রোদ্দুর ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রাহাতের ঘরে যায় কিন্তু ও রুমে নেই।গতকাল ফুলের রুম থেকে আসার পর অনেক রাতে ঘুমিয়েছে তাই ঘুম ভাংতে দেরি হয়।
রাহাতের কাছ থেকে প্রশ্নের জবাব পাওয়া আর হলোনা।যতক্ষণ পর্যন্ত সত্যিটা না জানতে পারবে ওর শান্তি নেই।
তবে ফুলকে আর কষ্ট দিবেনা ভেবে নিয়েছে।তবে সে ভাবনা কতদিন পর্যন্ত টিকবে জানা নেই।
রোদ নিচে গিয়ে দেখে সবাই ব্রেকফাস্ট করছে।
একবার ফুলকে আড়চোখে দেখে নিলো।ওর চোখে মুখে অন্যরকম আভা ফুটে উঠছে।হয়তো খুশির।
রোদ চেয়ার টেনে বসে পড়লো।তারপর মাকে জিজ্ঞেস করলো,
--রাহাত কই?
--আর বলিস না।গতকাল ভর্তি হয়ে এসেছে।সামনের সপ্তাহ থেকে ক্লাস তাই বলে কিনা পুরো সপ্তাহ বন্ধুদের সাথে ঘুরবে।
--ও তো প্রতিদিন চরকির মতো ঘুরতেই থাকে।তাও শেষ হয়না ওর ঘুরা?
--তা ভাই তুমি ঘরের মধ্যে কি এমন মধু পেলে যে ঘর ছাড়তেই চাও না?
রোদের দাদি দাত কেলিয়ে হেসে হেসে বললো।
--দাদি জানোই তো আমি অযথা বাইরে ঘুরাঘুরি করিনা।আর তাছাড়া তুমি থাকতে আমার বাইরে যাওয়ার কি দরকার?
--হু,,বিয়ে করলে আর এই বুড়ি দাদির কথা মনে থাকবে?
--থাকবে না কেন?তোমাকে কি ভুলা যায় তুমি যেসব কান্ড করো।
(কিছুটা টিটকারি করে কিন্তু দাদি কিছুই বুঝলো না।)
--তাহলে আর কি?আমাকেই বিয়ে করে ফেল।
--কি যে বলো দাদি,,তুই যেই পেচাল পারো তাতে আমি দুদিনেই পাগল হয়ে যাবো।
ফুলের দিকে চোখ পড়তেই রোদ দাদির সাথে কথা বলা বন্ধ করে নড়েচড়ে বসে।তারপর বলে,
--কাকাই,,রাহাত তো ভর্তি হয়ে গেলো।ফুলকে বসিয়ে রাখবে?
রোদের মা বললো,
--সেকি কথা বসিয়ে কই রাখছি।ওর জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে পছন্দ হলেই বিয়ে করে ঘর সংসার করবে।
--মা,,যদি এক বছরেও বিয়ে না হয়,,বিয়ের কথা বলে ঘরে খুটি বানিয়ে রাখবে?
কাকাই ওকে ভর্তি করে দেও।পড়তে থাকুক।মানুষ শুনলে কি বলবে,,আমাদের বাড়ির মেয়েকে এটুকু পড়িয়েছি।সবাই তো আমাদের দিকে আংগুল তুলবে।আজকাল কেউ এতো অল্প শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করতে চায়না।তাই বলছি ভর্তি করে দেও।
রোদের কাকাই রোদকে বললো,
--তোর কি মনে হয় আমার মেয়েকে অশিক্ষিত করে বসিয়ে রাখবো?আমি ওকে রাহাতের ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেবো।কথা বলেছি।
রোদ কাকাইয়ের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
--কিন্তু কাকাই ফুল যে সাবজেক্টে পড়তে চায় সেটা রাহাতের ভার্সিটিতে নেই।
--ফুল কি সাবজেক্টে পড়তে চায়?কই আমাকে তো কিছুই বলেনি।আমি অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি বলেনি।তাই ভেবেছি সাইন্সের সাবজেক্ট কিংবা ম্যাথম্যাটিকসে ভর্তি করে ফেবো।
--উহু,,ফুল ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চায়।ওর জন্য ভালো একটা ভার্সিটি দেখেছি।আমার এক বন্ধুর ভাই ওই ভার্সিটির ফ্যাশন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক।ফ্রেন্ডকে বলে সব ব্যবস্থা করেছি।
--ওহহ,তাই নাকি?ফুল তোকে বলেছে।যাক তাহলে তোকে বলেছে।আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস।তুই ওকে নিয়ে যাস আর সবকিছু চিনিয়ে দিয়ে আসিস।কবে যাবি?
--আগামীকাল।
--আচ্ছা,যাওয়ায় সময় আমার সাথে দেখা করে যাস।
--আচ্ছা।
--এই কি এতো ফুসুরফাসুর করছিস রোদ্দুর?
রোদের মা জিজ্ঞেস করলো।
--ফুলের ভর্তির ব্যাপারে।কাকাই ওকে ভর্তি করাবে।
আমি ভর্তি করাতে আগামীকাল নিয়ে যাবো।
রোদের মা মুখে কিছু বলতে পারছেনা।মনে মনে ফুসফুস করছে আর বলছে,
আগে ভাবতাম রাহাতেরই তানহার প্রতি এতো দরদ।এখন দেখি রোদ্দুরের ও।
রোদের দাদি কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে রোদকে দেখছে।ব্যাপারটা তার ভালো ঠেকছেনা।
উফফ,আজ যে আমি কত খুশি।কিন্তু খুশিটা নাস্তার টেবিলে প্রকাশ করতে পারছিনা।আমার তো ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করছে।বাবাই কিছুক্ষণ পর পর আমাকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।উনি হয়তো আমার চোখে খুশির ঝলক দেখছেন।
মা আমার কাধে হাত রাখলো।
আমি নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে নাচতে শুরু করে দিলাম।আমার দরজায় কেউ অনবরত টুকা মেরেই যাচ্ছে কিন্তু আমার সেদিকে খেয়াল নেই।হুশ হতেই জামাকাপর ঠিক করে দরজা খোলে দেখি রোদ ভাইয়া চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে।
--ওই কখন থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছি আর তোর খোলার নাম ই নেই।
এখন আমি কি বলবো।
--একটু বিজি ছিলাম।তাই দেরি হচ্ছিলো।(বলতে তো পারি না নাচছিলাম)
উনি কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,
--ওহ,,আচ্ছা শোন তোর কাগজপত্র সব রেডি রাখিস।আগামীকাল সকাল ৯টায় রেডি থাকবি।
--আচ্ছা,বাবাই যাবে?
--না,,আমি যাবো।আর কেউ না।
আমি অবাক হয়ে বললাম,কিহ?আমি আপনার সাথে যাবো?
উনি ভ্রু কুচকে বললো,
--কেন?আমার সঙ্গে গেলে কি আমি তোকে খেয়ে ফেলবো?
--না,,(খেয়েও পারেন আপনি তো আমার কল্পনার ভ্যাম্পায়ার)
--রেডি থাকিস।বায় দ্যা ওয়ে তুই শর্ত ভংগ করেছিস।আমাকে আপনি করে বলছিস।
--এরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।
বিরবির করে বললাম।
রোদ ভাইয়া বললো,
বিরবির করছিস কেন?
--ইয়ে,,মানে অভ্যাস হয়ে গেছে।আগামীকাল থেকে বলবো।
--আজ কি করবি?
--আজ সারাদিন প্যাক্টিস করবো।
রোদ ভাইয়া হালকা হেসে চলে গেলেন।আমি ওভাবেই দাড়িয়ে আছি।আমি থমকে গেছি।উনি চলে গেছে তবুও থমকে আছি।
উনার হাসির উপর ক্রাশ খেয়েছি।এত সুন্দর করে এই হিটলার কিভাবে হাসলো।হিটলারের হাসি যে এত সুন্দর জানতাম না তো।
.
.
রাতে ডিনার শেষে রোদ রাহাতের ঘরে গিয়ে দেখে ও হেডফোন গুঁজে গান শুনছে।
--রাহাত!!
রোদকে দেখে রাহাত উঠে বসে কান থেকে হেডফোন সরিয়ে নেমে দাড়ালো।
--কিছু বলবে ভাইয়া?
রোদ ইতস্তত করে ওর বেডে বসে।রাহাত বুঝতে পারছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে বা জানতে এসেছে তার ভাই।
রাহাত রোদের পাশে বসে বললো,
--ভাইয়া কি হয়েছে?
রোদ রাহাতের দিকে একবার চেয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললো,
--তোকে যা জিজ্ঞেস করবো ঠিক ঠিক উত্তর দিবো।ডোন্ট ডেয়ার টু টেল এ লাই।
--হ্যা,বলো।(কিছুটা ঘাবড়ে)
--মা আর দাদি ফুলের বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে কেন?
রাহাত কি বলবে বুঝতে পারছেনা,
--দাদি বলছে পরের মেয়ের জন্য এতো টাকা খরচ করার কি দরকার।বিয়ে দিয়ে দেও।
--আর,,?
--আর মানে?
--মা তো আমাকে অন্য কিছু বলেছে।
রাহাতের বুক ধক করে উঠে।আমতা আমতা করে বলল, কি বলেছে মা?
রোদ রাহাতের দিকে চেয়ে বললো,
তাহলে শোন সেদিনের ঘটনা।যেদিন তোদের রেজাল্ট দিয়েছে।
আমি বাসায় ফোন করেছি।মায়ের সাথে কথা বলার সময় অনেক চেচামেচি শুনি।অনেক শব্দ আসছিলো।মাকে জিজ্ঞেস করি,
--কি হয়েছে মা,,এত চেচামেচি কিসের?কাকাইয়ের গলার স্বর মনে হচ্ছে।সাথে বাচ্চাদের।
--আর বলিস না।তোর কাকাইয়ের ঢং।আজকে ওদের রেজাল্ট দিয়েছে না।
--ওহহ,হ্যা মা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।কি খবর দুজনের?
--কি আর খবর তানহা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।আর সেটা শুনে তোর কাকাই বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে।কি আদিখ্যেতা।
--তাহলে তো খুব ভালো রেজাল্ট করেছে।রাহাতের কি খবর?
--এ মাইনাস।তোর ভাইকে তোর মতো বানাতে পারলাম না।তানহা পেয়েছে গোল্ডেন আর ও মাইনাস মান সম্মান আর থাকলো না।
--আহ,,মা।সবাই কি সব পায়।তবে তো দুনিয়ায় সবাই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতো।যেটা পেয়েছে তা নিয়ে খুশি থাকো আর ওর পড়াশোনার দিকে নজর দেও ভবিষ্যতে ভালো করবে।
ফুল তো ভালো গ্রেট পেয়েছে।ভালো ভার্সিটি চান্স পাবে।কোথায় পড়বে?
--ওর আর পড়ে কাজ নেই।
--পড়ে কাজ নেই মানে?
--ওকে বিয়ে দিয়ে দেবো।এত পড়ে কি হবে?
কথাটা শুনে রোদের বুক ধক করে উঠে।
নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
মা কি বলছো?এটুকু মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেবে মানে কি?
রোদের মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
--এ মেয়েকে রেখে নিজের বাড়ির সর্বনাশ করবো?যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় ভালো।
--কি হয়েছে মা?এভাবে বলছো কেন?
আবার কিছুক্ষণ নীরবতা তারপর বললো,
--ও মেয়েকে ছোট দেখা গেলে কি হবে?ও আর ছোট নেই।ও মেয়ে ভালো না।পাড়ার বখাটে গাজা খোর,মদ খোর ছেলেদের সাথে সম্পর্ক আছে।চরিত্র খারাপ হয়ে গেছে।কখন কার হাত ধরে পালিয়ে যায় তারপর মুখে চুনকালি লাগিয়ে আসে তখন কি করবো?
তার আগেই বিয়ে দিয়ে বিদায় করাই ভালো।
--পাড়ার,,,,ছেলেদের সাথে,,,,?কি বলছো মা?
--আমি যা বলছি ঠিক বলছি।আহ্লাদ পেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।ক'জনের সাথে সম্পর্ক করেছে কে জানে।বাদ দে,,যাইহোক বাবা তোকে যে এসব বলেছি কাউকে বলিস না।তাহলে কিন্তু সংসারে অশান্তি লেগে যাবে।বুঝেছিস।
--হুম বুঝেছি।আমি রাখছি।
কিছু বলতে না দিয়েই রোদ ফোন রেখে দেয়।ওর পুরো দুনিয়া এলোমেলো হয়ে গেছে।ফুল তুই,,আর বলতে পারলোনা।গলা ধরে এসেছে।
চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
~বর্তমান~
রোদ জিজ্ঞেস করলো, মা এসব বলেছে রাহাত।এ জন্যই নাকি ফুলকে বিয়ে,,,ফুল কি সত্যিই?
রোদের কাছে এসব শুনে রাহাতের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।ওর নিজের মা এতটা নিচ।কিছুটা রাগ নিয়ে বললো,
--ভাইয়া,,মা যা বলছে মিথ্যা বলেছে।তানহার কারো সাথে সম্পর্ক তো দূরে থাক ও কোনো ছেলের সাথে আজ পর্যন্ত ঘেষেওনি।আমিই ওর একমাত্র ছেলে বন্ধু।স্কুল,কলেজ সব জায়গায় আমরা এক সাথে গিয়েছি,একসাথে থেকেছি,একসাথে এসেছি।ও একা কোনোদিন বাড়ি থেকে বের হয়নি।আমি ওর সব কিছু জানি,ও আমার কাছে খোলা বইয়ের মতো।সারা কলেজ জানতো আমিই ওর বয়ফ্রেন্ড।তাই কেউ ঘেষেনি।সেদিন তো বলেছি।ওর সেফটির জন্য মিথ্যা বলেছে কলেজে সবাইকে।আমি সব সময় ওর দিকে খেয়াল রেখেছি।
মা এয় নোংরা কথা কিভাবে বললো ওর নামে?ছিঃ আর তুমিও বিশ্বাস করে নিলে?
রোদ রাহাতের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।ওর চোখের কোনে পানি জমেছে।
--মা আমাকে এত বড় মিথ্যা বললো?এমন জঘন্য কথা কিভাবে বললো?কিভাবে একটা মেয়ের উপর এমন একটা অপবাদ দিতে পারলো?এতটাই অপছন্দ একটা মানুষ কি করে করতে পারে?কি করে?এতো নোংরা মন মানসিকতা মায়ের ফুলের প্রতি কেন?
রাহাত কেন মা এসব বলেছে?
রাহাত মাথা নিচু করে রেখেছে।রোদের রাহাতের দিকে চেয়ে সন্দেহ হলো।ওর চোখ মুখ কিছু বলতে চাইছে কিন্তু ও আড়াল করছে।রোদ আজ জেনেই ছাড়বে সবকিছু।
--রাহাত??আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি?আর আমি জানি এর উত্তর তোর কাছে আছে।
রাহাত চুপ করে আছে।রোদকে এসব বলা ঠিক হবে কিনা ভাবছে।
--রাহাত?কথা বল।নয়তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা।
রাহাত জানে রোদ আজ জেনেই ছাড়বে।না জানা পর্যন্ত ওকে ছাড়বেনা।আর ভাইয়ের রাগ সম্পর্কে ওর ভালো ধারণা আছে।রাহাত ইতস্তত করে বললো,
--ভাইয়া আমি জানি না মা কেন এসব করেছে।তবে অনুমান করতে পেরেছি।জানি না অনুমান কতটা সঠিক।তবে আমার অনুমান শুনে তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা প্লিজ।
আমি তানহার প্রতি অনেক কেয়ারফুল,ওকে সাপোর্ট করি তাই মায়ের ধারণা তানহাকে আমি বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবি।তাই ওকে আমার জীবন থেকে সরানোর জন্য এই ব্যবস্থা।কিন্তু ভাইয়া বিশ্বাস করো ওকে আমি বোনের চোখে দেখি।আর তাছাড়া,,
--তাছাড়া কি?
--আমি জানি তুমি তানহাকে ভালোবাসো।তাই আমি ওকে শুধু বন্ধু আর বোন হিসেবে নয় বড় ভাইয়ের আমানত হিসেবেও আগলে রেখেছি।
রোদ রাহাতের কথা শুনে চমকে যায়।রাহাত কি করে জানলো আমি তো রাহাতকে এসব বলিনি,রাহাতকে কেন আমি তো কাউকে বলিনি ফুলের কথা।রোদ রাহাতের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে চেয়ে আস্তে করে বললো,
--তেমন কিছু নয়।
রাহাত রোদের কথা শুনে জোরে হেসে দিলো।
--ভাইয়া,,আমি সব জানি।আমাকে মিথ্যে বলে লাভ নেই।মা ভাবছে তার ছোট ছেলে যখন জানবে তার বড় ছেলে ফুলের জন্য দিওয়ানা তখন কি হবে একমাত্র আল্লাহ ই জানে।
রোদ রাহাতের কথা শুনে হুট করেই দাঁড়িয়ে গিয়ে কিছুটা চিতকার করে বললো,
--আমি মায়ের ভয়ে পিছিয়ে যাবো,নেভার। ফুলের নামে যে অপবাদ দিয়েছে তাতে মায়ের সাথে আমার কথা বলতে রুচিতে বাধছে।রোদ পুরো দুনিয়া ছেড়ে দেবে তবু ফুলকে ছাড়বেনা।
বলেই হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রাহাত হাসছে আর বলছে,
--উহু,,ভাইয়া তাহলে স্বীকার করেই নিলে।তানহার বাচ্চা আমার কথা তো বিশ্বাস করলিনা।বলেছিলাম না তোর জন্য একটা রাজপুত্র আসছে।এসে পড়েছে।
রোদ ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো।চোখ মুখ শক্ত করে ঘর জোরে পাইচারি করছে।হাত দিয়ে কপাল ঘষছে।কিছুতেই রাগ কমছেনা।দুহাতে মুখ চেপে ধরে ঘষছে।ওর ইচ্ছে করছে সব শেষ করে দিতে।পুরো দুনিয়া জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কিছতেই শান্তি লাগছেনা।
--হাও,,,হাও কুড ইউ ডো দিস মা,,আর আমি?আমি কি করলাম?কি করে এমন একটা কথা বিশ্বাস করলাম?আমার এখন নিজেকে ঘৃণা হচ্ছে।ছিঃ রোদ্দুর।হুয়াট হ্যাভ ইউ ডান?
রোদ রাগে দেয়ালে সর্বশক্তি দিয়ে ঘুষি মারলো।তারপর ব্যথায় কুকড়ে উঠে মুখ চেপে ধরলো।
নিজেকে শান্ত করে বললো,
--মা,আমি এখন তোমাকে এসব নিয়ে একটা কথাও বলবোনা।এতো ঘৃণা করো না ফুলকে।এই ফুলই তোমার ছেলের বউ হবে দেখে নিও।আর আমিও প্রায়শ্চিত্ত করবো।
রোদ নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হচ্ছে।রোদ সাদা টিশার্ট,কালো কোর্ট,কালো জিন্স,কালো সু পড়ে রেডি হয়ে নিয়েছে।কালো ওয়াচ,টিশার্টে সানগ্লাস গুজা,সিল্কি চুলগুলো কপালের কাছে কিছুটা পড়ে আছে।
রোদ রুম থেকে বের হয়েই কেমন জুই ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে।যা ওকে পাগল করে দিচ্ছে।রোদ এই ঘ্রাণের উৎস খোজতেই সামনে ফুলকে দেখতে পায়।ফুলকে দেখে ওর দৃষ্টি স্থির হয়ে গেছে।ফুলের দিক থেকে চোখ ফিরাতে পারছেনা।এ যেন নতুন ফুলকে দেখছে।
ফুল কালো ড্রেস পড়েছে,সিল্কি চুলগুলো চিকন রাবার ব্যান্ড দিয়ে উচু করে ঝুটি করেছে।কানে ব্লাক স্টোনের এয়ারিং,ঠোঁটে লিপস কালার হালকা লিপব্রুজ।কাধে লেডিস ব্যাগ এক কাধে ঝুলছে,বা হাতে ফোন।পায়ে ব্লাক সু।শরীরে জুই ফুলের পারফিউম।
রোদ যেন ওর সামনে তরতাজা ফোটা একটা কালো গোলাপ দেখছে।ফুলকে বরাবরই কালো রঙের ড্রেসে সুন্দর লাগে।রোদের কাছেও অপূর্ব লাগছে।কিন্তু ওকে এ ড্রেসে ভার্সিটিতে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না।
--আমি রেডি।
ফুলের কথায় রোদের ঘোর ভাংলো।
--এই তুই এটা কি পড়েছিস?কাকের মতো লাগছে।আমরা ভার্সিটি যাচ্ছি কারো শোক পালন করতে নয়।
--কি বলছো ভালো লাগছে না?কিন্তু সবাই তো বলে আমাকে কালো রঙে অনেক সুন্দর লাগে।
--ভুল বলেছে।তুই তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আয়।
আমি একটু চিন্তিত হয়ে বললাম,
--কিন্তু চেঞ্জ করতে গেলে অনেক সময় লাগবে।চুল নষ্ট হবে,চুল আবার বাধতে হবে।এয়ারিং চেঞ্জ করতে হবে,পারফিউম।আমি আর রেডি হতে পারবোনা।
--ঠিক আছে।আজকের মতো।বাট নেক্সট টাইম কালো রঙের কিছু পড়ে বের হবিনা।
--আচ্ছা,,
গাড়িতে আমি আর রোদ ভাইয়া পাশাপাশি বসে আছি।উনি চুপচাপ ড্রাইভ করছেন।আমি অনেক এক্সাইটেড নিউ ভার্সিটি কখন দেখবো তা নিয়ে।আমার ভিতরের উচ্ছ্বাস বাইরে প্রকাশ পাচ্ছে।আমি রোদ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভ্যাম্পায়ারকে আজ অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।যদিও সবসময়ই হ্যান্ডসাম লাগে।তবে আজ একটু বেশিই লাগছে।তবে মুখ কালো করে ড্রাইভ করছে।আর কোনো কথাও বলছেনা।আমার কেমন খটকা লাগছে।উনার কি মন খারাপ?
--রোদ ভাইয়া,তোমার কি মন খারাপ?
রোদের গতকাল রাহাতের সাথে কথা বলার পর থেকেই মন খারাপ।কেমন অপরাধবোধে ভুগছে।এমন একটা ফুলকে ও ভুল বুঝেছে।তবে ফুলের মুখে রোদ নামটা শুনে এতকিছুর পরেও ভালো লাগছে। মেয়েটা ওর কথা রেখেছে আজ তুমি করেও বলেছে।
ফুল তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।তোর মনে আমার জন্য নেগেটিভ ভিউ তৈরি হয়েছে।সব শোধরে নিবো।নিজের পজিটিভ পজিশন তৈরি করেই তোকে মনের কথা জানাবো।
রোদ ভাইয়া হালকা হেসে আমার দিকে চেয়ে বললো, নাহ।
কিন্তু আমার সন্দেহ কাটছে না।মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে।আমি উনার দিকে ভালোভাবে তাকালাম।মুখের দিকটা মলিন হয়ে আছে।উনার হাতের দিকে চোখ গেলো।হাতটা কেমন লাল হয়ে ফুলে আছে।
আমি বিচলিত হয়ে বললাম,
--রোদ ভাইয়া তোমার হাতে কি হয়েছে?এমন লাল হয়ে ফুলে আছে কেন?
অজান্তেই আমার হাত তার হাতের উপর চলে গেলো।ভাইয়ার হাতের উপর হাত দিতেই উনি ব্যথায় আহ,,করে উঠলেন।আমি হাত সরিয়ে নিলাম।
--কিছুনা,,ওই একটু লেগেছে।
--এমন করে কিভাবে লাগলো?
ভাইয়া আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মৃদু হেসে বললো,
--তুই এতো ভাবছিস কেন?এমনি লেগেছে।
আমি চোখ ছোট ছোট করে নাকি ফুলিয়ে বললাম,
--সত্যি করে বলোতো কি হয়েছে?তোমার মুখটা শুকনো লাগছে?হাসছো ও কেমন মলিনভাবে।তোমার হাসি তো এমন নয়।
--আমার হাসি কেমন?
এখন আমি কি বলবো?উনার হাসি কেমন?হাসি তো হাসিই,,কেমন আবার হবে?
তবুও বললাম,
--কেমন মুগ্ধতা ছড়ানো।খুব সুন্দর।এখন বলো কি হয়েছে?
--নিজেকে শাস্তি দিয়েছি।
--শাস্তি!!কেন?
--একজনকে বিনা অপরাধে অনেক কষ্ট দিয়েছি।তাই নিজেকে শাস্তি দিয়েছি।
--তাতে কি হয়েছে?অপরাধবোধ কমেছে?তার চেয়ে যার সাথে খারাপ বিহেভ করেছো তাকে সরি বলো।অপরাধ বোধ কমে যাবে।শান্তি পাবেন।
--সে কি আমাকে ক্ষমা করবে?
--কেন করবে না অবশ্যই করবে।ভালো মনে ক্ষমা চাইলে কেউ আবার ক্ষমা না করে?করবে।
রোদ ভাইয়া গাড়ি থামিয়ে দিলো।তারপর আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে বললো,
--ফুল তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি।অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি তোর সাথে প্লিজ ক্ষমা করে দে।
আমি অবাক হয়ে রোদ ভাইয়াকে দেখছি।আর দেখে অবাক হচ্ছি।আমাকে সরি বলছে।
--মানে?আমাকে বলছো?
--হ্যা,,আমি তোকেই বলছি।প্লিজ ক্ষমা করে দে।এতদিন অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে।অনেক কষ্ট পেয়েছিস তাই না?
--উহু,,আমার এসব মনে থাকেনা।এসবে আমি অভ্যস্ত।
--তুই কি আমাকে ক্ষমা করলিনা?
আমি একটু হেসে বললাম,
--আমি তোমার উপর রাগ করিনি।আর তাছাড়া তোমার জন্য আমার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।সব ভুলে যাও।তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই।
রোদ ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,এবার আসলেই শান্তি লাগছে।এবার বল এখন আমার হাসি কেমন লাগছে?
--পারফেক্ট।
বলেই আমি আলতো হাসলাম।আসলেই হাসিটা এখন পারফেক্ট লাগছে।
ভাইয়া গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
ভার্সিটিটা অনেক বড় আর সুন্দর।আমার খুব ভালো লাগছে।ভাইয়ার সাথে সাথে হাটছি।একজন ছেলে এলো ভাইয়ার কাছে তিনিই সম্ভবত সেই বন্ধু।আমাদের একটা রুমে নিয়ে গেলো ভর্তি করার জন্য।ভাইয়া নিজেই সব ফর্মালিটি পূরণ করছে আমি শুধু তার পাশে বসে আছি।
ভর্তি কমপ্লিট সামনের সপ্তাহ থেকে ক্লাস।উফফ কি যে মজা লাগছে।
--ফুল কলি চল তোর ক্লাসরুম দেখে আসি।
পাশ থেকে ভাইয়ার বন্ধু সাব্বির বললো,
--ফুল কলি!!ফুল কলি আবার কে?ফরমে তো অন্য নাম দেখলাম।
আমি উনার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলাম।ভাইয়াও বোকা বনে গেলো।
--আরে এমনি মজা করে ফুল কলি ডাকি।তুই আবার এই নামে ডাকিস না।এটা আমার জন্য স্পেশাল।
বলে কি আমার এই নামও নাকি স্পেশাল ভাইয়ার কাছে।অদ্ভুৎ মানুষ।
ক্লাসরুমটা অনেক বড় আর সুন্দর।পরিষ্কার পরিছন্ন হয়তো ক্লাস শুরু হয়নি তাই।ভাইয়া একে একে লাইব্রেরি,গার্লস কমন রুম,ক্যান্টিন,আশেপাশের প্রয়োজনীয় সবকিছু দেখিয়ে দিলেন।যাতে পরবর্তীতে এসে আমার কিছু খোজতে না হয় কিংবা সমস্যা না হয়।
--এই ক্ষুধা পেয়েছে তোর? কিছু খাবি?
--না,,
তবুও তিনি ফুচকার সামনে গিয়ে ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করলো,
--ওই সাব্বির ফুচকা খাবি?
--মেয়েদের খাবার আমি খাইনা।তুই খা।
রোদ ভাইয়া বললেন,
--খাবার তো খাবার ই ছেলেদের আর মেয়েদের কি?তুই না খেলে নাই।গিয়ে মুড়ি খা।
বলেই ফুচকাওয়ালাকে বললো,
--মামা,দুই প্লেট ফুচকা দিন।ঝাল করে।
ঝাল আমি তো আবার ঝাল খেতে পারিনা।কিন্তু কিছু বলতেও পারছিনা।যদি বলি আমি ঝাল খাইনা।তাহলে যদি রোদ ভাইয়া বলে ঝালও খেতে পারিস না?
ভাইয়া একটা চেয়ার টেনে টিস্যু দিয়ে মুছে বললো,
--ফুল নে বস।
আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আমাকে ফুচকার প্লেট দিলো।তারপর নিজেরটা নিলো।তার পাশে
সাব্বির ভাইয়া বসে বসে ফোন টিপছে।
ভাইয়া খেয়েই চলেছে।একটা ছেলে যে এভাবে ফুচকা খেতে পারে জানা ছিলোনা।আমি একটা মুখে দিয়েছি তো তার ৪টা শেষ।আমি অবাক হয়ে তাকে দেখছি।
--ওই খাবি না আমাকে দেখবি?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
--আমি আপনাকে দেখছি না আপনার ফুচকা খাওয়া দেখছি।কিভাবে খাচ্ছেন?
--তোর মতো ঢং করে খাচ্ছিনা।আমার ফুচকা অনেক পছন্দ।আর তাছাড়া কতদিন পর খাচ্ছি।
বলেই আরেকটা মুখে পুরলো।আমি আড়চোখে চেয়ে দেখি সাব্বির ভাইয়া হাসছে।
আমি আবার আরেকটা মুখে দিলাম।তাতেই আমার দম বন্ধ হয়ে গেলো।ঝালে কান ধরে গেছে।
আমি ধাপ করে প্লেট রেখে বললাম "ঝাল"।ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে বললো,
--কি হয়েছে?
--ঝাল,,পানি।আমার চোখে পানি চলে এসেছে কান জ্বলছে।
ভাইয়া নিজের প্লেট রেখে দৌড়ে পানি নিয়ে এলো।আমি হা করে মুখের ভাপ বের করছি আর হাত দিয়ে মুখের সামনে বাতাস করছি।
ভাইয়া হন্তদন্ত হয়ে আমার জন্য পানি নিয়ে এসে বললো,
--নে পানি খা।
আমি বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলাম।তবুও যেন কমছে না।
ভাইয়া তার বন্ধুকে বললো,সাব্বির একটা আইসক্রিম নিয়ে আয় প্লিজ।তাড়াতাড়ি।
সাব্বির ভাইয়া আইসক্রিম আনতে চলে গেলো।
রোদ ভাইয়া বললো,
--ফুল অনেক ঝাল লাগছে?আরেকটু পানি খা।সাব্বির এখনি আইসক্রিম নিয়ে আসছে।একটু ওয়েট কর।
আমি ভাইয়ার দিকে চেয়ে অবাক হয়ে গেলাম।তাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার না তারই ঝাল লেগেছে।
সাব্বির ভাইয়া আইসক্রিম আনতেই ভাইয়া তাড়াতাড়ি করে প্যাকেট ছিড়ে আমার মুখের সামনে আইসক্রিম ধরলো।
আমার জান ফিরে এলো।আমি আইসক্রিম খাচ্ছি ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে আছে।আমাকে শান্ত ভাবে খেতে দেখে বুঝতে পারলো আমি ঠিক আছি।আমি আড়চোখে সাজ্জাত ভাইয়ের দিকে চেয়ে দেখি সে মিটমিট করে হাসছে।আশ্চর্য এভাবে হাসার কি হলো।
আমার প্রতি রোদ ভাইয়ার কেয়ারিং দেখে অনেক ভালো লাগছে।সেই ছোট বেলায় যেমন কেয়ার করতো ঠিক তেমন।
কলেজের এক দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।আমি বান্ধবীদের সঙ্গে ফুচকা খাচ্ছি।রাহাত আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।আর বিরক্ত হচ্ছিলো।আমি ওকে জোর করে দাড় করিয়ে রেখেছিলাম।হটাৎ এমন ঝাল লাগে।ঝাল ঝাল বলছিলাম আর ফাজিল রাহাত আমার মুখে আরেকটা ফুচকা ঢুকিয়ে দেয়।তারপর বলে আরেকটু ঝাল খা।
সে কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।সেটা রোদ ভাইয়ার চোখ এড়ায়নি।
--ওই হাসছিস কেন?
আমি বললাম,কলেজের কথা মনে পড়ে গেলো।আরেকবার এমন হয়েছিলো রাহাত আমার মুখে আরেকটা ফুচকা ঢুকিয়ে দিয়ে বলেছিলো আরো খা ঝাল।
--ভালোই করেছে।তোর আর ফুচকা খেতে হবেনা,রাখ।আচ্ছা,তুই ঝাল খেতে পারিস না?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।
ভাইয়া বললো,
--হায়রে,,,গাধী।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ফ্রেন্ডের সামনে আমাকে অপমান করছে।উনি আমার ভ্রু কুচকানোর কারণ বুঝে কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো,
--তোর সামনেই তো অর্ডার দিলাম।কিছু বলিস নি কেন?ইচ্ছা করছে কানের নিচে দেই একটা।যেটা পছন্দ নয় সেটা বলতে হয়।চুপ করে থাকতে হয়না।
ভাইয়াও আর খেলোনা।
--তুমি আর খাবে না?
--না,,ইচ্ছে নেই।
চল উঠা যাক।
আমরা সাব্বির ভাইয়াকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠলাম।
ভাইয়া ড্রাইভ করছে তবে বাড়ির দিকে নয়।
--আমরা কোথায় যাচ্ছ?
--আমার একটু কাজ আছে।
গাড়ি শপিংমলের সামনে থামলো।আমরা ভিতরে গেলাম।গার্লস স্টলে।ভাইয়া আমাকে কতগুলো ড্রেস দেখিয়ে বললো,
--দেখ কোনটা কোনটা পছন্দ হয়।
--মানে?
--মানে তোর জন্য শপিং করতে এসেছি।
--আমার শপিং করার প্রয়োজন নেই।
--আরে ওয়েট ওয়েট।
তারপর পকেট থেকে একটা ক্রেডিট কার্ড বের করে আমাকে দেখিয়ে বললো,
--এটার কাকাই দিয়েছে আর বলেছে আসার সময় যেন তোকে শপিংয়ে নিয়ে যাই।তাই এসেছি।ভাবিস না আমার টাকা খরচ করছি।তোর বাবাইয়ের টাকাই।
আমি এখন বুঝতে পারলাম।ভাইয়া ভেবেছে তার দেওয়া কিছু নেবোনা তাই ক্রেডিট কার্ড দেখালো।
আমি আমার পছন্দ মতো কয়েকটা ড্রেস নিয়েছি।হটাৎ চোখ পড়লো কালো রঙের একটা ড্রেসের উপর।আমি ড্রেসটা হাত দিয়ে ধরে দেখছি।
ভাইয়া পিছনে থেকে বললো,
--নিয়ে নে,,ড্রেসটা অনেক সুন্দর।
আমি চট করে বললাম,
--না আমি নেবোনা।
--কেন নিবি না?দেখে তো মনে হচ্ছে ড্রেসটা তোর পছন্দ হয়েছে।
আমি অভিমানী মুখে বললাম,
--তুমি আমাকে সকালে কি বলেছো ভুলে গেলে?কালো রঙে আমাকে কাকের মতো লাগে।তাই আমি নিবোনা।
ভাইয়া হটাৎ থমথমে মুখে বললেন, হ্যা মানে।ঠিক আছে নিয়ে নে।
--না আমি নিবো না।
ভাইয়া আমাকে লোভ দেখাচ্ছে নেওয়ার জন্য।
--দেখ,,ড্রেসটা কত সুন্দর।কি সুন্দর ডিজাইন এমন ড্রেস আর পাবিনা।নিয়ে নে নয়তো পরে পস্তাবি।দেখবি পরে সারারাত ঘুম হবেনা।
--আমি নিবোনা।তোমার ভালো লাগলে তুমি নেও।
--আমি নিয়ে কি করবো?আমি পড়বো?আমি কি মেয়ে নাকি?
আমি ঠেস মেরে বললাম,
--তাতে কি হয়েছে?কয়দিন পর বিয়ে করবে তখন বউকে পড়াবে আর নয়তো তোমার একতরফাকে গিফট করবে।
রোদ ভাইয়া আমার কথা শুনে হাসছে।তারপর বললো,
--ভালো বলেছিস।আমিই নিয়ে যাই।
উনি নিজেই ওই ড্রেসের বিল মিটিয়ে নিয়ে নিলেন।দুঃখে আমার কান্না চলে আসছে।আমার পছন্দের ড্রেস সে তার বউয়ের জন্য নিয়ে গেল।
সারা রাস্তা গাল ফুলিয়ে বসে ছিলাম।একটা কথাও বলিনি।কেন বলবো?আমি নেইনি,,সে কেন নিবে?
রোদ ফুলকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
--হায়রে গাধী...তুই কবে বুঝবি তুই আমার একতরফা ভালোবাসা।
আর ড্রেসটা তো তোর জন্যই নিয়েছি।এত্ত অভিমানী তুই।সেই ছোট্ট অভিমানীটাই রয়ে গেলি।
তোকে কালো পড়লে পরী লাগে।কেউ যদি আমার অগোচরে আমার পরীকে নিয়ে যায়।একবার আমায় বিয়ে কর দিনরাত তোকে কালো পড়াবো।কালো পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে যাবি।দেখিস।
আমি নিজের রুমে যাচ্ছি শপিং ব্যাগ নিয়ে।রোদ ভাইয়ার সাথে আর কথা বলিনি।ভাইয়া তখনই ডাক দিলো।
--ফুল!!
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।আমার সামনে এসে হালকা হেসে শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললো,
--এইটা আমি তোর জন্যই এনেছি।ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিস সে উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য গিফট।
প্লিজ না করিস না।প্লিজ।
প্লিজ কথাটা একটু করুন ভাবেই বললো।আমি কিছুতেই নিতাম না কিন্তু শেষে করুন ভাবে প্লিজ বলে আমার মন গলিয়ে দিয়েছে।তাই না করতে পারলাম না।
ব্যাগ নিয়ে মুচকি হেসে বললাম,ধন্যবাদ।
তারপর ভাইয়াকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললাম, আপনার জন্য।
উনি হাসি মুখে নিয়ে ব্যাগটা খোলে কালো রঙের পাঞ্জাবি দেখে আবারো মুচকি হাসি দিলো।
তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
--হটাৎ??
কেন দিয়েছি নিজেও জানিনা।তবে দেখেই পছন্দ হয়ে গেলো।কিনতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কিন্তু কাকে দিবো।তখনই রোদ ভাইয়ার কথা মাথায় আসে।আমি ভাইয়ার দিকে একবার চেয়ে কল্পনা করে নিয়েছিলাম তাকে পড়লে কেমন লাগবে।কল্পনা বলছিলো এই পাঞ্জাবিতে তাকে দারুণ লাগবে।তাই নিয়ে নিলাম।
--এমনি,,আপনি এতো কিছু করলেন আমার জন্য ?
--আচ্ছা, ঋণ শোধ করছিস?
--ঋণ??কি যে বলো ভাইয়া তুমি এভাবে কারো ঋণ শোধ করা যায়?আমি তো এমনি দিলাম।জাষ্ট এমনি।
ভাইয়া আর কিছু বলেনি।কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো পাঞ্জাবি দেওয়ায় অনেক খুশি হয়েছে।
আমি রুমে গিয়ে ব্যাগগুলো রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।সারাদিনের কথা ভাবছি।রোদ ভাইয়ার সাথে কাটানো সময় গুলোর কথা ভাবছি।সময়গুলো অনেক ভালো ছিলো,অনেক সুন্দর।আমি অন্যরকম রোদ ভাইয়াকে আবিষ্কার করছি।একদম অন্যরকম।
রোদ রুমে গিয়ে চেঞ্জ না করেই ফুলের দেওয়া পাঞ্জাবীটা আয়নার সামনে নিয়ে নিজের শরীরে জড়িয়ে বারবার দেখছে।আর মুচকি মুচকি হাসছে।ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে না এটা সামান্য একটা পাঞ্জাবী।মনে হচ্ছে এটা কোটি টাকার সম্পদের দলিল।
--এটা আমার কাছে শুধু একটা পাঞ্জাবি নয়,,আমার ভালোবাসার মানুষের দেওয়া প্রথম উপহার।এই পাঞ্জাবীটা আমার কাছে খুব স্পেশাল।খুব।
রোদ পাঞ্জাবীটা যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখলো।আলমারি বন্ধ করতেই দরজায় নক পড়লো।
--কে?
--আমি!!
আমি শব্দটা শুনতেই রোদের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।কারণ আমিটা আর কেউ নয় রোদের মা।
রোদ মুখ ভার করে দরজা খোলে বললো,
--কি হয়েছে?
রোদের মা বললো,
--তোর মুখ এতো শুখনো লাগছে কেন?কি হয়েছে?
বলেই রোদের দিকে হাত বাড়ায়।রোদ সরে গিয়ে বলে,
--কিছু হয়নি।কেন ডেকেছো তাই বলো।
রোদের মা ছেলের এমন আচরণে অবাক হয়।তবে সেটা বুঝতে না দিয়ে বললো,
--ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।
--আসছি।
বলেই রোদ চেঞ্জ করতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রোদের মা ছেলের আচরণে কিছুটা কষ্ট পায়।মুখ ভার করে নিচে চলে যায়।পরক্ষণেই ভাবে জার্নি করে এসেছে হয়তো মেজাজ খারাপ।তাই এমন উসখুস করছিলো।
রোদ কল ছেড়ে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে বলছে,
--মা তোমাকে দেখলেই তোমার বলা নোংরা কথাগুলো মনে পরে।কিন্তু তোমাকে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছিনা।
কেননা এসব বললে আমার ফুলের উপর এর প্রভাব পড়বে যেটা আমি মেনে নিতে পারবোনা।ফুল নতুন জীবনে পা দিয়েছে।ও অনেক খুশি।আমি কোনো কিছুর বিনিময়ে ওর খুশি কাউকে কারতে দেবোনা।
ফুলের মুখের এক চিলতে রোদ্দুর মাখা হাসির জন্য আমি সব করতে পারি।ফুলকে ফুলের মতো সুন্দর একটা জীবন আমি দেবো ইনশাআল্লাহ।
রোদ ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে ফুল,রাহাত লাঞ্চ করছে আর কি যেনো বলছে।নিশ্চয়ই নতুন ভার্সিটি নিয়ে কিছু বলছে।
আর দাদি খাচ্ছে আর ওদের উপর বিরক্ত হচ্ছে।যেহেতু দুপুর বেলা ফুলের বাবাই কাকাই তাদের কাজের জায়গায়,তুহিন স্কুলে।
রোদ চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
রোদের মা রোদকে খাবার বেড়ে দিলো।এবাড়িতে রান্না আর খাবার সার্ভ করার কাজটা বাড়ির বউরাই করে।দু'জন পার্মানেন্ট সার্ভেন্ট আছে যারা বাড়ির কাজে,রান্নার কাজে সাহায্য করে আর বাকি দুজন সার্ভেন্ট একবেলা এসে ধোঁয়া মুছার কাজ করে চলে যায়।
রোদ চুপচাপ খেয়ে চলেছে।মুড তখনো অফ।
রোদের মায়ের রাহাত আর ফুলের এত কথা সহ্য হচ্ছে না।তাই তিনি ধমকে উঠেন,
--খাবার সময় এতো কিসের কথা তোদের?সব সময় এতো কথা বলিস তবুও তোদের কথা কি ফুরোয় না?
আর তানহা দুদিন পর শ্বশুর বাড়ি যাবি তখন কি খেতে বসে গল্প জোরে দিবি?এ বাড়ির সম্মান তো রাখবি না দেখছি।পরে বলবে আমরা কি শিখিয়েছি।
এবার ফুলের মা ফুলকে ধমক দিলো।
--ফুল চুপ করে খেয়ে উঠে যা।আর একটা কথা বলতে যেন না শুনি।
দুতরফা ধমক খেয়ে বেচারি ফুল মুখ ভার করে ফেলে।
রাহাত কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেনা।কি বলবে?।রোদ একবার ফুলের দিকে তাকালো।ওর কালো মুখ সহ্য হলোনা।নতুন ভার্সিটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত আর রাহাত ওর একমাত্র বন্ধু তাই ওকে না বলা পর্যন্ত শান্তি হছেনা।তাই নাহয় একটু ভুল করেই ফেলেছে তাতে এভাবে বলতে হবে?একটু ভালো ভাবে বলা যায়না।
রোদ শব্দ করে উঠে খাবার রেখে চলে যায়।সবাই হা করে ওর দিকে চেয়ে আছে।কেন এমন করলো কেউ বুঝতে পারছেনা।তবে রাহাত ঠিকি বুঝতে পারছে।
রোদের মা পিছনে থেকে অনেক বার ডেকেছে কিন্তু রোদ থামে নি।
রোদের দাদি বললো,
--কি হলো ছেলেটার?এভাবে চলে গেলো কেন?
রোদের মা বললো,
--জানি না মা সকাল থেকেই চুপচাপ আর বাসায় ফিরার পর থেকেই কেমন যেন করছে।রাগে রাগে কথা বলছে আর এখন খাবার রেখে চলে গেলো।
কি ব্যাপার?সকালে তো মন খারাপের যে রিজন ছিলো সেটা আমি জানি আর ভাইয়ার মুড পরে অনেক ভালো হয়ে গিয়েছিলো।আসার পরও তো ভালো ছিলো তাহলে হটাৎ কি হলো?
আমি চুপিচুপি রাহাতকে বললাম,
--কি হলো ব্যাপারটা?
রাহাত জেনেও না জানার ভান করে বললো,
--আমি জানি না।গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
--না বাবা,,আমার এখন বাঘের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে নেই।
.
.
.
ডিনার শেষে রাতের বেলায় শুয়ে শুয়ে গান শুনছি তখনই দরজায় নক পড়লো।কানে হেডফোন থাকায় শুনতে পাইনি।অনেক বার নক পড়ায় শুনতে পেয়ে দরজা খোলে দেখি রোদ ভাইয়া মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
দরজা খোলতেই তিনি রুমে ঢুকে বেডে গিয়ে বসে পড়ল।আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা।ওভারে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছি।রোদ ভাইয়া বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।তারপর বললো,
--ফুল আমার মনটা অনেক খারাপ একটা গান শুনাবি?
ভাইয়ার কথায় কেমন একটা আকুলতা খোঁজে পেলাম।বুঝাই যাচ্ছে মন প্রচন্ড খারাপ।আমি দরজা লক করে ভাইয়ার পাশে এসে দাড়ালাম।আমার অস্বস্তির চেয়ে ভয় বেশি লাগছে এতো রাতে কেউ যদি দেখে তবে উল্টো পাল্টা কিছু বুঝবে।
আমার ভাইয়ার পাশে বসতেই কেমন অস্বস্তি লাগছে।তাই বললাম,
--ভাইয়া বারান্দায় চলো।
ভাইয়া উঠে বারান্দায় দোলনায় বসে চোখ বন্ধ করে রাখলো।আমি পিছনে পিছনে গেলাম।রেলিং ধরে চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম।অনেকক্ষণ যাওয়ার পর ভাইয়া চোখ বন্ধ করা অবস্থায়ই বললেন,
--তুই কি গাইবি?না আমি চলে যাবো?
আমি কি করে বলি যে আমার মাথায় আপাতত কোনো গান আসছেনা।তারপর হটাৎ মনে হলো কিছুক্ষণ আগেই তো গান শুনছিলাম যেটা শুনেছিলাম সেটাই গাই একটু।আমি রেলিং ধরে আকাশের দিকে মুখ করে গান ধরলাম।
তোমার ইচ্ছেগুলো
ওওও ইচ্ছেগুলো
তোমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হলে
আমায় দিতে পারো
আমার ভালোলাগা ভালোবাসা
তোমায় দিবো আরো।
~~~~~~~~
তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবোনা আর কারো
তোমার স্বপ্নগুলো আমার
চোখে হচ্ছে জড়োসড়ো।
গান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রোদ ভাইয়া উঠে দাড়ালো।কোনো দিকে না চেয়ে গুড নাইট বলেই হাটা ধরলো।আমি তার আচরণে অবাক হলাম।কিছু না বলেই চলে গেলো। মুড ভালো হয়েছে কিনা,,কেন মুড খারাপ কিছুই জানতে পারলাম না।
ভাইয়া যাওয়ার পর ই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।
রোদ বিছানায় শুয়ে আছে।কেমন অস্থির লাগছে।
--ফুল কলি ভাগ্যিস চলে এসেছিলাম।আর কিছুক্ষণ থাকলে আমি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারতাম না।কি করতাম নিজেও জানি না।হয়তো সব বলে ফেলতাম।তোর হাত ছুতে চাইতাম।কিন্তু সে সময় এখনো আসেনি।
সারারাত রোদের ঘুম হয়নি।কেমন অস্থিরতায় ভুগছে।ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়েছে ৮টা বাজতেই ঘুম ভেঙে গেলো।
“কাল রাত সারা রাত কুয়াশার মেঘ
কাল রাত সারা রাত তুমি ছিলে শুধু
হৃদয়ের উষ্ণতা বেদনার নীল,
কাল রাত সারা রাত নিঃসঙ্গতা... ”
___ রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
পরেরদিন বিকালে ছাদে জামাকাপড় আনতে গিয়েছি।ছাদে রাহাত আর রোদ বসে বসে কথা বলছে।ছাদে অনেক বাতাস বইছে।আমার চুল বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তাই খুপা করলাম।
--ওই শাকচুন্নী,পেত্নী এদিকে আয়?
রাহাত আমাকে ডাকলো।এই ছেলে আমাকে কখনোই ভালো নামে ডাকতে পারেনা।
আমি তাতে জামাকাপড় রেখে ওর কাছে গিয়ে বললাম,
--আমাকে কোন দিক দিয়ে তোর পেত্নী মনে হয়?
--আহারে,,আইছে সুন্দরী।
আমি ওর পাশে বসে পড়লাম।নিজেকে দেখ আর আমাকে দেখ।
--নিজেকে দেখার কি আছে?
আমার মতো এত ফর্সা ছেলে এই জীবনে দেখেছিস?
--হু,,তুই তো সাদা বিলাই।
--হু আর তুই তো কালি পেত্নী।
--আমি কালি?
ওর হাত টেনে নিজের হাতের সাথে মিলিয়ে বললাম দেখ কে ফর্সা বেশি।ভালো করে দেখ।
আমি তোর চেয়ে বেশি ফর্সা
--তাহলে তো তুই ও বিলাই।সাদা বিলাই।
--মেয়েরা ফর্সা হলে ভালো লাগে,বিলাই লাগেনা। আর ছেলেরা এত ফর্সা কেন হবে?
--তাহলে কি হবে?নিগ্রো।তোর কি নিগ্রো ছেলে পছন্দ?
--তা হবে কেন?আমার তো রোদ ভাইয়ার গায়ের রং পছন্দ।(সাদা মনে কালি নাই ঠাস করে বলে ফেললো)
রোদ ভাইয়া আর রাহাত চোখাচোখি করছে।রাহাত মুখ চেপে হাসছে।রোদ ভাইয়া মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে।
--কি হলো?আমি এমন কি বলেছি?আমি তো গায়ের রংয়ের কথা বললাম।এভাবে মুখ চেপে হাসার কি হলো?
রাহাত বিরবির করে বললো,শুধু গায়ের রং কেন দুদিন পর আস্ত রোদ ভাইয়াকেই তুই পছন্দ করবি।
--ওই বিরবির করে কি বলিস?
রাহাতের দিকে রোদ ভাইয়া তাকালো।রাহাত আমাকে আমতা আমতা করে বললো,
--বললাম যা তোকে ভাইয়ার গায়ের রংয়ের মতো উজ্জ্বল শ্যামলা একটা ছেলে দেখে বিয়ে দেবো।
তারপর আবার বললো, ভালো হইছে রে তুই অন্য ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিস।এইবার একটু শান্তি মতো মেয়ে ঘুরাতে পারবো।
আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম,
--আমারও ভালো হয়েছে।তুই নামক কোনো পেরা নেই।তোর জন্য তো কোনো ছেলে আমার দিকে তাকায়ওনি।
--তোর মতো পেত্নীর দিকে কে তাকাবে?
--আচ্ছা,তাইনা?এবার দেখিস নিউ ভার্সিটিতে কত জন লাইন,,
আমি আর কথাটা শেষ করতে পারলাম না।রোদ ভাইয়া ধমক দিয়ে বললো,
--তোকে লাইন মারতে ভর্তি করেছি?
--আমি কেন লাইন মারবো?ছেলেরা মারবে?
রাহাত মাঝখান থেকে বললো,বেশই লাইন মারার চেষ্টা করোনা।তার আগেই বিয়ে হয়ে যাবে।
আমি ভাবলেশহীন ভাবে বললাম,তুই হতে দিলে তো হবে।
রাহাত আমার কথা শুনে রোদ ভাইয়ার দিকে চাইলো।রোদ ভাইয়া চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করলো। রাহাত আমতা আমতা করে বললো,
--মানে??
--মানে??হু,,তুই কি ভেবেছিস আমি কিছুই জানি না।সব বিয়ের প্রস্তাব কে ভেস্তে দিচ্ছে?
--কে দিচ্ছে?
--তুই।আর তোর এই ক্রাইমের পার্টনার স্বয়ং রোদ ভাইয়া।কি ঠিক বললাম তো?
রোদ ভাইয়া বললো,
--ক্রাইমের পার্টনার মানে কি হাহ?আমরা কেউ কিচ্ছু করিনি।আর কেন করবো এসব?কি লাভ আমাদের?
--সেটা তো তোমরা বলতে পারো।কেন করছো?কি লাভ?
রাহাত ধরা খেয়ে উঠে দাড়িয়ে রাস্তা মাপার চেষ্টা করছে।
--ওই কই যাস?পালাচ্ছিস কেন?
--পালাবো কেন?আমার কাজ আছে যাই যাচ্ছি।
রাহাত কেটে পড়েছে।
আমি রোদ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনি বললেন,
--সেদিন তো বিয়ে করবি না বলে কাদছিলি।বিয়ে ভেঙেছি বলে কথা শোনাচ্ছিস?
--কথা কেন শোনাবো আমি তো সত্যিটা বললাম।
--হুম,,সত্যি করে বলতো ক'বছর পর বিয়ে করার ইচ্ছা আছে।
--নেই।(ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলাম)
ভাইয়া অবাক হয়ে বললেন, নেই মানে কি?
--নেই মানে এ জীবনে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই।
--তাহলে কি করার ইচ্ছা আছে?
--উম,পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাড়ানো।নিজের পরিচয় গড়া।নিজের মতো করে বাচা।যদি নিজের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারি তবে একটা এনজিও খোলবো যেখানে অসহায় শিশুদের নিয়ে কাজ করা হবে।
এভাবেই নিজের মতো করে জীবন কাটিয়ে দেবো।নো বিয়ে,নো প্যারা।
--জঘন্য পরিকল্পনা (বিরবির করে)
--কিছু বললে?
না।
চুল আবার উড়ছে।চুল সামলাতে ব্যস্ত।আমার ইচ্ছে করছে হেয়ার ব্যান্ড এনে চুল বেধে দেই।আম আবারো জিজ্ঞেস করলাম,
--গতকাল তোমার মন খারাপ কেন ছিলো?দুপুর বেলায় খাবার টেবিলে এমন করলে কেন?আসার পর তো ভালোই ছিলে।আর রাতেও,,
আমার দিকে না চেয়েই বললো, এমনি।
--এমনি কারো মন খারাপ হয়?
--আমার হয়।
--আমি হয়তো জানি আপনার মন কেন খারাপ ছিলো।
ভাইয়া চমকে আমার দিকে চেয়ে বললো, কেন?
আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম,
--এ বয়সের ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগ প্রেম ঘটিত কারণে মন খারাপ করে।আর আপনি যেহেতু প্রেমিক পুরুষ সেহেতু আপনার মন খারাপ প্রেম ঘটিত কারণে।
ছোট্ট করে উত্তর এলো,হুম।
আমি নড়েচড়ে অতি আগ্রহ নিয়ে বললাম,ভাইয়া বলো না কাহিনী কি?কি হয়েছে তোমার একতরফা প্রেমের?
ভাইয়া আলতো হেসে বললো,
--আমার একতরফা প্রেমের কাহিনী শুনলে তুই হার্ট এটাক করবি।
--আমি চোখ বড়বড় করে বললাম,হার্ট এটাক!!তাহলে তো জটিল বিষয়।তাহলে আর আমার শুনে কাজ নেই।জটিলতা আমি বুঝি কম।
আমি উঠে দাড়ালাম।তারপর জামাকাপড় নিয়ে নিচে চলে গেলাম।
রোদ পিছন থেকে ফুলের যাওয়া দেখছে।
--তুই আসলেই বুঝিস কম।এই মেয়ে নাকি চিরকুমারী থাকবে।তুই তো চিরকুমারী থাকবিনা,আমাকে চিরকুমার বানানোর ব্যবস্থা।কিন্তু আমি তো চিরকুমার থাকবোনা।আমার জন্য হলেও বিয়ে তোকে করতে হবে।তুই যে কবে আমার ভালোবাসাটা বুঝবি ফুল কলি।
চলবে...
Writer:- ফাবিহা নওশীন