> সুদিনের শুরু - Bangla Short Story - Boipoka365
-->

সুদিনের শুরু - Bangla Short Story - Boipoka365


Bangla Short Story

আমি আড়াল থেকে খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ভাবী খুব যত্ন করে নিজের ৪বছরের বাচ্চাটাকে জুস খাওয়াচ্ছে অথচ পাশে আমার ছোট বাচ্চাটা বসে আছে সেদিকে ভাবীর খেয়াল নেই। আমার ছোট বাচ্চাটা যখন বললো, "মামী আমিও জুস খাবো"

তখন ভাবী বিরক্ত হয়ে বললো,

"কি রাক্ষস ছেলেরে বাবা! যেটা দেখবে সেটাই খেতে চাইবে "

সন্তান কিছু খেতে চাইলে আর কেউ রাক্ষস বলে গালি দিলে সেটা মায়ের জন্য কতটা যন্ত্রণাদায়ক সেটা একজন মা বাদে কেউ বুঝবে না। আমি অন্যরুমে গিয়ে নিজের ছেলের নাম ধরে কয়েকবার ডাকলাম। ছেলেটা যখন দৌড়ে কাছে এসে বললো,

-" মা আমায় ডেকেছো?"

আমি তখন ছেলের গালে থাপ্পড় মেরে বললাম,

--অন্যের খাওয়া দেখে এতো খেতে চাস কেন? তোকে না বলেছিলাম কিছু খেতে ইচ্ছে হলে আমায় বলবি"

আমার ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-"তোমায় বলে কি হবে? তুমি তো কিনে দাও না"

ছেলের এমন কথা শুনে আমি নিজেও কেঁদে দিলাম। ঠিকিই তো, ছেলের আবদার  কিছুই পূরণ করতে পারি না। স্বামী মারা যাবার পর বাচ্চাটাকে নিয়ে ২বছর ধরে ভাইয়ের সংসারে পরে আছে। ভাই যে তিনবেলা খাওয়াচ্ছে সেটাই তো অনেক

|

|

 সেদিন খেয়াল করি আমার ভাই তার নিজের ছেলেকে বুকের উপর রেখেছে আর আমার ছেলেটাকে বলছে ভাইয়ের মাথার চুলগুলো টেনে দিতে৷ এই দৃশ্যটা দেখে আমার মোটেও খারাপ লাগে নি।  কিন্তু খারাপ লেগেছে তখন যখন আমার ছেলে  তার কচি কচি হাত দিয়ে ভাইয়ের মাথার চুলগুলো টানতে টানতে বললো, 

 "মামা, তুমি আমায় শিহাবের মতো একটা লাল গাড়ি কিনে দিবে? সেদিন শিহাবের( ভাইয়ের ছেলে) গাড়ি নিয়ে আমি খেলছিলাম দেখে মামী আমার কানে ব্যথা দিয়েছিলো"  এই কথাটা শুনে...

একবার ভাবী তার ছেলের জন্য মার্কেট থেকে কয়েকসেট প্যান্ট-শার্ট কিনে আনলো।  আমার ছেলে কাপড় দেখে পাগল হলো সেও নতুন প্যান্ট-শার্ট পরবে। ভাই তখন ভাবীকে বললো,

"একসেট কাপড় ইয়ামিনকে(আমার ছেলে) দাও"

ভাবী মুখটা গোমড়া করে একসেট কাপড় আমার হাতে দিলো। 

আমার ছেলে নতুন কাপড় পরে মহাখুশি। আর আমার ছেলের হাসিখুশি মুখটা দেখে  আমার নিজের ভিতর খুব আনন্দ হচ্ছিলো 

আমার ছেলে কাপড়গুলো কিছুতেই খুলছিলো না। নতুন শার্ট-প্যান্ট পরা অবস্থায় রাতে ঘুমিয়েছিলো। ছেলে ঘুমানোর কিছুক্ষণ পর ভাবী আমার রুমে এসে বললো,

~"জান্নাত, কিছু মনে করো না। আমি খুব শখ করে আমার ছেলের জন্য কাপড়গুলো কিনেছিলাম। তাছাড়া কাপড়গুলো খুব দামী। তুমি এই কাপড়গুলো আমায় দিয়ে দাও।  আমি তোমার ছেলেকে কয়েকদিন পর অন্য কাপড় কিনে দিবো নে"

আমি হাসি মুখে ভাবীকে বললাম,

-- আরে না না, কিছু মনে করার নেই এইখানে। আপনি শখ করে আপনার ছেলের জন্য কিনেছেন

এইকথা বলে আমি আমার ছেলের গা থেকে কাপড় গুলো খুলে ভাবীর হাতে দিলে ভাবী কাপড়গুলো নিয়ে চলে গেলো। আমি সেদিন সারারাত ঘুমায় নি। ছেলের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে সারারাত চোখের জল ফেলেছিলাম

পরদিন সকালে নতুন কাপড় দেখতে না পেয়ে আমার ছেলে যখন কান্নাকাটি করছিলো তখন আমি আমার ছেলের মুখের দিকে একবারও তাকাই নি। আমি আমার মতো করে চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়ছিলাম আর নিজের চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করছিলাম....

|

|

একবার আমার ছেলে খুব অসুস্থ হয়ে যায়৷ ৩-৪দিন ধরে টানা জ্বর। ভাইয়াকে বললে ভাইয়া ফার্মেসি থেকে কিছু ঔষধ এনে দেয়।  কিন্তু এইসব ঔষধে কোন কাজ হচ্ছিলো না। নাস্তার টেবিলে ভাইয়াকে আমি বললাম,

--ভাইয়া, ইয়ামিনের জ্বরটা কিছুতেই কমছে না 

ভাইয়া জবাব দেওয়ার আগে ভাবী তখন বললো,

~" আরে আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে তো তাই একটু-আধটু জ্বর হবেই"

আমি ভাবীর দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বললাম,

--আসলে ভাবী ৩-৪দিন ধরে জ্বরটা কমছে না। তাই খুব চিন্তা হচ্ছে। একটা ডাক্তার দেখানো খুব দরকার

ভাবী কিছুটা রাগান্বিত গলায় বললো,

~" ডাক্তার কাছে নিয়ে গেলে তো ৪-৫হাজার টাকা খরচ৷ তোমার ভাইয়া এখন টাকা পাবে কোথায়? অল্পটাকা বেতনের চাকরি করে এতোজন লোকের ভরনপোষণের দায়িত্ব নেওয়া যায়?"

আমি মাথা নিচু করে বললাম,

-- ভাবী টাকার চিন্তা করতে হবে না। আমি টাকার ব্যবস্থা করে নিবো

ভাইয়া অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

-" তুই টাকা পাবি কোথায়?"

আমি তখন বললাম,

--মায়ের দেওয়া কিছু অলংকার আছে।  সেগুলো বিক্রি করে দিবো 

ভাবী তখন সাথে সাথে বলে উঠলো,

-" আমার শ্বাশুড়ির রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো বিক্রি করে দিবে? তারচেয়ে বরং আমাকে দিয়ে দাও আমি তোমাকে তোমার প্রাপ্য দামেই দিবো"

ভাবীর কথা শুনে আমি ভাবীর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম।  ভাইয়া তখন বেসিনে হাত ধুতে ধুতে আমায় বললো,

-" নেহা ঠিক কথায় বলেছে। মায়ের অলংকার গুলো অন্যজনের কাছে বিক্রি করার চেয়ে তোর ভাবীর কাছেই বিক্রি করে দে"

আমি সেদিনও ভাই ভাবীকে কিছু বলে নি।  শুধু নিরবে চোখের জল ফেলেছি আর বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়েছি

দুইবছর পর....

আমি যেদিন ভাই ভাবীর বাসা থেকে বিদায় নিবো তখন ভাবী মুখটা বাঁকিয়ে বললো,

~" কথায় আছে, যখন তোমার কেউ ছিলো না তখন ছিলাম আমি 

এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি।  তেমনি যখন চাকরি ছিলো না তখন ভাই ভাবীর সংসারে ঠিকিই থাকতে পেরেছো আর এখন বড় চাকরি পেয়েছো বলে আমাদের পর করে চলে যাচ্ছো? "

আমি ভাবীর কথা শুনে কিছু না বলে শুধু একটু হাসলাম। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভাইয়াকে বললাম,

-- ভাই আমি আসি। দোয়া করো আমার জন্য

ভাই তখন বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

-" তুই কি ভাবছিস আমি তোর চাকরির টাকাতে ভাগ বসাবো।  এমনটা আমি কখনোই করবো না।  এতো লোভ আমার নেই। আমার বাসা থেকে তোর অফিস খুব একটা দূরে না। তাহলে আমার বাসায় থাকলে সমস্যা কি?"

ভাবী পরের মেয়ে তাই ভাবীর কথাগুলো আমি খুব একটা গায়ে মাখি না। কিন্তু নিজের রক্তের ভাই যখন উল্টো পাল্টা  কিছু বলে আর সহ্য হয় না

আমি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-- লোভ আমারও নেই ভাইয়া।  তুমি যে বাসায় থাকো সেই বাসায় আমারও অংশ আছে। যদি লোভ থাকতো তাহলে বলতাম আমার অংশ আমায় দিয়ে দাও।  দিনের পর দিন তোমার বউয়ের কটু কথা আমি সহ্য করতাম না

ভাবী অবাক চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,

~"আমি কি করেছি?"

আমি হেসে উত্তর দিলাম,

-- না না তুমি কিছু করো নি। শুধু আমার ছেলে তোমার ছেলের খেলনা ধরতো বলে আমার ছেলের কান ধরে টানতে। আমার ছেলে তোমার ছেলের কাপড় পরেছিলো বলে তুমি সেই কাপড়গুলো আমার হাত দিয়ে খুলিয়ে নিয়েছো শুধু।  তোমার ছেলে কিছু খেতে চাইলে তুমি খুশি হতে আর আমার ছেলে কিছু খেতে চাইলে তুমি তাকে রাক্ষস বলতে এই যা

ভাবী আমার কথা শুনে চুপ হয়ে আছে। আমি তখন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

-ভাইয়া, আমার যাবার কোন জায়গা ছিলো না বলেই তোমাদের কাছে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম স্বামী হারা এইবোনটাকে তুমি আগলে রাখবে। পিতৃহারা ভাগ্নেটাকে তুমি তোমার নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসবে। বুঝতে পারি নি তুমি আমাদের এতটা অবহেলা করবে। 

আমার বাচ্চা ছেলেটা প্রতিদিন আশায় থাকতো তুমি তাকে একটা লাল গাড়ি কিনে দিবে। তুমি অফিস থেকে আসলে দৌড়ে তোমার কাছে গিয়ে বললো, "মামা আমার লাল গাড়ি এনেছো" তুমি বিরক্ত হয়ে আমার ছেলেকে বলতে,"কাল কিনে দিবো"

সেই কাল তোমার কখনোই আসে নি। আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য তোমার সংসারে টাকা নেই অথচ আমার অলংকার কিনার জন্য তোমাদের কাছে ঠিকিই টাকা থাকে

ভাইয়া কিছু না বলে চুপ করে রইলো।  আমি আর কিছু না বলে ছেলের হাত ধরে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম

---

------

আমার ছেলে একহাতে লাল রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি আর অন্য হাতে নতুন একসেট কাপড় নিয়ে হেটে যাচ্ছে। আমি একটা জুসের বোতল হাতে নিয়ে ছেলের পিছন পিছন হেটে যাচ্ছি আর ভাবছি, আজকের পর আমাদের সুদিনের শুরু...



( সমাপ্ত )




লেখা: আবুল বাশার পিয়াস

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner