ইতিমধ্যে ভিসি জানিয়ে দিয়েছে আদিয়াত আয়মান কিছুক্ষণের মাঝে চলে আসবে। ফুলের ডালা নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি। নিজেকে দেখে কামলা কামলা ফিলিংস আসছে। ভার্সিটির গেইটের সামনে তিন তিনটা কালো গাড়ি থামে। সামনের এবং পিছনের গাড়ি থেকে কালো পোশার দাড়ি কিছু বডিগার্ড বের হয়ে মাঝখানের গাড়িটির ডোর খোলে দেয়। গাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে আসে একজন সুদর্শন পুরুষ। সম্ভবত উনিই আদিয়াত আয়মান।
পুরা কালা চান সেজে আসছে। কালো রঙের শার্ট তার উপর কালো রঙের ব্লেজার। কালো রঙের প্যান্ট, পায়ে কালো রঙের সু। বাম হাতে কালো রঙের ঘড়ি। ফর্সা হাতে কালো রঙের ঘড়িটা ধারুন মানিয়েছে। চোখে কালো রঙের সানগ্লাস। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।
আদিয়াত আয়মান গাড়ি থেকে নামতেই ভিসি স্যার গিয়ে ওয়েলকাম করলেন।
স্যার আপনাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না। আপনি এত ব্যস্ত মানুষ। তার পরেও যে আমাদের ভার্সিটির অনুষ্ঠানে আসতে রাজি হবেন সেটা আমরা কল্পনাও ভাবতে পারিনি। আপনি যে আমাদের ভার্সিটি এসেছেন সেটা আমাদের চরম সৌভাগ্য। ওয়েলকাম টু আওয়ার ভার্সিটি।
থ্যাংক ইউ।
স্যারকে ধন্যবাদ বলে এক হাতে ফোন টিপতে টিপতে এগিয়ে আসছে আদিয়াত আয়মান । কোন দিকে তাকাচ্ছে না। ফোনের ভিতরে এতটাই ডুবে আছে যে দিন দুনিয়ার কোনো খেয়ালই নাই। এদিকে মেয়েরা উনার এমন লুক দেখে হার্ট এ্যাটাক ফ্যাটাক করে ফেলছে তার দিকে কোনো খেয়ালই নাই। হু যত্তসব ভাব।
আমাদের সামনে আসতেই আমরাও ফুল ছিটিয়ে দেই। কিন্তু ব্যাটা একবার ফিরেও তাকালো না। এই ব্যাটার মনে হয় সত্যিই মেয়েদের থেকে এলার্জি আছে। চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। এটা দেখে মেয়েরা বুকে হাত দিয়ে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করছে।
অহি আর বন্যা ঢং করে আমার ওপর ঢলে পড়ে। আমি মাঝখান থেকে সরে যায়। ওরা দুজন পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়।
আদিয়াত আয়মান সোজা গিয়ে চিপ গেস্টের আসনে বসে পড়ে। প্রোগ্রাম দেখতে অনেকেই গেস্ট হিসেবে এসেছেন। উফ এই লোকটার হাসি এত কিউট কেনো? হাসলে গালে টুল পড়ে। কথা বলার সময় এক গালে টুল পড়ে। ছেলেদের হাসিও যে এত সুন্দর হয় সেটা আদিয়াত আয়মানকে না দেখলে জানতে পারতাম নাম। কণা তুই এসব কী ভাবছিস? তোর এত দিনের রেকর্ড ভেঙে তুই ক্রাশ খেতে পারিস না।
আমি, অহি আর বন্যা সামনের সিটে বসে পড়লাম। বিভিন্ন ভার্সিটি থেকে স্টুডেন্ট আসছে। তবে আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্টদের দেখেই চেনা যায়। কারণ আমাদের ভার্সিটির সকল স্টুডেন্ট নীল রঙের ড্রেস পড়ছে। ছেলেরা নীল রঙের পাঞ্জাবি আর মেয়েরা নীল রঙের শাড়ি। একেক জন একেবারে বিয়ের সাজ দিয়ে আসছে আদিয়াত আয়মানকে দেখানোর জন্য। সব মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সেদিকে ব্যাটার কোনো হোস নাই ব্যাটা তো মোবাইলের ভিতর হান্দায়া গেছে।
আমি আর কিছু না ভেবে প্রোগ্রাম দেখায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম। কিন্তু তেমন কাউকে দেখতে পেলাম নাহ। সবাই প্রোগ্রাম দেখায় ব্যস্ত। হুট করে আমার নাম এনাউন্স করায় চমকে যায়। সব ভাবনাকে দুরে ঠেলে দিয়ে অগ্রসর হলাম স্টেইজের দিকে। স্টেইজে ওঠতেই বুকের ভিতর কেমন জানি করতে থাকে। প্রচণ্ড ভয় না না নার্ভাস লাগছে। মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে গান গাইতে শুরু করলাম।
"প্রাণ দিতে চাই
মন দিতে চাই,
সবটুকু ধ্যান
সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে,
ওওও তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই
নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে,
ওওও তোমাকে।
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে,
রোজ দুইফোঁটা যেন আরো ভালো লাগে।
কানে, অভিসারে
চাই শুধু বাড়ে বাড়ে,
তোমাকে
ওওও তোমাকে।
যেদিন কানে কানে সব বলব তোমাকে
বুকের মাঝে জাপটে জড়িয়ে ধরব তোমাকে,
পথ চেয়ে রই,
দেরি করো না যতই
আর ভোলা যাবে না
জীবনে কখনোই
তোমাকে,
ওওও তোমাকে।
তুমি হাসলে
আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে
জোনাকি রাশি রাশি,
রাখি আগলে
তোমায় অনুরাগে
বলো কীভাবে
বোঝাই ভালোবাসি।
সব চিঠি সব কল্পনাজুড়ে
রঙ মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রঙ দিয়েই
তোমাকে আঁকি
আর কীভাবে
বোঝাই ভালোবাসি।"
গান গাইতে গাইতে আমি একটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলাম। চোখের সামনে অজানার সাথে ফোনে কথা বলার মুহুর্তগুলো ভাসছিলো। সবার হাত তালির শব্দে স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে আসি। স্টেইজে থেকে নামার সময় একটা কথা কানে আসতেই ফট করে আমি দাঁড়িয়ে যায়।
তোমার গানের গলাটা ধারুন। এমনিতেও তোমার কন্ঠটাও ভীষণ ভালো লাগে ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি।
আমি পিছনে ঘুরে তাকাই। কিন্তু সবাই সবার মত কাজে ব্যস্ত। তাহলে আমাকে এই কথাটা কে বললো? এসব ভাবতে ভাবতে গিয়ে আমার জায়গায় বসি।
কী ভয়নক কথা বার্তা? এমনিতেও তোমার কন্ঠটাও ভীষণ ভালো লাগে ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি। আমার কন্ঠ খেয়ে ফেলতে চায়। কারো কন্ঠ খাওয়া যায় নাকি। লোকটা মনে হয় মেন্টালি সিক।
আমার এসব ভাবনার মাঝেই আমার সামনে একটা ছেলে দাঁড়ায়।
কিছু বলবেন ভাইয়া?
জ্বী।
কী?
আপনাকে ভিসি স্যার ডাকছে।
আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করি, কেনো?
তা তো জানি না। শুধু বলছে, আপনাকে জেনো এসো বলি, ভিসি স্যার আপনাকে উনার রুমে যেতে বলছে।
আচ্ছা, থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আপনি যান আমি আসছি।
হঠাৎ করে স্যার কেনো আমাকে ডাকছে? স্যারের কী দরকার থাকতে পারে আমার সাথে? আচ্ছা আমি কী কোনো ভুল করেছি যার শাস্তি দেওয়ার জন্য স্যার আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে? আমার জানা মতে তো আমি কোনো ভুল করিনি তাহলে। এসব ভাবতেই স্যারের কেবিনের সামনে চলে এলাম। দরজায় নক করে বললাম,
মে আই কাম ইন স্যার?
ইয়েস, কাম ইন।
আমি কেবিনের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
আমি এতক্ষণ তোমার জন্যই ওয়েট করছিলাম।
সরি স্যার। আপনাকে এতক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য।
ইট'স ওকে। প্লিজ সিট ডাউন।
থ্যাংক ইউ স্যার।
আমি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
আমি একটা বিপদে পড়ে তোমাকে ডেকেছি। এই বিপদ থেকে একমাত্র তুমিই আমাকে উদ্ধার করতে পারো। তুমি কী আমাকে সাহায্য করবে না।
কী বিপদ স্যার? আর আমিই বা কীভাবে সাহায্য করতে পারি? যদি আমি আপনাকে কোনো ভাবে হেল্প করতে পারি। তাহলে আমি নিশ্চয়ই করব।
তুমি তো জানো এই প্রোগ্রামটাতে শুধু আমাদের ভার্সিটির অংশগ্রহণ করছে না। অনেক ভার্সিটির স্টুডেন্ট অংশগ্রহণ করছে। অনেকটা প্রতিযোগিতার মত। এখন আমাদের এখান থেকে একজন কম প্রতিযোগী গেলে আমরা হেরে যাব। এই প্রোগ্রামটাতে প্রত্যেক বার আমাদের ভার্সিটি জয়ী হয়। এবার যদি হেরে যায় তাহলে আমাদের ভার্সিটির মান-সম্মান থাকবে না। আদিয়ান আয়মানের মত একজন নামকরা বিজন্যাসম্যানের সামনে আমাদের কলেজের নাম ডুবাতে চাইছি না।
স্যার আপনারা কথার কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনার কথা শুনে আমার মাথা হ্যাং মারছে। আপনি যদি খোলে সব কিছু বলতেন তাহলে ভালো হত।
তোমাদের সিনিয়র ফাহিম। এবার মাস্টার্স পড়ে। তুমি চিন তো?
জ্বী স্যার।
ফাহিমের সাথে যে মেয়েটার ডান্স করার কথা ছিল সেই মেয়েটি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন তুমিই পার একমাত্র আমার এবং আমাদের ভার্সিটির মান-সম্মান বাঁচাতে।
কীভাবে স্যার?
ঐ মেয়েটির পরিবর্তে যদি তুমি ডান্স কর।
স্যার এটা কীভাবে সম্ভব? আমার তো প্র্যাকটিস নেই। হুট করে তো আমি নাচতে পারব না। স্যার আপনি অন্য কাউকে বলুন।
অন্য কেউ পারবে না। আমি জানি শুধু মাত্র তুমিই পারবে। আমি তোমার কলেজের প্রোগ্রাম দেখেছিলাম। তুমি অনেক ভালো নৃত্য জানো। আমি তোমাকে অনেক আশা নিয়ে ডেকেছি। তুমি আমাকে আশাহত কর না। আমি তোমার স্যার হয়ে তোমার কাছে অনুরোধ করছি।
ছিঃ ছিঃ স্যার এসব কী বলছেন? ভার্সিটির একজন স্টুডেন্ট হিসেবে আমার কর্তব্য ভার্সিটির সম্মান রক্ষা করা।
ফাহিম মেকআপ রুমে আছে। সেখানে গিয়ে ওর সাথে তুমি নাচের স্টেপগুলো মিলিয়ে নাও ।
ওকে স্যার।
৫৯
স্যার কেবিন থেকে অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হুট করে কেউ আমার হাত ধরে টান দিয়ে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে আসে। রুমটা অন্ধকার কারণ সব দরজা, জানালা বন্ধ। এক ফোটা আলো আসার ক্ষমতা নেই। আমি জানি আমাকে কে এখানে নিয়ে আসছে। লোকটার পারফিউমের স্মেল দিয়ে আমি লোকটাকে চিনতে পারি। লোকটার পারফিউমের স্মেলটা একদমই আলাদা।
আপনি অন্ধকার রুম ছাড়া আর কোনো রুম পান নাহ?
পাই তো। কিন্তু আমি তো তোমার সামনে ধরা দিতে চাই নাহ। আমি চাই তুমি নিজে আমাকে খোঁজে বের কর।
আমি আপনাকে কী করে খোঁজে বের করবে? আমি তো আপনাকে চিনি নাহ। ইনফেক্ট আমি আপনার নামটাও জানি না। এভাবে কী কেউ কাউকে খোঁজে বের করতে পারে?
পারে। তুমি মন দিয়ে খোঁজ ঠিক আমাকে পেয়ে যাবে।
আমি আর কিছু বলতে যাব তার আগেই লোকটি তার আঙ্গুল আমার ঠোঁটের ওপর রেখে দিয়ে বলে, হোসস নো মোর টক। আমার গলার কাছের চুল গুলো সরিয়ে। গলায় পর পর তিনটা চুমু খেলেন।
আমি আর কিছু বলতে যাব তার আগেই লোকটি তার আঙ্গুল আমার ঠোঁটের ওপর রেখে দিয়ে বলে, হুসস নো মোর টক। আমার গলার কাছের চুল গুলো সরিয়ে। গলায় পর পর তিনটা চুমু খেলেন। গলায় উনার অধর জোড়ার স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে ওঠি। মনে হচ্ছে শরীর অবস হয়ে যাচ্ছে।
আমি সরে যেতে নিলেই উনি আমার দুই পাশে উনার দুই হাত রেখে আমাকে উনার হাতের মাঝে বন্দি করে ফেলেন। আমার মুখের সামনে মুখ নিয়ে আসেন। উনার নিশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে স্লো ভয়েসে বলেন,
তোমাকে এত সুন্দর হতে কে বলেছিল? সবাই তোমার দিকে সবাই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে যেটা আমার একদমই ভালো লাগে না। আমার ধুলিকণার দিকে শুধু আমি তাকাব। অন্য কেউ কেনো তাকাবে? হোয়াই? ইচ্ছে করে চোখগুলো তুলে ফেলি।
লাস্টের কথাটা অনেকটা রাগ নিয়ে বলেন। উনার রাগী কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে কেঁপে ওঠি। উনাকে আগে কখন এমন ভাবে কথা বলতে শুনিনি। উনি বুঝতে পারেন আমি ভয় পাচ্ছি। তাই উনি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করেন। আমার কানের লতিতে একটা বাইট করে কানে মুখ লাগিয়ে নেশাক্ত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলেন,
তোমাকে আজকে কতটা সুন্দর লাগছে সেটা তুমি নিজেও জানো না। আমি তো তোমার থেকে চোখই সরাতে পারছি না। তোমাকে দেখে আমার হার্ট বিট থমকে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল আমার দুনিয়ে থমকে গিয়েছে। তোমার ঐ চোখের দৃষ্টি আমাকে মাতাল করে দিচ্ছিল। তোমার খোলা কালো চুলগুলো আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল। শুধু একটা জিনিসই মিসিং।
কী?
চোখে কাজল নাই। তুমি কি জানো? তোমার ঐ কাজল রাঙানো চোখের নেশাক্ত দৃষ্টি আমার ভিতরে তোলপাড় সৃষ্টি করে দেয়।
বন্যাকে তাড়া দিতে গিয়ে আমি নিজেই কাজল দিতে ভুলে গেছি।
এমন ভুল যেনো আর না হয়।
''আমি মারা গেলে
তুমি লাশ দেখার তাড়াহুড়ায়
চোখে কাজল দিতে ভূলোনা।''
হঠাৎ করে উনার মুখে লাশ শব্দটা শুনে আমার বুকের ভিতরে ধক করে ওঠে। আমার কী হলো আমি নিজেও জানি না। আমি উনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলাম।
৬০
বিছানার ওপর বসে কোলের ওপর কোশন নিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবছি। বুঝতে পারছি না হুট করে প্রোগ্রামের মাঝে ভার্সিটিতে ঝামেলা কেনো শুরু হয়ে গেলো। সবাই ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও আমার কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগছে না।
ফ্ল্যাশব্যাক
আমি আর ফাহিম ভাইয়া ডান্স স্টেপগুলো প্র্যাকটিস করছিলাম। আমাদের নাম এনাউন্স করায় আমরা দুজন স্টেইজের দিকে অগ্রসর হই। আমরা দুজন আর স্টেইজে পৌছাতে পারলাম নাহ তার আগেই ভার্সিটির স্টুডেন্টদের মাঝে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। সিনিয়র সিনিয়রা গণ্ডগোল করছে। বাইরে থেকে কিছু গুন্ডা টাইপের লোক আসে। বাইরে থেকে যারা আসে তাদের সবার হাতেই হকিস্টিক ছিল। ঝগড়াটা পরে মারামারির রূপ নেই। মারামারি শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
____________________
আমার সব থেকে বেশী আশ্চর্যজনক লেগেছিল প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মারামারি থেমে যায়। ভার্সিটির পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। সবার ধারণা যে লোকগুলো আদিয়াত আয়মানের ওপর আক্রমণ করতে এসেছিল। তাই উনি চলে যাওয়াতে মারামারি থেমে যায়।
আমি এত ভাবছি কেনো? প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে আমার জন্য ভালোই হয়েছে। নাহলে ঐ ফাহিম কাহিমের সাথে কাপল ডান্স করতে হত। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
আমি বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে চলে গেলাম। মিদুকে খাবার দিলাম। তারপর মিদুর সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। আজকে ভার্সিটিতে যা যা হয়েছে সব খোলে বললাম। মিদুকে পেয়ে আমি একজন কথা বলার সঙ্গী পেয়ে গেলাম। কথা না বললেও আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে। আমার কথা শুনে যেনো সে একটুও বিরক্তবোধ করে না। বরং তার অনেক ভালো লাগে। এই কিছুদিনে আমি মিদুকে অনেকগুলো শব্দ শিখিয়ে ফেলছি।
৬১
জিয়ান এখন তাদের বাসায় থাকে। রেশমি রহমান কান্না-কাটি করে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসছেন। জিয়ান অবশ্য আসতে চায়নি। কিন্তু তার মায়ের কান্না-কাটিতে আসতে বাধ্য হয়েছে। জিয়ান নিজের রুমে বসে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল। তখন রেশমি রহমান আর হেলাল রহমান জিয়ানের রুমে আসে। জিয়ান তার বাবা-মাকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিজেকে সামলে নিয়ে ফোনের অপর প্রান্তের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
বাই। আমি আপনাকে পরে ফোন করব।
জিয়ান কলটা কেটে ফোনটা নিজের পাশে রেখে দেয়। হেলাল রহমান গিয়ে জিয়ানের রুমের সোফায় বসে আর রেশমি রহমান বিছানায় জিয়ানের পাশে বসে। জিয়ান তার বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
কিছু বলবে?
হেলাল রহমান বেশ গম্ভীর গলায় বলে, হুম। তুমি কী ঠিক করেছে বিয়ে সাদি করবে না?
কেনো করব না? অবশ্যই করব। বিয়ে করা ফরজ। ফরজ কাজ তো আর বাধ দেওয়া যায় না। বিবাহ যোগ্য মনের মতো ভালো মেয়ে পেলেই বিয়ে করে ফেলবো।
তোর কোনো পছন্দ আছে? মানে বলতে চাইছি তোর কোনো প্রেমিকা আছে?
জিয়ান স্বাভাবিক ভাবে বলে, না। আমার তেমন কেউ নেই।
জিয়ানের এমন উত্তর শুনে রেশমি রহমান বেশ সন্তুষ্ট হলেন।
ভালো মেয়ে পেলেই বিয়ে করবি?
হ্যাঁ করব। মেয়েটাকে অবশ্যই বাঙালি হতে হবে।
মেয়েটাকে বাঙালি হতে হবে শুনে রেশমি রহমান এবং হেলাল রহমান দুজনেই খুব খুশি হয়ে গেলেন। রেশমি রহমান খুশিতে গদ গদ হয়ে বলেন,
আমরাও তোর জন্য এমন একটা মেয়ে দেখেছি। একেবারে তোর মনের মতো। মেয়েটা চোখ লেগে থাকার মত সৌন্দর্যের অধিকারী। অনেক ভালো মেয়েটা। আর মেয়েটাকে তুই চিনিসও।
আমি চিনি। কে সে?
কণা।
কণা নামটা শুনে জিয়ান বসা থেকে ফট করে দাঁড়িয়ে যায়।
বিয়ে করবি কণাকে?
আর ইউ মেড? আমি বিয়ে করব কণাকে ইমপসিবল।
অসম্ভব কেনো? কণা কী দেখতে খারাপ? গায়ের রঙ কালো? অশিক্ষিত, আনসাম্মার্ট নাকি অভদ্র?
এর মাঝে কোনটাই না। কণা দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। বলতে গেলে যেকোনো ছেলের কল্পনার রাজকন্যার মতো। কণা অশিক্ষিতও না আনসাম্মর্ট না। আর যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে। জীবন সাথী হিসেবে একদম পারফেক্ট। কণাকে যে নিজের স্ত্রী হিসেবে সে অনেক ভাগ্যবান। তবু আমি বিয়ে করতে পারব না।
কেনো পারবি না?
কারণ আমি ছোটবেলার থেকে কণাকে নিজের বোনের মত ভালোবেসে এসেছি। তাই কণাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা সম্ভব না। আমরা দুজন ভালো বন্ধু হয়ে আছি। সারাজীবন ভালো বন্ধু হয়েই থাকতে চায়। তোমরা দুজন যদি আমাকে এই বিয়ে করা নিয়ে জুর করো তাহলে আমি আর এ বাসায় পা রাখব না। সারাজীবনের মত এ বাসা ছেড়ে চলে যাব।
কথাগুলো বলে জিয়ান গাড়ি চাবি নিয়ে হন হনিয়ে চলে যায়। রেশমি রহমান আর হেলাল রহমান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। তাদের দুই ছেলেই তাদের প্লেনে জল ঢেলে দিল। তীরে এসে তরি ডুবে গেলো।
৬২
কেটে গেছে দুই দুইটা মাস পাল্টে গেছে অনেক কিছু। বদলে গেছে অনেক সম্পর্ক। ফাটল ধরেছে অনেক সম্পর্কে। বদলে গেছে কণা। কারো অবহেলায় এখন আর তার কিছু আসে যায় না। যারা তাকে অবহেলা করে তাদরকে সে ইগনোর করে।
ছোঁয়া, কণা, বন্যা আর অহি চারজনই অনেক ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছে। ছোঁয়া আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে। অহি, সাফাত আর বন্যা, নোমানের সম্পর্ক অনেক গভীর হয়ে গেছে। আভিয়ানের সাথে কণার সম্পর্ক আগের মতই আছে। মহুয়া জাহান কণার সাথে কথা বলে না। তার ধারণা কণার জন্য অমিত মারা গেছে। এমন কিছু মানুষ আছে যাদের হাজার বোঝালেও তাদের মনোভাব চেইন্জ হয় না। মহুয়া জাহান যে কণার সাথে কথা বলে না এতে কণার কিছু আসে যায় না।
যখন মানুষের খুব প্রিয় কেউ তাকে অপছন্দ,অবহেলা কিংবা ঘৃণা করে তখন প্রথম প্রথম মানুষ খুব কষ্ট পায় এবং চায় যে সব ঠিক হয়ে যাক । কিছুদিন পর সে সেই প্রিয় ব্যক্তিকে ছাড়া থাকতে শিখে যায়।আর অনেকদিন পরে সে আগের চেয়েও অনেকবেশী খুশি থাকে যখন সে বুঝতে পারে যে কারো ভালবাসায় জীবনে অনেক কিছুই আসে যায় কিন্তু কারো অবহেলায় সত্যিই কিছু আসে যায় না।
( হুমায়ুন আহম্মেদ)
কণা তার পৃথিবী সাজিয়ে নিয়েছে তার প্রেমিক পুরুষকে নিয়ে। তার প্রেমিক পুরুষের
ভালোবাসা এতোটা যে তার এখন আর কারো অবহেলায় মন খারাপ হয় না।
কণা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবছে। একটা লোক তার জীবন এসে, অদ্ভুত ভাবে তার জীবনটা পাল্টে দিল। রঙহীন জীবনটা ভালোবাসা দিয়ে রঙিন করে দিল। কণা অনেক খুশি কারণ তার অদেখা ভালোবাসাকে কিছুদিন পরে দেখতে পাবে। কণার হাতে থাকা ফোনটা বেঁজে ওঠল। ফোনের স্কিনে বন্যা নামটা জ্বল জ্বল করছে। ফোনটা রিসিভ করে।
কণা আমি সুইসাইড করব।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া