> ফিরে পাওয়া - গল্প - Golpo - Bangla New Story
-->

ফিরে পাওয়া - গল্প - Golpo - Bangla New Story

আমি অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি আমার অফিসের কলিগ তানবীর ভাইয়ের ফোন আলাপটা ইগনোর করতে। কিন্তু তানবীর ভাই ফোনে এতোটাই জোরে কথা বলছিলো যে উনার সব কথাগুলো আমার কানে আসছিলো। কথার ধরণ দেখে বুঝতে পারলাম স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝামেলা চলছে। তানবীর ভাই ফোনটা রেগে দিয়ে যখন গোমড়ামুখে চেয়ারে বসে রইলেন তখন আমি হালকা গলা কেঁশে ভাইকে বললাম,
-- ভাই কোন সমস্যা হয়েছে কি?
তানবীর ভাই কতক্ষণ নিরব থেকে উত্তর দিলেন,
-" পিয়াস তোমার বিয়ে যেন কবে?"

আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম,
-- এখনো ভাইয়া তারিখ ঠিক হয় নি। তবে যতদূর সম্ভব  সামনের মাসেই হবে 
তানবীর ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
- "বড়ভাই হিসাবে একটা পরামর্শ দেই জীবনে বিয়ে করো না। বউ এসে সুখের জীবনটা তেজপাতা করে দিবে। আল্লাহর ৩০টা দিন কোন না কোন কিছু নিয়ে বউ তোমার সাথে ঝগড়া করবে।  আজ সকালে অফিসে আসার আগে একডজন মুরগীর ডিম কিনে বাসায় রেখে এসেছিলাম আর এখন বউ ফোন দিয়ে বলে, মুরগীর ডিম ছোট ছোট কেন। তুমিই বলো এই কথা শুনার পর মেজাজটা কার না খারাপ হবে?"

তানবীর ভাইয়ের কথা শুনে আমি মৃদু হেসে বললাম,
-- এমন কথা শুনে সবাই রেগে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি না রেগে বরং ভাবীকে ফাইজলামি করে বলতে পারতেন, এই ছোট ছোট ডিম পাড়তে মুরগীর কতখানি কষ্ট হয়েছে সেটা তুমি বুঝবে না। যদি তোমার কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয় তখন বুঝবে মুরগীর ডিম পরতে কতটা কষ্ট হয়।  
এই সামান্য কথাটা বললে ভাবী লজ্জা পেয়ে এমনিতেই ফোন রেখে দিতো। ডিম নিয়ে আপনার সাথে ঝগড়া করতো না।  

তানবীর ভাই আমার কথাগুলো শুনে একমনে কি যেন ভাবতে লাগলো। আমি তখন ভাইকে বললাম,
-- ভাই, আপনি ভাবীকে শেষবার কবে বলেছেন, আমি তোমায় ভালোবাসি ?

তানবীর ভাই হেসে বললো,
-"দূর মিয়া, নিজের বউকে ভালোবাসি বলার কি আছে?"

আমি তখন তানবীর ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে বললাম,
-- আমরা ছেলেরা এইখানেই সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলি। একটা মেয়ে যখন প্রেমিকা থাকে তখন প্রেমিক ছেলেটা দিনে হাজারবার মেয়েটাকে বলে ভালোবাসি ভালোবাসি অথচ সেই মেয়েটা যখন ছেলেটার বউ হয় তখন বছরের পর বছর চলে গেলেও ছেলেটা একবারের জন্য বলে না ভালোবাসি।
প্রেমিকা রাগ করলে ছেলেটা রাগ ভাঙালোর জন্য প্রেমিকার পছন্দের চকলেট কিনে আনে অথচ সেই মেয়েটাই বিয়ের পর রাগ করলে ছেলেটা তখন বিরক্ত হয়ে  বলে, "এতো ঢং করো কেন?"
মাঝরাতে ফোনে কথা বলা অবস্থায়  প্রেমিকা যখন একটু কাঁশি দেয় তখন প্রেমিক ছেলেটা ঔষধ কিনে এনে প্রেমিকার বেলকনির সামনে হাজির হয়। অথচ প্রেমিকা বউ হবার পর ১০৪ ডিগ্রি জ্বরে যখন বিছানার একপাশে কাতরাতে থাকে তখন অপর পাশে শুয়ে থাকা ছেলেটা তাকিয়েও দেখে না।
ছেলেরা কেন এমন করে বলতে পারেন ভাই?

তানবীর ভাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 
-"কেন?"
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- প্রেমিকা হারানোর ভয় থাকে কিন্তু বউ হারানোর ভয় থাকে না বলেই বউকে কখনো ভালোবাসি শব্দটা বলা হয়ে উঠে না

তানবীর ভাই মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আমি তখন ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বললাম,
-- আজ বাসায় স্বামী হয়ে না বরং প্রেমিক হয়ে ফিরে যাবেন

কথাগুলো বলে আমি আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।  বিকাল ৪টার দিকে হাতের কাজ গুলো শেষ করে অফিস রুমের একটা কোণায় এসে দাঁড়ালাম সিগারেট খাওয়ার জন্য। এমন সময় আমার আরেক কলিগ খালিদ ভাই আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। আমি উনার দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিলে উনি বললেন,
-"বউয়ের চাপে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি"
আমি হেসে বললাম,
-- দেখলেন ভাবী আপনায় কত ভালোবাসে? ভাবী আপনাকে নিয়ে শত বছর বেঁচে থাকতে চায়।  তাই তো আপনার বদ অভ্যাস ত্যাগ করালো 

খালিদ ভাই মুখটা গোমড়া করে বললো,
-" আমায় ভালোবাসে নাকি আমার টাকা পয়সা ভালোবাসে আল্লাহ জানে "

আমি অবাক হয়ে বললাম,
--মানে!
খালিদ ভাই তখন বললো,
-"পিয়াস, তানবীর সাহেবকে তোমার বলা সবগুলো কথায়  আমি শুনেছি। তোমার বলা সবগুলো কথা কিন্তু ঠিক না। কিছু বউ আছে যাদের অল্পতে মন ভরে না। আমার বউয়ের সবসময় এটা চাই ওটা চাই। এই যে এত দামী দামী জিনিস কিনে দেই তবুও বউয়ের মন পাই না"
-- খালিদ ভাই, আপনারা প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন তাই না?
খালিদ ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
-" হ্যাঁ রে ভাই। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আজ প্রেম করে বিয়ে না করলে বউ আমার কথায় উঠতো আর বসতো।"

আমি খালিদ ভাইকে বললাম,
-- ভাই, শেষবার ভাবীকে কবে একটা গোলাপ কিনে দিয়েছিলেন?
খালিদ ভাই আমার কথা শুনে মাথা চুলকাতে লাগলো। আমি তখন বললাম,
-- শেষবার কবে ভাবীর রূপের প্রশংসা করেছিলেন? কিংবা আজ সকালে  যখন অফিসে এসেছিলেন তখন ভাবী কি রঙের জামা পরেছিলো সেটা কি আপনার মনে আছে? 

খালিদ ভাই চুপকরে কি যে ভাবতে লাগলেন। আমি তখন হেসে বললাম,
-- ভাই শুনেছিলাম আপনাদের  বিয়ের আগে যতবার ভাবী আপনার সাথে দেখা করেছে আপনি ততবারই ডায়েরিতে লিখে রাখতেন ভাবী কি রঙের জামা পরেছিলো কিভাবে সেজেছিলো। আর বিয়ের পর ভাবীর দিকে কোনদিন হয়তো ভালো করে তাকিয়েও দেখেন নি।  

আমি শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটের আগুনটা নিভাবে নিভাবে খালিদ ভাইকে বললাম,
-- তানবীর ভাইয়ের মতো আপনাকেও বলছি। আজ বাসায় ফিরে যাবেন প্রেমিক হয়ে স্বামী হয়ে না। ভাবী যদি আপনাকে ঠিকমতো কাছে পায় তাহলে পৃথিবীর কোন ঐশ্বর্যের প্রতি ভাবীর লোভ হবে না....
----
-------

কলিংবেল বাজাতেই মালিহা দরজা খুলে তানবীরকে বললো, 
~"সকালে যে ডিম দিয়েই চলে গেলে বাসায় যে চাল নেই সেটা কি তোমার মনে ছিলো না? চাল নেই তাই রান্নাও করি নি"
তানবীর হেসে বললো,
-" সমস্যা নেই ঝালমুড়ি খেয়ে দুইজনে রাত পার করে দিবো "

মালিহা রেগে বললো,
~"একদম ঢং করবা না।  বাল্ব এনেছো? 
তানবীর অবাক হয়ে বললো,
-"কিসের বাল্ব?"
মালিহা আরো রেগে গিয়ে বললো, 
-"সকালে না বলে দিলাম বেডরুমের বাল্বটা নষ্ট হয়ে গেছে। একটা নতুন বাল্ব আনতে"
তানবীর আবারও হেসে বললো,
-" কৃত্রিম আলোর দরকার কি। ঘর তোমার রুপের আলোতে এমনিতেই আলোকিত থাকবে "

মালিহা অবাক চোখে তানবীরের দিকে তাকিয়ে বললো,
~"তুমি কি আজকাল নেশা করা শুরু করেছো? কি সব উল্টো পাল্টা বলছো"

এইকথা বলে মালিহা যখন চলে যাবে তখন পিছন থেকে তানবীর ওর হাতটা চেপে ধরে বললো, 
~" মালিহা,  আমি তোমায় ভালোবাসি "
---
--------

ফুলটা হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় অর্পিতা খালিদকে বললো,
~"আজতো আমার জন্মদিনও না  বিবাহ বার্ষিকও না।  হঠাৎ ফুল দিলে যে?"

খালিদ হেসে তখন বললো,
-" আমি চিন্তা করে দেখলাম এখন থেকে প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় তোমার জন্য একটা করে গোলাপ কিনে আনবো।"

অর্পিতা তখন বললো,
~" সোনার একজোড়া কানের দুল চেয়েছিলাম বলে তুমি এই অভিনয় শুরু করে দিলে নাকি "
খালিদ তখন বললো,
-" তুমি কি সোনার দুল চাও নাকি আমৃত্যু পর্যন্ত আমার থেকে প্রতিদিন একটা করে গোলাপ চাও?"
চোখের জলটা লুকিয়ে অর্পিতা উত্তর দিলো,
~"একদিন ফুল আনতে মিস করলে তখন কিন্তু হীরার নেকলেস চাইবো বলে দিলাম "

খালিদ মুচকি হেসে বললো,
- "বিয়ের আগেও তুমি সালোয়ার কামিজ পরতে আর এখন বিয়ের পরও সালোয়ার কামিজ পরো। এখন থেকে সপ্তাহে দুইবার হলেও আমার জন্য শাড়ি পরবে কেমন। আর এখন তৈরি হয়ে নাও গলির মোড়ে দেখে আসলাম একটা ফুসকার দোকান।  চলো তুমি আমি আজ ফুচকা খাবো 

খালিদের কথা শুনে অর্পিতা অবাক হয়ে বললো,
~"তোমার শরীরে কি জ্বর এসেছে?" 
-" ছুঁয়ে দেখো"
অর্পিতা ছুঁয়ে দেখার জন্য যখন খালিদের হাতটা ধরলো তখন খালিদ অর্পিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
-" অর্পিতা,  আমি তোমায় ভালোবাসি.....  
---
--------

নিচে নেমে শ্রাবণী কিছুটা রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~" তোমার সমস্যাটা কি?  কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ে আর তুমি এখনি আমাদের বাসার সামনে শুধু ঘুরঘুর করো।  বাবা মা মনে মনে কি ভাববে বলো তো"

আমি বক্সটা শ্রাবণীর হাতে দিয়ে বললাম,
-- আমাদের আফিসের সামনে খুব ভালো হালিম বানায়।  তুমি তো হালিম পছন্দ করো তাই তোমার জন্য নিয়ে এলাম 

বক্সটা নিয়ে মুচকি হেসে শ্রাবণী যখন চলে যাচ্ছিলো আমি তখন পিছন থেকে ওকে বললাম,
-- শ্রাবণী, আমি তোমায় ভালোবাসি.....
|
|
তানবীর মালিহার কাঁধে হাত রেখে বললো,
-"কি হলো?"
মালিহা লজ্জা পেয়ে বললো 
~"ঝালমুড়িতে খুব ঝাল দিয়েছে তাই চোখ দিয়ে পানি পরছে"

খালিদ অর্পিতার হাতটা ধরে বললো,
-" কি হয়ছে?"
অর্পিতা  মাথা নিচু করে বললো,
~"আর বলো না, ফুচকার টক'টা কেমন জানি। খেয়ে চোখে মুখে জল এসে গেছে"

মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো,
-"কিরে কি হয়েছে?"
শ্রাবণী চোখের জলটা মুছতে মুছতে বললো,
~"হালিমটা খুব গরম মা। মুখে দেওয়ার সাথে সাথে জিভটা পুড়ে গেছে"



Writer:- আবুল বাশার পিয়াস
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner