এভাবে মোট ৫ জন ছেলে আমার পিছু নিলো, আমি তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলাম, ওরাও তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলো। একটু পর একটা ছেলে আমাকে পিছন থেকে ডাক দেয়।
ছেলেঃ ওই সাদা শার্ট দাঁড়া!
আমি পিছনে তাকাতেই দেখি প্রথমের সেই ছেলেটা আমাকে ডাক দেয়।
আমিঃ জ্বি আমাকে বলছেন?
ছেলেঃ তো এখানে কি তোর বাপ আছে, যে তোর বাপকে ডাক দিবো।
মাথা পুরা খারাপ হয়ে গেলো, ইচ্ছা করছে একটা ঘুসি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিই, রাগকে কন্ট্রোল করে বললাম...
আমিঃ বলেন, কি বলবেন?
ছেলেঃ তোর কাছে আগুন আছে?
আমিঃ জ্বি না। আমি আগুন রাখি না।
ছেলেঃ ওই ব্যাটা রাখিস না কেন? তুই জানিস না আমাদের আগুন লাগবে।
আমিঃ আপনাদের এতো আগুনের দরকার হলে নিজেরাই তো সাথে রাখতে পারেন। অন্যের কাছে হাত পাতার কি দরকার?
ছেলেঃ ওই কি রাখবো, কি রাখবো না সেটা কি তোর কাছে থেকে শিখতে হবে? হুম বল, কথা বল,,,,
ছেলেটা আমাকে ধাক্কা দিতে লাগলো।
আমিঃ কি ব্যাপার! আপনি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?
অন্য ছেলেঃ হাত দিলে কি করবি তুই? পারলে কিছু কর।
ছেলে গুলো আমাকে চারপাশে ঘিরে ফেললো। দুইটা ছেলে হঠাৎ করে আমার হাত দুইটা ধরে ফেললো। বাকি ৩ জন ইচ্ছা মতো মারতে শুরু করলো, আমি চাইলেও ওদের সাথে পেরে উঠতে পারছি না। একটা ছেলে আমার মাথায় অনেক জোরে একটা আঘাত করে। তারপর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরলো নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম, দেখলাম সানি, আয়মান আর ফারিয়া আমার পাশে বসে আছে। আমার মাথায় ব্যান্ডেজ করা....
আমিঃ কিরে তোরা এখানে?
সানিঃ এখন কেমন লাগছে তোর?
আমিঃ ভালোই, তোদের কি অবস্থা বল।
আয়মানঃ আমরা ঠিক আছি, বল তোর এই অবস্থা কে করলো?
ফারিয়াঃ এই আয়মান, তুই পাগল? ওর মাত্র জ্ঞান আসলো আর তুই এখনই প্রশ্ন শুরু করে দিলি? ও আগে একটু সুস্থ হোক, তারপর সবকিছু জানতে পারবি।
সানিঃ হুম, ডাক্তার বলেছে বিকালবেলা নিয়ে যেতে পারবো।
আমিঃ সাদিয়া কইরে?
ফারিয়াঃ ওর আম্মু অসুস্থ, বাসায় চলে গেছে। একটু আগেও এখানে ছিলো। তুই আজকে আর ম্যাচে যাওয়ার দরকার নেই, আমাদের বাসায় চল। ভালো হলে তারপর ম্যাচে যাবি।
আয়মানঃ আরে না, ও আমার সাথে যাবে। আমি আম্মুকে বলে দিয়েছি।
আমিঃ নারে আমি কারো বাসায় যাবো না। ম্যাচেই ঠিক আছি। তোদের টেনশন করার দরকার নেই। তোরা বরং এখন যা, পারলে বিকালবেলা আসিস। আর না পারলে আসার দরকার নেই, আমি বাসায় যেতে পারবো।
আয়মানঃ আরে মাথা খারাপ নাকি? তোকে এভাবে রেখে যাবো না। এই ফারিয়া তুই মেয়ে মানুষ, বাসায় বকাঝকা করবে, তুই বরং বাসায় চলে যা। আমরা জুয়েলকে বাসায় দিয়ে এসে তারপর যাবো।
ফারিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে, কোনো দরকার হলে কল দিস।
সানিঃ ওকে, যা তাহলে। কাল ক্যাম্পাসে আসলে দেখা হবে।
এরপর ফারিয়া চলে যায়, সানি আর আয়মান বিকাল পর্যন্ত আমার সাথে ছিলো। বিকালবেলা আবার ম্যাচে ফিরে গেলাম। এখন মোটামুটি ভালো লাগছে।
এভাবে প্রায় ১ সপ্তাহ কেটে যায়, সানি আয়মান সময় পেলে এসে দেখা করে যায়। ফারিয়া, সাদিয়াও কয়েকবার আসছিলো আর নিয়মিত গ্রুপে কথা হয়।
১ সপ্তাহ পর কলেজে যাওয়ার জন্য রেড়ি হলাম, সানি আর আয়মান আমার সাথেই গেলো। ভিতরে গেলাম দেখলাম ফারিয়া আর সাদিয়া আরো অনেক গুলো মেয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আমাদের দেখে এদিকে আসলো।
সাদিয়াঃ কিরে আসছিস?
আমিঃ হুম।
সানিঃ চল ক্লাসে যাই, অনেকদিন ক্লাস করিনি।
আমিঃ আরে আজব! তোরা তো প্রতিদিনই কলেজে আসিস, তাহলে ক্লাস করিস নি কেন?
আয়মানঃ আরে ব্যাটা তোরে ছাড়া ক্লাস করে কোনো মঝা আছে? চল ক্লাসে চল।
আমিঃ হুম চল।
সাদিয়াঃ আচ্ছা শোন ২ টা ক্লাস করে চলে আসবো।
ফারিয়াঃ কেন?
সাদিয়াঃ আজকে একটু ঘুরতে যাবো। অনেক দিন কোথাও ঘুরতে যাই না।
সানিঃ আচ্ছা দেখা যাবে। এখন চল,,,
৩য় উঠার সাথে সাথে দেখলাম ওই গুণ্ডি তন্নি মেয়েটা তার ফালতু বান্ধবী গুলার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করতেছে। আমাদের দেখে এগিয়ে আসলো....
তন্নিঃ কিরে তুই এখনো বেঁচে আছিস? আমি তো ভাবছি সেদিনই মরে গেছিস।
সানিঃ ওই তোর সমস্যা কিরে? তুই ওর সাথে এমন করলি কেন? ভাগ্যিস সেদিন আমরা ছিলাম না, তাহলে দেখতি।
তন্নি সাথে সাথে সানির কলার চেপে ধরে, তারপর বলে...
তন্নিঃ কি দেখাতি তুই? ডানা গজাইছে তাই না? বেশি পাকনামি করলে আজই TC দিয়ে লাথি দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দিবো। দেখি তোর কোন বাপ আমার কি করতে পারে।
আয়মানঃ এই তোর বাবা কলেজের সভাপতি বলে যা ইচ্ছা তাই করবি নাকি?
তন্নিঃ তুই চুপ থাক, সালা ফালতু।
সাদিয়াঃ তন্নি তুই কিন্তু বেশি করে ফেলতেছিস, এই কলেজে আমরাও বেতন দিয়ে পড়ালেখা করি, তোর বাবার টাকায় পড়ি না। সো কথা বার্তা ঠিক করে বলবি।
তন্নিঃ ওই এই ছোটলোকের বাচ্চার জন্য তোদের এতো দরদ কেন?
ফারিয়াঃ ও ছোটলোক হোক আর যাইহোক ও আমাদের ফ্রেন্ড। আর ওর বাবা তোর ১৪ গুষ্টিকে কিনতে পারবে।
তন্নিঃ মানে?
সাদিয়াঃ তোকে এতো মানে বোঝাতে পারবো না, জায়গা দে, ক্লাসে যাবো।
তন্নিঃ এই শোন, তোরা খুব ভালো করে জানিস আমি জিনিষ, সো এখনো সময় আছে। ওই ছোটলোকের বাচ্চার সাথে আর মিশবি না।
আয়মানঃ সেটা তোকে জিজ্ঞেস করে আমরা করবো না।
তন্নিঃ দেখ তোদের কি হাল করি, একটা তো একটুর জন্য বেঁচে গেলো তোরা কি করে বাঁচিস সেটা আমি খুব ভালো করে দেখবো।
সানিঃ যা পারিস কর।
আমি এতোক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা গুলো শুনতেছিলাম।
ক্লাসে গিয়ে নিরভে বসে রইলাম।
আয়মানঃ কিরে কি ভাবতেছিস?
আমিঃ আমার জন্মই হয়েছে শুধু ভেজালের মধ্যে পড়ার জন্য মনে হয়।
আয়মানঃ আরে টেনশন করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমিঃ তারপরও তন্নি যদি তোদের কোনো ক্ষতি করে, ওর তো বিশ্বাস নেই।
আয়মানঃ আরে কিচ্ছু করতে পারবে না।
আমিঃ তারপরও,,,
একটু পর স্যার আসলো, এসে প্রি-টেষ্ট পরীক্ষার কথা জানিয়ে দিয়ে গেলো। ১ সপ্তাহ পর পরীক্ষা। স্যার চলে যাওয়ার পর ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তা করে বাসায় চলে আসলাম।
বাকিরাও বাসায় চলে যায়, এই এক সপ্তাহ আর ক্যাম্পাসে যাই নি, যদি তন্নি মেয়েটা কোনো ঝামেলা করে পরে দেখা যাবেই পরীক্ষাটাই মিস হয়ে যাবে। তারচেয়ে ভালো কলেজে না যাওয়াটাই উত্তম।
সানি আর আয়মানের সাথে বিকালবেলা বসে বসে আড্ডা দিতাম। দেখতে দেখতে পরীক্ষার দিন চলে আসলো, রেড়ি হয়ে কলেজে চলে গেলাম। গেইটের সামনে আয়মানের সাথে দেখা....
আয়মানঃ কিরে আসছিস? আমি তোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
আমিঃ হুম, বাকীরা কোথায়?
আয়মানঃ ওরাও ছিলো, আমি পাঠিয়ে দিয়েছি।
আমিঃ ও, আচ্ছা চল হল রুমে যাই।
হল রুমে গেলাম, সানিকে দেখলাম এক দৃষ্টিতে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গিয়ে ওর কাঁধে হাত দিলাম....
আমিঃ কিরে কি দেখস?
সানিঃ আরে মামা চলে আসছিস?
আমিঃ হুম, ও দিকে কি দেখস? সাদিয়াকে নাকি পাশেরটাকে?
সানিঃ আরে না, তোরা আসছিস না দেখে ওদিকে তাকিয়ে রইলাম আরকি।
আয়মানঃ বুঝি বুঝি, সব বুঝি। ফ্রেন্ড হয় আমাদের ভুলেও অন্য কিছু চিন্তা করিস না, পরে দেখবি ফ্রেন্ডশিপটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
সানিঃ তুই শালা এক লাইন বেশি বুঝিস।
আমিঃ আচ্ছা বাদ দে, ভিতরে চল।
সানিঃ হম চল।
ভিতরে গিয়ে সিট নাম্বার খুঁজতে লাগলাম, অবশেষে মাঝখানের একটা টেবিলে আমার সিট পড়লো, আমার পাশেই দেখি..........
চলবে...
Writer:- এম এইচ জুয়েল