অভি। কতক্ষণ এভাবে চলবে জানে না সে। শরীর টা বেশ ক্লান্ত আর দূর্বল লাগছে, ব্যাথাও করছে বুকটা। মাথাটা যেন চৌচির হয়ে যাবে এতটা জালা হচ্ছে।
বিছানায় গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেল অভি। বড় করে শ্বাস নিল ক'বার। আটকে আসছে শ্বাস।
এক গ্লাস পানি গিলল ঢকঢক করে। একটু ভাল লাগলে আবার উঠে এল বারান্দায়। নাহ বেশী খারাপ লাগছে এখন।
উঠে চলে গেল রান্নাঘরে মায়ের কাছে।
এক গ্লাস পানি গিলল ঢকঢক করে। একটু ভাল লাগলে আবার উঠে এল বারান্দায়। নাহ বেশী খারাপ লাগছে এখন।
উঠে চলে গেল রান্নাঘরে মায়ের কাছে।
- মামনি! তোমার সাথে কিছু কথা বলা যাবে?
- আরে অভি! বাবা তুই এখোনো ভার্সিটি তে যাস নাই?
তরকারি কাটতে কাটতে জবাব দিলেন নায়রা হাসিনা।
তরকারি কাটতে কাটতে জবাব দিলেন নায়রা হাসিনা।
- নাহ, হয়ত যাবও না আর।
- মানে কি?কি বলিস তুই?
- আচ্ছা আমি মরে গেলে তোমরা কি আমাকে মনে রাখবে?
- অ-ভি-ই-ই-? বাজে বকিস না একদম।
ধমক দিলেন তিনি।
ধমক দিলেন তিনি।
অভির বুকটা ব্যাথার চেয়েও কষ্টে ফেটে যাচ্ছে বেশী। এই পৃথিবী টা সত্যিই মায়াবী। অন্ধকার কবরে সে একাই থাকবে। কেমন হবে ওপারে জীবনটা!
- মামনি! এর আগে খুব খারাপ ছিলাম আমি। ক্ষমা করে দেবে তোমরা আমাকে?
- মামনি! এর আগে খুব খারাপ ছিলাম আমি। ক্ষমা করে দেবে তোমরা আমাকে?
- তুই এগুলা কি বকিস বাবা? তুই কবেই বা খারাপ ছিলি বল? বয়সের কারণে মানুষ ওমন পাগলামো করেই, ছেলে আমার!
- আচ্ছা, মাফ করে দিও কেমন?
- চুপ থাক তুই, আজকে তোর কি হয়েছে শুনি? আবোল তাবোল বলিস শুধু? শোন তোর ভাইয়ের বিয়েটার বিষয়ে...
মায়ের কথা গুলো সব এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে গেল অভির। টলটলে পায়ে ফিরে এল বাবার কাছে।
বাবার কাছেও ক্ষমা চাওয়া হলো।
ছোটবোনের স্কুলে যাবার আগে তার কাছ থেকেও ক্ষমা চাওয়া হলো, অরূপ ভাইয়ার অফিসে যাবার সময় তার কাছ থেকেও ক্ষমা চাওয়া হলো অভির।
ছোটবোনের স্কুলে যাবার আগে তার কাছ থেকেও ক্ষমা চাওয়া হলো, অরূপ ভাইয়ার অফিসে যাবার সময় তার কাছ থেকেও ক্ষমা চাওয়া হলো অভির।
সবাই এটাকে অভির পাগলামি আখ্যা দিলেও সে তারমতই কাজ করে গেল।
[৩]
তিনদিনের মধ্যেই উভয়পক্ষের বিয়েটা হয়েটা গেল। তাড়াহুড়ো করেই হয়েছে একরকম। ইমা প্রথমে রাজি না হলেও সায়েমা বেগম ও জহির ফারুকের মুখের দিকে চেয়ে মত দিয়ে দিল। আর না দিয়েই বা কি? অভি তো তাকে ভালোই বাসে না।
তিনদিনের মধ্যেই উভয়পক্ষের বিয়েটা হয়েটা গেল। তাড়াহুড়ো করেই হয়েছে একরকম। ইমা প্রথমে রাজি না হলেও সায়েমা বেগম ও জহির ফারুকের মুখের দিকে চেয়ে মত দিয়ে দিল। আর না দিয়েই বা কি? অভি তো তাকে ভালোই বাসে না।
বিয়ের পর যখন জানল অভি তার দেবর তখন যেন ইমার গা টা জ্বলে যাবার উপক্রম হলো। দিনে এতবার ভালবাসার মানুষের সাথে দেখা অথচ সে তূষের আগুনে জ্বলে খার খার হয়ে যাচ্ছে।
একদিন চিলেকোঠার ঘর টায় ইমা গেল। আজই সে জায়গা টা আবিষ্কার করে।
- অভি? তুমি? এখানে...
- ইমা আমাকে তুমি ক্ষমা করেছ তো?
খুব কষ্টে কথাটা বলল অভি।
খুব কষ্টে কথাটা বলল অভি।
- হ্যাঁ, মানে এখানে তুমি... কি আবার এখন চাই হুম? ভাবী ডাকবে না আমাকে?
ক্ষোভ আর কষ্ট ঝরল ইমার কথায়।
ক্ষোভ আর কষ্ট ঝরল ইমার কথায়।
- ইমা, তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি, আবার পরিবারকে বিপদেও ফেলতে চাই নি। সত্যি বলতে কি, আমি তোমাকে...
বড় করে দম নিল অভি। কথাটা শেষ করতে পারল না সে। সময় হয়ে গেছে বলে কালিমা পড়ে ফেলল।
চুপ করল অভি। চিরন্তন কালের জন্য।
বড় করে দম নিল অভি। কথাটা শেষ করতে পারল না সে। সময় হয়ে গেছে বলে কালিমা পড়ে ফেলল।
চুপ করল অভি। চিরন্তন কালের জন্য।
ইমা চিৎকার করে তার পাশে বসে পড়ল।
আজোও চিলেকোঠার মাঝে যেন তার হারানো ভালবাসা খুঁজে ফিরে ইমা। আর মনে মনে ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে সে।
অভির ভালবাসার কথাটা আজীবন গোপনই রইল ইমার কাছে।
--- [সমাপ্ত]...
লেখিকাঃ- আনিফা আমরীন