> কনে দেখা আলোয় পর্ব ১০
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ১০


পরেরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে কিনঞ্জল আর সাক্ষর বাদে পুরো পরিবার বসে আছে।নয় সদস্যদের পরিবার সাক্ষরের।সাক্ষর,ওর বাবা-মা,দাদি,ফুপি, ফুপির দুই মেয়ে(তাহা,তাহি),সাক্ষরের ছোট চাচ্চু,আর কিনঞ্জল।তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের মানুষটা হলো সাক্ষরের ছোটচাচ্চু সাফিন।বয়স প্রায় ৪৭ছুই ছুই।ভদ্রলোক এখনো বিয়ে করেনি।তবে খুবই মজার আর এভারগ্রীন একজন মানুষ।না তিনি বিয়ে-শাদি করেছে আর না পরিবারের ব্যাবসা সামলাচ্ছে।বছরের মধ্যে প্রায় ৮-৯ মাস তিনি বনে-জঙ্গলে,সমুদ্রতীরে, আদিবাসীদের সঙ্গে কিংবা দেশের বাইরে কাটায়।আর বাকি ৩-৪ মাস পরিবারের সঙ্গে কাটান।আর মজার ব্যাপারটা হলো সাফিন বাইরে থাকাকালীন সময়টুকুতে সে সম্পুর্নভাবে পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকে।না সে জানিয়ে যাবে কোথায় যাচ্ছে বা কতদিন থাকবে আর না কারো ফোন রিসিভ করবে।এমনকি ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম,ওয়াটসএ্যাপ, ইমো কিছুতেই তাকে সেই সময়টুকু পাওয়া যাবে না।প্রকৃতির সঙ্গে কাটানো তার সময়টুকু সে কেবল একান্তভাবে অনুভব করতে ভালোবাসে।আর সাক্ষরের বিয়েটাও হুট করে হয়ে যাওয়ায় হাজার ফোন কল করেও সাফিনকে কেউ খবরটা জানাতে পারেনি।গতকাল রাত তিনটায় বাড়ি ফিরেই একমাত্র ভাইপোর বিয়ের খবরটা জেনেছেন তিনি।আর সবচেয়ে অবাক আর খুশি হয়েছে এই ভেবে যে সাক্ষরের বিয়েটা তার টুকটুকির সঙ্গে হয়েছে।কিনঞ্জল ছোট্ট থেকেই সাফিনের বেশ ন্যাওটা।আর কিনঞ্জলও সাফিনের বেশ আদুরে।দুই পরিবারের মধ্যে সমস্যার দরুন দীর্ঘদিন কোন যোগাযোগ না থাকলেও সাফিন কিনঞ্জলের সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকই রেখেছিলো।আর কিনঞ্জলও বন্ধুর মতো নিজের সব কথাই সাফিনকে জানাতো।নুহাশের ব্যাপারটা কিনঞ্জলের পরিবারের কেউ না জানলেও সাফিন নুহাশের ব্যাপারে আগা-গোড়া সবটাই জানত।প্রথমদিকে সাফিন নুহাশকে নিয়ে একটু কাঁইকুই করলেও নুহাশের অসাধার ব্যাক্তিত্ব আর পজিটিভ মাইন্ড দেখে ব্যাপারটা আর তেমন ঘাটায় নি।তবে নুহাশকে ছেড়ে তার ছোট্ট টুকটুকি যে এখন তার ভাইপোর বউ এই ভেবেই খুশিতে ডগমগ করছে সাফিন।সাক্ষর আর কিনঞ্জল এখনো সাফিনের আসার খবর জানে না।সাফিন নিজেই জানাতে বারন করেছে যাতে সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে ওকে দেখে ওরা দুজন চমকে যায়।
বরাবরের মতো আজকেও সাক্ষর নিজের বাম হাতটা কিনঞ্জলের বাম বাহুতে আর ডান হাতে কিনঞ্জলের ডান হাতটা শক্ত করে ধরে ধীরে ধীরে কিনঞ্জলকে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামাচ্ছিলো।যদিও আজকে কিনঞ্জলের হাটতে তেমন বিশেষ কোন সমস্যা বা সেই চিনচিনে ব্যাথাটা কিছুই হচ্ছে না তবুও সাক্ষর কোন রিস্ক না নিয়ে ধরেই নামাচ্ছিলো কিনঞ্জলকে।সিড়ি ভেঙে নামতে নামতেই ডাইনিং স্পেসের ওদিকে হুট করেই চোখ যায় কিনঞ্জলের।ডাইনিং টেবিলে চোখ পরতেই কিনঞ্জলের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠল।তখনো তিনটে সিড়ি বাদ পরে আছে কিনঞ্জলের নামার জন্য।কিন্তু কিনঞ্জল সাফিনকে দেখতেই এক ঝটকায় সাক্ষরের হাত ছেড়ে সাফিন চাচ্চু বলে এক চিৎকার দিয়ে দৌড় দিয়েছে আর ওদিকে সাফিনও হাসিমুখ করে ওঠে দাঁড়াতেই কিনঞ্জল প্রায় ঝড়ের বেগে সাফিনের বুকে ঝাপিয়ে পড়েছে।সাফিন কিনঞ্জলকে বুকে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
"হেই মাই প্রিন্সেস।কেমন আছিস তুই টুকটুকি?"
কিনঞ্জল যেনো খুশির দমকে কথাই বলতে পারছিলো না।কিছু বলতে গিয়েও বারবার কথা আটকে যাচ্ছিলো।এই দেখে সাফিন হাসতে হাসতেই বলল,
"দেখো মা তোমার নাতবৌ এর কান্ড।কথাই বলতে পারছে না আমাকে দেখে।তাহলে বুঝো তোমার ছেলে ঠিক কতটা হ্যান্ডসাম!
সাক্ষরের দাদি মুখ বাঁকিয়ে বলল,
"৭মাস পর বাড়ি ফিরে তো একবারও আমাকে জড়িয়ে ধরলি না।আর এইদিকে দুজন দুজনকে দেখে তো আহ্লাদে আটখানা হয়ে যাচ্ছিস।"
সাফিন এবার ওর মার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
"You poor old lady.are you feeling jealous?"
এই শুনেই টেবিলে বসা সবাই ফিক করে হেসে দিলো।সেই সাথে সাক্ষরের দাদীও হেসে দিলো।কিনঞ্জল সাফিনের বাহু শক্ত করে ধরে সাবধানে সাফিনের চেয়ারের পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়ল।সাক্ষর নামে যে একজন জলজ্যান্ত মানুষ ওর পাশে দাড়িয়ে আছে সেদিকে কোন হুশই নেই কিনঞ্জলের।বেশ হাসি হাসি মুখ করে জিজ্ঞেস করল
"এইবার ট্রিপে কোথায় কোথায় ঘুরলে সাফিন চাচ্চু?আমাকে কিন্তু সব ডিটেইলস এ বলবে।আর তুমি এতো রোগা আর কালো হয়ে গেছো কেনো?খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করোনি তাই না?"
খানিকটা অভিমানী সুরে কিনঞ্জল কথাটা জিজ্ঞেস করতেই সাফিব চমকে উঠে বলল,
"কিরে টুকটুকি তো দেখি গলা একদম বসে গেছে।ক্যামন ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ বের হচ্ছে গলা দিয়ে।ঠান্ডা লাগলো কিভাবে?"
কিনঞ্জল বলতে যাবে তক্ষুনি পাশ থেকে সাক্ষরের দাদি সাক্ষরের গালে চিমটি দিয়ে বলল,
"ডেইলি সকাল সকাল গোসল করলে ঠান্ডা কেনো আরও কত কি লাগবে?এখনিতো ঠান্ডা লাগার বয়স এখন লাগবে না তো আর কখন লাগবে?কিরে মন্টু,তোর কি মেয়েটার প্রতি একটু মায়া দয়া হয় না নাকি?”
এই বলেই দাদি মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল।সাক্ষর কথাটা শুনেই ক্যাবলাকান্তর মতো কিনঞ্জলের দিকে তাকালো।ও মেয়েতো লজ্জায় রীতিমতো লাল হয়ে গেছে।সাফিন ব্যাপারটা প্রথমে ধরতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে দিলো।মায়ের দিকে একটা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
" মাম্মিজি,তু সি জিনিয়াস হো!"
এই বলেই সাফিন উঠে গিয়ে মায়ের সাথে হাইফাইভ করলো।তাহা,তাহি তো প্রথম থেকেই এদের কথাবার্তায় হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।এই দেখে সাক্ষর খানিকটা রাগ দেখিয়ে বলে উঠল,
"ওফফ!থামবে তোমরা।সামান্য গলা বসে গেছে এই নিয়ে কোথায় থেকে কোথায় চলে যাচ্ছো?গতকাল কিনঞ্জল আর আমি আইস্ক্রীম খেতে গিয়েছিলাম।সেখানে গিয়ে মহারাণী বাটারস্কচ,ওয়িয়ো আইস্ক্রিম,ব্লাক ফরেস্ট সবগুলো আইস্ক্রিম একসাথে খেয়েছে।ঠান্ডা না লাগলেও সামান্য গলা বসে গেছে।এই নিয়ে এত কথা উঠছে কেনো আমি বুঝতে পারছি না।"
সাক্ষরের এমন রাগী ফেইস দেখে বাকিরা চুপ করে গেলেও সাফিন সাক্ষরের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
"তুই চুপ কর তিত করল্লা!তুই আমার ভাইপো হয়ে এমন পান্তা ভাতের মতো পানসে কিভাবে হলি রে?লাইফটাকে এখন ইনজয় করবি না তো কখন করবি?আর আমরা একটু তোদের সাথে মজা করব না তো কারা করবে?আফটার অল ইউ গাইস আর নিউলি ম্যারিড কাপল। মুখ খুল্লেই শুধু নিমপাতার মত তেতো কথা বের করিস।"
সাফিনের কথা শুনেই সাক্ষর মুখটা গোমড়া করে চুপ করে গেলো আর সাক্ষরকে তিল করল্লা,পান্তা ভাত বলায় কিনঞ্জলের সে কি হাসি তবে সাক্ষরের চোখ পাকানো দেখেই মুহূর্তেই আবার কিনঞ্জলের হাসি থেমে গেলো।
(চলবে)...

লিখা:~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি

 

Delivered by FeedBurner

a