> ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ২৫, ২৬ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প
-->

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ২৫, ২৬ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প

জাহাজ ছাড়ার শব্দ কানে আসছে।মাত্রই হয়তো কোনো দূরপাল্লার জাহাজ ছেড়েছে।আশেপাশে তেমন দোকানপাট নেই হাতেগোনা ৩/৪ টা ছাড়া।পাশেই একটা বটতলা আছে।বেশি রাত না হলেও জায়গাটা অনেক নিরিবিলি।নদীর ঠান্ডা জল ছুয়ে বাতাস শরীর স্পর্শ করছে।ইফাজ নিহার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ রইলো তারপর নিরবতা ভেঙে বলল,'ভালোবাসা সবার ভাগ্যে থাকে না নিহা।তেমন আমার ভাগ্যেও নেই।যাকে ভালোবাসি সে ইয়াদকে ভালোবাসে।ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।ওদের মাঝে আমি থার্ড পার্সন।আর থার্ড পার্সন যতোই চেষ্টা করুক ফার্স্ট আর সেকেন্ড পার্সনের মাঝে আসতে পারে না।প্রথমে চেয়েছিলাম ইয়াদকে সব বলে দেই।তাহলে ইয়াদ মধুর জীবন থেকে সরে যাবে।কিন্তু যতোবারই বলতে গিয়েছে ইয়াদ আর মধুর হাসিখুশি মুখটা সামনে ভাসতো।আমি বড়ভাই হয়ে ওকে কিভাবে কষ্ট দিবো বলো!সেইজন্য বলতে পারি নি।কথাগুলো নিজের মাঝেই রেখেছি এতোদিন।আজ তোমায় বললাম।আমার ভরসা ভেঙো না।'

ইয়াদের কথা শেষ হতেই নিহা ইয়াদের হাতে হাত রেখে ভরসা দিলো।ইয়াদ নিহার হাত নিজের হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে আবার বলতে লাগলো,'জানো,যেদিন দেশে এসেছি ওইদিন সন্ধ্যায় ওর সাথে আমার দেখা হয় প্রথম।ওইদিন থেকে ভালো লাগা শুরু।এরপর অনেকবার লুকিয়ে চুরিয়ে দেখেছি ওকে।একটা সময় যখন কিছুদিনের জন্য চোখের আড়াল হয়েছিলো তখন মনে আমি বুঝতে পেরেছি আমার কিছু হয়ে গেছে।আমি অনেকবার বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলতে পারি নি।আমি তখনও জানতাম না ইয়াদের সাথে ওর রিলেশন।কিছুদিন আগে যখন আমি চেম্বার থেকে বাসায় ফিরেছি তখন আমি ওকে দেখে অবাক হয়েছিলাম।পরে মা আর ইরিনের কথায় জানতে পারলাম মধু আর ইয়াদের রিলেশন চলছে।সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিলো।চেয়েছিলাম স্বার্থপর হতে কিন্তু বিবেকের কাছে বারবার হেরে গিয়েছিলাম।'

ইফাজ থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।নিহা ইফাজকে টেনে বটতলায় নিয়ে বসালো ইফাজের মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে বলল,'জানো এইজন্যই তোমাকে ভালোবাসি।সেই ছোট থেকে তোমাকে দেখছি।নিজে গুমরে মরবে তবু কাউকে কিছু বলবে না।সেইজন্য সবাই তোমাকেই দোষী ভাবতো কিন্তু আমি জানি তুমি দোষী না।কেনো জানি মনে হতো একমাত্র আমিই তোমাকে বুঝতে পারি।'

ইফাজ নিহার কাঁধ থেকে নিজের মাথা উঠিয়ে বলল,'আমার কিছুদিন সময় লাগবে নিহা।শরীরের ওপর চললেও মনের ওপর তো জোর চলে না বলো!"

'সারাজীবন সময় লাগলে তাও নিয়ে নাও,শুধু আমায় তোমার পাশে থাকতে দাও,ভালোবাসতে দাও।'

আরো কিছুক্ষণ সুখ দুঃখের আলাপ চললো।তারপর ইফাজ নিহাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো।বাড়িতে এসে বেল বাজাতেই ইরিন দরজা খুললো।ভাইয়ের সাথে একটা মেয়েকে দেখে বধূবেশে দেখে ইরিন অবাক হলো।মেয়েটাকে ইরিন চেনে।ভাইয়ের ক্লাসমেট।কিন্তু এইমেয়ে তাও আবার এই বেশে।ইরিন কিছু একটা ভাবলো।মানুষের মন বলে কথা।ইফাজ ইরিনের দিকে তাকিয়ে বলল,'তোর ভাবী।যা মাকে ডাক।'

ইরিন দরজায় দাঁড়িয়ে গলা হাকিয়ে ডাকতে লাগলো,'মা,মা ও মা।'

সাইদা খান কিচেন থেকে চিল্লিয়ে বলল,'কি হইছে গরুর মতো চিল্লাচ্ছিস কেনো?'

'এদিকে এসে দেখো তাহলে তুমি ষাঁড়ের মতো চিল্লাবা।'ইরিনও জোরেজোরেই বলল।

রান্না ঘর থেকে সাইদা খান বেরিয়ে এসে দরজার সামনে আসতেই ইফাজের সাথে নিহাকে দেখে প্রথম দফায় অবাক হলো।আর দ্বিতীয় দফায় চিল্লিয়ে ওদের বাবাকে ডাকলো।ইয়াফ খান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে দরজার সামনে আসলো।ওদের দিকে এক পলক দেখে বলল,'ঘটনা কি ইফাজ?'

ইফাজ নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,'আমি বিয়ে করেছি বাবা।'

ইফাজ আর নিহা ছাড়া উপস্থিত সবাই একমুহূর্তের জন্য নির্বাক হয়ে গেলো।মনে হলো খুব সূক্ষ্ম একটা বাজ ইতিমধ্যে পড়ে গেছে।এখন শুধু রিয়াকশনের অপেক্ষা।ইয়াফ খান নিজেকে সামলে বলল,'ইফাজ,ওকে নিয়ে ভেতরে আয়।'

ইফাজ আর নিহা ভেতরে আসলো।দুজনকে একপাশের সোফায় বসিয়ে ইয়াফ খান আর সাইদা খান মুখোমুখি সোফায় বসলো।আর ইরিন ইয়াদকে ফোন দিলো ব্রেকিং নিউজ দেওয়ার জন্য।

ইয়াফ খান ইফাজকে উদ্দেশ্য করে বলল,'ইফাজ হঠাৎ করে এমন করলি কেনো?'

ইফাজ কিছু বলার আগেই নিহা বলল,'বাবা,আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি কিন্তু এক সপ্তাহ আগে ইফাজ আমার সাথে রাগ করেছিলো।তাই আমিও উল্টো রাগে অন্যকাউকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই।তারপর আজ যখন বিয়ে হয়ে যাচ্ছিলো তখন ইফাজ আমাকে ফোন দিয়ে বলছিলো 'নিহা প্লিজ তুমি বিয়ে করো না।আমি তোমাকেই ভালোবাসি।সরি আর রাগ করবো না।' ওর এমন কথা শুনে আর আমি থাকতে পারি নি।বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।তারপর বিয়ে করে নিয়েছি।সরি আব্বু,সরি আম্মু।তোমাদের ছাড়াই বিয়ে করে ফেলেছি।'

নিহার কথা শুনে ইয়াফ খান হেসে বলল,'সমস্যা নাই।তোদের বিয়ে আবার দিবো।'

নিহা খুশিতে গদগদ হয়ে ইফাজকে টেনে নিয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে সালাম করলো।সাইদা খান নিজের হাতের বালা জোড়া নিহার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল,'আমার ছেলেটাকে নিয়ে সুখী হও মা।'

ইয়াফ খান নিহাকে নিজের পাশে বসিয়ে বলল,'কালকে তোমার বাবা মাকে আসতে বইলো কেমন!'

'আব্বু আম্মু অনেক বকা দিবে আব্বু।'নিহা কৃত্রিম ভীতকন্ঠে বলল।

ইয়াফ খান নিহাকে মাথায় হাত রেখে বলল,'তোর বাবার সাথে আমি কথা বলবো তুই চিন্তা করিস না।'

নিহা শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,'থ্যাংকিউ বাবা।'

এতক্ষণ ইফাজ নিহার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো।কি বড় মিথ্যুক!তার চেয়ে বড়ো কথা কি সুন্দর সবাইকে হাত করে ফেলেছে।তবে ইফাজও অবশ্য মনেমনে বলার জন্য কিছু সাজিয়ে রেখেছিলো।কিন্তু নিহা যে মনেমনে এগুলো ভেবে রেখেছিলো ইফাজ ভাবে নি।তবে যাইহোক খুব সুন্দর ভাবে সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করে ফেলেছে নিহা।

এরমধ্যে ইয়াদও আসলো।ইয়াদ,ইরিন মিলে ভাবীর সাথে আড্ডা মারা শুরু করলো আর ইফাজ ফ্রেশ হতে গেলো।

রাতে ইয়াদ আর মধু কথা বলছিলো।তো কথার একপর্যায়ে ইয়াদ বলল,'ওহ!একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।'

'কি কথা?'

'ভাইয়া আজকে বিয়ে করেছে।'

মধু চমকে বলল,'কি বলছেন?কিভাবে কখন?'

ইয়াদ সবটা বলার পর মধু তেমন কিছু না বললেও আরিয়ার জন্য কষ্ট পেলো।তবে যাইহোক যা হয় ভালোর জন্য হয়।হয়তো আরিয়া আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করে।তবে আরিয়া এটা শোনার পর কষ্ট পাবে।
------------------------
পরেরদিন ইয়াফ খান নিহার বাবার সাথে কথা বলে বিয়ে দিন,তারিখ ঠিক করে ফেলে।তারপর নিহাকে সাথে নিয়ে ওর বাবা চলে যায়।বিয়ের আগ পর্যন্ত নিহা বাবার বাড়িতে থাকবে।বিয়ে সামনের শুক্রবার।মাঝখানের দিনগুলোতে সব ডেকোরেশন আর কেনাকাটা চলবে।ডেকোরেশন,শপিং এগুলো দেখবে মধু আর ইরিন আর ইয়াদ রান্নাবান্না,ইনভাইটেশন,আর ভাইয়ের শপিংয়ের দায়িত্বে।বিয়ে উপলক্ষে ইয়াদের মায়ের আবদার রাখতেই বিয়ে মিটে যাওয়া পর্যন্ত মধু ওদের বাড়িতে থাকবে।অবশ্য এই বুদ্ধি ইয়াদের মায়ের না এই বুদ্ধির মালিক ইয়াদ নিজেই।

মধু, ইরিন  আর সাইদা খান সোফায় বসে নিহার আর ওর মায়ের অপেক্ষা করছে।নিহা এলে ওরা তিনজন আর দুই বেয়াইন মিলে শপিংয়ে বের হবে।
আর এদিকে ইয়াদ ওর বন্ধুদের নিয়ে যাবে শপিংয়ে।ইফাজের ডিউটি আছে।সে কিছুতেই ডিউটি মিস দিতে পারবে না।তাই ইয়াদকেই শপিং করতে হবে।

সব আয়োজন শেষ।এই কয়টা দিন সবাই মোটামুটি ব্যস্ত ছিলো।আজকে গায়ে হলুদ।ইফাজ সন্ধ্যা ডিউটি থেকপ আসতেই ওকে ওর বন্ধুরা আর ইয়াদ মিলে চেপেচুপে নিয়ে গেলো হলদু দিতে।ইফাজ তো যাবেই না তবুও জোরাজোরি ঠ্যালায় যেতেই হলো।গায়ে হলুদে সবাই এক এক করে এসে ইফাজকে হলুদ লাগাতে শুরু করলো।সবার লাগানো শেষ মোটামুটি।ইয়াদ এসে মধুকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বলল,'তুমি ভাইয়াকে হলুদ লাগাও নি?'

'না।আসলে...'

ইয়াদ মধুকে থামিয়ে দিয়ে বলল,'আসলে,নকলে কিচ্ছু না যাও লাগায় আসো।'

মধু গিয়ে ইফাজের গালে হালকা একটু হলুদ ছুঁইয়ে বলল,'শুভ হোক আপনার বিবাহিত জীবন।'

ইফাজ কিছু বলল না।ম্লান একটা হাসি দিলো।এই হাসির অর্থ কেউ জানে না।মধু স্টেজ থেকে নেমে ইয়াদের সাথে এসে দাড়ালো।ইয়াদ লোক চক্ষুর আড়ালে নিঃশব্দে একটু হলুদ মধুর গালে ছোঁয়ালো।আর মধু ইয়াদের ঘাড়ে ছুঁইয়ে দিলো।এরমধ্যেই একটা মেয়ে এসে ইয়াদের সামনে দাড়িয়ে বলল,'আরেহ!ইয়াদ কেমন আছো?'

'আলহামদুলিল্লাহ আপু ভালো।আপনি?'

'ইশ!আমি কি তোমার আপু হই নাকি?আমি তোমার অনেক ছোটো হই।'

ইয়াদ মৃদু হেসে বলল,'ওহ!আচ্ছা ছোটো আপু।'

'কোনো আপু না।নাম ধরে ডাকতে পারো না?ইয়াদ তুমি খুব নিরামিষ হয়ে যাচ্ছো দিনদিন।'

'তাই নাকি ছোটো আপু।আমি তো জানতাম না।জানিয়ে উপকার করলেন।'

ইয়াদ এসব হেঁয়ালিপূর্ণ কথায় মেয়েটা 'ধ্যাৎ' বলে চলে গেলো।ও চলে যাওয়ার পরই মধু আর ইয়াদ দুজনেই বত্রিশ দাত কেলিয়ে হাসতে লাগলো।হাসতে হাসতেই ইয়াদ বলল,'আচ্ছা আসলেই কি আমি নিরামিষ হয়ে গেছি?'

মধু ইয়াদের দিকে চোখ মেরে বলল,'খেয়ে দেখতে হবে।'



পুরো বাড়িতে মেহমান গিজগিজ করছে।শোয়ার জায়গা নেই।সব রুম ভরা।ইরিনকে খুঁজে পাচ্ছে না তখন থেকে।কোথায় যে আছে!কিন্তু এখন ঘুমাবে কোথায়?ইরিনের রুমেও জায়গা নেই।গেস্টরুমও খালি নেই।মধু ইরিনকে খুঁজতে খুঁজতে দুইতলায় এলো।হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হ্যাঁচকা টান মারে হাতে।

ইয়াদ নিজের ঘরের দরজাটা বন্ধ মধুর কাছে এসে দাড়ালো।তারপর দুষ্টহাসি দিয়ে বলল,'কি যেনো বলছিলে,খেয়ে দেখতে হবে তাই না?এবার তো কেউ নেই।খেয়ে দেখতে পারো।'

মধু ভীত গলায় বলল,'কি শুরু করেছেন আপনি?কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।'

ইয়াদ আশে পাশে একবার তাকিয়ে বলল,'দরজা, জানালা সব বন্ধ।এইরুমে আমরা ছাড়া কেউ নেই।তাহলে কে দেখবে?'

'আপনার মাথায় আজ ভুত ভর করেছে শিউর।'

ইয়াদ হুট করে মধুর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কপালটা ওর কপালে ঠেকিয়ে বলল,'হ্যাঁ,সেই ভুত টা তুমি।তুমি ভর করেছ আমার মাথায়।'

মধু কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় কেউ নক করলো।ইয়াদ বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেললো।তারপর মধুকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুললো।ততক্ষণে মধু ওয়াশরুমে লুকিয়ে লুকালো।দরজার বাইরে ইরিন দাঁড়িয়ে আছে।ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল,'কি হইছে?'

'ভাইয়া মধুকে দেখছো?'

'না তো।আমি তো শুয়ে পড়ছিলাম।'

'ওহ!আজকে তুমি ভাইয়ার রুমে শোও না প্লিজ।নিচে জায়গা নেই।আমি আর মধু তোমার ঘরে শুবো।'

ইয়াদ কিছু একটা ভেবে বলল',আচ্ছা তার আগে মধুকে খুঁজে আন।দরজা লক করে শুবি।আর শোন তুই আর মধু ছাড়া আর কেউ যেনো এ ঘরে না আসে।স্পেশালি কোনো মেয়ে!আসলে তোকে উল্টো ঝুলিয়ে পিটাবো।'

'আচ্ছা।আসবে না।'

এটা বলেই ইরিন সরল মনে মধুকে খুঁজতে গেলো।আর এদিকে ইয়াদ আবার ঘরে এসে ওয়াশরুমের সামনে দাড়িয়ে বলল,'ইরিন চলে গেছে।এখন বের হও।'

মধু বাইরে থেকে ইয়াদের কথা শুনে বেরিয়ে আসলো।
------------------
ইরিন আবার খুজেও মধুকে পেলো না।তাই ইয়াদের রুমের কাছে যেতেই দেখলো মধু ছাদের সিড়ি ধরে নামছে।ওকে দেখে ইরিন বলল,'তুমি ছাদে ছিলে?আর আমি তোমাকে সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি।'

মধু নিচে নেমে এসে বলল,'আমিও তো তোমাকে খুঁজতে ছাদে গিয়েছিলাম।'

বলা বাহুল্য মধুর মিথ্যাটা ইরিন ধরতেই পারলো না।একটু আগেই ইয়াদ চলে গেছে।ও যাওয়ার পর মধু খেয়াল রেখেছিলো কখন ইরিন আসে।যেই ইরিনকে উপরে আসতে দেখলো সেই মধু ছাদের সিড়িতে দাড়ালো।তারপর ও ওপরে আসতে আসতে মধু নিজেও নিচে নামতে শুরু করলো।

'ওহ!আচ্ছা চলো।আজকে আমরা ইয়াদ ভাইয়ার রুমে ঘুমাবো।নিচে তো জায়গা নেই সেইজন্য।'

'ওহ!আচ্ছা তাহলে উনি কোথায় ঘুমাবেন?'

ইরিন হেসে বলল,'তোমার উনি ইফাজ ভাইয়ার সাথে ঘুমাবে।'

'ওহ!"
তারপর ইরিন আর মধু ইয়াদের রুমে ঢুকে ইয়াদের কথা মতো দরজা লক করে শুয়ে পড়লো।
------------------
ইয়াদ ঘুমিয়ে গেছে।কিন্তু ইফাজের চোখে ঘুম নেই।ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে একধ্যানে।ইতিমধ্যে চোখ থেকে গড়িয়ে দু'ফোটা পানিও স্ক্রিনের ভেসে থাকা মানুষটার ওপরে পড়েছে।

এতক্ষণ বসে বসে মধুর সবগুলো ছবি ডিলেট করেছে।যে ডাইরিতে ওকে নিয়ে লিখতো সেটাও পুড়িয়ে ফেলেছে।শুধু এই ছবিটাই আছে ওর ফোনে।এই ছবিটা যেদিন তুলেছিলো সেদিন ইফাজ রাস্তা দিয়ে আসছিলো আর মধু ছাদে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলো।ওর চুলগুলো মাতাল হাওয়ায় উড়ছিলো।দূর থেকে দেখে ইফাজ দ্রুত পিকটা তুলেছিলো।প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে ওর ছবি দেখা আর না বলা কথাগুলো ডায়েরীর পাতায় লিখা যেনো ইফাজের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু ইয়াদের সাথে রিলেশন এটা জানার পর থেকে নতুন করে ডায়েরিতে আর কিছুই লিখতে পারে নি ইফাজ।পারবেই বা কিভাবে!লিখতে গেলেই হৃদয় ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়।তবে আজ সবকিছুর অবসান করতেই মধুর সাথে সম্পৃক্ত সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে ইফাজ।

কাপাকাপা হাতে মধুর শেষ ছবিটাও ডিলেট করে দিলো।কিন্তু যেখান থেকে ডিলেট করা জরুরী সেখান থেকেই পারবে না।হায় আফসোস!
এখন মধুকে নিয়ে ভাবাও উচিত না কিন্তু মনের ওপর কি কারো জোর চলে!
----------------
মধু বুঝতে পারছে না কোন শাড়িটা পড়বে!সবগুলোই সুন্দর!ইয়াদের মা এগুলো দিয়ে গেছে।এখান থেকে যেটা পছন্দ সেটা পরার জন্য।কিন্তু মধুরতো সবগুলোই তো পছন্দ!সব'তো আর একসাথে পরা যাবে না।এই সময়ে ইরিন ওয়াশরুম থেকে বের হলো চুল মুছতে মুছতে।মধুকে ভাবুক চেহারায় শাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,'এখনো শাড়ি পছন্দ করতে পারলে না?'

মধু অসহায় মুখে বলল,'না গো।সবগুলোই পরতে ইচ্ছে করছে আমার।'

মধুর কথা শুনে ইরিন হাসতে হাসতে খাটে বসে পড়লো।তারপর বলল,'দাড়াও ইয়াদ ভাইয়াকে বলি তোমাকে শাড়ি সিলেক্ট করে দিতে।'

ইরিনের কথা শেষ হতে না হতেই ইয়াদ ওদের ঘরে উঁকি দিয়ে বলল,'কি কথা হচ্ছে আমাকে নিয়ে?'

'আরে ভাইয়া,মধু একটাও শাড়ি পছন্দ করতে পারছে না।তুমি একটা পছন্দ করে দাও।'

ইয়াদ একটা শাড়ির ব্যাগ নিয়ে মধুর হাতে দিয়ে বলল,'ওইগুলা পড়া লাগবে না তুমি এটা পড়ো।'

আরেকটা ব্যাগ ইরিনের হাতে দিয়ে বলল,'এটা তোর জন্য।'

ইরিন বলল,'বাহ!ভাইয়া তুমি আমাকে শাড়ি গিফট করছো!'

'আমার'তো টাকা গাছে ধরে যে আমি শাড়ি গিফট করবো।এই দুইটাই ইফাজ ভাই দিছে তোদের।'

'ওহ!আচ্ছা।'
তারপর ইয়াদ চলে যেতেই মধু আর ইরিন শাড়ির ব্যাগ খুললো।এই শাড়ি দুইটা আগের গুলোর থেকে আরো বেশি সুন্দর।মধুরটা জাম কালারের আর ইরিনেরটা কালো।দুজনেই শাড়ী পড়ে তৈরি হলো।

বরযাত্রীদের মধ্যে প্রথম গাড়িতে ইফাজ,ওর দুই বন্ধু,আর ইয়াদ গেছে।দ্বিতীয়টায় মধু, ইয়াদের মা,ইরিন,ইয়াদের চাচি,মামি,ফুপুরা।এরপরের গাড়িতে ইয়াদের বাবা,খালু,মামা,চাচারা আর শেষের মাইক্রোতে ইয়াদের কাজিনরা।মোট তিনটা মাইক্রো আর একটা ফিয়াট গেলো নিহাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
------------------
বিয়ে পড়ানো শেষ।নিহা ইফাজের সাথে সেলফি নিচ্ছে।কিন্তু ইফাজের সেদিকে মন নেই।ও তো মধুকে দেখছে।এই শাড়িতে ভালোই মানিয়েছে মধুকে।এই শাড়িটা ইফাজ কিনেছিলো মধুকে যেদিন ভালোবাসি বলবে সেদিন দিবে।নিজের হাতে আর দেওয়ায় হলো না,বলা ও হলো না ভালোবাসি।কালকে রাতে এই শাড়িটাও ফেলে দিতে চেয়েছিলো ইফাজ কিন্তু পরে ভাবলো থাক না নিজের দেওয়া কিছু একটা ওর কাছে।এইজন্যই আর শাড়িটা পোড়ায় নি ইফাজ।হঠাৎ ইফাজের ধ্যান ভঙ্গ করে নিহা বলল,'মধুকে দেখছো?'

ইফাজ নিহা কথায় হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে বলল,'না'
নিহা বুঝতে পারলেও প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,'হসপিটাল থেকে কয়দিনের ছুটি নিয়েছো?'

'এক সপ্তাহের।এতোদিন নিতে চাই নি।আম্মুর জোরাজোরিতে নিতে হলো।'

নিহা কিছু বলার আগেই ইফাজকে ঘিরে ধরলো নিহার কাজিন'রা।এরপরই ওদের মজা নেওয়া শুরু।
------------------
মধু ওয়াশরুম খুঁজে পাচ্ছে না।কিন্তু এখন ওয়াশরুমে যাওয়া জরুরি।এদিকে ইরিন বা ইয়াদের মা কাউকেই পাচ্ছে না।ইয়াদ ও গুম হয়ে আছে।অগত্যা ছেলেকে এদিকে আসতে দেখে বলল,'এক্সকিউজ মি।'

'জ্বি বলুন।'

'ওয়াশরুমটা কোথায় একটু বলতে পারবেন?'

'সোজা গিয়ে ডানে।'

'আচ্ছা ধন্যবাদ।'
মধু ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলো ইরিনও এখানে মুখ ধুচ্ছে।তারপর দু'জনেই প্রসঙ্গ ছাড়া কথা বলতে বলতে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো।একটু যেতে না যেতেই ইরিনের কাজিন এসে ওকে কি যেনো বলতে নিয়ে গেলো।এখন মধু কি এখানে একলা দাঁড়িয়ে থাকবে!তাই ও সামনে হাটা শুরু করলো।
--------------
খোঁজাখুজি করার পরও ইয়াদকে পেলো না।কোথায় যে গেলো!মধু এক কোণায় মুড অফ করে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো।হঠাৎ কেউ ওর পাশে এসে দাড়াতেই মধু পাশ ফিরে চাইলো।এটাতো ওই ছেলেটা যে ওকে একটু আগে ওয়াশরুমের খোঁজ দিয়েছিলো।ছেলেটা সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,'আপনি ছেলের কি হন?'

'কাজিন'।আবারো সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলো মধু।ইয়াদের মা বলেছিলো কেউ কিছু জিগ্যেস করলে কাজিন বলতে।তবে মনেমনে মধু বিরক্ত বোধ করছিলো ছেলেটা উপস্থিতিতে।এসেই পিতলা আলাপ শুরু করেছে।মনে হচ্ছে না এ থামবে।ছেলেটা আবারও বলল,'ওহ!আপনার জানতে পারি?'

'মধু।'

'বাহ,অনেক সুন্দর নাম।'

'ধন্যবাদ।'
ছেলেটা বুঝতে পারছে মধু যে বিরক্ত বোধ করছে তবুও বেহায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে।কথা বাড়ানোর জন্য আবার বলল,'আমার নাম অন্তর।'

মধু মনে মনে দাঁত খিঁচিয়ে বলল,'তোর নাম অন্তর নাকি বন্দর আমি জানতে চাইছি।বেশরম পোলা।'কিন্তু মুখে বলল,'ও।'

ইয়াদের ওপর প্রচুর রাগ হচ্ছে মধুর।না জানি কোথায় গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।আর এদিকে আরেকজন এসে ফ্লাট করছে।
কিন্তু  মধু জানেই না ইয়াদ বিয়ে বাড়িতে নেই।ইয়াদ আর রাসেল বিয়ে বাড়িতেই নেই।ওদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাসর সাজানোর জন্য।তাই ওরা খেয়েই বেরিয়ে পড়েছে।আশেপাশে মধুকে খুঁজে পায় নি তাই জানাতেও পারে নি।তবে ইরিনকে বলে গিয়েছিলো যেনো মধুকে বলে।কিন্তু ইরিন ভুলে গেছে মধুকে বলতে।

ছেলেটা আরো কিছু বলার আগেই ইরিন এসে বলল,'মধু চলো তোমাকে মা ডাকছে।'

মধু যেনো এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো।ইরিনের সাথে অন্যদিকে চলে গেলো।
-----------
বাড়িতে আসার পর থেকে মধু শুধু দূরে দূরে থাকছে।হাসছে না,কথাও বলছে না।শুধু এড়িয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ কি হলো ইয়াদের মাথায় ঢুকছে না।




চলবে...




Writer:- Arshi Ayat





NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner