> Bamsi Beyrek - বামসি বে - বেইরেক বে - তুর্কি - মুসলিম ও ইসলাম - উসমানী সাম্রাজ্য - কুরুলুস ওসমান
-->

Bamsi Beyrek - বামসি বে - বেইরেক বে - তুর্কি - মুসলিম ও ইসলাম - উসমানী সাম্রাজ্য - কুরুলুস ওসমান

বিঃদ্রঃ ইতিহাস থেকে বামসি এর ২ রকম জীবনী পাওয়া যায়।

উপনামঃ বেইরেক বে, বে বুরেক, বামসি আল্প, 
Bey Birye, Beğ Beyreg, 
Bey Beyrek, Bay Börek, Bağ Böğrek
অবস্থানঃ অঘুজ শাহজাদা, অঘুজ হান
পরিবারঃ বে-বুরে হান
স্ত্রীঃ বানু-চিচেক, হেলেনা
ছেলে - মেয়েঃ ১ ছেলে এবং ১ মেয়ে
আত্নীয়ঃ বে-বিচেন হান (চাচা এবং শশুর) 
কাযান হান (চাচাতো ভাই)
ধর্মঃ ইসলাম
জাতীয়তাঃ অঘুজ তুর্ক

তুর্কি মহাকাব্য “দেদেকুরকুত" এ উল্লেখ করা আছে যে যে একবার অঘুজ রাজকুমাররা সবাই কোথাও জড়ো হয়েছিলেন।

বামসি বেইরেক অঘুজ শাহজাদা বে-বুরে বে এর ছেলে ছিলো
বে-বুরে বের কোন সন্তান ছিলো না, এই জন্য তিনি সব সময় চিন্তা করতো যে তিনি মারা যাওয়ার পরে তার বসতি ধ্বংষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর  কাছে কান্না করা শুরু করতেন। তার এই অবস্থা দেখে অন্যান্য শাহজাদারা তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। তারপর বে-বুরে বে এর ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। 
বে-বুরে বে এর ভাই বে-বিচেনও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যে তার যেন একটি মেয়ে সন্তান হয় যাতে তিনি বে বুরের ছেলেের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে পারেন। তার কিছু দিন পর বে-বিচেন এর ঘরে একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন তার নাম রাখা হয় বানু-চিচেক।

বে-বুরে বে তার সন্তান এর কিছু মূল্যবান দ্রব্য ক্রয় করার জন্য তার কিছু সৈন্য কে কনস্টান্টিনোপল পাঠিয়ে দেয়।

সফর অনেক দূরের রাস্তা ছিলো তাই তাদের ফিরতে বছরের পর বছর লেগে যেত। সেই কাফেলায় যখন মূল্যবান দ্রব্য নিয়ে ফিরে আসতেছিলো তখন বে-বুরে বে এর বসতি থেকে কিছু দূরে তাদের কাফেলার উপরে ডাকাত রা হামলা করে। 

কিন্তু সেখানে এক যুবক দুইহাত দিয়ে তলোয়ার চালিয়ে সব ডাকাত কে মেরে ফেলে। সেই যুবক এর সাহসীকতা দেখে কাফেলা ওয়ালা তার প্রতি অনেক খুশি হয়। তারপর সেই যুবক কাফেলা ওয়ালা দের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বসতি তে চলে যায়।

এই কাফেলা যখন বে-বুরে বে এর বসতি গিয়ে যখন বেপুরে বে এর তাবুতে যায় তখন সেই যুবকও বে-বুরে বের সাথে বসে থাকতে দেখে তার হাতে চুমা দিতে শুরু করে। এরপর বে-বুরে বে বলে এটা কোন ধরনের নিয়ম যে বাবা বসে আছে আর তুমি তার সামনে তার ছেলের হাতে চুমা দিচ্ছো। তারপর কাফেলা ওয়ালারা কাফেলার উপরে হামলা হওয়ার পুরা ঘটনা বলে এবং বলে যে তার ছেলে কিভাবে ডাকাত দের সাথে লড়াই করে। তার বাবা তখন পর্যন্ত তার কোন নামই রাখেনি, সেই কাফেলা ওয়ালারা রক্ষার জন্য ডাকাত দের হত্যা করার কারণে তার ছেলে কে বামসি বেইরেক বলে ডাকা শুরু কর তারপর থেকে সেটাই তার নাম হয়ে যায়।

বামসি বেইরেক জানুবি কাফকার থেকে নিয়ে আনাতোলিয়া পর্যন্ত অনেক লড়াইয়ে অংশ গ্রহণ করে। তিনি দক্ষ্য যোদ্ধা, নরম দিল, আর মজাদার মানুষ ছিলেন। তার বিয়ে বে-বিচেন বে এর মেয়ে বানু-চিচেক এর সাথে হয়েছিলো।

বামসি বেইরেক বেইরেক বে-বিচেন বের মেয়ে বানু-চিচেক এর সাথে হঠাৎ একদিন সাক্ষাৎ করেন। বামসি বেইরেক, বানু-চিচেক কে একটি হরিণ শিকার করে দেন, তারপর তারা একসাথে কিছু সময় কাটায়, যার ফলে তারা উভয়ে একে অপরের সম্পর্কে আরো গভীর জানতে পারে। বামসি বেইরেক তাকে স্ত্রী হওয়ার প্রতীক হিসেবে একটি সোনার আংটি ও উপহার দেন। যখন বামসি বেরেক তার বাবার কাছে ফিরে গেলেন, তখন সে তাঁর বাবা কে তাঁর ইচ্ছার কথা বলে এবং অনেক প্রতিরোধ অতিক্রম করার পর, বানু-চিচেক কে, বামসি বেইরেক আনন্দের সাথে বিয়ে করেন।
বিয়ের রাতেই তাদের বসতিতে বাইজেন্টাইনরা হামলা হয় এবং বামসি বেইরাক কে অন্ধরকূপে বন্দী করা হয়। বামসি বেইরাক ১৬ বছর সেই অন্ধরকূপে বন্দী ছিলো। 

কিছু মানুষ বলে দূর্গের এক শাহজাদি দূর্গের টেকফুরের কন্যার তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। সেই দূর্গের টেকফুরের কন্যার নাম হেলেনা তার ভালোবাসায় বামসি বেইরাক গ্রেফতার হয়ে যায় এবং তাকে নিয়েই বামসি বেইরাক সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং পরে তাকে বিয়ে করেন।

বামসি বেইরাক এর মৃত্যুঃ

অঘুজদের দুটি শাখা Inner Oğuz ও Outer Oğuz এর মধ্যকার গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেই যুদ্ধে বামসি বেইরেক মারা গিয়ে ছিল সেই কাহিনী তুর্কি মহাকাব্য “দেদেকুরকুত” এ উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতি তিন বছর পরপর “সালুর কাযান হান” অঘুজদের উভয় শাখার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের তার তাঁবুতে আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে তাদের পছন্দমতো উপহারসামগ্রী Salur Kazan Han থেকে গ্রহণ করতেন।

কোনো এক বছর তিনি Outer Oğuz  আসার আগে 
Inner Oğuz-দের তার তাঁবুতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এতে করে Outer Oğuz-দের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা অপমানিত বোধ করেছিলেন ও তারা “সালুর কাযান হান” এর সাথে শত্রুভাব বজায় রাখার শপথ করেছিলেন।

বামসি বেইরেক ছিলেন Inner Oğuz-দের মধ্যকার লোক, অন্যদিকে তার স্ত্রী বানু-চিচেক ছিল Outer Oğuz-দের লোক। Outer Oğuz-দের নেতা ছিল তার চাচা এবং শশুর বে-বিচেন বে। তার মেয়ের জামাই বামসি বেইরেকের আনুগত্যের পরীক্ষা নিতে তাকে 
“সালুর কাযান হান” এর বিদ্রোহ করতে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু বামসি বেইরেক তার এই প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বে-বিচেন বে বামসি বেইরেককে হত্যা করেছিল।

পরবর্তীতে “সালুর কাযান হান” ও Inner Oğuz-রা বামসি বেইরেকের হত্যার প্রতিশোধ নিতে Outer Oğuz-দের মুখোমুখি হয়েছিল। যুদ্ধে “সালুর কাযান হান” বিদ্রোহী Outer Oğuz-দের নেতা বে-বিচেন বে কে হত্যা করেছিল। এতে ভীত হয়ে Outer Oğuz-দের অন্য সব বেরা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। “সালুর কাযান হান” তাদের ক্ষমা করে দেন, কিন্তু বিচেন বে এর বাড়ি-ঘর ও জায়গা-জমি পুড়িয়ে দেয়।

“সালুর কাযান হান” বামসি বেইরেক এর চাচা ভাই  ও সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন। এছাড়া তিনি অঘুজদের সেরা ৪ জন সুদর্শন পুরুষের একজন ছিলেন। তবে তিনি কিছুটা আবেগী হওয়ায় প্রায়ই অনেক অসঙ্গত কাজ করে ফেলতেন। তার ঘোড়ার নাম ছিল Dengibaz, মতান্তরে Bengibaz. তার ঘোড়ার গায়ের রং ছিল কালো মতান্তরে ধূসর বর্ণের।

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সত্যিকা অর্থে বামসি বেইরাকের সাথে আরতুগ্রুল গাজী কিংবা উসমান গাজীর কখনো দেখা হয় নাই কারন তাদের অনেক আগেই বামসি বেইরাক মারা যান। বামসি বেইরেক ছিল আরতুগ্রুল গাজী কিংবা উসমান গাজীর পূর্ব-পুরুষ।

অন্য দিকে থেকে বামসি বেইরেক সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া যায়ঃ

আনাতলিয়ায় গড়ে-ওঠা তুর্কি বেইলিক বা ছোট ছোট প্রশাসনগুলোর নেতাদের পাশাপাশি যে সকল তুর্কি বীরেরা আরতগ্রুল গাজীর ঝান্ডাতলে শরিক হয়ে তার উন্থান  জোরদার করেছেন, তাদের অন্যতম হলেন বামসি আল্প। তিনি ছিলেন আরতগ্রুল গাজীর খুব ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা। সেলজুক সাম্রাজ্যের পক্ষ হয়ে বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সবগুলো যুদ্ধেই তিনি আরতগ্রুল গাজীর বাহুতে শক্তি জোগান দিয়েছিলেন। তিনি না হলে অনেক যুদ্ধেই আরতগ্রুল গাজীর পা আটকে যেত।

বামসি আল্প ছিলেন 'তানজিম আল-উখুওয়াহ' দলের একজন সক্রিয় সদস্য। এ দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আরতুগরুল নিজেই। খ্রিষ্টানদের সাথে বিভিন্ন রণক্ষেত্রে লড়ার মধ্য দিয়েই তিনি এ দলটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উসমানি সাম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপনে এ দলটির যে অসামান্য অবদান ছিল, তা আমরা কজনই বা জানি? 

এ দলটি ছিল আরতুগরুল গাজির একটি বিশেষ ইউনিট। নতুন নতুন যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বও ছিল এই দলের। এ দলের দুর্দান্ত যোদ্ধারা রণক্ষেত্রে নৈপুণ্যের পরিচয় দিত। অসাধ্যকে সাধন করত। অজেয় দুর্গ জয় করে নিত। তারা  রীতিমতো ত্রাস হয়ে উঠেছিল বাইজেন্টাইনদের জন্য। 

আরতুগরুলের হাতে সুগুতে গড়ে উঠা সুগুতের ক্ষুদে রাজ্য ছাড়াও আনাতোলিয়ায় আরও কিছু তুর্কি বেইলিক বা ছোট ছোট প্রশাসন ছিল। এসব বেইলিকের পতিদের মধ্যে আবদুর রহমান আলপ,  তুরগুত আলপ, সামসা চাভুচ, কুনুর আলপ, আকজা কুজা ছিলেন উল্লেখযোগ্য। তারা সকলেই ছিলেন আরতুগরুলের সঙ্গী। আরতুগরুলই ছিলেন সকলের মধ্যমণি। 

১২৮৫/১২৮৬ খ্রিষ্টাব্দে, বাইজেন্টাইনদের শক্তিশালী ঘাঁটি কারাচা হিসার দুর্গটি জয় করতে যার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, তিনি ছিলেন বামসি আল্প। ১০ সদস্যের একটি দল নিয়ে তিনিই চুপিসারে দুর্গের দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন। প্রহরীদের হত্যা করে খুলে দিয়েছিলেন প্রধান ফটক। দুর্গের চূড়া থেকে বাইজেন্টাইনীয় ক্রুশের পতাকা সরিয়ে উড্ডীন করেছিলেন কায়ি পতাকা। 

আরতুগরুল গাজির ইনতেকালের পরও দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন বামসি আল্প। আরতুগরুলের ছেলে উসমান গাজির পাশেও ছিলেন। বেশ কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়মাল্য ছিনিয়ে এনে উসমানের হাতের মুঠোয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তার অবদানে মুগ্ধ হয়ে, তাকে উসমানি সাম্রাজ্যের একটি জায়গিরের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন উসমান। 

আনাতোলিয়ার সুগুতের আরতুগরুলের যে ক্ষুদে রাজ্য গড়ে উঠেছিল, এবং পরবর্তীকালে উসমানের হাতে যা সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল, তা এমনি এমনি হয়ে যায়নি। এর পেছনে রয়েছে অনেক তুর্কমেনি বীরের রক্তঝরা অবদান। তাদের অন্যতম ছিলেন ইতিহাস বিস্মৃত বীর আমাদের এই বামসি আল্প।


Writer:- Md Saymun Husain 

সহযোগিতায়:- Mahmudul Hasan
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner