নিজেদের সুবিধার জন্যই আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। কিন্তু, বাস্তবে একটু দূর থেকে নিজেকে খেয়াল করলে দেখবেন যে আপনিই যেন ব্যবহৃত হচ্ছেন!
সকালে উঠেই মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলেন কে কী করেছে, কোন কোন নোটিফিকেশন এসেছে। কিছুক্ষণ পর পর মোবাইলে তাকানো যে নতুন কোনো আপডেট এলো নাকি। ২ সেকেন্ড পর পর রিফ্রেশ করা এই চিন্তায় যে ১ সেকেন্ড আগে বন্ধ করায় যদি কোনো নোটিফিকেশন মিস যায়! এমনকি রাতে ঘুমই হচ্ছে না, হাত চলে গেলো মোবাইলের দিকে। রাত ৩ টা ৫৭ তে কারও জীবনে আপডেট দেয়ার মতো কিছু থাকার কথা না। কিন্তু, তখনও আপডেট দেখতে চোখ চলে যায় টাইমলাইনে। কোনো বিয়ের দাওয়াতে কিংবা রেস্তোরাঁয় গেলাম। সবাই বসে আছি, কিন্তু যে যার মোবাইলে বুঁদ হয়ে আছি। হয়তোবা পাশের মানুষটির সাথেই মোবাইলে চ্যাট করছি। অনেকে মজা করে হলেও হয়তোবা এটা করছেন।
ব্যাপারটা হচ্ছে, প্রতিদিন যে আমরা মোবাইল ফোনকে এত কিছু দিচ্ছি, কেন দিচ্ছি? কী দিচ্ছি? আমাদের সময়, আমাদের মনোযোগ। এই সময় আর মনোযোগ দিয়েই কিন্তু আমরা অন্যদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করি। আপনজনদের আরও বেশি আপন করি। এই সময় আর মনোযোগ দিয়েই আমরা কাজ করে অর্থ উপার্জন করি। এই সময় আর মনোযোগ হচ্ছে আমাদের জীবনের বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ মানুষের উপর করলে আমাদের সম্পর্ক ভালো হয়, আমরা মানসিকভাবে খুশি থাকি। এই বিনিয়োগ কাজে করলে আমরা টাকা আয় করি। কিন্তু, এই বিনিয়োগ মোবাইলে করলে আমরা কী পাচ্ছি?
আসলেই! প্রশ্ন করে দেখুন তো। আমরা মোবাইল ফোনে এত সময় দিয়ে কী করছি। হ্যাঁ, আপনি হয়তোবা ভালো কাজেই ব্যবহার করছেন। কিন্তু, প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে সময় দিচ্ছেন, তা দিয়ে কী পাচ্ছেন?
আমরা যখন মানুষকে খালি দিয়েই যাই, কিন্তু কিছুই ফেরত পাই না, তখন বলি যে মানুষটাকে শুধু শুধু আমাকে ব্যবহার করতে দিলাম। কাজে যখন পরিশ্রম করেই যাই, কিন্তু কিছু পাই না; তখন বলি যে খালি খালি মাগনা খাটলাম। এমনই যদি হয়, তাহলে মোবাইলে এত এত সময় বেশি দিয়ে কি আমরা নিজেদেরই ব্যবহার হতে দিচ্ছি না?
আপনি যত বেশি সময় কোনো অ্যাপে কাটাবেন, অ্যাপে বিজ্ঞাপন থাকলে অ্যাপ নির্মাতা আপনার সময় আর মনোযোগ থেকে টাকা আয় করছেন। হয় আপনি, ফোন ব্যবহার করে আপনার জানা দরকার এমন কিছু শিখবেন, নাহলে আপনার সময় ও মনোযোগ অন্য কেউ ব্যবহার করবে।
মোবাইল ফোনের নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে তো অনেক কথা হলো। মুদ্রার ওপিঠে আমরা যদি মোবাইলের দুর্দান্ত সব ব্যবহার গুলোর কথা ভুলে যাই তাহলে কিন্তু এই বেচারার প্রতি বেশ অবিচার করা হবে। মোবাইলের খারাপ দিকগুলোয় হারিয়ে না গিয়ে মোবাইল ফোনের ভালো দিকগুলোর নিয়ন্ত্রিত এবং সঠিক ব্যবহারই বরং আমাদের জন্য এনে দিতে পারে দারুণ কিছু।
অ্যাকাডেমিক পড়ালেখা থেকে শুরু করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি সবই কিন্তু সম্ভব হাতে থাকা মোবাইলটি ব্যবহার করেই। পাশাপাশি ইংরেজি শেখা থেকে শুরু করে প্রযুক্তি শিক্ষা কিংবা পরিবর্তনশীল এই বিশ্বের সাথে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট রাখার কাজটিও কিন্তু আমরা করি হাতে থাকা সেই মোবাইলটি দিয়েই৷ সত্যি বলতে মোবাইলের ভালো কাজের এই ফিরিস্তি ফুরাবার নয় কখনোই। তবে মোবাইল ব্যবহার করে শেখার আছে আমাদের আরও বহু কিছু। এখনো ইন্টারনেটের বিশাল এই জগতে এ ধরনের প্রয়োজনীয় কন্টেন্টের অভাব এখনও চোখে পড়ার মতো৷ তবে আশার কথা এই যে এ ধরনের প্রয়োজনীয় কন্টেন্টের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
মোবাইল ফোন কিন্তু খারাপ কিছু না। তবে, দিনশেষে মানুষ বলুন, পৃথিবী বলুন কিংবা ফোন বলুন, সবাই- সবকিছুই আপনার কাছ থেকে কিছু না কিছু চাচ্ছে। আপনি যা দিচ্ছেন তার বিনিময়ে কি আপনি সঠিক প্রতিদান পাচ্ছেন? ফোন আপনার সময় ও শ্রম যেভাবে ব্যবহার করছে, আপনিও কি ঠিক সেভাবে মোবাইল থেকে তথ্য, বিনোদন ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আদায় করে নিতে পারছেন? প্রশ্নগুলোর উত্তর যতো দ্রুত খুঁজে পাবো, আমাদের জন্য ঠিক ততোই মঙ্গল।
Writer:- Ayman Sadiq