খুব তাড়াতাড়ি। তার আগে আমার কিছু মানুষের সাথে হিসাব চুকানো বাকি আছে। যাদের জন্য আমার প্রেয়সী প্রতি নিয়ত কষ্ট পেয়েছে তাদেরকে এর দাম দিতেই হবে। আমার প্রেয়সীর প্রত্যেকটা অশ্রুর ফোটার মুল্য তাদেরকে দিতে হবে। চরম মূল্য চুকাতে হবে সবাইকে। ( রাগী গলায়)
মহিলাটি ছেলেটির চোখ মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। ছেলেটির চোখ থেকে যেনো আগুন ঝরছে। অতিরিক্ত রাগার ফলে ছেলেটির নাক মুখ লাল হয়ে গেছে। ছেলেটি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কনট্রোল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।
২০
ছাদের রেলিংয়ের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছি। হঠাৎ করে আমার মন ভালো হয়ে গেলো কেনো? ছেলেটার চিঠি পড়ে। কেউ আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে এটা জেনে। আমি তো চাইতাম আমাকে কেউ একটুখানি ভালোবাসুক। তাহলে ছেলেটার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস কাজ করছে না কেনো? আমি কী অন্য কাউকে ভালোবাসি? যাকগে এসব ভেবে ফুরফুরে মেজাজটা বিগড়ে দিতে চাই না।
হঠাৎ মৃদু বাতাস বইতে শুরু করলো। কী ভেবে যেনো খোপা করা চুলগুলো খুলে দিলাম। বাতাসের সাথে চুলগুলো উড়ছে। কিছু চুল চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে। চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মুহূর্তটাকে খুব উপভোগ করছি আমি।
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে,
দেখতে আমি পাইনি তোমায়।
দেখতে আমি পাইনি।
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে,
বাহির পানে চোখ মেলেছি
বাহির পানে
যদি মন কাঁদে ,
তুমি চলে এসো ,
চলে এসো এক ভরসায়।
যদি মন কাঁদে ,
তুমি চলে এসো ,
চলে এসো এক ভরসায়।
এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে,
জল ভরা দৃষ্টিতে,
এসো কোমলো শ্যামলো ছায়াই।
চ.....
এক সাথে অনেকগুলো পদ ধ্বনি শুনে আমি গান গাওয়া বন্ধ করে দেই। বোঝার চেষ্টা করছি কারা এসেছে?
আভিয়ান এই মেয়েটা কে? অনেক সুন্দর গান গায় তো।
রনি ভাইয়ার গলা শুনে চমকে যায় আমি। তাহলে কী আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুরা এসেছে? এখন যদি তারা আমাকে এখানে দেখে তাহলে কেমন বিশ্রী একটা ব্যাপার ঘটবে?
ভার্সিটির কেউ জানে না যে আমি আভিয়ান ভাইয়ার কাজিন। আমাকে এখানে দেখলে অনেকগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। যেটা আমি চাইছি না। এটা নিয়ে আভিয়ান ভাইয়া পড়ে জামেলা করবে। ফুফি এখানে আছে তাই আমি চাইছি না কোনো রকম ঝামেলা হোক আমাকে নিয়ে। ছাদের লাইট অফ করা। তাই ছাদ মোটামুটি অন্ধকার।আমি চুলগুলো এলোমেলো করে মাথায় ভালো করে উড়না টেনে নিলাম। রেলিং থেকে নেমে দিলাম ভৌঁ দৌড়। এক দৌড়ে উনাদের পাশ কাটিয়ে নিচে চলে এলাম।
আমি জানি উনারা আমার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মশা গিলে ফেলুক তাতে আমার কি?
______________
দোস্ত মেয়েটা কে ছিল। এরকম ভূতের মতো দৌড়ে চলে গেলো কেনো?
আমাদের ভূত ভেবে ও ভূতের মতো দৌড়ে চলে গেছে। ( আভিয়ান একটু হাসার চেষ্টা করে কথাটা বললো। )
মানে?
ও ভূতে ভয় পায়। আমাদের বাসায় ও আর আমি ছাড়া আর কেউ রাতে ছাদে আসে না। আজকে এতগুলো মানুষ একসাথে দেখে ভূত ভেবে দৌড়ে চলে গেছে।
লাইক সিরিয়াসলি আমরা ভূত।
কথাটা বলেই সবাই ছাদ কাঁপিয়ে হাসি শুরু করে।
ও তোর কে হয়?
কাজিন।
তোর কাজিনের নাম কী?
কি ব্যাপার ফাহিম আমার কাজিনের ব্যাপারে তোর এতো কিউরিসিটি কেনো? প্রেমে টেমে পড়ে গেছিস নাকি?
ফাহিম একটু হাসার চেষ্টা করে মাথা চুলকে বলে,
তুই তো জানিস আমি কণাকে পছন্দ করি। শুধু মাত্র তোর কথাই কণাকে প্রোপোজ করি নাই। ওকে দেখতে অনেকটা কণার মতো আর ওর গানের গলাটা অনেক সুন্দর।
তোদেরকে কী আমি আমার কাজিনের প্রশংসা করার জন্য ডেকে এনেছি?
সবাই একসাথে বলে, না।
তাহলে যে কাজের জন্য এসেছিস সেই কাজটা ঠিক করে কর।
মামা তোমার কাজিনের প্রসংশা করছি বলে তোমার এতো জ্বলছে কেনো? সামথিং সামথিং।
আভিয়ান তার বন্ধুদের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সবাই ভয়ে চুপসে যায়।
২১
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি ঐ চিঠি প্রেরকটা কে? আর এতো সুন্দর গিফট কে দিলো? তখনি ধপ করে আমার পাশে কেউ শুয়ে পড়লো। প্রথমে ভয় পেলেও পরে অহিকে দেখে শান্ত হয়ে যায়।
তলে তলে তো ভালাই টেম্পু চালাও।
মানে?
এখন তো বুঝবাই না আমি কী বলি? আমরা জিঙ্গেস করলে এখন তো মানে মানেই করবা।
অহির বাচ্চা ঘুরিয়ে পেছিয়ে কথা না বলে ক্লিয়ার করে বল কী বলতে চাইছিস?
তুই তো তলে তলে ভালোই প্রেম করছিস। তোর সেই প্রেমিক পুরুষ তোকে গিফটও করছে।
মানে?
এইগুলো তুই কই পাইলি।
আমি অহির হাতে ঐ চিঠি প্রেরকের দেওয়া জিনিসগুলো দেখে চমকে যায়। আমি আমতা আমতা করে বলি,
কই পাবো আবার মেলা থেকে কিনছি।
মেলা থেকে কিনছিস ভালো কথা। তাহলে এভাবে আমতা আমতা করছিস কেনো?
কোথাই আমতা আমতা করছি? তুই হঠাৎ করে এমন ভাবে প্রশ্ন করলি যে আমি চমকে গেছে।
আচ্ছা বাদ দে। তোর পছন্দ কিন্তু সেই। এখন থেকে শপিং করতে গেলে আমি তোকেই নিয়ে যাবো।
আচ্ছা এখন যা।
তুই আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস।
আরে বাপ তোরে আমি তাড়িয়ে দিলাম কই? যাস্ট যেতে বলছি। ফুটবল স্যার যে এসাইনমেন্ট দিছে তা শেষ করে ফেলেছিস।
আরে না আমার তো মনেই ছিল না। উফ স্যারটা এতো পড়া যে কেন দেয়? যাই বন্যাকেও একটু প্যারা দিয়ে আসি। আমি জানি ঐ মাইয়া নোমান ভাইয়ার সাথে পিরিতের আলাপ করতে করতে এসাইনমেন্টের কথা বেমালুম ভুলে গেছে।
ওদের দুজনকে একসাথে কতো সুন্দর লাগে। সারাদিন টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করে। দিনে একশ বার ব্রেকআপ করে আবার দুজন দুজনকে ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারে না।
একদম ঠিক বলছিস।
_______________
হঠাৎ করে ইচ্ছে জাগলো আর্ট করার। প্রায় এক বছর ধরে কোনো রকম আঁকা আঁকি করি না। অনেক দিন পর রং তুলি নিয়ে বসলাম। খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো। আমার রুমে অহি আর বড় আম্মু ছাড়া আর কেউ আসে না। বড় আম্মু দিনের বেলা আসে রাতে আসে না। তাই দরজার দিকে তাকিয়ে মানুষটাকে দেখার প্রয়োজন মনে করলাম। না দেখেই বলে ফেললাম,
অহি তুই না একটু আগে গেলি আবার চলে এলি। দুই মিনিটের জন্যও তোর রুমে মন টিকে না।
আমি অহি না।
আম্মুর কন্ঠ শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যায়। আমি কী ভুল শুনলাম নাকি? না আমি কল্পনা দেখছি। তাড়াতাড়ি হাতে একটা চিমটি কাটলাম। না এটা স্বপ্ন না সত্যি। তাহলে কী আমি ভুল শুনলাম? আমি তাড়াতাড়ি দরজার দিকে তাকালাম। দরজার সামনে আম্মুকে দেখে আমি ভূত দেখার মতো চমকে যায়। এটা কি সত্যিই আম্মু নাকি ভূত। আম্মু কোনো দিনই আমার রুমে আসে না। আমার ৭ বছর বয়স পর্যন্ত এক আন্টির সাথে আমি এই রুমে থাকতাম। আন্টির ছেলে লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পাওয়ার পর আন্টির ছেলে আন্টিকে নিয়ে এখান থেকে চলে যায়। এরপর থেকে আমি একাই এই রুমে থাকি। আম্মুকে কোনো দিনও আমার রুমে আসতে দেখি নাই। আম্মু এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে ঠিক আমার সামনে দাঁড়ায়।
তোর মনে হয় না তুই বেশি বাড়া বাড়ি করছিস। তোর ফুফিকে দেখে তুই একটু বেশিই উড়ছিস। তোর এই ডানা চাটতে আমার দুই মিনিট সময়ও লাগবে না।
দুই মা মেয়ে আমাকে ছাড়াই আড্ডা দিচ্ছিস।
ফুফির কন্ঠ শুনে আম্মু ভয় পেয়ে যায়। ফুফিকে এখানে এই সময় আম্মু মোটেও আশা করেনি।
নিজের মায়ের সাথে আড্ডা দেওয়ার কপাল নিয়ে আমি জন্মায়নি। তুমি তো আর জানো না আম্মু আমার সাথে আড্ডা দিতে নয় থ্রেট দিতে আসছে। ( মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে। )
২২
হোয়াট দ্যা হেল। এই মেয়ে তুমি এখানে কী করছো?
তুমি কফি চেয়েছিলে তাই দিতে আসছি।
কফি দিতে আসলে এভাবে জড়া জড়ি করতে হয়।
আমি নিজেকে কনট্রোল করতে পারি নাই। আফটার শাওয়ার লোকে তোমাকে যে কি হট লাগছে।
আমার রুম থেকে এখনি বেরিয়ে যাও। তোমাকে যেনো নেক্সট টাইম আমার রুমের আশেপাশে না দেখি।
না আমি যাবো না।
আমি মেয়েদের শরীরে টার্চ করি না। নাহলে থাপড়ায়া তোমার গাল লাল করে দিতাম।
আমার রুম থেকে এখনি বেরিয়ে যাও। তোমাকে যেনো নেক্সট টাইম আমার রুমের আশেপাশে না দেখি।
না আমি যাবো না।
আমি মেয়েদের শরীরে টার্চ করি না। নাহলে থাপড়ায়া তোমার গাল লাল করে দিতাম।
তোমার হাতের থাপ্পড় খেলে আমি নিজেকে ভাগ্যমান মনে করতাম। কারণ তোমার হাতের ছোঁয়া আমার গালে লাগতো।
এই অসভ্য মেয়ে এখনি আমার রুম থেকে বের হও।
না হবো না। আর আমার একটা নাম আছে বার বার এই মেয়ে, এই অসভ্য মেয়ে না ডেকে আমার নাম ধরেও তো ডাকতে পারো।
ইউ নো হোয়াট আমি মেয়েদের থেকে দূরত্ব রেখে চলতে পছন্দ করি। তুমি এভাবে আমার কথা মানবে না। তোমাদের মতো অনেক গায়ে পড়া মেয়েদের আমি হ্যান্ডেল করেছি।
কথাটা বলেই আদিয়াত হাতের টাওয়ালটা মেয়েটির গলায় পেচিয়ে একটানে মেয়েটাকে রুম থেকে বের করে দরজা লক করে দেয়।
( আদিয়াত আয়মান তুর্ণ একজন সফল বিজনেসম্যান। সবার কাছে আদিয়াত আয়মান নামেই পরিচিত। হাইট ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। হাসলে গালে টুল পড়ে, কথা বলার সময় এক গালে টুল পড়ে। ধূসর রঙের চোখের মনিগুলো সবাইকে সম্মোহিত করার জন্য যথেষ্ট। আদিয়াত আয়মান বলতে মেয়েরা অঙ্গান। কিন্তু আদিয়াত মেয়েদের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে চলতে পছন্দ করে। মেয়েদের থেকে এতোটাই দূরত্ব বজায়া চলে যেনো মেয়েদের থেকে এলার্জি আছে তার। এক কথায় সে মেয়েদের ছায়াও তার পাশে সহ্য করতে পারে না। তার পৃথিবী তার বাবা-মাকে নিয়ে।)
আদিয়াত একটা শার্ট পড়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে তার মার সাথে আরুহিকে বসে থাকতে দেখে তার মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। ভেবেছিল তার মাকে বলে পরে বাসা থেকে বের হবে কিন্তু আরুহিকে দেখে তার কথা বলার ইচ্ছেটাই মরে গেছে। তাই সে হনহন করে চলে যেতে নেয় তখন পিছন থেকে রাহেলা বেগম ( আদিয়াতের মা) ডেকে ওঠেন,
এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস আদিয়াত?
জানি না।
জানি না এটা আবার কেমন কথা? কখন আসবি?
আসবো না।
আসবো না মানে কি?
এই মেয়ে (আরুহি) যেদিন আমাদের বাসা থেকে যাবে সেদিন আসবো। এই মেয়ে যতক্ষণ আমাদের বাসায় থাকবে ততক্ষণ আমি বাসার ত্রি-সীমানাই আসবো না।
কথাটা বলে আদিয়াত হন হন করে চলে যায়। রাহেলা বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে আশাহত দৃষ্টিতে তাকান।
এই ছেলের রাগ কী কোনোদিন কমবে না?এই
ছেলে যখন শান্ত তখন খুব শান্ত। যখন রেগে যায় তখন ভয়ংকর হয়ে যায়।
কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাহেলা বেগম। এবার আরুহির দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। বেশ কড়া গলায় বলে,
তুই আদিয়াতের রুমে গিয়েছিলি?
মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়।
রুমে গিয়ে কী করছিলি যার জন্য এতো রেগে গেলো?
যাস্ট একটু জড়িয়ে ধরছিলাম।
তুই জানিস না আদিয়াত এসব পছন্দ করে না। তুই বড় হয়েছিস এভাবে হুট হাট করে একটা অবিবাহিত ছেলের রুমে ঢোকা ঠিক না। মানছি তুই বিদেশে বড় হয়েছিস তাই বলে এ দেশের কালচার সম্পর্কে তুই জানবি না।
আরুহি মাথা নিচু করে ফেলে। রাহেলা বেগম সোফা থেকে ওঠে চলে যায়।
২৩
আমি ফুফির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। ফুফি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
ফুফি কোনো দিন কি আমি আমার মায়ের ভালোবাসা পাবো না।
কণা তোর লজ্জা করে না। যে মানুষটা তোকে সহ্য করতে পারে না তার কাছেই বার বার ছুটে যাস একটু ভালোবাসার জন্য।
ফুফি আমার তো ইচ্ছে করে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমুতে। তার কাছে সব দুঃখ কষ্ট শেয়ার করতে। আমার বয়সি বাচ্চারা যখন তার বাবা মার হাত ধরে স্কুলে গেছে তখন আমি একা বা বাসার ড্রাইভারের সাথে স্কুলে গেছি। মা থাকা সত্ত্বেও একজন অর্ধপরিচিত মহিলার কাছে বড় হয়েছি। আমার সব থেকেও কিছু চলে না। দিনের পর দিন এতিমদের মতো অবহেলা সহ্য করে বড় হয়েছি। আমার জীবনে এতো কষ্ট কেনো? আর পাঁচটা বাচ্চার মতো তো আমার জীবনটাও স্বাভাবিক হতে পারতো। দিনের পর দিন নিজের মা, নিজের পরিবার থেকে এতো অবহেলা আমি নিতে পারছি না।
কথাগুলো বলে কণা ফুফিয়ে কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় আহানা রহমানের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায় কণা। আহানা রহমান গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের কোণের পানিটা মুছে নেন। তিনি তো জানেন ছোটবেলা থেকে কতো কষ্ট করে এই মেয়েটা বড় হয়েছে। নিজের চোখে মেয়েটাকে রাতের পর রাত কাঁদতে দেখেছেন। খুব সাবধানে কণার মাথা নিজের কোল থেকে বালিশে নামিয়ে রাখেন। কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে চলে যান আহানা রহমান।
২৪
সকালের রোদ চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় কণার। পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনে মন খারাপ হয়ে যায় কণার। কারণ তার একটা পাখি ছিল তার নাম ছিল মিদু। পাখিটা তার এক ফ্রেন্ড গিফট করেছিল। নামটাও তার সেই ফ্রেন্ডই ঠিক করে দিয়েছিল। পাখিটাকে তার মা মেরে ফেলে। এসব পশুপাখি তিনি একদম পছন্দ করেন নাহ আর কণার পছন্দের জিনিস একদমই রাখতে দেন না। কণা মন খারাপ করে খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
_____________
ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে কণা। কারো দিকে না তাকিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বসে যায় কণা। ব্রেকফাস্ট শেষ করে রুম থেকে বেগ নিয়ে আসে কণা। অভিক আহম্মেদ ( আভিয়ানের বাবা) তখন অফিসে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলেম।
বড় আব্বু।
কণার ডাক শুনে থমকে যান অভিক আহম্মেদ। তারপর আভিয়ানের মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
আফিফা ওর যদি টাকার প্রয়োজন হয় তাহলে ওকে টাকা দিয়ে দাও।
কথাটা বলেই বড় আব্বু হনহন করে চলে যায়।
তুই জানিস না ভাইজান তোর সাথে কথা বলে না। তাহলে কেনো আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাস।
মনটা এমনিতেই খারাপ ছিল এখন আরো খারাপ হয়ে গেলো। বড় আব্বুর কথাটা আমার গায়ে কাটার মতো বিধলো। আমি কি শুধু ওনার কাছ থেকে টাকাই নেই। অন্য কিছুর জন্য উনাকে ডাকতে পারি না। বড় আব্বু কোনো দিন আমার সাথে কথা বলেনি। ভুল করেও কোনোদিনও একটা কথা বলেনি। বড় আব্বুর মুখে আমার নাম কখনো শুনিনি।
কণা তুই এতো বেহায়া কেন? যে তোর সাথে কথা বলতে চায় না তার সাথে কেনো আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাস। তোর লজ্জা থাকলে দ্বিতীয় বার ঐ লোকটার সাথে কথা বলতে যাবি না।
কথাটা বলে অহি আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাসা থেকে বের হয় আসে।
২৫
ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পাই একসাথে অনেকগুলো স্টুডেন্ট জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর অহি ভীড়ের দিকে এগিয়ে যাই।
ভীড় ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই আমাদের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আমি আর অহি অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে যায়। ভার্সিটির ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সিসি টিভির স্কিনে একটা ভিডিও চলছে। যেখানে একটা ছেলে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে, ঠোঁটে কিস করছে। ছেলেটার মুখ স্পষ্ট নাহলেও মেয়েটার মুখ স্পষ্ট।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া