> অন্তর্দহন প্রণয় পর্ব ৭, ৮ - Bangla Thriller Story - Boipoka365
-->

অন্তর্দহন প্রণয় পর্ব ৭, ৮ - Bangla Thriller Story - Boipoka365



হতাশ হয়ে চাইলে এবার কুয়াশার দিকে। কুয়ার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। নিরাশ হয়ে তারা ফিরে এলো হলে। কিন্তু হলে পা রাখতেই যা দেখলো, চোখ ছানাবড়া....।

সবাই জড় হয়েছে এক সাথে। ঠিক তাদের মধ্যমনি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ডা.আদর। হাত নাড়িয়ে খুব সুন্দর ভঙ্গিমায় কিছু বলছেন। দূর থেকে তেমন কিছু শুনতে পাচ্ছে না বলে এগিয়ে এলো ওরা।  জয়নব এই প্রথম ডা. আদরকে মাস্ক ছাড়া দেখলো। লাল সাদা রং এর শরীর আর  চশমার আড়ালে ফ্যাকাশে চোখের মালিক প্রচন্ড সুদর্শন। শরীরে তার যেন আভিজাত্য চুয়ে চুয়ে পড়ছে। শক্ত চোয়াল জুড়ে সুন্দর করে কাঁটা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। গায়ে ঝুলছে নেভি ক্যাজুয়াল শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট।  সাদা চামড়ার হাতে উপর চুপটি করে বসে আছে ব্ল্যাক ওয়াচ। হালকা বাদামি চুল গুলো ঠেলে পিছনে রেখেছেন।   অহংকারের সাথে যেন মাথা উঁচু করে আছে ছোট ছোট দুটো তীল গ্রীবাদেশে। জয়নব যেন ঘোরে চলে যেতে লাগলো। শ্বেতাঙ্গ  ব্যক্তিটির উপর তার মন যেন ধীরে ধীরে গলে পড়তে লাগলো। 

" সামনের শুক্রবার নবীন বরণ হতে চলেছে। প্রতিবারের মতো আপনাদেরকেও বরণ করে নিয়া হবে। তবে আপনারা চাইলে কবিতা, নাচ, গান, মডেলিং আরো অনেক কিছুতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তার জন্য দায়িত্বতে আপনাদের সিনিয়র ভাই আয়ান আর যুথি। "

কানের মাঝে ঝনঝন করে উঠলো আয়ান নামটি।  চকিতে মুখ তুললো জয়নব। চোখ দুটিতে চমকের ছাফ। আয়ান যখন এসে দাঁড়ালো ডা. আদরের পাশে,  জয়নব যেন ১৮০ বোল্ডের শক্ড খেলো। শুকনো ঢুক গিলে কুয়াশার দিক তাকালো। কুয়াশা ভ্রু কুচকে আছে আয়ানকে দেখে। জয়নবের দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনে তাকালো আবার। এর মাঝে ডা.আদরের ঘোষণা সবাই হাততালি দিতেই জয়নব অসহায় ভাবে তাকালো কুয়াশার দিকে। ঠিক সেই মুহূর্তে ডা. আদর তাকালো অসহায় মুখশ্রী জয়নবের দিকে। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। জয়নবের পাশ ঘেষে এবার চলে গিয়ে আবার দু পা পিছিয়ে এলেন তিনি। জয়নব তখন তাকিয়ে কুয়াশার দিকে। কুয়াশাও তাকিয়ে জয়নবের দিকে। যেন চোখে চোখে হাজার কথা চলছে তাদের মাঝে! 

ডা. আদর সব কিছু লক্ষ করলেন।  দুজনের  সামনে এক চুটকি বাজিয়ে বললেন,

"কোথায় হারিয়ে গেলেন মিস?"

জয়নব চমকে তাকালো। বুকের মাঝে থুতু দিয়ে হাসার চেষ্টা করলো। বলল,

"কোথাও না স্যার!"

সন্ধিহান দৃষ্টিতে থাকিয়ে রইলো ডা. আদর। জয়নবের আগাগোড়া দেখে নিলো। কচুঁ পাতা রঙ্গের জামা পড়া, উষ্কখুষ্ক চুল, ক্লান্ত মুখ আর চোখ। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ তাদের। ডা. আদর ঠান্ডা আর থমথমে কন্ঠে বললেন,

"ইউ বোথ কাম টু মাই কেবিন! কুইক লি? "

জয়নবের ভয়ে মুখ সাদা হয়ে গেলো। কেন জানি লোকটিকে দেখলে তার ভয় লাগে। লোকটি ফ্যাকেশে ধারালো চোখ যেন তাকে আরো শিথিল হয়ে পরে...।আবার ডাকচ্ছে তাদের??

এদিকে কুয়াশা টুপ করে মাটটিতে বসে পড়লো।

"বইন আমি জামু না। তুই যা। এই বেটটা অভিনব স্যারের থেকে বেশি রাগী। "

জয়নব তার পাশে বসলো। ফিসফিস করে বলল,

"তুই না গেলে আমিও জামু না। তার আগে আয়ান ভাইয়ার কাছে যাই চল!"

কুয়াশা এবার খেপে গেলো,

"তুই যা।  মাফ কর আমায়। আয়ান মইরা,  মইরা গেছে কইয়া মাথায় তুলছোস? ব্যাটা সমনে হাজির তোর সাথে নেই আমি যা ভাগ!"

জয়নব বাচ্চাদের মকো মুখ করে মানাতে চাইলো,

"প্লীজ!"

কুয়াশা রাগ করেও থেকেও পারলো। খিল খিল করে হেসে দিলো। তারপর পা বাড়ালো দুজন আয়ানের কাছে।

----------

"আর ইউ ম্যাড জয়নব?"

"আমি সত্যি বলছি ভাইয়া, আমি সেদিন আপনাতে দেখেছি। "

একে একে সব খুলে বলল জয়নব! আয়ান হো হো করে হেসে উঠলো। বুকে হাত দিয়ে হাসি থামাবার চেষ্টা করলো। করিডোরের এক পাশে বসার জন্য চেয়ার দিয়া। সেখা বসে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,

"আই থিঙ্ক তোমার একটা ভালো সাইক্রেটিস্ট এর কাছে যাওয়া দরকার। "

জয়নব আর কিছু বলতে পারলো না। এদিকে কুয়াশাো একটি কথা বারবার ঘ্যানঘ্যান করে চলছে। জয়নব রাগে চেঁচিয়ে উঠলো এবার,

" তোর আমার কথা বিশ্বাস না হলে আসিস না আমার সাথে।আমি অসুস্থ নেই। সেদিন যা দেখেছি ভুল দেখিনি। আমার কাজো আর তোর হেল্প করতে হবে না। যা করার আমি করবো। "

কুয়াশা হতাশ হলো।জয়নবকে বোঝানো তার কাম্য নয়।এরেই মাঝে একজন ওয়ার্ড বয় এসে হাজির। লোকটি এসেই ধমকের মতো বলল,

"তোমাদের আদর স্যার ডাছেন!"

লোকটি কথায় দুজনেই কেমন সিটিয়ে গেলো। মিন মিন করে বলল,

"যাচ্ছি ভাইয়া!"

--------------------

"আপনার কোথায় গিয়েছিলেন? আপনার কি জানেন না? ক্লাস চলা কালীন সময় গুলোতে কোথাও যাওয়া নিষেধ আপনারা কি জানেন না?"

মাথা নত করেই দাঁড়িয়ে আছে দুজন। ডা. আদরের শক্ত কথাতেই যে কেঁপে উঠলো তারা। দুজনেই একসাথে বলে উঠলো,

"সরি স্যার।"

ডা. আদর এবার দুজনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,

"নিয়ম যখন ভেঙেছেন শাস্তিতো পেতেই হবে!"

দুজনেই চোখ তুলে তাকালো। মুখখানা এমন যেন এখনেই মেরে বালি চাপা দিয়ে দিবে যেন ডাক্তার আদর। চুপসে গেছে একেবারে।  আদরের তা দেখেই হেসে ফেলতে চাইলো হো হো বাট চেপে গেলো। গম্ভীর কন্ঠে বলল,

"মিস কুয়াশা আজ আপনি ডিউটি করবেন শিশু ওযার্ডে। আপনি যেতে পারেন এখন।"

কুয়াশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে  চলে গেলো। বাচ্চাদের ওয়া ওয়া শুনতে মোটেও তার ইচ্ছে করছিলো না। সারা দিন জার্নি করে এই প্যারা নিয়ার কোনো মানেই হয় না। 

কুয়াশা যেতেই জয়নবের পানে তাকালো আদর। জয়নবের মনে হলো, তার ধারালো দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করে ফেলবে।  জয়নব বার বার ঢুক গিলতে  লাগলো। থরথর করে কাঁপতে লাগলো তার হাত পা। ডা. আদর টেবিলে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। চোখে যেন অদ্ভুত কিছু তার। কিন্তু কি? বুঝতে পারছে না জয়নব। ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখে সুক্ষ্ম ভাবে মুখস্থ করতে ব্যস্ত জয়নবের লতানো শরীরের দিক।জয়নবের  অস্বস্তি  লাগছে খুব। সে বলল,

"স্যার আ..মি কি করবো??"

ডা. আদর অকপটে বলল,

"ভালোবাসো!"

জয়নব সাথে সাথে চোখ মেলে তাকাতেই আদর বলে উঠলো,

"কাল সকালেই আমি চিটাগং যাচ্ছি সেখানে একটি সার্জারি আছে, আমি আমাকে অ্যাসিস্ট করবেন।  সো রেডি থাকবেন সকাল সাতটায় বের হবো আমরা!"

জয়নব আর মাথা ঘামালো না মাথা নাড়িয়ে বের হয়ে গেলো সে। তার মাথা এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে আয়ানের ব্যাপারটা....।

----------

রাত প্রায় দুটো বাজে, চোখে ঘুম নেই জয়নবের।  নিশাচর পাখিদের মতো সেও বেড়িয়ে পড়লো হোস্টেল থেকে। ঠিক একই জায়গায় এসে দাঁড়ালো জয়নব। সেদিন রাতের কথা প্রতি স্পষ্ট মনে আছে এখন, তাহলে? কেন আয়ান অস্বীকার করছে সব? এসব ভেবেই সে আকাশের দিকে তাকালো। তারা ভরা আকাশ। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা লুব্ধকের দিকে তাকিয়ে  চোখ বুঝলো। ভাঙ্গা কন্ঠে বলল,

"বড়পু! আমি তোমার জন্য কিছুই কি করতে পারবো না? যেখানেই হাত দিচ্ছি? সব ধোয়াশা লাগচ্ছে কি করবো আমি বলতো!"

কোনো প্রশ্নের উত্তর ফিরে এলো না। এলো শুধু প্রবল বেগে স্ব স্ব বাতাস।  জয়নব চোখ খুলো। বিজে যাওয়া ছল ছল চোখে ভেসে উঠলো সেই কালো আবরণের মানবের প্রতিছবি। জয়নব স্তম্বিত হলো। লোকটি তার খুব কাছে, বিন্দু পরিমাণ ফাঁকা নেই যেন। জয়নব যখন পিছিয়ে যেতে নিলো। তখনি লোকটির বলিষ্ঠ হাত জোরা চেপে ধরলো জয়নবের বাহু। জয়নবের কথা যেন গলার মাঝ বরাবর আটকে গেছে। কালো কুচকুচে চোখের মনির লোকটি তার হাত দুটি একবারে পিছনে নিয়ে পিঠের সাথে চেঁপে ধরলো। হিসহিস করে বলল,

"মেয়ে রাতবিরাতে হচ্ছে পশুদের রাজ কি করছো এই রাজ্যে প্রানের ভয় আছে তো?"

জয়নব চোখ বড় বড় করে চাইলো। অস্পষ্ট ভাবে বলল,

"প..শু"

লোকটি আরো ঘনিষ্ঠ হলো।  জয়নবে শরীরের ঘান শুকে নিয়ে বলল,

"হে,  পশু মানুষ খেকো পশু। ডোবা তেলে ভেজে খেতে খুব টেষ্ট। সব থেকে সুস্বাদু হয় মেয়েদের দেহের কিছু অংশ!"

জয়নবের পিলে চমকে উঠলো। লোকটির কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার প্রবল চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। এদিকে সে চিৎকার করতে-ও পারছে না যেন গলার মাঝে কেউ কিছু একটা চাপা মেরে দিয়েছে। 

"শোনো মেয়ে, প্রকৃতির মাঝে অনেক কিছু ঘটে যার উত্তর খুঁজতে হয় না। আজ ছেঁড়ে দিচ্ছি ভবিষ্যতে আর দয়া ময়া নাও  হতে পারে আমার। হতেও পারে আমার পেটে গিয়ে তুমি হজম হয়ে আছো!"

লোকটির হাসির শব্দ পেলে জয়নব। লোকটি কথা হীম হয়ে যাচ্ছে শরীর। জয়নবের হিতাহিত জ্ঞানশূন্য।  লোকটি এবার অপ্রতাশিত কাজ করে বসলো। প্রথম দিনের মতো দাঁতের দাগ বসিয়ে দিলো জয়নবের গ্রীবাদেশে। জয়নব ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো একেবারে।  ক্ষত স্থান থেকে বেড়িয়ে আশা রক্ততে জিব্বা বসলো।  শরীরের শিড়া উপশিরায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো  যেন। ধীরে ধীরে জয়নব নেতিয়ে পড়তে লাগলো। লোকটি এবার কোলে তুলে নিয়ে পা বাড়লোন হোস্টেলের দিকে। জয়নব তখন তাকিয়ে। লোকটি বিছানায় শুয়ে দিলো জয়নবকে। আধো খোলা চোখ জোড়ায় হাত বুলিয়ে চুম্বন করলো ললাটে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো সে,

" ঘুমিয়ে পরো আমার রাজ্যের রাণী। "


গাড়ির প্রচন্ড ঝাঁকুনীতে ঘুম ভেগে যায় জয়নবের। বিরক্তি নিয়ে আশে পাশে তাকাতেই মনে পড়ে, সে এখন ডা. আদরের পাশেই অবস্থান করছে। ডা. আদর নির্বিকার ভাবে গাড়ি চালাতে ব্যস্ত। ফ্যাকাশে চোখ জোড়া আজ চশমা দিয়ে ঢাকা নয়। জয়নব নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো তার চোখের দিকে। কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হতেই ডা. আদর তাকালো তার দিকে। জয়নব সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। ডা. আদর ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। জয়নব এই মুহূর্তে তাকালে দেখতে পারতো মনচোরা হাসিটি..।

"ঘুম কেমন হলো জান!"

চমকে তাকালো জয়নব। জান ডাকটি কতটা আদর মাখা,  স্নেহের চাদরে মুড়ানো। আবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। 

"কি ডাকলেন আমায়?"

ডা. আদর মনচোরা হাসিটি আবার হেসে ফেললো। জয়নব মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকলো। কথাটুকু এড়িয়ে জয়নবের গ্রীবাদেশে ইশারা করে বলল,

"গলার ক্ষতটা খুব বেশিই। মেডিসিন ইউস করেন নি?"

জয়নব এবার বিস্ময়ে আকাশ চূড়া। রাতের কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে সে। ক্ষনিকের জন্য  মনে পড়তেই ভেবেছিলো স্বপ্নে তারা করছে সেই লোকটি। সকালে ঘুম থেকে উঠতে লেইট হয়েছে বলে চুল গুলো হাত দিয়ে বেঁধে দৌড় করেছে সে। আয়না দেখার সময় টুকু পায়নি সে। কিন্তু হায়! সব সত্য ছিলো? জয়নব ওরনা দিয়ে গলা ঢাকার চেষ্টা করলো। তখনি শক্ত গলায় বলল ডা. আদর,

" বয়ফ্রেন্ডের দিয়া চিন্হ এভাবে ঢাকবে না। "

বলেই গাড়ি সাইড করলো। জয়নব ঘাবড়ে গেলো। বাহিরে এক পলক দেখে নিলো। পাহাড়ি পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলো তারা। যেখানটায় গাড়ি থামিয়েছে আদর একদম জনশূন্য জায়গায়।  জয়নব শুঁকনো ঢুক গিললো।  ভয়ে তোতলানো শুরু করলো,

"এ..খানে, এখানে থামিয়েছেন কে..ন?"

আদর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো জয়নবের দিক। জয়নব চোখ ফিরিয়ে নিলো। ডা. আদর হালকা ঝুকে ফাস্টেড বক্স বের করলো। জয়নব নড়েচড়ে বসলো। ডা. আদর আরেকটু ঝুকে এলো।  ঘাড় থেকে ওরনা নামিয়ে মেডিসিন লাগাতে লাগলো। এদিকে জয়নবের বুকের মাঝে দুরুদুরু করছে। হৃদপিণ্ড  হাজারগুন স্প্রিডে ধুকপুক ধুকপুক শব্দ করছে। লোকটি শ্বাস প্রশ্বাস পড়ছে তার ঘারে। আদর যতবার ঘাড়ে স্পর্শ করছে, জয়নবের শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটি বুঝে আছে। ঠোঁট দুটি কাঁপছে। এক অদ্ভুত অস্থিরতায় গ্রাস করে নিচ্ছে তাকে। মনের ভিতর শিরশিরানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জয়নব যেন নিজের সত্তা ভুলতে বসেছে।  এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এই লোকটির প্রশস্ত বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলতে। জয়নব আর পারছিলো না এই অদ্ভুত ভয়ংকর অনুভূতির সাথে। এবার সে খামচে ধরলো নিজের ওরনা। তখনি ডা. আদর স্বরে এলো। জয়নবের এবার প্রান ভরে শ্বাস নিলো। ডা. আদর জয়নবের এ অবস্থা দেখেই  ভ্রু কুচকে ফেলে জিজ্ঞেস করলো,

"আর ইউ ওকে?এমন করছেন কেন আপনি? শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে?"

জয়নব ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। মাথা নাড়িয়ে বলল,

"ঠিক আছি!"

ডা. আদর ওকে বলে, আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। জয়নব এবার  স্বাভাবিক।  বাহিরের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে। গাড়িতে চলছে পিনপতন নিরবতা। কিছু সময় ব্যয় করে ডা. আদর আবার ডাকলেন,

"জান!"

জান ডাক শুনেই তরতর করে জয়নবের রাগ বেড়ে গেলো। কাঠ গলায় বলে উঠলো,

"আমাকে আপনি জান ডাকবেন না। জয়নব ঠিক আছে। জান শুধু আপনজনরাই ডাকে!"

আদর মুচকি হাসলো। বলল,

"আমি কি আপনার আপনজন নই জান?"

জয়নব বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। রাগ এবার মাথায় উঠে গেলো। কেন রাগ হচ্ছে বুঝলো না জয়নব। তবুও অনেক কষ্টে স্বাভাবিক রাখতে চেয়েও পারলো না। বলল,

"নাহ্ আপনি আমার শিক্ষক,  আর আমি আপনার শিক্ষার্থী।  এতটুকুই সম্পর্ক আপনার আর আমার!"

ডা. আদর  মুখে হাসি উড়ে গেলো মুহূর্তেই। ফ্যাকাসে হয়ে গেলো দাম্ভিক মুখখানা। গম্ভীর কন্ঠে বলল,

"আই ইউল রিমেম্বার! "

এর পর সব নিস্তব্ধতা।  গাড়ির স্প্রীড  চলতে শুরু করলো। ডা. আদরের মুখ ক্রোধে লাল হয়ে গেছে একদম। জয়নব বুঝতে পারলো না এই ক্রোধের কারণ কি?

-------------------

অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে বসে হাঁপাচ্ছ জয়নব। মেডিকেল কলেজে নতুন সে। কাঁটা ছেঁড়া ছোট থেকেই ভয় পায়। আর তাদের এ বিষয়ে এখনো ক্লাস হয়নি।  মানবদেহের চিড়ে ফেড়ে আবার জোরা লাগানো খুবই ভয়ংকর অনুভূতি।  জয়নব ওটির ভিতরেই  কাঁপা কাঁপা হাতে ডা. আদরের কথা অনুসরণ করে চলেছে। কঁপাল  বয়ে ঘাম ঝরছিল তার। আশেপাশে অন্য ডক্টর গুলো একবার আদরকে বলেই বসল,

"অনভিজ্ঞ  কাউকে না নিয়ে আসলেই পারতেন। দেখে মনে হচ্ছে  মিস জয়নব নিজেই রোগী হয়ে যাচ্ছেন। পড়ে না উনার অপারেশনের ব্যবস্থা করতে হয়। "

হাসির রোল পড়লো বন্ধ ঘরটিতে। জয়নব রাগে দুঃখ কান্না পেয়ে গেলো। এভাবে ডক্টর আদর তাকে অপমান না করলেই পারতো। জয়নব এবার যেন কেঁদে দিবে দিবে ভাব তখনি ডক্টর আদর বলে উঠলো,

"আপনি বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করুন। সার্সার্জারি শেষ করে আসছি! "

জয়নব দৌড়ে বেড়িয়ে এলো যেন সেখান থেকে। 

"পানি!"

একজন অপরিচিত একটি মেয়েলি কন্ঠ শুনে চোখ মেলে তাকালো জয়নব।লাল,  খয়েরী জামা গায়ে নাদুসনুদুস গরনের হালকা লম্বাটে মুখে মেয়েটিও তাকে দেখে মুচকি হেসে যাচ্ছে।হাসি টুকু মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো৷ চোখ জোরায় মায়ায় ভর্তি। জয়নবের তখন খেয়াল হতেই ঝাঁপটে ধরে মেয়েটিকে। মেয়েটি পরম যত্ন মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

"কেমন আছিস জান?"

"ভালো আছি শ্যামাপু তুমি কেমন আছো?বড়পু যাওয়ার পর আর তোমাকেও পেলাম না।"

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল শ্যামা,

"আমি ভালো আছি।রুফাইদা চলে যাওয়ার পর আমিও থাকিনি সেই হাসপাতালে ট্রানস্ফার নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসি । তা তুই এখানে কেন?"

জয়নব সব খুলে বলল।  শ্যামার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো। বলল,

"বোন তুই কেন এসব করছিস? এসব খুব ভয়ংকর।  তোর উচিত হয়নি এসব করা!"

"আমি কি করতাম শ্যামাপু বলো? যেখানে আমার বোনের এভাবে খুন হয়ে গেলে, কেন হলো, কি করে হলো?  তাদের কেন শাস্তি দিতে পারলো না পুলিশ আমি জানতে চাই। তুমি কিছু জেনে থাকলে প্লিজ সাহায্য করো! আমি যেখানেই হাত দিচ্ছি সব ধোঁয়াশা।  আমি চাই আমার বোনের খুনিদের নিজ হাতে শাস্তি দিতে।"

শ্যাম কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলো। রুফাইদার মতোই হয়েছে জয়নব। দুবোনের কত মিল। কিন্তু রুফাইদাকে যারা মেরেছে, তাদের শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা তার ছিলো না ঠিকি। কিন্তু জয়নবকে সে  সাহায্য করতেই পারে। এসব ভেবেই কিছু বলবে তার আগেই অপারেশন থিয়েটারের বাতি নিভে গেল।  সেদিকে এক পলক তাকিয়ে শ্যামা হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেল সেখান থেকে। যাওয়ার আগে বলে গেলো। তার কথা কাউকে না বলতে, আর আধঘন্টার মাঝে ওয়াশরুমে দেখা করতে। জয়নব মাথা নাড়লো। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পাড়লো না,  এভাবে চলে করন গেলো তার শ্যামপু?

----------------

চট্টগ্রামের কাজ শেষ ফিরে যাবার পালা। ঠিক সেই মুহূর্তে জানা গেলো, শহরে  মারামারি লেগেছে রাজনৈতিক দুই দল। সেদিকে যে গাড়িই যাচ্ছে আগুন ধরিয়ে দিয়া হচ্ছে। এসব শোনার পর হাসপাতালের  দায়িত্বরত ডাক্তার হাশেম বললেন আজ রাত রাত বাসাতেই থেকে যেতে। কিন্তু ডক্টর আদর রাজি হলেন না। তারা কোনো গেস্ট হাউজেই উঠতে চায়। ডক্টর হাশেম মাথা নাড়লেন। পাশেই একটি বাংলো বাড়ির মতো রেসর্টে  বুকিং করে দিলেন রুম। ডা. আদর আর জয়নব বের হওয়ার আগেই জয়নব বলল,

"আপনি চলুন আমি আসছি। "

ডক্টর আদর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকাতেই জয়নব বলল,

"ওয়াশরুমে যাবো।"

"রেসর্ট তো কাছেই।  সেখানে গিয়েই না হয়..."

মাঝ পথেই কথা থামিয়ে বলল জয়নব,

"ইটস আর্জেন্ট! প্লিজ!"

কাঁধ বাকিয়ে ডা. আদর বলল,

"ওকে!"

জয়নব হন্তদন্ত হয়ে ওয়াশরুমে দিক ছুটলো। সেখাই পায়চারি করছে শ্যামা। চোখে মুখে আতঙ্ক।  জয়নবকে দেখেই এগিয়ে এলো সে। কাগজে মোড়ানো একটি প্যাকেট এগিয়ে দিল তার দিকে। যেতে যেতে বলে গেলো,

" ওই হসপিটালের কাউকে বিশ্বাস করবে না।  কাউকে মিনস কাউকে না..! কে কখন কোন দিক দিয়ে বিশ্বাস ঘাতকতা করে বসবে জানা নেই। আর হে আমার সাথেও কোনো যোগাযোগ করা চেষ্টা করো না! ভালো থেকো জান!"

জয়নবের ললাটে চুম্বন করে বেড়িয়ে গেল শ্যামা। তার চোখে ছলছল করছে পানি। কত বছরের আত্মগোপনে থাকতে পারবে জানা নেই তার। মন থেকে শুধু চায়। এসব ক্রাইম শেষ হোক। আর কোনো মানুষ না মারা যাক। জয়নব তাকিয়ে রইলো শ্যামার যাওয়ার দিক। ঠিক তখনি ভেসে এলো ডা. আদরের কন্ঠ। চট জলদি প্যাকেটটি ভরে নিলো ব্যাগে। আর বেড়িয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। ডক্টর আদর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলল,

"চলুন এবার?"

জয়নব চাপা হাসার চেষ্টা করে বলল,

"হে চলুন।

-----------------

সবুজে সবুজে চারিপাশ ঘেরা রেসর্টের। শহরের কোলাহল থেকে দূরে,  নিরিবিলি সময় কাঁটাবার জন্য পার্ফেক্ট। চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো জয়নব।চারিদিকে যেন চোখ ধাঁধানো সুন্দর। জয়নব হা করে দেখছে সব। সময়টা শেষ বিকেল হওয়াতে মনোরম পরিবেশ আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠছে। দূরে দূরে দেখা যাচ্ছে যুগলদের। জয়নব চোখ ফিরালো আদরের কন্ঠ পেয়ে। তার ভিতরে ঢুকতেই আকাশ ভেঙ্গে পড়লো জয়নবের মাথা। অস্পষ্ট স্বরে বলল শুধু,

" অসম্ভব! "





চলবে...





Writer:- সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner