সেদিন ছাদে বসে আমি আর দোলা আপু গল্প করছিলাম।দোলা আপু আমার কাজিন।বয়সে আমার থেকে প্রায় ১ বছরের বড়।আমাদের বয়সের পার্থক্য খুব বেশী না হলেও আমি ওনাকে আপু বলেই সম্বোধন করি।উনিও আমার মুখে আপু ডাকটিই পছন্দ করেন।আমাদের গল্পের কোনো সীমানা নেই।আকাশ থেকে শুরু করে মহাবিশ্ব,গ্যালাক্সি সব কিছু নিয়ে আমরা গল্প করি।সে যাই হোক...মুল ঘটনায় ফিরে আসি।সেদিন আমরা গল্প করছিলাম বিজ্ঞান নিয়ে।বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলবো আর বিজ্ঞানীদের প্রসঙ্গ আসবেনা তাই হয় নাকি!তো গল্পের এক পর্যায়ে আপু আমাকে বললেন, জানিস আরমান - বিজ্ঞানী নিউটন গাছ থেকে আপেল পড়া নিয়ে গবেষণা করে মহাকর্ষ সুত্র আবিষ্কার করেছিল!
আমি উত্তর দিলাম,হুম জানি।আচ্ছা আপু, এতো সব ফলের গাছ থাকতে নিউটন মহাশয় আপেল গাছের নিচে বসে ছিল কেন? তিনি ত অন্য কোনো গাছের নিচেও বসতে পারতেন। যেমন আম, লিচু, কাঠাল বা অন্য কোনো গাছ।আপেল একটা ফল হলো? কেমন উদ্ভট দেখতে...
আমার কথা শুনে আপু হোহো করে হেসে উঠলেন। আমাকে বললেন,দেখ আরমান আমি খুব ভালো করেই জানি তুই আপেল খেতে পছন্দ করিস না। কিন্তু পছন্দ করিস না বলে ফলটাকে উদ্ভট বানাবি এটা কেমন কথা! আর তুই তুই যে বলছিস কাঠাল গাছের কথা...নিউটন যদি কাঠাল গাছের নিচে বসে চিন্তা করতো আর তার মাথায় যদি ইয়া বড় একটা পাকা কাঠাল পড়তো তাহলে কি অবস্থা হতো ভেবে দেখতো। তিনি মহাকর্ষ সুত্র দেওয়ার বদলে তাকে পৃথিবীর কর্ষ ত্যাগ করতে হতো।
হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছেন। অবশ্য ওসব দু চারটি সুত্র আবিষ্কার করা বাঙালিদের পক্ষে কোনো ব্যাপারইনা। তবে দুঃখ জনক ভাবে আমাদের দেশে আপেল গাছ নেই। তাই আমরা গাছের আপেলের পতন নিয়ে গবেষণা করতে পারছিনা। না হলে সেই কবেই আমরা ওরকম তিন এর জায়গায় তিনশ সূত্র বের করে ফেলতাম!
আপু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,থাক থাক...আর আমার কাছে আপেল নিয়ে পন্ডিতি করতে হবেনা। তোর বিজ্ঞানের দৌড় যে কত দুর তা আমার জানা আছে।তুই সেবার বিজ্ঞান পরীক্ষায় ০৯ পেয়েছিলি না? হুম - আমার পরিষ্কার মনে আছে। ফুপু তো তোর রেজাল্টের জন্য তোকে ঝাটা দিয়ে ট্রস ট্রস করে মেরেছিল। হাহাহা...
আহা। আপু চুপ করেন তো।আমার রেজাল্ট সবার সেরা ছিলো। আপনাদের বুঝতে সমস্যা ছিলো। ০৯ কে উল্টে দিলে কত হয় জানেন তো? ৯০ হয় ৯০...সবই ঠিক ছিল শুধু আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক ছিলোনা। দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করে দেখুন সারা দুনিয়া বদলে যাবে।আর নিউটনকে নিয়ে যে এতো কথা বলছেন কিন্তু ওনার বলের ৩য় সূত্র তো সম্পূর্ণ ভুল!
আপু অবাক হয়ে বললো,কি বললি গাধা!নিউটনের ৩য় সূত্র ভুল!? সেটাকি তোকে নিউটন তোর স্বপ্নে এসে বলে দিয়ে গেছে!নাকি নিউটন ওপার থেকে ফোন করে তোকে বলেছে? তোর মাথা খারাপ নাকি পেট খারাপ? পাবনায় পাঠাতে হবে?
আমি বললাম, যা বলেছি ঠিক বলেছি। প্রমান চান?
আপু বললেন, কোনো ভাবে যদি তুই প্রমান করতে পারিস যে নিউটনের ৩য় সুত্র ভুল তাহলে তোকে আমি আমার গুরু মেনে নিব আর প্রতিদিন পিৎজা আর বার্গার খাওয়াব। সাথে নগদ ৫০০ টাকা দেব!
আমি কিছু না বলে আপুর গালে ঠাস করে চড় মারলাম!
আপু তো অবাক।আপু চিৎকার করে বলতে লাগলো,এটা কি হলো? চড় মারলি কেন।বড় আপুর গায়ে হাত তুলিস!এত্তো বড় সাহস তোর।দাড়া এখনই ফুপাকে বলে তোর মাথার ব্যামো ঠিক করছি।
আমি কিছু বললাম না।শুধু চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকলাম।আপু ওদিকে আমাকে বকতে ব্যাস্ত।আমি সদ্য বিয়ে হওয়া বউ এর মতো মাথা নিচু করে আছি।প্রায় দুই মিনিট পর আপুকে আবার একটা চড় মারলাম!
আপু এবার প্রচন্ড রেগে আমাকে ঠাস ঠাস করে ৪-৫ টা চড় হাকিয়ে দিলো।আমি তো মাইরের চোটে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করলাম।
কাদতে কাদতে বললাম,এবার ৫০০ টাকা দিন।আর বলেন কবে থেকে পিৎজা খাওয়াবেন।
আপু রেগে গিয়ে বললেন, একে তো আমাকে মারলি তার ওপরে টাকা চাস।তোকে বললাম নিউটনের সূত্র ভুল প্রমান করতে আর তুই আমাকে চড় মারলি!?দাড়া তোকে পিৎজা না এবার ফুপাকে দিয়ে জুতাপেটা খাওয়াব।
কিন্তু আমি তো নিউটনের ৩য় সূত্র যে ভুল সেটা প্রমান করেই দিলাম, আমি বললাম।
কখন? কিভাবে? আপু একদম অবাকের স্বরে বললো
এই তো এখনই। আচ্ছা আপনি বলুন তো নিউটনের ৩য় সুত্র কি?
আপু বললো, কেন? প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এইটা - তুই জানতিস না?
আমি চোখ মুছে বললাম,তাহলে দেখেন প্রথমবার আমি যখন আপনাকে চড় মারলাম তখন কিন্তু আমি আপনার ওপরে ক্রিয়া করেছিলাম। মানে বল প্রয়োগ করেছিলাম।কিন্তু বিপরীতে আপনি কিন্তু আমাকে চড় মারেন নি। তার মানে প্রথমবার আমার ক্রিয়ার বিপরীতে কোনো ক্রিয়া হয়নি। পরের বার আপনাকে একটা চড় মারলাম কিন্তু আপনি আমাকে মোট ৪ বার চড় মেরেছেন। তার মানে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমার একটি ক্রিয়ার চারগুন বিপরীত ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে সূত্রটি আদৌ সঠিক নয়।এবার তাড়াতাড়ি ৫০০ টাকা বের করেন।
আমার ছেলেমানুষি যুক্তি শুনে আপু হাসতে হাসতে যেন গড়িয়ে পড়তে লাগলো
পূবের হাওয়াতে আপুর চুলগুলো ঝিরি ঝিরি উড়ছিলো। সাদা সাদা মেঘগুলি জড়ো হয়ে নীল আকাশের বুকে অপূর্ব শোভা সৃষ্টি করেছে। আপুর হাসির গতিময়তাসুন্দর প্রকৃতিকে আরে সুন্দরতা দান করেছে। তৃপ্তিময় মুগ্ধচোখে আমি সেই দৃশ্য উপভোগ করছি...
গল্পঃ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া
লেখক:- শাকিল মাহমুদ (আরমান)