ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় উমর রা. এর ন্যায়বিচার
ঘটনা ভয়াবহ, অভিযোগ এর থেকেও ভয়াবহ।
কাহিনি হলো, এক ব্যক্তি হুজাইল গোত্রের কয়েকজনকে তার বাসায় দাওয়াত দিয়েছিল। দাওয়াতে তারা গিয়েছিল ঠিকই, সাথে ছিল তাদের দাসীও।
অনেক সময়ই দেখা যায় যে অতিথিরাও গিয়ে রান্নাবান্নায় হাত লাগান, যথাসম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করেন। বনু হুজাইলের এই লোকেরাও সেই কাজই করলেন। এরই একপর্যায়ে জ্বালানী কাঠের দরকার পড়লে তারা তাদের সাথে আনা সেই দাসীকেই বাড়ির কর্তা অর্থাৎ যিনি দাওয়াত দিয়েছেন তার কাছ থেকে কাঠ আনতে পাঠালেন।
দাসী সরল মনে গেল ঠিকই, কিন্তু বাড়ির কর্তার মন ছিল কুটিল। তাই তিনি দাসীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে বসেন। মহিলাটি এতে রাজি না হলে তিনি জোরপূর্বক নিজের পাশবিক কামনা চরিতার্থ করতে যান।
মহিলার ভাগ্য ভাল ছিল, তাই কোনোরকমে সেই পশুর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হন। এরপর একটু দূরে গিয়ে একটা পাথর খুঁজে পেলেন। সেটাই সজোরে সেই লোকের দিকে ছুড়ে মারলেন। নরাধমের বুকে গিয়ে লাগল পাথরটা, সাথে সাথেই তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে গেল।
দাসী এবার ছুট লাগাল তার নিজের কর্তার কাছে, জানাল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ঘটনাই। অতিথিরা যে এমন এক পরিস্থিতিতে পড়বেন সেটা তারা চিন্তাও করেননি। কী করবেন তা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভেবে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, খলিফা উমরের রা. দ্বারস্থ হবেন, কেননা ন্যায়বিচারক হিসেবে তার খ্যাতি পুরো সাম্রাজ্য জুড়েই।
উমর রা. আসলেন। অভিযোগ এখানে দুটো; প্রথমত, একজন নারীর সম্ভ্রমহানির চেষ্টা, এবং দ্বিতীয়ত, একজনকে হত্যা করা হয়েছে।
খলিফা সবার বক্তব্য শুনলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে ধ্বস্তাধস্তির আলামত দেখে দাসী যে তার সম্ভ্রমহানির অভিযোগ এনেছেন সেই প্রমাণও পেলেন। এরপর সবকিছু ভেবে উমর রা. সেই নারীকে সসম্মানে হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেন, কেননা তিনি একজনকে হত্যা করেছেন ঠিকই, কিন্তু সেটা এমন পরিস্থিতিতে পড়ে যখন কিনা সেটা না করলে তার নিজেরই সম্ভ্রমহানি ঘটত। আর এমন পরিস্থিতিতে তাই ধর্ষকের এমন পরিণতিকেই উপযুক্ত হিসেবে সাব্যস্ত করলেন তিনি, যার জন্য দিতে হবে না কোনো দিয়াত বা রক্তমূল্য।
…
বই: উমর রা. (শেষ খণ্ড)
পৃষ্ঠা: ১০৬-০৭
মূল: ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি
অনুবাদ: কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
প্রকাশক: কালান্তর