> বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ২৫, ২৬ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story - Love Story Bangla
-->

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ২৫, ২৬ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story - Love Story Bangla

--সার্থক ভাইয়া আপনি?

আমি আর সাদু যখন গবেষণা করছিলাম তখন আগমন ঘটে সার্থক ভাইয়ার।আর তখনি সাদু তাকে এই কথাটা বলে।তাকে এখানে এই মুহূর্তে আমরা আশা করিনি। সার্থক ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

--আমারও তো একি প্রশ্ন।

তারপর ভাইয়ার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম আমাদের দেখা টা কাকতালীয় ভাবে হয়ে গিয়েছে। সার্থক ভাইয়া নাকি আলআবি ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছিল।আলআবি ভাইয়া  সার্থক ভাইয়া আসার আগেই বেড়িয়ে পরেছে বলে আমাকে আর সাদুকে সার্থক ভাইয়াই বাসায় দিয়ে আসবে বলেছেন।একটা কথা বারবার মাথায় ঘুরছে। আলআবি ভাইয়া ফোনে কাউকে বলছিলেন "তোর বোনকে নিয়ে যা"।কথার ধরনে মনে হচ্ছিল আমার কথাই বলছিলেন নিয়াজ ভাইয়ার কাছে। কিন্তু নিয়াজ ভাইয়া তো এলো না।বরং তার বদলে সার্থক ভাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল।

আমি আর সাদু সার্থক ভাইয়ার গাড়িতে বসে আছি।আলআবি ভাইয়ার ওখান থেকে বের হয়ে কিছুদূর আসতেই সার্থক ভাইয়ার একটা কল আসে।তাই ভাইয়া গাড়ি থেকে  নেমে ফোনে কথা বলছে। সাদু বসে বসে মোবাইলে একটা ফেসবুক পেজ থেকে ড্রেস দেখছে আর একটু পর পর আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে  বলছে "এইটা সুন্দর না? দেখ দেখ এইটাও সুন্দর কিন্তু "। ওর এমন কাজে প্রথমে বিরক্ত না লাগলেও এখন বিরক্তি ভাব চলে এসেছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি সামনের একটা সরু চিকন গলিতে কয়েকজন মিলে জটলা পাকিয়েছে। এখানে এদের মধ্যে যুবক সংখ্যাই বেশি। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে না স্বাভাবিক। কারণ দেখে বোঝা যাচ্ছে কোন একজনকে সবাই মিলে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। জটলার ফাঁকফোকর দিয়ে আবছা আবছা দেখতে পেলাম যেই ছেলেটাকে সবাই মিলে কিছু একটা বলছিল সেই ছেলেটাকে কেউ একজন এসে কলার ধরে দুই গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিল। চড় দেয়া লোকটাকে দেখে মনে হল কিছুটা পরিচিত। হঠাৎ করেই একটা নাম মাথায় খেলে গেল, তা হলো আলআবি ভাইয়া। যখনই সাদুকে ডাক দিয়ে বলতে যাব তখনি আমাদের গাড়িটা ওখান থেকে প্রস্থান করলো। এর মধ্যে সার্থক ভাইয়া কখন গাড়িতে এসে বসেছে তা টেরও পাইনি।

মনে মনে ভাবছি ওইটা তো আলআবি ভাইয়া নাও হতে পারে। কারণ যাই হোক না কেন আলআবি ভাইয়া এমন গুন্ডাগিরি করবে না কোনদিন। কিন্তু তার পড়নের শুভ্র পাঞ্জাবি তো আমার মস্তিষ্ককে জানান দিচ্ছে এটা হয়তো বা আলআবি ভাইয়া। ধুর ছাতার মাথা! ভার্সিটিতে আলআবি ভাইয়াকে দেখার পর থেকেই আমার অর্ধেক মাথা ব্যথা হয়ে যায় তাকে নিয়ে গবেষণা করতে করতেই। 

আমার দৃষ্টির সামনে থাকা বিলের পানিতে টুপটাপ করে বৃষ্টির জলকণা পড়ে নীরব বিলটার পানিকে কে কাঁপিয়ে তুলছে বারবার। বিকেল হওয়া সত্বেও মেঘের দলেরা আকাশে তাদের অধিকার বিস্তার করে চারপাশকে সন্ধ্যার রূপ দিয়েছে। পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজ তিন দিন হলো। কাল আমাদের ভার্সিটির সুবর্ণ জয়ন্তী। সেই সুবাদে সকল সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরাও আমন্ত্রিত কালকের অনুষ্ঠানে। ভাবছি, সকল সাবেক ছাত্র ছাত্রী অর্থাৎ পঞ্চাশ বছরের পুরনো ছাত্র-ছাত্রীরাও এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে নাকি? বেঁচে থাকলে হয়তো বা এখন বার্ধক্য তাদের ছুঁয়ে গিয়েছে। তাদের ছেলে-মেয়েদের হয়তো বা বিয়েও হয় গিয়েছে। আর ছেলে-মেয়েদের সন্তান সন্ততিও হয়ে গিয়েছে হয়তো বা। মানে এখন তাদের নাতি পুতি ও আছে। বাহ কি মজা! ছেলে মেয়ে নাতিপুতি নিয়ে তারা ভার্সিটিতে আসবে। যখন আমাদের ভার্সিটির বর্ষপূর্তি হবে ইনশাল্লাহ তখন আমি আর সাদুও বার্ধক্যের ছোঁয়া নিয়ে ভার্সিটির সেই চিরচেনা গেট  অতিক্রম করে ধীরে ধীরে লাঠি ভর দিয়ে ভিতরে  প্রবেশ করব। তখন হয়তো বা মাঠ প্রাঙ্গণে দৌড়াদৌড়ি করতে পারব না কিন্তু সাদু আর আমি ঝগড়া তো করতে পারব। আমার চিন্তা ভাবনায় আমি নিজেই মনে মনে হেসে উঠলাম।

এতোদিনে আলআবি ভাইয়ার পরিবর্তনের কারণ না জানলেও তার কাজ সম্পর্কে জানা হয়ে গিয়েছে। তা হলো সমাজসেবা আর রাজনীতি। তাকে হঠাৎ করে রাজনীতিতে কেন যুক্ত হতে হলো তা বুঝতে যাওয়া আর আমার অন্ধকারে সূচঁ খোঁজা একই কথা। তার একটা নিজস্ব "স্ট্যান্ড ফর জাস্টিস"(কাল্পনিক) নামক সংস্থা রয়েছে। তার সংস্থা মূলত গরিব-দুঃখীদের ন্যায়ের জন্য অধিকারের জন্য লড়ে থাকে।আলআবি ভাইয়ার সংস্থা টার কথা জানতে পেরে খুব ভালো লেগেছিল। তার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা বোধ কাজ করে এখন। কিন্তু তার মারামারি-কাটাকাটির ব্যাপারটা মোটেও ভালো ভাবে নিতে পারছিনা। সে তো সারাদিন সংস্থা নিয়েই পড়ে থাকতে পারেন।তা এখানে রাজনীতি করার দরকারটা কোথায়?

সন্ধ্যার দিকে দুই হাতে দুটো শাড়ি নিয়ে ভাইয়ার রুমে অগ্রসর হলাম। উদ্দেশ্য হলো কোন শাড়িটা কালকে অনুষ্ঠানে পড়ে যাব। সাদু কে বলেছিলাম কোন শাড়িটা পড়লে ভালো হবে। ও আমাকে বর্তমানে আমার হাতে থাকা দুইটা শাড়ি থেকে যেকোন একটা পড়তে বলেছে। কিন্তু এখন আমি নিজেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি কোনটা রেখে কোনটা পড়বো। দুটো শাড়িই আমার খুব পছন্দের। কারণ দুটো শাড়িই আমার দুজন প্রিয় মানুষ আমাকে দিয়েছে। একটা আমার বর্ষণ সঙ্গীর দেওয়া। আরেকটা নিয়াজ ভাইয়ার দেওয়া।

ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখি তাসফি ভাবি সন্ধ্যেবেলা তেও মাথায় হাত রেখে শুয়ে আছে। ভাবি কে দেখে একটু অবাক হলাম। কারন সচরাচর সন্ধ্যাবেলায় তো ভাবি শুয়ে থাকে না। মনে মনে ভাবলাম হয়ত শরীর খারাপ লাগছে। ভাবি শুয়ে আছে বলে দরজায় নক করে বললাম,,,

-- ভাবি আসবো?

ভাবি কাঠগলায় জবাব দিল,,,

-- না। 

এরকমভাবে না বলায় কিছুটা আশ্চর্য হই। তারপর ভাবিকে আবার বলি,,, 

--কেন ?

--অপরিচিত কাউকে আমি রুমে ঢুকতে দেইনা।(ভাবি) 

-- মানে?(আমি) 

--মানে হলো যে ভাবে বললি আসবো সেভাবে অপরিচিতরা বলে। এবার ভনিতা না করে এক দৌড়ে খাটে এসে বসে পড়।(ভাবি) 

ভাবির কথায় হেসে দিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর দুইটা শাড়ি ই দেখালাম। ভাবি শাড়ি দুইটা টা থেকে আমাকে আমার বর্ষণ সঙ্গীর শাড়িটা বেছে দিল। ভাবি এই শাড়িটা পছন্দ করায় মনে মনে একটু বেশিই খুশি হলাম। তবে এই খুশি ভাবির বলা পরবর্তী কথাটায় হার মানতে বাধ্য হলো। কারণ ভাবি সুখী নামক রোগে রোগআক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের নতুন অতিথি আসছে। ভাবি মা হতে চলেছে, ভাইয়া বাবা হতে চলেছে, আমি ফুপি হতে চলেছি আর বাবা দাদা হতে চলেছে। খুশিতে ভাবিকে জড়িয়ে ধরলাম। ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কিছু জানে কিনা। ভাবি বলল এখন অব্দি বলেনি। খুশিতে একেবারে দৌড়াতে দৌড়াতে বাবার কাছে গিয়ে খবরটা দিলাম। ভাবি আমাকে বলতে মানা করছিল। তার নাকি লজ্জা লাগে।সে নাকি আরো পরে বলবে। কিন্তু আমি তো খুশি ধরে রাখতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে বলে ফেললাম। বাবা ও শুনে খুব খুশি হলো। তৎক্ষণাৎ বাবা বেরিয়ে গেল মিষ্টি আনতে। রাতে ভাইয়া আসার পরে আমি আর বাবা প্ল্যান করে ভাইয়ার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। ভাবি কেও শিখিয়ে দিলাম যেন কথা না বলে। ভাবি ও আমাদের মত কথা বলল না। ভাইয়া শেষমেষ না  পেরে আমাদের তিনজনকে ড্রয়িং রুমে ডেকে নিয়ে আসলো তারপর বলল,,,

-- কি সমস্যা তোমাদের কথা বলছো না কেন। কি এমন করলাম আমি? আমার ভুলটা তো বলবে। 

 তখন বাবা  বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,

-- আমাকে এত দেরীতে দাদা বানানোর জন্য এটা তোমার শাস্তি  ছিল।

বলেই বাবা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে রুমে চলে গেল। বাকি রইলাম আমি আর ভাবি। ভাইয়া একবার আমার দিকে আরেকবার ভাবির দিকে তাকাচ্ছে। হয়তোবা বুঝতে একটু সময় লাগছে। কিছু সময় পরেই  তাসফি আপু কে উদ্দেশ্য করে ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি নিয়ে বলল,,, 

--সত্যি?

ভাবির অবস্থা দেখে বুঝলাম লজ্জা পাচ্ছে ।তাই আমি ধীরে ধীরে কেটে পরলাম।

সকালে শাড়িটা পড়ে হাত ভরতি  সাদা চুড়ি পড়ে নিজেকে পরিপাটি করে সাজিয়ে গুজিয়ে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। অপেক্ষায় আছি সাদুর। একটু পর সাদু আসলে ওকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলি,,,

-- তোরে এত সুন্দর শাড়ি দিলো কেরে?

--কে দিব আবার?আমার কি জামাই আছে? (সাদু)

--সাদমান ভাই তো আছে। (আমি)

সাদু একটু বাঁকা হেসে বলল,,,

-- এইটা সাদমান এরই দেওয়া।

--তাইলে যে কইলি তোর জামাই নাই।(আমি) 

--ঠিকই তো কইছি।সাদমান আমার জামাই নাকি?(সাদু) 

--সাদমান তোমার জামাই না তাই না?তাইল এনগেজমেন্ট  করলি কোন ব্যাডার লগে।(আমি)

--এহ্। হইছে তো মাত্র এনগেজমেন্ট।জামাই তো আর হয় নাই।

-- যাই হোক, হবু জামাই তো? 

সাদু আর আমি কথা বলতে বলতে ভার্সিটিতে এসে পড়লাম। ক্যাম্পাস টাকে় খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এইরূপেও ভার্সিটি টাকে বেশ সুন্দর 
লাগছে। আশেপাশে পরিচিত-অপরিচিত মুখের অভাব নেই। চতুর্থ বর্ষ আর মাস্টার্সের ছাত্র ছাত্রীরা আজকে একটু বেশিই ব্যস্ত। এখানে যেমন বোরকা পড়া রমণী দেখা যাচ্ছে, থ্রিপিস পড়া রমণী দেখা যাচ্ছে, শাড়ি পড়া রমণী দেখা যাচ্ছে ঠিক তেমন পাঞ্জাবি পরিহিত যুবকদের দেখা মিলছে, শার্ট প্যান্ট পড়া যুবকদের দেখা মিলছে আবার ছেঁড়াফাটা নামক ফ্যাশনওয়ালা যুবকদের ও দেখা মিলছে।

মানুষের ভিড়ে এক পলক আলআবি ভাইয়াকে দেখার ভাগ্য হয়েছিল। এখন আলআবি ভাইয়াকেও সাদুর স্টাইলে বলতে ইচ্ছে করছে" মাদার তেরেসার মেল ভার্সন"। কারণ আমাদের আলআবি ভাইয়া সাদা ছাড়া মনে হয় কোন রং ছুঁয়ে ও দেখেনা। এই পর্যন্ত তাঁকে সাদা রঙের পাঞ্জাবি ছাড়া আর কোন কিছুই গায়ে চাপাতে দেখিনি। তবে আজকে একটু ভিন্নতা দেখেছি। তা হলো কালো রংয়ের একটা মুজিব কোর্ট স্টাইলের  জ্যাকেট পড়েছেন।

অনুষ্ঠানের মাঝপথে আমাদের একজন এসে বলল আমাদের ডিপার্টমেন্ট হেড আমাদের নাকি ডাকছেন। আমাদের দোতালায় যেতে হবে। আমাদের ক্লাসরুমে গেলেই নাকি স্যার কে পাব। আমি আর সাদু অনেকটাই আশ্চর্য হই। আমাদের কেন ডাকবেন? ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছিল কিন্তু তারপরও স্যার যখন ডেকেছে একবার না হলে গিয়ে দেখে আসি। 

আমি আর সাদু দোতলার দিকে সিঁড়ি বেয়ে উঠে আমাদের ক্লাস রুমে যাওয়ার আগের যেই ক্লাসরুম সেটা ক্রস করার সময় আমাদের ডাক পড়ে। আশেপাশে তাকিয়ে খেয়াল করলাম আমাদের ক্লাসরুমের আগে ক্লাসরুমটায় পাঁচজন ছেলে হাই বেঞ্চের উপর বসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা কোন সভ্য মানুষ নয়। একেকজনের কানে টপ গলায় কুকুরের বেল্টের মতো চেন আর চুলে আগুন ধরার মতো রং মানে কালার করা। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন বসে বসে সিগারেট ফুঁকছে। এদের মধ্যে থেকে দুজনকে চিনতে অসুবিধা হলো না। কারন যে দুজনকে আমরা চিনি ওরা আমাদের ভার্সিটির মাস্টার্স পড়ুয়া ছাত্র। তবে এদেরকে কোনোকালেই ক্লাস করতে দেখা যায় না। কেবলমাত্র পরীক্ষার সময় এদের চাঁদ মুখখানা দেখা যায়। সাথে আরও যে  তিনজন ছেলে তারা আমাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত। এখানে এসে মনে হচ্ছে আমরা কোন ভুল করে ফেললাম। সাদু আর আমি একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ওদের কথায় কান না দিয়ে সামনে পা বাড়াতেই একজন বলে উঠল,,,

-- এই যে সোনামনিরা! এদিকে এদিকে। আমরাই তোমাদেরকে ডেকেছি।এদিকে আসো।

ওদের কথা শুনে আমরা আমাদের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তখন সাদু বললো,,, 

--দোস্ত দেখ এই মাঝখানের ছেলেটাকে আমি চিনি।

-- কিভাবে?(আমি)

-- আরে রাফিদা আপু আর সার্থক ভাইয়ার বিয়েতে এসেছিল ছেলেটা। একেবারেই ভালো নয়। আসলে বিয়ের আগের দিন সার্থক ভাইয়া আমাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল যেন বিয়েতে ছেলেদের সঙ্গে কোন প্রকার কথা না বলি। বিয়ের আগের দিন তো আমাকে তিনটা ছেলের ছবিও দিয়েছিল আর বলেছিল এই তিনজনের থেকে যেন একশো হাত দূরে থাকি। কারণ রাজনীতির সুবাদে সার্থক ভাইয়া আর তার  আব্বুকে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়।সেই কারণে ওদের কেও না পেরে বিয়েতে দাওয়াত দিতে হয়েছিল আর ওই তিনজনের মধ্যে এই ছেলেও ছিল। সম্ভবত রাকিব নাম।

-- আচ্ছা তাইলে এখন কি করবি?(আমি)

--চল কোনো খারাপ কিছু করার আগে যাইয়া সার্থক ভাইয়ার পরিচয় দিয়া আসি।(সাদু) 

--ভিতরে ঢোকার দরকার কি? চল এই জায়গা থিকাই কাইটা পরি।(আমি)

--গুড আইডিয়া চল চল।(সাদু)

যখনই আমরা দুজন পিছনে ঘুরে চলে যেতে নিলাম তখন আমাদের ভার্সিটির ছেলেদের এসে আমাদের হাত ধরে ফেলল। একপ্রকার টেনে নিয়ে গেল। রুমের ভিতর নিয়ে হোয়াইট বোর্ডের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। একজন বলে উঠল,,, 

--কিগো পাখিরা এতো ফুরুত ফুরুত তো ভালো না। তখন সাদু বলল,,, 

--আসসালা মুয়ালাইকুম রাকিব ভাইয়া। 

ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে সাদুর দিকে তাকালো।সাদু আবার বলল,,,

-- আমাকে চিনতে পারেননি? সার্থক ভাইয়ার বোন আমি। 

তখন ওই রাকিব নামের ছেলেটা চোখের ইশারা দিয়ে আমাকে দেখিয়ে বলল,,, 

--ফ্রেন্ড হয়? 

ও বলল,,,

-- জ্বি।

-- দেখো এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলার মানুষ আমি না। তুমি যেহেতু বলেছ তুমি সার্থকের বোন তাই আমি কথা আরো সোজাসোজি বলব। কথা হল, তোমার ফ্রেন্ডকে ভালো লাগছে। 

আমি আর সাদু দুইজনেই তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম। তখন পুনরায় ছেলেটা বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,,,

--আমি ওকে প্রপোজ করবো এখনই।ওকে এক্সেপ্ট করতে বলো। আর সেই সাথে রাইট নাও ওর থেকে একটা কিস চাই আমি।

ছেলেটার লাস্ট কোথায় এতক্ষণ ভয় না হলেও এখন মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। মুহূর্তেই চোখে জলকণারা ভিড় জমালো।আমি সাদুর হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলাম। সাদু বলে উঠলো,,,

-- ভাইয়া আসলে ও একটু অন্যরকমের। আমার কাছে আরও সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে আপনি চাইলে আমি বলতে পারি ওদের কথা।

-- তোমার ফ্রেন্ড অন্যরকমের তাইতো ভালো লেগেছে। ওকে, প্রপোজ  বাদ দাও। ওইসব প্রপোজ ট্রপোজ  আমারও ভালো লাগে না। তাই নো প্রপোজ  নো একসেপ্ট। জাস্ট একটা কিস হলেই হবে।(রাকিব)

কথাটা বলেই সে আমার দিকে আগাতে লাগল। ভয়ে আমি জবুথবু অবস্থায় হোয়াইট বোর্ড এ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। মাথা নিচু করে আছি তাই দেখতে পেলাম লোকটার পা ক্রমশ আমার দিকে এগুচ্ছে। সেই সময় হুট করেই কেউ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরল অর্থাৎ আমার আর রাকিব নামের ছেলেটা ঠিক মাঝখানে। পরিচিত একটা নাম ভেসে আসলো কানে।

"বড় ভাই!"

তড়িৎ গতিতে উপরের দিকে মাথা তুলে তাকালাম। দেখি সামনে আলআবি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখমন্ডল আমি দেখতে পাচ্ছি না। আলআবি ভাইয়া রাকিবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে তার পিঠ আমার দিকে।রাকিব বলে উঠলো,,, 

--হোয়াট অ্যা কোইন্সিডেন্স!শত্রুকে যে এইভাবে দেখব ভাবিই নি।

--তুই তোর শত্রুর খবর নাই রাখতে পারিস। কিন্তু আমি বন্ধুর খবর না রাখলেও শত্রুর খবর ঠিকই রাখি।(আলআবি ভাইয়া) 

-- তা তুই কি বড় ভাই? আই মিন আলআবি ওরফে বড় ভাই।(রাকিব)


-- ভুল করেও ভাবিস না তোর সামনে পুরনো আলআবি দাঁড়ানো। 

এরা দুজন যে কি নিয়ে কথাবার্তা বলছে তার আগামাথা ও বুঝতে পারছি না। তবে এইটুকু ধারণা হয়ে গিয়েছে যে দুজনেই পূর্ব পরিচিত। এর মাঝে রাকিব বলে উঠলো,,,

-- পুরনো ক্ষত এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি? 

কথাটা বললেই মাথা কিছুটা কাত করে আলআবি ভাইয়ার  পিছনে অর্থাৎ আমার দিকে তাকাল। তারপর আবারো বললো,,,

-- পরিবেশে কেমন যেন লায়লী-মজনু গন্ধ পাচ্ছি।

-- কুত্তা সবকিছুর গন্ধ আগেই পায়।(আলআবি ভাইয়া)

আলআবি ভাইয়া এভাবে কেন কথা বলছেন? দেখে তো মনে হচ্ছে এদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। এদের দুজনেরই চোখ দেখলে যেকেউ মনে করবে চোখ দিয়েই দুজন যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। কিছু লোকের পায়ের শব্দে দরজার দিকে আমরা সবাই তাকালাম। দেখি সাত থেকে আট জন ছেলে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।একজন তাদের মধ্যে থেকে  বলে উঠলো,,, 

--বড় ভাই কোনো সমস্যা? 

আলআবি ভাইয়া একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবার রাকিবের দিকে তাকালো।হঠাৎ করেই আলআবি ভাইয়ার কথা বলার ভঙ্গিমা পাল্টে গেল।কন্ঠে গম্ভীরতা টেনে বললেন,,, 

--এখানে যখন এসেই পরেছিস আবারও দেখা হওয়াটা নিশ্চিত। 

আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরে সাদুসহ বাইরে এসে পরলেন।পিছনে পিছনে সেই সাত-আট জন ছেলে গুলোও আসছে। মাঠ পেরিয়ে  যখন ভার্সিটির গেটের দিকে যাচ্ছিলাম তখন কেউ কেউ আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আবার কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত ছিল।গেট দিয়ে বের হয়ে আলআবি ভাইয়ার থেকে হাত টা ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতেই হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন,,, 

--এই মেয়ে!

ভয়ে আমি লফিয়ে উঠলাম।আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে  সাদু। এমন এক বিকট আওয়াজে সাদুও লাফিয়ে উঠলো।আলআবি ভাইয়া পুনরায় বললেন,,, 

--এরপর থেকে যদি বোরখা ছাড়া তোকে বাইরে ঢেংঢেং করতে দেখি তাহলে জন্মের মতো বাইরে বের হওয়া দেখিয়ে দিব।

তার এমন কথায় আমার কিছুটা খারাপ লাগলো। কারন আমার সাথে তুই তুকারি করে কথা বললে আমার খারাপ লাগে। আলআবি ভাইয়া যদি আগে থেকেই আমাকে তুই করে ডাকতো তাহলে মানা যেত। নিয়াজ ভাইয়া,সজল ভাইয়া, সাদু ওদের  তুই ডাকের  মধ্যে আর আলআবি ভাইয়ার  তুই ডাক এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। উনি বোরখা পরার যেই বিষয়টা বলেছেন মানছি সেটা ভালো কথাই বলেছেন। আমার ভালোর জন্যেই বলেছেন। কিন্তু বলার ভঙ্গিমার মধ্যেও অনেক কিছু নির্ভর করে। আমাকে তো ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেই পারতেন। আমি তো আর অবুঝ নই।আলআবি ভাইয়া হঠাৎ করে স্বাভাবিক কণ্ঠে ছেলেগুলোর মধ্য থেকে কোন একজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন

-- শাফিন জুঁইয়ের বান্ধবীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়।

 আমি বলে উঠলাম,,,

-- আমরা আলাদা যাব কেন? এক সাথেই তো এসেছিলাম।(আমি)

--এক কথা আমি দু বার বলি না।(আলআবি ভাইয়া)

আমার হাত ধরে আমাকে সাদা রঙের একটা গাড়ির মধ্যে বসিয়ে দিলেন। আর নিজেও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলেন। দেড় বছর  সময়ের ব্যবধানে যেমন পাল্টিয়েছেন তিনি তেমন পাল্টিয়েছে তার জীবন যাপনের ধরণ। বলতে গেলে এখন কিছুটা বিলাসিতা তার মধ্যে বিদ্যমান। এখন আর তাকে তার রয়েল এনফিল্ড বাইকে চড়তে দেখা যায় না। আমার ভাবনার সুতো কাটে তার ডাকে। তার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা পানির বোতল আমার সামনে ধরে বলছেন,,, 

-- টেক ইট

তার কথায় এখন তাকে অনেকটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। পানিটা খেয়ে পুনরায় তাকে ফেরত দিলাম বোতল টা। তখন আবার আলআবি ভাইয়া একেবারে শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলেন,,, 

-- আচ্ছা কখন নিজেকে তোমার খুব সাহসী মনে হয়? 

তার এই ধরনের কথা বোধগম্য হলো না আমার। হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন করার মানে কি? তার দিকে আমি প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকালাম। তখন আলআবি ভাই ভাইয়া আবার বলে উঠলেন,,,

-- উত্তর দাও।

 আমি বললাম,,,

-- গ্রামের বাড়ীতে ছোটো ছোটো পিচ্চি গুলোর সাথে খেলা করতে গিয়ে যখন ওরা কোন কিছু পারেনা কিন্তু সেটা আমি পারি তখন নিজেকে খুব সাহসী মনে হয়। 

--তাহলে এরপর থেকে যদি কোনদিন আজকের মতো সিচুয়েশনে পড়ে যাও তাহলে তোমার সামনে থাকা মানুষগুলোকে তুমি তোমার গ্রামের পিচ্চি মনে করবে। মনে করবে ওদের শক্তি কম তোমার শক্তি বেশি। সব সময় রাকিবের মত খারাপ লোক গুলোকে বুদ্ধি দিয়ে ঘায়েল করবে। ওদের সাথে কখনো কথার পৃষ্ঠে ফটাফট জবাব দিতে যাবে না।(আলআবি ভাইয়া)

 কথাগুলো বলে আমার হাতের পাঁচ আংগুলের মাঝের আঙ্গুলে টায় একটা রিং পরিয়ে দিলেন। আমি তাড়াহুড়ো করে তার  হাত থেকে আমার হাত সরিয়ে নিলাম। ভালোভাবে পরখ করে দেখলাম ডিজাইনের বদলে রিংটার মধ্যে কেমন যেন ধারালো তিনটা কাঁটার মতো কিছু একটা রয়েছে । এখন আমি যদি হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে কারো শরীরে সজোরে একটা পাঞ্চ মারি তাহলে নির্ঘাত পাঞ্চ মারার স্থানটায় তিনটা ফুটো হয়ে যাবে। আমি একবার আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আর একবার আমার হাতের দিকে তাকাচ্ছি। তখন আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

-- এটা জাস্ট একটা ছোট সেফটি নিজের জন্য। সব সময় তো আর আমি তোমার সাথে থাকব না। নিজের সেফটির জন্য সবসময় সাথে কিছু একটা রাখতে হয় যেমন ধর ছোটখাটো স্টিলের ধারালো স্কেল, মরিচের গুঁড়ো, কাটা কম্পাস আরও কত কি।(আলআবি ভাইয়া) 

লোকটার এরূপ দেখে এখন তাকে অনেকগুলো ধন্যবাদ দিতে মন চাইছে। মাঝে মাঝে তার মধ্যে আমি অনেকগুলো রূপ খুঁজে পাই। মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি বহুরূপী নামক উপাধিতে ভূষিত। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে কি মানুষ বহুরূপী হয়ে যায়? এর মধ্যে আমাদের মাঝে আর কোন কথাই হলো না।অবশেষে কিছুসময়ের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে গেলাম। বাসার মেইন গেটের সামনে এসে দেখি এখনও আলআবি ভাইয়া  যান নি। তাই আবার পিছনে হেঁটে গিয়ে তাকে বললাম,,,

-- ধন্যবাদ? 

--কেন? (আলআবি ভাইয়া) 

--ধন্যবাদ না দিলে তো আবার খোঁটা দিবেন। বলবেন ম্যানার্স নেই কোনো। (আমি) 

বাসায় এসে সব কাজ নিজে একা করলাম। ভাবিকে কাজ করতে দিলাম না। অবশ্য ভাবি আগ বাড়িয়ে কাজ করতে এসেছিল।  সন্ধ্যার দিকে ভাইয়া অফিস থেকে ফিরে এসে এমন খবর দিলো যার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। বিশেষ করে আমি। 

ভাইয়ার ভাষ্যমতে, পরশু তার অফিসের কলিগের কোন একজন রিলেটিভ আমাদের বাসায় আসবে আমাকে দেখার জন্য। পছন্দ হলেই নাকি আংটি পড়িয়ে যাবে। এসব শুনে এই মুহূর্তে ভাইয়ার উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। কারন ভাইয়াই আমাকে একদিন বলেছিল আমি যদি কখনও কাউকে পছন্দ করি তবেই আমাকে বিয়ে দেবে। আর নয়তো আমি যদি সারা জীবনেও বিয়ে না করতে চাই তাহলে আমাকে বিয়ে দিবেনা। বাবা ও আমাকে একি কথা বলেছিল। কালকে অব্দিও ভাইয়া আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলেনি।আজকে হুট করে অফিস থেকে এসে এসব বলা শুরু করেছে। বাবা বলে উঠলো,,,

-- জুইঁয়ের অভিভাবক এখনো আমি। আমি ওকে কোন মতেই এই মুহূর্তে বিয়ে দিব না। আর মনে রেখো তোমার অভিভাবক ও কিন্তু আমিই।

-- আরে! আরে! তোমরা তো দেখছি আমাকে ভুল ভাবছো। ওদের পছন্দ হলেই হবে নাকি? আমাদের তো পছন্দ হওয়া লাগবে।  আর দেখতে আসলেই আমার বোনকে আংটি পরাতে দিব নাকি। আসলে কলিগ বলে একসাথে কাজ করতে হয়। তাই আমি না বলতে পারি নি। ওরা জাস্ট কালকে আসবে আর আমরা না বলে দেবো। বলব আমাদের ছেলে পছন্দ হয়নি। আমি ভেবে রেখেছি ওদের কি বলবো।

আমি রুমে এসে সাদুকে কল করলাম। প্রথমবার কল করতেই ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে আমাকে বলে দিল কল এই মুহূর্তে ওয়েটিং এ আছে। নিশ্চয়ই এখন এই মেয়েটা বসে বসে সাদমান ভাইয়ার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে। ওদের প্রেমে আর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। পূর্ণিমার চাঁদ টা বিলের পানিকে তার নিজস্ব আলো দিয়ে ঝকঝকে তকতকে করে তুলেছে। 

 বারান্দায় দাঁড়ানো অবস্থায় আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সাদু কল করেছে। কলটা রিসিভ করার পরে সাদু বলল,,,

-- এতক্ষণ পরে আমার কথা আপনার মনে পরছে?

-- হুম।সেম টু ইউ। (আমি)

--তা এতো বর্ষ পরে আমার কথা মনে হইলো কেন(সাদু)

--ফালতু আলাপের লেইগা কল দেই নাই তোরে।শোন পরশু বাসায় আসিছ।(আমি) 

-- কেন পরশু কি তোর বিয়া নাকি? (সাদু)

--না তোর দাদার বিয়া।(আমি)

--ছিঃ!ছিঃ!এইডি কইছ না বোইন।আমার দাদি শুনলে কবরের থেইক্কা আইয়া আমার দাদার লগে মারামারি কইরা যাইব। আফটার অল ওনাগো লাভ ম্যারেজ বইলা কথা ।(সাদু)
  
--তোর দাদা দাদি ও প্রেম কইরা বিয়ে করছিল?(আমি) 

--হ।(সাদু)

-- আচ্ছা তোর ফ্যামিলিতে কোন বান্দা টা প্রেম কইরা বিয়ে করেনাই নাই আমারে একটু ক তো?(আমি) 

-- শোন আমার দাদা দাদি, আমার বাপ মা, আমার চাচা চাচি সবাই প্রেম কইরাই বিয়ে করছে। প্রেম আমাদের রক্তে রক্তে শিরায় শিরায় বুচ্ছস। তাই তো আমিও এই পথ ধরছি।বংশের নাম রক্ষা করতে হইবো তো।(সাদু) 

-- তাইলে তোর জন্ম না নেওয়া বাচ্চা গুলিরে আগেই কইয়া দিছ যেন প্রেম কইরা বিয়ে করে।(আমি)

--না না এই রিক্স নিমু না। তাইলে দেখা যাইবো পেটের মধ্যে থাকতেই প্রেম শুরু করছে। (সাদু)

--ওই বলদ পেটে থাকতে আবার প্রেম শুরু করে কেমনে? এইবার আমার কথা শোন।(আমি) 

--আচ্ছা ক।(সাদু)

সাদুকে নিয়াজ ভাইয়ার বলা সব কথাগুলো বললাম। বিয়ে যে হবে না তাও বললাম। সব শুনে সাধু বলল,,,

-- দোস্ত তুই শিওর তো বিয়ে হবে না। 

--দুইশো পার্সেন্ট সিওর।(আমি) 

-- আচ্ছা ঠিক আছে। তাইলে আমি পরশু দিন সকালেই তোর বাসায় হাজির হইয়া যামু। এবার খেলা হবে মামা। অনেকদিন ধইরা জীবনে কোনো বিনোদন পাই না।পরশু একটু বিনোদন পাওয়া যাইবো।(সাদু)

--কেমনে?(আমি) 

--তোদের বাসায় আসলেই দেখবি "সাদু'স কেরামতি"।(সাদু)

--ঠিক আছে তুই তোর কেরামতি নিয়া থাক আমি ঘুমামু।(আমি) 

--জানিতো কেমন ঘুম ঘুমাবা।(সাদু)

--জানছ যহন এতো কথা কছ কে?ফোন রাখ।(আমি) 

আর কেউ জানুক আর না জানুক আমার এই প্রিয় মানুষ টা ঠিকি জানে আমি যে প্রতি রাতে একা একা আমার বর্ষণ সঙ্গীর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত থাকি।তাকে নিয়ে যে আমার কত পাগলামি তা এই মেয়ে টা খুব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানে।

আজ সকালে সাদু এসেছে। ওকে দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো পার্লারের মেয়ে  এসেছে আমাকে সাজাতে।ইয়া বড় একখানা ব্যাগে করে ও ওর সব মেকআপ কিট নিয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে ও যদি পারতো তাহলে বস্তায় করে ওগুলো নিয়ে আসতো।

 বিকেলের দিকে সাদু বসে পড়েছে আমাকে সাজাতে।কিন্তু আমাকে কিছুতেই আয়না দেখতে দিচ্ছে না।চোখ টা অব্দি  খুলতে দিচ্ছে না। বারবার বলছে চোখ খুললে নাকি সব সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে।এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছি ও আমার হাতে পায়েও ঘষামাজা করছে। মানে বোধগম্য ভাষায় বলতে গেলে মেকআপ। প্রায় তিন ঘন্টা বাদে আমাকে সাদু ঘষামাজার থেকে মুক্তি দিল।মনে মনে ভাবছি সামান্য দেখাতে এতো মেকআপ কেন দিল?যাই হোক বসা থেকে  উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম নিজেকে দেখার জন্য। আয়নার সামনে যেতেই নিজেকে নিজে চিনতে না পেরে জোড়ে চিৎকার করে বসলাম।নিজেকে ভালো করে পরখ করে সাদুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। 



চলবে...



Writer:- হুমাশা এহতেশাম



NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner