> তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব ১৯, ২০ - Bangla Love Story - প্রেমের গল্প - ভালোবাসার গল্প - Bangla New Story - রোমান্টিক গল্প - দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প
-->

তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব ১৯, ২০ - Bangla Love Story - প্রেমের গল্প - ভালোবাসার গল্প - Bangla New Story - রোমান্টিক গল্প - দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প

বাড়াবাড়ির কিছু দেখছি না তো বড় আব্বু। আভিয়ান ভাইয়ার যেমন এ বাড়ির প্রোপাটি ওপর অধিকার আছে তেমন আমারও আছে। ইনফ্যাক্ট আমার একটু বেশি অধিকার আছে কারণ আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান। তোমার প্রোপাটি দুই ভাগ হয়ে অহি আর আভিয়ান ভাইয়া পাবে। আব্বুর প্রোপাটি শুধু আমি একা পাবো। তো আমি কেনো বাসে-রিকশায় করে ভার্সিটি যাবো?

কথাগুলো বলে কণা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কণার কথাগুলো শুনে তিশান আহম্মেদ স্তব্ধ হয়ে গেছেন। উনি ভাবতে পারছেন নাহ যে কোনোদিন তাদের প্রোপাটি ভাগাভাগি নিয়ে কথা ওঠবে। কণা ডিরক্টলি না বললেও কথার ধরনে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কণা চাইলেই তার ভাগের প্রোপাটি নিয়ে নিতে পারে। প্রোপাটি নিয়ে তিশান আহম্মেদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। উনি ভাবছেন তার পরিবারটা কী তাহলে ভেঙে যাবে?

৪২

ভার্সিটি এসেই ক্যান্টিনে চলে যায়। আমি জানি সবাই ঐখানেই অপেক্ষা করছে। আমরা ভাবনাকে সত্যি করে দিয়ে সাফাত ভাইয়া, নোমান ভাইয়া আর বন্যা ক্যান্টিনে বসে আছে। আমিও গিয়ে তাদের সাথে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। 

কী সাফাত ভাইয়া কি বলে প্রোপোজ করবে? 

আরে কণা কী বলবো? কিছুই বুঝতে পারছি না। প্রচণ্ড নার্ভাস লাগছে। 

নোমান ভাইয়া ঠাট্টার সুরে বলে, মামা এতো চাপ নিও না। একটা রিং নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে বলবা, অহি বেবি আমার বাচ্চার মা হিসেবে তোমাকেই চাই। হবে কী আমার বাচ্চার মা? দিবে না তোমার মাকে আমার বাচ্চার নানি হওয়ার সুযোগ?

নোমান ভাইয়ার কথায় আমি আর বন্যা হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের ওপর ঢলে পড়ছি। নোমান ভাইয়া মিটিমিটি হাসছে। সাফাত ভাইয়া নোমান ভাইয়ার পিঠে ধুমধাম মারা শুরু করে। সাফাত ভাইয়ার মার খেয়ে নোমান ভাইয়া জুরে হেসে দেয়। নোমান ভাইয়া আর আমাদের হাসির শব্দ শুনে ক্যান্টিনের অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সেদিকে আমাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। আমরা আমাদের মতো প্রাণ খুলে হেসে যাচ্ছি। 

শালা তুই প্রেম করার আগেই আমার ব্রেকআপ করাতে চাইছিস। দেখবি বিয়ের দিন তোর বউ পালিয়ে যাবে। 

শালা বলবি না। শালা বললে আমার বোনকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে না করতে চাইলে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিব। তারপর অহিকে বিয়ে করার স্বপ্ন তোর স্বপ্নই থেকে যাবে। 

উফ তোমরা কী এখানে ফাজলামো  করার জন্য বসছো? তোমরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আমরা এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে আসছি। আর আলোচনাটা অহি আসার আগে শেষ করতে হবে। 

নোমান ভাইয়া ফাইজলামি করে বলে, ইয়েস ম্যাম। 

আমি আলতো হেসে নোমান ভাইয়ার বাহুতে একটা থাপ্পড় দিলাম। সাফাত ভাইয়া মাথা চুলকে বলে,

আমি কী অহিকে সরাসরি আই লাভ ইউ বলে দিবো? না না না সাফাত চৌধুরী এতো নরমাল ভাষায় প্রোপোজ করতে পারে না। কণা প্লিজ হেল্প মি? 

“আমি আমার থেকেও তোমাকেই বেশি ভালোবাসতে চাই, তুমি কি সেই অধিকারটুকু আমাকে দিবে?” এইগুলো বলতে পারো। 

যাক বাবা একটা টেনশন থেকে মুক্ত হলাম। 

আমাদের কথার মাঝেই আমার পিঠে কেউ ধাম করে চড় বসিয়ে দিলো। পিছনে তাকিয়ে দেখি অহি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অহির দৃষ্টি দেখে আমি একটা ঢোক গিলি। মনে মনে দোয়া পড়ছি। অহি আমাকে আজকে কাঁচা গিলে খাবে। আমি পালানোর রাস্তা খুঁজছি। কথায় আছে না যেখানে ভাগের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। তেমনি আমিও কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। পিছনে অহি সামনে টেবিল একপাশে সাফাত ভাইয়া আরেক পাশে দেয়াল। এখন আমি কী করি? 

কণা তুই আজকে এতো আগে ভার্সিটি কেনো এলি? আসবি ভালো কথা আমাকে নিয়ে আসবি না?

এখন আমি কী বলবো? শুকনো গলায় দুই তিনটে ঢোক গিললাম। অহির দৃষ্টি আমার দিকে স্থির কিন্তু আমি বার বার এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। 

সাফাত ভাইয়া গম্ভীর গলায় বলে, কণা বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেইটে গিয়েছিল। তোমাকে কী সেখানেও নিয়ে যেতো? 

সাফাত ভাইয়ার কথায় আমার চোখ আপনা আপনি বড় হয়ে যায়। সাফাত ভাইয়া এসব কী বলছে? আমার বয়ফ্রেন্ড আবার তার সাথে ডেইটে গিয়েছি। হাউ ইজ পসিবল? কথাগুলো নিজের মনেই চেপে রাখলাম। কারো সামনে প্রকাশ করলাম না। 

অহি চিৎকার করে বলে, হোয়াট। কণার বয়ফ্রেন্ড আছে? কণা তুই আমাকে বললি না তোর বয়ফ্রেন্ড আছে? কোথায় কণার বয়ফ্রেন্ড? 

সাফাত ভাইয়া বেশ স্বাভাবিক গলায় বলে, কেনো আমাকে চোখে পড়ে না? আমি কী কণার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার যোগত্যা রাখি না? 

সরি। 

কথাটা বলে অহি চলে যায়। 

তোমার অহিকে জেলাস ফিল না করালে চল না? দেখলে মেয়েটা কতো কষ্ট পেয়েছে?

পরে যে সারপ্রাইজটা পাবে তার কাছে এই কষ্ট কিছুই না। 

হ পরে আমার পিঠ ভাঙবো। 

নিজের ভাইয়ের জন্য এইটুকু করতে পারবি না? 

আমি ফাইসা গেছি 
ফাইসা গেছি মাইনক্যা চিপায় 

৪৩

লাফাইতে লাফাইতে করিডোর দিয়ে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। তখনি কেউ পিছন থেকে আমার মুখ চেপে ধরে। আমাকে ধরে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়। ক্লাস রুমটা গুটগুটে অন্ধকারে। 

আমাকে যে নিয়ে আসছে আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু এইটুকু বুঝেছি যে আমাকে নিয়ে আসছে সে মেয়ে নয় ছেলে। কারণ লোকটার শরীর থেকে আমি মেইল পারফিউমের স্মেল পেয়েছি। হুট করে লোকটি আমার হাত দুটো দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। এতে যেনো আমার আত্না কেঁপে ওঠে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, 

“তুমি শুধুই আমার আগামিকালের জন্য, চিরকালের জন্য এবং পরের জন্মেও আমি তোমাকেই চাই”।

লোকটার প্রতিটা নিশ্বাস আমার কানে বারি খাচ্ছে। আমার মনে অদ্ভুত এক ফিলিংস কাজ করছে। লোকটার নেশাক্ত কন্ঠে আমার ভিতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। আচমকা লোকটা আমার কাছে চলে আসে। এবার আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো আমি ধম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। হুট করে লোকটি আমার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। 

আমার দ্বিতীয় কিসটা তোমার নামে করে দিলাম। 

রুমের লাইট জ্বলে ওঠে। অন্ধকারের মাঝে হঠাৎ করে চোখে আলো পড়ায়। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। রুমে এখন আলোকিত তার মানে আমি এখন লোকটিকে দেখতে পাবো। তাড়াতাড়ি চোখ খুলি। 

কিন্তু চোখ খুলে আমি কাউকে দেখতে পাই না। সারা রুমে চোখ বুলাই কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। তার মানে আমার চোখ বন্ধ করার সুযোগে লোকটি চলে গেলো। ইশ একটুর জন্য লোকটাকে দেখতে পেলাম না। তারপর ক্লাসে চলে এলাম। ক্লাসে এসে দেখি অহি চুপচাপ পিছনের বেঞ্চে বসে আছে। আমি ও গিয়ে অহির পাশে ধপ করে বসে পড়লাম। 

তুই কী আমার সাথে রাগ করেছিস? 

আরে না আমি আপনার সাথে রাগ করতে যাবো কেনো? আমি রাগ করলে আপনার কী? কী হই আমি আপনার? 

তুই আমার সাথে এমন করে কেনো কথা বলছিস?

কেমন করে কথা বলছি? সবাই বলে, মানুষ ভালোবাসার মানুষ পেলে তার বেষ্টফ্রেন্ডকে ভুলে যায়। কিন্তু আমি কথাটা বিশ্বাস করতাম নাহ। কিন্তু তুই আমাকে কথাটা বিশ্বাস করিয়ে দিলি। 

অহি সরি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। এমন ভুল আর হবে না। আসলে সাফাত ভাইয়া সকালবেলা ফোন করে তাড়াতাড়ি দেখা করতে বললো। তারাহুরা করতে গিয়ে তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ( কানে ধরে ঠোঁট উল্টে কথাগুলো বললাম। ) 

অহি আমার হাত কান থেকে ছাড়িয়ে বলে, হইছে হইছে আর ঢং করতে হবে না। বয়ফ্রেন্ডকে কেউ ভাই ডাকে? 

বয়ফ্রেন্ড না ছাই। মনে মনে কথাটা বলে মুখে বললাম,  ঐ আগের অভ্যাস তো তাই। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস তো ?

ক্ষমা করে দেবো এক শর্তে। 

কী শর্ত?

আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে। 

ওকে ডান। 

৪৪

ভার্সিটি শেষে আমি, অহি আর বন্যা মিলে ফুচকা খেলাম। ফুচকা খাওয়া শেষে বন্যাকে নিয়ে নোমান ভাইয়া চলে গেলে। 

 কণা চল আজকে ঐ নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে বাসায় যাই। 

না না ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। নদীর পাড়ের রাস্তা অনেক নিড়িবিলি জায়গা। যদি কোনো বিপদ হয়। 

আরে কিচ্ছু হবে না চল না। ঐ দিক দিয়ে গেলে মনটা ভালো হয়ে যায়। 

আর কিছু না ভেবে আমি রাজি হয়ে গেলাম। যদি সত্যিই অহির মন ভালো হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। রাস্তাটা জনমানব শূন্য। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে। আচমকা আমাদের সামনে একটা গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে বেশ কিছু ছেলে বের হয়ে এলো। আমরা কিছু বলার আগেই আমাদের মুখে রুমাল চেপে ধরে। 


আর কিছু না ভেবে আমি রাজি হয়ে গেলাম। যদি সত্যিই অহির মন ভালো হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। রাস্তাটা জনমানব শূন্য। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে। আচমকা আমাদের সামনে একটা গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে বেশ কিছু ছেলে বের হয়ে এলো। ছেলেগুলো মুখ মাস্ক লাগানো থাকায় চিনতে পারছি না এরা কারা। 

অহি ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। অহি আমার হাতটা জুড়ে চেপে ধরে।আমরা কিছু বলার আগেই আমাদের মুখে রুমাল চেপে ধরে। অহি সাথে সাথেই অঙ্গান হয়ে যায়। অহি পড়ে যেতে নিলে সাফাত ভাইয়া এসে ধরে ফেলে। আমি নোমান ভাইয়ার পেটে কুনুই দিয়ে গুতা দিলাম।

আরে ভাই তুই কী আমার শালিকারে মারার প্লেন করছস নাকি? 

সাফাত ভাইয়ার কথায় নোমান ভাইয়া আমার মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে দেয়। মুখ থেকে রুমাল সরাতেই আমি জুরে শ্বাস নেই। 

নোমান ভাই আমি তোমার কোন জীবনের শত্রু ছিলাম? যেভাবে মুখে রুমাল চেপে ধরেছিলে আরেকটু হলেই তো ধম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। 

সরি শালিকা বুঝতে পারি নাই। 

আজকে কী শালিকা ডে? 

কেনো? ( দুইজন একসাথে বলে) 

না মানে তোমরা কখন থেকে আমাকে শালিকা ডাকছো। সে যাই হোক তুমি এখন অহিকে নিয়ে যাও। আর আমাদের ট্রিটটা কিন্তু পাওনা রইল। 

কীসের ট্রিট? ( সাফাত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলে) 

নোমান ভাইয়া সাফাত ভাইয়ার পিঠে ধুম করে কিল মেরে বলে, হারামি তোর জন্য আমরা এতকিছু করলাম। আর তুই আমাদের ট্রিট দিবি না। এই যে জুনিয়র ভাইরা ( নোমান ভাইয়া তাদের সাথের ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বলে।) তোমরা কী তোমাদের ভাইকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে? 

না না একদমি না। আমাদের ট্রিট চাই। ( সবাই একসাথে বলে ওঠে। ) 

 তোমাদের ভাবি যদি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করে তাহলে আগামীকাল সন্ধায় পার্টি হবে। 

সাফাত ভাইয়া কথাটা বলে অহিকে কোলে তুলে নেয়। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাফাত ভাইয়া চলে যায়। আমিও সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। রাস্তা দিয়ে একা একা হেঁটে বাসায় আসছি। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। পিছনে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। আবার নিজের মতো করে হাঁটতে শুরু করি। 

অহিকে কিডন্যাপিংয়ের প্লেনটা আমারি ছিল। অহি এখানে আসা ফুচকা খাওয়া সবকিছু আমাদের প্লেনের অংশ ছিল। 

৪৫

অহি চোখ খুলে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করে। সে একটা বিছানার ওপর শুয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা একটা রুম। আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে এটা কারো ফার্ম হাউজ। অহি মাথা চেপে ধরে শুয়া থেকে ওঠে বসে। মাথাটা চিন চিন ব্যথা করছে। কণার কথা মনে হতেই তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। পা বাড়ায় দরজার দিকে। 

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে সে যে রুমটাই আছে ঐ রুমটা ছাড়া সব জায়গা অন্ধকার। হয়তো রাত হয়ে গেছে। এই রুমটায় লাইট জ্বালানো তাই অন্ধকার নেই। অহির একটু ভয় করছে। কিন্তু এখন ভয়কে পাত্তা দিলে চলবে না তাকে কণাকে খুঁজতে হবে। 

রুমের সামনের জায়গাটা হয়তো ড্রয়িংরুম। অহি এগিয়ে যায়। কিছু একটার সাথে অহির পা আটকে যায়। প্রায় সাথে সাথেই একটা স্পট লাইট এসে অহির ওপর পড়। অহি সামনে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে যায়। কারণ তার সামনে সাফাত রিং হাতে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। 

তোমার মুখের হাসি টুকু লাগে আমার ভালো,তুমি আমার ভালবাসা বেঁচে থাকার আলো।রাজার যেমন রাজ্য আছে আমার আছ তুমি,তুমি ছাড়া আমার জীবন শূধু মরুভুমি।“আমি আমার থেকেও তোমাকেই বেশি ভালোবাসতে চাই, তুমি কি সেই অধিকারটুকু আমাকে দিবে?”

অহির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সব কথা গলার মাঝে এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছু তার কাছে কল্পনার মতো মনে হচ্ছে। মুখে হাত দিয়ে কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অজশ্র অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। 

এটা কষ্টের নয় সুখের কান্না। নিজের ভালোবাসাকে এভাবে নিজের করে পাবে এটা অহি আশাও করেনি। সে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। সাফাতের দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দেয়। অহির হাত মৃদু কাঁপছে। সাফাত অহির হাতে রিংটা পড়িয়ে দেয়। তারপর অহির হাতের উল্টো পিঠে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দেয়। অহি নিজের হাতে সাফাতের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেঁপে ওঠে। সাফাত ওঠে দাঁড়াতেই অহি সাফাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাফাতও দুই হাতে আগলে নেয় নিজের প্রেয়সীকে।

আপনি খুব খারাপ সাফাত ভাই। 

কেনো? 

আপনি আমাকে ভালোবাসেন তবু আমাকে বলেন নাই। উল্টো আমাকে কষ্ট দিয়ে গেছেন। আপনার সাথে কথা নাই সাফাত ভাইয়া। 

আমি কেনো বলবো তুমি বুঝতে পারো না। যে আমি তোমাকে ভালোবাসি আর কণাকে তো আমি নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসি। আমার বুঝি কষ্ট হয় না কথায় কথায় আমাকে ভাইয়া বলে ডাকো। তুমি হয়তো আভিয়ানকেও এতোবার ভাইয়া বল না যতবার আমাকে বলো। জানো তোমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনলে আমার বুকে চিন চিন ব্যথা করে। 

সাফাতের কথায় অহি খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়। নিজেকে সাফাতের কাছ থেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে যায়। তখনি ড্রয়িংরুমের লাইট জ্বলে ওঠে। সম্পূর্ণ ড্রয়িংরুমে চোখ বুলিয়ে অহি স্তব্ধ হয়ে যায়। ড্রয়িংরুমটা ফুল, লাভ শেইপ বেলুন আর মিনি লাইট দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। ড্রয়িংরুমের মাঝখানে একটা ছোট টেবিল রাখা। টেবিলটাও সুন্দর করে ফুল দিয়ে ডেকোরেট করা। টেবিলের মাঝখানে একটা কেক রাখা। 

কী ম্যাডাম সাজানো পছন্দ হয়নি? 

অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে। এসব কী আপনি একা করেছেন?

না। আমি, নোমান আর আমাদের ভার্সিটির জুনিয়র কিছু ছাত্র মিলে সাজিয়েছি।

এগুলো আগে থেকে প্লেন করা ছিল?

হুম। 

আমাকে কিডন্যাপ করা এসব আয়োজন করা সবকিছু কণার প্লেন ছিল তাই না? 

কেনো আমার প্লেন হতো পারে না? 

আমি জানি এসব দুষ্টুমি বুদ্ধি কণার মাথা ছাড়া আর কারো মাথা থেকে বের হবে না। এখন আমার কাছে সবকিছু ক্লিয়ার। এসব প্লেন করার জন্যই কণা আমাকে রেখে আগে ভার্সিটি চলে এসেছিল। আর আমাকে কিডন্যাপ করার জন্যই আপনি বলেছিলেন, কণাকে নিয়ে যেনো নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে আসি। আপনি কণাকে একটা সুন্দর সারপ্রাইজ দিতে চান। 

হুম। 

কণা কোথায়? 

কণা বাসায় চলে গেছে। কণা বাসায় গিয়ে বলবে আজকে রাতে তুমি বন্যাদের বাসায় থাকবে। 

৪৬

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মিদুর সাথে কথা বলছি। মিদুর সাথে প্রতিদিন কথা বলা যেনো আমার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওর সাথে কথা না বললে আমার একদমই ভালো লাগে না। আমি যখন মিদুর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত তখনি আমার হাতে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে।
তাকিয়ে দেখি কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন আসছে।

এদের খায়া কোন কাজ নাই। সময় অসময় মানুষকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে। উফ অসহ্য।

ফোনটা কেটে দিলাম। ফোন কাটার সাথে সাথেই মেসেজ টোন বেজে ওঠলো। ঐ চিঠি প্রেরকের মেসেজ। চিঠি প্রেরকের মেসেজ দেখেই সকালের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো সাথে ঐ বজ্জাতের কথাটা মনে পড়ে গেলো। 

আমার দ্বিতীয় কিসটা তোমার নামে করে দিলাম।

আগে আরেকটা মেয়ের সাথে লুতুপুতু করে। এখন আসছে আমার সাথে লাইন মারতে। আবার কী সুন্দর করে মেসেজ পাঠিয়েছে। 

তোমার কি ভালবাসা চাই?কোন ভালবাসা? কতটা, কত গভীরতার?যা চাও সবই দিতে পারব আমি।ভালবাসার জন্য তাজমহল আমি বানাতে পারব না ঠিকই তবে আমার হৃদয়ে যে তাজমহল, তোমার জন্য তা কি দেখে কখনো শেষ করতে পারবে?

আমাকে রোমান্টিক মেসেজ পাঠানো তাই না? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা। 

ঐ পোলা তোর লজ্জা করে না ঘরে বউ রেখে আমার সাথে লুতুপুতু করতে চাইছিস। 

এখানে লজ্জার কী আছে? বউ বউয়ের জায়গায় গার্লফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের জায়গায়। 

এই মেসেজটা দেখে কণার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে। ছেলেটিকে কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কণার কোনো গালি মনে পড়ছে না। এখন কণার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেনো যে বন্যার কাছ থেকে কিছু গালি শিখে রাখলো না। মানুষ বলে, জীবনে সবকিছু শিখে রাখতে হয়। কারণ সময় মতো সবকিছু কাজে লাগে। 



চলবে...



Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া



NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner