> বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ৪১, ৪২ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story - Love Story Bangla
-->

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ৪১, ৪২ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story - Love Story Bangla

প্রায় অনেক সময় ধরে আলআবি ভাইয়া আমাকে তার কোলে নিয়ে হাঁটছেন।৩৭ মিনিট ধরে আমাকে নিয়ে হাঁটছেন তিনি।চারপাশে অন্ধকারও নেমে এসেছে।আলআবি ভাইয়ার ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট দিয়ে আমরা পথ চলছি।এক হাতে তার গলা আঁকড়ে ধরেছি আর আরেক হাতে ফোন টা ধরে রেখেছি। তার যে কষ্ট হচ্ছে আমাকে নিয়ে হাটতে, তা আমি ঠিক বুঝতে পারছি।হালকা শীতল আবহাওয়াতেও তিনি ঘেমে গিয়েছেন।তাই আমি নিজে থেকে ই এবার একটু নড়েচড়ে উঠলাম আর বললাম,,, 

--আমাকে এখন নামিয়ে দিন।আমি হাঁটতে পারবো। 

তিনি একটু থেমে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,, 

--এখন তোমাকে নামনোর মুড নেই।

তার দিকে তাকাতেই দেখি উনি একটা বিটকেল মার্কা হাসি হেসে আবার পথ চলতে শুরু করেছেন।আমি আবার বললাম,,, 

--আপনার তো কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ নামিয়ে দিন।

উনি হাঁটতে হাঁটতে ই বললেন,,, 

--আমি এক কথা দুবার বলি না।

আমি আবার কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে আমাকে বলতে না দিয়ে তিনি আবার বললেন,,, 

--তুমি যদি আমাকে বোকা ভেবে থাকো তাহলে ইউ আর এ্যাবসল্যুটলী রং।

তার কথার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত কিছুই আমার বোধগম্য হলো না। হালকা কপাল কুঁচকে তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললাম,,, 

--মানে? পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি?

আলআবি ভাইয়া আগের মত পথ চলতে চলতে বললেন,,,

-- আজকে সকালের অভিনয়টা তুমি দারুন করেছ। তবে কি জানো তো? মার কাছে মামা বাড়ির গল্প করা যতটা বোকামির কাজ তুমি তার থেকে বেশি বোকামির কাজ করেছ।

তার কথায় এবার আমার টনক নড়ে উঠলো। মাথায় শুধু একটা কথা ই ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হলো উনি কি আমার সকালের করা অভিনয়টা ধরে ফেলেছেন?আমার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে উনি আবার বলে উঠলেন,,, 

--তোমার কি মনে হয় যার প্রতিটা নিঃশ্বাস এর খবর আমি রাখি তার "জান","বাবুর" খবর আমি রাখব না?সকালে তুমি যে কোন জান,বাবুর সাথে কথা বলছিলে তা আমার জানা আছে। আমি তো যাস্ট চেক করছিলাম তোমার অ্যাক্টিং স্কিল কেমন?

কথাগুলো শুনে আমি কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। আমি যে এভাবে ধরা খেয়ে যাব তা কল্পনাতো দূরে থাক বাস্তবেও ভাবিনি।আর এই কানা ব্যাটা যে এতো চালাক তাও ভাবতে পারি নি।চোখে চশমা পড়ে নাহয় বেশি দেখে, তা তো বুঝলাম। কিন্ত বেশি বোঝার জন্য মস্তিষকেরও কি কোনো চশমা আছে নাকি তার?আমার সব আজগুবি চিন্তাভাবনার অবসান ঘটিয়ে আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললাম,,, 

--কিক...কিসের অ্যাক্টিং।আর কিসের স্কিল? 

--সকালে তোমার ফোনে বিনা রিং এই তুমি বুঝে গেলে তোমাকে তোমার জান কল করছে?আবার বিনা কলেই তুমি তোমার জানের সাথে কথাও বলে ফেললে?বাহ্।এই না হলো আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনী?(আলআবি ভাইয়া)

--দেখুন যা বলবেন সোজাসাপটা ভাবে বলুন।(আমি) 

--আচ্ছা সোজাসাপটা ভাবে ই বলছি।তুমি যখন সকালে আমাকে জেলাস ফিল করার জন্য ফোনে বাবু সোনা,বাবু সোনা করে যাচ্ছিলে তখন তোমার ফোনের স্ক্রীনে সুন্দর করে তোমার ওয়ালপেপার টা ভেসে উঠছিল। তোমার কানে ফোন ধরা ছিল বলে আড়াআড়িভাবে অর্ধেকটা দেখতে পেরেছিলাম। আর আমাকে দেখেই তুমি যেভাবে রকেটের গতিতে ফোনটা কানে চেপে ধরেছিলে তাতে পিচ্চি অন্তুও বুঝে যেত তুমি যে অভিনয় করছিলে।(আলআবি ভাইয়া)

আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।ফোনে কথা বললেও কেউ যে অর্ধেক স্ক্রীন দেখতে পায় তা আমার এই জন্মে জানা ছিল না।এবার বুঝলাম তার চশমা পরার স্বার্থকতা কোথায়।কিন্তু আমার যে হাঁটে হাঁড়ি ভেঙে গেল তাতে এখন কেমন যেন লজ্জা লাগছে।চোর চুরি করে ধরা খেলে প্রথম প্রথম একটু লজ্জা পায়ই।এটা স্বাভাবিক। আমিও মিথ্যে অভিনয় করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। তাই আমার ও লজ্জা করবে। এটাই স্বাভাবিক।লজ্জার সঙ্গে যখন লড়াই করছিলাম ঠিক তখন আলআবি ভাইয়া বলতে লাগলেন,,,

--আর কখনো আমাকে জেলাস ফিল করানোর মতো ভুল কাজটা করতে যাবে না।তোমাকে যদি অন্য কেউ ভালোবেসে থাকে তাহলে আমি কখনোই হিংসায় বশিভূত হয়ে উল্টো পাল্টা কাজ একদম ই করব না।জেলাসি থেকেই একপর্যায়ে গিয়ে বড় ধরনের একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যায়। এটা তো আমার সৌভাগ্য যে তোমাকে অন্যরাও ভালোবাসে।সবাই একটা ভালো ব্যাক্তিত্বের সত্তাকেই সবসময় ভালোবেসে থাকে।এখানে তো হিংসের কিছু নেই।আর যদি তোমার রূপটাকেই কেবল ভালোবাসে তাহলে সেটাও আমার ই সৌভাগ্য। কারণ আমার
#বর্ষণ_সঙ্গিনী এতই রূপবতি যার রূপ প্রত্যেকেই দেখে বলবে সুবহানাল্লাহ।

এতোক্ষণ আমি তার কথা মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। কিন্তু এখন তার দিকে আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি।আবারও নতুন করে তার চিন্তা ধারার প্রেমে পরতে ইচ্ছে করছে।আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আনমনে ই অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলাম,,, 

--এটা আমারও সৌভাগ্য যে আপনার মতো একজনকে আমি ভালোবাসতে পেরেছি। 

আমি কি বলেছি তা বুঝতেই হুট করে আলআবি ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি দিতে ই দেখি তার ঠোঁটের কোণে তৃপ্তিময় এক হাসি খেলা করছে।হাসছেন তিনি কিন্তু মনে হচ্ছে তৃপ্তি পাচ্ছে আমার হৃদয়। 

হঠাৎ করেই আমাদের সাথে চারজন মধ্যবয়স্ক লোকের সাথে দেখা হয়ে গেল।তাদের দুজনের মাথায় গাছের মোটা মোটা ডালের গোছা রয়েছে। আমরা যেই পথ ধরে যাচ্ছিলাম তারা সেই পথেরই ডান দিকে বসে বসে হারিকেনের আলোতে,তাদের ডালের গোছা সামলাচ্ছিলেন।আমরা সকলে মুখোমুখি হতেই লোকগুলো বলে উঠলো,,, 

-- এই কেডা!কেডা এইহানে এইসময়ে!

লোক গুলোকে দেখে আমি নড়েচড়ে আলআবি ভাইয়ার কোল থেকে নেমে পড়লাম। তিনিও এত সময় আমাকে কোলে রেখেছিলেন বলে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলেন। আলআবি ভাইয়া লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,

--আসসালামু আলাইকুম চাচা! আসলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি।আমাদেরকে যদি একটু সাহায্য করতেন তাহলে উপকার হতো।

চারজনের মধ্যে থেকে একজন লোক সালামের উত্তর দিয়ে আমাদেরকে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। আমরা কিভাবে এখানে আসলাম? কোথা থেকে এসেছি? কোথায় যাব? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করতে লাগলেন। প্রশ্ন শেষে যখন বুঝতে পারলেন আসলেই আমরা বিপদে পড়েছি তখন তারা বললেন,,,

--আপনাগো তো এহন সাহাইয্য করতে পারুম না।এইহান থিকা বাইর হওনের রাস্তা তো একখানই আছে।আর এইহান থিকা তো দূরও মেলা!যাইতে হইলে আরও ঘন্টা তিনেকের মতো লাগব।তয় সেইহানে যাইতে যাইতে তো গাড়ি ঘোড়া কিছু পাইবেন না।

--তাহলে এখন আমরা কি করতে পারি?(আলআবি ভাইয়া) 

--এই সামনেই আমাগো একখান পাড়া আছে।রাইতটা আমাগো লগে থাইকা যান।সকালে একখান ব্যবস্থা হইবোই।যদি আপনাগো মর্জি থাহে আরকি।

--আচ্ছা আপনাদের পাড়ায় গেলে কি একটু ফোনে কথা বলতে পারবো?মানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে? (আলআবি ভাইয়া)

--হয়,তা কইতে পারবেন। 

এই মুহূর্তে একটা ভরসা পেয়ে আমরা তাদের সাথে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেই একজন বলে উঠলেন,,,

-- কিন্তু এই মাইয়াডা কেডা আপনার লগে? আপনাগো দুইজনের মইধ্যে সম্পর্ক কি?

আলআবি ভাইয়া আমাকে দেখিয়ে বললেন,,, 

--সে আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনী।

--কি!এইডা আবার কোন সম্পর্ক?

আলআবি ভাইয়া আর লোকটার কথায় আমার খুব হাসি পেলো।কিন্তু এই হাসি ক্ষণস্থায়ী হলো না। কারণ আলআবি ভাইয়া তখন হুট করে বললেন,,,

--সে আমার বাচ্চার মা।

তার মুখ থেকে এরূপ কথাবার্তা শুনে তার দিকে আমি বিস্ফোরিত নয়নে তাকালাম। উনি আমার দিকে একটা শয়তান রুপি হাসি ছুড়ে মারলেন। আমি যখন কিছু বলতে যাবো তার আগেই আলআবি ভাইয়া লোকগুলোর সামনেই আমাকে আবার কোলে তুলে নিলেন। আলআবি ভাইয়ার নির্লজ্জ স্বরূপ কাজ কারবারে আমাদের সামনে থাকা লোক গুলো একজন আরেকজনের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করছে। তাদের অবস্থা বুঝে উনি তাদেরকে বললেন,,, 

--ওর পা অনেকখানি কেটে গেছে। 

কথাটা বলেই লোকগুলোকে ইশারা দিয়ে আমার পায়ের দিকে তাকাতে বললেন। তারা আমার পায়ে রুমাল বাধা দেখে আর কোন কথা বাড়ালেন না। এরপর তাদের পিছু পিছু আমরা চলতে লাগলাম।


১৬-১৭ টা পরিবার নিয়ে একটা পাড়া তৈরি করা হয়েছে। বাঙালিদের সঙ্গে এদের মাঝে কয়েকটা উপজাতি পরিবার ও রয়েছে।তবে সকলেই ইসলাম  ধর্মালম্বীর।সুরু মাটির রাস্তার দুপাশে সারি সারি ১৬-১৭টা বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটা বাড়ির দেয়াল বাঁশের চটি দিয়ে তৈরি।মাটি থেকে কিছু টা উপরে তৈরি করা হয়েছে বাড়ি গুলো।এখানে কেউ না জেনে শুনে আসলে ভাববে কোনো উপজাতি গোষ্ঠীদের পাড়ায় এসে পরেছে। এই পরিবার গুলোর জন্য এখানে ছোট পরিসরে একটা মুদি দোকান রয়েছে। সেই সাথে সকলে মিলে ছোটখাটো একটা মসজিদ ও দাঁড় করিয়েছে।বলতে গেলে লোকালয় থেকে ভালোই দূরে অবস্থিত এই পাড়াটা।ইলেক্ট্রিসিটি বলতে কিছু নেই এখানে।সৌরবিদ্যুতে চলছে পুরো পাড়াটা।

রাত এখন ৯টা।আমরা এখানে যে ভালো আর বিপদমুক্ত আছি তা আলআবি ভাইয়া নাকি কল করে নিয়াজ ভাইয়াদের জানিয়ে দিয়েছেন।তখন ভাবছিলাম এখানে নেটওয়ার্ক পেলো কোথায় গিয়ে।কিন্তু পরমুহূর্তে আবার ভাবলাম জানিয়ে দিয়েছে এতেই ভালো।আমার এতো ভাবার দরকার নেই। 

 এই পাড়ায় উইং চু নামে একজন সরদার রয়েছেন।তবে সে চাকমা সম্প্রদায়ের।এই সরদার এর বাড়িতেই আমরা উঠেছি।রাতের খাবার তার বাড়িতেই খেয়েছি।তার স্ত্রী আমাদের আপ্যায়নে কোনো কমতি রাখেননি।তবে উইং চু লোকটা নাকি একটু একরোখা আর কঠোর  টাইপের। আশ্চর্যের বিষয় হলো উইং চু এর স্ত্রী বাঙালি। তার নাম রোকেয়া। তাদের সন্তান আছে দুজন।

এতোসব তথ্য বসে বসে আমি রোকেয়া আন্টির থেকেই শুনেছি।খাওয় দাওয়া শেষ করে রোকেয়া আন্টি আমার থেকে অনেক কিছইু জানতে চাইলেন। আমিও তাকে একটা একটা করে উত্তর দিলাম।এখানে আমার আর আলআবি ভাইয়ার পরিচয় হয়েছে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে। রোকেয়া আন্টি কথাবার্তা বলে একপর্যায়ে আমাকে তাদের সামনাসামনি বাড়িটায় নিয়ে আসলেন।রুমটায় দুজন মানুষ শোয়া যাবে এমন একটা চৌকি বসানো আছে।একপাশে ছোট করে একটা জানালা রয়েছে।এককোণে রয়েছে একটা আলনা।চৌকির পাশেই আছে একটা ছোট টেবিল আর চেয়ার।রোকেয় আন্টি বললেন,,, 

--এটা তোমাদের জন্য খালি করেছি।তোমাদের দেখে তো মনে হয় নতুন নতুন বিয়ে করেছ।আচ্ছা এটা কি তোমাদের হানিমুন ট্রিপ?

রোকেয়া আন্টির কথায় আমি চমকে গিয়ে বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকালাম। ঠিক তখনই পিছন থেকে আলআবি ভাইয়া এসে বললেন,,, 

--হ্যাঁ এটা আমাদের প্রথম মধুচন্দ্রিমা। 

--ওহ।তাই নাকি?তাহলে তো বেশ ভালো হলো।এমন  লোকালয় থেকে দূরে কজন হানিমুন করতে আসতে পারে বলো।এখানে কেউ বিরক্ত করতে আসবে না তোমাদের। থাকো তবে।আমরাও কেউ বিরক্ত করতে আসব না।(রোকেয়া আন্টি) 

রোকেয়া আন্টি কথাগুলো বলে ই দ্রুত পায়ে চলে গেলেন।আন্টি যাওয়ার সাথে সাথে আলআবি ভাইয়া দরজা টা আটকে দিলেন।তাকে দরজা আটকাতে দেখে আমি তড়িঘড়ি করে বলে উঠলাম,,, 

--একি দরজা আটকাচ্ছেন কেন?

--তো?দরজা খুলেই কি কেউ হানিমুন করে নাকি?(আলআবি ভাইয়া) 

আমাকে একটা চোখ টিপ মেরে তার সেই অতি পরিচিত শয়তান রূপি হাসিটা মুখে বজায় রাখলেন।তাকে হাসতে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,,, 

--হাহ...হানিমুন আবার কি?হানিমুনে কি করে? 

আমার কথায় তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন।এরপর একটু একটু করে আমার দিকে পা বারাতে লাগলেন। তাকে আমার দিকে এগোতে দেখে আমিও তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য একপা একপা করে পিছনে যেতে লাগলাম আর বললাম,,, 

--সমস্যা কি আপনার?এগোচ্ছেন কেন?

--তুমি তো বললে হানিমুন কি তা জানো না। তাই ভাবলাম তোমাকে প্র্যাক্টিকালি বোঝাতে হবে।আর তার জন্য তো তোমার কাছে আসতেই হবে। (আলআবি ভাইয়া)

--কি হানিমুন হানিমুন করছেন?আমাদের তো এখনো বিয়ে ই হয়নি।আর বিয়ে যেহেতু হয় নি সেহেতু আমি আপনার মতো খবিশ লোকের সাথে একরুমে থাকব না।যত যাই হোক আপনি তো একজন পুরুষ মানুষ ই।(আমি)

আমার কথা শেষ হতে না হতেই আলআবি ভাইয়া ঝড়ের গতিতে এসে আমাকে জাপটে ধরলেন।একেবারে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলেন। এতো জোরে বল প্রয়োগ করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন মনে হচ্ছে আমার ভিতরের হাড়গোড় সব ভেঙে একেবারে ছাতু ছাতু হয়ে যাবে।ঠিক ভাবে দমটাও নিতে পারছি না।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য তার সাথে  একপ্রকার ধস্তাধস্তি শুরু করে দেই।ধস্তাধস্তি করতেই আলআবি ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দেন।
আমি ছাড়া পেতেই জোড়ে জোড়ে দম নিতে থাকি।তখন আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,, 

--আর জীবনেও খবিশ বলবে?যদি এমন আরও টাইট হাগ চাও তাহলে খবিশ বলতে পারো।আমার কোনো সমস্যা নেই। কারণ খবিশরা এমনি করে থাকে। 

আলআবি ভাইয়া গিয়ে চৌকিতে বসে পরলেন। আমি আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছি।আমার পিছনে আলনা।এখন পায়ের ব্যাথাটা অনেক কম।এখানে আসার পর রোকেয়া আন্টি কি কি যেন পায়ের কাটা স্থানে লাগিয়ে একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেধে দিয়েছেন।দাড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।তাই আমিও গিয়ে তার পাশে অনেকটা দূরত্ব রেখে বসে পরলাম। কিছু সময় নিরবতার মাঝেই কাটিয়ে দিলাম আমরা। নিরবতা ভেঙে আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,, 

--জুইঁ তোমাকে একটা কিছু শোনাতে চাই শুনবে?

আমি আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।আমি তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললাম,,, 

--শুনবো।বলুন!

আল‌আবি ভাইয়া বসা অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে পরলেন।আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,

-- এখানে নয়। 

আলআবি ভাইয়া গিয়ে দরজা খুলে আমার কাছে আসলেন।আমি তার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই উনি আমার দিকে তার ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন।আমি বিনা দ্বিধায় আমার একহাত বাড়িয়ে দিলাম তার হাতে।বাহিরে বের হয়ে তার ডান হাতের বাহু আমি দুহাতে আঁকড়ে ধরে ধীর পায়ে তার সাথে সোলার প্যানেলের দ্বারা জালানো লাইটের ঈষৎ নিভু নিভু আলোয় সামনে এগোতে লাগলাম।কয়েক কদম সামনে এগিয়ে একটা ঘর দেখতে পেলাম।এটা দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না।কারণ অন্যান্য ঘরগুলো মাটি থেকে একটুখানি উঁচু। কিন্তু এটা মাটি থেকে না হলেও ৭ কিংবা ৮ ফিট উঁচু।এর চারপাশে কোমর অব্দি বাঁশের চটির বেড়াঁ দেয়া। মাথার উপরে ছাউনি দেয়া।এখানে আসার উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকালাম।তারপর বললাম,,,

--এতো জায়গা থাকতে আকাশের মধ্যে ঘর বানিয়েছে কেন ওরা?

--কথা বলার জন্য। (আলআবি ভাইয়া)

--কিহ্!(আমি)

--কেবল মাত্র এখানেই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। ওরা এখানে এটার উপর গিয়ে কথা বলে। আমিও এখান থেকেই নিয়াজ কে কল করেছি।(আলআবি ভাইয়া)

আলআবি ভাইয়া একটু থেমে আবারও বললেন,,, 

--চলো উপরে উঠি আগে।

আলআবি ভাইয়ার সাহায্যে ধীরে ধীরে বাঁশের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে পরলাম। এটা পাড়ার একে বারে শেষ মাথায় আর উঁচু হওয়ায় এখান থেকে পুরো পাড়াটা সুন্দর ভাবে দেখা যাচ্ছে। চারপাশে যে গাছগাছালিতে ঘেরা তা আবছা আলোয় কিছু টা উপলব্ধি করতে পারছি।উপরে উঠে বুঝতে পারলাম এটার ফ্লোরিং করা হয়েছে কাঠের পাটাতন দ্বারা। দুইটা টুলও আছে এখানে আমি আর আলআবি ভাইয়া পাশাপাশি টুল দুইটায় জায়গা দখল করে নিলাম।বসা মাত্র ই আলআবি ভাইয়া আমার এক হাতে মধ্যে তার আরেক হাত দিয়ে আমার পাঁচ আঙুলের মাঝে তার পাঁচ আঙুল গলিয়ে দিলেন।আমি হকচকিয়ে তার দিকে দৃষ্টি দিতেই তিনি বলে উঠলেন,,,

--প্লিজ থাকনা?

তার এমন আকুল আবেদনকে উপেক্ষা করতে পারলাম না।খুব আগ্রহের সহিত তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,, 

--কি বলবেন? 

উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,,, 

--বলছি।  


জীবন চলার পথে পড়ালেখা করতে গিয়ে বা কাজের ক্ষেত্রেই হোক না কেন অনেক মেয়ের সঙ্গে ই দেখা হয়েছে, ওঠাবসা হয়েছে।তাদের কে ঘিরে  মনে কখনোই কোনো অনুভূতি জন্মায় নি। কিন্তু কখনো ভাবিনি কোনো একদিন ১৬ বছরের একটা কিশোরী মেয়ের জন্য হুট করেই নিষিদ্ধ এক অনুভূতির জন্ম হবে।নিজের অজান্তে ই করে ফেলা ঘোর অপরাধের জন্য নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানাতাম।কারণ ততক্ষণে মেয়েটার জীবনে স্বামী নামক ব্যক্তিটির আগমন ঘটে গিয়েছিল।মেয়ে টার ঠিক বিয়ের দিনই তাকে প্রথম দেখি।

তার প্রশস্ত ললাটের জোড়া ভ্রুযুগলের নিচে থাকা ঘন লম্বাটে পল্লব বিশিষ্ট আঁখিদ্বয় দেখে তার মোহে পরে গিয়েছিলাম।তার ভরাট আর ফোলা ফোলা গাল দুটোর সঙ্গে গজ দাঁতের হাসিটা আমার হৃদপিণ্ডের স্পন্দনকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে উঠে পরে লেগেছিল। তারার হাসি কেবল একটাই পরিচয় বহন করে যাচ্ছিল আর তা হলো গজদন্তিনী।তার থুতনিতে থাকা গর্তটা তাকে দ্বিতীয় বার দেখার জন্য আমাকে বাধ্য করেছিল।তাকে দেখার পরমুহূর্ত থেকেই যে ভয়ংকর আর তীব্র অনুভূতি টা জাগ্রত হয়েছিল তা ঠিক সেই সময়ই নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়ে যায়। কারণ সেই দিনই আল্লাহ প্রদত্ত বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধে সে নিজেকে মুড়ে নেয়।

এরপর তার প্রতি জন্মানো অনুভূতিগুলো কে ধীরে ধীরে নিংড়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকি।নিজের জীবনে টাকে ব্যস্ততার আঙ্গিনায় সপে দেই।হাজারো ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলেও দিনশেষে তন্দ্রা-নিদ্রার খেলায় মত্ত হওয়ার আগে একবার করে নিষিদ্ধ অনুভুতির দাড়ে গিয়ে অনুভূতি গুলোকে নেড়েচেড়ে দেখে নিতাম।নিরব মনে অনুভূতি গুলোকে নিজের বোবা খাঁচায় পুড়ে রাখতাম।

তার প্রতি জন্মানো আমার অনুভূতির বয়স যখন এক বর্ষা পেড়িয়ে অন্য বর্ষায় পদার্পণ করে তখন আধো ইতিবাচক আর আধো নেতিবাচক এক সংবাদ এসে আমার অনুভূতি গুলোকে বোবা খাঁচা থেকে বের করে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেয়।আমার অনুভূতিগুলোর ছাড়া পাওয়ার জন্য একটা কাগজই যথেষ্ট ছিল আর তা হলো তালাক নামা। যাকে ইংরেজিতে বলে ডিভোর্স পেপার। ডিভোর্স পেপার এর মাধ্যমে আমার সেই গজদন্তিনী আবার বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়। জীবনের বড় খুশির দিন ছিল সেই দিনটা। যেদিন জানতে পারি আমার গজদন্তিনী চিরতরে মুক্ত হয়ে গিয়েছে।

ফ্রান্সে সব কাজ শেষ করে তার কয়েকদিন পরেই  দেশে চলে আসি নিজের গজদন্তিনী কে একান্ত ভাবে আপন করে নেয়ার জন্য। দেশে ফিরে যেদিন প্রথম দেখায় তার মাথা আমার বুকে এসে স্থান পায় সেদিন মনে হয়েছিল আমার শতশত রাতের তৃষ্ণা এক মুহূর্তেই কর্পূর এর ন্যায় হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল। 

আমার দেশে ফিরে আসার কারণ শুধুমাত্র আমার মা বাবা আর আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু নিয়াজ ছাড়া কেউ জানত না।আমার গজদন্তিনী কে দেখার পর মনে হয়েছিল আমার গজদন্তিনীর মনে কি রয়েছে তা জানতে হবে আর সেই সাথে আমাকেও তার মনের আঙিনায় প্রবেশ করতে হবে। তার মনেও কেবল আর কেবলমাত্র আমার নামের ভালোবাসা জাগ্রত করতে হবে।তাই ওকে আরো সময় দিচ্ছিলাম।

এরই মাঝে ই একদিন গজদন্তিনীর সাথে একটা পাবলিক যাত্রী ছাউনিতে দেখা হয়ে যায়। কিন্তু তাকে দেখার পর মুহুর্তেই তার ভয়ার্ত মুখখানা দেখে আমি নিজেই ভয়ে পড়ে যাই। কারণ যে কোন পুরুষই অগোচরে তার প্রিয়তমার কান্নায় কাঁদবে, তার প্রিয়তমার হাসিতে হাসবে, তার প্রিয়তমার দুঃখে ব্যথিত হবে আর তার প্রিয়তমার ভয়ে নিজে ই ভয়ের সমমুখীন হবে। তাই আমার ক্ষেত্রেও ওই মুহূর্তে ব্যতিক্রম হয়নি। 

আমার গজদন্তিনীর ভয়ের কারণ আচঁ করতে পেরে দ্রুত তাকে আমার বাইকে চড়িয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বৃষ্টিস্নাত রাত আর পিছনে ভালোবাসার কাঙ্ক্ষিত মানুষটি।আহা!সে কি যে সুখের অনুভূতি তা বলে প্রকাশ করার মতো নয়।ওই মুহূর্ত থেকে ই ভেবে নিলাম সারাজীবনের জন্য তাকে এই ভাবেই আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনী বানিয়ে রাখব।যদিও আমার বৃষ্টির ফোঁটা সহ্য হয় না কিন্তু তবুও এইভাবেই সারা জীবন তাকে #বর্ষণ_সঙ্গিনী করে বর্ষণের জল ফোঁটায় নিজেকে ভেজাতে চাই।

যত দিন অতিবাহিত হতে লাগল ততই আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনীর প্রতি ভালবাসার মাদকতা বাড়তেই লাগলো।চিঠি দিয়ে আমার সুপ্ত অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করতে লাগলাম। আমাদের দুজনের সব ঠিকঠাক ই চলছিল।তাকে কথা দিয়েছিলাম তার ১৯ বছর পূর্ণ হলে তার সামনে এসে তাকে দেখা দিব।

তার ১৯ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন মা বাবা, ভাইয়া ভাবি সকলে মিলে প্ল্যান করেছিলাম সেদিন তার বাড়িতে গিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিব।নিয়াজ কে আগে থেকে ই বলে রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই ওই দিন বাবার একটা জরুরি কাজ এসে পরে বিধায় আমরা আমাদের পরিকল্পনা পাল্টে ফেলি।সিদ্ধান্ত নেই তার জন্মদিনের পরের দিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কেবল মা আর বাবাকে পাঠাব।

আলআবি ভাইয়া একটানে কথা গুলো বলে  চুপ হলেন।আমি স্তব্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি।তাকে বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।আলআবি ভাইয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আবারও বললেন,,, 

--কিন্তু প্রকৃতি তো আর আমাদের নিয়মে চলে না বরং আমরাই চলি প্রকৃতির নিয়মে।

আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে পরলেন।আমি তখনে টুলের উপরই বসা।আমি কিছু করার বা বলার আগেই উনি আমার সামনে আরাম করে আসামপেতে বসে আমার কোলে তার মাথা ঠেকিয়ে দিলেন।তার কাজে আমি হকচকিয়ে তাকে বলে উঠলাম,,, 

--একি! আপনি এখানে মাথা রাখলেন কেন?

আলআবি ভাইয়া বিরক্তের সহিত মুখ দিয়ে "চ" মূলক শব্দ করে আমাকে জবাব দিলেন,,,

--ডোন্ট নয়েস।

আমার দুই হাত নিয়ে তার মসৃণ চুলগুলোর মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন আর বললেন,,, 

--একটু টেনে দেও তো।অনেক ঘুম পাচ্ছে। 

তার কথা শেষ হতেই আমি ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলাম,,, 

-- আরে! আরে! আপনি এখানে ঘুমাবেন নাকি? আপনি ঘুমালে আমি কি করব? সারারাত মশার সাথে পিনপিন করে গল্প করবো নাকি?আর আপনাকে এখন আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনি.....

হঠাৎ করে আমার হাত তার কপালে ছোয়া লাগতেই অনুভব করলাম তার কপাল অতিরিক্ত মাত্রায় উষ্ণ। আমি আরো ভালো ভাবে তার কপালে গালে হাত বুলাতেই নিশ্চিত হলাম তার জ্বর এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,

-- আপনার তো জ্বর এসেছে। চলুন তাড়াতাড়ি চলুন আমরা ঘরে যাই।কি ব্যাপার শুনতে ছেন না আপনি?

আলআবি ভাইয়া ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,, 

--এখন আমি নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে এখান থেকে যেতে পারব না।সো প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।

তার কথায় তাকে আর ডাকাডাকি করলাম না। কিন্তু এভাবে তো থাকলে ও হবে না। কিছু একটা করতে হবে। ভাবতে ভাবতে আমি সন্তর্পণে আলআবি ভাইয়াকে নিয়ে মেঝেতে বসে পড়লাম। তার মাথাটা আমার কোলে রেখে ধীরে ধীরে চুল টানতে লাগলাম, মাথা টিপে দিতে লাগলাম।

ওভাবে কতো সময় ছিলাম তা ঠিক বলতে পারবো না।কিন্ত সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গতেই চোখ মেলে অনেক অবাক হয়ে যাই।



চলবে...



Writer:- হুমাশা এহতেশাম



NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner