> Mr husband পর্ব ১, ২ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story
-->

Mr husband পর্ব ১, ২ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story



রিদানের কোলে বসে আছে মোহ।মোহ এর পেট জুড়ে চলছে রিদানের হাতের বিচরণ।বেশি সময় ধরে আর তা স্থায়ী হলো না।কারণ, মোহ খামচে ধরেছে রিদানের হাত।হাত স্থির রেখে রিদান মোহের ঘাড়ে মুখ ডুবায়।এতে যেন মোহের সমস্ত শরীরে বয়ে গেলো এক ভালোলাগার শিহরণ।মোহ আরো জোরে খামচে ধরলো রিদানের হাত।ঘারে মুখ ডুবিয়েই রিদান বলে উঠলো"জোৎস্না বিলাস কি হয়েছে তোমার?নাকি আরও কিছু সময় ছাদে থাকবো?"।উত্তরে মোহ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,"হয়েছে"।তারপর মোহকে নিয়ে রুমে চলে আসে রিদান।
-তোমার কি ঘুম এসেছে?(রিদান)
-হুম।(মাথা নিচু করে বলে মোহ)
-আচ্ছা, চলো শুয়ে পড়ি।(আলতো হেসে বলে রিদান)
তার
কথাটি বলে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরে রিদান।মোহ শুতেই রিদান মোহকে এক হেঁচকা টানে নিজের কাছে এনে কিছু না বলেই দখল করে নেয় মোহ এর ঠোঁটজোড়া।প্রথমে রিদানের হুট করে কাজ টা করায় অবাক হলেও পরে মোহ ও উপভোগ করতে থাকে রিদানের স্পর্শ।বেশ কিছুটা সময় পরে মোহ এর ঠোঁট ছেড়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে রিদান মোহ কে উদ্দেশ্য করে বলে,"ঘুমাও"।আর এদিকে মোহ এর হৃৎস্পন্দন বেশ জোরে হতে থাকে।মোহ ও জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। অতঃপর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে।

 
অতীত:-

-"এই স্বার্থের শহরে ভালোবাসাটা বড্ড বেমানান। আমার ভালোবাসার শহরে স্বার্থটা বড্ড বেমানান"।আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে মোহ।মেঘলা আকাশ সর্বদাই আকর্ষণ করে মোহকে।আকাশ মেঘলা হলে তার দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন ভাবনায় ডুব দেয় মোহ।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।হটাৎ তার ভাবনার জগৎ হতে বেড়িয়ে আসতে হলো তার মায়ের ডাকে।
-মোহ।
-জ্বি মা।
-কাল ছেলে পক্ষরা তোকে দেখতে আসবে।হয়তো বিকেলে আমাদের এখানে এসে পৌঁছাবে।তুই রেডি হয়ে থাকিস।
-আচ্ছা মা।(মাথা নিচু করেই জবাব দিলো মোহ)
মোহ এর জবাব পেয়ে চলে গেলেন তিনি।মেহমান আপ্যায়ন করার জন্য নানা প্রস্তুতি নিতে হবে তার তাই এখন থেকেই কাজে লেগে গেলেন তিনি।মোহ চুপচাপ তার বিছানায় বসে ভাবছে,কি হতে চলেছে কাল!ছেলে কি ভালো হবে?ছেলে পক্ষরা কি তাকে পছন্দ করবে?।এমন অনেক প্রশ্ন ভিড় জমাচ্ছে মোহের মনে।

!!
মোহ সহজ-সরল,শান্ত এবং লাজুক স্বভাবের। কথা খুব কম বলে।তার চালচলন খুবই সাধারণ।সবে HSC পরিক্ষা দিয়েছে।দেখতে শ্যামবর্ণের হলেও সবাই তাকে সুন্দরীই বলে। তার টানা টানা চোখ, খাড়া নাক আর গোলগাল মুখ।সব মিলিয়ে মোহকে সুন্দর বলাই যায়।মোহের পরিবার বলতে শুধু মোহের মা আর বোনই আছে।মোহের বাবা-মার ডিভোর্স হয়ে যায় যখন মোহের বয়স মাত্র ৭।ডিভোর্সের পর থেকে মোহের বাবা মোহ দের কোনো খবর নেয়নি কখনো।মোহের মায়ের কাপরের একটি ছোট দোকান আছে।সেই দোকান দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।ও দোকান টা না থাকলে কোথায় যেতো তারা? কিভাবে বাঁচতো?একবারও ভাবেনি মোহের বাবা।তাই মোহ আর তার বড় বোন সিদ্ধান্ত নেয় তাদের কাছে তাদের বাবা মৃত।সেই অনুযায়ী  তারা সবাইকে বলে তাদের বাবা মৃত। অবশ্য প্রথম দিকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন মোহের মা কিন্তু পরে আর পেরে ওঠে না দু মেয়ের জিদের সাথে।কেনোই বা এ জিদ টা থাকবে না তাদের মাঝে আর কেনোই বা পরিচয় দিবে সে বাবার যে নিজের স্বার্থের জন্য নিজের পরিবারকে ছেড়ে যাওয়ার আগে একবারও তাদের কথা ভাবেনি।মোহের বড় বোনের নাম মোহনা। তার বিয়ে হয় দু বছর আগে। এখন সে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।বেশ ভালোই আছে শশুর বাড়িতে। 

!!
পরের দিন সকালে উঠেই মায়ের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতে শুরু করে মোহ।মা-মেয়ে মিলে প্রায় সব কাজই শেষ করে ফেলেছে। এর মাঝেই মোহের মামা-মামী আর মামাতো বোন রিদি চলে এসেছে।বিকেল চারটে হতে চললো হয়তো যেকোনো সময় ছেলে পক্ষ চলে আসবে।মোহ ও প্রায় রেডি হয়ে গিয়েছে।আজ সে নীল শাড়ী, চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পড়ে সেজেছে।মোহ এর রেডি হওয়া শেষ হতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। এসে গিয়েছে তারা।মোহ এর মামা-মামী আর মা তাদের স্বাগতম জানিয়ে বসতে দিলেন।ছেলে পক্ষ আসার বেশ কিছু সময় পর মোহ কে ডাকা হয়।মাথায় কাপর দিয়ে রিদির সাথে মোহ উপস্থিত হয় হল রুমে।বেশ ভয় কাজ করছে মোহ এর মনে,যদি কোনো ভুল হয়ে যায় তার দ্বারা।মোহ হল রুমে উপস্থিত হয়ে একে একে সবাইকে সালাম করে। ছেলে পক্ষ বলতে পাত্র, পাত্রের মা এবং পাত্রের বাবা এসেছেন।ছেলের মা বেশ আন্তরিক ভাবেই মোহকে তার পাশে বসিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন করেন।কিন্তু এর মাঝে একবারও মোহ চোখ তুলে কারো দিকে তাকায়নি শুধু এক-দুবার ছেলের মায়ের দিকে তাকিয়েছে কথা বলার সময়।হটাৎ ছেলের মা বলেন.....
-আমার মনে হয় পাত্র-পাত্রীকে আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিৎ। (তমা বেগম)
-জ্বি,অবশ্যই।মোহ তুই রিদানকে(পাত্র)নিয়ে নাহয় তোর রুমে বসেই কথা বল।(মোহের মা আনিসা বেগম) 
-জ্বি মা।(মোহ)

!!
মোহ এর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে দুজন।মোহ নিচের দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে....
-আসসালামু আলাইকুম। 
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
তারপর বেশ কিছু সময় দুজনই চুপ করে থাকে।নিরাবতা কাটিয়ে রিদান বলে ওঠে,
-বাইরে মার প্রশ্ন করায় বেশ কিছু জেনেছি আপনার সম্পর্কে।আপনি আমার সম্পর্কে কিছু জানেন?
-জ্বি না।
-জানতে চান না?
-উহু।
-কেন?
-মা জানলেই চলবে।
-আচ্ছা,তো আপনি মায়ের খুব বাধ্য মেয়ে?
এতোক্ষণে মোহ একটু তাকায় রিদানের দিকে।রিদানকে দেখে অবাক হয় মোহ,ছেলেদের চেহারায় ও কি এতোটা মায়া থাকা সম্ভব। একটু দেখেই আবার চোখ নামিয়ে নেয় মোহ।নিচের দিকে তাকিয়েই উত্তর দেয়,
-অনেকটা তাই।
-যদি কিছু মনে না করেন তবে কি একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি?
-জ্বি।
-আপনার মনে কি কারো বসবাস ছিলো বা আছে এখনো?
-আছে কি না জানি না তবে ছিলো।
-ওহ। এর থেকে বেশি জানতে পারি কি?
-জ্বি।তখন সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে লম্বা ছুটি কাটাতে যাই দেশে।দেশের বাড়িতে থাকে আমার নানা-নানু আর মামারা।মামার দু সন্তান।ওরা দুজনই আমার বড় কিন্তু আমরা বন্ধুূদের মতো থাকি।তাই ওদের নাম ধরেই ডাকি।সে বার যখন বেড়াতে যাই তখন দিহান ভাইয়ার এক বন্ধু ও কিছু দিনের জন্য ওখানে বেড়াতে আসে।তার নাম ছিলো আয়রান।দেশের বাড়ি গেলে কখনোই ঘরে থাকা হয়ে ওঠে না আমার।আমি,রিদি,দিহান তিনজন সারাদিন ঘুরাঘুরি করে কাটাই আর রাতে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা চলে আমাদের।সে বার আমাদের তিন জনের সাথে আরো ১ জন যোগ হয়,সে হলো আয়রান।পুরো দের মাস দিন-রাত ও আমাদের সাথেই কাটাতো।এই দের মাসে ওর সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়।তারপর কিছু দিনের মাঝেই ও আমাকে প্রপোজ করে।যেহেতু ওর জন্য আমার মাঝে এক মুগ্ধতা কাজ করতো তাই আমিও রাজি হয়ে যাই।ওর আর আমার সম্পর্কের কথা শুধু রিদি আর দিহান জানতো।ওর সাথে আমার সম্পর্ক টা বেশ ভালোই চলছিলো।ও সব সময় আমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করতো,খুব খেয়াল রাখতো আমার। ধিরে ধিরে ওর প্রতি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ি আমি।আমাদের সম্পর্কের যখন ১ মাস তখন ও লন্ডনে পরতে যাওয়ার সুযোগ পায়।অনেক খুশি হয়ে ব্যাপার টা জানায় আমায়,মুখে খুশি ভাবটা দেখালেও মনে মনে কষ্ট হচ্ছিলো ওর সাথে দূরত্ব অনেক বেড়ে যাবে ভেবে।কিন্তু ওর মাঝে একটুও খারাপ লাগা কাজ করছিলো না।ও অনেক খুশি ছিলো তাই আমিও কিছু বলিনি।এদিকে আমার কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল তাই ঢাকায় ফিরতে হয় আমায়।তারপর আয়রান ও চলে যায় লন্ডন।ওর ওখানে যাওয়ার পর বেশি কথা হতো না আমাদের।আমি ভাবতাম নতুন জায়গার সাথে খাপ খাওয়ানো সাথে পড়াশোনার চাপে আমায় সময় দিতে পারে না।তাই খারাপ লাগলেও কখনো অভিযোগ করিনি।

এটুকু বলে থামে মোহ।এতোক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়েই কথা গুলো বলছিলো।এখন আকাশ হতে চোখ সরিয়ে তাকায় রিদানের দিকে।ছেলেটা বেশ কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।মোহ আবারও আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে....
-প্রায় ১ বছর এভাবেই চলে।তারপর একদিন কল দিয়ে বেশ মন খারাপ করে বলে ওর নাকি ওখানের কোনো এক মেয়ে কে বিয়ে করতে হবে।ওই মেয়েকে বিয়ে করলে ও ওখানে সেটেল হতে পারবে নাহয় বাংলাদেশে ব্যাক করতে হবে, পড়ে আর যাওয়ার সুযোগ পাবে কিনা তা অনিশ্চিত। তাই ও ঔ মেয়েকে বিয়ে করতে চায় আর আমাদের সম্পর্কটা ওখানেই শেষ করতে চায়।উত্তরে শুধু "আচ্ছা" বলেই ফোন কেটে দিয়েছিলাম।কারণ আমি চাইনি ও আমার কান্নার আওয়াজ শুনুক।সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম ও আমাকে কখনো ভালোবাসেইনি।ও ওর স্বার্থের জন্য খুব সহজেই আমায় ছেড়ে দিলো।যদি ভালোবাসতো তাহলে নিশ্চয়ই এমনটা করতে পারতো না।
সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম,এই স্বার্থের শহরে ভালোবাসাটা বড্ড বেমানান। 

এটুকু বলে থামে মোহ।নিচের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর মোহ তাকায় রিদানের দিকে।রিদানের চোখে মুগ্ধতা দেখতে পায় মোহ। আবার ও চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নেয় সে।বেশ কিছু সময় নিরাবতার পর রিদান বলে ওঠে.....
-বেশ understanding আর strong mind এর মেয়ে আপনি।
-হয়তো।
-আমার অতীত সম্পর্কে জানতে চাবেন না?
-নাহ।অতীত টা নাহয় অতীত ই থাক।
আলতো হাসলো রিদান।এ এক মুগ্ধতার হাসি।তারপর বলে উঠলো...
-আপনি তো বেশ বুদ্ধিমতি ও বটে।
-হয়তো।
রিদান কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু টা আর হয়ে উঠলো না রিদির অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতিতে।
-তোমাদের কি আরো সময় লাগবে?আসলে নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।(মোহকে উদ্দেশ্য করে বলে রিদি)
রিদির প্রশ্ন শুনে মোহ রিদানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। 
-জ্বি চলেন তবে যাওয়া যাক।আপনার কি কিছু জানার আছে?(রিদান)
-জ্বি না।
-আচ্ছা।
অতঃপর তিনজনই হল রুমে উপস্থিত হলো।


বাসর ঘরে বসে আছে মোহ।সেদিন দেখতে এসে যাওয়ার পর পাত্র পক্ষের সবাই পছন্দ করে মোহকে।তারপর পাত্র পক্ষের ইচ্ছেতেই বেশ তাড়াহুড়ো করেই ১৭ দিনের মাঝে বিয়ে টা হয়ে যায়।৩০ মিনিট পার হতেই বাসর ঘরে প্রবেশ করে রিদান।রিদান দরজা লাগিয়ে মোহের কাছে আসতেই মোহ রিদানের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে উঠে দাঁড়ায়। মোহ উঠে দাঁড়াতেই রিদান মোহের কপালে চুমু খায়।রিদানের এমন কাজে লজ্জায় লাল হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে মোহ।মোহের লজ্জা পাওয়া দেখে আলতো হাসে রিদান তারপর বলে ওঠে....
-আপনি কি মন থেকে আমায় স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পেরেছেন?
-জ্বি।
-তবে আমি কি আপনাকে তুমি বলতে পারি? 
-অবশ্যই।
-আচ্ছা।বসো এখানে।
অতঃপর মোহ বিছানায় যেয়ে বসে।মোহ এর পাশেই বসে রিদান।মোহ এর পাশে বসে রিদান এক এক করে মোহ এর গহনাগুলো খুলতে থাকে।রিদানের হাতের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে মোহ।মোহ এর কানের দুলটি খুলে কানের পেছনে চুমু খেলো রিদান।সাথে সাথে বিছানার চাদর খামচে ধরলো মোহ।সব গহনাগুলো খুলা শেষে রিদান উঠে তেল নিয়ে এসে আবার বসলো মোহ এর ঠিক পেছনে।পার্লর থেকে সাজার ফলে মোহের চুলে জট বেঁধে আছে।রিদান বেশ যত্নের সাথে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে মোহ এর চুলের জট খুলতে ব্যস্ত।অবশেষে সে সফল হলো।চুলের জট ছাড়িয়ে মোহের চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো রিদান।বেশ কিছু সময় মোহ এর চুলের ঘ্রাণ নেওয়ার পর মোহ কে ছেড়ে,রিদান মোহ কে উদ্দেশ্য করে বললো ওয়াশরুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসতে।মোহ সম্মতি জানিয়ে ড্রেস নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।এদিকে রিদান ও ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো।তারপর মোহ এর গহণা গুলোও জায়গা মতো রেখে দিলো।বেশ কিছু সময় পর মোহ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে রিদান বিছানায় শুয়ে আছে।মোহ ডাকলো রিদানকে.....
-শুনছেন? 
-হুম।(মোহ এর ডাকে উঠে বসে রিদান)
-ফ্রেশ হয়ে নিবেন না?(নিচের দিকে তাকিয়েই বলে মোহ)
-হ্যাঁ,এইতো যাচ্ছি।(বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায় রিদান)

!!
আকাশে আজ মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে অপলক তাকিয়ে আছে মোহ চাঁদ টার দিকে।পূর্ণিমার চাঁদের সুন্দর্য পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকেই মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। সৃষ্টিকর্তার এক অপরুপ সৃষ্টি এটি।ওয়াশরুম দিয়ে বের হয়ে রিদান দেখে মোহ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে একমনে তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে।মোহ হালকা বেগুনি কালারের সুতি শাড়ি পড়েছে।কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো মৃদু বাতাসে উড়ছে।পেছন থেকে মোহকে দেখতে কোনো রুপবতীর থেকে একটুও কম লাগছে না।রিদান ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মোহের কাছে। পেছন থেকে মোহের পেটে হাত দিয়ে জরিয়ে নেয় মোহকে নিজের সাথে।রিদান মোহের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ওঠে....
-কি দেখছো ওভাবে।
-আকাশের ও চাঁদ।(রিদানের স্পর্শে শিহরিত হয়ে চোখ বুজে নেয় মোহ।চোখ বন্ধ করেই কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দেয়।)
-আমার কাছে তো তোমাকে ও চাঁদের থেকে বেশি সুন্দর লাগছে।(মোহের চুলে নাক গুঁজে বলে ওঠে রিদান)
-কিন্তু সত্যি টা হচ্ছে, ও চাঁদ আমার থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি সুন্দর। 
-ছাঁদে যাবে?(আলতো হেসে বলে রিদান)
-নিয়ে যাবেন?
-হুম।কিন্তু তার আগে যে একটি কাজ আছে।
-নফল নামাজ?
-জ্বি।
-আমি ওজু করেই বেরিয়েছিলাম।আপনি কি করেছেন?
-হ্যাঁ।চল তাহলে নামাজ পড়ে নেই।
-জ্বি।
অতঃপর তারা দুজনে নামাজ কায়েম করে নিলো।নামাজ শেষে মোহ বলে উঠলো... 
-বাসর রাতে প্রত্যেক স্বামীর তার স্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে একটি দুয়া পড়তে হয়।(নিচের দিকে তাকিয়েই বলে মোহ)
-হুম।(আলতো হেসে বলে রিদান।)
কথাটি বলেই রিদান এগিয়ে যায় মোহ এর কাছে।মোহ এর মাথায় হাত দিয়ে দুয়াটি পড়ে রিদান।

!!
ছাঁদে একটি বড় দোলনা আছে।রিদান যেয়েই বসে পরে দোলনাটায়।মোহ বসতে যেতেই রিদান বলে ওঠে...
-এখানে বসো।(নিজের কোলের দিকে ইশারা করে) 
রিদানের কথায় বেশ লজ্জা পায় মোহ তাই চুপটি করে দাড়িয়ে থাকে মাথা নিচু করে।মোহের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে রিদান নিজেই এক হেঁচকা টানে মোহকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়।মোহ-রিদান দুজনেই একে-অপরের সাথে লেপ্টে জোৎস্না বিলাশে ব্যাস্ত।(তারপরের টা পর্ব ০১ এ উল্লেখ করা আছে)

!!
সকালের মিষ্টি রোদ চোখের উপর এসে পড়ায় ঘুম ভেঙে যায় মোহের।চোখ মেলে দেখে রিদান এখনো ওর গলায় মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে।রিদানের গরম নিঃশ্বাস মোহ এর গলায় এসে পড়ছে।এটি মোহের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি করছে।মোহ আর দেরি না করে আস্তে আস্তে রিদানকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে একটি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।বেশ কিছু সময় পরে গোসল সেরে বের হয় মোহ।রিদান তখনও ঘুমুচ্ছে।মোহ আয়নার সামনে যেয়ে হালকা সেজে বেড়িয়ে যায় রুম হতে।এখন সবে সকাল ৮ টা বাজে।মোহ এর শশুর-শাশুড়ীর ডায়াবেটিস থাকায় তারা বাইরে হাটতে গিয়েছেন।তাদের ফিরে আসার সময় হয়ে এসেছে। কাজের মেয়ের থেকে এমন টা শুনেই মোহ লেবুর জুস বানাতে শুরু করলো। চিনির জায়গায় ব্যবহার করলো মধু।এটি শরিরের জন্য উপকারি।জুসটা বানানো শেষ হতেই ফিরে এলো তারা।মোহ মাথায় কাপর দিয়ে দু গ্লাস জুস নিয়ে উপস্থিত হলো তাদের সামনে।তাদের সালাম করে জুসটি পান করতে গ্লাস দুটি এক এক করে তাদের হাতে দিলো মোহ।মোহের কাজে বেশ খুশি হলেন শশুর-শাশুড়ী।জুস টি শেষ করে মোহ এর শাশুড়ী বলে উঠলেন...
-মা, রিদান কি উঠেছে?
-জ্বি না মা।
-ওর তো উঠার সময় হয়ে গিয়েছে,ছেলে টার আবার সকালে উঠেই কফি খাওয়ার অভ্যাশ।তুমি করে দিতে পারবে?
-প্লিজ মা।আপনি যেমন উনার মা ঠিক তেমন আমার ও মা।আর মা রা হুকুম দিবে এটিই তাদের শোভা দেয়।
-লক্ষী মেয়ে একটা।(মোহের কপালে চুমু দিয়ে বলেন তমা বেগম)
-আর আমি তো কারো কিছু হই না!(রিদানের বাবা রিয়াদ সাহেব মোহ কে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন)
-আপনি তো আমার একটা মাত্র বাবা।আমি তো বাবা কি জিনিস জানিও না।যখন বয়স মাত্র ৭ তখনই বাবাকে হারাই।আমি কি আপনার মেয়ে হতে পারি, বাবা?
-তুই তো আমার মেয়েই, বোকা মা আমার।(বলেই মোহ এর কপালে চুমু খান রিয়াদ সাহেব)
এ দেখে মোহ এর শাশুড়ী ও এগিয়ে আসে ওদের দিকে।মোহ কে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তিনি।
-আচ্ছা মা, তাহলে আমি যেয়ে উনার কফি টা বানিয়ে নেই।আপনাদের জন্য কি রাধবো?আসলে আমি তো জানি না আপনারা সকালে কি খান।
-সে চিন্তে তোমার করতে হবে না।এখন যাও তোমার উনি টাকে ফ্রেশ করিয়ে নিচে নিয়ে এসো, কেমন?(তমা বেগম)
-জ্বি মা।(শাশুড়ীর কথায় লজ্জায় লাল হয়ে যায় মোহ।তাও উত্তর টা দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে চলে আসে রান্নাঘরে।)

!!
কফি হাতে রুমে আসে মোহ।দেখে রিদান এখনো ঘুমোচ্ছে। দু-এক বার ডাক দেয় মোহ কিন্তু রিদানের উঠার নাম ই নেই।তারপর মোহ এর মাথায় একটি দুষ্টু বুদ্ধি আসে।মোহ কফি টা রিদানের হাতের কাছে নিয়ে রাখে।তারপর রিদানের একটি আঙুল নিয়ে গরম কফিতে ডুবিয়ে দেয়।এতে এক প্রকার চিৎকার করেই লাফিয়ে ওঠে রিদান।নিজের হাতের আঙুল মুখে নিয়ে বুঝার চেষ্টা করে হলোটা কি তার সাথে।আর এদিকে রিদানের কাজে হাসতে থাকে মোহ।হাসি থামিয়ে কফির মগটা বিছানার পাশের টেবিলের উপর রাখে।তারপর বলে...
-অনেক বেলা হয়েছে।আর কতো ঘুমোবেন?চলুন ফ্রেশ হয়ে কফিটা খেয়ে নিন নাহয় ঠান্ডা হয়ে যাবে আর আম্মু বলেছে আপনাকে নিয়ে নিচে যেতে।
-তোমাকে আমি পরে দেখে নিবো,ওয়েট।(বিরবির করে বললো রিদান যা মোহ এর কান অব্দি পৌঁছালো না।রিদান বিরবির করতে করতেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।)
এদিকে মোহ তার করা কাজটি মনে করে হেসেই চলছে।হাসি থামিয়ে মোহ আয়নার সামনে যেয়ে চুল আচরাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। বেশ কিছু সময় পর রিদান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে মোহ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছে। হটাৎ মোহ তার কোমরে কারো স্পর্শ অনুভব করে।চমকে আয়নার দিকে তাকাতেই দেখে রিদান তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরেছে।রিদানের এমন স্পর্শে মোহ শিহরিত হয়ে খামচে ধরে নিজের শাড়ি।হটাৎ রিদান মোহের বাঁধা চুলটা খুলে দেয়।চুলে মুখ ডুবিয়েই মোহকে শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে।মোহের নিঃশ্বাস ধিরে ধিরে ভারী হয়ে আসছে।মোহ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে.....
-মা ডেকেছেন, নিচে যেতে হবে।
-হু।(চুলে মুখ ডুবিয়েই বলে রিদান।) 
-অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-উহু
-প্লিজ
-উফফ, চলো।
অবশেষে রিদান ছাড়লো মোহকে।

!!
দুপুরের রান্নার কাজে সাহায্য করছে মোহ তার শাশুড়ীকে।শাশুড়ী বেশ কয়েকবার বারণ করার পর ও মোহ শোনেনি। সে তার মাকে সাহায্য করবেই।যেহেতু মোহ রান্না করতে পারে না তাই টুকিটাকি সাহায্য করছে শাশুড়ীকে। সাথে রান্নাটাও শিখছে সে।দুপুরের রান্না শেষে রুমে এসেই মোহ ঢুকে যায় ওয়াশরুমে গোসলের জন্য।আর রিদান সেই সকাল থেকে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করে যাচ্ছে।নতুন বিয়ে হওয়ায় ৪/৫ দিন অফিসে যাবেনা সে।কাল তাদের বউভাতের অনুষ্ঠান সেরে আবার পরশু যাবে মোহ এর বাসায়। ওখানে দুদিন থেকে এসেই অফিসে  যাওয়া স্টার্ট করবে।এদিকে মোহ গোসল শেষ করে বেরিয়ে বারান্দায় চলে গেলো চুল মুছতে। চুল মুছে রুমে এসে রিদানকে বলে... 
-শুনছেন?
-হু(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে রিদান)
-খেতে চলুন। অনেক বেলা হয়েছে।
-হুম।(বলেই তাকায় মোহ এর দিকে।রিদানের চোখ যেনো আটকে গিয়েছে মোহতে।)
মোহ কলাপাটা কালার এর একটি সুতি শাড়ি পড়েছে যা খুব মানিয়েছে মোহকে।মোহের ভেজা চুল হতে টুপ টুপ করে পানি পরছে আর দেখতে খুব স্নিগ্ধ লাগছে।রিদান ল্যাপটপ রেখে উঠে আসে মোহ এর কাছে। মোহ এর কোমর জড়িয়ে নিজের একদম কাছে এনে মোহের কপালে এক গভীর চুমু দেয়।তারপর মোহ এর কোমর ছেড়ে হাত ধরে নিয়ে যায় খাবার টেবিলে। অতঃপর সবাই মিলে দুপুরের খাবার টা সেরে নেয়।

!!
রিদান, যার পুরো নাম রিদান আহসান।বাবা রিয়াদ আহসানের একমাত্র ছেলে।তাই কখনোই আদরের অভাব হয়নি তার।রিয়াদ আহসান এ শহরের বড় মাপের বিজনেসম্যানদের তালিকায় একজন।রিদান মাস্টার্স পাস করে যোগ দেয় বাবার বিজনেসে দুবছর হলো।রিদান ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী।জীবনে কখনো কোনো মেয়েতে আসক্ত হয়নি সে।বেশ শান্ত হলেও তার রাগ ভয়ংকর।কিন্তু খুবই বুঝবান ছেলে সে।প্রত্যেকটি কাজ বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে করে।নিজের দ্বায়িত্বের ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকে।



চলবে...




Writer:- Mahzabin


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner