> বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ৩৯, ৪০ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story - Love Story Bangla
-->

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ৩৯, ৪০ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story - Love Story Bangla

সকাল থেকে ই সবার সাথে রাগ করে আছি। নিয়াজ ভাইয়া, ফারাবী ভাইয়া, অনুরাধা আপু আর অন্তু ছাড়া অন্য সকলের সঙ্গে তেমন একটা কথা বলছি না।সেইসাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা মিশনে নেমেছি।মিশনের নাম হলো - "ইগনোর আলআবি ভাইয়া"।সকালের নাস্তা করে রেনুমাকে ছাড়াই অনুরাধা আপুর কটেজে যাওয়ার জন্য কেবল আমার কটেজ থেকে বের হয়েছি।তারমধ্যেই দেখি আলআবি ভাইয়া পা বাড়িয়ে আমার দিকে ই আসছেন।তাকে দেখা মাত্র ই হাতের ফোনটা কানে চেপে ধরলাম। যখন দেখলাম আলআবি ভাইয়া আমার আমার আরেকটু কাছে এসে পরেছেন আর এখন কথা বললেই সে শুনতে পাবেন তখন আমি বলতে লাগলাম,,, 

--হ্যাঁ বাবু এইতো মাত্র ই নাস্তা করেছি।তুমি নাস্তা করেছ?

আলআবি ভাইয়ার দিকে আড় চোখে তাকালাম তার ভাব-ভঙ্গি দেখার জন্য। তাকে দেখে স্বাভাবিক ই মনে হচ্ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে বুঝতে চেষ্টা করছেন আমি কার সাথে কথা বলছি।তাকে শুনিয়ে আবার বলে উঠলাম,,, 

--সেকি বাবু তুমি নাস্তা করো নি।ইশ! শরীর খারাপ করবে তো জান।

কথাটা বলে আলআবি ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি দিতে ই দেখি উনি  তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি আবারও বললাম,,, 

--ওকে জান।লাভ ইউ ঠু।

ফোনটা কানের থেকে নিচে নামাতেই হুট করে আলআবি ভাইয়া আমার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে পরলেন।কিছুটা ক্ষুদ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,,,

--কোন বাবুর সাথে কথা বলেছিলে? আর এই জানটাকে কে?

আমি একটু দূরে সরে এসে কিছুটা ভাব নিয়ে বললাম,,, 

--আমার এখন মুড নেই বলার।

আলআবি ভাইয়া আমার দিকে তেড়ে এসে বলতে নিলেন,,, 

--এই মেয়ে!.....

আর একমুহূর্তও দেরি করলাম না। দ্রুত পায়ে কটেজে এসে পরলাম। বলতে গেলে এক প্রকার দৌড়েই এসেছি। একটু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল আমার দুগালে এখনই বুঝি উনি তবলা বাজানো আরম্ভ করবেন।আসলে সেদিন রাইয়াম এর নাম্বার টা নিয়াজ ভাইয়ার ফোন থেকে নিয়ে নিয়েছিলাম।আমার ফোনে রাইয়ানের নাম্বার টা সেভ করা ছিল না তাই ওটা হারিয়ে ফেলেছি।রাইয়ানের নাম্বার টাই মুলত "রাইয়ান বাবু" দিয়ে সেভ করেছি।কিন্তু একটু আগে তার সামনে শুধু কথা বলার মিথ্যে অভিনয় করেছি। হঠাৎ করে একসময় আলআবি ভাইয়া কে কৌশলে দেখিয়ে দিব রাইয়ানের নাম্বার টা আমার ফোনে রাইয়ান বাবু দিয়ে সেভ করা।

অনুরাধা আপুর সাথে খুব ভালো জমেছে আমার। 
আপুর সাথে কথা বলে বেশ ভালো বুঝতে পারলাম অন্তু তার সাড়ে ছয় বছর বয়সেই অনেক বেশি বুঝে।যেকোনো জিনিস খুন তারাতাড়ি ই বুঝতে পারে ও।সেই সাথে পাকামো টাও করে বেশি।

অবাক করার ব্যাপার হলো অনুরাধা আপু হিন্দু ধর্মালম্বী থেকে আগত।কিন্তু শাফিন ভাইয়া মুসলিম ধর্মের।অনুরাধা আপু শাফিন ভাইয়াকে বিয়ে করার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ইসলামি পন্থাতেই নাকি বিয়ে করেছে।তবে দুঃখের বিষয় হলো অনুরাধা আপুর সাথে তার বাড়ির যোগাযোগ একেবারে ই বন্ধ।আপুকে প্রথমে শাফিন ভাইয়ার বাড়িতেও মেনে নেয় নি।কিন্তু অন্তু জন্মের পরে সব ঠিক হয়েছে। অনুরাধা আপুকেও মেনে নিয়েছে।


সকালে নাস্তা শেষ করে অনুরাধা আপু কে জানাই যদি  সাঙ্গু নদীতে যাওয়া না হয় তাহলে আমি আর কোথাও যাব না। চিম্বুক পাহাড়ে ও আমি যাব না।আর এটাও জানিয়ে দেই আমাকে রেখে ই সবাই যেন চিম্বুকের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।

সাঙ্গু নদী। এতো দিন ধরে যার নাম শুনে এসেছি, বইতে পরে এসেছি আজকে ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে। আমাদের চিম্বুক যাওয়ার প্ল্যানটা মূলত আমার কারনেই ক্যানসেল করা হয়েছে।

বর্তমানে সাঙ্গু নদীর গা ভেসে আমরা নৌকায় করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সময়টা এখন সাড়ে তিনটা।একটু আগেও সূর্য তার তাপে দগ্ধ করে দিচ্ছল সবুজ গাছপালা গুলোকে।কিন্তু হঠাৎ করেই একদল মেঘ এসে সূর্য টাকে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়েছে। সাঙ্গুর শীতল পানি আর পরিবেশে বইতে থাকা মৃদু ঠান্ডা হাওয়া মস্তিষ্ক কে বারবার বলছে-"আমার প্রেমে পরো"।

আমরা দুটো নৌকা ভাড়া করেছি। এই নৌকা গুলো দৈর্ঘে বেশ লম্বা।একটা নৌকায় আমি,অনুরাধা আপু,শাফিন ভাইয়া,সজল ভাইয়া আর রেনুমা উঠেছি।আর আরেক টাতে আলআবি ভাইয়া, অন্তু,নিয়াজ ভাইয়া,ভাবি,মিথিলা আপু আর ফারাবী ভাইয়া উঠেছে। আমাকে নিয়াজ ভাইয়া বলেছিল যেন তাদের নৌকায় উঠি। কিন্তু আমি তা শুনিনি।এপর্যন্ত কয়েকবার ই আলআবি ভাইয়া আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন।তবে আমি সেই সুযোগ দেই নি তাকে।এমনকি একবারও তার দিকে ভালো করে তাকাই নি পর্যন্ত।

প্রায় অনেকটা ভিতরের দিকে চলে এসেছি আমরা।আমাদের নৌকা একটার পিছনে আরেকটা চলছে। ওই নৌকা থেকে অন্তু আমাকে দুষ্টুমি করে পানির ঝাপটা দিচ্ছে আমি ও ওকে এই নৌকা থেকে পানির ঝাপটা দিচ্ছি।আলআবি ভাইয়া তার গলায় ঝুলানো ক্যামেরা দিয়ে কিছু স্মৃতি বন্ধ করে নিচ্ছেন।আমরা একেকজন একেকজনের মতো করে এই মুহুর্ত উপভোগ করে চলছি।

হঠাৎ করেই আকাশ কোনো আগাম বার্তা না দিয়েই ঝমঝমিয়ে আমাদের উপর তার জলকণার পতন ঘটাতে শুরু করল।আমরা যে স্থানে ছিলাম সেখান থেকে বা দিকে তাকালেই কিছু টা উঁচুতে একটা গোলাকার ছাউনির মতো দেখা যাচ্ছে। আমাদের কে মাঝি দুজন পাড়ে নামিয়ে দিলেন আর বললেন আমরা যেন বৃষ্টি থামার আগ পর্যন্ত ওখানেই অবস্থান করি।তাদের কথা মতো আমরা সবাই ছাউনির দিকে এগোচ্ছি।পিছনে মাঝি দুজন নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি কে নিয়ে পাড়ে একটা মোটা গাছের নিচে দাড়িয়ে রইলো।নিয়াজ ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে কোনো মতেই উপরে উঠবে না।আর গাছের নিচে সকলে এক সাথে দারানোও যাবে না।তাই ওদের দুজনকে মাঝির সাথেই রেখে আমরা উপরে উঠতে শুরু করলাম।দূর থেকে আসলে উপলব্ধি করতে পারিনি জায়গাটা যে এতো খাড়া হবে। এখন উঠতে গিয়ে একটু কষ্ট হচ্ছে। তার সাথে আবার ওঠার রাস্তাও কিছু টা পিচ্ছিল আর সরু।আমার সামনে অনুরাধা আপু আর পিছনে রেনুমা আসছে।উঠতে গিয়ে মাঝখানে হালকা স্লিপ কেটে রেনুমা পড়ে যেতে নিচ্ছিল আমি সামনে থাকায় আমাকে ধরে বসে। আমি ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে অনুরাধা আপুর উপরে আমার কিছুটা ভর ফেলে দেই।ভাগ্য ভালো ছিল বলে অনুরাধা আপু সামলে নিতে পেরেছে।আসতে আসতে আমরা সবাই ই হালকা ভিজে গিয়েছি।আলআবি ভাইয়ার দিকে চোখ দিতেই দেখি তার মসৃণ চুলে পানির বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা জমেছে।তিনি হাত দিয়ে চুল গুলো ঝাড়তে ব্যস্ত।তার সাদা পাঞ্জাবির কাধে বৃষ্টির পানির ছিটে ছিটে ছাপ দেখা যাচ্ছে।তার লোমশ হাতে ও ফোঁটা ফোঁটা পানির বিন্দু লেপ্টে আছে।  বাহ্! লোকটাকে তো এভাবেও বেশ মায়াময় লাগছে।হঠাৎ করেই মাথায় চিন্তা এলো এই কানা ব্যাটা একদমই ভালো না।অকারণেই আমায় কাঁদিয়েছে।তারাতারি তার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।

আমরা এখানে প্রায় একঘন্টা যাবত বসে আছি।বৃষ্টি এখন পুরোপুরি থেমে গিয়েছে। ফোনটা বের করে দেখি ৫ টা বেজে ১৫ মিনিট। এখানে বসে আমাদের সময় খুব একটা বেশি খারাপ কাটেনি।এখান থেকে পিছনের দিকে তাকালে দূরে সবুজ অরন্যের মাঝে কয়েকটা ঘড় বাড়ি চোখে পরে।একেবারেই পিপড়ের ন্যায় ছোট মনে হয়।ওটা সম্ভবত ছোটখাটো একটা গ্রাম।প্রায় এক ঘন্টার মতো সবাই মিলে গল্প করেছে বসে বসে।আমি কোনো টু শব্দ করিনি।শুধু বসে বসে ওদের কথা শুনে গিয়েছি।

মায়ের ঘর্মাক্ত দেহের ঘ্রাণ যেমন প্রত্যেক সন্তানের কাছেই সুগন্ধি স্বরূপ। তেমন প্রকৃতির এই ভিজে ঘ্রানটাও আমার কাছে সুগন্ধির ন্যায় লাগছে।

যেহেতু বৃষ্টি থেমে গিয়েছে তাই আর দেরি না করেই আমরা এই জায়গা প্রস্থানের জন্য উদ্যত হলাম।এবার আমার সামনে আলআবি ভাইয়া আর পিছনে অনুরাধা আপু আসছে।রাস্তা টা মনে হচ্ছে আগের তুলনায় এখন একটু বেশিই পিচ্ছিল।নিজের ভারসাম্য সামলাতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনি পরে যাবো। বাম পাশে চোখ বুলাতেই মাথা ঘুরে উঠলো।ভূপৃষ্ঠ এখান থেকে অনেক নিচে।ওঠার সময় এতো ভয় লাগেনি।এখন মনে হচ্ছে বাম পাশে না তাকালেই ভালো হতো।

হঠাৎ করেই পা পিছলে পড়ে যেতে নিলাম।বাঁচার জন্য হাত দিয়ে সামনে পিছনে কিছু একটা আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করতেই আলআবি ভাইয়ার বাহু ধরলাম।কিন্ত শেষ রক্ষা আর হলো না।সেই বা পাশেই পরে গেলাম।আমি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে আমি বুঝি আর বাঁচব না।তৎক্ষনাৎ আলআবি ভাইয়ার চেহারা টা চোখে ভেসে উঠলো।মুহূর্তের জন্য মনে হলো তাকে বুঝি আর বিয়ে করা হলো না।আচ্ছা আমার মৃত্যুর পরে কি উনি চিরকুমার থেকে যাবেন?নাকি আবার অন্য কাউকে বিয়ে করবেন।না না এটা হতে দেয়া যাবে না।কিন্তু তার বিয়ে আমি আটকাবো কি করে?আমি তো নির্ঘাত মরে যাবো এখন।ইশ তখন যদি বলে দিতাম আমিও আপনাকে বিয়ে করতে চাই।আমি মরে ভূত হয়ে গেলেও তো আমার মানুষরূপি সতীনকে সহ্য করতে পারব না।

হঠাৎ মনে হলো আমি একা গড়িয়ে পরে যাচ্ছি না।আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে ভালো করে খেয়াল করতেই দেখি আলআবি ভাইয়া আর আমি দুজন একসাথে পাশাপাশি গড়িয়ে গড়িয়ে পরে যাচ্ছি।গড়াগড়ি খেতে খেতে এক পর্যায় দুজনেই থেমে গেলাম। যখন পড়ে যাচ্ছিলাম তখন উপর থেকে ওদের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম কিন্তু শব্দ টা এখন আর কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না। 

পড়ে গিয়ে যেভাবে আছি সেভাবে ই চোখ জোড়া বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। কারণ মাথাটা এখন চড়কির ন্যায় ঘুরছে। পায়ে যে খুব ভালোভাবে ব্যথা পেয়েছি তা অনুভব করতে পারছি। হাতেও হয়তোবা কেটে ছিঁড়ে গিয়েছে। মোট কথা হল শরীরের কিছু কিছু জায়গায় বেশ যন্ত্রণা অনুভব করতে পারছি। আমার চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় অনুভব করলাম আলআবি ভাইয়া আমার কাছে এসে দু গালে আলতো করে চাপড় মারছেন আর বলছেন,,,

--এই।জুইঁ?জুইঁ?শুনতে পাচ্ছো আমাকে?কথা বলো।

খেয়াল করলাম আলআবি ভাইয়ার কন্ঠে অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট। এতক্ষণে আমার মাথাটা তার কোলে জায়গা দখল করে নিয়েছে। হালকা করে চোখ মেলে তাকে একটু দেখে নিলাম। তার কণ্ঠের মত চেহারাতেও অস্থিরতা ফুটে উঠেছে। এই মুহূর্তে তার কোলে মাথা রাখতে পেরে খুব শান্তি লাগছে। আবার তার অবস্থা দেখে অনেক হাসিও পাচ্ছে। আলআবি ভাইয়া আমার নাকের কাছে তার আঙুল আনতে ই আমি ফট করে আমার দম আটকে রাখলাম।উনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,,, 

--জুইঁ! ওপেন ইওর আইস।জুইঁ!

তিনি সেই কখন থেকে সিনেমার নায়কের মতো জুইঁ জুইঁ করেই যাচ্ছেন।আর আমি তার এরূপ কাজের পুড়ো দমে সুযোগ নিচ্ছি।দুঃখের বিষয় হলো প্রাণখুলে হাসতে পারছি না।অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখছি।সেই সাথে বেঁচে গিয়ে অনেক খুশি হয়েছি। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই।খুশির মূল কারণ হলো আমার আর সতীনের মুখ দেখা লাগবে না। 
আমার ভাবনার মাঝে ই হুট করে আলআবি ভাইয়া আমার মাথাটা খুব জোরে তার বুকের সঙ্গে চেপে ধরলেন।তার এমন কান্ডে অনেকটা ভোড়কে গেলাম। এই প্রথম আমরা দুজন এত কাছাকাছি। আমাদের দুজনের মধ্যে ইঞ্চি পরিমাণ ও ফাঁকা নেই। এই মুহূর্তে আমার কানে ধুকধুক ধুকধুক করে একটা শব্দ বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।এই শব্দ টা আমার কানে এক প্রশান্তির সুর সৃষ্টি করেছে। অনেক সময় ধরে মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে পারলাম না তার আগেই আলআবি ভাইয়া আমার মাথাটা তুলে আমার কপালে, গালে, মাথায় অগণিত বার তার ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করাতে লাগলেন।আমি তড়িৎ গতিতে তার থেকে নিজেকে মুক্ত করে বলে উঠলাম,,,

-- কি করেছিলেন আপনি? 

তার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।আলআবি ভাইয়া আমার কাছে এসে দু গালে হাত রেখে বলে উঠলেন,,,

--তুমি ঠিক আছো? ব্যথা পেয়েছ কোথাও?দেখি?

কথাটা শেষ করেই আমার গাল থেকে তার হাত নামিয়ে আমার হাত ধরে এপাশ-ওপাশ দেখতে লাগলেন। তার মধ্যে কেমন যেন অস্থিরতা ছেয়ে গিয়েছে। তার এই অস্থিরতা আমার মন আর মস্তিষ্ক উভয়কে ই প্রশান্তির হাওয়ায় দুলিয়ে যাচ্ছে। এখন তাকে দেখে খুব মায়া লাগছে। তার উপর জমিয়ে রাখা মান-অভিমান গুলো মুহূর্তের মধ্যে ই উবে গেল। তার চোখের এই অস্থিরতা আমার সিদ্ধান্তকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। যখন আমিও তাকে ভালোবাসি আর সেও আমাকে ভালোবাসে তখন আমার কাছে এই মান অভিমান গুলোকে আমাদের মধ্যে আর মানানসই বলে মনে হচ্ছে না। সবকিছুই আবার অতিরিক্ত ভালো নয়। আজ পুরো দিন তাকে ইগনোর করেছি, কথা বলিনি এটাই আমার কাছে যথেষ্ট মনে হচ্ছে। কারণ দিনশেষে এই মানুষটাই আমার ভালোবাসার মানুষ। তার সাথে কথা না বলে আমিও শান্তি পাচ্ছি না। তখন তো রাগের বশে বলে দিয়েছিলাম তাকে বিয়ে করবো না, তার সাথে কথা বলব না। কিন্ত এখন  আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি তাকে ছাড়া আমি নিজেই তো থাকতে পারব না। তাকে ছাড়া তো আমার চলবে না। তাহলে কেন তাকে দূরে দূরে রাখব। আমার ভাবনার মধ্যেই আলআবি ভাইয়া আমার দুবাহু ধরে একটু জোরে ঝাকিয়ে বললেন,,, 

--আমি কি বলছি তুমি শুনতে পাচ্ছো?

আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,,,

--হ্য্..হ্যাঁ। শুনতে পাচ্ছি তো।

তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন,,,

--ব্যাথা পেয়েছ কোথাও? 

আমি দু দিকে মাথা নাড়িয়ে না সূচক ইশারা করলাম। আলআবি ভাইয়া আমার দিকে কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,,

-- সত্যি তো?

আমি আর তার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। কারণ আমি মিথ্যে বলেছি। এই মুহূর্তে আমার পায়ে অসম্ভব যন্ত্রণা করছে। তার সামনে মাথা নিচু করে বললাম,,, 

-- হাতের কনুইতে আর পায়ে একটু ব্যথা পেয়েছি।

আমরা দুজন এখনো মাটিতেই বসে আছি।হাতের কনুই দেখে আলআবি ভাইয়া আমার পায়ের জুতা খুলতে নিলেন। তাকে বাধা দিয়ে আমি বলে উঠলাম,,,

-- আপনি আমার জুতায় হাত দিচ্ছেন কেন? আপনি আমার থেকে বড়। আপনি বসুন আমি খুলছি।

আলআবি ভাইয়া একমনে আমার জুতা খুলতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার কথাটা তার কর্ণপাত হয়নি। তাকে নিশ্চুপ দেখে আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না। পায়ের গোড়ালি থেকে চার পাঁচ আঙুল উপরে অনেকখানি কেটে গিয়েছে সাথে রক্তও পরছে। হাতের কনুই ও ছিলে গিয়েছে।আলআবি ভাইয়া কোত্থেকে যেন কি একটা পাতা এনে হাতের মধ্যে ডোলে আমার পায়ের কাটা স্থানে লাগিয়ে দিলেন। পকেট থেকে তার রুমালটা বের করে সেখানে বেঁধে দিলেন। আগে ব্যথা হলেও খুব বেশি একটা জ্বালাপোড়া করেনি কিন্তু এখন অনেক জ্বালাপোড়া করছে। আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আলআবি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,, 

--এগুলো কি দিয়েছেন আপনি? তাড়াতাড়ি খুলে দিন? পায়ে অনেক জ্বলছে।

--এটা রক্ত পরা কমাবে।একটু সহ্য করো।(আলআবি ভাইয়া)

আলআবি ভাইয়াকে ভালো করে পরখ করে দেখে তার কপালে একটু কাটা ছাড়া আর কিছু পেলাম না। তাও তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,, 

--আপনি কোথাও ব্যাথা পেয়েছেন?

উনি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি বজায় রেখে বললেন,,, 

--তোমার এই ব্যাথার কাছে আমার ব্যাথা খুবই সামান্য। চিন্তা করো না আমি ব্যাথ পাইনি।

আমি তার দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আমার হিজাব এর বাড়তি অংশ দিয়ে তার কপালের কাটা অংশের চারপাশে লেগে থাকা ঈষৎ রক্তগুলো মুছে দিলাম। আলআবি ভাইয়ার দিকে চোখ পরতেই দেখি উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।আমার কাজে আমি নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে তার থেকে একটু সরে বসলাম। 

চারপাশে অন্ধকার নামতে শুরু করে দিয়েছে। আমরা এই মুহূর্তে যেখানে অবস্থান করছি সেখান থেকে গাছপালা ছাড়া আর কিছু ই দেখা যাচ্ছে না। ঠিক কোন দিকে গেলে আমরা বের হতে পারব তাও আমাদের অজানা।আলআবি ভাইয়ার হাতের ঘড়িতে সময় এখন ঠিক ছয়টা।এখানে নেটওয়ার্ক একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা উঠছে "নো সার্ভিস"।
আমার সাইড ব্যাগটা কোথায় পড়েছে তা আমি নিজেও জানিনা।ওই ব্যাগের মধ্যে ই আমার মোবাইলটা রয়েছে। সোজা কথা হলো মোবাইল সহ পুরো ব্যাগটাই হাড়িয়ে ফেলেছি।

বর্তমানে আমার অবস্থান হলো আলআবি ভাইয়ার কোলে।এমন নয় যে আমি হাটতে পারছিনা।হাটতে পারছি তবে খুব ধীরে ধীরে। আমার হাটার গতি দেখে আলআবি ভাইয়া আমায় না বলেই হুট করে কলে নিয়ে চলেছেন অজানা কোনো এক গন্তব্যে।



চলবে...



Writer:- হুমাশা এহতেশাম


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner