--নিজের জামাই মরলেও তো এমনে কান্দে না কেউ।
অনেকটা বিরক্তি নিয়ে কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠে ই সাদুকে কথাটা বললাম।অযথাই কথাগুলো ওকে বলি নি।ওর ফেচ ফেচানি কান্নার শব্দ আমার একদম সহ্য হচ্ছে না এখন।কিসের জন্য যে ওকে বাসায় আনার ভুত মাথায় চেপেছিল।
আজকে ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার সময় সাদু কে সঙ্গে করে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি। আন্টিকে ফোন করে বলে দিয়েছিলাম। প্রথমে আন্টি ওকে আমাদের বাসায় দিতে রাজি হয়নি। কারণ আজকে আমাদের বাসায় থাকবে। কালকে ভার্সিটিতে ক্লাস করে সাদু বাসায় যাবে। আমার অনেকবার বলার পরে ওকে দিতে রাজি হয়েছে।
নিয়াজ ভাইয়ার বিয়ের আর অল্প কয়েকদিন বাকি। আজকে ভাইয়া বিয়ের কার্ডের স্যাম্পল রাতে অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে আসবে। তাই সাদুকে আমাদের বাসায় আজ রাত থাকার জন্য নিয়ে এসেছি। ওর পছন্দ আবার অনেক ভালো। তার ওপর ও আমাদের সাথে শপিং-এ যায় নি। শপিং দেখানোর উদ্দেশ্যেও ওকে আজ বাসায় নিয়ে এসেছি।
ভার্সিটি থেকে আমরা দুজন বাসায় ফিরে লাঞ্চ করে একটু রেস্ট নিয়ে বিকেলের দিকে বারান্দায় মুভি দেখতে বসে ছিলাম। আবহাওয়া টা ভালই ছিল। এখন প্রায় দিন ই বিকেলের দিকে আকাশে মেঘের দলেরা হানা দেয়। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।সাদু আর আমি একটা তামিল মুভি দেখছিলাম। মুভির থিমটা কিছুটা এমন ছিল--" গল্পের নায়ক নায়িকা তখন টিন এজের ছিল। দুজন একই স্কুলে পড়তো। তাদের বন্ডিংটাও খুব ভাল ছিল।তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে ভালোবাসার বন্ধনে রূপ নেয়। কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারেনি তাদের ভালোবাসার কথা। তারা যখন কলেজ লাইফে ওঠে দুইজন দুই দিকে চলে যায়। আর সেখান থেকে তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তারপর যখন তারা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে একপর্যায়ে তাদের কোন যোগাযোগই থাকেনা। এর মাঝে নায়ক একদিন তাদের সেই পুরোনো স্কুলে যায়। সেখানে তার পুরোনো বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। আর এরপর একটা রিইউনিয়নে নায়ক নায়িকাদের আবার দেখা হয়। কিন্তু ততদিনে নায়িকার জীবনেও অন্য একজন এসে পড়ে। মানে নায়িকার বিয়ে হয়ে যায়। নায়ক-নায়িকার দেখা হয়, তাদের পুরনো স্মৃতির কথাও তাদের দুজনের মনে পড়ে, দুজনে খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ে এবং নায়িকাটা অনেক কান্না করে। এরপর নায়িকাকে তার নিজের স্বামীর কাছে আবার চলে যেতে হয়।"
এখন সেই নায়িকার শোকে আমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী ও শোকাহত। অবশ্য আমারও খারাপ লেগেছে। চোখে পানি একটু ছল ছল করছিল। কিন্তু ওর মতন মরা কান্না জুড়ে দেই নি। ওকে আমি আবারো জোর গলায় বলে উঠলাম,,,
--প্রেম পিরিতি তো জীবনেও করছ নাই। এত কান্না আসে কই থেকে তোর?
-- এইসবের জন্যে কি প্রেম পিরিতি করা লাগে। দেখলেই তো কষ্ট লাগে। ক্যামনে মাইয়াডা কানতাছে।(সাদু)
-- ওই নায়িকা কান্দে তার নায়কের জন্যে। তুই কোন নায়ক এর জন্যে কান্দোছ।(আমি)
--যা সর।তুই বুঝবি না এগুলা।(সাদু)
--আচ্ছা আমারে একটু সত্যি কইরা কতো কার প্রেমে পড়েছোস?(আমি)
--আমি আবার কার প্রেমে পড়তে যামু?(সাদু)
-- আমার মনে হইতাছে তুই কারো প্রেমে পড়ছোস। কারণ তোর মধ্যে গুন্ডি গুন্ডি ভাবটা দেখতাছি দিন দিন লোপ পাইতাছে।(আমি)
--তোর মাথা পাইতাছে।(সাদু)
এরপর সাধু দ্বিগুণ উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলো,,,
--ওই তোর চিঠি প্রেমিক কি আর কোনো চিঠি দেয় নাই? আমার কিন্তু চিঠিটা পড়তে অনেক ভালো লাগছে।(সাদু)
--ভালো লাগলে বইসা বইসা ওই চিঠি গুইলা খা তুই।(আমি)
--আরে বা* কছ না।আর চিঠি দেয় নাই?(সাদু)
--হ।কালকে বিকালে বই পড়তে ছিলাম তখন একটা মেসেজ দিছিল-
"প্লিজ চুলগুলো একটু বেঁধে নাও। না হলে আমি আর পারছিনা। তোমার খোলা এলোমেলো চুলগুলো ছুঁয়ে দিতে এতটা ইচ্ছে করছে যা তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না।
তোমার বর্ষণ সঙ্গী"
সাদু অনেক টা ভাবুক হয়ে বললো,,,
--ও মা সব রাইখা তোর চুল ধরতে মন চাইলো কে?
--কেন আমারে জড়াইয়া ধরতে চাইলে কি খুশি হইতি বেশি?(আমি)
-- আরে ধুর। আমি তো তোর কয়ডা কালা চুল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনা। ওই ব্যাডায় কি দেখল তোর চুলে?(সাদু)
--আমারে জিজ্ঞেস করছ কেন?আমি জানি?আর তুই ওই লোকরে নিয়া পইরা আছোস কে?কিরে এমন ছিলি না তো।হইলো কি তোর?(আমি)
--হয় নাই হইবো।একটা পোলা একটা মাইয়া।(সাদু)
--ওওও তলে তলে এতো দূর।(আমি)
রাতে ভাইয়া কার্ড নিয়ে আসে আমাদের আপন আত্মীয়-স্বজন কম হলেও আশে পাশের মামাতো,চাচাতো আত্মীয়-স্বজনের অভাব নেই। আমাদের গ্রামের বাড়িটা মফস্বল শহর আর গাছপালায় ঘেরা গ্রামের মাঝামাঝি। অর্থাৎ একেবারে গ্রামের ভিতরেও না আবার মফস্বল শহরে ও না। তবে তাসফি আপুদের বাড়ি মফস্বল শহরে। ওখানে মফস্বল শহরে একটা কমিউনিটি সেন্টার আছে। সেখানেই মূলত নিয়াজ ভাইয়ার বিয়েটা হবে। আমরা বসে বসে কার্ড গুলো দেখছিলাম। তখন সাদু বলে উঠলো,,,
--নিয়াজ ভাইয়া? তাসফি আপুকে একটা ভিডিও কল দিলে কেমন হয়? তাসফি আপুরো কিন্তু একটা পছন্দের ব্যাপার আছে।
একথা শুনে আমিও বলে উঠলাম,,,
--হ্যাঁ ভাইয়া।তাসফি আপু কে ভিডিও কল দেও।
--আচ্ছা দাঁড়া মোবাইলটা নিয়ে আসি।( নিয়াজ ভাইয়া)
ভাইয়া ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে আমাদের কাছে আসলো। আপুর পরীক্ষা বলে বেশি সময় কথা বললাম না আমরা। শুধু তাসফি আপুকে কার্ড গুলো দেখালাম। আপু বলল আমাদের যেটা পছন্দ হয় সেটাই যেন ছাপাই।
কার্ড পছন্দ করে আরও কিছু সময় আমরা কথাবার্তা বলে ডিনার করে ঘুমাতে চলে আসলাম। ঘুমানোর সময় হল আরেক সমস্যা। আমার খাট খুব বেশি একটা বড় না। দুজন মানুষ ঘুমানো যায়। তবে ঘুমাতে গেলে একজনের সাথে আরেকজনের স্পর্শ লাগবে।
-- ওই তোর এইটুকুন খাটে আবার তোর জামাইরে আনছোস কেন?(সাদু)
--কি?(আমি)
-- মানে কোলবালিশ দিসছ কেন মাঝখানে?(সাদু)
-- কেন তুই মনে হয় জানছ না ঘুমানোর সময় কারো হাত পা আমার গায়ে লাগলে আমার ঘুম হয় না।(আমি)
-- তোর জামাইয়ের কাছে কইয়া দেখিছ। তোরে ফুটবলের মত লাথি মাইরা ফালায় দিবো ঘরের থেকা। (সাদু)
-- জামাই বানাইলে তো ফালাইবো।(আমি)
--যা এখন এই তুলার বস্তা সরা।(সাদু)
--আমি জানি তোর ঘুমাইতে ঘুমাইতে মানুষের শরীরে উইঠা যাওয়ার রোগ আছে।তাই এমনেই ঘুমাবি(আমি)
--জীবনেও না।(সাদু)
--জীবনেও হ(আমি)
--না না না (সাদু)
--হ হ হ(আমি)
এমন যুদ্ধ করতে করতে শেষ মেশ সাদু আর না পেরে ওভাবেই শুয়ে পরলো। আমিও সুন্দর করে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকালে উঠে দেখি আমার কোলবালিশ বারান্দার দরজার সামনে। আর আমি কোলবালিশের জায়গায়। সাদুর বাম পা খাটের নিচে অর্থাৎ ফ্লোরে। ডান পা টা খাটের উপর এবং দুহাত দুদিকে ছড়ানো। মূলত ওর একটা হাত আমার মাথার কাছে এসে লাগার ফলে ঘুমটা ভেঙে গিয়েছে। উঠে পুরো বাসায় একটু হাটাহাটি করলাম। তখন হঠাৎ ভাইয়া দরজা খুলে এসে সোফায় বসে পরলো। আমাকে দেখে বলল একটু তাড়াতাড়ি বের হবে। আজ একটা মিটিং আছে। আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সাদুকে উঠানোর জন্য গুঁতোগুঁতি শুরু করলাম। ও আমার সাথে থাকলে আমরা সারাদিন ঝগড়া করি। কিন্তু সাথে থেকেও যদি ঝগড়া না করতে পারি তাহলে ভালো লাগেনা। তাই ওকে উঠানোর জন্য ওর হাত পা ধরে টানাটানি করছি। অনেক টা বিরক্তি নিয়ে সাদু ঘুম থেকে উঠলো। ওকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলাম। এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। খুলে দেখি কমলা আন্টি এসেছে। সচরাচর আন্টি এত সকালে আসে না। আরেকটু পরে আসে। আন্টি এসে প্রতিদিন না করা সত্ত্বেও ঘর মুছে দিয়ে যাবে। মাঝে মাঝে নাস্তাও বানিয়ে দিয়ে যায়।
আমি নাস্তা বানাচ্ছিলাম আর কমলা আন্টি ঘর মুচ্ছিল। তখন সাদু আমার ফোনটা নিয়ে দৌড়ে আমার কাছে আসলো। এমন দৌড় দিয়েছে যে মনে হয় ওকে অলিম্পিকে দিলেও এতো স্পিডে ও দৌড় দিতো না।ও রান্না ঘরে এসে বলল,,,
--এই দেখ তোর চিঠি প্রেমিক হাজির।
ওর থেকে মোবাইল নিয়ে দেখলাম একটা মেসেজ এসেছে -
"তোমার বাবার বারান্দায় একটু আসো। কয়েক দিন একটু বিজি থাকব। তাই আমার বর্ষণ সঙ্গিনীকে দেখতে পাবো না। আর আমি জানি তোমার বাবা এখন ঘরে নেই তিনি বাইরে হাঁটতে বের হয়েছেন। তাই এখন একটু আসো।
তোমার বর্ষণ সঙ্গী"
এরকম একটা মেসেজ দেখে আর আমার সামনে সাদুর বত্রিশ পাটি দাঁত এর হাসি দেখে মোবাইলের ভলিউম বাড়ানোর মত আমার রাগও তরতর করে বেড়ে গেল। সামনেই চোখে পরলো কমলা আন্টি উইপার দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘর মুচ্ছে। পাশেই ঘর মোছা ময়লা পানির বালতি। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বালতি টা পানিসহ হাতে নিয়ে ছুটলাম বাবার রুমে। আমার পিছনে পিছনে সাদুও আসলো। বাবার বারান্দায় যেতেই দেখলাম বান্দা বরাবর নিচে কেউ একজন কালো স্যুট প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথাটা নিচু করে মোবাইলে কিছু একটা করছে। তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। দেরি না করে বালতি টা উঁচু করে সব পানি গুলো দিলাম ফেলে। পানি ফেলে মনের মধ্যে যে এত আনন্দ হচ্ছে তা বলে বোঝানোর মতো না।মুখে চওড়া একটা হাসি নিয়ে সাদুর দিকে তাকালাম। ঠিক তখনই নিচ থেকে কেউ চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,
--ইডিয়েট! স্টুপিড! এই মেয়ে এই!
কাক ভেজা হয়ে আমি আর সাদু দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের সামনে এক তিক্ত মেজাজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলাআবি। ভাইয়া হাতে তার ভেজা কালো কোর্ট। চশমাটা খুলে তার হাতে নেয়া। চুলগুলো ময়লা পানিতে ভিজে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। তার পরনের সাদা শার্ট টারও কিছু অংশ ভিজে গিয়েছে। বলতে গেলে আমরা তিনজনই এখন কাক ভেজা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের পাশেই সোফার উপর বসে নিয়াজ ভাইয়া হাত-পা ছুঁড়ে হাসাহাসি করতে করতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগে,,,
ময়লা পানি গুলো ফেলে যখন তৃপ্তির হাসি হাসছিলাম। তখন পরিচিত কন্ঠের চিৎকারে বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালাম। নিচে তাকিয়ে আলআবি ভাইয়া কে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তাকে দেখেই এখন বোঝা যাচ্ছে তার রাগ ১০৪ ডিগ্রি হয়ে আছে। আলআবি ভাইয়ার মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে আমার মুখের হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে মনে আর একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো। এই মুহূর্তে আলআবি ভাইয়া আমাদের বাসার নিচে কি করছে? আমার অবস্থা দেখে সাদু এগিয়ে এসে নিচে তাকালো। ও বলল,,,
--ঠিক হইছে এক্কেবারে ঠিক হইছে। অতি চালাকের গলায় দড়ি।তোরে কে কইছিল ময়লা পানি গুলি ফিক্কা মারতে?
--হা এখন তো দোষ আমার। তোরে কে কইছিল আমার ফোনটা নিয়ে একেবারে রকেটের বেগে আমার কাছে আসতে। মেসেজ দিছিল থাকতো দেখতে গেলি কেন?(আমি)
সাদু পাল্টা জবাব দেয়ার আগেই আমাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো আমরা। দুজনে গিয়ে ড্রয়িং রুমে দাঁড়ালাম। এর মধ্যে কমল আন্টিও দরজা খুলে দিয়েছে। দেখালাম হন্তদন্ত হয়ে আলআবি ভাইয়া বাসায় ঢুকলো। আমাদের দুজনের দিকে এক নজর তাঁকিয়ে সোজা নিয়াজ ভাই এর রুমে গট গট করে চলে গেল। আমি আর সাদু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। আসলে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ময়লা পানি যেহেতু আলআবি ভাইয়ার উপর পড়েছে সেহেতু তার তো এখন এসে আমাদের একেবারে ধুয়ে দেয়ার কথা। আমাদের কোন প্রকার বকাবকি না করে সোজা ভাইয়ার রুমে চলে গেল কেন? আমরা দুজন কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ আমাদের পানি দিয়ে একেবারে গোসল করিয়ে দিল। ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম আলআবি ভাইয়া দুই হাতে দুইটা বালতি। যার পানি গুলো এখন আমার আর সাদুর গায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এখন এই মুহূর্তে আলআবি ভাইয়ার সাথে সাদুও আমার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে। ওর ভাবভঙ্গিতেই বলে দিচ্ছে আমার জন্য আজ এই অবস্থা। হাসতে হাসতে নিয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো,,,
--জুইঁ পানি ফালানোর জায়গার কি অভাব পড়ছে? ওর মাথাটাই পাইলি তুই পানি ফলানোর জন্য।
বলেই নিয়াজ ভাইয়া আর একচোট হেসে নিল। তখন আমি নিজেই মনে মনে ভাবছিলাম উনি আবার না সেদিনের মতো বলে বসে "ক্লিন ইট"। আমার মনের ভাবনা শেষ হতে না হতেই আলআবি ভাইয়ার কথা শুরু হয়ে গেল। আমার হাতে তার কোর্ট টা ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,,,
--ক্লিন ইট!
তার এমন কথায় নিয়াজ ভাইয়ার সাথে সাদুও যোগ দিল।ওদের হাসাহাসি দেখে মনে হচ্ছে আমি মিরাক্কেলের কোনো পার্টিসিপেট আর ওরা দুজন বিচারক। এবার আমার অতিমাত্রায় রাগ উঠে গেলো। আমি কেন তার জামাকাপড় ধুবো? আমাকে দেখে জন্মগত ধোপা মনে হয় নাকি?একবুক সাহস নিয়ে জোর গলায় বলে উঠলাম,,,
-- আমি কি আপনার জামা কাপড় ধুয়ে দেয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করেছি নাকি?
উনি দ্বিগুন জোরে বলে উঠলেন,,
--তো কি আমার মাথায় পানি ঢালার জন্য জন্মগ্রহণ করেছ?
এবার আমি একটু অনুনয়ের সুরে বলে উঠলাম,,,
--দেখুন এখানে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আর আপনার মাথায় পানি ঢালার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। আই এম সরি!
--তোমার সরি দিয়ে যদি আমার জামা কাপড় শুকিয়ে যেত তাহলে সরি টা একসেপ্টেবল হতো।(আলআবি ভাইয়া)
--আসলে আমি বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম অন্য কেউ। (আমি)
--তা তুমি অন্যের মাথায় পানি ঢেলে বেড়াও কেন? তোমাকে কি কেউ এই চাকরি দিয়েছে নাকি?আজ কতো ইম্পর্টেন্ট একটা মিটিং আছে জানো তুমি?(আলআবি ভাইয়া)
তারপর নিয়াজ ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়াকে সব খুলে বলতে লাগলাম। তাদেরকে শুধু লোকটার পাঠানো মেসেজ দেখিয়েছি। নিয়াজ ভাইয়া কে যখন লোকটার পাঠানো সেই বিকেল বেলার মেসেজ দেখালাম তখন হঠাৎ করে ভাইয়ার কাশি উঠে গেল। বুঝতে পারলাম না কি এমন হল যে মেসেজ দেখে তার কাশি উঠবে। ভাইয়াকে ধীরেসুস্থে বসিয়ে সাদু আর আমি পানি খাওয়াতে লাগলাম। তখন হঠাৎ করে খেয়াল করলাম আলআবি ভাইয়ার এসব নিয়ে কোন ভাবান্তর নেই। সে সোফায় বসে আরাম করে মোবাইলে কিছু একটা করছে। এরই মাঝে দ্বিতীয়বারের মতো কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি বাবা এসেছে। আলআবি ভাইয়া বাবাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে পরল। সালাম দিয়ে বললেন,,,
--আঙ্কেল ভালো আছেন?
বাবা হাসিমুখে উত্তর দিল,,,
--আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। তোমার কি খবর?তুমি কেমন আছো?
--জ্বী আঙ্কেল আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি।(আলআবি ভাইয়া)
--তো তুমি এতদিন পরে যে বাসায় আসলে? এর মাঝে আর আসলেনা কেন?(বাবা)
--আঙ্কেল আসলে অফিস আজকে একটা ইমপোরটেন্ট মিটিং ছিল তো তাই নিয়াজের সাথে কিছু ডিসকাস করার ছিল। এজন্য আজ আমরা প্ল্যান করেছি একসাথে অফিসে যাব। রাস্তায় ডিসকাস করতে করতে যেতে পারবো।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়া যতক্ষণ বাবার সাথে কথা বলেছি ততক্ষণ নিয়াজ ভাইয়া সোফায় গোমরা মুখ করে বসে ছিল। তারা দুজন অফিসে চলে গেলে আমি আর সাদু ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পড়ি। ভার্সিটিতেও আমি আমার সাদু আজকের সকালের এই পুরো ঘটনা নিয়ে সারাক্ষণ ঝগড়া করি। দিনে মানুষের তিনবেলা খাবার যেমন প্রয়োজন আমাদের তিন বেলা ঝগড়া প্রয়োজন। ভার্সিটিতে ক্লাস করে বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমিয়ে থাকি।
মাগরিবের নামাজের পর নুডুলস রান্না করে বাবাকে দিয়ে এসে আমি আমারটা আমার রুমে বসে খাচ্ছিলাম। এমন সময় ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। খেতে খেতেই ফোনটা হাতে নিলাম মেসেজ দেখার জন্য।
" আমার বর্ষণ সঙ্গিনী,
তুমি কি এখনো ছোট আছো বলো। এইসব কি ভাইয়াকে বলতে হয়? তুমি যতই ভাইয়াকে নালিশ করো তুমি তো আমার সারা জীবনের #বর্ষণ_সঙ্গিনী হয়েই থাকবে। আর আজকে সকালের কাজটা কিন্তু তুমি মোটেও ভালো করনি ।ওখানে আলআবি ছিল বলেই তুমি বেঁচে গিয়েছ।
তোমার বর্ষণ সঙ্গী...
চলবে...
Writer:- হুমাশা এহতেশাম