![]() |
পথচলতি সাইকোলজি |
১. ধরুন, আপনাদের ডিপার্টমেন্টের সবচে সুন্দরী মেয়েটার নাম, মাইশা। শুধু সুন্দরী না, ক্লাসে তার রোলও এক। Brain with beauty! সব ছেলে মনে মনে মাইশাকে কামনা করে, শুধু আপনি ছাড়া। কারণ আপনার রোল- দুই। মাইশার অহংকার, শীট না দেয়া, সবার সাথে ভাব নেয়া -সব ভেঙে চুরমার করে দিতে আপনার মনে হিংসা জেগে উঠেছে, জাগাটাই তো স্বাভাবিক। টানা দুই বছর তাকে আপনি পেছনে ফেলতে পারেন নি। এবার আপনারা অনার্স থার্ড ইয়ারে। আপনি দৈনিক সতেরো ঘণ্টা করে পড়াশুনা করছেন মাইশাকে পেছনে ফেলতে। অবশেষে আপনি সফলও হলেন। মাইশার অহংকার ভেঙে দিলেন। আপনি এখন ক্লাসের ফার্স্ট বয়, মাইশা সেকেন্ড। আপনিও দারুণরকম আনন্দিত। চোখে জল চলে আসছে খুশীতে, মুখে তৃপ্তির হাসি, অন্তরে শীতল হাওয়া। মজার ব্যাপার কি জানেন? ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার জন্যে আপনি কিন্তু খুশী নন, আপনি খুশী মাইশাকে পেছনে ফেলতে পেরে। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের মধ্যে 'প্রতিযোগিতা' লেগে ছিল, আছে, থাকবে। অবাক করার মতন বিষয় হচ্ছে, প্রতিযোগিতা করেই আমরা একটা জীবন পার করে দিচ্ছি, তাতে কিন্তু আমাদের কোনও সুফল আসছে না। ভালো জব, সুন্দরী বউ, ডক্টর ডিগ্রি, বাড়ি-গাড়ি; এগুলোতে যদি এতই সুখ থাকতো, তাহলে এত বড় বড় সেলিব্রিটিরা সুইসাইড করে কেন? কখনও শুনেছেন, রিকশাচালক বা ভিক্ষুক গলায় দড়ি দিয়েছে বা স্লিপিং পিল খেয়ে আত্মহত্যা করেছে? শুনলে তা খুবই রেয়ার কেস। আমাদের এই প্রতিযোগিতা আমাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। আপনি মাইশাকে পিছনে ফেলে কি প্রমাণ করলেন? কিছুই না! শুধু মাইশার Capability এর সাথে নিজের Capability এর একটা তুলনা করলেন। আমরা কি বেঁচে আছি, অন্যের যোগ্যতার মানদণ্ড দিয়ে নিজের যোগ্যতার পরিমাপ করতে? যদি তা না হয়, তবে কেন এত অসুস্থ প্রতিযোগিতা? যাতে ব্যর্থ হলে আপনি আত্মহত্যার কথা ভাবেন...? নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া মানে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া। কখনও নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছেন? না ভাবলে আজ থেকেই ভাবুন।
২. আমরা যে কারও বাসায় গেলে মিষ্টি নিয়ে যাই, তা কেন? ডায়াবেটিস আছে জেনেও আমরা ভদ্রতা করে মিষ্টি নিয়ে যাই, তা না হলে মান-ইজ্জত থাকে না! এই স্বভাবটা কিভাবে এসেছে আমাদের মাঝে? উত্তরঃ আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে। যখন পাথর ঘষে আমরা আগুন জ্বালাতে শিখেছি, তখন থেকেই, যখন গাছের পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণ করতে শিখেছি, তখন থেকেই। গাছের মিষ্টি ফলের প্রতি আমাদের চাহিদা ছিল বাড়াবাড়ি রকমের। তাই কেও কোনও মিষ্টি ফল পেলেই তা নিয়ে আড়ালে চলে যেত বা দৌঁড় দিতে দিতে তা খেয়ে নিত। কারণ, মিষ্টির চাহিদা এতটাই বেশী ছিল যে, মিষ্টি খাওয়ার নেশায় কাওকে খুন করাটাও অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়। তাই সঙ্গী-সাথীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মিষ্টি খাওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল। সেই পূর্বপুরুষদের থেকে ধার করা বৈশিষ্ট্য, মিষ্টির প্রতি ভালোবাসা আমাদের থেকেই গেছে। তাই আমরা কারও বাসায় যাওয়ার সময় মিষ্টি নিয়ে যাই।
৩. আচ্ছা, আপনি কি বাঙলা সিনেমা দ্যাখেন? বেশীরভাগেরই উত্তরঃ না। আমিও দ্যাখি না। খুব বাজে, তাই না? একটা সময় কিন্তু আমরা ঠিকই বাঙলা সিনেমা দ্যাখতাম, যখন বিটিভি ছাড়া আর কোনও চ্যানেল ছিল না, তখন শুক্রবার নামাজ পড়ে এসেই টিভির সামনে বসে পড়তাম। এতটাই আকর্ষণ ছিল আমাদের, তা তো অস্বীকার করতে পারব না। 'কমার্শিয়াল' বাঙলা সিনেমায় কি দ্যাখা যায়? শার্ট-প্যান্ট পরা স্টাইলিশ এবং কোমড় বা তার নিচের অংশ দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটা মেয়েগুলো খারাপ, স্বার্থপর, বেইমান, ইতর। অন্যদিকে সালোয়ার কামিজ পরা, মুরব্বিদের সামনে ভদ্রতা প্রদর্শন করা মেয়েগুলো ভালো, এবং তারাই নায়িকা। ৯০% কমার্শিয়াল বাঙলা সিনেমায় বড়লোকরাই হন ভিলেন। বড়লোকের মেয়ে, গরীবের ছেলে -টাইপ সিনেমাতেও বড়লোকের মেয়েটা নায়িকা হওয়ার সুবাধে (বা নায়িকা কোটায়) ভালো হয়ে যায়, আর গরীবরা সবসময়ই ভালো এবং ধার্মিক হয়। অথচ নায়িকার বাবা থেকে সব বড়লোকরা হয় কালপ্রিট। কেন? কারণ, বাঙলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশ। এখানে মানুষের আর্থিক অবস্থা দুর্বল। আর বাঙলা সিনেমা দ্যাখে দিনমজুর, রিকশাচালকরা (রিকশাচালকদের কোনওভাবেই খাটো করছি না। তাঁদের আমি শ্রদ্ধা করি)। তাই ফিল্ম ডিরেক্টররা একটা সাইকোলজিক্যাল গেম খেললেন। গরীবরা সাধারণত আরেকটা গরীবের প্রতি মমতা অনুভব করে, সে হয়তো তার আপন কেও না, তবুও গরীব এবং বড়লোক হতে প্রত্যেকটা পেশার লোকজনের মনের ভেতরেই নিজের অজান্তে এক বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠে। গরীব-গরীব, লেখক-লেখক, গায়ক-গায়ক, শিল্পপতি-শিল্পপতি এমন। গরীবরা বড়লোকদের পছন্দ করেন না। লক্ষ্য করলে দ্যাখবেন, শ্রমিকদের সাথে মালিকদের সবসময়ই ঠাণ্ডা যুদ্ধ চলে। যেহেতু চায়ের দোকান হতে দিনমজুর এবং শ্রমিকরাই দিনশেষে সিনেমা দ্যাখতে বসেন, তাদের মন জয় করবার লক্ষ্যে ফিল্ম ডিরেক্টররাও আর ভালো ফিল্ম না বানিয়ে তাদের জন্যেই কমার্শিয়াল মুভি তৈরি করেন। দিনশেষে এঁরাই হয় প্রেক্ষাগৃহের প্রধান কাস্টমার। এটাই বাঙলা সিনেমায় কেন বড়লোকদের খারাপ সাজানো হয়, তার অন্যতম প্রধান কারণ।
৪. কেও আমাদের ছেড়ে চলে গেলে আমরা কষ্ট পাই। কেন? এটা আবার কেমন প্রশ্ন! মানুষটা ব্রেকআপ করে ফেললে কষ্ট হবে না? আমি তাকে ভালোবাসতাম না? অবশ্যই বাসতেন। ধরুন, আপনি কারও সাথে রিলেশন করে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করলেন। একবার না বহুবার। আবার আপনার বান্ধবী কারও সাথে রিলেশন করলো, কিন্তু দৈহিক কোনও সম্পর্কে গেলো না। দুজনেরই ব্রেকআপ হলো। আপনারা দুজনই আপনাদের বয়ফ্রেন্ডকে প্রচণ্ড ভালেবাসতেন। বলুন তো, এই ব্রেকআপে কে বেশী কষ্ট পাবে? আপনি, না আপনার বান্ধবী? আপনি হয়তো বলবেন, যার মধ্যে ভালোবাসা বেশী ছিল সে। এটা ভুল উত্তর, কারণ, এটা কেবলই একটা ধারণা মাত্র! সবচেয়ে বেশী কষ্ট পাবেন, আপনি। কারণ, আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে শারীরিক সম্পর্কে গিয়েছিলেন। হাস্যকর হলেও এটাই সত্যি। ভালোবাসাটা খুব বড় কোনও ভূমিকা রাখে না। আমাদের মনে স্মৃতি জমা হয়, তা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমাদের শরীরেও যে স্মৃতি জমা হয়, তা কি আমরা জানি? আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানি, বড় দাদা, বড় নানা হতে কয়েক পূর্বপুরুষ পর্যন্ত চিন্তা করুন। আপনি হয়তো আপনার দাদাকেই দ্যাখেছেন, এরপর বড়দাদা, তারও দাদা; ওনাদের দ্যাখেন নি। কিন্তু তাদের শরীরের কোনও না কোনও অংশের সাথেও আপনার শরীরের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। এটা হলো, শরীরের স্মৃতি, যা তারা আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। আপনার চোখ বেঁধে দিলে, বিশটা ছেলে পরপর আপনার হাত ধরলেও তাদের হাতের মধ্য থেকে আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের হাত আলাদা করতে পারবেন। এখানে মানসিক কোনও বিষয় নেই। একবার এক সেকেন্ডের জন্যে হাত ধরলেও, তা ব্রেইনে গিয়ে জমা হয়। সেই ব্রেইনই (যখন আপনি চোখ বন্ধ অবস্থায় বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরবেন) আপনাকে সিগন্যাল পাঠায়, এই হাতটা তুমি এর আগেও বহুবার ধরেছিলে, মনে পড়ে? আপনি আসলে যে বিষয়গুলোকে মানসিক বলে ভাবছেন, তার অনেকগুলোর সাথে হয়তো 'মনের' কোনও সম্পর্কই নেই। এবার যদি আপনার বান্ধবী রাগ করে বলেন, আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে পাগলের মতন ভালোবাসতাম, আমার বান্ধবীর চাইতেও (মানে আপনার চাইতেও) অনেক অনেক বেশী। কষ্ট আমারই বেশী। শারীরিক সম্পর্কে যাই, কিন্তু ভালো তো বাসতাম। হ্যাঁ, সত্যি! আপনার বান্ধবীও তার বয়ফ্রেন্ডকে ভালোবাসতো, কিন্তু তার কষ্ট আপনার চেয়ে বেশী না। কারণ, মন ৫০%, বাকি ৫০% শরীর। আপনি যতই মন থেকে ভালোবাসেন না কেন, আপনি আসলে ৫০%ই পূরণ করেছেন, বাকি ৫০% খালিই আছে। কথাটা বাজে শোনালেও সত্যি। কিন্তু তাই বলে শারীরিক সম্পর্কে যেতেই হবে, তা কিন্তু না। আগে আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে, শারীরিক স্মৃতির মূল্য বেশী, নাকি মানসিক স্মৃতির?
৫. একটা লিবারেল ফ্যামিলি বা এলিট ফ্যামিলির মেয়ের সাথে আপনি যত সহজে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারবেন, একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের সাথে তত সহজে করতে পারবেন না। ধরেন, আপনি একটা প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্র। মোটামুটি আশেপাশের সবাই বড়লোক ফ্যামিলি থেকে আগত। আপনি আপনার ক্লাসমেটকে রাস্তায় পেছন থেকে ডাক দিতে পারবেন, এই মালিহা! এদিকে আয়।
সেও ঘুরে তাকিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করে বলবে, আরে দোস্ত, কি খবর?
কিন্তু, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কি এটা সম্ভব? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়েগুলো নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত। ছেলেরা মেয়েদের সাথে হ্যাণ্ডশেক করা তো আকাশের চাঁদ, মেয়েদেরকে রাস্তায় ডাক দিলেও সে চোখ নামিয়ে আগে চারপাশে তাকিয়ে দ্যাখবে কোনও পরিচিত কেও আছে কিনা, তারপর আপনার সামনে গিয়ে বলবে, এভাবে ডাক দিলেন কেন? ক্লাসমেট, তবুও 'আপনি' করেই বলবে। এমন মধ্যবিত্ত মেয়েগুলো কিন্তু প্রেম করে ঠিকই, যদিও বিয়ের সময় পরিবারের পছন্দসই পাত্রের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসে কেঁদেকেটে উজাড় করে। এগুলো কেন? এলিট ফ্যামিলির মেয়েটাও মানুষ, মধ্যবিত্ত মেয়েটাও মানুষ। তবে মধ্যবিত্তরা কেন পিছিয়ে আছে? অই যে মধ্যবিত্ত চিন্তা থেকে বের হতে পারছে না যে। এটাই তো মূল সমস্যা। একটা গরীব লোকও উচ্চবিত্ত চিন্তা করতে পারে, একটা বড়লোকও নিম্নবিত্ত চিন্তা করে নিজেকে 'ছোটলোক' বানাতে পারে। সবই তো চিন্তার ফারাক। তবে অর্থনৈতিক ফারাকটাই কেন বড়, কেন বড় পরিবেশের বাঁধা? কারণ, ধরেন, একটা রুমে আপনারা তিন বন্ধু থাকেন। বাকি দুই বন্ধু সারাদিন মোবাইল চালায়, গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলে, ফেসবুকিং করে; তখন কিন্তু আপনার পড়তে ইচ্ছে করবে না। আবার, যদি বাকি দুই বন্ধু সারাদিন পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সকাল থেকে টানা পড়ে সন্ধ্যায় টঙে গিয়ে চা-সিগারেট খেয়ে আবার বাসায় ফিরেও বই নিয়েই মেতে থাকে; তখন কিন্তু আপনারও ফেসবুকে থাকতে ইচ্ছে হবে না, পড়তে ইচ্ছে করবে। Environment যে আমাদের মাঝে কিভাবে আকস্মিক পরিবর্তন আনছে, বোঝা যাচ্ছে?
সেও ঘুরে তাকিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করে বলবে, আরে দোস্ত, কি খবর?
কিন্তু, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কি এটা সম্ভব? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়েগুলো নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত। ছেলেরা মেয়েদের সাথে হ্যাণ্ডশেক করা তো আকাশের চাঁদ, মেয়েদেরকে রাস্তায় ডাক দিলেও সে চোখ নামিয়ে আগে চারপাশে তাকিয়ে দ্যাখবে কোনও পরিচিত কেও আছে কিনা, তারপর আপনার সামনে গিয়ে বলবে, এভাবে ডাক দিলেন কেন? ক্লাসমেট, তবুও 'আপনি' করেই বলবে। এমন মধ্যবিত্ত মেয়েগুলো কিন্তু প্রেম করে ঠিকই, যদিও বিয়ের সময় পরিবারের পছন্দসই পাত্রের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসে কেঁদেকেটে উজাড় করে। এগুলো কেন? এলিট ফ্যামিলির মেয়েটাও মানুষ, মধ্যবিত্ত মেয়েটাও মানুষ। তবে মধ্যবিত্তরা কেন পিছিয়ে আছে? অই যে মধ্যবিত্ত চিন্তা থেকে বের হতে পারছে না যে। এটাই তো মূল সমস্যা। একটা গরীব লোকও উচ্চবিত্ত চিন্তা করতে পারে, একটা বড়লোকও নিম্নবিত্ত চিন্তা করে নিজেকে 'ছোটলোক' বানাতে পারে। সবই তো চিন্তার ফারাক। তবে অর্থনৈতিক ফারাকটাই কেন বড়, কেন বড় পরিবেশের বাঁধা? কারণ, ধরেন, একটা রুমে আপনারা তিন বন্ধু থাকেন। বাকি দুই বন্ধু সারাদিন মোবাইল চালায়, গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলে, ফেসবুকিং করে; তখন কিন্তু আপনার পড়তে ইচ্ছে করবে না। আবার, যদি বাকি দুই বন্ধু সারাদিন পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সকাল থেকে টানা পড়ে সন্ধ্যায় টঙে গিয়ে চা-সিগারেট খেয়ে আবার বাসায় ফিরেও বই নিয়েই মেতে থাকে; তখন কিন্তু আপনারও ফেসবুকে থাকতে ইচ্ছে হবে না, পড়তে ইচ্ছে করবে। Environment যে আমাদের মাঝে কিভাবে আকস্মিক পরিবর্তন আনছে, বোঝা যাচ্ছে?
হয়তো আপনি আমাকে খারাপ ভাবতে শুরু করেছেন। ভাবছেন, আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির বিরুদ্ধে বা তাদের খাটো করার অপচেষ্টা করছি। মূলত, তার কিছুই আমি করছি না। আমি অর্থনৈতিক মধ্যবিত্ততাকে মেনে নিতে পারি, কিন্তু চিন্তার মধ্যবিত্ততাকে কখনওই মানতে পারি না। একটা বড়লোকের বা এলিট ফ্যামিলির বা লিবারেল মাইন্ডের মেয়ে যত সহজে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ের সাথে মিশতে পারে, ততটা সহজে কিন্তু মধ্যবিত্ত বা কনজার্ভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে বড়লোক মেয়েটার সাথে মিশতে পারবে না। কারণ, অর্থনৈতিক দৈন্যতা। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরীবের শ্রেণির লোকেরা সাধারণত তাদের মতোই, মানে আরেকটা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা গরীব মেয়ের সাথে মিশতেই সিকিউরড ফিল করে। কেন? কারণ, মানুষ চায়, তার সমপর্যায়ের মানুষের সাথে থাকতে। বড়লোকদের সাথে মিশতে তাদের একধরনের হীনমন্যতা দ্যাখা দেয়, নিজেকে অসহায় মনে হয়, ব্যর্থ মনে হয়, হয়তো নিজেকে তাদের হাসির পাত্রই মনে হয়, অথচ তারা আপনাকে দ্যাখে হাসছে না। বিষয়টা অনেকটা ক্লাসে সবার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকার মতন। ক্লাসের কোনও মেয়েই কিন্তু আপনার এই অপমানজনক শাস্তিতে হাসছে না বা ঠাট্টা করছে না। স্যারের পাশে কান ধরে দাঁড়িয়ে থেকেই বরং আপনি ভেবে চলছেন, আহারে! মেয়েগুলো আমাকে নিয়ে কি না বলছে! স্যার, এটা আপনি কি করলেন? এত অপমান সবার সামনে...?
এটাই আমাদের মধ্যবিত্তদের সমস্যা। তাই নিজের কান ধরাটা ছেড়ে দিন, সিটে গিয়ে বসুন। নিজের মনের আয়না পরিষ্কার করুন, ভালো বই পড়ুন, মনটাকে স্বচ্ছ করুন; বড়লোকদের তখন আর খারাপ মনে হবে না। নেগেটিভ উদাহরণ সবার জানা, তাই পজিটিভ কিছু বলি। যারা কষ্ট করেছে নিজের সাথে, সোসাইটির সাথে, রাতদিন এক করে পরিশ্রম করে বড়লোক হয়েছে, তাদেরকে আপনি খারাপ করে দ্যাখছেন...? কেন? আপনার মতন হাত গুটিয়ে বসে থেকে কাজ না করে, চেষ্টা না করে, হাল ছেড়ে দিয়ে ভাগ্যকে দোষ দেয়াটাই বুঝি সম্মানের? বড়লোকদের সমালোচনা করছেন? Well, করুন। কারণ, ব্যর্থ মানুষরাই বেশী সমালোচনা করে।
Writer:- Imran Hossain Emu