হঠাৎ 'দেড় ব্যাটারি ' নাম শুনে চমকে যায়। কারণ এই নামে ভাইয়া আমাকে ভার্সিটিতে ডাকে। ভাইয়া আমাকে ভার্সিটিতে যতবার ডেকেছে ততবারই শাস্তি দেওয়ার জন্য। শরীরের তাপমাত্রা আবার বেড়ে গেছে তাই অহি মেডিসিন আনতে গেছে আর আমাকে বলেছে সোজা ক্লাসে চলে যেতে। এখন ভাইয়ার ডাকে যদি না যাই পরে আরো ভয়ঙ্কর শাস্তি দিবে।
আমি এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না? ভাইয়ার কাছে যাবো নাকি ক্লাসে চলে যাবো। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। ভাইয়া আর ছোঁয়া এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই আমাকে অপমান করার জন্যই ডাকছে।
কী হলো দেড় ব্যাটারি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেছে নাকি? ( চেঁচিয়ে)
ইতি মধ্যে ক্যাম্পাসে হাসির রোল পড়ে গেছে। আমি আস্তে আস্তে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়ার সামনে দাঁড়াতেই ভাইয়ার বন্ধুরা এসে ভাইয়ার পাশে দাঁড়ায়। আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসের কিছু স্টুডেন্ট। সবাই এসেছে মূলত মজা দেখতে।
মিস দেড় ব্যাটারি দিন দিন আপনার সাহস তো বেড়ে যাচ্ছে। আমার গার্লফ্রেন্ডকে অপমান করছেন।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে যাব তার আগে ভাইয়া এক হাত তুলে থামিয়ে দেয়।
তুমি এখন বলবে তুমি ছোঁয়াকে অপমান করো নাই তাই না?
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই।
তোমার এসব লেইম এক্সকিউজ আমি বিশ্বাস করবো তুমি ভাবলে কী করে? ( রেগে )
ভাইয়া বড় বড় শ্বাস নিয়ে একটু শান্ত হয়ে বলে,
তো মিস দেড় ব্যাটারি আপনাকে কী শাস্তি দেওয়া যায়?
মুখে হাত দিয়ে ভাবার অভিনয় করে কথাটা বলল ভাইয়া। ভাইয়ার এমন ভাবার ভঙ্গী দেখে আমার আত্না কেঁপে ওঠে। সকালের স্বপ্নটা যদি সত্যি হয়ে যায় এটা ভেবেই আমার গলা শুকিয়ে আসছে। ভাইয়া কি সত্যি সত্যি আমাকে পুকুরে ফেলে দিবে।
হুম পেয়েছি। তুমি কান ধরে এক পা তুলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি যতক্ষণ না বলবো ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।
আমি যে অপরাধ করি নাই। সেই অপরাধের জন্য শাস্তি কেনো গ্রহণ করবো। আপনি ভার্সিটির সিনিয়র বলে আপনার সব অন্যায় আবধার সবাই মেনে নিবে সেটা আশা করবেন না।
আভিয়ান দেড় ব্যাটারির সাহস বেড়ে গেছে।
আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধু রনি ভাইয়া কথাটা বললো।
তাই তো দেখছি।
ভাইয়া কথাটা বলে আমার দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসে। আমি ভয় পেয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যাই। ভাইয়া আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে আমি ভয় পেয়ে মাথা কিছুটা পিছনে হেলিয়ে দেই। ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,
তোর নাগরের দেওয়া সেই সো পিছ টা কিন্তু আমার কাছে। যদি আমি ভেঙে ফেলি তখন কেমন হবে? তুই তো জানিস আমার জিনিস ভাঙতে প্রচুর ভালো লাগে।
প্লিজ ভাইয়া তুমি ওটা ভেঙো না। ( মিনতির সুরে)
তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে তো ভাঙতে হবেই।
না না না আমি তোমার সব কথা শুনবো।
গুড।
ভাইয়া আমার থেকে একটু দুরে সরে দাঁড়ায়। হালকা কাশি দিয়ে বলে,
নাউ স্টার্ট।
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে কান ধরি এক পা তুলে দাঁড়াই। সবাই হাসাহাসি করছে আমাকে নিয়ে। কেউ কেউ চিৎকার দিচ্ছে। আবার কেউ সিটি বাজাচ্ছে। আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে লজ্জায় অপমানে। মাথা ঘুরছে চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি পড়ে যেতে নিবো তখনি আমাকে কেউ পিছন থেকে ধরে ফেলে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাই। পরিচিত মুখ দেখে খুশিতে আমার চোখ ছলছল করে ওঠে।
সাফাত ভাইয়া।
সাফাত ভাইয়া আমার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখা স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলে,
এখানে কোনো সার্কাস হচ্ছে যে তোমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছো। যে যার ক্লাসে যাও। ( রেগে + চিৎকার করে )
সাফাত ভাইয়ের ধমক দেওয়ার সাথে সাথেই ক্যাম্পাস খালি হয়ে যায়। শুধু থেকে যায় ছোঁয়া, আভিয়ান ভাইয়া আর তার বন্ধুরা। সাফাত ভাইয়া এবার আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,
তোদের কী আলাদা করে নিমন্ত্রণ করে যেতে বলতে হবে? ( ধমকে)
সাফাত ভাইয়ার ধমক দেওয়ার সাথে সাথেই আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুরা চলে যায়। কারণ সবাই সাফাত ভাইয়ার রাগকে ভয় পায়। সাফাত ভাইয়া এবার ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
তুই কণার অভিভাবকও না আর না এই ভার্সিটির টিচার। তাহলে তুই কণাকে শাস্তি দিছ কোন অধিকারে?
( সাফাত ভাইয়া আভিয়ান ভাইয়ার ফ্রেন্ড। কিন্তু উনি ভাইয়ার মতোন না। অহির মতন উনিও সব সময় আমায় আগলে রাখেন। আমাকে নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসে।)
দেখ সাফাত এটা আমাদের ফেমিলি মেটার। আমি চাই না বাইরের লোক এর ভিতর নাক গলাক।
তোদের ফেমিলি মেটার যদি পাবলিকলি আলোচনা করিস তাহলে নাক তো গলাতেই হবে। আর তুই তো কণাকে নিজের ফেমিলির কেউ বলে মানিস না। তাহলে তো কণাও বাইরের লোক।
কণাকে কিছু বললে তোর এতো জ্বলে কেন?
আরে বেবি তুমি বুঝো না উনার সাথে কণার লুতুফুতু সাইজের সম্পর্ক আছে।
এই মেয়ে তুমি আমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলবা। আমি তোমার জুনিয়র বা ইয়ার দোস্ত না।
আরে সাফাত ভাইয়া আপনি কাকে কী বলছেন এই মেয়েগুলো ভদ্রতা বলতে কিছু জানে। যত্তসব ফালতু মেয়ে।
অহি তুই ছোঁয়াকে এভাবে বলতে পারিস না। ছোঁয়া তোর হবু ভাবি।
কীসের ভাবি? আমি তো তোমাকেই নিজের ভাই বলে মানি না। তাহলে ছোঁয়া আমার ভাবি.....
আমার চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে এলো। মুহুর্তেই অঙ্গান হয়ে ঢলে পড়ি সাফাত ভাইয়ার ওপর।
৫
যখন ঙ্গান ফিরে তখন নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। বাম হাত টান দিতেই হাতে ব্যথা অনুভব করি। বাম হাতে স্যালাইনের ক্যানেল লাগানো। তখনি কেবিনের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে অহি আরেকজন মধ্য বয়স্ক লোক। সম্ভবত লোকটি ডক্টর।
ডক্টর আংকেল স্যালাইন শেষ হতে কতক্ষণ লাগবে?
৩০ মিনিট।
ওহ।
হুম। আমি এখন আসছি ৩০ মিনিট পর এসে স্যালাইন খুলে দিয়ে যাবো।
ওকে ডক্টর আংকেল।
ডক্টর আংকেল চলে যায়। অহি আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
অহি আমি এখানে কী করে আসলাম?
আমাদের কথার মাঝেই তুই হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে যাস। সাফাত ভাইয়া তোকে হসপিটালে নিয়ে আসে। ডক্টর তোকে দেখে বলে, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করার ফলে তোর শরীর দুর্বল হয়ে গেছে তাই তুই সেন্সলেস হয়ে গেছিস।
সাফাত ভাইয়া কই?
উনার ইম্পর্টেন্ট কল এসেছিল তাই উনি চলে গেছেন।
ওহ। এখন কয়টা বাজে?
৪ টা।
আমি এতক্ষণ অঙ্গান ছিলাম?
না ডক্টর তোকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছিলেন।
আম্মু তো বলেছিলো আজকে ছোঁয়া আমাদের বাসায় যাবে। ছোঁয়ার জন্য তো রান্না করতে হবে। ছোঁয়া তো কাজের লোকদের হাতের রান্না খায় না। আম্মু তো আমার ওপর রাগ করবে।
এই চুপ করতো এই রকম মহিলাকে আবার কেউ মা ডাকে। যত্তসব।
অহি প্লিজ উনার সম্পর্কে এভাবে বলিস না। মা তো মাই হয়।
৬
হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছি রিকসার জন্য। একটা খালি রিকশা দেখে অহি দাঁড় করায়। আমরা দুজনই রিকসায় উঠে পড়লাম। এই হসপিটাল থেকে আমাদের বাসায় যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট।
২০ মিনিট পর রিকসা থামে আমাদের বাসার সামনে। আমরা রিকসা থেকে নামি। অহি ভাড়া মিটিয়ে দেয়। কলিংবেল বাজাতেই মিতু এসে দরজা খুলে দেয়। বাসার ভিতরে প্রবেশ করতেই অহির গালে কেউ ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
২০ মিনিট পর রিকসা থামে আমাদের বাসার সামনে। আমরা রিকসা থেকে নামি। অহি ভাড়া মিটিয়ে দেয়। কলিংবেল বাজাতেই মিতু এসে দরজা খুলে দেয়। বাসার ভিতরে প্রবেশ করতেই অহির গালে কেউ ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আমি এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিলাম থাপ্পড়ের শব্দ পেয়ে মাথা উপরে তুললাম।
অহি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর অহির সামনে দাঁড়িয়ে আছে বড় আব্বু। ড্রয়িংরুমে জুড়ে এখন নিস্তব্ধতা কেউ কল্পনাও করেনি বড় আব্বু অহিকে থাপ্পড় দিবে। আমি তো ভেবেছিলাম থাপ্পড়টা আমার গালে পড়বে।
আব্বু তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে।
অহি বড় আব্বুর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
হ্যাঁ মারলাম। তুমি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো। বড়দের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা ভুলে যাচ্ছো? তুমি ভার্সিটি ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে বলছো আভিয়ানকে তুমি নিজের ভাই বলে মানো না। ছোঁয়াকে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করেছো। দেখো ছোঁয়া অপমানে কীভাবে কাঁদছে?
ছোঁয়া সোফায় বসে ন্যাকা কান্না কেঁদে যাচ্ছে। কিন্তু ভাইয়া এখানে নেই।
আব্বু তুমি একটা বাইরের মেয়ের কথা বিশ্বাস করে আমাকে মারলে। ছোঁয়াকে তো আমি তেমন কিছুই বলি নাই। ছোঁয়া আর তোমার গুনধর ছেলে মিলে ভার্সিটির সবার সামনে দাঁড়িয়ে কণাকে কানে ধরিয়ে এক পা তুলে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। এর প্রতিবাদ করেছি বলে আমি অভদ্র হয়ে গেছি। তোমরা অসহায় একটা মেয়ের প্রতি যে অন্যায়গুলো করছো তার জন্য তোমাদের পস্তাতে হবে।
অহি কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। বড় মা বড় আব্বুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
এতো বড় মেয়ের গায়ে তুমি হাত তুললে। তুমি জানো না সন্তানরা বড় হলে তাদের গায়ে হাত তুলতে নেই।
হাত তুলবো না তো কী করবো? দেখলে আমার সাথে কেমন করে কথা বলে গেলো।
সব হয়েছে এই মেয়েটার জন্য। আজকে তোর জন্য ভাইজান অহির গালে হাত তুললো।
আম্মু আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল।
মহুয়া ( আমার আম্মু )তুই সব সময় সব কিছুতেই কণার দোষ খুঁজে পাস। নিজের ভাইয়ের মেয়ের দোষটাও দেখিস। ভার্সিটিতে কী হয়েছে না হয়েছে তা বাড়ি পর্যন্ত টেনে আনতে হলো কেনো ছোঁয়া। আভিয়ান ভার্সিটিতে কণাকে কত কিছু বলে। কণা তো বাড়িতে কাউকে বলে না। আমি আমার মেয়েকে চিনি অহি আর যাই হোক ছোঁয়াকে এভাবে অপমান করেনি।
আপা তুমি কী বলতে চাইছো? ছোঁয়া আমাদের মিথ্যা বলছে।
৭
আমি আর এখানে দাঁড়ালাম না । অহির পিছু পিছু চলে এলাম। অহি বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছে। আমি মাথায় হাত রাখতেই অহি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
কণা এটা কী সত্যিই আমার আব্বু ছিল। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তোর মনে আছে হামিম স্যারের কথা। আমাকে বাসায় প্রাইভেট পড়াতেন। উনি আমার সাথে জোড় গলায় কথা বলেছিলেন বলে আব্বু উনাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আজকে সেই আব্বু বাইরের একটা মেয়ের কথা বিশ্বাস করে আমাকে থাপ্পড় মারলো।
অহি প্লিজ শান্ত হ। তুই কেনো আমার হয়ে প্রতিবাদ করিস। আমার হয়ে প্রতিবাদ না করলে তো বড় আব্বু তোকে মারতো না।
তুই প্রতিবাদ করিস না বলেই তো আমাকে করতে হয়। সবাই তোকে এত কিছু বলে এতো অত্যাচার করে কেনো তুই সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে নিস। যেই মানুষগুলো তোকে প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিকভাবে অত্যাচার করে তুই তাদেরই ভালো চাস। কেউ তোকে থাপ্পড় মারলে তুই তাকে থাপ্পড় না মেরে উল্টো জিঙ্গেস করিস সে হাতে ব্যথা পেয়েছে কী না? তুই এতো ভালো কেনো?
তুই এতো খারাপ তাই আমি ভালো। ( কিছুটা মজার সুরে। )
উফ কণা সব সময় ফাইজলামু ভালো লাগে না আর সব বিষয় মজা করে উড়িয়ে দিলে চলবে না। নিজের লাইফটা নিয়ে এবার একটু সিরিয়াস হও। এতো ভালো হয়ে তুই এই কঠিন দুনিয়াই ঠিকতে পারবি না। কেউ অপমান করলে মুখ বুজে সহ্য না করে তার করা অপামানের যোগ্য জবাব দিতে শিখ।
যে আমাকে সবচেয়ে বেশি অপমান করে সে আমার মা। সত্যি বলতে আমার জন্যই তো আম্মু সব কিছু হারিয়েছে। আমার জন্যই তো আব্বু আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
তোর কি সত্যিই মনে হয় ছোট আব্বু তোর জন্য আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে?
জানি না।
_________________
ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আকাশে থালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে। চাঁদকে ঘিরে মিটিমিটি জ্বলছে অসংখ্য তারা। এতো এতো তারার ভীরে চাঁদ যেনো বড্ড একা। আমার মতোই একা। পৃথিবীর এতো এতো মানুষের মাঝে আমি একা। আমার আপন একান্তই নিজের বলতে কেউ নেই। এতক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আজকে একটুও ভয় করছে না। ছাদ জুড়ে নিস্তব্ধতা। আজকে এই নিস্তব্ধতা অনেক আপন লাগছে। হঠাৎ মনে হলো আমার পাশে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। আমার পাশে ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়ার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আবার আকাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
আজকে সবকিছু তোর জন্য হয়েছি।
আমি উনার কথার কোনো জবাব দিলাম না। উনার সাথে একদম কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। উনার সাথে কথা বলা বা উনাকে দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা ও নেই।
তোর জন্য অহি আমার সাথে এভাবে কথা বলছে। যেই মেয়ে আমি বলতে অঙ্গান ছিল সেই মেয়ে বলে আমাকে সে ভাই বলে মানে না। আব্বু আজকে ওকে থাপ্পড় মেরেছে। আব্বু কখনো অহির সাথে কড়া গলায় কথা বলেনি আর আজকে ওকে থাপ্পড় মেরেছে। আমার ছোট বোনটা কত কষ্ট পেয়েছে। আমি তোকে কখনো ক্ষমা করবো না।
আমি এবার ভাইয়ার দিকে ফিরে তাকাই।
সব সময় সবকিছুর জন্য আমাকে ব্লেইম করা বন্ধ করো। তোমরা কী ভাবো সব সময় তোমাদের সব অন্যায় আমি মুখ বুজে মেনে নিবো? অন্যের করা অন্যায়ের শাস্তি আমি কেনো পাবো। আজকে অহি আমার জন্য থাপ্পড় খায়নি খেয়েছে তোমার ন্যাকো থার্ড ক্লাস গার্লফ্রেন্ডের জন্য। ছোঁয়া বড় আব্বুকে অহির নামে মিথ্যা বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। এই থাপ্পড়টা অহির গালে না পড়ে তোমার গালে পড়া উচিত ছিল। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইলে তো আমাকে ক্ষমা করার সুযোগ পাবে। তোমার মত লোকের কাছ থেকে ক্ষমার
চাওয়ার জন্য তো আমি বসে আছি।
কথাগুলো বলে এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। বুকে হাত বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আমি ভাইয়াকে এতগুলো কথা শুনিয়েছি।
_____________
এদিকে আভিয়ান নিজের চোখ আর কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যে মেয়ে তার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস পায় না। সেই মেয়ে তাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেলো।
৮
--"বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হ্নদয়
কতটা তোমায় ভালবাসি...
চলতে গিয়ে মনে হয়
দুরত্ব কিছু নয়
তোমারি কাছেই ফিরে আসি
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের
আনাচে কানাচে....
সত্যি বলোনা কেউ কি প্রেম হিনা
কখনো বাঁচে.....
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের
আনাচে কানাচে....
সত্যি বলোনা কেউ কি প্রেম হিনা
কখনো বাঁচে.....
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হ্নদয়
কতটা তোমায় ভালবাসি
--"মেঘের খামে আজ তোমার নামে
উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম
পড়ে নিয়ো,তুমি মিলিয়ে নিয়ো
খুব যতনে তা লিখে ছিলাম..
মেঘের খামে আজ তোমার নামে
উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম
পড়ে নিয়ো,তুমি মিলিয়ে নিয়ো
খুব যতনে তা লিখে ছিলাম..
ও-চায় পেতে আরো মন
পেয়েও এতো কাছে...
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হ্নদয়
কতটা তোমায় ভালবাসি.."
--"মন অল্পতে-প্রিয় গল্পতে
কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে...
ভুল ত্রুটি আবেগী খুনসুটি
সারাক্ষন তোমায় ছুঁয়ে রাখে
মন অল্পতে-প্রিয় গল্পতে
কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে...
ভুল ত্রুটি আবেগী খুনসুটি
সারাক্ষন তোমায় ছুঁয়ে রাখে
ও-চায় পেতে আরো মন
পেয়েও এতো কাছে...
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হ্নদয়
কতটা তোমায় ভালবাসি"
বেলকনিতে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে গান গাইছে এক ছেলে। গানটা হয়তো তার প্রেয়সীর জন্য গাওয়া। ছেলেটি যখন গান গাইতে ব্যস্ত তখনি বেলকনিতে প্রবেশ করে ৪৫-৪৬ বছরের বয়সের মহিলা। মহিলাটি চেহেরায় বয়সের কোনো ছাপ নেই। হুট করে কেউ দেখে বলতে পারবে না এই মহিলাটির এত বড় একটা ছেলে আছে। ছেলেটি মহিলাটির উপস্থিতি বুঝতে পেরে গান গাওয়া অফ করে দেয়।
আজকে তো আমি কোনো শব্দ করি নাই। তাহলে তুই বুঝলি কী করে আমি এসেছি?
ছেলেটা তার মায়ের কাছ কফিটা নেয়। তার মাকে টেনে তার পাশে বসিয়ে দেয়। তার মায়ের কাধে মাথা রেখে বলে,
তোমার শব্দ করতে হবে না আমি তোমায় উপস্থিতি অনুভব করতে পারি। তোমার শরীর থেকে একটা মা মা গন্ধ আসে। এই গন্ধটাই তোমার উপস্থিতি আমাকে জানান দেয়।
আমার পিচ্চি ছেলেটি কী কারো প্রেমে পড়েছে নাকি?
প্রেমে তো আমি অনেক আগেই পড়েছি। তার মায়বী মুখের মিষ্টি হাসিতে। শুধু তাকে বলতে পারি নাই। মা জানো ও সবার থেকে আলাদা। আর চার পাঁচটা মেয়ের মতো ও না।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া