--কলেজ শেষে কলেজের সামনে থেকেই অটো করে বাড়ি ফিরছিলাম।একই অটোতে তোমার ভাইয়া গাজীপুর থেকে তোমার নানা বাড়ি ফিরছিল।দুজন একেবারে মুখোমুখি হয়ে বসেছিলাম। আমার যেই স্ট্যান্ডে নামার কথা তার পরের স্ট্যান্ডে নামার কথা তোমার ভাইয়ার।কিছু দূর আমাদের অটো চলার পরে অপর পাশ থেকে আসা আরেকটা অটোর সাথে আমাদের অটোটার ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লেগে আমাদের অটো কিছুটা কাত হয়ে যায় আর আমি অটো থেকে পড়ে যাই।পড়ে গিয়ে মাথায় সামান্য ব্যাথা পাই। কিন্তু হাতের কনুইটা খুব বিশ্রিভাবে ছিলে যায়।রাস্তায় বসেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।আশে পাশের সবাই আমার চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে হায় হুতাশ আর দুঃখ প্রকাশ করছিল।আমাকে যে কেউ এসে একটু ধরবে সেই চিন্তা ভাবনা কারো মধ্যেই নেই। তখন ভিড় ঠেলে একজন যুবক এসে তাড়াহুড়ো করে আমাকে ধরে রিকশায় উঠিয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়। আর সেই যুবক টাই হলো তোমার নিয়াজ ভাইয়া। এরপর ওইদিনই তোমার ভাইয়া আর আমার মধ্যে ফোন নাম্বার আদান-প্রদান হয়।বাবাকেও তোমার ভাইয়াই কল করে আমার কথা জানায়।হসপিটাল থেকে বাড়ি আসার পর তোমার ভাইয়া রাতে কল করে খোজ নেয়ার বাহানাতে আমার সাথে কথা বলতো।আমারও কথা বলতে বেশ ভালো লাগতো। এইভাবেই আমাদের একে ওপরের ভালো লাগার সূত্রপাত ঘটে। আর তারপর প্রণয় ঘটে।
তাসফি আপু একনাগাড়ে কথা গুলো বলে তারপর দম ছাড়লো।আমার কাছে ওদের দুজনের প্রণয়ের রচনা টা খুব ভালো লাগলো।আমি উৎসুক হয়ে জানতে চাইলাম,,,
--আচ্ছা আপু তোমার ফ্যামিলি নিয়াজ ভাইয়ার কথা প্রথম কিভাবে জানলো?
আমার কথায় তাসফি আপু খিলখিল করে হেসে উঠলো। তারপর বলল,,,
--তোমার ভাই প্রেম নিবেদন করতে এসে আমার আব্বার কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল।
আমি আরো উৎসুক হয়ে বলে উঠি,,,
--সেইটা কিভাবে?
পুনরায় আপু বলতে লাগলো,,,
--আমাদের মাঝে কথা হতে হতে একপর্যায়ে খুব ভালো বন্ডিং হয়ে যায়। এরমাঝে ৪ মাস কেটে যায়। ৪মাস পরে তোমার ভাইয়া আবার গ্রামে আসে আমার সাথে দেখা করবে বলে।অবশ্য আমাকে বলেছিল তার নাকি আমাকে কিছু বলার আছে। বাসা থেকে খুব একটা বের হতে দিত না আমাকে। আমাদের প্ল্যান ছিল সন্ধ্যার দিকে আমাদের বাড়ির পিছন সাইডে আমরা দেখা করব। বাড়ির পিছন সাইডে ওই দিন তোমার ভাইয়া নাকি এসে আমাকে কিভাবে প্রপোজ করবে সেটা প্র্যাকটিস করছিল। আমার আসতে একটু দেরি হচ্ছিল আর দুর্ভাগ্যবশত তোমার ভাইয়াকে ওই অবস্থায় আমার আব্বা দেখে ফেলে। আব্বার যা বোঝার বুঝে ফেলে। আমার আব্বা খুব একটা রাগী মানুষ নয়। সবকিছু ঠান্ডা মাথায় সামলান।সেদিন তোমার ভাইয়াকে আব্বা বুঝিয়েছে তোমার ভাইয়ার প্রেম করার বয়স হলেও আমার প্রেম করার বয়স হয়নি। আর সাথে নাকি এটাও বলেছিলো তোমার ভাইয়া যদি নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারে তাহলে আমাদের কথা ভেবে দেখবেন।
--নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলেছি আমার বোনের সাথে গল্প করার জন্য নাকি?
হঠাৎ করে নিয়াজ ভাইয়ার কণ্ঠ শুনেই আমি আর আপু দুজনেই পেছন ফিরে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি ভাইয়া দুহাত বুকে গুঁজে দেয়ালের সাথে হেলে দাড়িয়ে আছে। আমি একটু মুচকি হেসে বলে উঠলাম,,,
--ভাইয়া কখন এসেছ?
--যখন থেকে ম্যাডাম আমাদের প্রেম কাহিনী শুরু করেছেন তখন থেকে।(নিয়াজ ভাইয়া)
--এসে যখন পড়েছ তাহলে এবার দুজনে মিলে আমাকে তোমার আর তাসফি আপুর প্রেম কাহিনী শোনাও।(আমি)
-- তাসফি আপু কিরে? এতগুলো কচকচে নোট খরচ করে বউ নিয়ে আসলাম আপু ডাকার জন্য নাকি? ভাবি ডাকবি এরপর থেকে।(নিয়াজ ভাইয়া)
নিয়াজ ভাইয়া এসে আমাদের গল্পের আসরে যোগদান করল। আমাদের গল্পের আসর শেষ হতে প্রায় এগারোটা বেজে গেল। এর মাঝখানে রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম তারপর আবার গল্প শুরু করেছিলাম।
ঘড়ির কাটায় রাত প্রায় আড়াইটা ছুইঁ ছুইঁ। বৃষ্টি তার জলকণা দিয়ে প্রকৃতিকে স্নান করিয়ে দিচ্ছে সেইসাথে পরিবেশকে করছে শীতল। আমার গাঢ় ঘুমটাকে ফোনের রিংটোন বেজে ছুটি জানাচ্ছে। ঘুমটাকে কোনমতেই ছুটি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ঘুম আমার চোখের পাতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু একই সাথে মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ আমাকে ডেকে যাচ্ছে। ফোনটা বেজে যাচ্ছে তো বেজেই যাচ্ছে। কোন প্রকার ক্লান্তিই তাকে গ্রাস করতে পারছে না। ঘুমের সাথে আমার চোখের পাতা অনেক সময় যুদ্ধ করে একপর্যায়ে খুলে গেল। পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে দেখার চেষ্টা করলাম কে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু চিনতে ব্যর্থ হলাম। কারণ নাম্বারটা একটা আননোন নাম্বার। ঘড়ির কাটায় চোখ রাখতে দেখি ঘড়ির কাঁটা ঠিক রাত আড়াইটার ঘরে পা দিয়েছে। এমন সময় একটা অপরিচিত নাম্বার চোখে ভেসে উঠতেই চরম মাত্রায় বিরক্ত লাগছে সাথে কিছুটা রাগও হচ্ছে। কলটা বাজতে বাজতে কেটে গেল। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি মোট ১২ টা কল। তাও আবার এই একই অপরিচিত নাম্বার থেকে। এর মাঝেই ফোনটা আবারও বেজে উঠল। কলটা রিসিভ করে আমি কিছু বলে উঠার আগে অপর পাশ থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠে ভেসে আসলো,,,
--ফোন ধরছো না কেন? ঘুমাচ্ছিলে?
ঘুমন্ত মানুষকে ঘুম থেকে উঠিয়ে যদি কেউ বলে ঘুমাচ্ছিলে তখন কি পরিমান রাগ হবে? মনে তো চাচ্ছে পারলে ব্যাটাকে ফোনের মধ্যেই গলা চেপে ধরি।একপ্রকার ঝাঁঝালো কণ্ঠেই বলে উঠলাম,,,
-- ঘুমের থেকে উঠাইয়া আবার জিজ্ঞেস করতাছোস ঘুমাইছি নাকি। ওই তোর ঘরে মা বোন নাই?আমার শান্তির ঘুম নষ্ট করলি কেন? ঘুম নষ্ট করতে মন চাইলে নিজের বৌরে কল দিয়া ঘুম ভাঙ্গাইয়া পিরিতের আলাপ কর।
--তাই তো করছি।( অপরিচিত লোক)
এমন একটা কথা বলায় আমি একটু ভরকে গেলাম। আমি কপালে দুইটা ভাঁজ ফেলে বলে উঠলাম,,,
-- কি?
অপর পাশ থেকে আবারও উত্তর এলো,,,
-- আমার বউকেই তো কল দিয়েছি পিরিতের আলাপ করার জন্য।( অপরিচিত লোক)
এবার সম্পূর্ণরূপে ঘুম আমার থেকে ছুটি নিয়ে পালিয়ে গেল। একটু নড়েচড়ে খাটের উপর শোয়া থেকে বসে পরলাম।তাকে বললাম,,,
-- কে আপনি? কি উল্টাপাল্টা বলছেন?
অপর পাশ থেকে কানে বেজে উঠলো,,,
-- তোমার সারা জীবনের বর্ষণ সঙ্গী।
লোকটার কথা শুনে বুকের মধ্যে ধুকপুক ধুকপুক একটা আওয়াজ বেজে উঠলো। একটু স্বাভাবিক হয়ে নিজের কন্ঠটা কেও স্বাভাবিক রেখে তাকে প্রশ্ন করলাম,,,
-- কি চাই আপনার?
লোকটা জবাবে বলল,,,
--বউয়ের সাথে পিরিতের আলাপ করতে চাই।
-- এখানে আপনার কোন বউ নেই। রং নাম্বারে কল করেছেন।(আমি)
-- যার সঙ্গে কথা বলছি তার কন্ঠটা আমার বউয়ের মত মনে হচ্ছে তাই এখন আমি তার সাথেই পুরো রাতটা কথা বলব।(বর্ষণ সঙ্গী)
-- আমি রাত বিরাতে কোন পাগলের সাথে কথা বলি না।(আমি)
কথাগুলো বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। এরপর ফোনটা ইচ্ছে করেই বন্ধ না করে সাইলেন্ট করে রেখে ঘুমানোর জন্য আবার শুয়ে পড়লাম। কারণ সকালে উঠে দেখতে হবে না লোকটা কতবার কল দিয়েছি?
সকালে ঘুম থেকে উঠে আর ভার্সিটি যাইনি। কারণ আজকে তাসফি ভাবির আমাদের বাসায় প্রথম দিন। তাই চিন্তা করলাম তাকে সঙ্গ দেবো। কালকে থেকে না হয় ভার্সিটি যাব।ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি বর্ষণ সঙ্গী নামক লোকটার ৭৮ টা কল স্ক্রিনে ভেসে আছে।সকাল সকালই অদ্ভুত একটা কাজ করে বসলাম। আর তা হলো লোকটার নাম্বার মোবাইলে বর্ষণ সঙ্গী দিয়ে সেভ করে রাখলাম। নিজের কাজে নিজেই অবাক না হয়ে পারলাম না। কিন্তু পরমুহুর্তেই মনে মনে একটু হেসে উঠলাম।
সারাদিন আমাদের দুজনের খুব ভালোই কেটেছে। সকালে কমলা আন্টি এসে একবার আমাদের দুজনকে দেখে গিয়েছিলো। বিয়েতে কমলা আন্টি ছিল বিধায় ভাবিকে আর কমলা আন্টিকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন হয়নি। দুপুরে দুজন একসাথে রান্না করেছি। বিকেলের দিকে ভাবিকে নিয়ে ছাদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করেছি।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন টা চেক করে দেখি একটা মেসেজ এসেছে। তবে মেসেজটা রাত দুইটার দিকে এসেছিল। মেসেজ ওপেন করে দেখি লেখা আছে,,,
"আজ আর আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনীর ঘুম নষ্ট করতে চাই না। তাই ম্যাসেজ করেই জানতে চাচ্ছি - ঘুমাচ্ছো?"
মেসেজটা দেখে আমার এই মুহূর্তে বিরক্ত হওয়ার কথা। তবে আমার স্নায়ু এই মুহূর্তে বিরক্তির কোন অনুভূতি মস্তিষ্কে প্রেরণা না করে বরং একরাশ ভালো লাগার অনুভূতি মস্তিষ্কে পাঠাচ্ছে। আচ্ছা লোকটার এমন অদ্ভুত কর্মকাণ্ড কি আমার ধীরে ধীরে ভালো লাগতে শুরু করেছে? নাকি লোকটাকেই এখন ভালো লাগতে শুরু করেছে?
জীবনের কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেল। খুব ভালোভাবেই জীবনটা চলছে।মানুষের যে কখন কাকে ভালো লেগে যায় তা আসলেই বলা মুশকিল। আমারও ভালো লেগে গেছে আমার বর্ষণ সঙ্গিকে।
সেই দিন তার নাম্বার সেভ করার পরে থেকে আমাকে মাঝে মধ্যেই সে ম্যাসেজ করত।প্রথম প্রথম তার পাঠানো বার্তা পরে মনকে ভালো লাগার রঙে রাঙাতাম।এরপর আমিও একটু আকটু তার ম্যাসেজের উত্তর দিতাম। তাকে আমি একদিন বলেছিলাম আমি তাকে দেখতে চাই কিন্তু সে বলেছিল এটা নাকি একটা সারপ্রাইজ। যেদিন উনিশের কোঠায় আমি পা বাড়াবো সেদিনই নাকি সে আমার সামনে আসবে। এরপর থেকে শুরু হয় আমার অপেক্ষার প্রহর। যে প্রহরের আমি কাল ইতি টানবো। হ্যাঁ কাল আমি আঠারো তে পা দিয়ে সব অপেক্ষার ইতি টানতে যাচ্ছি।
রাতে বারান্দায় বসে বসে মোবাইলে গান শুনছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম কখন বর্ষণ সঙ্গী মেসেজ দিবে। একটু পরেই টুংটাং শব্দে মেসেজ আসলো,,,
"প্রিয়তমা, তোমাকে শুভ্র বেলি ফুলের ঘ্রাণ মাতানো শুভেচ্ছার সঙ্গে জানাই শুভ জন্মদিন।প্রতীক্ষার অন্ত ঘটিয়ে দেখা হবে আমাদের ইনশাআল্লাহ।"
কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির ছোট্ট এই বার্তা পেয়েই আমার ঠোঁটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলো আমার চোখ। অপেক্ষা না করে তাকে দ্রুত উত্তর দিলাম,,,
-- সত্যি আমরা কাল দেখা করব?
সঙ্গে সঙ্গে ফোনের মেসেজ টোন শব্দ করে জানান দিলো আমার বর্ষণ সঙ্গী আমাকে উত্তর দিয়েছে।
--হ্যাঁ করব। তবে তার আগে দরজার সামনে এসে দরজা টা একটু খুলে দেখো।
মেসেজটা পড়ে তড়িৎ গতিতে ছুটলাম দরজার দিকে। দরজা খুলে দেখি সেই ঠিক প্রথম দিনের মতো নীল রেপিং পেপারে মোড়ানো একটি বক্স যার উপর রয়েছে ঈষৎ হালকা হলুদ বর্ণের গোলাপ ফুল। সেই আগের মতই লেখা রয়েছে বর্ষণ সঙ্গিনীর জন্য। তবে এই বক্স টা একটু বড়। কেউ দেখার আগেই তাড়াতাড়ি করে দুই হাতে কুড়িয়ে নিলাম বক্সটা। এরপর আবার তড়িৎগতিতে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
রেপিং পেপার এর মোড়ানো বক্স টা খুলে নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। বক্সের ভিতরে সেই আগের মতই রয়েছে একটা বেলি ফুলের মালা। তবে এবারে মালার নিচে কোন শাড়ি নেই রয়েছে সারি সারি কাচের চুড়ি। সাদা, কালো, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ প্রায় সব রঙের চুড়ি রয়েছে এখানে। সাথে কিছু চকলেটও আছে। তাড়াতাড়ি করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বর্ষণ সঙ্গী দিয়ে সেভ করা নাম্বারে মেসেজ করলাম,,,
--আপনি কিভাবে জানলেন চুরি আমার পছন্দের?
--আমার সম্পদ আর আমাকেই জিজ্ঞেস করছো মালিক কে?
ম্যাসেজটা পড়ে মনের মধ্যে অন্যরকম একটা প্রশান্তির হাওয়া বইছে।মনের মধ্যে চেপে রাখা একটা প্রশ্ন করে বসলাম তাকে।
--আচ্ছা আমাদের দেখা হবে কোথায়?
ওপাশ থেকে জবাব এলো,,,
-- ঠিক সময়ে জানিয়ে দেব।
এই লোকটা কেমন যেন অদ্ভুত। সব কিছুই আমার কাছে ধোঁয়াশা ভাবে উপস্থাপন করেন। তাকে বিদায় জানিয়ে শান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে খুব আরাম করে ঘুমাতে গেলাম।
কোন একটা পে পো ধরনের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলতে আমার সামনে তাসফি আপুকে আবিষ্কার করলাম। হাতে একটা কেক নিয়ে দাঁড়ানো।পাশেই দাঁড়িয়ে আছে নিয়াজ ভাইয়া হাতে দুইটা বেলুন নিয়ে।আমি উঠতেই সাথে সাথে বেলুন দুইটা ফাটিয়ে ফেলল। আমার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাদু। ঠিক মাথার পাশে নয় বলতে গেলে একেবারে কানের পাশে একটা বাঁশির মতো কিছু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আরেক কানের পাশে একটা ছোট্ট বক্স থেকে সুর ভেসে আসছে…
আজকের আকাশে অনেক তারা
দিন ছিল সূর্যে ভরা
আজকের জোছনাটা আরও সুন্দর
সন্ধ্যাটা আগুন লাগা
আজকের পৃথিবী তোমার জন্য
ভরে থাকা ভালো লাগা
মুখরিত হবে দিন গানে-গানে আগামীর সম্ভাবনায়
তুমি এই দিনে পৃথিবীতে এসেছো শুভেচ্ছা তোমায়
তাই অনাগত ক্ষণ হোক আরও সুন্দর উচ্ছল দিন কামনায়
আজ জন্মদিন তোমার।
গানটা শুনে ওদের মতলব বুঝতে পারলাম। উঠে বসে ঠোঁটের কোণে একটা চওড়া হাসি নিয়ে সবার দিকে তাকালাম। নিয়াজ ভাইয়া গানটা বন্ধ করে দিল। এবার সবাই একসাথে বলতে লাগলো "হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার জুইঁ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ"। ওদের এমন কর্মকাণ্ডে চোখ বেয়ে খুশির জলকণা পরল। বিগত তিন চার বছরে সাদু, বাবা আর নিয়াজ ভাইয়া ছাড়া কেউ আমাকে বার্থডে উইশ করেনি। আমার জন্মদিন টা উইশ করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আর কোনো আয়োজন হতো না। হবেই বা কি করে?বিগত দুই বছর ছিলাম জায়েফের বাড়িতে। সবাই কেবল ফোন করে একটু খোঁজখবর নিতো আর উইশ করতো। ব্যাস এইটুকুই ছিলো আমার জন্মদিন। জায়েফের বাড়িতে যাওয়ার তিন বছর আগেই নিয়াজ ভাইয়া বিদেশে চলে গিয়েছিল। বাবা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেও কখনো কেক কাটা হতো না। কারণ বাবা এসব পছন্দ করেন না। কমলা আন্টি আমার জন্মদিনের দিন আমার পছন্দের খাবার রান্না করে দিয়ে যেত। আর সাদু সেই সকালে আসতো সারাদিন বাসায় থাকত আর রাতে চলে যেত।
আজকে ওরা যে বাবার অগোচরে আমার রুমে এসে এসব কর্মকাণ্ড করছে তা আমি ভালোই জানি। কারণ এই সময়ই বাবা বাইরে হাঁটতে যান। ফ্রেশ না হয়েই কেক টা কাটলাম। তারপর সবাইকে একটু একটু করে মুখে তুলে দিলাম। সাদু আমার জন্য নিজের হাতে চটপটি বানিয়ে নিয়ে এসেছে। তার সাথে একটা চকলেট বক্স আর একটা কালো হিজাব এনেছে। কালো হিজাব এনেছে কেন তার কারণও আমি জানি। আমার বেশিরভাগ সময়ই কালো হিজাব পরা পড়ে। বলতে গেলে কালো হিজাবটা সবচেয়ে বেশি প্রিয়।
আজ আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া বাসায় আসবে।তার কারণ হলো দুইটা।এক,আমার জন্মদিন বলে আর দুই, তাসফি আপুর হাতের রান্না খাবে বলে।ভাইয়ার বিয়ের পর এই প্রথম তারা দুই জন আমাদের বাসায় আসবে। তাই সজল ভাইয়ার কথা হলো ভাবির হাতের রান্না খাবে।
দুপুরে গোসল করে বের হতেই উপলব্ধি করি পুরো বাড়িতে আমার পছন্দের খাবারের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পরেছে।দুইটার দিকে আমাদের বাসায় সজল ভাইয়া, আলআবি ভাইয়া আর সাথে আরেকটা ভাইয়া আসে।পরিচয় পর্বে জানতে পারি তার নাম সাঈম। সাঈম ভাইয়া নিয়াজ ভাইয়ার ভার্সিটি ফ্রেন্ড। তাদের দুজনের যোগাযোগ ছিল কিন্তু বাসায় আসা হয়নি কখনো। আজকেই প্রথম আমাদের বাসায় এসেছে।তাদের কথা বলাতেই বুঝতে পেরেছি সাঈম ভাইয়া একটু অন্য ধাঁচের ব্যাক্তিত্ব বহন করে।কিছুটা ফ্লার্টবাজ টাইপ।সাথে কিছু টা রসিকও বটে। অবশ্য সাঈম ভাইয়া দেখতে মন্দ নন।
দুপুরে খাবার এর টেবিলে আমি,সাদু, বাবা,নিয়াজ ভাইয়া,তাসফি আপু,আলআবি ভাইয়া, সজল ভাইয়া আর সাঈম ভাইয়া বসে খাচ্ছিলাম। আমার ঠিক সামনে বসেছে সাঈম ভাইয়া।তার একপাশে সজল ভাইয়া আর আরেক পাশে আলআবি ভাইয়া।খাওয়ার মাঝে মনে হলো আমার পায়ে কেউ অনবরত গুঁতো দিয়ে যাচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে কেউ সামনে থেকে গুঁতো মারছে আরেকবার মনে হচ্ছে কেউ আড়াআড়ি ভাবে গুঁতো মেরে যাচ্ছে। এভাবে আমি শান্তি মতো আমার প্রিয় ইলিশ মাছ টা খেতেও পারছি না।এতোক্ষণের গুঁতো গুঁতিতে মেজাজ টা এবার বিগড়ে গেলো। জোরে আমার সামনে থাকা পা জোড়ায় একটা লাথি মেরে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার সামনে বসা সাঈম ভাইয়া চিৎকার দিয়ে উঠল। তার দিকে তাকিয়ে আমি নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। তখন নিয়াজ ভাইয়া বলে উঠল,,,
-- কোন সমস্যা?
সাঈম ভাইয়া কিছু টা কাতর কন্ঠে বলে উঠলো,,,
--দোস্ত কে যেন লাথি মারলো।
সাঈম ভাইয়ার কথা শেষ হতে না হতেই টেবিলের উপর রাখা আমার ফোনটা তে আলো জ্বলে উঠল বুঝতে পারলাম কোন ম্যাসেজ এসেছে। খাবার টেবিলে সবাই একসাথে থাকবে বলে ফোনের সাইলেন্ট মুড অন করে নিয়েছিলাম। বাহাতে টেবিলের নিচে ফোনটা নিয়ে দেখি একটা আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে,,,
"খাবার খাওয়ার সময় কেবল খাবারের দিকেই সব ধ্যান জ্ঞান দিলে চলে না। আশে পাশেও তাকাতে হয়। তাড়াতাড়ি জামার ওড়না ঠিক করো"
ম্যাসেজটা পড়ে তড়িৎ গতিতে নিজের দিকে তাকালাম আসলেই আমার ওড়না কিছুটা সরে এসেছে। একটু নড়েচড়ে নিজেকে পরিপাটি করে বসলাম। তবে বোধগম্য হচ্ছে না এই মহান ব্যক্তিটা কে। আমার চিন্তা ভাবনার মধ্যেই আলআবি ভাইয়া সজল ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,,,
--সজল আমি নতুন সিম নিয়েছি তোর ফোনে কল করেছিলাম।দেখ লাস্টের দুইটা ডিজিট ৫৯,গ্রামীন নাম্বার।
-- ভাই এত জরুরি কথাতো পরেও বলতে পারতি। একটু শান্তিতে খেতে দেনা।(সজল ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়ার বলা কথাটা আমার কর্ণপাত হতেই তাড়াতাড়ি করে আমার মোবাইলে আসা ম্যাসেজটার নাম্বারটা আবার চেক করে নিলাম। নাম্বারটা আলআবি ভাইয়ার বলা নাম্বারটার সংক্ষিপ্ত ডিটেইলস এর সাথে মিলে যায়। মাথা তুলে আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। দেখি সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আমি তাকানোর সাথে সাথে একটা বেপরোয়া ভাব নিয়ে নিজের মতো করে খেতে লাগলেন। এই লোকটার এমন ভাব দেখলে গা জ্বলে যায়। সাহায্য করবে ঠিকই কিন্তু পরে আবার এমন ভাব করবে যেন মনে হচ্ছে সাহায্য করে আবার আমাকে খোটা দিচ্ছেন। তবে এই মুহূর্তে সাঈম ভাইয়ার কথা মনে করে বেশ খারাপ লাগলো। কারন বেচারাকে খুব জোরেই একটা লাথি মেরেছিলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে আমরা সবাই ড্রইং রুমের ফ্লোরে মাদুর পেতে গোল হয়ে বসে পড়লাম। আমাদের উদ্দেশ্য হলো সবাই মিলে বালিশ ছোড়াছুড়ি খেলব। বুদ্ধিটা অবশ্য তাসফি আপু আর সাদুর।সকাল বেলার সেই ছোট্ট বক্সটায় ছোট্ট করে গান ছেড়ে দিলাম। অর্থ্যাৎ কিছু টা কম সাউন্ড দিয়ে। কিছুসময়ের মধ্যেই আমাদের খেলার আসর জমে উঠলো। খেলার শেষ পর্যায়ে গিয়ে টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে নিয়াজ ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করল আলআবি ভাইয়া।
গত মাসেই আলআবি ভাইয়ারা বাসা চেঞ্জ করে আমাদের এলাকায় শিফট হয়েছেন। তার প্রধান কারণ হলো আলআবি ভাইয়ার অফিস। আমাদের এখান থেকে অফিস টা একটু কাছে বলে তারা বাসা শিফট করে এই এলাকায় এসেছেন। নিয়াজ ভাইয়ার থেকে শুনেছিলাম আমাদের বাসা থেকে তাদের বাসায় যেতে আধা ঘন্টার পথ অতিক্রম করতে হয়। তাই আলআবি ভাইয়া আজ আমাদের বাসা থেকে একটু দেরী করেই বের হবেন।সজল ভাইয়া আজকে আলআবি ভাইয়ার বাসায় থাকবেন।
সন্ধ্যার দিকে সাঈম ভাইয়া চলে যায়। সাদুকে আগেই বলে দিয়েছিলাম ও যেন আজকে রাতে আর বাসায় না যায়। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে আমার বর্ষণ সঙ্গীর সাথে দেখা করতে যাওয়া। একা থাকলে কোনো বাহানা দিতে পারব না। কিন্তু সাদু থাকলে কোনো রকমের বাহানায় বাসা থেকে বের হতে পারব। সাদুকে যখন বলেছি আমি আমার বর্ষণ সঙ্গীর সাথে দেখা করতে যাব। তখন ও নিজে থেকেই বলেছে আমাকে দেখা করার জন্য ও রাতটা থেকে যাবে।
বিকেল পর্যন্ত খুশিই ছিলাম। তবে ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে যখন চারদিকে অন্ধকার হয়ে রাত বাড়তে লাগল তখন আমার মনেও অন্ধকার নামতে লাগল। কারণ বর্ষণ সঙ্গীর কোন খোঁজ খবরই নেই। তাকে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম কিন্তু সে আমাকে কোনো উত্তর দেয়নি। বিকেলবেলা সাদুর সাহায্য নিয়ে তার দেওয়া শাড়িটা পড়ে অপেক্ষায় ছিলাম কখন এসে দেখা করার কথা বলবে। কিন্তু একটু আগে এশারের আজান দিয়ে দিয়েছে বলে শাড়ি টাও খুলে ফেললাম। মনটা বিষন্নতায় ভরে গেল। আজ বুঝি আর তাকে দেখা হবে না। খুব খারাপ লাগছে এই মুহূর্তে।মনে হচ্ছে একটু পরেই আমার চোখের জল গড়িয়ে পড়বে। সাদু শুধু আমাকে সান্ত্বনা দিয়েই যাচ্ছে। একটু পর পরই বলছে "আসবে আসবে"।কিন্তু তার তো আসার কোন নামই নেই। আর কখনোই বা আসবেন? রাত ৮ টার বেশি বাজে। অপেক্ষা করতে করতে রাতের ডিনারটা সেরে ফেললাম। কিন্তু সে এখনো ম্যাসেজ দেয়নি। সজল ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়া বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে। রাত প্রায় সাড়ে দশটা। বিষন্নতায় ঘেরা ভাঙ্গা মন নিয়ে ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। অজান্তেই চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। চোখের জল পড়তে দেরি কিন্তু আমার ফোনের মেসেজ টোন বাজতে দেরি হলো না। তাড়াতাড়ি করে উঠে তড়িৎ গতিতে ফোনের ম্যাসেজ চেক করলাম। যে কাঙ্খিত ব্যক্তির ম্যাসেজ দেয়ার কথা ছিল সেই ই ম্যাসেজ দিয়েছে।
" প্রথমেই আমার বর্ষণ সঙ্গিনীকে অনেকগুলো সরি জানাই। সরি! সরি! সরি!তিন সরি বললাম। এবার ঝটপট করে তোমাদের বাসার ছাদে এসে পড়ো"।
ম্যাসেজটা পড়ে খুশিতে আটখানা হয়ে বাসার পুড়নো থ্রি পিছটা পড়েই দৌড় লাগালাম। একদৌড়ে দরজার সামনে এসে দরজা খুলে যেই না পা বাড়াতে যাব অমনি কেউ এসে পিছন থেকে খপ করে আমার হাতের বাহু ধরে ফেলল। এরকম হওয়ায় অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু পরক্ষনেই পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার কলিজার বান্ধবী শয়তান মার্কা একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এমন হাসি দেখে অগ্নিমূর্তি হয়ে ওর দিকে তাকালাম। সঙ্গে সঙ্গে গড় গড় করে ও বলতে লাগল,,,
-- বইন এমনে তাকাইছ না। তোরে এহন পুরাই পেত্নীর মত লাগতাছে। একটু নিজের দিকে তাকা।দেখ তুই কি পইড়া আছোস?এমন রংচঙ ওঠা জামা পইড়া তো আমি হাগতেও যাইনা। এগুলো পইড়া যদি তুই আমার জিজুর সামনে যাছ মান-সম্মান তোর না গেলেও আমার যাইবো।
ওর কথা শুনে আমি আমার পরনের জামার দিকে তাকালাম সত্যিই জামাটা একেবারেই বেমানান। রং জ্বলে গিয়ে খুব বিশ্রী অবস্থা জামাটার। নিজের অবস্থা উপলব্ধি করতে পেরে সাদুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম। তারপর সাদু আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলো। পুনরায় ও আমাকে খুব যত্ন করে সেই শাড়িটা পরিয়ে দিল। এরপর আমি নিজ হাতে সাদুর কালো হিজাবটা পড়ে নিলাম। কালকের দেয়া তার সেই আধশুকনো বেলি ফুলের মালাটা এক হাতের কব্জিতে জড়িয়ে নিলাম।কাঁধের একটু নিচে সেফটি পিন দিয়ে গোলাপ গাছ থেকে একটা হালকা হলুদ গোলাপ নিয়ে আটকে দিলাম।সাদু আমাকে চার দিকে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখে বলে উঠলো,,,
--একদম মাশাল্লাহ। পুরা ঝাক্কাস। এবার যা। সিমরান টাইপ একটা দৌড় দিয়ে চলে যা।
ওর কথায় একটু লজ্জা পেলাম। এরপর হাতে মোবাইলটা তুলে দেখি এগারোটা বেজে গিয়েছে। তাই তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে বের হতে যেয়ে আবার ভেতরে ঢুকে পড়লাম। সাদুকে এসে জিজ্ঞেস করলাম,,,
--ভাবি বা ভাইয়া যদি খোঁজ করতে আসে তখন কি হবে?
-- তোমার ভাই ভাবী এখন রোমান্সে বিজি আছে। প্যারা নাই। চিল চিল। যা তুই মনের সুখে তোর বর্ষণ সঙ্গীরে দেইখা আয়।(সাদু)
-- ওই ছ্যামরি তুই জানোছ কেমনে আমার ভাই ভাবী এখন কি করে?(আমি)
-- আরে বোইন এইটা কমন সেন্স এর ব্যাপার। নতুন নতুন বিয়ে হইছে। এখন তুমি বুঝবা না তোমার বিয়ে হইয়া নেক তারপর বুঝবা।(সাদু)
-- ও নিজে তে মনে হয় যেন ১০০ টা বিয়ে কইরা বইসা আছো।(আমি)
--বোইন তোর কি যাইতে মন চাইতাছে না? এতোক্ষন তো কাইন্দা সব ভাসাইয়া ফেললি।যা এখন দয়া কইরা।(সাদু)
ওকে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে আমি আমার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলাম। কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে এসে কেমন যেন গা ছমছম করে উঠল। কারন এখানে আলো বলতে গেলে একেবারে নেই ই। প্রথমে ভেবেছিলাম অন্ধকারে উঠতে পারব তবে এখন মনে হচ্ছে ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালাতে হবে। ফোনের লাইট জ্বালানোর জন্য ফোনটা অন করে অর্ধেক পিনকোড দিয়েছি, ঠিক সেই সময়ে কেউ একজন ঝড়ের গতিতে নেমে এসে আমার সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়ে চলে গেল। ধাক্কা সামলাতে না পেরে আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। ফোনের সাথে আমিও ছিটকে আমার দাঁড়ানো সিঁড়ি থেকে কয়েক ধাপ নিচে পড়ে গেলাম। পড়ে গিয়ে মাথার মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করতে পারলাম। মনে হচ্ছে কোন ব্ল্যাকহোল আমাকে গিলে ফেলছে। চারপাশে অন্ধকার দেখে আমার মনে হচ্ছে সব অন্ধকার গুলো আমার চোখে এসে ভর করছে। বুঝতে পারছি ধীরে ধীরে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
চলবে...
Writer:- হুমাশা এহতেশাম