> ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ২৯, ৩০ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প
-->

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ২৯, ৩০ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প

অন্ধকার কেটে গিয়ে চারদিকে হালকা আলো ফুটেছে।আজানের ধ্বনি কানে আসতেই মধুর ঘুম ছুটে গেছে।ইয়াদের ঘাড় থেকে মাথা উঠিয়ে আড়মোড়া ভেঙে ওর দিকে তাকাতেই দেখলো মহাশয় গেমসের ভেতর ঢুকে গেছে।এদিকে ওদিক কোনো খেয়াল নেই।মধু চট করে ফোনটা টেনে হাত থেকে নিতেই ইয়াদের হুশ আসলো।বাম হাতে মাথা চুলকে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,'ওহ!তুমি উঠে গেছো?'

'হুম,এবার আপনি বাড়ি গিয়ে ঘুমান।সারারাত বসে বসে গেমস খেলে চোখমুখ তো ফুলিয়ে ফেলেছেন।'মধু চোখ রাঙিয়ে বলল।

'এখনো পুরোপুরি আলো ফোটেনি।আকাশটা আরেকটু পরিষ্কার হোক তারপর যাবো।'

'আচ্ছা তাহলে আমার কোলের ওপর মাথা রাখুন।'
মধুর বলতে দেরি ইয়াদের মাথা রাখতে দেরি হয় নি।মধু মুচকি হেসে ইয়াদের চুলগুলোতে হাত চালাতে লাগলো।

প্রায় ঘন্টাদেড়েক পর ইয়াদ হাসপাতাল থেকে বের হলো তাও মধুর জোরাজোরিতে।তবে এখন অবশ্য নার্স আর ওয়ার্ড বয় আছে।আস্তে আস্তে ডাক্তারও চলে আসবেন।

ইয়াদ বের হওয়ার পরেই মধু মায়ের কথাবার্তা বলে মিলিকে নিয়ে বের হলো।বাসায় গিয়া সবকিছু গোছগাছ করে রান্না করতে হবে।দুপুরে মায়ের জন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে।অনেক কাজ আছে।
----------------
ইফাজ এখন সংসারে মনযোগী হওয়ার চেষ্টা করছে।যতোটুকু পারছে নিজের ডিউটি শেষে নিহাকে সময় দিচ্ছে।এইতো কাল সন্ধ্যায় ঘুরতে নিয়ে গেলো।আজকে সন্ধ্যায় এক কলিগের গায়ে হলুদের দাওয়াত আছে।তবুও কেনো যেনো নিহা খুশী না।অবশ্য না হওয়ারও কারণ আছে।নিহার সবসময় মনে হয় ইফাজ এগুলো দায়িত্ববোধ থেকে করছে ভালোবেসে করছে না।ইফাজ নিহার অবস্থানটা বোঝে কিন্তু সে আর কি করবে!মন তো চাইলেই কাউকে দেওয়া যায় না।

সন্ধ্যার একটু আগে নিহা রেডি হচ্ছিলো দাওয়াতে যাওয়ার জন্য।কিছুক্ষণের মধ্যে ইফাজও চলে আসবে।তারপর দুজনে একসাথে বের হবে।হাতে চুড়ি পরতে পরতে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো।এখনো আইলেনার দেওয়া বাকি।চুড়িগুলো পরে আইলেনার হাতে নিয়ে দরজায় খেয়াল করার আগেই কেউ একজন আচমকা এসে নিহাকে জড়িয়ে ধরলো।

'কেমন আছিস নিহু।'

নিহা হাস্যজ্বল কন্ঠে বলল,'আরে প্রিতু তুই!কখন আসলি?কেমন আছিস?'

'এটা কিন্তু ঠিক না।আগে আমার উত্তর চাই।'প্রিতু থ্রেড দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল।

'আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুই কেমন আছিস?'

'আলহামদুলিল্লাহ।তোর বর কই রে?'প্রীতু এদিক ওদিক তাকিয়ে জিগ্যেস করলো।

'ইফাজ তো এখনো আসে নি।হাসপাতালে আছে।'

'ও,তাই বল।তো এতো সাজুগুজু কেনো?'

'কোথাও যাবি?'

'হ্যাঁ ওর এক কলিগের গায়ে হলুদে।'

'ও আচ্ছা।তাহলে তো ভুল টাইমে এলাম।'

নিহা প্রীতুর হাত ধরে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,'কোনো ভুল টাইম না।ঠিক টাইমেই এসেছিস।চুপচাপ বস।যখন থেকে এসেছিস পটর পটর করেই যাচ্ছে।'

প্রীতু হেসে বলল,'বহুদিন পর তোকে পেলাম তো তাই পটর পটর করতে ইচ্ছে করছে।'

'করিস,আগে দুইমিনিট স্বস্তি নিয়ে বস।'

প্রীতু মুখ আঙুল দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালে সে চুপচাপ বসেছে।নিহা প্রীতুর মাথায় একটা গাট্টা মেরে কিচেনে চলে গেলো।
 
একটু পর দুইমগ কফি নিয়ে ফিরে এলো নিহা।একমগ প্রীতুকে দিয়ে আরেকমগ নিজে নিয়ে প্রীতুর পাশে বসে বলল,'হ্যাঁ এবার শুরু কর তোর পটর পটর।'

প্রীতু এক চুমুক দিয়ে বলল,'ফ্যামিলি প্ল্যানিং করেছিস?'

'আরে না,এখনো করি নি।'নিহা লাজুক হেসে বলল।

'তা করবি কেনো?ইশ!কবে যে খালাম্মা হবো।কবে যে একটা পুচকু আসবে।'

নিহা হাসতে হাসতে বলল,'তুই পারিসও বটে।আচ্ছা প্রত্যুষ ভাইয়ার কি খবর?'

'ভালোই আছে।'

'ডাক্তার দেখিয়েছিলি আর?'

'হ্যাঁ আরো দুটো ডাক্তার দেখিয়েছিলাম কিন্তু সবাই এক কথাই বলে।'

'তো কি ভাবলি?ছেড়ে দিবি নাকি থাকবি?'

'ছেড়ে দিবো কেনো পাগল নাকি!ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভালোবেসেছি নাকি!আর এখানে তো ওর কোনো দোষ নেই।আল্লাহই ওকে অক্ষম করেছে।তাহলে আমি ওকে ছেড়ে যাবো কেনো?আর বাংলাদেশে কি এতিম শিশুর অভাব আছে না কি!বাবা মা ডাক শুনতে চাইলে ওদের মুখ থেকেও শোনা যায়।আর ওকে ছেড়ে গেলে আমি তো নিজেই থাকতে পারবো না।আমি নিজেই ভালো থাকবো না।নিজের ভালো থাকার জন্য হলেও ওকে আমি ছাড়তে পারবো না।'

'ভাইয়া তোকে চলে যেতে বলে না?'

'ও তো আরেক পাগল!যখনই মন খারাপ হয় তখনই বলে "আমি তোমাকে পূর্ণতা দিতে পারি নি।আমার জন্যই তুমি আটকে আছো।'কিন্তু গাধাটাকে কি করে বোঝাই যে ওর ভালোবাসাই আমাকে পূর্ণতা দিয়েছে।' 

নিহা প্রীতুর হাত ধরে বলল,'তোকে নিয়ে আমার গর্ভ হয়।এভাবেই থাক সবসময়।'

প্রীতু হেসে বলল,'কিন্তু আমি জলদি খালাম্মা ডাক শুনতে চাই।মনে থাকে যেনো।'

নিহা কিছু বলল না শুধু হাসলে।দুজনের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথা হলো।একপর্যায়ে প্রীতু উঠে দাড়ালো যাওয়ার জন্য।নিহা বলল,'আরেকটু থাক না ইফাজের সাথে দেখা করে যাস।ও এখনই চলে আসবে।'

'না রে আজকে না।বেশি দেরি হলে প্রত্যুষ চিন্তা করবে।'

নিহা আর আটকালো না।প্রীতুকে জড়িয়ে ধরে বলল,'আবার আসিস ভাইয়াকে নিয়ে।'
প্রীতুও বলল,'তুইও যাস ইফাজ ভাইকে নিয়ে।'
প্রীতু নিহার থেকে বিদায় নিয়ে বের হতে নিলেই ইফাজের মুখোমুখি হলো।ইফাজকে দেখে প্রীতু সালাম দিলো।ইফাজ সালামের উত্তর দিয়ে বলল,'চলে যাচ্ছেন যে?'

'আমি আগেই এসেছিলাম নিহার সাথে দেখা করতে।আজকে আর থাকা সম্ভব না।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় ফিরতে হবে।'

'আচ্ছা।ভালো থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।'

'আপনিও,আল্লাহ হাফেজ।'

ইফাজ ঘরে এসে দেখলো নিহা আইলেনার দিচ্ছে।নিহার পিছনে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলল,'অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।'

নিহা একটা মলিন হাসি দিয়ে বলল,'ধন্যবাদ।তুমি রেডি হবে না?'

'হ্যাঁ দশমিনিট সময় দাও।'
ইফাজ ফ্রেশ হতে চলে গেলো।দশমিনিটের মধ্যে ঝটপট রেডি হয়ে নিজের ঘড়িটা হাতে পরতে পরতে বলল,'চলো,আমি রেডি।'

নিহা ইফাজের কথা যেনো শুনলোই না এমন ভাব ধরে ওর সামনে এসে দাড়ালো।ইফাজ নিহার মুখভঙ্গি পরিলক্ষিত করে বলল,'কিছু বলবে?'

নিহা শাড়ির আচলে একবার গিট্টু দিচ্ছে আরেকবার খুলছে।নিঃসন্দেহে ভেতরে কিছু পাকাচ্ছে ইফাজ বুঝলো।তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে নিহা তার শাড়িতে গিট্টু লাগানোর কাজ আপন গতিতে চালিয়ে যেতে যেতে বলল,'আচ্ছা,ইফাজ আমাদের বাবা হবে কবে?আমি মা হবো কবে?তুমি বাবা....'

ইফাজ আর বলতে দিলো না।নিহাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,'নিহা এই বিষয়ে আমরা পরে কথা বলবো।এখন দেরি হচ্ছে।চলো বের হই।'

নিহা কিছু বলল না।শুধু হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে চোখের কোণায় জমে থাকা কান্না নামক নোনো জলের গুটি কয়েক ফোটা মুছে শাড়ির আচল টেনে ইফাজের সাথে বের হলো।
-------------------
আজকে বিকেলেই আইরিন রহমানকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।মধু আর ইয়াদ মিলে ওনাকে বাসায় নিয়ে এসেছে।মিলি বাসায়ই ছিলো।এই দুইদিনে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা আলাপ হয়েছে ইয়াদের সাথে আইরিন রহমানের।তাতে সরাসরি না বললেও তার কথা বলার ভঙ্গিতে বোঝা গেলো তিনি এই সম্পর্কে আপত্তি করবেন না।

ইয়াদকে বিদায় দিয়ে মধু মায়ের ঘরে গিয়ে বলল,'আম্মু একটু উঠে বসো।ঔষধের সময় হয়েছে।'

আইরিন রহমান মধুর সহযোগিতায় উঠে বসলো।ঔষধ খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো।মধু ঔষধ খাইয়ে চলে গেলো নিজের ঘরে।অনেকদিন পর নিজের ঘরে আসলো মধু।একঘন্টা সময় ব্যয় করে ঘরটা ঠিক করলো।এখন পড়তে বসতে হবে কিন্তু বইতো হোস্টেলে।তবে গাইড বইগুলো ঘরে আছে।আপাতত গাইড বই দিয়েই পড়তে হবে।

একটু পর দরজায় নক পড়তেই মধু উঠে গিয়া দরজা খুললো।নিশির মা আর নিশি এসেছে মধুর মায়ের সাথে দেখা করতে।নিশির মা মধুর মায়ের রুমে চলে গেলো আর নিশি সামনের রুমেই বসলো।মধুর নিশির সাথে কথা বলার একদম ইচ্ছে সেইজন্য নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।কিন্তু পেছন থেকে নিশি বলল,'মধু শোনো।'

মধু ঘুরে দাড়ালো।নিশি উঠে গিয়ে মধুর সামনে দাড়িয়ে বলল,'দুই সপ্তাহ পর আমার বিয়ে।চলে যাবো এই বাসা থেকে।আর হয়তো দেখা না ও হতে পারে।তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি ক্ষমা করে দিও।'
এটা বলেই নিশি মধুকে জড়িয়ে ধরলো।প্রথম টাল সামলাতে না পারলেও কিছুক্ষণের মধ্যে ধাতস্থ হয়ে মধু বলল,'আরে আপু বাদ দাও তো ওইসব কথা।শুভকামনা তোমার জন্য।সুখী হও।'

'তুমিও সুখী হও।'
মধু মৃদু হেসে নিশিকে ওর রুমে নিয়ে গেলো।তারপর ওকে বসিয়ে রেখে চা বানাতে গেলো।
----------------
হলুদের অনুষ্ঠান রাত বারোটায় ছেড়ে ইফাজ আর নিহা বেরিয়ে পড়লো।এর থেকে বেশি দেরি করা যাবে না।ওরা অবশ্য বলেছিলো থেকে যেতে কিন্তু নিহার আপত্তিতে আর থাকা হলো না।
বাসায় এসে নিহা সোফায় শুয়ে পড়লো।ইফাজ কিছু বলল না।এখন বললে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা আছে।ইফাজও শুয়ে পড়লো।

মাঝরাতে মনে হলো কেউ কাঁদছে তাও ওর শিয়রে বসে।রুমে নিহা ছাড়া তো কেউ নেই।তাহলে কি নিহা!এতো রাতো ও কাঁদবে কেনো?কিছু হলো না তো!ইফাজ জিগ্যেস করবে এর আগেই নিহা ইফাজের চুল নিজের হাত বুলিয়ে বলল,'ইফাজ তুমি বড্ড পাষাণ।আমাকে এভাবে কষ্ট না দিলেও পারো।'

এভাবে হাজারো অভিযোগ করছে নিহা ঘুমন্ত ইফাজের কাছে এদিকে ইফাজ জেগেও নিশ্চুপ!


সপ্তাখানেকের মধ্যে মধুর মা পুরোপুরি না হলেও মোটামুটি সুস্থ হয়ে গেছে।আরো কিছুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে।এই কয়দিন মধুই মায়ের সেবা যত্ন করেছে।আজকে সকালে নাস্তা বানিয়ে মাকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেলো এরপর পড়তে বসলো।মিলি এখনো ঘুম থেকেই ওঠে নি।যখন উঠবে তখন খেয়ে নিবে।

মধু এখন বাসায়ই পড়ে।হোস্টেল থেকে নিজের বই,খাতাসহ যাবতীয় জিনস পত্র নিয়ে এসেছে।

টেবিলে বসে লিখছিলো মধু।এরমধ্যেই দরজায় বেল বাজলো।উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো নিশি হাস্যজ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে।নিশিকে দেখে মধুও সহাস্যে বলল,'কেমন আছো আপু?'

'ভালো,তুমি?'

'আমিও ভালো।ভেতরে আসো।'

নিশি ভেতরের ঘরে সোফায় এসে বসলো।তারপর আবদারের ভঙ্গিতে বলল,'মধু,আমার সাথে একটু বের হবে প্লিজ।হালকা কিছু কেনাকাটা আছে।কাউকে পাচ্ছি না সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য।'

'কিন্তু আপু আমার তো সামনে পরীক্ষা।পড়তে হবে।বেশিদিন নেই পরীক্ষার।'

'আরে বেশিক্ষণ লাগবে না।আধঘন্টার মধ্যে চলে আসবো।'নিশি অনুরোধের স্বরে বলল।

মধু রাজি হলো।নিশিকে অপেক্ষা করতে বলে নিজের ঘরে চলে গেলো।রেডি হয়ে মধু আর নিশি দুজনই বেরিয়ে পড়লো।বাসা থেকে কিছুদূর এগিয়ে একটা রিকশা নিলো।রিকশায় বসে দুজনেই বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে লাগলো।হঠাৎ করে খেয়াল হলো রিকশাওয়ালা অন্য একটা রাস্তায় দিয়ে যাচ্ছে।মধু উত্তেজিত হয়ে রিকশাওয়ালাকে  বলল,'মামা,এটা কোন রাস্তা?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?'

রিকশাওয়ালা কোনো কথার জবাব দিলো না।কিন্তু মধুকে শান্ত করার জন্য নিশি বলল,'আরে এই রাস্তা আমি চিনি।ওই রাস্তায় নাকি কোনো সমস্যা হয়েছে তাই এখান দিয়ে যাচ্ছে।তুমি এতো টেনশন নিও না।'

নিশির কথায় মধু কিছুটা শান্ত হলেও বুক ধড়ফড় করছে।অনেক্ক্ষণ পর একটা জায়গায় রিকশা থামালো।আশেপাশের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে বস্তি!কিন্তু এখানে কেনো?মধু কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুমালের মতো কিছু একটা ওর নাকে ছোঁয়ানো হলো।এরপর কি হয়েছে মধুর মনে নেই!
--------------------
ইফাজ চেম্বার থেকে নিজের লাইসেন্স করা রিভালবারটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লে কারণ একটু আগেই ইফাজের কানে এসেছে মধুকে কারা যেনো কিডন্যাপ করেছে।এই খবর শুনেই ইফাজ আর ঠিক থাকতে পারলো না।দ্রুত চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো।ইফাজ অনেক আগেই ওর একজন বিশ্বস্ত লোক লাগিয়েছিলো মধুর পেছনে।যাতে ওর সব খবর পাওয়া যায়।আজ ওর মধ্যমেই জানতে পারলো মধু কিডন্যাপ হয়েছে।ইফাজ লোকেশন অনুযায়ী বস্তির সামনে এসে হাজির হলো কিন্তু এখন কোনদিকে যাবে?এই বস্তিতে শ'খানেক ঘর তো হবেই।কোন ঘরে আছে এটাই তো বোঝা যাচ্ছে না।ইফাজ মুখে মাস্ক লাগিয়ে বস্তিতে ঢুকে পড়লো। কোনরকমে বস্তির সরু গলি দিয়ে এগুতে লাগলো।চারপাশ থেকে স্যাঁতসেঁতে গন্ধে গা গুলিয়ে উঠছে।অনেক কষ্টে পেছনে চলে গেলো ইফাজ।এরপর খোঁজা শুরু করলো।কয়েকটা ঘর খোঁজার পরও পেলো না।এতো বড় বস্তি!তার ওপর এতোগুলো ঘর!দুইদিন লাগবে এগুলো খুজতে।ইফাজ ভাবলো বস্তির কয়েকজনকে জিগ্যেস করে দেখা যায়!ওরা কিছু জানে কি না!কয়েকজনকে জিগ্যেস করলো কিন্তু কেউ কিছুই বলতে পারলো না।ইফাজ এখানে কিছু না পেয়ে অন্যগলিতে খুঁজতে আরম্ভ করলো।হঠাৎ এক লোক ইফাজকে আটকে বলল,'কে আপনি?এখানে কি চান?'

'আমি একজনকে খুঁজতে এসেছি।আপনি কি একটা মেয়েকে দেখেছেন?বয়স বোধহয় আঠারো কিংবা উনিশ হবে।'

'না!এমন কাউকে দেখি নাই।আপনি এখান থেকে যান।'

ইফাজকে আর ওই গলিতে থাকতেই দিলো না।ঠেলে বের করে দিলো।ইফাজের কেমন যেনো সন্দেহ হতে লাগলো।তাই লোকটার কলার চেপে ধরে চাপা হিংস্র গলায় বলল,'পুলিশের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কোথায় পাস তুই?'

লোকটা মনে হয় ঘাবড়ে গেলো।তবুও গলায় জোর এনে বলল,'কোথাকার পুলিশ আপনি?'

ইফাজ ওর রিভালবারটা বের করে বলল,'হাতে দেখেছিস এটা?তাড়াতাড়ি বল মেয়েটাকে কোথায় লুকিয়েছিস?নাহলে এখানে মেরে দিবো।'

ইফাজের কথা শুনে আর রিভালবারটা দেখে লোকটা ভীত কন্ঠে বলল,'আমি কিছু করি নাই।ওরা আমারে পাহারাতে রাখছে।'

'চল,আমাকে নিয়ে চল তাড়াতাড়ি।চলাকি করলে একটাও বাঁচবি না।'

লোকটা ইফজকে একটা ঘরে সামনে নিয়ে গেলো।টিনের দরজা ভেতর থেকে লাগানো।ইফাজ পা দিয়ে কষিয়ে এক লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়লো।

এককোণায় হাত,পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে মধু।ঘরে কেউ নেই।ইফাজ মধুর হাত পায়ের বাঁধন খুলে মধুকে কোলে তুলে নিলো।তারপর আস্তে আস্তে বস্তি থেকে বের হয়ে গেলো।আর ওই লোকটা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে ইফাজ আর ধরতে পারে নি।

বস্তি থেকে মধুকে সোজা হসপিটালে নিয়ে এলো ইফাজ।একটা কেবিনে শুইয়ে দিয়ে ইয়াদকে ফোন দিলো।ইয়াদ ফোন রিসিভ করতেই ইফাজ বলল,'কই তুই?'

'বাসায়।কেন?'ইয়াদ কৌতুহলী হয়ে জিগ্যেস করলো।

'একটু হাসপাতালে আয় তো।'

'কেনো?'

'আগে আয় তারপর বলছি।'
ভাইয়ের কথায় ইয়াদ হাসপাতালের দিকে ছুটলো।হাসপাতালে পৌঁছে চেম্বারে আসতেই একজন নার্স ওকে একটা কেবিনে নিয়ে গেলো।ইয়াদ ঢুকতেই দেখলো মধু বেডে শুয়ে আছে।আর ইফাজ ওর প্রেশার দেখছে।মধুকে এ অবস্থায় দেখেই ইয়াদের প্রচন্ড ভয় হতে লাগলো!কি হলো মধুর!ইয়াদ বেডের পাশে এসে ইফাজকে আতঙ্কিত কন্ঠে বলল,'কি হয়েছে ওর ভাইয়া?'

'আরে আমিও জানি না।এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তো রাস্তায় দেখলাম ও সেন্সলেস হয়ে পড়ে ছিলো।তারপর আমি হাসপাতালে নিয়ে এলাম।হয়তো প্রেশার লো হয়েগিয়েছিলো।এইজন্যই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।'ইফাজ পুরো ব্যাপারটা চেপে গেলো।

ইয়াদ ভাইয়ের হাত ধরে বলল,'ভাইয়া ওর জ্ঞান ফিরছে না কেনো?'

'চিন্তা করিস না।কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।'

ইয়াদকে মধুর পাশে রেখে ইফাজ চেম্বারে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর মধু আধো আধো চোখ খুললো।ইয়াদ মধুর হাত ধরেই বসেছিলো।মধুকে চোখ খুলতে দেখে বলল,'মধু,খারাপ লাগছে তোমার?'

মধু উঠে বসলো।তারপর ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,'আমি এখানে কেনো?আমাকে কে এনেছে এখানে?আমি তো.....'

'তোমাকে ইফাজ ভাইয়া এনেছে।তুমি নাকি রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলে।'

'ওহ!'তবে মধু কথাটা মানতে পারলো না।তবুও চেপে গেলো।আসল ঘটনা ইফাজ জানে।তাই ভাবলো পরে ইফাজের কাছে থেকে জেনে নিবে।মধু মনেমনে এগুলো ভাবছিলো।ওর ভাবনায় ছেদ পড়লো ইয়াদের কথায়।ইয়াদ ওর গালে হাত দিয়ে বলল,'তুমি একদম নিজের যত্ন নাও না।এইজন্যই শরীর খারাপ করে তোমার।এরপর থেকে যদি আমি তোমার খাবারের প্রতি অবহেলা দেখি তাহলে তোমার একদিন কি আমার যতোদিন লাগে।'

মধু মাসুম চেহারা বানিয়ে বলল,'আমি নিজের যত্ন নেই সত্যি বলছি।'

'হয়েছে,বুঝেছি।এখন চুপচাপ বসো।আমি ভাইয়াকে নিয়ে আসি।'

ইয়াদ ইফাজের চেম্বারে গেলো।ইফাজ মনযোগ দিয়ে একটা রিপোর্ট দেখছিলো।ইয়াদ ওর মনোযোগ ভেঙে বলল,'ভাইয়া,মধুর জ্ঞান ফিরছে একটু আসো তো!"

ইফাজ ইয়াদের কথা শুনে ফাইলটা বন্ধ করে ইয়াদের সাথে কেবিনে গেলো।মধু চিন্তিত মুখে বসে আছে।ইফাজ বেডের সামনে এসে বলল,'এখন কেমন আছো?'

'ভালো।'মধু সংক্ষিপ্ত জবাব দিলো।

'তোমার রেস্টের প্রয়োজন।আর খাওয়া দাওয়া ভালো মতো করবে।শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় এমন হয়েছে।ঘাবড়ানোর কিছু হয় নি।'

ইফাজের কথা শেষ হতেই ইয়াদ বলল,'ভাইয়া এখন কি ওকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো?'

'হুম,নিয়ে যা।এখন সমস্যা নেই।'
-------------
ইয়াদ মধুকে কিছু ফলমূল কিনে দিয়ে বাসায় দিয়ে এলো।ইয়াদকে বিদায় দিয়ে মধু নিশিদের বাসায় গেলো।ওদের দরজায় নক করতেই নিশির মা দরজা খুললো।মধু বলল,'আন্টি নিশি আপু কোথায়?'

নিশির মা শুকনো মুখে বললেন,'ও তো ওর ঘরে শুয়ে আছে।কোথা থেকে যেনো মাথা ফাটিয়ে এসেছে।এসো দেখা করে যাও।'

নিশির মা দরজা থেকে সরে দাড়াতেই নিশি ভেতরে ঢুকলো।ওর ঘরে গিয়ে দেখলো।নিশি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।মধু এসে ওর পাশে বসতেই নিশি চোখ খুললো।কিছুটা চমকালো মনে হয়!তবুও সামলে নিয়ে বলল,'তোমার কিছু হয় নি তো মধু।'

'না আমি ঠিক আছি।কিন্তু তোমার এসব কিভাবে হলো?'

'আরে ওই রিকশাওয়ালা টা খারাপ ছিলো।আম নিজেও বুঝতে পারি নি ও যে ওই জায়গাটায় নিয়ে যাবে।রিকশা থেকে নামার পর কয়েকটা ছেলে তোমাকে অজ্ঞান করে ফেলে আর আমার মাথায় জোরে আঘাত করে পালিয়ে যায়।ওইখান থেকে আমি অনেক কষ্টে হাসপাতালে আসি।আমার কপাল অনেকটা কেটে গিয়েছে।কিন্তু তুমি এলে কি করে?কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো তোমাকে ওরা?'

'আমি জানি না।জ্ঞান হারানোর পর কিছুই মনে ছিলো না আমার। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করি।সামনে ইয়াদ বসা ছিলো।'

'যাক,বাঁচা গেলো তোমার কিছু হয় নি।'

'হুম,আচ্ছা তুমি রেস্ট করো।আমি বাসায় গেলাম।'

মধু নিশিদের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।দুইয়ে দুইয়ে চার তো মিলছে না!নিশিকে কেমন যেনো মিথ্যাবাদী মনে হচ্ছে!



চলবে...



Writer:- Arshi Ayat

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner