> কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৪
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৪


সাক্ষরের এমন উত্তরে কিনঞ্জল আহত দৃষ্টিতে সাক্ষরের দিকে দুপলক তাকিয়ে থেকে কেবল 'ওহ্' বলেই পাশ ফিরে শুতে যাচ্ছিলো।কিনঞ্জলের কেনো যানি বুক ফেটে কান্না আসছে।শেষমেশ সাক্ষর ভাইও ওকে আর সবার মতো ভুল বুঝল।ওনিতো কিনঞ্জলকে সবচাইতে বেশি বুঝতে পারত।এসব ভেবেই মনটা একদম বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো কিনঞ্জলের।
তবে কিনঞ্জল পাশ ফেরার সাথে সাথেই সাক্ষর বিছানা ছেড়ে উঠে বসল।সেই সাথে কিনঞ্জলকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
"পুরো কথাটা শুনে তারপর ঘুমাবি।তোরা মেয়েরা এমন অর্ধেক কথা শোনেই দৌড় দিস কেনো?শোন কিনঞ্জল,তুই ভার্জিন কি ভার্জিন নস এটা একান্তই তোর ব্যাপার।হ্যাঁ,স্বামী হিসেবে হয়ত এই ব্যাপারে জানার আমার পূর্ণ অধিকার আছে।তবে তুই যদি নিজে থেকে কিছু না বলিস আমি কিভাবে জানবো বল।আজকালকার নোংরা প্রেমগুলোতে যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকারা দু-মাসের মাথাতেই রুমডেট করে ফেলে সেখানে তুই কারো সাথে তিন বছরের রিলেশন করেছিস।কাজেই এই কথাটা আমাদের সমাজের নোংরা মানুষের ভাবনাতে আসাটাই স্বাভাবিক।আর তুই যেহেতু আমাকে নিজে থেকে কিছুই জানাসনি আমারো তোর ভার্জিনিটি নিয়ে মনে দ্বিধা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।তবে আমি রুমডেট করে নিজের সতীত্ব বিসর্জন দেওয়া একটা মেয়ের থেকে একজন প্রস্টিটিউটকে বেশি সম্মান করি।তারা নিজেদের পেটের জ্বালায়,বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যের বিছানায় যায় আর আজকালকার আল্ট্রা মর্ডান মেয়েরা যায় নিজেকে মর্ডান বা প্রেমিকের কাছে নিজের ভালোবাসার প্রমাণ দিতে।তবে সত্যি বলতে আমার মনে তোকে বা তোর সতীত্ব নিয়ে কোন দ্বিধাবোধ নেই।কেননা আমার চাচ্চুর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস আছে।সে নিজের সন্তানকে এমন শিক্ষা দেয়নি যে নিজের আর নিজের পরিবারের সম্মান হাটে বিকিয়ে দিয়ে আসবে।আর আমার নুহাশের প্রতিও বিশ্বাস আছে।ওর টেস্ট নিশ্চয়ই এতটাও খারাপ না!"
প্রথম কথাগুলো সাক্ষর সিরিয়াস হয়ে বললেও শেষের কথাটা বলে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল।কারণ সাক্ষর বেশ বুঝতে পারছে কিনঞ্জলকে আজকে কেউ এইসব বলে মনটা বিষিয়ে দিয়েছে।তা না হলে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন কিনঞ্জলের মনে আসার কথা না।তাই ওই ব্যাপারটা থেকে কিনঞ্জলকে বের করে আনার জন্য ইচ্ছে করেই শেষের কথাটা বলল সাক্ষর।আর হলোও তাই।শেষের কথাটা শুনেই কিনঞ্জল ফুঁসে ওঠল।গজগজ করে বলল,
"নুহাশের টেস্ট খারাপ না বলতে আপনি কি বুঝাতে চাইছেন সাক্ষর ভাই?আমি কি ফেলনা নাকি?"
সাক্ষর হাসি চেপে বলল,
"আমি সে কথা কখন বললাম?তুই নিজেই তো বলছিস যে তুই ফেলনা।"
কিনঞ্জল রেগে গিয়ে কি বলতে যেয়েও যেনো আবার কি ভেবে বলে বসল,
"আমার বাবা আমাকে সঠিক শিক্ষা দিলেও আমি বোধহয় সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারিনি সাক্ষর ভাই।নয়ত দেখুন,বাবা আমাকে বিশ্বাস করে কোচিং এ ভর্তি করে দিলো পড়াশোনা করার জন্য আর আমি পড়ার নাম করে স্কুল-কলেজে প্রেম করে বেরিয়েছি।আমার কপাল ভালো ছিলো এজন্য নুহাশ আমার জীবনে এসেছিলো ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো আমি সত্যি সত্যিই প্রস্টিটিউট এর খাতায় নাম লেখাতাম।নিজ ইচ্ছায় না হলেও ভালোবাসার দোহাই দিয়েই হয়ত কোন ভন্ড বারবার আমাকে ভোগ করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে যেতো।"
এইটুকু বলেই চোখের কোণের পানিটুকু মুছে ফেলল কিনঞ্জল।এই দেখে সাক্ষর কিনঞ্জলের দুই হাত ধরে টেনে ওর পাশাপাশি বসালো।সময়টা এখন হেমন্তের শেষের দিকে।রাতের গুড়িগুড়ি বৃষ্টিগুলো শীতকে আমন্ত্রণ জানাতে বড্ড ব্যাস্ত।এজন্য রাতের বেলা বেশ ঠান্ডা পরে।সাক্ষর নিজের কাঁথাটা দিয়েই কিনঞ্জলকে জড়িয়ে ধরল।আর বেশ ঠান্ডা স্বরেই বলতে লাগল,
"তুই ঠিক ছিলিস আমি এই কথাটা বলব না কিনঞ্জল।এক জীবনে আবেগে গা ভাসিয়ে আমরা সবাই কমবেশি ভুল করে থাকি।আমিও করেছি।তেমনি নুহাশও তোর এক জীবনে করা ভুল।তবে ওই ভুলটাই তোর জীবনে সাপে বর হয়ে আসতে পারত কিন্তু আসেনি।এটা ঠিক তুই চাচ্চুর বিশ্বাসের খুঁটিটাকে মর্যাদা রাখতে পারিস নি।কিন্তু এখন তো আর কেঁদে লাভ নেই।বরং তুই তোর বাবা-মায়ের জন্য এমন কিছু কর যাতে তুই আবার তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারিস।"
কিনঞ্জল কান্নামাখা গলায় বলল,
"কি করব আমি সাক্ষর ভাই?"
"প্রথমেই নিজের লক্ষ্য ঠিক কর।তারপর মন দিয়ে পড়াশোনা করে এইচএসসি তে ভালো রেজাল্ট পেয়ে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা কর।তারপর নিজের লক্ষ্যকে অর্জন কর।জানিসতো একজন বাবা-মার কাছে সন্তানের সাফল্যের চেয়ে আনন্দের আর কিছু হয় না।"
"বেশ!এখন থেকে আমি তাহলে তাই করব।তবে আপনি যে বললেন আপনিও আবেগের বসে কি যেনো একটা ভুল করেছিলেন।কি ভুল করেছিলেন?"
সাক্ষর এবার কিছুটা বিব্রতবোধ করল।মাথা চুলকে বলল,
"তেমন কিছু যা।ওটা যাস্ট একটা ওইক মোমেন্ট ছিলো আমার জন্য।"
কিনঞ্জল আগ্রহ নিয়ে বলল,
"সেটাই তো!আমাকে তো টিন এইজার,আবেগে ভাসি, ইমম্যাচিউর বলে খুব কথা শোনান।এখন নিজের ভুল স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছেন কেনো?
সাক্ষর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"ব্যাপারটা লজ্জা পাওয়া নিয়ে না।আমি আসলে তোকে বলতে চাইছি না।শুনলে হয়ত তুই ভুল বুঝতে পারিস।বলবি তোকে জ্ঞান দিয়ে নিজে কুকর্ম করে বেরিয়েছি।"
কিনঞ্জল এবার কিছুটা জেদ ধরেই বলল,
"এবার তো আমি শুনবোই।কি কুকর্ম করে বেরিয়েছেন এতদিন শুনি?"
কিনঞ্জলের কথায় সাক্ষর চোখ পাকিয়ে তাকাতেই কিনঞ্জল হাওয়াই মিঠাইয়ের মত মিইয়ে গেলো।আর সাক্ষর কিনঞ্জলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে কিছুটা দ্বিধা নিয়েই বলা শুরু করল,
"আমি লন্ডনে পড়াশোনা করার দরুন দীর্ঘ চার বছর ছিলাম এটা তো জানিস।আমার ব্যাচের এক মেয়ে ফ্রেন্ড শ্যেলী।প্রথম থেকেই আমাকে খুব পছন্দ করত শ্যেলী।তবে আমি ওকে কখনো বন্ধু ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখিনি।কি করেনি মেয়েটি আমার জন্য?বাংলা ভাষা শিখেছে,বড়লোক বাবার মেয়ে হয়েও আমার প্রিয় বাঙালি রান্না শিখেছে,আমি পছন্দ করতাম বলে ভার্সিটিতে ওয়েস্টার্ন ড্রেস ছেড়ে সালোয়ার-কামিজ পড়ে পর্যন্ত এসেছে।সবাই জোকার,ফ্যান্সি ড্রেস কম্পিটিশনে এসেছে আরও কত কি বলেছে তবুও শুধুমাত্র আমার ভালোলাগার সম্মান করত বলে রোজ কামিজ পড়েই ক্লাস করতে আসত।মিথ্যে বলব না ধীরে ধীরে আমারও ওর প্রতি একটা ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করে।কল্পনাতীত সুন্দরী ছিলো শ্যেলী।চোখ ধাধানো সৌন্দর্য ছিলো ওর।যেনো রুপকথা থেকে উঠে আসা বাস্তব রুপাঞ্জেল।হাটু সমান লম্বা ছিলো ওর লালচে সোনালী চুলগুলো।তবুও কেনো জানি ওকে আমি কখনোই ভালোবাসতে পারিনি অনূভুতিটুকু কেবল ভালোলাগাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো।সেবছর ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে আমার ফ্রেন্ড ড্যানিয়েল ওর বাসায় একটা পার্টির আয়োজন করেছিলো।স্বাভাবিকভাবেই সেখানে আমরা সব ফ্রেন্ডরা উপস্থিত হয়েছিলাম।তবে আমাকে চমকে দিয়ে সেদিন শ্যেলী গাঢ় শ্যাওলা রঙের একটা শাড়ি পরে পার্টিতে এসেছিলো।চুলগুলো খোপা করে তাতে দুটো সাদা গোলাপ গুজে দেওয়া,চোখে কাজল,কপালে কালো কুচকুচে ছোট একটা টিপ,দুহাত ভর্তি চুড়ি। জানিনা কোথায় থেকে জোগাড় করেছিলো সেসব।তবে এক মুহূর্তের জন্য আমি পুরো বাকশূন্য হয়ে গিয়েছিলাম।সেদিন প্রায় ঘটা করেই আমাকে প্রপোজ করে শ্যেলী।আর আমিও শেষমেশ রুপের মোহে পড়ে ভুলটা করে বসেছিলাম।নিজের অজান্তেই শ্যেলীর হাতদুটো আকড়ে ধরি।এতেই শ্যেলী আমার সম্মতি ভেবে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমিও ঘোরের মাঝেই আকড়ে ধরেছিলাম শ্যেলীকে।সব বন্ধুরা এই দেখে একসাথে জোড়ে জোড়ে হাত তালি দিচ্ছিলো কেউ শিষ বাজাচ্ছিলো।আর একসঙ্গে বলছিলো,
"কাম অন সাক্ষর,কিস হার!"
আর আমিও ঘোরের মাঝেই হুট করে শ্যেলীর গোলাপি ঠোঁটজোড়াতে নিজের ঠোঁটদুটো ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।"

(চলবে)

লিখা:~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি

 

Delivered by FeedBurner

a