প্রেমে তো আমি অনেক আগেই পড়েছি। তার মায়বী মুখের মিষ্টি হাসিতে। শুধু তাকে বলতে পারি নাই। মা জানো ও সবার থেকে আলাদা। আর চার পাঁচটা মেয়ের মতো ও না। ওর মনের ভিতর কোনো জটিলতা বা প্যাচ নেই। ও একদম বাচ্চাদের মতো। আমার বাচ্চা প্রেয়সী। তার হাসির ধ্বনি এখনো আমার কানে বাজে।
ছেলের কথা শুনে মহিলাটি মুচকি হাসে। অবেশেষে তার বদরাগী ছেলে কারো প্রেমে পড়লো।
আমার সাথে কবে তোর প্রেয়সীর দেখা করাবি?
আগে বিডিতে ফিরি।
তোর সাথে তো তার দেখা হয় না অনেকদিন। এতোদিনে যদি তোর প্রেয়সী অন্য কারো হয়ে যায়।
আমি জানি সে আমারই আছে। অন্য কারো হয়ে গেলে আবার আমার করে নিবো। তুমি তো জানো যে জিনিসটা আমার পছন্দের সেই জিনিসটার দিকে কাউকে চোখ তুলেও তাকাতে দেই না। আর ও তো আমার কলিজা।
যে ওর দিকে চোখ তুলে তাকাবে তাকে আমি জানে শেষ করে দিবো। ( চোখ মুখ শক্ত করে)
৯
ফ্রেশ বিছানার ওপর বসে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোন হাতে নিয়ে আমি অবাক। ৭৫ মিসডকল সবগুলোই বন্যার। এতোগুলো কল দিলো আর আমি দেখলামই না। এখন কল দিলে শুরু করে দিবে বাংলা বেতার। আর এখন কল না দিলে কালকে ভার্সিটি গেলে আমার আবস্থা খারাপ করে দিবে। 'অভাগা যেদিকে যায় নদী সেদিকেই শুকিয়ে যায়' আমার অবস্থাও সেইম। ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। এই মাইয়া নিশ্চয়ই আমার ওপর রাগ করে ফোন বন্ধ করে দিয়েছে।
( আমি, অহি আর বন্যা তিনজন বেস্টফ্রেন্ড।আমরা তিনজন ক্লাস ওয়ান থেকেই একসাথে পড়াশোনা করছি। তিনজন এক ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য রাত দিন পড়াশোনা করছি। অহি আমার জেঠাতো বোন।)
এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
_______________
ঘুমের মাঝে অনুভব করছি কেউ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সে আরো জুড়ে চেপে ধরে আমাকে। আমি এবার পিট পিট করে চোখ খুলে তাকাই। হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালাই। আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে অহি শুয়ে আছে। আমি নড়াচড়া শুরু করে দেই।
কণা প্লিজ নড়াচড়া করিস। একটু ঘুমুতে দে।
ঐ মাইয়া আমারে কী তোর কোলবালিশ পায়ছিস? আমার সাথে এমন চিমক্যা শুয়ে আছিস কেনো? আর তুই এতো রাতে আমার রুমে কী করছিস?
আমার রুমে ঘুম আসছিলো তাই তোর রুমে আসছি।
আসছিস ভালো করছিস। কিন্তু আমার সাথে এমন চিপক্যা আছিস কেনো?
মন চাইছিলো তোরে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই। তাই তোকে জড়িয়ে ধরলাম। ইউ নো না সব সময় মন যা চায় তাই করতে হয়।
উফ অহি তুই তো জানিস আমার সাথে যদি কেউ ঘুমায় তাহলেই আমার ঘুম আসে না। আর তুই তো আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছিস তাহলে আমি ঘুমুবো কী করে?
তুই এমন কেনো? আমার সাথে ১০০ জন থাকলেও আমার দিব্যি ঘুম চলে আসে।
মানুষ অভ্যাসের দাস। যেটা একবার অভ্যাস হয়ে যায় তা পরিবর্তন করতে অনেক সময় লাগে। সেই কোন ছোটবেলা থেকে একলা একটা রুমে থাকি। এতো বছরে কারো সাথে কোনো দিন থাকিনি। তাই কারো সাথে থাকার অভ্যাস নেই। ঘুমের মাঝে খারাপ স্বপ্ন দেখলে বালিশ জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতাম।
আমার চোখে পানি টলমল করছে। অহি বুঝতে পারছে কণা এখনি কেঁদে দিবে। তাই কণাকে হাসানোর জন্য বলে,
আমি তো শুধু জড়িয়ে ধরেছি তাতেই তোর ঘুম আসছে না। বিয়ের পর দেখা যাবে জামাইয়ের সাথে এক বালিশে ঘুমুতেও অসুবিধা হবে না। তখন তো ঠিকই জামাইয়ের বুকের ভিতর হান্দায়া পড়বি।
অহির কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছি। লজ্জায় কান গরম হয়ে গেছে। এই মেয়ে এতো লাগাম ছাড়া কথা কীভাবে বলে? এই মেয়ে এখন যদি না ঘুমায় তাহলে আমাকে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে হবে। আমি অহির মুখে হাত দিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। তারপর ওকে জুড় করে শুইয়ে দিলাম।
১০
ব্রেকফাস্ট করছি। আমরা বাম পাশে অহি ডান পাশে ছোঁয়া। আমার সামনা সামনি বসে আছে ভাইয়া। উনার পাশে বড় আব্বু। সবাই চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করছি। বড় আব্বুর কড়া নির্দেশ খাওয়ার সময় নো সাউন্ড। সবাই এই নির্দেশ অক্ষরে আক্ষরে পালন করে। আমাদের বাসার কিছু রুলস আছে। রুলসগুলো অবশ্য বড় আব্বু তৈরি করা।
১। খাওয়ার সময় কোনো রকম কথা বার্তা হবে না। একে বারে পিন ড্রপ সাইলেন্ট।
২। সবাইকে সকাল ৮:৩০ এর আগে ডাইনিং টৈবিলে থাকতে হবে।
৩। রাত ৯ টায় ডিনার।
৪। ছেলে হোক বা মেয়ে সবাইকে রাত ৮ টার আগে বাসায় থাকতে হবে।
এই বাসার সবাই এই নিয়ম মেনে চলে। আমরাও এই নিয়ম মেনে বড় হয়েছি। এতো বছরের নিয়ম ভেঙে দিল ছোঁয়া।
বলছিলাম কি আভিয়া.......
ছোঁয়া কথাটা আর শেষ করতে পারলো না তার আগেই বড় আব্বুর চোখ রাঙানো দেখে ভয়ে চুপসে যায়।ছোঁয়া আর কথা বলার সাহস পায় না। খাওয়া শেষে বড় আব্বু ছোঁয়ার উদ্দেশ্যে বলে,
আমাদের বাসায় খাওয়ার সময় কেউ কথা বলে না। তুমি গেস্ট বলে তোমাকে কিছু বললাম না। নেক্সট টাইম যেনো এমন ভুল না হয়। আর মহুয়া তুমি তোমার ভাইয়ের মেয়েকে আমাদের বাসার নিয়মগুলো জানিয়ে দিবে। আমাদের বাসার নিয়ম মানতে না পারলে আমাদের বাসায় আসার দরকার নাই। ( গম্ভীর কন্ঠে )
ছোঁয়ার অবস্থা ফাটা বেলুনের মতো হয়ে গেছে। আমারতো সেই লেভেলের হাসি পাচ্ছে। কোনো রকমে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে হাসি আটকালাম। কারণ আমি যদি এখন হাসি তাহলে আমার অবস্থাও সেইম হবে। কথাগুলো বলে বড় আব্বু হনহন করে চলে যায়। বড় আব্বু চলে যেতেই অহি দম ফাটা হাসিতে ফেটে পড়ে।
অতি বাড় বেড়ো না ঝরে পড়ে যাবে।
কথাটা বলতে বলতে অহি চলে গেলো। আমিও চলে যেতে নিবো তখনি আম্মু আমাকে পিছন থেকে ডাক দেয়।
এই মেয়ে তুই কোথায় যাচ্ছিস?
ভার্সিটি।
দুপুরের রান্নাগুলো কে করবে?
কেনো প্রতিদিন যে করে সে। ( ভাবলেসহীন ভাবে )
তুই জানিস না ছোঁয়া কাজের লোকদের হাতের রান্না খায় না। সকালের ব্রেকফাস্ট আমি আর আপা তৈরি করছি। এখন তুই দুপুরের লাঞ্চ তৈরি করবি। ছোঁয়া আজকে ভার্সিটি যাবে না। আমাদের বাসা থেকে লাঞ্চ করে একেবারে তাদের বাসায় যাবে। তাড়াতাড়ি রান্না করা শুরু করে দে।
কাজের লোকদের হাতের রান্না না খেলে। যে খাবে তাকে রান্না করে খেতে বলো। আমি অন্যদের মতো চিটিং করে পাস করতে পারি না তাই ভার্সিটি যেতে হবে।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে এলাম। কারণ কিছুক্ষণ থাকলে আম্মুর আজে বাজে কথা শুনতে হবে। যার জন্য অহি থাপ্পড় খেয়েছে তার জন্য আমি রান্না করবো। ইমপসিবল। এটা আমার বাসা হলে কোন সময় ওকে গাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম। রেডি হয়ে অহিকে নিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম।
১১
ভার্সিটি এসে আমি আর অহি বন্যাকে খুঁজছি। কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। বন্যাকে খুঁজতে খুঁজতে লাইব্রেরী চলে এলাম। লাইব্রেরীতে এসে আমি আর অহি অবাক।নোমান ভাইয়া কানে ধরে বন্যাকে সরি বলছে। কিন্তু বন্যা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। এটা দেখে আমি আর অহি ফিক করে হেসে দেই। আমাদের হাসির শব্দে দুজনই আমাদের দিকে তাকায়। আমি আর অহি দুজনের কাছে যায়।
কী হয়ছে ভাইয়া?
তোমার বান্ধবী আবার আমার সাথে ঝগড়া করে ব্রেকআপ করছে।
তুমি বলতে চাইছো আমি তোমার সাথে শুধু ঝগড়াই করি। আমি ঝগড়াটে। আমি তো এখন পুরনো হয়ে গেছি। এখন তো আমাকে ভালো লাগবেই না। নতুন কাউকে পেয়ে গেছো। আমার কথাগুলো এখন তোমার কাছে ঝগড়াই মনে হবে।
কথাটা বলেই বন্যা কান্না শুরু করে দেয়।
নোমান ভাইয়া আর দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।
বোইন তুমি তোমার বান্ধবীকে একটু বুঝাও। আমি আর পারছি না। আমার সব কথার শুধু উল্টো মানে বের করছে।
ভাইয়া আপনি যান। আমি বন্যাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসছি।
নোমান ভাইয়া চলে যায়।
কী হয়ছে বন্যা তুই আবার কেনো নোমান ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করছিস?
কালকে আমরা ডেইটে গিয়েছিলাম। তখন ঐ নোমাইন্না স্টাইলিস মিতার সাথে কী সুন্দর করে হেসে হেসে বলেছিল তুই জানিস।
তো কী হয়ছে?
ও আমাকে রেখে অন্য মেয়েদের দিকে কেনো তাকাবে? আর কেনোই বা কথা বলবে?
এর জন্য রাগ করার কী আছে? একজনের সাথে কথা বলতেই পারে।
না পারে না।
আমাদের কথার মাঝেই আমাদের সামনে উপস্থিত হয় আভিয়ান ভাইয়াসহ তার সব বন্ধুরা। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে তাদের সবার হাতেই কোকের বোতল। আর ছোঁয়া আমার দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিচ্ছে।
আমাদের কথার মাঝেই আমাদের সামনে উপস্থিত হয় আভিয়ান ভাইয়াসহ তার সব বন্ধুরা। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে তাদের সবার হাতেই কোকের বোতল। আর ছোঁয়া আমার দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিচ্ছে। উনাদের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আবার আমাদের কথায় মনোযোগ দিলাম। আমি আর অহি শান্ত থাকলেও বন্যা তো শান্ত থাকার মানুষ না।
কী ব্যাপার আপনারা এভাবে সঙের মতো আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?
তাদের সঙ বলাতে ছোঁয়া তেতে ওঠে বলে,
লাইব্রেরী কী তোমার বাপের যে আমরা কোথায় দাঁড়াবো সেটা তুমি ঠিক করে দেবে?
ঐ মাইয়া বাপ তুইলা কথা বলবি না। এমন একটা থাপ্পড় দিবো যে চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম ভুইল্লা যাইবি। তোর মতো ফালতু মেয়ের সাথে কথা বলে আমার মুখ নষ্ট করবো না।
আভি বেবি তোমার সামনে এই মেয়েটা আমাকে অপমান করছে আর তুমি কিছু বলবা না।
এই মেয়ে তুমি আমার সামনে আমার গার্লফ্রেন্ডকে অপমান করছো তোমার সাহস তো কম না।
আপনি কোন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট যে আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আমার পায়ে ধরে সালাম করতে হবে। কণা, অহিরে ভার্সিটিতে এই পিচ্চি ( আভিয়ান ভাইয়াকে দেখিয়ে) বেবি কী করছে এর তো শিশু পার্কে মায়ের কোলে বসে ফিটার খাওয়া উচিত।
এই মেয়ে আমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো আমি তোমার সিনিয়র।
সিনিয়র তো কী হয়ছে? সিনিয়রের মতো বিহেভ করলে ঠিকই ভদ্রভাবে কথা বলতাম।
তোমার সাথে আজাইরা আলাপ করার সময় আমার নেই। ঐ দেড় ব্যাটারি।
আমি কোনো কথা বললাম না। আমি আমার মতোই ফোন নিয়ে গুতা গুতি করতে থাকলাম। এমন একটা ভাব ধরলাম যে এই মুহূর্তে ফোন থেকে চোখ সরালেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ভাইয়া আবার আমাকে ডাক দিলো।
ঐ দেড় ব্যাটারি শুনতে পাচ্ছো না।
তবু আমি কোনো কথা বললাম না। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি কণা বলে যতক্ষণ পর্যন্ত না ডাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সাড়া দিবো না। হঠাৎ ভাইয়া আমার হাত থেকে আমার ফোনটা কেড়ে নিলো। এবার যেনো আমার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে গেলো। আমি এবার রেগে চিৎকার করে বললাম,
কী সমস্যা আপনার? অন্যের পারসোনাল জিনিস নিয়ে টানাটানি করছেন কেনো? একটু আগে আমার বান্ধবীকে ভদ্রতা শিখাচ্ছিলেন। আপনার কী মনে হয় আপনি খুব ভদ্র?
বাহ বাহ একদিনের মাঝে এতো সাহস কই থেকে আসলো। গতকালকেও তো আমার ভয়ে ভয়ে মিও মিও করতে।
কথাটা বলাই আভিয়ান ভাইয়ার পুরো গ্যাং হাসা শুরু করলো। আমিও মনে মনে ভাবছি আমার এতো সাহস। আগে আমি ভাইয়ার সামনে গেলেই ভয়ে কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিতাম আর আজকে উনার চোখে চোখ রেখে চিৎকার করে কথা বলছি। ভাবা যায় আমি এতো সাহসী হয়ে গেলাম। ভাইয়া আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,
কী দেড় ব্যাটারি কই হারিয়ে গেলে?
একদম দেড় ব্যাটারি, দেড় ব্যাটারি করবেন নাহ। আমার নাম দেড় ব্যাটারি না। আমার একটা নাম আছে সেই নামে যদি ডাকতে পারেন তাহলে ডাকবেন নাহলে না।
তোমার নাম দেড় ব্যাটারি হোক বা আধা ব্যাটারি হোক তাতে আমার কিছু আসে যায় না। তোমাকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি তুমি সাড়া দিচ্ছো না কেনো?
আমি কী আপনার বেতন ভুক্ত কর্মচারী যে আপনি ডাকবেন আর আমাকে সাড়া দিতে হবে? যত্তসব।
তোমরা সিনিয়রদের মুখে মুখে তর্ক করছো এর শাস্তি পেতে হবে তোমাদের দুজনকে ( আমাকে আর বন্যাকে দেখিয়ে )
এই কথাটা যেনো আগুনে ঘি ডালার মতো কাজ করলো। বন্যা চেঁচিয়ে বলে,
ঐ মিয়া তুই আমাদের কী শাস্তি দিবি? আমি তোদের এমন জুতা পিটা করবো যে সারাজীবনে ভুলবি না।
তোর সাহস তো কম না তুই আভিয়ানকে জুতা পিঠা করার কথা বলছিস। তুই জানিস আভিয়ান তোর কী অবস্থা করতে পারে? এই ভার্সিটিতে থেকে তোকে বের করে দিতে আভিয়ানের ২ মিনিট সময়ও লাগবে না।
আমি,অহি আর আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুরা নিরব দর্শকের মতো ওদের ঝগড়া দেখছি।
আভিয়ান কেনো তোর বাপও আমাকে এই ভার্সিটি থেকে বের করতে পারবে না। আমি নিজের যোগত্যায় এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ছি। তোর মতো টুইক্কা পাস কইরা এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়নি।
১২
আমি আর অহি বন্যাকে লাইব্রেরী থেকে নিয়ে আসলাম। কারণ একটু আগে প্রিন্সিপাল স্যার বকা দিয়ে গেছে লাইব্রেরীতে গন্ডগোল করার জন্য।
বন্যা মাথা ঠান্ডা কর আর নোমান ভাইয়ার সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নে।
অহি প্যান প্যান করিস না। ঐ চামচিক্কার সাথে একেবারে ব্রেকআপ করে ফেলছি।
তুই ব্রেকআপ করে ফেলছিস বলে কী অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে? এখন তো অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনে চলে যাবে।
ঐ নোমান চামচিক্কা অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাক একবার খুন করে ফেলবো।
কেনো? তুই তো নোমান ভাইয়ার সাথে ব্রেকআপ করে ফেলছিলস।
ব্রেকআপ করছি বলেই অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনে চলে যেতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা কথা বলেছিলেন,
তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে মুক্তি দাও।
যদি সে তোমার হয় তাহলে তোমার কাছেই ফিরে আসবে।
আর যদি ফিরে না আসে সে কখনো তোমার ছিলনা আর কোনদিনো তোমার হবে না।
তুই বলতে চাইছিস নোমানকে নোমানের মতো করে স্বাধীনভাবে চলতে দিবো। কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে বাধা দিবো না।
হুম একদম।
যদি নোমান অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে তার প্রেমে পড়ে যায় তখন?
তাহলে বুঝবি নোমান ভাইয়া কোনোদিন তোকে ভালোবাসিনি। শুধু তোর সাথে টাইমপাস করছে। কিন্তু নোমান ভাইয়াকে দেখে আমার টাইমপাস করার মতো ছেলে মনে হয় না। নোমান ভাইয়ার চোখে তোর জন্য আমি সত্যিকারের ভালোবাসা দেখছি। নোমান ভাইয়ার সাথে কথা বল যা।
আমি একা যাবো না তোরাও আমার সাথে চল।
আচ্ছা চল।
নোমান ভাইয়াকে খুঁজতে খুঁজতে ক্যান্টিনে পেয়ে গেলাম। নোমান ভাইয়া আর উনার দুই বন্ধু একসাথে বসে আছেন। নোমান ভাইয়া গলা ছেড়ে গান গাইছেন।
বোঝে না, বোঝে না
বউ আমার
বোঝে না, বোঝে না....
বোঝে না, বোঝে না
বউ আমার
বোঝে না, বোঝে না....
ভাইয়া আপনি এখনো বিয়েই করলেন আর আপনি বলছেন আপনার বউ আপনাকে বোঝে না। একটু মিস্টেক হয়ে গেলো না। গানটা এরকম হওয়ার দরকার ছিল না।
বোঝে না, বোঝে না
প্রেমিকা আমার
বোঝে না, বোঝে না....
বোঝে না, বোঝে না
প্রেমিকা আমার
বোঝে না, বোঝে না....
একদম ঠিক বলছো শালিকা আমার একটু ভুল হয়ে গেছে।
নোমান ভাইয়া আমার কথায় সাই দেওয়াতে বন্যা রেগে আগুন হয়ে যায়। নোমান ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
ঐ তুই কি বললি আমি তোরে বুঝি না।
শুরু হয়ে গেলো তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ।
১৩
ভার্সিটি শেষে বাসায় গিয়ে দেখি ফুফি আসছে। ফুফিকে দেখেই অহি দৌড়ে গিয়ে ফুফিকে জড়িয়ে ধরে। আমি কিছু না বলে সবার আড়ালে চুপি চুপি আমার রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। রুমের সামনে যেতেই আম্মুর সাথে দেখা। আম্মু আমার থুতনি ধরে বলে,
ইশ কোন সকালে আমার মেয়েটা খেয়ে গিয়েছিল। না খেয়ে মুখটা শুকিয়ে গেছে একেবারে।
আম্মুর এইটুকু কথাই যেনো আমার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো। খুশিতে আমার চোখ ছলছল করে ওঠলো। আজ থেকে হয়তো আমি আমার আম্মুর ভালোবাসা পাবো। আম্মুর পরের কথাটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া