Leave a message
> কৃষ্ণকলি পর্ব ০২ - Bangla Short Golpo
-->

কৃষ্ণকলি পর্ব ০২ - Bangla Short Golpo


রুম থেকে বের হতেই কলি দেখলো পুরো বাড়িতে সাজ সাজ রব।সকলে কলির বিয়ের আনন্দে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
কলির জন্য কলির মায়ের উবে যাওয়া ভালোবাসা যেন পুনরায় উদয় হয়েছে।
সকলকে তিনি বলে বেড়াচ্ছেন
-এত বড় ঘরে বিয়ে হবে বলেই ত আল্লাহ এতদিন আমার মেয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হতে দেননি।সব আল্লাহর ইচ্ছা।তিনি ত সকলের জোড়া বানিয়েই পাঠান।
মায়ের কথা শুনে পাড়ার শেফালী খালা মুখ বাকা করেন।কিন্তু কলির মা শেফালী খালাকে দেখে যেন আরো উৎসাহের সাথে কলির হবু শ্বশুর বাড়ির খবর শুনান।শেফালী খালাও মুখ বাঁকা করে চলে যান।


৪.
তিনদিন পরই কলির গায়ে হলুদ।আর এরপর দিনই বিয়ে। কলির থেকেও কলির বিয়ে নিয়ে কলির বাবার আগ্রহ বেশী। তিনি সবকিছুতেই অতি অতি উৎসাহ খুঁজে নিচ্ছেন।
কলির ছোট বোন পাঁপড়ির উৎসাহেরও কোনো ঘাটতি নেই।সে ইতিমধ্যেই তার সব বান্ধবীদের দাওয়াত দিয়ে এসেছে।
বাড়িতে কেমন একটা সাজ সাজ রব উঠছে।
কলির যে কজন বান্ধবী আছে তাদের সকলেরই চার পাঁচ বছরের বাচ্চা আছে। তারা সকলেই কলির বিয়ের খবর শুনে তাদের বাচ্চাকে নিয়ে কলির সাথে দেখা করতে এসেছে।কথা বলার এক পর্যায়েই তারা রোশানের ছবি দেখতে চাইলো।
কলি খুব সগর্ভে আর অতি যত্নে তার বইয়ের ভেতর থেকে রোশানের ছবিটা বের করে তার বান্ধবীদের হাতে দিলো।
রোশানের ছবি দেখে তার প্রত্যেকটা বান্ধবীই অবাক হয়ে গেলো।
তারা নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করতে লাগলো।
কলি এই চোখাচোখির ভাষা জানে।সে বুঝতে পারলো তার বান্ধবীরা মনে মনে কি ভাবছে এখন।তারা সকলেই ভাবছে এমন শ্যামবর্ণের একটা মেয়েকে এমন একটা রাজপুত্রের মত ছেলে কেনই বা বিয়ে করছে?
সব বুঝতে পেরে কলি শুধু একটা মুচকি হাসি দিলো।


৫.
রোশান আদভানি।
রোশানের পুরোনাম হলো রোশান আদভানি।
আদভানি পরিবারের ছোট ছেলে এবং তৃতীয় সন্তান সে।
রোশানের পিতা আজিজ আদভানি গত হয়েছেন প্রায় বাইশ বছর আগে। রোশানের বয়স তখন মাত্র সাড়ে চার বছর। আর তার বড় ভাই রিফাত আদভানির বয়স তখন বারো বছর, মেজো ভাই রামিম আদভানির বয়স নয় বছর মাত্র।
আর সকলের ছোট বোন আলিয়া আদভানি তখন রোশানের মা জাকিয়া আদভানির পেঁটে ছিল।
রোশানের পিতা মারা যাওয়ার পর রোশানের মা জাকিয়া বেগমই তার পিতার ব্যাবসার দ্বায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।আর একে একে চার ছেলে মেয়েকে বড় করে তুলেছেন।
ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে রোশানের তার বাবার চেহেরা মনে থাকার কথা নয় যদিনা বাড়ির মূল ফটকে তার বাবার বিশাল বড় ছবিটা না থাকতো।
ছোটবেলা থেকেই রোশান তার মাকে নিজের আদর্শ মনে করে।কারণ তার মা তাদের জন্য অনেক ত্যাগ স্বিকার করেছেন।মাত্র ৩৫ বছর বয়সে বিধবা হয়েও সন্তানদের কথা চিন্তা করে আর বিয়ে করেননি।সন্তানদেরকে নিজের সম্পদ ভেবেই বড় করে তুলেছেন।
অবশ্য রোশানের পিতা আজিজ আদভানির বেশ টাকা পয়সা ছিল। কয়েক প্রজন্ম পায়ের উপর পা তুলে খেলেও এই টাকা শেষ হবে না। তাই জাকিয়া আদভানির খুব একটা সমস্যা হয়নি ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা দিতে কিংবা রাজার হালে রাখতে।অবশ্য স্বামীর ব্যাবসায়ে হাত দেওয়ার পর তিনি বেশ লাভও করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই রোশান দেখে এসেছে তার মা তার জন্য যেটাই করে না কেন সেরা টাই করে।আর তার মা সবসময় তার চাহিদারও গুরুত্ব দেন।এ কারণে রোশান চোখ বন্ধ করে তার মাকে বিশ্বাস করে।কারণ তার ব্রেনে একপ্রকার সেট হয়েই গেছে যে তার মা তার জন্য যাই করুক না কেন সেরাটা করবে।
বড় ভাইয়ের বিয়ের পর রোশান স্কলারশিপ নিয়ে কানাডায় পড়তে চলে আসে।সে কানাডা থাকা অবস্থায়ি তার মেজো ভাই রামিমও বিয়ে করে ফেলে।
তার ভায়েরা তাদের নিজ নিজ পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করেছে।সকলেই বেশ সুন্দরী আর খানদানি পরিবারের মেয়ে।
বড় ভাই রিফাতের বৌ এর নাম মেরি। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে মোটা অঙ্কের বেতনে জব করতো।তবে এখন অবশ্য জবটা ছেড়ে দিয়েছে।
আর মেঝোভাই রামিমের বৌ এর নাম আফিয়া।তার অবশ্য খুব একটা কাজ নেই। সারাদিন বসে বসে ছবি তোলা আর মেকাপ করা নিয়েই ব্যস্ত থাকে সে।
বাড়ির সকলের ছোট সদস্য রোশানের বোন আলিয়া আদভানি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছে এবার।বাড়ির সকলের সাথে খুনসুটিতে মেতে থাকায় হচ্ছে তার প্রধান কাজ।


৬.
আদভানি নিবাসের চারপাশ ফুল এবং মরিচবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
বিশাল বড় এই বাড়িটা এলাকার যে কারো চোখে পড়তেই বাধ্য। এর ধবধবে সাদা রঙ আর মার্বের পাথরে বাঁধানো দেওয়ালগুলো যেকারো চোখে ধাঁধা দেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।
বাড়ির মূল ফটকের বিশাল বড় কালো গেইটটার ঠিক ডানদিকে মার্বেল পাথরে খোদাই করে লিখা আছে "আদভানি নিবাস"। শুধু এই কারুকার্যটাই কিন্তু যথেষ্ট বাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
গেইট খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেই সুন্দর একটা বাগান। সেখানে আবার ইতালীয় কায়দায় চেয়ার আর টি টেবিল বসানো।আর এরপরই আসে বাড়ির সদর দরজা।পুরো বাড়িটি তিনতলা।সিঁড়িগুলো সব বৈঠকখানা থেকে বাড়ির মাঝে দিয়ে উপরে উঠে গেছে।সিঁড়ির ডানপাশে বিশাল বড় ডাইনিং টেবিল আর বামপাশে রান্নাঘর।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলে ডানদিকের প্রথম ঘরটা জাকিয়া বেগমের।তার ঘরের ঠিক বাপাশের প্রথম ঘরটা তিনি পাঠাগার হিসেবে ব্যবহার করেন।এর পরেএ ঘরটা আলিয়ার।
আর সিঁড়ির বামপাশের ঘরটা বড় ছেলে রিফাতের আর এর পরের ঘরটা মেঝো ছেলে রামিমের।
দোতলায় অবশ্য রোশানের ঘর নেই।সে তিনতলায় নিজের এক আলাদা দুনিয়া তৈরি করে রেখে গেছে। একটা ঘরে সে নিজে থাকে আরেকটা ঘরে সে নিজের মিউজিক সরঞ্জাম রেখেছে। সেখানে সে মনের সুখে গান করে কিংবা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়।তিনতলায় দুইটা গেস্ট রুম আছে আর একটা রুম এমনিই পড়ে আছে।

জাকিয়া বেগম নিজ হাতে বাড়ির সব কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন। ডেকোরেটরদের তিনি নিজ হাতে দেখিয়ে দিচ্ছেন কি করতে হবে কোথায় কি রাখতে হবে। তার আদরের ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা।
বাড়ির বড় দুই বউয়ের দিকে তাকিয়ে জাকিয়া বেগম মাঝেমধ্যে হতাশা বোধ করেন।
এরা নিজেদের ছাড়া কিছুই বুঝে না। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন একবার তিনি মারা গেলেই এই বউয়েরা এই বাড়িটা ভাগ করে ফেলবে। তার ছেলেদের মধ্যে দন্ধ তৈরি করে দিবে।
দুই বউ মেরি এবং আফিয়ে সামনাসামনি হাসিহাসি মুখ করে কথা বললেও মন থেকে কেউ কাউকে পছন্দ করে না। যেটা জাকিয়া বেগম খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন। আর একারণে তিনি তার জায়গায় এমন কাউকে রেখে যেতে চান যে এই পরিবারটাকে সামলে রাখবে। আর তিনি জানেন এবং বিশ্বাস করেন যে সেই মেয়েটি হচ্ছে কলি। যাকে তিনি তার ছোট ছেলের বউ করে এই বাড়িতে নিয়ে আসবেন।জাকিয়া বেগম জানেন বড় বউরা কলিকে পছন্দ করেনি। কিন্তু জাকিয়া বেগমের বিশ্বাস তার ছোট ছেলে রোশান কলিকে পছন্দ করবে।
জাকিয়া বেগমের এখনো মনে পড়ে সেদিনের কথা যখন তিনি কলিকে প্রথমবারের মত দেখেছিলেন।
ছয়মাস আগের কথা....
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার।
জাকিয়া বেগম সপ্তাহিক শপিং এর জন্য গাড়ি করে শপিংমলে যাচ্ছিলেন।
হঠাৎ ড্রাইভার এক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে দিলে তিনি ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বললেন
-কি হলো গাড়ি থামালে কেন?
-ম্যাডাম সামনে মনে হয় একটা কুকুরকে কোনো গাড়ি মেরে দিয়ে চলে গেছে।কুকুরটা রাস্তার মাঝে পড়ে আছে।
জাকিয়া বেগম গাড়ি থেকে মাথা বের করে দেখলেন রাস্তার মাঝে ছোটখাটো একটা জটলা।
একটু ভালো করে তাকাতেই দেখলেন রাস্তার মাঝে একটা কুকুর রক্তাক্ত হয়ে কাতরাচ্ছে। পা থেকে রক্ত ঝড়ছে।কেউ কুকুরটার সাহায্য করছে না। সবাই বলাবলি করছে লাঠি দিয়ে গুতিয়ে নালায় ফেলে দিতে।সকলে কুকুরটাকে লাঠি দিয়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিল ঠিক তখনি শ্যামবর্ণের মায়াবতী একটা মেয়ে এসে কুকুরটাকে কোলে তুলে নিলো। তারপর মেয়েটা কুকুরটাকে রাস্তার অন্যপাশের ফার্মেসির দোকানের সামনে নিয়ে গেলো আর সেখানে নিয়ে গিয়ে কুকুরটার পা পরিষ্কার করে তাতে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।এরপর কুকুরটাকে পাশের পার্কে ছেড়ে দিয়ে মেয়েটা একটা চলন্ত লোকাল বাসে লাফ দিয়ে উঠে গেলো।
জাকিয়া বেগমের তখনি মেয়েটাকে মনে ধরে। কিন্তু কথা বলতে চেয়েও বলতে পারেননি মেয়েটা বাসে উঠে যাওয়ায়।
এর প্রায় দেড় মাস পর...
এক বৃষ্টির দুপুরে জাকিয়া বেগম অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন।
বৃষ্টির কারণে সামনে হয়তো জ্যাম লেগেছে যার কারণে তার গাড়ি এসে সেই পার্কের সামনে দাঁড়ালো যেখানে সেই মেয়েটা সেদিন কুকুরটাকে ছেড়েছিল।
গাড়ির গ্লাস নামিয়ে জাকিয়া বেগম বৃষ্টির ছিটা উপভোগ করতে চাইলেন আর তখনি তার চোখ পার্কের ভেতরে পড়লো।
একটা শ্যামবর্ণের মায়াবতী মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে তার সাথে কয়েকটা রাস্তার বাচ্চাও আছে।আর আছে সেদিনের সেই কুকুরটা।
জাকিয়া বেগম আরেকটু ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন এটা সেদিন সেই মেয়েটা।
মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে একটা খাবারের হোটেলে ঢুকলো।
মেয়েটার বাচ্চাসুলভ আচরণ আর অন্যদের প্রতি মায়া মমতা দেখে জাকিয়া বেগম মুগ্ধ হয়ে গেলেন।
আর ঠিক তখনি রোশান তার কাছে কানাডা থেকে কল করে। রোশানের কল পেয়ে জাকিয়া বেগমের মাথায় অন্যচিন্তা খেলে গেলো।রোশানের জন্য তিনি ঠিক এমন একটি মেয়েই খুঁজছিলেন।
হাতের মোবাইল বের করে জাকিয়া বেগম তাড়াতাড়ি মেয়েটার কয়েকটা ছবি তুলে নেন।এরপর নিজের সেক্রেটারিকে কলির ছবিগুলো পাঠিয়ে মেয়েটা এখন কোথায় আছে তা বললেন আর বললেন মেয়েটা সম্পর্কে সমস্ত খবরাখবর নিতে।
জাকিয়া বেগমের সেক্রেটারি প্রায় এক মাসের মত মেয়েটার পেছনে লোক লাগিয়ে খবর নেন।মেয়েটার নাম ইসরাত জাহান কলি।কলির পরিবার,ব্যাকগ্রাউন্ড, লেখাপড়া সবকিছু জাকিয়া বেগমের পছন্দ হয়।এখন তিনি শুধু কলির সাথে একটা নাটকীয় আলাপ করতে চান।
এর কিছুদিন পর কলি তার মামির সাথে শপিং এ গেলে জাকিয়া বেগম খবর নিয়ে নিজেও সেদিন শপিংমলে যান আর তখনি কলির মামির সাথে আলাপ করে তিনি জানান যে তার ছেলের জন্য মেয়ে দেখছেন।আর কলির মামিও তখন বলে তাদের ঘরের মেয়ের জন্যও ছেলে দেখা হচ্ছে।
বাস্, এরপর জাকিয়া বেগম চলে গেলেন কলির বাড়িতে আর আঙটি পড়িয়ে চলে এলেন।


৭.
কলির গায়ে হলুদ বেশ ধুমধামের সাথেই হলো।
আগামীকাল কলির বিয়ে।
রোশান আজ সকালেই দেশে এসেছে যেটা কলি কিছুক্ষণ আগে মাত্র জানতে পেরেছে।
আর মাত্র কয়েক ঘন্টারই বাকি। এরপর কলি এই বাড়ির সম্পদ থেকে অন্য বাড়ির সম্পদ হয়ে যাবে।
কলির খারাপ লাগছে কেমন যেন কান্না পাচ্ছে তার।রুমে এত লোক না থাকলে হয়তো সে কান্নায় করে দিতো। বাবা,মা, বোনের জন্য কেমন যেন তার মন খারাপ হচ্ছে।সেই সাথে একটা অজানা ভয় তার মনে দানা বাঁধছে। একটা অজানা ভয়। যএন সবকিছু পেয়েও হারিয়ে ফেলবে সে, এমন একটা ভয়।


সকালে কলি ঘুম থেকে উঠতেই তার মামি বেশ তাড়াহুড়ো শুরু করে দিলেন।
কলি তার মামির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো
-কি হলো এত তাড়া দিচ্ছো কেন?
-আজ না তোর বিয়ে?
-সে ত কোন রাতের বেলা।
-ত, কি হয়েছে? সাজগোজ করতে অনেক সময় লেগে যাবে যে। তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নে।তারপর তোকে সাজাতে আসবে।
কলি অবাক হলো তার মামির কথায়। বিয়ে কোন রাতের বেলায় আর তাকে নাকি এখন থেকেই সাজাতে আসবে।
যাই হোক কলি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।


দুজন মেকাপ আর্টিস্ট কলিকে সাজাতে ব্যস্ত।
তারা কলির মুখের উপর প্রলেপ এর উপর প্রলেপ লাগাচ্ছে।কলির খুব বিরক্ত লাগছে।
- আরে এত সাজানোর কি আছে?
কলি এবার মেকাপ আর্টিস্ট দের বললো
-মুখে এত প্রলেফ কেন লাগাচ্ছেন?
-নাহলে ম্যাডাম।আপনাকে ফর্সা লাগবেনা।আপনাকে ফর্সা করতে বলা হয়েছে আমাদেরকে।
কলি কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
সে মনে মনে বলতে লাগলো
-বউ হতে হলে কেন ফর্সা বানানো লাগবে? কালো মেয়েদেরকে কেন বউয়ের সাজ সাজানো হয় না?
কলি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
টানা তিনঘণ্টা পর কলিকে রেহায় দিলো তারা।
আয়নাতে নিজেকে নিজে দেখেই চমকে গেলো কলি।
নিজেকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে তার। মেকাপ করে তাকে ফর্সা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু কলির মনে হলো এই ফর্সা রঙ তার জন্য নয়।তার সেই শ্যামবর্ণেই তাকে অপরূপা লাগে।কলি একবার ভাবলো বাথরুমে গিয়ে মেকাপগুলো তুলে ফেলবে।কিন্তু এত টাকার মেকাপ এভাবে ত আর নষ্ট করা যায় না। তার উপর তার মামি যদি দেখতে পান যে সে এত হাজার টাকার মেকাপ নষ্ট করে ফেলেছে তবে কুরুক্ষেত্র বাঁধাবেন।
তাই এক প্রকার অনিচ্ছায় কলি তার উপরের নকল আবরণটা নিয়ে বসে রইলো।


৮.
বিয়ের আসরে গিয়ে কলি বসার কিছুক্ষণ পরই রোশান এসে পৌছালো সেখানে।
ছবিতে রোশানকে দেখে কলি যতটা না মুগ্ধ হয়েছিল বাস্তবে তার থেকেও বেশি মুগ্ধ হলো সে।
রোশানও একরাশ মুগ্ধটা নিয়ে তারদিকে তাকিয়ে রইলো।
কলির হঠাৎ মনে হলো
-আচ্ছা রোশান ত আমার এই মেকাপ করা রূপটা দেখে মুগ্ধটা প্রকাশ করলো।সে কি আমার ছবি দেখেছে? আমার শ্যামবর্ণ দেখে কি তার পছন্দ হয়েছে?
একপ্রকার দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে আটকে গেলো কলি।

ইতিমধ্যেই কাজী চলে এসে তাদের বিয়েটাও বেশ সুন্দরভাবে পড়িয়ে দিলেন।



আদভানি নিবাসের সামনে দাঁড়িয়ে কলি হা করে তাকিয়ে রইলো।
এত বড় রাজপ্রাসাদ সমতূল্য বাড়ি সে তার জীবনেও দেখেনি।
তার এভাবে হা করা মুখ দেখে রোশান কিছুটা হেসে পাশ থেকে বললো
-এখন থেকে এটা তোমারও বাড়ি।
রোশানের কথা শুনে কলি চোখ নামিয়ে নিলো।

জাকিয়া বেগম এসে কলিকে বরণ করে ঘরে ঢুকালেন।
কিছু মেয়ে এসে কলিকে তিনতলায় রোশানের ঘরে নিয়ে গেলো।
রুমে ঢুকেই কলি অবাক। পুরো ঘর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।বিছানার চারপাশে রজনীগন্ধার মালা সেই সাথে থোকায় থোকায় গোলাপ ত রয়েছে।
রুমটা কলির বেশ পছন্দ হয়েছে। তার রুম থেকেও বেশ বড় এটা।


খাটের মাঝে মাথায় ঘোমটা দিয়ে কলি বসে আছে। তার খুব গরম লাগছে।এত ভারী ভারী মেকাপ আর গয়না তার সহ্য হচ্ছিল না।তাই সে দ্রুত উঠে বাথরুমে চলে গেলো।
আয়নার দিকে তাকিয়ে শেষবার তার নকল রংটা দেখে নিলো। এরপর পানি দিয়ে ঘষে ঘষে সে হাত পা মুখের মেকাপগুলো তুলে ফেললো।
আর ধীরেধীরে তার শ্যামবর্ণের মায়াবী রূপটা বের হয়ে এলো।
এবার কলি কাজল নিয়ে চোখের নিচে গাঢ় করে কাজল দিলো।আর কপালে একটা লাল টিপ দিলো।আর এতেই তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মায়াবতী লাগছে।
কলি পুনরায় মাথায় ঘোমটা দিয়ে বিছানায় এসে বসলো।


রাত প্রায় বারোটার দিকে রোশানের বন্ধুরা তাকে ঠেলে রুমে ঢুকিয়ে দিলো।
রুমের মধ্যে হালকা আলো জ্বলছে। সেই আলোতেই রোশান দেখতে পেলো খাটের মধ্যে তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
রোশান আরেকটু সামনে এগিয়ে দরজা লাগিয়ে রুমের মাঝে এসে দাঁড়ালো।
কলি খাঁট থেকে নেমে গিয়ে রোশানকে সালাম করলো।
রোশান এবার রুমের আলো জ্বালিয়ে দিলো।
এরপর ধীরেধীরে সে কলির মুখের ঘোমটা সরালো।
ঘোমটা সরিয়ে কলির দিকে তাকাতেই রোশান চমকে গিয়ে পেছনে সরে গেলো।একরাশ বিষ্ময় আর কিছুটা রাগ নিয়ে রোশান তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামবর্ণের মেয়েটিকে বললো
-কে তুমি? এ ঘরে কি করছো? আমার স্ত্রী কলি কোথায়?



(চলবে)........


Writer:- 
Ashraf Tanvir

 

Delivered by FeedBurner

a