Leave a message
> কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৩
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৩









দেখতে দেখতে সাক্ষর-কিনঞ্জলের বিবাহিত জীবনের কেটে গেছে প্রায় মাস তিনেক।এর মধ্যেই কিনঞ্জল সাক্ষরের হুমকি-ধমকির কবলে পরে আবার নিজের পড়াশোনা পুরোদমে শুরু করে দিয়েছে।সপ্তাহখানেক হলো কিনঞ্জলের প্রি-টেস্ট এক্সামও শেষ হয়ে গেছে।আর এইদিকে সাক্ষরও নিজের কাজে পুরোদমে লেগে গেছে।সাক্ষরের বাবা একটু অসুস্থ হয়ে পড়ায় সমস্ত ব্যাবসায়িক কাজ সাক্ষরকে একাই করতে হচ্ছে।খুব সম্ভবত সাক্ষরকে আগামী মাসের মধ্যেই ব্যাবসায়িক কাজের জন্য বেশ লম্বা সময়ের জন্য দেশের বাইরে যেতে হতে পারে।



.
.
ক্যান্টিনে বসে টিফিন বক্স থেকে মাছের কাটলেট বের করে মুখে তুলতে তুলতেই ক্লাসমেটদের সঙ্গে সহাস্যে আড্ডায় মেতে উঠেছে কিনঞ্জল।আড্ডার মূল বিষয় ক্লাসের জারা আর জারার বয়ফ্রেন্ড।বয়ফ্রেন্ডের সাথে জারা কোথায় কোথায় ঘুরে?জারার বয়ফ্রেন্ড জারাকে কি কি গিফট দিয়েছে?কতবার হাত ধরেছে?কতবার চুমু খেয়েছে এইসব জারা নিজেই বড় গলায় সবাইকে শোনাচ্ছিলো।তো এর মধ্যেই ক্লাসের সবচেয়ে ইঁচড়েপাকা আর ট্যাটন মেয়ে রুবাইয়া ফট করে বলে উঠল,

"এই এবার তোরা থাম!জারা-টারার কথা এবার বাদ।এবার আমাদের ক্লাসের আন্টি আর তার বরের গল্প শোনবো।"
জারা তার চিরস্বভাব অনুয়ায়ী নেকু স্বরে বলল,
"এই আন্টিটা আবারে কে রে রুবি?আমাদের কিনু বেবি নাকি?”
এই বলেই জারা আর রুবাইয়া দুজন একদম শরীর কাপিয়ে হাসতে লাগল।তবে বাকিরা ওদের এমন খোচামারা কথায় বেশ অসন্তোষ হলো।জারার মুখে কথাটা শুনতেই কিনঞ্জল ঠাস করে টিফিনবক্সটা অফ করে দিলো।সেইসাথে মুখের হাসিটাও ধীরে ধীরে মিইয়ে গেলো।কিনঞ্জল নিশ্চিত এবার তাকে রসিকতার ছলে জারা আর রুবি বেশ জোড় বেধে অপমান করবে।এই ভেবেই কিনঞ্জলের গলায় কান্না দলা পাকিয়ে আসছিলো।রুবাইয়া কিনঞ্জলের বাহুতে চিমটি মেরে বলে উঠল,
"তা কিনঞ্জল আন্টি,নুহাশ ভাইয়াকে ফেলে ওই তামিল হিরোটাকে পটালি কি করে?"
কিনঞ্জল ধীর গলায় বলল,
"আমাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।"
জারা কিছুটা আগ্রহ দেখিয়ে বলল,
"আমাদেরকেও একটু বল বর কি করে আদর করলো তোকে।শুধু আমার চুমুর কাহিনি শুনলেই হবে?"
কিনঞ্জল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
"তোরা একটু বেশি ভাবছিস জারা।আমাদের বিয়ে হলেও আমাদের মধ্যে এখনো তেমন কোন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি।"
রুবাইয়াহ ভেংচি কেটে বলল,
"ন্যাকা ষষ্ঠী,আজকাল মানুষ দুই-তিন মাসের রিলেশনে রুমডেট করে ফেলে আর ওর বর ওকে তিনমাস ধরে বিয়ে করে ঘরে সাজিয়ে রেখেছে।আমরা যেনো কিছু বুঝিনা।বললেই হয় বলবি না।"
কিনঞ্জল এবার হতাশ সুরেই বলল,
"তোরা যা ভেবে শান্তি পাস।আমি আর কি বলব?
রুবাইয়া কিনঞ্জলের এমন গা ছাড়া উত্তরে আবারো দ্বিগুণ উদ্যমে বলল,
"নুহাশের সঙ্গেও তো তোর তিনবছর রিলেশন ছিলো।সেও মনে হয় তোমাকে দিনে দুই বেলা ধুপধোনো দিয়ে সাজিয়ে রেখেছিলো।তুই কিন্তু একটা পাক্কা খিলাড়ি কিনঞ্জল।অমন হিরোদের মত দেখতে ছেলেগুলোকে কি সুন্দর হাত করে ফেলিস।তবে তোর বর টের পায়নি যে তুই ভার্জিন না।প্রথম রাতেই তো বুঝে যাওয়ার কথা।"
রুবাইয়ার কথায় টেবিলে বসা প্রায় সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে।কিনঞ্জলতো মাথা নিচু করে কান্নাই করে দিয়েছে।তবে তাতে জারা আর রুবাইয়ার তেমন হেলদোল হলো না।জারা আবারো ন্যেকু সুরে বলল,
"ফ্যামিলি প্লানিং করেছিস তোরা?পারিবারিক ভাবে যেসব বিয়ে হয় সব কাপলই তো একবছরের মাথায় বেবি নিয়ে নেয়।তোরাও কি তেমনটাই প্লান করেছিস নাকি?"
জারার কথায় ফোড়ন কেটে রুবাইয়া চোখ টিপে বলে উঠল,
"জারা বেবি,ভাব একবার আমরা যখন এইচএসসি দিয়ে ভার্সিটিতে এডমিশন দিবো তখন আমাদের কিনঞ্জল আন্টি ইয়া বড় পেট নিয়ে মেক্সি পরে এদিকসেদিক ঘুরঘুর করবে আর আমরা যখন ভার্সিটিতে ক্লাস করব তখন আমাদের কিনঞ্জল আন্টি বেবির ন্যাপি বদলাবে।হা...হা...হা!"
এই বলেই জারা আর রুবাইয়া একসাথে হেসে উঠল।
.
ওদের কথার পিঠে কিনঞ্জল আর কিছুই বলছে না।কেবল মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কান্নাই করতে লাগল।তবে পাশের টেবিলে বসা চৈতি এবার একদম বাজখাঁই কন্ঠে তেতে উঠল।ঠাসস করে বলেই ফেলল,
"তোর বোন ভার্জিন না বলে কি দুনিয়ার সব মেয়েই রুমডেট করে নিজের ভার্জিনিটি নষ্ট করে বসে আছে রুবাইয়া?নাকি সব ছেলেরা জারার বয়ফ্রেন্ডের মত সেক্স এডিকটেড।গার্লফ্রেন্ড বুকে হাত দিতে দিবে,কিস করতে দিবে তো তারপর গার্লফ্রেন্ডকে দামি গিফট দেবে।ক্লাসি ছেলেরা কখনো বিয়ের আগে জারার বয়ফ্রেন্ডের মত লুলামি করে না।আর আমাদের নুহাশ ভাইয়া যে কতটা অনেস্ট তা তো তুই নিজেও জানিস রুবাইয়া।ওড়না গলায় তুলে বুক দেখিয়ে নুহাশ ভাইয়াকে তো কম ফাঁদে ফেলতে চাসনি।কিন্তু আফসোস নুহাশ ভাইয়া ডাস্টবিনের দিকে ফিরে তাকালেও তোর দিকে ফিরে তাকায়নি।তাহলে ভাব তোর মত একটা ফাতরা মেয়ে যে কিনা নিজেই সব কিছু বিলিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি ছিলো তার দিকে পর্যন্ত ঘুরে তাকায়নি তাহলে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে কতটা সম্মান করত।ভাগ্যের পরিহাসে আজ কিনঞ্জলের অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে।আর নিজের বেবির ন্যাপি বদলানোতে তো আমি খারাপ কিছু দেখিনা।নাকি তোর বড়বোনের মত ন্যাপি বদলানোর ভয়ে কিনঞ্জলকেও এবোরশন করে ফেলতে বলছিস।ওহ স্যরি,স্যরি!তোর বোনের তো আবার বিয়ে হয়নি।বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুমডেট করে পেট বাধিয়েছিলো।তারপর বেবির ন্যাপি একা-একা চেইঞ্জ করতে হবে বলে ভয়েই তোর মাকে নিয়ে আমার বড় আপুর হসপিটালে গিয়ে এবোরশন করিয়ে নিয়েছে।তবে তুই চিন্তা করিস না রুবাইয়া।কিনঞ্জলের বেবি হলে ওর একা একা ন্যাপি চেইঞ্জ করতে হবে না।ওই যে কিনঞ্জলের তামিল হিরোর মত বর সেই কিনঞ্জলকে সব কাজে হেল্প করবে।আর
খুবতো কিনঞ্জলের বিয়ে হয়েছে বলে আন্টি আন্টি করছিস।তুই তো তোর মায়ের পেটে আরো বছর সতেরো আগেই এসেছিলি তারমানে বিয়েও হয়েছে আরো অনেক আগে।এখন তোর মাকে রাস্তায় দেখলে কি আমরা আন্টি না বলে দাদি বলে ডাকবো নাকি বুড়ি মা বলে?"

চৈতির কথা শুনেই রুবাইয়ার মুখটা ধপ করে নিভে গেলো।ওর বোনের ব্যাপারটা বাইরে তেমন কেউ জানে না।তবে চৈতি যে ব্যাপারটা জানে আর এই নিয়ে এমনভাবে খোচা দেবে রুবাইয়া ভাবতেও পারেনি।তাই রুবাইয়া আর জলঘোলা না করে জারাকে নিয়ে মানে মানে কেটে পড়ল।তবে যাওয়ার আগে চৈতির দিকে একটা আগুন ঝরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে ভুললোনা রুবাইয়া।চৈতি মেয়েটাই একরকম।একদম ঠোঁটকাটা স্বভাব যাকে বলে।মনে যা মুখেও তা।কলেজে কারো সাথেই তেমন মিশে না।একা একাই থাকে।আর কলেজের ট্রাস্টির মেয়ে বলে ওর সাথে কেউ লাগার সাহস পায় না।রুবাইয়া চলে যেতেই কিনঞ্জল এবার শব্দ করেই কেঁদে দিলো।চৈতি উঠে কিনঞ্জলের পাশে এসে বসে কিনঞ্জলের কাধে হাত রেখে বলল,
"তুই খুব আবেগী একটা মেয়ে কিনঞ্জল।একদম স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া টাইপ।তোকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বলছে আর তুই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিস?কষে কানের নিচে দুটো চড় দিতে পারলি না।এত ভ্যাবলি কেনো তুই?"
এই বলেই চৈতি চলে ওখান থেকে চলে গেলো।

রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মাত্রই বিছানায় গা-টা এলিয়ে দিয়েছে সাক্ষর।পাশেই কিনঞ্জল আধশোয়া হয়ে কি যেনো আপন মনেই ভেবে চলেছে।এই দেখে সাক্ষর ভ্রু কুঁচকে বলল,
"রাত বিরেতে না ঘুমিয়ে কি এত আকাশকুসুম ভাবছিস?"
কিনঞ্জল কোন ভণিতা ছাড়াই সাক্ষরকে জিজ্ঞেস করল,
"আচ্ছা সাক্ষর ভাই,আপনারও কি মনে হয় আমি ভার্জিন নই?নুহাশের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন আমি নিজের ভার্জিনিটি হারিয়েছি।"
প্রশ্নটা করেই সাক্ষরের দিকে উত্তরের আশায় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিনঞ্জল।এবার সাক্ষরও কোন ভনিতা ছাড়াই বলল,
"হ্যাঁ,মনে করি।মনে করাটাই তো স্বাভাবিক।"




(চলবে)




লিখা:~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি
 

Delivered by FeedBurner

a