আম্মুর এইটুকু কথাই যেনো আমার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো। খুশিতে আমার চোখ ছলছল করে ওঠলো। আজ থেকে হয়তো আমি আমার আম্মুর ভালোবাসা পাবো। আম্মুর পরের কথাটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
এই শুকনো মুখটা নিয়েই সারা রাত থাকতে হবে। আজকের রাতে তোর খাওয়া বন্ধ। তোর জন্য ছোঁয়াটা না খেয়েই ভার্সিটি চলে গেলো। তাই তোর খাওয়াও আজকে বন্ধ। এতো বছর পর আহানা আপা (আমার ফুফি) আমাদের বাসায় আসছে। আমি চাই না আহানা আপা তোকে দেখে রেগে যাক। আজকে আর তুই এই রুম থেকে বের হবি না।
কথাটা বলেই আম্মু আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমের ঢুকিয়ে বাইরে থেকে রুমের দরজা লক করে দেয়। ঠোঁটের কোনে যে হাসিটা ফুটে ছিল তা নিমেষেই উদাও হয়ে গেলো। মনে যে আশার আলো জেগেছিল তা কালো মেঘে ডেকে গেলো। দরজা ঘেষে বসে পড়লাম। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। ভাবলাম আম্মু হয়তো আজ থেকে আমাকে ভালোবাসবে। যেমন সব মা তার সন্তানকে ভালোবাসে। আমি হয়তো কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। তাই তো কেউ আমাকে ভালোবাসে না।
আমার জীবনে কী এমন কেউ আসবে না যে আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে? আমাকে সব সময় আগলে রাখবে। আমি না খেলে সে খাবে না। আমি একটু ব্যথা পেলেই সে অস্থির হয়ে যাবে। আমি কান্না করলে সে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বুকে আগলে নিয়ে বলবে, আজকে কাঁদছো কাঁদো। আর কোনো দিন যেনো আমি তোমার চোখে পানি না দেখি। তুমি কেনো বুঝো না তোমার চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লে তা আমার বুকে তীরের মতো বিধে।
কণা কথাগুলো বলে হু হা করে পাগলের মতো হাসি শুরু করে। কিন্তু চোখ থেকে অশ্রু ঠিকই গড়িয়ে পড়ছে।
আমিও না সত্যিই বোকা। আমি আকাশ কুসুম কল্পনা করছি। যেখানে নিজের মা আমাকে ভালোবাসে না সেখানে অন্য কেউ আমাকে ভালোবাসবে। হাউ ফানি।
১৪
জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম। ১০ মিনিট শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে এলাম। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। বিছানাতে বসে থাকা মানুষটা দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। আমি কল্পনাও করতে পারছি না ফুফি আমার রুমে এসে আমার বিছানায় বসে আছেন। উনি লাস্ট তিন বছর আগে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। আমার ওপর রাগ করে যে আমাদের বাসা থেকে চলে গিয়েছিলেন। আজকে তিন বছর পর আবার আসছেন।
এতো বড়ো হয়ে গেলি এখনো ঠিক করে চুলটা মুছতে জানলি না। তোকে নিয়ে আর পারি না নিজের ঠিক করে খেয়ালও রাখিস না।
ফুফি টাওয়াল নিয়ে আমার চুল মুছে দিতে লাগলো। আজকে মনে হচ্ছে আমি আবার আমার পুরোনো ফুফিকে ফিরে পেলাম। যে আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতো। খুশিতে আমার চোখ ছলছল করে উঠলো।
ফুফি চুলগুলো মুছে দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
আজকে তোকে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিবো।
ফুফি ভাত মেখে আমার মুখের সামনে ধরে। আমি থম মেরে বসে আছি আর ফুফির দিকে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
আমি মহুয়ার সব কথা শুনেছি। তুই খাবারটা খেয়ে নে তোকে মহুয়া কিচ্ছু বলবে না। আমার ওপর এই বাড়ির কারো কথা বলার সাহস নেই তুই তো জানিস। নে এবার হা কর।
আমি কিছু বললাম না আগের মতোই বসে আছি।
বুঝতে পারছি তুই তিন বছর আগের কথাগুলো ভাবছিস। তোকে এতো কথা শুনিয়ে আমিও ভালো ছিলাম না এতদিন। তোর সাথে অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। ঐ দিন রাগের মাথায় তোকে অনেক কিছু বলে আমেরিকা চলে গিয়েছিলাম। এতোদিন ব্যস্ততার জন্য এই দেশে আসতে পারিনি। অহি আমাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আর তুই আমাকে দেখেও চুপি চুপি চলে এলি। তোর জন্য সবাই আমার ভাইকে অপমান করছিল তাই সহ্য করতে না পেরে রাগের মাথায় তোকে ঐ দিন এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দে মা।
ছিঃ ছিঃ ফুফি তুমি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করো না। তুমি তো আমার মায়ের মতো আমাকে বকা দিতেই পারো। তার জন্য কী আমি কিছু মনে করতে পারি?
এই তো আমার লক্ষী মেয়ে। নে এবার তাড়াতাড়ি খাবারটা শেষ করে ফেল তো।
১৫
ফুফির রুমে বসে আছি। ফুফি আমাকে খাইয়ে দিয়ে উনার রুমে নিয়ে আসছেন গিফট দিবেন বলে। ফুফি আমার সামনে একটা লাগেজ রাখে।
এই না লাগেজটা। এখানে তোর সব গিফট রাখা আছে।
আমি লাগেজটার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। ফুফির মাথা কী খারাপ হয়ে গেলো?
ফুফি এই লাগেজের ভিতরের সব কিছু আমার?
ফুফি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
তুই এটা নিয়ে রুমে যা। আমি একটু রেস্ট নিবো অনেক টায়ার্ড লাগছে।
আচ্ছা।
______________
ভাইয়া রুমের সামনে দিয়ে আমার রুমে যাওয়ার সময় ভাইয়ার কিছু কথা আমার কানে আসে। আমি ভাইয়ার রুমের দরজাটা একটু ফাঁক করে রুমের ভিতরে উকি।
আরে ভাই আমার যেমন চেয়েছিলাম তার থেকে দুই গুন বেশি পেয়েছি।
____________________
আমাদের পে ...........
কে ওখানে?
আমি তাড়তাড়ি দরজার কাছে থেকে সরে আমার রুমে চলে এলাম। ভাইয়া আমাকে দেখতে পেলে কাচা গিলে খেতো। উফ খুব বাঁচা বেঁচে গেছি। আর জীবনেও কারো রুমে আড়ি পাতবো না।
_________
আভিয়ান দরজার কাছে এসে কাউকে দেখতে পায় না। করিডোরেও কাউকে দেখতে পায় না। নিজের মনের ভুল ভেবে কথা বলাই ব্যস্ত হয়ে যায়। কথা শেষে চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ফোনের তীক্ষ্ণ আওয়াজে ফট করে চোখ খুলে ফেলে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে আভিয়ানের। ফোনটা রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায় আভিয়ান।
১৬
রিকসা করে ভার্সিটি যাচ্ছি আমি আর অহি। ফোনটা আজকে বেশ ফুরফুরে। ফুফির জন্য আম্মু আমাকে কিছু বলতে পারে নি। আর কোনো কাজ করতে দিতে পারে নি। শুধু কটমট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি আর অহি গল্প করতে করতে ভার্সিটি চলে এলাম। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করলাম। আমরা দুজন ক্লাসে চলে এলাম। ক্লাসে আগে থেকেই বন্যা বসে ছিল। একের পর এক ক্লাস করে ক্লান্ত হয়ে আমরা তিন জন গিয়ে ক্যান্টিনে বসলাম। বন্যা ক্যান্টিনে এসেই টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে দেয়।
আরে ইয়ার স্যারগুলো এতো বক বক কী করে? আমি তো শুনেই অতিষ্ট উনারা বলেন কী করে।
উনাদের কাজেই এইটা।
বন্যা হঠাৎই লাফিয়ে ওঠে। উচ্ছ্বাসের সাথে বলে, দোস্ত মেলায় যাবি। ঐ দিকে একটা ছোট খাটো মেলা হচ্ছে তোরা যাবি নাকি?
আমি তো যাবো। কণা তুই যাবি না?
আমি তো যাওয়ার জন্য এক পায়ে দাঁড়া। মেলা আমার ভীষণ ভালো লাগে।
আমিও যাবো।
নোমান ভাইয়া আমাদের সাথে বসতে বসতে বললো।
তাহলে সাফাত ভাইয়াকেও নিয়ে যায়।
হুম যা তুই গিয়ে সাফাত ভাইয়াকে বলে আয়।
আমি কেনো বলবো তুই গিয়ে বল।
অহি ধমক দিয়ে আমাদের দুজনকে থামিয়ে দেয়।
তোরা এরকম করতে থাকলে তো পরে মেলায় যাওয়াই হবে না। কণা তুই সাফাত ভাইয়াকে বল। সাফাত ভাইয়া তোর কথা ফেলতে পারবেন না। কণা কিছু আবদার করবে আর সাফাত ভাইয়া রাখবে না এটা কখনো হতে পারে।
আমি যাচ্ছি।
ক্যান্টিন থেকে বের হতেই সাফাত ভাইয়াকে পেয়ে গেলাম।
ও সাফাত ভাইয়া।
কী?
শুনো না।
না বললে শুনবো কী করে?
আমাদের সাথে মেলায় যাবে? সাফাত ভাইয়া প্লিজ চলো না।
কে কে যাবে?
আমি, তুমি ,অহি , বন্যা আর নোমান ভাইয়া।
আমি কখন বললাম আমি যাবো????
সাফাত ভাইয়া চলো না প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
অহি আর বন্যা এসেও সাফাত ভাইয়াকে যাওয়ার জন্য বলতে লাগলো।
কী ব্যাপার বলোতো তোমরা তিন জন মেয়ের সাথে আমাদের মতো অসহায় দুইটা ছেলে নিতে চাইছো কেনো?
আমি খুশিতে গদ গদ হয়ে বললাম, তোমাদেরকে আমাদের সাথে নেওয়ার দুইটা কারণ আছে।
কি কি ?
কারণগুলো হলো :
১। মেলায় অনেক মানুষ তাই তোমাদের আমাদের বডিগার্ড হিসেবে নিয়ে যাচ্ছি।
২। তোমাদের দুজনের পকেট খালি করার জন্য।
সাফাত ভাইয়া মজা করে বলে, সুন্দরী মেয়েদের বডিগার্ড হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
১৭
আমাদের গাড়িটা মেলার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমরা পাঁচ জন সাফাত ভাইয়ার গাড়ি করে এসেছি। আমি সবার আগে গাড়ি থেকে নেমে মেলার ভিতরে ঢুকে গেলাম। মেলাটা অনেক ছোট হলেও অনেক মানুষের ভিড়। আমি আরেকটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কোন দোকানে আগে যাবো সেটা ভাবছি।
তোমাকে অনেক কিউট লাগছে মিস ধুলোকণা।
কেউ কানের কাছে ফুঁ দিয়ে কথাটা বলে কানের লতিতে কামড় দিলো। আমি সাথে সাথে পিছনে তাকালাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। হঠাৎ নজর যায় আমার উড়না দিকে। উড়নার এক পাশে একটা কাগজ কেউ বেধেঁ রেখেছে।
কেউ কানের কাছে ফুঁ দিয়ে কথাটা বলে কানের লতিতে কামড় দিলো। আমি সাথে সাথে পিছনে তাকালাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। হঠাৎ নজর যায় আমার উড়না দিকে। উড়নার এক পাশে একটা কাগজ কেউ বেধেঁ রেখেছে। উড়না থেকে খুলে কাগজটা হাতে নিলাম। কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করলাম।
ধুলোকণা ডাকলাম বলে কী রাগ করলে? মাঝে মাঝে রাগ করা ভালো। আবার অতিরিক্ত রাগ ভালো না। উমম তাহলে তোমাকে বালিকণা ডাকি। ধুলোকণা হও বা বালিকণা তুমি তো আমারি। তোমার রাগী রাগী ফেইস দেখতে অনেক ভালো লাগে। তোমার রাগী ফেইস দেখে মনের কোণে একটা সুপ্ত ইচ্ছা জাগে। বলবো.......... না থাক। যেদিন ইচ্ছেটা পুরণ করার অধিকার পাবো সেদিনই বলবো। তুমি বোধ হয় ভাবছো আমি কে? যতই ভাবো আমি কে তুমি তা জানতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি চাইছি। আমি কে তা না ভেবে ইন্জয় করো মুহুর্তটাকে।
চিরকুটটা পড়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এই ছেলেটা কী জাদু জানে নাকি? আমি কখন কী ভাববো বুঝলো কী করে?
কীরে তুই এখানে হিমালয় পর্বতের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? তখন তো আমাদের ফেলে রেখেই লাফাতে লাফাতে চলে এলি।
পিছন থেকে হালকা ধাক্কা দিয়ে কথাটা বললো অহি। আমি অহিদের দেখে তাড়াতাড়ি চিঠিটা লুকিয়ে ফেললাম। এই চিঠি দেখলে এরা এখন মেলাই ঘুরা বাদ দিয়ে চিঠি নিয়ে গবেষণা করতে বসে যাবে। গবেষণার বিষয়বস্তু হবে চিঠিটা কে দিলো? কেনো দিলো? কণাকে তো সরাসরি এসেই দিতে পারতো এভাবে লুকিয়ে দেওয়ার কী দরকার ছিল? ছেলেটার উদ্দেশ্য কী? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
কোন দোকানে আগে যাবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি কিন্তু রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি ।
সাফাত ভাইয়ার কথায় আমি গাবড়ে যাই। সাফাত ভাইয়া কী বুঝে ফেললো নাকি? আমি চাই না আমার জন্য সবার আনন্দ মাটি হোক। যথা সম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
মানে?
তোকে কেউ প্রোপোজ করছে নাকি? তাহলে তো আমরা খুব খারাপ বডিগার্ড। সুন্দরী মেয়েদের ঠিক ঠাক গার্ড করতে পারলাম না। কী বলিস নোমান?
নোমান ভাইয়াও মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। সাফাত ভাইয়া মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলে,
আরে কণা তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? আমি তো যাস্ট মজা করলাম। সত্যিই কী কেউ প্রোপোজ করছে নাকি? (ভ্রু কুচকে) নামটা বল একবার ঘুষি মেরে নাক ভেঙে দিবো।
উফ তোমরাও না কীযে বলো?
কথাটা বলেই একটা চুড়ির দোকানে ঢুকে পড়লাম। বাহারি রঙের চুড়ি দেখে আমার মন খুশিতে নেচে ওঠলো। অনেক রঙের চুড়ি কিনে নিলাম। কাঁচের চুড়ি আমার ভীষণ প্রিয়। সব রঙের দুই ডজন করে চুড়ি আমার কাছে আছে। নাচতে নাচতে একটা শাড়ির দোকানে ঢুকে পড়লাম। শাড়ির দোকানে ঢুকেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সবাইকে সবার প্রিয় মানুষ শাড়ি পছন্দ করে দিচ্ছে। বন্যাকেও নোমান ভাইয়া শাড়ি পছন্দ করে দিচ্ছে। আমাকে কে পছন্দ করে দিবে? আমার তো কোনো প্রিয় মানুষ নেই। এখন আর এই মেলায় থাকতে ইচ্ছে করছে না।
মন খারাপ করে এসে গাড়ির ডিকিতে বসে পড়লাম। সবাই সবার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে মেলা থেকে বের হচ্ছে। আমার কী কোনো দিনও কোনো ভালোবাসার মানুষ হবে না যে আমাকে একটুখানি হলেও ভালোবাসবে। আমি তাকিয়ে সবাইকে দেখছি কেউ প্রাণ খুলে হাসছে তো কারো ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি। ডিকি থেকে নেমে গাড়ির ভিতরে বসে পড়লাম। গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখে বর করলো। কালকে রাতে তো ঠিক করে ঘুমুতেই পারি না। ফুফির দেওয়া জিনিসগুলো দেখতে দেখতেই অর্ধেক রাত পার হয়ে যায়।
১৮
অহি, বন্যা, সাফাত আর নোমান এসে দেখে কণা গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। যা দেখে চার জনেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
আমাদের চিন্তায় ফেলে এই মেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। ঐদিকে আমরা চারজন হন্যে হয়ে তাকে সারা মেলা খুঁজে বেরাচ্ছি।
ওকে কিছু বলো না হয়তো ক্লান্ত ছিল তাই চলে এসেছে। দেখছো না এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে আর ডাকার দরকার নেই।
ও আমার বোন হলেও মনে হচ্ছে আপনার দরদ বেশি।
অবিয়েসলি আমি কণাকে তোমার থেকে বেশি ভালোবাসি।
মার থেকে মাসির দরদ বেশি। ( মুখ বাকিয়ে কথাটা বলে অহি)
কণার ক্ষেত্রে কিন্তু মাসির দরদটাই বেশি। কণার মা ওকে সহ্য করতে পারে না আর তোমার মা ওকে কতো ভালোবাসে। এখন তোমার সাথে ঝগড়া করার মুড নাই। সবাই গাড়িতে ওঠো।
_______________
অহির ডাকে আমার ঘুম ভাঙে। পিটপিট করে চোখ খুলি। চার চারটা মুখ আমার দিকে ঝুকে আছে দেখে হকচকিয়ে যায়। আমি আমতা আমতা করে বলি,
কী ব্যাপার তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
সত্যি করে বলতো কালকে রাতে তুই ঘুমিয়েছিল?
মানে??
আমার জানা মতে তোর ঘুম খুব পাতলা। একটু হালকা শব্দ হতেই তোর ঘুম ভেঙে যায়। আর আজকে আমরা চারজন সেই কখন থেকে তোকে ডেকে চলেছি। কিন্তু তোর কোনো পাত্তাই নেই।
ওহ। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম তোমরা থাকো। বাই এবরিবডি।
আমি চলে আসতে নিলেই বন্যা আমার হাত ধরে টেনে আবার সিটে বসিয়ে দেয়।
কী ব্যাপার বলতো? তোর ব্যবহার আজকে আমার গন্ডগোলে লাগছে। মেলায় যাওয়ার জন্য তুই সব থেকে বেশি এক্সসাইটেড ছিলি। আর তুই মেলা থেকে হুট করে চলে এলি।
তোর সব প্রশ্নের উত্তর কালকে ভার্সিটিতে দিবো। আমার এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম।
কথাটা বলেই দৌড়ে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়লাম। দরজা খোলাই ছিল তাই ঢুকতে অসুবিধা হয়নি। এক দৌড়ে রুমে চলে এলাম। ঘুমের জন্য চোখ দুটো জ্বালা করছে। চোখ মুখে পানি দেওয়ার দরকার। হাতের জিনিসগুলো রেখে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। একেবারে ফ্রেশ হয়ে চেইন্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। চুড়ির প্যাকেটটা নিয়ে বিছানার ওপর বসলাম। বিছানার ওপর বসতেই আমার নজর যায় বেড সাইড টৈবিলের ওপর।
যেখানে একটা রেপিং পেপারে মোড়ানো বক্স। আমি কৌতূহল বশত বক্সটা হাতে নেই। বক্সটার ওপর বড় বড় অক্ষরে আমার নাম লেখা। বুঝতে পারলাম এই গিফটটা আমার জন্যই কেউ রেখে গেছে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে আমাকে গিফট কে পাঠাবে। ভাবনা চিন্তা দুরে ঠেলে দিয়ে গিফট বক্সটা খুলতে শুরু করলাম। গিফট বক্স খুলতেই বেরিয়ে এলো একটা লাল শাড়ি তার সাথে লাল কাঁচের চুড়ি, একটা শিউলি ফুলের মালা, এক পাতা টিপ, লাল লিপস্টিক আর কাজল। এগুলো দেখে আমার চোখ চড়ক গাছ। এই গিফটগুলো আমাকে কে দিতে পারে। শাড়ির ভাজে একটা চিঠি পেলাম। চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম।
প্রিয় ধুলিকণা,
তুমি এতো মন খারাপ করে থাকো কেনো? কে বললো তোমার প্রিয় মানুষ নেই? তোমাকে একটুখানি না পাগলের মতো ভালোবাসার মানুষ আছে। তোমাকে মন খারাপ করে মানায় না। তোমাকে রাগী ফেইসেই মানাই। আমি তো চাই তোমার রাগের দহনে পুড়তে। এতদিন তোমার ভালোবাসার দহনে পুড়েছি এখন না হয় তোমার রাগের দহনেই পুড়লাম।
ইতি
তোমার ভালোবাসা
ওহ গড কে এই পাগল? আমি তাকে চিনিই না আর সে আমাকে নিজের ভালোবাসা বলে দাবি করছে। কিন্তু ছেলেটার পছন্দ আছে বলতে হবে। সবগুলা জিনিসই দারুন হয়ছে।
___________
বিকেলবেলা রুম থেকে বের হতেই আম্মুর সামনে পড়ে যাই। আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে ফুফিকে দেখে ভয়ে চুপসে যায়। শুধু আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। যার অর্থ যত উড়ার উড়ে নে। তোর ফুফি তো আর এখানে সারাজীবন থাকবে না। একবার তোর ফুফি যাক দেখ পড়ে তোর কী হাল করি? আমি আম্মুর দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ছাদে চলে যাই।
১৯
আমার আর তর সইছে না। কখন তোর প্রেয়সীর সাথে দেখা করাবি?
খুব তাড়াতাড়ি। তার আগে আমার কিছু মানুষের সাথে হিসাব চুকানো বাকি আছে। যাদের জন্য আমার প্রেয়সী প্রতি নিয়ত কষ্ট পেয়েছে তাদেরকে এর দাম দিতেই হবে। আমার প্রেয়সীর প্রত্যেকটা অশ্রুর ফোটা মুল্য তাদেরকে দিতে হবে।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া