বড় আপার বিয়ের জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে।এই নিয়ে ডজন খানেক পাত্র দেখা হয়ে গেছে।দুইপক্ষ একসাথে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনা কোনোবারই।
হয় এই পক্ষ থেকে অসম্মতি নাহয় পাত্রপক্ষ থেকে।দুই পক্ষের অজুহাত খুবই নাজুক ধরনের।কেননা পাত্রী মাশাল্লাহ্ ফার্স্টক্লাস। তাই পাত্রী সম্পর্কে তাদের কোনো অভিযোগ উঠেনা। অভিযোগ বরাবরই পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে হয়।সমস্যা বাঁধায় হয় পাত্রের চাচী বা মামী বা খালা আর নাহয় আমার খালা বা ফুফু।
একবার যা সমস্যা হয়েছিল তা হলো পাত্রকে যেই চেয়ারে বসতে দেয়া হয়েছিল সেই চেয়ার ভেঙে গিয়েছিল।
না, না আপনারা যা ভাবছেন তা না।চেয়ার ভালোই মজবুত ছিল।ইয়ে মানে সমস্যা হচ্ছে গিয়ে সম্ভাব্য দুলাভাই এর ওজন একটু বেশি ছিল।
চেয়ার ভাঙছে সেটাও সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে গিয়ে পাত্রী মানে বড় আপা এত জোরে হাসি দিছিল।পুরা মজলিশ কাঁপিয়ে হাসি।
আমি বারবার চেষ্টা করেই যাচ্ছিলাম বড় আপার হাসি থামানোর, কিন্তু হায়!আপার হাসি থামে না। যত কম হাসতে বলি তত জোরে হাসে। (আমি নিজে অনেক কষ্টে হাসি আটকায় রেখেছিলাম)
বড় আপার হাসির অবস্থা দেখে পাত্রপক্ষ ভেবে নিল মেয়ে পাগল কিসিমের।
পাত্রপক্ষ রিজেক্ট করে যাওয়ার তিন দিনের মাথায়ও যখন আপার হাসি থামে না(থামলেও তা মিনিট পাঁচেক পরে আবার হাসির উদ্রেক হয়) তখন আমরাও ভেবেছিলাম আপা আসলেই পাগল হয়ে গেছে।
তিনদিন পর বড় আপার হাসি থামে পুরোপুরি। তখন আবার নতুন উদ্যোমে পাত্র সন্ধানের কাজ শুরু।অবশেষে সবকিছু ঠিক ঠাক হইলো। কনে দেখার দিন তারিখ সব ঠিকঠাক।
কথাবার্তা যখন পাকাপাকি হয়ে গেছে তখন ভরা মজলিসে অদ্ভুত এক শব্দ হয়। শুনশান নীরবতা কাজ করছে। সকলেই বুঝতে পেরেছে ইহা রাস্তায় টায়ার পাংচার হওয়ার শব্দ না বা বোমা ফোঁটার শব্দও না।ইহা পশ্চাৎদেশ হতে বায়ু নির্গমনের শব্দ।
এই পরিস্থিতে আপা কিভাবে চুপ করে না হেসে বসে আছে সেটাই আমাদের পরিবারের সবাই কে ভীষণভাবে ভাবাচ্ছে।
আমি আপার পাশেই দাঁড়িয়ে আছি।আপা হুশে আছে কিনা তা দেখার জন্য নাড়া দিতে গেলাম আর অমনি গগনবিদারী হাসি। সারা বাসা ঝনঝন করতেছে হাসিতে।
পাত্রপক্ষ পুরাই হতভম্ব হয়ে বসে আছে।আম্মা আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকাচ্ছে।মেজখালা দাঁত কিড়মিড় করছে,বড় চাচী ঠোঁট নাড়িয়ে বকা দিচ্ছে।
সর্বশেষ সংবাদ হচ্ছে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার জন্য দায়ী নিষ্পাপ আমি।
( সমাপ্ত )
লেখা: তানিয়া নাজনীন শোভা