> ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ৫৩, ৫৪ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প
-->

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ৫৩, ৫৪ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প

এখন মধু সম্পূর্ণ সুস্থ।দুইদিন আগে সেলাই কাটা হয়েছে।কিন্তু ঔষধগুলো আরো দুইমাস কন্টিনিউ করতে হবে।কাল থেকে ইয়াদের জোরাজোরিতে ভার্সিটিতে যেতে হচ্ছে,পড়াশোনা করতে হচ্ছে।সব কিছু ভালোই যাচ্ছে।সবাই মধুর প্রতি সহানুভূতিশীল কিন্তু শ্বাশুড়ি মা এখনো বোধহয় মন থেকে মেনে নিতে পারে নি।এটা নিয়ে খুব আফসোস মধুর!কবে যে শ্বাশুড়ি মা মুখ ফিরে চাইবে সেই আশায়ই আছে মধু!তবে একটা জিনিস ইদানীং মধু লক্ষ করছে সেটা হলো ইয়াদ আর ইফাজ দুজনের একজনও কারো সাথে কথা বলে না।এড়িয়ে যায়।কিন্তু কেনো?এটাই বুঝতে পারছে না মধু।ইয়াদকে কিছু জিগ্যেস করলেও কিছু বলে না।নিহাকেও জিগ্যেস করেছিলো সেও কিছু বলতে পারে না।

ক্যান্টিনে বসে মধু আর ওর ফ্রেন্ডরা হাসাহাসি করছিলো।আজকে আড্ডার বিষয় হলো ভার্সিটি থেকে একটা ট্যুর প্ল্যান হয়েছে যেখানে শুধু স্যারেরা আর তাদের ফ্যামিলি যাবে।কোনো স্টুডেন্ট যাবে না কিন্তু এই ট্যুরে মধুও যাবে কারণ ও স্টুডেন্ট হলেও ইয়াদের বউ।সবাই এটা নিয়েই হাসাহাসি করছিলো।সায়রা হাসতে হাসতেই মধুকে খোঁচা মারার উদ্দেশ্যে বলল,'ইশ!মধু তোর মতো আমরাও যদি একটা স্যার কে পটাইতে পারতাম।'

মধু কিছু বলার আগেই আরিয়া বলল,'সায়রা শোন তোকে আমি আগেও বলেছি ইয়াদ ভাই আর মধুর সম্পর্ক চার বছর ধরে।তখন ওরা দুইজন ই স্টুডেন্ট ছিলো।মধু কোনো স্যারকে পটিয়ে বিয়ে করে নি।'

সায়রা আমতা আমতা করতে করতে বলল,'ক্ষেপছিস কেনো তুই?আমি তো মজা করেই বললাম।'

'মনে হলো না মজা করে বলছিস!কারণ দুইদিন থেকে দেখতেছি তুই ওকে খোঁচা মেরে কথা বলিস।তোর ভাগ্য ভালো ও তোকে এখনো কিছু বলে নাই।আমি হলে......'

শেষ কথাটা থ্রেড দিয়েই বলল আরিয়া।মধু দুজনকে থামাতে বলল,'ইশ!কি শুরু করছিস তোরা বাচ্চা পোলাপানের মতো।এই বিষয়ে কেউ আর একটা কথা বলবি না।আমরা এখানে আড্ডা দিতে বসছি।ঝগড়াঝাটি করতে বসি নাই।'

মধুর কথায় দুইজন আর ওই বিষয়ে কথা না বললেও ক্ষোভটা থেকেই গেছে।ক্লাস শেষ হওয়ার পর ভার্সিটির বাইরে মধু ইয়াদের জন্য দাড়ালো।আরিয়া চলে গেছে।ও অবশ্য চেয়েছিলো মধুর সাথে দাড়াতে কিন্তু মধুই জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে।পাছে মুখ ফসকে না আজকের ঘটনা বলে দেয়!

প্রায় পনেরো মিনিট পর ইয়াদ বেরিয়ে এসেছে।পাশাপাশি দাড়িয়ে দু'জনই টুকটাক কথা বলছিলো আর রিকশা খোঁজ করছিলো।কিন্তু রিকশা মিলছে না।আবার এদিকে হঠাৎ করেই আকাশ কালো মেঘেরা হানা দিতে শুরু করলো।একটু পরই হয়তো ঝরে পড়বে।প্রায় মাঝ দুপুরে একটুও ভেজার ইচ্ছে নেই ইয়াদের।এদিকে মধু খুব করে চাইছে রিকশা,বাস,অটো কিছু না পাওয়া যাক আর তাড়াতাড়ি শহরজুড়ে ভালোবাসার বৃষ্টি পড়ুক!বৃষ্টির দাপটে কেউ যাতে রাস্তায় না বের হয়।শুধু ওরাই রাস্তা ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাতে হাত রেখে হাটবে।

হ্যাঁ,মধুর কথাই সত্যি হলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হলো।ইয়াদ বৃষ্টি পড়ছে দেখে মধুকে নিয়ে ভার্সিটির ভেতরে চলে এলো।মধু মনে মনে বিরক্ত হলো!দিনদিন বরটা কেমন যেনো নিরামিষ হয়ে যাচ্ছে।মধু বিরক্তি কন্ঠে বলল,'বাসায় যাবে না?'

'বৃষ্টি থামছে না তো।এখন বের হলে ভিজে যাবো তো!'

মধু কিছু বলল না।গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে চেয়ে রইলো।আর এদিকে মধুর দিকে চেয়ে একটু মুচকি হাসলো।ইয়াদ প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলো এমুহূর্তে মধু কি চাইছে!কিন্তু সবসময় তো আবদার রাখ যায় না।এখন বৃষ্টিতে ভিজলে নির্ঘাত জ্বর আসবে।আর মধুর জ্বর আসা মানে ইয়াদের ঘাম ছুটে যাওয়া।অপারেশনের ১৫ দিন পর একবার হঠাৎ করেই জ্বর এসেছিলো তাও যেই সেই জ্বর না কাঁপুনি দিয়ে জ্বর ওঠে।জ্বরের জন্য কিছু খেতেও পারে না।রাতে ঘুমও আসে না।এদিকে ওর এই অবস্থা দেখে ইয়াদেরও ঘুম উড়ে গেছিলো।তখন থেকেই ইয়াদ ভয় পায়!তবুও ভেজা যেতো কিন্তু অপারেশনের পর যে ঔষধগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো এখনো খেতে হচ্ছে।এর ওপর যদি আবার জ্বর আসে তাহলে আবার এক্সট্রা জ্বরের ঔষধও খেতে হবে।এমনিতেই ওই ঔষধ গুলো খাওয়াতেই ইয়াদকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়!তাই আর বাড়তি ঝামেলা না বাড়ানোর জন্য মধুর আবদারে সায় দিলো না।এদিকে উনি তো গাল ফুলিয়ে রেখেছে।থাক!মাঝেমধ্যে গাল ফুলানো ভালো।দেখতে ভালো লাগে!

বৃষ্টি কমেছে।এখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে।ইয়াদ নিজের ব্লেজারটা খুলে মধুর মাথার ওপর দিয়ে বলল,'এটা মাথার ওপর ধরে রাখো।তাহলে মাথায় পানি পড়বে না।'

মধু কিছু বলল না।মুখটা গোমড়া করে ব্লেজারটা মাথার ওপর ধরলো।তারপর ওরা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে দাড়ালো।এবার যদি একটা রিকশা অথবা বাস পাওয়া যায়।ভাগ্য ভালোই ছিলো বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হয় নি রিকশা না পেলেও বাস পাওয়া গেছে।ইয়াদ মধুকে নিয়ে বাসে উঠলো।বাসে অনেক মানুষ।খুব কষ্ট করে দাঁড়াতে হচ্ছে।ইয়াদ মধুকে একহাতে শক্ত ধরে আরেকহাতে বাসের ওপরের ঝুলানো হাতল ধরলো।মধুও ইয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রইলো।পেছন থেকে খুব চাপ আসছে কিন্তু ইয়াদ শক্ত করে দাড়িয়ে রইলো যেনো মধুর গায়ে চাপ না পড়ে।মধু ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো!মানুষটা এমন কেনো!এতো ভালোবাসে কেনো?মধুর মনে পড়ে গেলো প্রথম দিনগুলোর কথা।মাঝেমধ্যে যখন ওরা বাসে উঠতো তখন ঠিক এভাবেই ইয়াদ ওকে আগলে রাখতো।এতো বছরেও একটুও পাল্টায় নি!উল্টো ভালোবাসা যেনো বাড়ছে।মধু মাঝেমধ্যেই ভাবে কোনো পূর্ণের কারণে যে এই মানুষটার সাথে ওর দেখা হয়েছিলো!
-------------
ইফাজ চেম্বারে বসে একটা রিপোর্ট দেখছিলো খুব মনোযোগ দিয়ে হঠাৎ একটা কল আসতেই ওর মনোযোগ সরে যায়।রিপোর্টটা টেবিলে রেখে ফোনরে স্ক্রিনে চোখ দিলো।নিখিল ফোন করেছে।ইফাজ ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিখিল বলল,'দোস্ত আজকেই ফিরলাম ট্রেনিং থেকে।তোর সাথে রাতে দেখা করবো।'

ইফাজের মুখে একটা রহস্যময়ী হাসি খেলে গেলো।বলল,'আচ্ছা।তুই ওই পুরোনো ফার্ম হাউসে চলে আসিস।'

'আচ্ছা।'
সংক্ষিপ্ত আলাপে ওরা ফোন রাখলো।ফোন রাখার পর ইফাজের মুখে রহস্যের হাসিটা আবার দেখা গেলো।

মাগরিবের নামাজ পড়ে নিহা ফোনটা হাতে নিয়ে ইফাজকে ফোন দিলো।ইফাজ রিসিভ করতেই বলল,'আজকে আসবে কখন?'

'আসতে দেরি হবে।একটা অপারেশন আছে।'

'প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো।আমার আজকে খুব খারাপ লাগছে।'

নিহার কথায় ইফাজ চিন্তিত হয়ে গেলো।মাত্র তো আটমাস চলে।ইফাজ বলল,'আচ্ছা ঠিকাছে আমি চলে আসবো।'

নিহার ফোন কেটে ইফাজ নিখিলকে ফোন করে আসতে মানা করলো।তারপর দ্রুতই ডিউটি শেষ করে বাসায় আসলো।নিহা চুপচাপ খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।ইফাজ কাছে এসে বসলো।চিন্তিত গলায় বলল,'কেমন লাগছে নিহা?বেশি খারাপ লাগছে?'

নিহা ইফাজকে ভরসা দিয়ে বলল,'না একটু আগে অনেক বেশি খারাপ লাগছিলো কিন্তু এখন ঠিক আছি।তুমি প্লিজ আমার কাছেই থাকো।'

ইফাজ কোমল হেসে নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,'আমি আছি।তোমার কাছেই আছি।'

নিহা প্রসন্ন হাসলো।আসলে ভালোবাসার মানুষের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবহেলা যেমন কষ্ট দেয়,তেমনিই একটু ভালোবাসাও মনে শান্তি দেয়।

রাতের খাবার খাইয়ে ইফাজ নিহাকে শুইয়ে দিলো।আর নিজে সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।রুমে আলো নেই।তবুও নিহার ঘুম আসছে না।নিহা উঠে বসলো।ইফাজকে ডেকে বলল,'ইফাজ ঘুম আসছে না আমার।'

ইফাজ ল্যাপটপটা বন্ধ করে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে নিহার পাশে এসে বসলো।ওর সামনে আসা চুলগুলো পেছনে গুঁজে দিয়ে হালকা হেসে বলল,'আচ্ছা।আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি। তুমি শোও।'

নিহা শুয়ে পড়লো।ইফাজ ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে একটা গান গাইতে শুরু করলো।বলা এটা প্রিয় একটা গান ওর।কিভাবে প্রিয় হলো এটা ও নিজেও জানে না।হঠাৎ করেই হয়ে গেলো।

"তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।।"

গান শুনতে শুনতেই নিহা ঘুমিয়ে পড়লো।নিহা ঘুমিয়ে পড়ার আরো কিছুক্ষণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ইফাজ।তারপর হাতঘড়ি দেখলো।মাত্র ১১ টা বাজে।নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে নিখিলকে কল দিয়ে আবার আসতে বলল।ওরা রাত বারোটায় দেখা করবে।ইফাজ একটা ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিলো যেগুলো আজ রাতে কাজে আসবে।রিভলবারটাও নিয়ে নিলো এবং চুপিসারে নিজের গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।নিখিলের আগে পৌঁছাতে হবে!

খুব দ্রুত ড্রাইভ করে নিখিলের আগেই পৌঁছেছে ইফাজ।সব প্ল্যান মতো সেটও করে ফেললো।এবার শুধু নিখিল আসার পালা।আধঘন্টা পর নিখিলও চলে এসেছে।নিখিলকে দেখে ইফাজ কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল,'আরে বন্ধু আয়।'

নিখিল ঘরে ঢুকতেই ইফাজ আচমকাই ওর মুখে ক্লোরফোম স্প্রে করলো।নিখিল সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো।তারপর ওকে একটা চেয়ারে বসিয়ে বেঁধে ফেললো ইফাজ।এখন ঘন্টাদুয়েক অপেক্ষা করতে হবে জ্ঞান ফেরার জন্য।

ঘন্টাদুয়েক পর যখন নিখিলের জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলো ও একটা চেয়ারে বাধা সামনে ইফাজ পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে আর কফিতে চুমুক দিচ্ছে।বাসা থেকেই বানিয়ে নিয়ে এসেছিলো।ফ্লাস্কে ছিলো বলে ঠান্ডা হয় নি।নিখিল বিস্ময়ে বলল,'এসব কি ইফাজ?আমাকে বেঁধে রেখেছিস কেনো?'

নিখিলের কথা শুনে ইফাজ অট্টহাসি দিলো।সাধারণ এভাবে ইফাজ হাসে না।ওর হাসির শব্দ হয় না কখনো।কিন্তু আজকের হাসি ভিন্ন!ইফাজ হুট করেই হাসিটা থামিয়ে মুখটা গম্ভীর করে বলল,'কফি খাবি?এখনো গরম আছে।আসার সময় বানিয়ে এনেছিলাম।'

নিখিল বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,'এসব কি ইফাজ!আমি কি জিগ্যেস করছি আর তুই কি বলছিস?এভাবে বেঁধে রেখেছিস কেনো আমাকে?'

ইফাজ নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে নিখিলের পেছনে গিয়ে দাড়ালো।কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,'আচ্ছা নিখিল!ধর,আজই যদি তোর জীবনের শেষ রাত হয় তাহলে কেমন হবে বল তো?'

নিখিল কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।ঢোক গিলে বলল,'কি বলছিস তুই ইফাজ?'

'তুই যা শুনেছিস তাই বলেছি।'

'হেয়ালি ভালো লাগছে না ইফাজ।'নিখিল রেগে বলল।

ইফাজ আবারও হাসলো।বলল,'আচ্ছা যা খেলা শুরু করি।'

ইফাজ নিজের ফোন থেকে একটা ভয়সে রেকর্ড অন করলো।ভয়েস রেকর্ডটা শুনেই নিখিলের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেলো।এই ভয়েস রেকর্ডটা ওই চারটা ছেলের যারা মধুকে রেপ করেছিলো।ওদের কিছুদিন আগেই ইফাজের লোকেরা ধরে ফেলেছিলো।আর ওদের যখন জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়েছিলো তখন সবাই নিখিলের কথা বলেছে।নিখিলের নির্দেশেই ওরা মধুকে তুলে এনেছিলো।সেদিন নাকি নিখিলও নাকি রেপ করেছিলো।ওরা সবাই মধুকে মেরেই ফেলতো যদি না মধু সেদিন সকালে পালাতো।এরপরেও মারতে চেয়েছিলো কিন্তু পারে নি।ওইদিন সব জানার পর ইফাজের মন চেয়েছিলো ওইমুহুর্তেই নিখিলের চরম মৃত্যু দিতে কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করেছিলো তবে ওই চারজনকে ইফাজ জীবিত ছাড়ে নি ওদের সাথে তেমনই করা হয়েছে যেমনটা ওদের প্রাপ্য!


ভয়ে নিখিলের মুখ এইটুকু হয়ে গেছে।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।চোখ নিচের দিকে স্থির!মুখে কথা নেই।অবশ্য অপরাধ ধরা পড়ে যাওয়ার পর অপরাধীর মুখে আর কোনো কথাই থাকে না।ইফাজ নিজের চেয়ারে বসে শান্ত গলায় বলল,'কেনো এমন করলি নিখিল?'

নিখিল ভয়ে ভয়ে ইফাজের দিকে তাকালো।ইফাজের দৃষ্টিতে ক্রোধ!নিখিল ঢোক গিললো।কিন্তু কিছুই বলল না।ইফাজ আবার বলল,'মধুর সাথে কি শত্রুতা ছিলো তোর?কেনো এমন করলি?কেনো এতোদিন এই নোংরা খেলাটা আমার সাথে খেললি?

নিখিল তারপরও কিছু বলল না।চুপ করে রইলো।এবার ইফাজ রেগে ওর গলা চেপে ধরলো।ইফাজের চোখেমুখে হিংস্রতা!দাঁত কটমট করে বলল,'জবাব দে আমার।চুপ করে থাকবি না।'

নিখিলের চোখ উল্টে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।হাত বেধে রাখায় বাধাও দিতে পারছে না।আধ সেকেন্ড ধরে রাখার পর নিখিল অতিকষ্টে বলল,'ব বলছি।'

নিখিলের কথা শুনে ইফাজ ছেড়ে দিলো।ইফাজ ওর গলা ছাড়তেই নিখিল কাশতে লাগলো।আসলে গলার মধ্যে চাপটা অনেক জোরে লেগেছে।কাশি থামলে নিখিল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,'তোর সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই।আমার নেক্রোফিলিয়া আছে।মৃত মেয়েদের শরীরের প্রতি আমার আকর্ষণ!কিন্তু মধুকে আমার জীবিত,মৃত দুই অবস্থাতেই চাই।ওর মতো শরীরের অধিকারী আমি আর কাউকে দেখি নি।ওকে দেখলেই কামনা.... 

নিখিল নিজের কথা শেষ করতে পারলো না।আবারও ইফাজ ওর গলা চেপে ধরে বলল,'কুত্তার বাচ্চা তোকে আমি মেরে ফেলবো।'
বহুকষ্টে ইফাজ নিজেকে কন্ট্রোল করলো।নিখিলের গলা ছেড়ে দিলো।নিখিল আবার কাশছে।তারপর কাশি থামতেই বলল,'আমি মধুকে অনেক আগে থেকেই চিনি।ওকে আমি কাছে পেতে চাইতাম।প্রেম করে কাছে পাওয়ার চেয়ে আমি সরাসরি পেতে চাইতাম।শুধু একরাত তার পরেই আমি ওকে মেরে ফেলবো এবং ওর সাথে থাকবো।লাশ পঁচে যাওয়া পর্যন্ত।এমন অনেক মেয়ের সাথেই আমি করেছি।মাঝেমধ্যে মর্গেও যেতাম।মর্গের দারোয়ানরা আমার লোক ছিলো তাই সমস্যা হয় নি।অনেকদিন একই লাশের সাথে আর ভাল্লাগছিলো না তাই নতুন কাউকে প্রয়োজন ছিলো আমার।তো হঠাৎ একদিন আমি মধুকে দেখতে পাই দেখেই ভালো লেগেছিলো।তারপর অনেকদিন ফলো করছি ওকে।রাতের বেলা মাঝেমধ্যে ওর বাড়িতেও উকি দিতাম।এর কিছুদিন পরই লক্ষ করলাম তোর ছোটোভাই এর সাথে ওর মেলামেশা।বুঝতে পারছিলাম ওদের মধ্যে সম্পর্ক আছে।তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো।ওকে অনেকভাবে কিডন্যাপ করতে চাইছিলাম কিন্তু পারি নাই।কোনো না কোনো ভাবে ও বেঁচেই যায়।আমি বুঝলাম যে এভাবে সম্ভব না।তাই ওদের বাড়ির একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করি।মেয়েটার নাম নিশি।রিলেশন চলাকালীন মেয়েটার সাথে আমার কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়।ওর অগোচরেই আমি ওগুলোর ভিডিও করি।পরে ওকে ওই ভিডিওগুলো দেখিয়ে ব্ল্যাক মেইল করি যেনো ও মধুকে কিডন্যাপ করতে সাহায্য করে।ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার ভয়ে নিশি রাজি হয় করতে।ওকে দিয়ে মধুকে কিডন্যাপ করাই।কিন্তু তুই ওইখানে তাড়াতাড়িই পৌঁছে যাস তাই আমার প্ল্যানটা বাতিল হয়ে যায়।ওই যাত্রায় তুই মধুকে বাচিয়ে ফেললি।পরে যখন আমার কাছে এসে সব বললি।তখন আমি তোর বিশ্বাস রাখার জন্য ওই ভাড়াটে গুন্ডাগুলো কে ধরে আনি।ওরা আমাকে চেনে না ওরা নিশিকে চেনে তাই তোকে নিশির নাম বলেছে।কিন্তু এখন তুই যদি নিশির কাছে যাস তাহলে আমার ধরা পড়ার সম্ভবনা আছে।তাই আমি ওই রাতে নিশিদের বাসায় যাই।এটা নিশি ছাড়া আর কেউ জানে না।'

একটানা এই পর্যন্ত বলে নিখিল থামলো।ইফাজ ওকে একটু সময় দিলো।দুইমিনিট চুপ থেকে নিখিল আবার বলতে শুরু করলো,'তারপর ওকে আবার ব্ল্যাক মেইল করি।এবার ওকে নিজের গলায় ফাস দিতে বলি যেনো না মনে নাহয় এটা মার্ডার।নিশি অনেক কান্নাকাটি করেছিলো কিন্তু আমি ওর কান্নায় কর্ণপাত করি নি।ফলশ্রুতিতে নিশি নিজের গলায় নিজেই ফাস দিলো।ওর মৃত্যু নিশ্চিত করে তারপর আমি চলে গিয়েছিলাম সেখান থেকে।ওইদিন রাতেই তুই আমাকে নিশির নাম্বার টেক্সট করেছিলি ওকে খোঁজার জন্য।আমি দুইদিন খোঁজার নাটক করে পরে তোকে জানিয়েছিলাম যে নিশি মারা গেছে।এরপর সন্দেহজনক কিছু ঘটে নি।এর মধ্যেই মধুকে কিডন্যাপ করতে না পেরে আমার চোখ অন্য মেয়ে তে পড়েছিলো।এরপর ওদের সাথেও তাই করেছি।এভাবেই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ করে একদিন মধুকে আবার রাস্তায় দেখি আমার আবার মাথা খারাপ হয়ে যায়।দুই তিন দিন ওকে ফলো করি।টার্গেটে রাখি ও কখন কোথায় যায়।এরপর একদিন সন্ধ্যায় আমার লোক দিয়ে ওকে তুলে আনি।ওর জ্ঞান ফেরার আগেই ওকে আমি কয়েকবার রেপ করি।তারপর ওকে মেরে ফেলতে চাইছিলাম কিন্তু পরে আর আমার লোকদের জন্য মারি নাই।সারারাত ওরাই রেপ করছে।আমি ছিলাম না।ওদের বলে গেছিলাম ভোর হওয়ার আগে মধুকে মেরে ফেলতে।কিন্তু ওরা মদ খেয়ে টাল হয়ে গেছিলো তাই সকালে মধু পালাতে পেরেছে।এরপর মধুর পালানোর কথা শুনে আমি ভয় পেয়েছিলাম।যদি ওর কারো চেহারা মনে থাকে তাহলে তো ধরে ফেলা যাবে তাই ওকে মারতে চেয়েছিলাম কিন্তু জানতে পারি ও পরিবার সহ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে কোথায় গেছে কোনো হদিশ নেই।আমি কিছুটা চিন্তা মুক্ত হলাম।তারপর তিন/চার মাস চিন্তা মুক্তই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ একদিন তুই ফোন দিয়ে বললি মধুর লোকেশন ট্রেস করতে।মধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া আছে।ওই খবর শোনার পর প্রচুর চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।মনে মনে বারবার আসছিলো ওর কারো চেহারা মনে আছে কি না!তারপর তুই আমাকে ডেকেছিস রাতে।আমি ভয়েই ছিলাম কিন্তু যখন ইয়াদ বলেছিলো মধুর কারো চেহারা মনে নেই তখন কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়েছিলাম।কিন্তু যখন বলল একটা বন্ধ ফোন আছে মধুর কাছে তখন চিন্তা যাওয়ার বদলে আবার এসেছে।তাই তোদের বলেছিলাম ফোনটা তাড়াতাড়ি আমাকে দিতে।কিন্তু কপাল খারাপ আমার।পরেরদিনই জরুরি ভিত্তিতে ট্রেনিং এর জন্য চলে যেতে হয়েছিলো।আমি ভেবেছিলাম আমাকে ছাড়া তুই কিছুই করবি না।কিন্তু.....'

'কিন্তু' শব্দের পর আর কিছুই উচ্চারণ করতে দিলো না নিখিল তার আগেই ইফাজ বলল,'কিন্তু তোর ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিলাম তাই তো?আসলে তুই ট্রেনিং এ যাওয়ার পর আমার মনে হয়েছিলো এটা নিয়ে বসে থাকা উচিত না।তাই ওই ফোনটা ওপেন করে ওই চারজনের মধ্যে একজনকে ধরলাম।তারপর বাকিগুলো একে একে ধরলাম।জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলাম কিন্তু প্রথমে মুখ খোলাতে পারি নি।তারপর আমার হিংস্রতা দেখে তোর কথা বলেছিলো সবাই।এছাড়াও ওই ফোনটায় আমি তোর নাম্বারও পেয়েছিলাম।আর কেনো জানি মনে হয়েছিলো এরা সাথে তুইও কোনো না কোনো ভাবে জড়িত।ওদের জবানবন্দিতে বুঝলাম এসবের মাস্টার মাইন্ড তুই।জানিস তোকে তখনই পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে করেছিলো কিন্তু আমি কোনো কাজই তাড়াহুড়ায় করি না যেমন আজকেও করবো না।আমি কিন্তু চাইলেই তোকে এখনই শ্যুট করতে পারি কিন্তু তুই তো কোনো কষ্ট পাবি না।এতো মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার পরেও তোকে এতো সহজে কিভাবে মৃত্যু দেই বল?তোকে আমি মরণ দেবো না।বাঁচিয়ে রাখবো।তুই মরতে চাইবি কিন্তু পারবি না।

কোথা থেকে যেনো ইফাজের মধ্যে ভয়ংকর হিংস্রতা ভর করলো।নিজের ব্যাগ থেকে এসিড বের নিখিলের মুখমন্ডলে মেরে দিলো।নিখিল চিল্লাতে চাইলেও পারলো না মুখ বাঁধা বলে তবে প্রাণপণে গোঙাচ্ছিলো।কিন্তু সেসব ইফাজের কর্ণ কুহরে পৌঁছালো না।ইফাজ ওর দুটো চোখ উপড়ে ফেললো।ধারলো চাকু দিয়ে জিহ্বা কেটে দিলো।তারপর হাত পায়ের আঙুলগুলো কেটে দিলো।সর্বশেষে পুরুষাঙ্গও কেটে ফেললো।এরপর আবার নিজেই কাটা জায়গা গুলো সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দিলো।কারণ এখান থেকে রক্ত পড়লে ওর মরে যাওয়ার সম্ভবনা আছে কিন্তু এতো সহজে মরলে তো হবে না!ওকে অনেক কষ্ট পেতে হবে।যেনো মৃত্যু চেয়েও না পায়।

তারপর মাঝরাতে নিজের গাড়ি করে ওকে স্টেশন নামিয়ে দিয়ে গেলো।নিখিল বারবার কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।অবশ্য যাবেও না।ও যতোই চিল্লাক কিছুই বোঝা যাবে না।ইফাজ নিখিলকে স্টশনের একটা কোনায় বসিয়ে দিলো।ওকে দেখে কারো চেনার সাধ্য নেই একমাত্র ইফাজ ছাড়া। যাওয়ার সময় ইফাজ কানেকানে বলল,'ইনজয় ইউর নিউ লাইফ।'

পেছন থেকে নিখিল বহুবার কিছু বলতে চেয়ে বলতে পারে নি।
----------------
এরপর প্রায় ৩ বছর পরের কথা....
'মাম্মাম,বাবা কখন আসবে?'নিহান মায়ের কোলে শুয়ে জিগ্যেস করলো।

নিহা হাসিমুখে বলল,'তোমার বাবা একটু পরই আসবে।'

'বাবা আসলে আমার খেলবো।'

'আচ্ছা বাবা।'
ইফাজ নিহা দম্পতির একমাত্র সন্তান নিহান।দুজনেরই চোখের মণি।তবে সে মায়ের থেকে বেশি বাবা ভক্ত।বাবা বলতেই পাগল।এমনিতে সে মা ছাড়া একদন্ডও চলতে পারে না।সবাই বলে ছেলেরা মায়ের নেওটা হয়।কিন্তু এদিকে উল্টো।নিহান বাপের নেওটা।এতে অবশ্য নিহার অভিযোগ নেই।সে ব্যাপারটায় মজা পায়।তবে আরেকটা খুশীর খবর হলো নিহা আবার মা হবে।প্রথম বারের মতো ইফাজ এবারও একজন আদর্শ স্বামী ও বাবার দায়িত্ব পালন করছে।
নিহান জন্মানোর পর ইফাজ নিহা আর নিহানকে নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমায়।এখন আর সে স্বামী নেই একজন বাবাও।ইফাজের মনে হয় অনেক তো হলো এবার নাহয় নিজের ভবিষ্যতের দিকে তাকাই।সেই চিন্তা করেই ইফাজ লন্ডন চলে এসেছে তবে এই কারণটা কাউকেই বলে নি এটা এখনো অজানা সবাই জানে ইফাজ পি এইচ ডির জন্য লন্ডন গেছে।শেষ হলেই চলে আসবে।তবে এতো কিছুর পরেও এখনো দিনের মধ্যাহ্নে বা কখনো রাতের শেষে তাকে খুব করে মনে পড়ে।




চলবে...




Writer:- Arshi Ayat


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner