এখন চিন্তা করে কী করবে? যখন চিন্তা করার দরকার ছিল তখন তোমরা চিন্তা করো নাই। আমার কথাটা তোমরা কানে তুলো নাই। অমিত ভাইয়ের এই অবস্থা আর তোমাদের এই অবস্থার জন্য শুধু মাত্র তোমরা দায়ি। ঠিক সময় যদি ভাইয়াকে শাসন করতে তাহলে ভাইয়ার এতো অধঃপতন হতো না।
জিয়ান তুই চুপ করবি।
নাহ। আমি কেনো চুপ করবো। সত্যি শুনতে কারো ভালো লাগে না। সত্যি কথা সব সময় সবার কাছে তেতোই লাগে। জানো আম্মু ভাইয়া যে মারা গেছে তার জন্য আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হচ্ছে না। বরং আমার আফসোস হচ্ছে ভাইয়া আরো আগে মারা গেলে হয়তো ১১ টা মেয়ের জীবন বেঁচে যেতো।
রেশমি রহমান তেতে ওঠে বলে, তুই আর তোর বাপ এক রকম পাষাণ। অমিত তো তোর ভাই হয়। তোদের মাঝে দয়া-মায়া, কষ্ট, ভালোবাসার কোনো অনুভূতি নাই। তুই কী করে বুঝবি সন্তান হারানোর কষ্ট? একটা সন্তান বড় করতে কত কষ্ট হয় নিজের সন্তান নাহলে বুঝবি না।
জিয়ান ঠাট্টার সুরে বলে, আম্মু তুমি সত্যিই বুঝো সন্তান হারানোর কষ্ট? তাহলে তুমি ঐ মেয়েগুলোর বাবা-মার কষ্ট বুঝতে। ঐ মেয়েগুলো কারো সন্তান ছিল, কারো বোন ছিল। নাকি শুধু তুমি তোমার সন্তানকে ভালোবাসো? অন্যেরা তাদের সন্তানকে ভালোবাসে না। তোমার সন্তানকে তুমি কষ্ট করে বড় করছো আর অন্যরা নিজের সন্তানকে হেলা-ফেলায় বড় করেছে। প্রত্যেকটা মেয়ে স্বপ্ন দেখে বিয়ের। তার ছোট একটা পরিবার হবে। যে পরিবার নিয়ে সে সুখে শান্তিতে সংসার করবে। তোমার ছেলে তাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। বুঝো তুমি স্বপ্ন আর মন ভাঙার কষ্ট? বুঝবে কী করে তুমি তো কখনো ঐ পরিস্থিতি পড় নাই। যদি পরতে তাহলে তাদের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারতে। আমাকে সন্তান হারানোর কষ্ট বুঝতে বলছো তুমি বুঝ বেঁচে থেকেও মৃত্যু যন্ত্রনা সহ্য করার কষ্ট?
জিয়ানের কথায় রেশমি রহমান চুপ করে যায়। ড্রয়িংরুম জুরে পিনপিন নিরবতা। কেউ কোনো কথা বলছে না। বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। কারণ জিয়ানের প্রত্যেকটা কথাই সত্য। জিয়ান একটু থেমে আবার বলে,
এটা ভদ্রলোকের বাড়ি। তাই এখানে কান্না কাটি না করে নিজের বাসায় গিয়ে গলা ফাটিয়ে কান্না করো। কেউ কিছু বলবে না।
এবার হেলাল রহমান বলে, এসব কান্না কাটি বন্ধ করে বাসায় চলো। আর জিয়ান তুমি অনেকটা পথ জার্নি করে আসছ। বাসায় চল তুমি।
আমি যাব না।
রেশমি রহমান ভাঙা ভাঙা গলায় জিয়ানকে জিঙ্গেস করে, কেনো যাবি না?
আমি চাই না তোমাদের মতো আমাকে দেখেও মানুষ ঘৃণার চোখে তাকাক। এতো বছর দেশের বাইরে থাকাই তোমাদের পরিচয়ে কেউ আমাকে চিনে না। সবাই আমার নিজের পরিচয়ে আমাকে চিনে।
হেলাল রহমান গম্ভীর সরে বলে, কোথায় যাবে তুমি?
এখন একটা হোটেলে ওঠবো। তারপর একটা ফ্যাল্ট কিনে সেখানে ওঠবো।
মহুয়া জাহান এগিয়ে এসে বলে, নিজের বাসায় যাবি না ঠিক আছে। হোটেলে গিয়ে থাকবি কেনো? তুই এখানে থাকবি। নাকি ফুফি এতোটা পর হয়ে গেছে যে ফুফির বাসায় থাকা যাবে না।
তুমি ভুল বুঝছ ফুফি। আমি এতো ভেবে বলি নাই। আমি কিছুদিন রিলেক্স করতে চাই।
আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না তুই এখানেই থাকবি।
কিন্তু ফুফি ......
আমি কোনো কিন্তু ফিন্তু শুনতে চাই না। তুই এখানে থাকবি এটা আমার শেষ কথা। মিতু সিঁড়ির বাম পাশের কণার সাথের রুমটা জিয়ানের জন্য খুলে দে।
ছোঁয়া আর তার পরিবার চলে যায়। জিয়ান মিতুর পিছু পিছু চলে যায়। সাফাত আর আভিয়ান আভিয়ানের রুমে চলে যায়। কণা আর অহিও নিজেদের রুমে চলে যায়।
৫২
জিয়ান বিছানায় বসে ফোন স্ক্রল করছিল। তখনি কেউ তার রুমের দরজায় নক করে। সে দরজার দিকে না তাকিয়ে বলে,
ডোর খোলা আছে। ভিতরে আসতে পারেন।
পায়েলের রিনিঝিনি শব্দে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। দরজা দিয়ে রূপকথার রাজকন্যাদের মতো সুন্দর একটা মেয়ে প্রবেশ করছে। মেয়েটি নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়ে রুমে প্রবেশ করছে। যেনো রুমে প্রবেশ করতে তার মাঝে কোনো জড়তা কাজ করছে।
কোমড়ের নিচ অব্দি কালো চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে হালকা ধুলছে। মিট মিট করে একবার তার দিকে তাকাচ্ছে আবার চোখ নামিয়ে ফেলছে। উড়নার এক কোণা হাতের আঙ্গুলে গিট্টু দিচ্ছে। মেয়েটি একেবারে জিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এক হাতে মুখের ওপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। জিয়ান মেয়েটিকে চিনতে পারছে না। আগে দেখছে বলেও তার মনে পড়ছে না। জিয়ান মেয়েটির দিকে ভ্রু কুচকে তাকাই। কাশি দিয়ে গলার স্বর পরিষ্কার করে বলে,
কে আপনি?
জিয়ানের প্রশ্নে মেয়েটির মাঝে কোনো রকম ভাবান্তর হলো না। সে আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। এখন জিয়ানের বিরক্ত লাগছে। এভাবে তার সামনে কেউ সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকলে তার বিরক্ত লাগে। জিয়ান বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলে,
আপনারা কানে কথা যাচ্ছে না? কে আপনি?
জিয়ানের কথা শুনে মেয়েটি খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। যেনো জিয়ান অনেক মজার একটা জোকস বলছে যেটা শুনে তার হাসি থামছে না। অথবা জিয়ানকে বিরক্ত করে সে খুব আনন্দ পাচ্ছে। জিয়ান মুগ্ধ হয়ে মেয়েটির হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির হাসির সাথে তার পরিচিত কারো হাসি মিলে যাচ্ছে। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে জিয়ানের মাথার চুল জুরে টেনে দিয়ে আবার হেসে দেয়। অপরিচিত কেউ তার চুলে ধরুক এটা জিয়ানের একটুও পছন্দ করে না। জিয়ান রেগে কিছু বলবে তার আগে মেয়েটি বলে,
মটু জিয়ান।
ডাকটা শুনেই জিয়ান থমকে যায়। এই ডাকটা যে তার খুব পরিচিত। জিয়ানও মেয়েটির লম্বা চুলগুলো হাত দিয়ে টেনে ধরে বলে,
ওরে ফাজিল আমাকে বিরক্ত করতে তোর অনেক ভালো লাগে তাই না?
আমার চুলগুলো ছাড়। আমি ব্যথা পাচ্ছি তো।
আমাকে আরো মটু জিয়ান ডাকবি?
একশবার ডাকবো মটু জিয়ান,,, মটু জিয়ান।
দেখ কণা আমি এখন আর মোটা নেই।
কণা নিজের চুলগুলো জিয়ানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেই। জিয়ানের পাশে বসতে বসতে বলে,
তুমি তো পুরাই চেইন্জ হয়ে গেছে। আগে ছিলা গুলুমুলু কিউট জিয়ান। আর এখন হয়ে গেছো হ্যান্ডসাম জিয়ান তাতে কী আমি তো তোমাকে মটু জিয়ানই ডাকবো।
তুই আগের মতই আছিস। একটুও চেইন্জ হোস নাই।
আমি কী ক্যালেন্ডার নাকি? যে প্রত্যেক বছর বছর চেইন্জ হবো।
তুই বুঝাতে চাইছিস আমি ক্যালেন্ডার?
বুঝানোর কী আছে? যেটা সত্যি সেটাই বললাম।
কণার বাচ্চা।
এখনো বিয়েই করলাম নাহ বাচ্চা কী আকাশ থেকে টপকাইবো?
বিয়ে করার সখ জাগছে দেখা যায়। আগের থেকে অনেকটা বড় হয়ে গেছিস।
আমি বড় হয়ে গেছি আর তুমি বুড়া হয়ে গেছো। তো এতোদিন যে বিদেশ থেকে এলে কোনো মেম সাহেব পছন্দ হয়নি।
নাহ। ঐসব সাদা চামড়ার মেয়ে আমার পছন্দ হয় না। আমি তো একটা খাঁটি বাঙালি মেয়ে বিয়ে করবো। যার মুখ জুড়ে থাকবে মায়া। স্টাইল করে অশ্লীল পোশাক না পরে বাঙালি নারীদের মতো শাড়ি পড়বে। যে ছোট ছোট জিনিসেই খুশি হয়ে যাবে। রেস্টুরেন্টে নয় বরং ফুটপাতে চটিপটি আর ফুচকা খাওয়ালোই আনন্দে আত্নহারা হয়ে যাবে। লং ড্রাইভে নয় সোডিয়ামের আলোয় আমার হাতে হাত রেখে পাড়ি দিবে অজানা পথে। শা......
থাক থাক ভাই তোমার আর বলতে হবে না। এই জীবনে আর তোমার বিয়ে করা লাগবো না। সারাজীবন চিরকুমার থেকে যাবে।
৫৩
রাহেলা বেগম বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলেন। তখনি আদিয়াত রুমে এসে ধপ করে রাহেলা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। রাহেলা বেগম বইটা পাশে রেখে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
কী হয়ছে? মন খারাপ।
না।
তাহলে?
আমি অনেক টায়ার্ড। এই ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত জীবন আর ভালো লাগে না। ইচ্ছে করছে সবকিছু ছেড়ে কিছুদিনের জন্য অনেক দূরে কোথাও চলে যায়। যেখানে থাকবে না কোনো ব্যস্ততা আর না কোলাহল। একেবারে কোলাহল মুক্ত পরিবেশ। চারদিকে সবুজে ঘেরা প্রকৃতি।
তাহলে কিছুদিনের জন্য তোর ফুফি বাসায় ঘুরে আয়।
তিনদিন পরে একটা ভার্সিটির প্রোগ্রামে যেতে হবে।
না করে দিলেই তো হয়। যে তুই ব্যস্ত তাই যেতে পারবি না।
তা হয় না। আমাকে তো যেতেই হবে। ( রহস্যময় হাসি দিয়ে)
তিনদিন পরে একটা ভার্সিটির প্রোগ্রামে যেতে হবে।
না করে দিলেই তো হয়। যে তুই ব্যস্ত তাই যেতে পারবি না।
তা হয় না। আমাকে তো যেতেই হবে। ( রহস্যময় হাসি দিয়ে)
তুই তো আগে কোনোদিন ভার্সিটির কোনো প্রোগ্রামে যাসনি। আমি তোকে ঠেলেও পাঠাতে পারি নাই। আর এখন তুই নিজেই যেতে চাইছিস। তুই কারণ ছাড়া কোনো কাজ করিস না। আসল কাহিনী খুলে বল?
বলা যাবে না। টপ সিক্রেট।
৫৪
২ দিন পর
মন খারাপ করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। মন খারাপের কারণ হলো জিয়ান ভাইয়া। একটু আগেই জিয়ান ভাইয়া চলে গেছে। ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে তাই যেতে হবে। আল্লাহ জানে কোন রাজ কার্য উদ্বার করতে গেছে। এই দুইদিন জিয়ান ভাইয়ার সাথে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি। সময় কোন দিক দিয়ে চলে গেছে টেরই পায়নি।
কণা।
পিছন ঘুরে আভিয়ান ভাইয়াকে দেখে আমার ভ্রু আপনা আপনি কুচকে গেলো। আভিয়ান ভাইয়াকে দেখতে অদ্ভুত লাগছে। পরনে একটা ডিলে শার্ট, এলোমেলো চুল। চোখগুলো লাল টকটকে হয়ে আছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। মনে হচ্ছে কত রাত ধরে ঘুমায়না।
কিছু বলবেন।
হুম। ( মাথা নিচু করে )
বাঁশের মতো না দাঁড়িয়ে থেকে কী বলবেন বলে ফেলুন?
কণা আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ। তোর যদি মনে হয় আমি তোর প্রতি অন্যায় করেছি। তাহলে আমাকে শাস্তি দে। তার পরেও আমাকে ক্ষমা করে দে। অনুতপ্ত হয়ে কারো কাছে ক্ষমা চাইলে। সে যদি ক্ষমা না করে প্রতি মুহুর্তে অদ্ভুত যন্ত্রনায় ভুগতে হয়। যে ঐ পরিস্থিতি পরে সেই বুঝে। কণা আমাকে ক্ষমা করে দে আমি আর পারছি না। তোকে দেখলেই তোর প্রতি করা অন্যায়গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
আপনি যদি মন থেকে ক্ষমা চাইতেন তাহলে আমি ঠিকই ক্ষমা করে দিতাম।
কণা আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি। ট্রাস্ট মি।
বিশ্বাস তাও আপনাকে? হাসালেন মি. আভিয়ান আবরার।
কণা তুই যদি আমাকে ক্ষমা না করিস তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব। এই অদ্ভুত যন্ত্রনা থেকে মৃত্যু একমাত্র মুক্তি দিতে পারে।
কথাগুলো বলেই আভিয়ান ভাইয়া ছাদের রেলিংয়ের ওপর ওঠে পড়ে। আভিয়ান ভাইয়ার এসব ঢং আমার অসহ্য লাগছে।
আভিয়ান ভাইয়া নাটক বন্ধ কর। তোমার মতো একটা স্বার্থপর লোক কখনো ক্ষমা পাওয়ার জন্য নিজেকে শেষ করবে না আমি জানি। তুমি ছোঁয়ার সাথে প্লেন করে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার নাটক করছ।
কণার কথা শুনে আভিয়ান অবাক চোখে কণার দিকে তাকাই। সে ভাবছে কণা এটা জানল কী করে?
কী অবাক হচ্ছ? অবাক হওয়ারই কথা। কারণ তোমাদের এই প্লেন সম্পর্কে তুমি আর ছোঁয়া ছাড়া আর কেউ জানে না। তাহলে আমি জানলাম কী করে? ঐ দিন রাতে যখন তুমি আমার রুমে ড্রিংক করে আসছিলা। না না ড্রিংক করো নাই তো যাস্ট অভিনয় করছ। তুমি ভেবেছিলে আমি আর অহি তোমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলাম পরে একেবারে সকালে রুমে আসি। কিন্তু না আমি একটু পরেই রুমে আসি ফোন নেওয়ার জন্য। কারণ ভুলে আমি ফোনটা রুমে ফেলে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস ফোনটা না নিয়েই চলে গিয়েছিলাম নাহলে তো তোমাদের প্লেন সম্পর্কে জানতেই পারতাম নাহ। এখনো মনে পড়ছে না। আচ্ছা চলো আমি মনে করিয়ে দেই তোমাদের অতি সুন্দর প্লেনের কথা।
ফ্ল্যাশব্যাক
ওহ শিট।
কী হয়ছে কণা?
আমি আমার ফোনটা ভুলে রুমে ফেলে এসেছি।
তোর এই মন ভুলা রোগ আর ভালো হলো না।
লেকচার কমায়া মার। তুই মনে হয় কতকিছু মনে রাখিস। তুই শুয়ে পড় আমি ফোনটা নিয়ে আসছি।
আচ্ছা যা।
গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে রুমে আসছিলাম। আমার রুমের সামনে আসতেই কারো কারো ফিস ফিসিয়ে কথা বলার শব্দ আমার কানে আসে। আমি দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে যাই। আভিয়ান ভাইয়া তো ঘুমিয়ে আছে। তাহলে আমার রুমে কে কথা বলছে? আমি দরজাটা হালকা ফাঁক করে উঁকি মারি রুমের ভিতর। রুমের ভিতর উঁকি দিয়ে দেখি আভিয়ান ভাইয়া ফোনে কথা বলছে। আমি চোখ বড় বড় করে আভিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকাই। আভিয়ান ভাইয়া এতক্ষণ নাটক করছিলো। দরজায় কান পেতে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করি।
জানেমান তুমি যেরকম বলছিলা আমি ঠিক সেই রকমভাবেই অভিনয় করছি।
____________________
না ছোঁয়া আমি ঐ ভিডিওটা বিশ্বাস করি নাই। আমি জানি আমার ছোঁয়া এরকম কিছু করতেই পারে না।
____________________
আমি তো জাস্ট অভিনয় করে তোমাকে থাপ্পড় মারছি।
____________________
আমি জানি ঐ ভিডিওটা কণাই এডিট করছে। এর জন্য কণাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
____________________
হুম জান আমি প্রথমে কণার কাছে ক্ষমার চাওয়ার অভিনয় করব। ক্ষমা করার পরে আমার প্রেমের জালে ফাসাবো কণাকে। তারপর কিছুদিন প্রেমের অভিনয় করে এ্যাংগেইজমেন্ট ঠিক করবো। এ্যাংগেইজমেন্টের দিন যা তা বলে অপমান করব। পরে তোমাকে বিয়ে করে আমার বাসায় নিয়ে আসব।
____________________
ওকে। বাই জান।
বর্তমানে
আমি আপনাদের প্লেন সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত। তাই আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার নাটক করতে হবে না। মি. আভিয়ান আবরার আপনি কাল সাপকে বিশ্বাস করছেন। যে কখনো আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে না।
কথাগুলো বলে ছাদ থেকে চলে এলাম।
৫৫
আমি আর অহি ভার্সিটিতে এসে অবাক। এত সুন্দর করে ভার্সিটি সাজিয়েছে যে বলার বাহিরে। সাজাবেই না কেনো বিভিন্ন ভার্সিটির স্টুডেন্ট আসবে। আর একজন মহান ব্যক্তি আসছে। সব মেয়েদের কলিজা। এই লোকটা যদি বডিগার্ড ছাড়া আসে তাহলে মেয়েরা তো টানাটানি করতে করতে হাত-পা ছিড়ে ফেলবে।
কণারে এটা কী আমাদের ভার্সিটি?
না তোর জামাইয়ের ভার্সিটি।
তুই ভালো করে কথা বলতে পারিস না।
তুই ঢং ছাড়া কথা বলতে পারিস না।
এতো আগে ভার্সিটি সাজিয়ে ফেললো কেনো?
তো কী প্রোগ্রামের পরের দিন সাজাবে?
এমন করে কথা বলিস কেনো?
কেমন করে বলবো? আগামীকাল প্রোগ্রাম আর এই মেয়ে আমাকে জিঙ্গেস করে এতো আগে ভার্সিটি সাজিয়ে ফেললো কেনো?
কণা জানিস আমার না আদিয়াত আয়মানকে দেখার জন্য আর তর সইছে না।
।সাফাত ভাইরে যায়া কমু তার হবু বউ অন্য ছেলের জন্য পাগল হয়ে গেছে।
আসছে সাফাত ভাই বক্ত বোন। আরে বোইন আমিও তো তোর বোন লাগি সতিন তো আর লাগি না। আমার সাথে এমন সতিন সতিন টাইপ বিহেভ কেনো করছিস?
অহি তোর মনে হয় না তুই বন্যার মতো বিহেভ করছিস? আচ্ছা তুই ডেইট ওভার কিছু খেয়ে আসছিস না তো?
ফালতু কথা বাদ দে চল রিহার্সাল রুমে যাই।
নিজের এতক্ষণ ফালতু বক বক করলো। এখন আমাকে বলে ফালতু কথা বাদ দে চল রিহার্সাল রুমে যাই। ( বিড় বিড় করে)
____________________
গত ৩০ মিনিট ধরে রিহার্সাল রুমে বসে বসে মাছি তাড়াচ্ছি। কারণ আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধরা না আসলে রিহার্সাল শুরু হবে না। আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুদের ওপর সবাই বিরক্ত হয়ে গেছে। সাফাত ভাইয়া একরকম বিরক্ত হয়েই আভিয়ান ভাইয়াকে বলে,
আভিয়ান আমার কিন্তু এখন বিরক্ত লাগছে। সব সময় সবকিছুতেই ওরা লেইট করে। তুই ফোন দিয়ে হারামিদের আসতে বলবি।
দাঁড়া নোমানকে ফোন দিয়ে দেখি।
হ্যালো । ঐ তোরা কই? আর কখন আসবি?
____________________
আচ্ছা বাই।
ওরা আসবে না। স্টেইজ ডেকোরেট করার কাজে আটকে পড়ছে। আমাকে, তোকে আর অনার্স থার্ড ইয়ারের কিছু স্টুডেন্ট নিয়ে রিহার্সাল শুরু করে দিতে বলছে।
আমার এবার মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো।
এতক্ষণ ওয়েট করিয়ে এখন বলে আসতে পারবে না। মগের মুল্লুক পাইছে নাকি আপনার বন্ধুরা। আসতে পারবে না আগে বলেই দিলেই পারতো। আমাদের এতক্ষণ ওয়েট করতে হতো না।
আভিয়ান ভাইয়া কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। কারণ আমার কথায় সবাই সায় দিয়েছে। এটা নিয়ে রিহার্সাল রুমে বিশৃঙ্খল সৃষ্টি হয়ে যায়। আভিয়ান ভাইয়ার ধমকে সব চুপ করে যায়। সবাই রিহার্সাল শুরু করে দেয়। রিহার্সালের একেবারে শেষের দিকে সিনিয়র সিটিজেন মানে আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুরা আসে। ছেলে ও মেয়ের উভয়ের ড্রেস কালার নীল রঙ ঠিক করে দেয়।
৫৬
আমরা একটা সুন্দর জায়গায় ঘুরতে এসেছি। আমি একটা পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু সবুজ আর সবুজ। কী সুন্দর মৃদু বাতাস বইছে। প্রাকৃতিক বাতাস। আমি যখন প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত তখন পিছন থেকে কেউ আমাকে ধাক্কা মারে। আমি যখন পড়ে যেতে নেই পিছন থেকে একটা হাত আমাকে আঁকড়ে ধরে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না তাকে নিয়েই আমি পাহাড়ের থেকে পড়ে গেলাম।
আমরা একটা সুন্দর জায়গায় ঘুরতে এসেছি। আমি একটা পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু সবুজ আর সবুজ। কী সুন্দর মৃদু বাতাস বইছে। প্রাকৃতিক বাতাস। আমি যখন প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত তখন পিছন থেকে কেউ আমাকে ধাক্কা মারে। আমি যখন পড়ে যেতে নেই পিছন থেকে একটা হাত আমাকে আঁকড়ে ধরে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না তাকে নিয়েই আমি পাহাড়ের থেকে পড়ে গেলাম।
ধপ করে চোখ খুলে ফেললাম। তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে ওঠে বসলাম। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বার বার। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু পানি কণা মুছে নিলাম। বুক ধুকপুক করছে। হার্ট স্বাভাবিকের থেকেও দ্রুত গতিতে বিট করছে। শরীর ভয়ানক ভাবে কাঁপছে।
রুমের এসি অন করে আবার শুয়ে পড়লাম। কিন্তু কিছুতেই চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না। চোখ বন্ধ করলেই তখনকার স্বপ্নটা চোখের সামনে ভেসে ওঠছে। না এভাবে ঘুমানো সম্ভব না। বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে চলে গেলাম। বেলকনিতে রাখা দোলনায় বসে পড়লাম। আমার ঠিক সামনেই মিদু। মিদুর দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম।
এ কেমন স্বপ্ন দেখলাম? কে আমাকে ধাক্কা দিল কেই বা আমাকে আঁকড়ে ধরল? এই স্বপ্ন যদি সত্যি হয় তাহলে। না না এটা কি করে সত্যি হবে। আমার সাথে কার শত্রুতা আছে যে আমাকে মেরে ফেলার জন্য পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে।
এসব ভাবতে ভাবতে যে কখন সকাল হয়ে গেছে খেয়ালই করি নাই। সারা রাত কাটল নির্ঘুম আর ছটফট করতে করতে। ওয়াশরুম চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই আমি অবাক হয়ে যায়। কারণ আমার রুমে অহি আর বন্যা বসে আছে। অহি ঘুমের জন্য ঢুলছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র সকাল ৫ টা বেজে ৩০ মিনিট। আমি বন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
এই কাক ভোরে কোনো ফক্কিনিও কারো বাসায় ভিক্ষা চাইতে আসে না। আর তুই এতো সকালে আমাদের বাসায়।
বন্যা কণার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। কণার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে,
তুই আমাকে ফক্কিনির থেকেও নিম্নশ্রেণীর সাথে তুলনা করলি।
অহি আমি কী একবারও এই কথা বলছি? কথায় আছে না, সবার মাঝে পড়ল কথা যার কথা তার গায়ে লাগে।
অহি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। এতে জেনো বন্যার রাগ আরও এক ধাপ বেড়ে যায়।
তো তোদের বাসার খাবার দাবার সব শেষ হয়ে গেছে নাকি যে এতো সকালে আমাদের বাসায় খেতে চলে এসেছিস? খাবার খে.....
আর কিছু বলার আগেই বড় আম্মু আমার কান টেনে ধরে।
আহ ..... বড় আম্মু লাগছে। কানটা ছাড় প্লিজ।
ছাড়ব না। আগে বল আরও বন্যার পিছনে লাগবি? কতদিন পরে মেয়েটা আমাদের বাসায় আসছে। আর তুই মেয়েটাকে খোটা দিচ্ছিস।
বড় আম্মু আরো একটু জুরে কানে ধরে টান দেও। ফাজিল মাইয়া আমাকে ফক্কিনি বলে।
বড় আব্বু ডাক দেওয়ায় বড় আম্মু আমার কান ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে আমাদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বলে দিয়ে গেছে নাস্তা করে নিতে। বড় আম্মু আমার রুমে আসছিল আমাদের তিনজনের জন্য নাস্তা নিয়ে।
এমনিতে তো তোকে টানা হেচড়া করেও আমাদের বাসায় আনা যায় না। আর আজকে এত সকালে আমাদের বাসায়। ব্যাপার কী?
সাজার জন্য আসছি। তুই তো জানিস আমার সাজতে অনেক সময় লাগে। মিরা ( বন্যার ভাইয়ের মেয়ে) আমি সাজতে গেলেই শুধু ডিস্টার্ভ করে তাই তোদের বাসায় চলে এসেছি।
অনুষ্ঠান শুরু হবে সাড়ে ১০ টা থেকে। আমাদের সবাইকে ১০ টার মাঝে থাকতে বলছে। আর এখন বাজে সাড়ে ৫ টা। আমাদের বাসা থেকে ভার্সিটি যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট। তোর ৪ ঘন্টা ১০ মিনিট সময় লাগব সাঁজতে।
আজকে স্পেশাল সাঁজ দিতে হবে না। যতই হোক আজকে আমার ক্রাশ আসবে। উপ উনার সাথে দুইটা সেলফি নিতেই হবে।
ছিঃ তোদের না বয়ফ্রেন্ড আছে। বয়ফ্রেন্ড থাকতে অন্য ছেলেদের ওপর নজর দিস। লজ্জা করে না। আমি আজকেই সাফাত ভাইয়া আর নোমান ভাইয়াকে বলব।
কণা প্লিজ সাফাতকে বলিস না। দেখ আমি নিজের ইচ্ছায় আসতে চাইনি। এই সয়তান মাইয়া আমারে ঘুম থেকে টেনে তুলে নিয়ে আসছে। আমার সাদের ঘুমটা বিসর্জন দিয়ে এখানে বসে থাকতে হচ্ছে। দেখ এখনো কেমন ঘুমে ঢুলছি?
সারা রাত জেগে সাফাত ভাইয়ার সাথে কথা বললে তো সকালে ঘুম তো ছাড়তেই চাইবে না।
বন্যা আমার দিকে শকুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বন্যার এমন দৃষ্টি দেখে আমি থতমত খেয়ে যাই। বন্যা সিআইডির মত প্রশ্ন করে।
আমরা না হয় সারা রাত জেগে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলি। তুমি কার সাথে কথা বলিস। তুমি আমাদের থেকে লুকিয়ে তলে তলে টেম্পু চালাও।
আরে তেমন কিছু না।
দেখ মিথ্যা বলে লাভ নেই। তোর চোখ বলে দিচ্ছে তুই রাত জেগে ছিলি। চোখ জোড়া কেমন কেমন লাল হয়ে আছে।
অহি বেসুরো গলায় গান গাওয়া শুরু করে।
তুমি তলে তলে টেম্পু চালাও
আমি করলে হরতাল
আমি করলে হরতাল
বুনু আমি করলে হরতাল
থাম থাম মেরি মা। ( তারপর ওদেরকে স্বপ্নের কথাটা খুলে বললাম।)
বাল তুই একটা স্বপ্নের জন্য রাত জেগে ছিলি?
বন্যা এসব বিচ্ছিরি ভাষা আমার সামনে বলতে না করছি না।
বাল কত সুন্দর ভাষা। বাঙালি হয়েও যদি তুমি বাল না বলো তাহলে তুমি কোন বালের বাঙালি। বা...
আর কিছু বলার আগেই বন্যার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলাম। একবার যখন এই টেপ রেকর্ডার চালু হয়ছে মুখে খাবার না ঢুকলে বন্ধ হবে না। আমরা তিন জন একসাথে নাস্তা করে নিলাম। নাস্তা শেষে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে তিনজন সাঁজতে বসে গেলাম।
____________________
গত এক ঘন্টা ধরে আমি আর অহি বন্যার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এই মেয়ের সাজ শেষ হওয়ার কোনো নাম গন্ধও নেই। আমরা তিনজন এক রকম করে সেজেছি। আমি আর অহি হালকা মেকআপ করছি আর এই মেয়ে ভারি মেকআপ করতে গিয়ে সময় নষ্ট করছে। আমরা তিনজনেই নীল রঙের জর্জেট শাড়ি পড়ছি। হাতে নীল রঙের কাঁচের চুড়ি পড়ছি। ঠোঁটে খয়েরি রঙের লিপস্টিক। হালকা মেকআপ করছি। খোলা চুলে দুইটা লাল গোলাপ গুজে দিয়েছি। কানে নীল পাথরের লম্বা ইয়ার রিং পড়ছি। আমাদের আরো ১৫ মিনিট ওয়েট করিয়ে বন্যার সাজ কম্পলিট হলো। অতঃপর তিন বান্ধবী ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম।
৫৭
বন্যা, অহি আর কণা ভার্সিটির গেইট দিয়ে প্রবেশ করছে। সবার দৃষ্টি তাদের দিকে বিশেষ করে কণার দিকে। কণাকে হুর পরির থেকেও কোনো অংশে কম লাগছে না। কণাকে দেখে অনেক ছেলে বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেদিকে কণার কোনো খেয়াল নেই সে তো তার বান্ধবীদের সাথে গল্পে মত্ত্ব।
____________________
আমি, অহি আর বন্যা দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। তখন হুট করে ছোঁয়া এসে আমার হাত ধরে কান্না শুরু করে দিল।
কণাকে আমাকে প্লিজ তুমি ক্ষমা করে দেও। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। আমি তোমার সাথে অন্যায় করে এখন অনুশোচনায় ভুগছি। তুমি হয়তো ভাবছ এতো বছর যার ভিতর অনুশোচনা জাগেনি আর আজকে অনুশোচনা জেগে ওঠলো বা কয়েক দিনে আমি কী করে চেইন্জ হয়ে গেলাম? ভাইয়া আমার চোখ খুলে দিয়েছে। আমি সত্যিই অনুতপ্ত। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও।
আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারব না। তুমি আভিয়ান ভাইয়ার সাথে প্লেন করে আমার ক্ষতি করার জন্য ক্ষমা চাওয়ার নাটক করছ না তার কী গ্যারান্টি আছে?
কণা আমি কোনো নাটক করছি না। আমি সত্যিই অনুতপ্ত তাই তোমার কাছে কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি জানি তোমার সাথে যা অন্যায় করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য। তার শাস্তিও আমি পেয়েছি। তোমার সাথে অন্যায় করেছি বলেই হয়তো আল্লাহ শাস্তি হিসেবে আমার এত কঠিন একটা অসুখ হয়েছে।
মানে?
কণা আমার ব্রেইন ক্যান্সার হয়ছে। আমি আর মাত্র ৫ মাস বাঁচব। কণা এই অপরাধবোধ নিয়ে আমি মরতে চাই না। আমি তোমার দুইটা পায়ে পড়ছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও।
বলতে বলতে ছোঁয়া আমার পা জড়িয়ে ধরে। সবাই আমাদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। যা দেখে আমার আনইজি লাগছে। ছোঁয়া তো তার শাস্তি পেয়েছে। আল্লাহ তার কুকর্মের শাস্তি দিয়েছে। ছোঁয়া তো মন থেকে ক্ষমা চাইছে। আমি ক্ষমা করে দিতেই পারি।
৫৮
হাতে ফুলের ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আদিয়াত আয়মানকে ওয়েলকাম করার জন্য। আমার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার একটুও ইচ্ছে ছিল না। তখন ছোঁয়াকে ক্ষমা করে দেওয়ার পর ছোঁয়া চলে যায়। ছোঁয়া চলে যাওয়ার পরেই সিনিয়র কিছু ভাইয়ারা এসে আমাদের তিনজনের হাতে ফুলের ডালা ধরিয়ে দেয় আদিয়াত আয়মানকে ওয়েলকাম করার জন্য। অহি আর বন্যা খুশি হলেও আমার একটু ভালো লাগে নি।
ইতিমধ্যে ভিসি জানিয়ে দিয়েছে আদিয়াত আয়মান কিছুক্ষণের মাঝে চলে আসবে। ফুলের ডালা নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি। নিজেকে দেখে কামলা কামলা ফিলিংস আসছে। ভার্সিটির গেইটের সামনে তিন তিনটা কালো গাড়ি থামে। সামনের এবং পিছনের গাড়ি থেকে কালো পোশার দাড়ি কিছু বডিগার্ড বের হয়ে মাঝখানের গাড়িটির ডোর খোলে দেয়। গাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে আসে একজন সুদর্শন পুরুষ।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া