ইফতির সাথে সপ্তাহ খানেক কথা হয় নাহ। হয় না বলতে একেবারেই হয় না। তিনি ঘুরতে গেছেন। বন্ধুদের সাথে খাগড়াছড়ি। ফোন বন্ধ করে ঘুরতেছে।
ঈদে বাড়ি এসে মহাবিপদে পড়েছি। আমার বাপ যে আমার সাথে এই লেভেলে দুই নম্বরী করবে আমি চিন্তাও করিনাই। বাড়িতে ঢুকে দেখি বিশাল আয়োজন। বাসায় চাচা, ফুফি, খালা খালু সব আসছে ঢাকা থেকে। আমাকে দেখেই এমন ভঙ্গিমা করলো যেনো আমি সদ্য ভূপতিত হয়েছি। সবার মাঝে একটা তাড়া লক্ষ করলাম। আমরা গ্রামে যাচ্ছি।
সব চাচাতো মামাতো খালাতো ভাই বোন একসাথে প্রচুর মজা করছি। আমি এদিকে সমানে ইফতি কে ফোন দিয়ে যাচ্ছি। কেমন যেনো অশুভ আভাস পাচ্ছি মনে।
বাসায় পৌছালাম সন্ধ্যায়। ঢাকা থেকে খুলনাতে ট্রেনে আসতে ব্যাপক সময় লাগে। ট্রেনে আসলে মজাও হয় খুব। যায় হোক, সেদিন খেয়েদেয়ে সবাই খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল হতেই তাকিয়ে দেখি আত্নীয় স্বজনে বাড়ি ভর্তি। আম্মুকে প্রশ্ন করলাম কাহিনী কি? আম্মু কিছু না বলে হালকা হেসে চলে গেলো। আমি ভাবছি। ভীষন ভাবছি।
ছোট ছোট ভাইবোন গুলো এমন ভাবে আনন্দ করছে যেনো বাড়িতে বিয়ে লেগেছে। অবশেষে আমি জানতে পারলাম বাড়িতে আসলেই বিয়ে লেগেছে তাও আবার আমার বিয়ে। মুহূর্তে সব অন্ধকার লাগতে লাগলো। ইফতি আমার ফোন তুলছে না, তার উপরে আমার নাকি বিয়ে, ছেলে কে তাও জানিনা।পরে ও আমাকে দোষ দিবে আমি ওকে ঠকিয়েছি সেটা বলে। ইফতি ছাড়া কাউকে বিয়ে করা অসম্ভব।
‘আমি বিয়ে করবোনা' বাবাকে কথাটা বলতেই বাবা হেসে ফেললেন। যেনো আমি মজার কোনো কৌতুক বলে ফেলেছি। আমি বললাম-‘বাবা ইয়ার্কি না মোটেও, আমি এখন বিয়ে টিয়ে করবোনা, আমি পারবোনা প্লিজ'। আব্বু বললেন-‘আমার বন্ধুর ছেলে, আরে মনে নেই ছোটবেলাই আমাদের বাসায় আসতো, তোর চুল ধরে ঘুরাতো,তুই তো তারে খুবই পছন্দ করতিস। আর ছেলেটাকে দেখেই আমার পছন্দ হয়ে গেছে। আপাতত পরিবার নিয়ে আকদ টা করিয়ে রাখি, পরে তোর বন্ধু বান্ধবদের ডেকে বড় করে আয়োজন করা যাবে। মা রে, তোর ভালোর জন্যই হচ্ছে যা হচ্ছে। তুই আর না করিস না, আমি কথা দিয়েছি সেই তোর ছোট্ট বেলা তেই। এটা ভাঙ্গা সম্ভব নাহ, আমার সম্মান তোর হাতে।আর তোর যদি কাউকে পছন্দ হয় আমার সাথে কথা বলা। তোর সুখের উপর কিছু নেই। কথা বলে ভালো মনে হলে বিয়ে বন্ধ করবো যা কথা দিলাম। 'এই হচ্ছে আমার কপাল! বাপ রাজি হবে আমি জানি কিন্তুু জামাই? ও হারামী তো ফোনই তুলছে নাহ। বাবাকে বললাম বাবা ও ঘুরতে গেছে, একসপ্তাহ আমার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। বাবা বললেন-‘ছেলেটা তোর সাথে ধোঁকাবাজি করেছে মা, ওরে বাদ দে, বিয়ের জন্যে রেডি হ। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না। '
শাড়ি পরে বসে আছি। কাঁদতে কাঁদে চোখ ফুলে গেছে। আমি নিশ্চিত যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে আমাকে দেখা মাত্র বুঝে যাবে আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না। ওদিকে বর এসেছে বর এসেছে রব উঠলো। আমি সমানে ইফতিকে মেসেজ ফোন দিয়ে যাচ্ছি। বার বার একই কথা-‘এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, একটু পরে আবার চেষ্টা করুন। 'আমার জীবনে বিয়ে নিয়ে কত সপ্ন ছিলো, ইফতি কে নিয়ে কত আশা, সব এভাবে শেষ হয়ে যাবে ভাবিনি। কাজীসাহেব এক ভাবে বিয়ে পড়িয়ে যাচ্ছে। আমি ইফতি আর আমার পুরোনো স্মৃতি গুলো মনে করে যাচ্ছি। আমাদের প্রথম দেখা, সেই চায়ের কাপ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আমার ইফতি ভাই আমাকে এভাবে ছাড়বে বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমিও যন্ত্রের মতো তিন বার কবুল বলে দিলাম। একটা কাগজে সই করে দিলাম। এখন আমি অন্য কারোর স্ত্রী। ইফতি আমার অতীত।
বাসর ঘরে বসে আছি। বড় করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি, শুধু আকদ হয়েছে। আমার মন-মস্তিস্ক সবই ইফতির কাছে। প্রচন্ড রাগে ফুসছি আবার কান্নাও পাচ্ছে। হুট করে কে যেনো বলে উঠলো-‘বড্ড গরম পড়েছে অর্পি বল? তুই এই শাড়ি পরে বসে আছিস কেনো যা বদলে নে। 'মনের ভুল? ইফতির গলা শুনলাম! ইফতি কোত্থেকে আসবে! আমি মাথা নিচু করে বসেই রইলাম। আবার সেই কন্ঠস্বর-‘কিরে ওঠ হাদারাম।'
চোখ তুলে উপরে চাইতেই মাথা ঘুরে উঠলো। ইফতি! ‘তু তু তুমি এখানে!'-আমার সচকিত প্রশ্নের উত্তরে ও বললো-‘কেনো অন্য কাউকে আশা করছিলি বুঝি? 'বলেই হাসতে শুরু করলো। আমি রেগেমেগে অস্থির। আমার ফোন কেনো ধরছিলো না, খবর কেনো দেইনি এসব প্রশ্ন করতেই বললো-‘আরে আঙ্কেল যখন বললেন তোকে বিয়ে করতে আমি মনে মনে একটু দমে গিয়েছিলাম। কোথায় আমি ভেবেছিলাম কেউ মানবে না আমাদের আর তখন আমি তোকে নিয়ে পালাবো। এত সহজে বিয়ে হলে বাচ্চা কাচ্চা দের বিয়ের গল্পে কি বলতাম বলতো? তাই একসপ্তাহ তোর সাথে যোগাযোগ রাখিনি। বাচ্চাদের গল্প বলা যাবে এখন। তো বল কেমন খেল দেখালাম? '
আমার রাগে অবস্থা খারাপ। মনে হচ্ছে পাশে রাখা গ্লাসটা দিয়ে মাথায় মারি। কিছু বললাম না। শুধু বললাম সরো,আমি ঘুমাবো। সে আমার হাত ধরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-‘একিরে, মানুষের নাকি গলায় টনসিল হয়, তোর দেখি চোখে! কি সর্বনাশ!'
আমি সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেললাম। সে আমার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গেলো। আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদ উঠেছে। আমি তার বুকে মাথা দিয়ে কাঁদছি।
আমার রাগে অবস্থা খারাপ। মনে হচ্ছে পাশে রাখা গ্লাসটা দিয়ে মাথায় মারি। কিছু বললাম না। শুধু বললাম সরো,আমি ঘুমাবো। সে আমার হাত ধরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-‘একিরে, মানুষের নাকি গলায় টনসিল হয়, তোর দেখি চোখে! কি সর্বনাশ!'
আমি সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেললাম। সে আমার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গেলো। আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদ উঠেছে। আমি তার বুকে মাথা দিয়ে কাঁদছি।
তার গলায় কবিতা -
তোমাকে ফেরাবে প্রেম, মাঝরাতে চোখের শিশির,
বুকের গহিন ক্ষত,
পোড়া চাঁদ তোমাকে ফেরাবে।
ভালোবাসা ডাক দেবে আশ্বিনের উদাসিন মেঘ,
তোমাকে ফেরাবে স্বপ্ন, পারিজাত, মাটির কুসুম।
বুকের গহিন ক্ষত,
পোড়া চাঁদ তোমাকে ফেরাবে।
ভালোবাসা ডাক দেবে আশ্বিনের উদাসিন মেঘ,
তোমাকে ফেরাবে স্বপ্ন, পারিজাত, মাটির কুসুম।