আমি জানি কণা আমি অনেক ভুল করেছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। মানুষ মাত্রই ভুল। কেউ ভুল করলে তাকে শুধরানোর সুযোগ দেওয়া উচিত। আমার ভুল শুধরানোর একটা সুযোগ আমাকে দিবি না কণা?
আমি ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আভিয়ান ভাইয়ার পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে ভাইয়া আমার হাত ধরে ফেলে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে একবার উনার দিকে আরেকবার আমার ধরে থাকা হাতের দিকে তাকাই।
প্লিজ কণা আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি ভুল করেছি আমি মানছি।
আমি এবার উনার চোখের দিকে তাকালাম। উনার চোখে স্পষ্ট অপরাধবোধ কাজ করছে। কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না। উনি আমার সাথে যা করেছেন তার জন্য আমি উনাকে ক্ষমা করতে পারবো না।
ভাইয়া আপনি ভুল করলে আমি অবশ্যই আপনাকে ক্ষমা করে দিতাম। কিন্তু আপনি ভুল না অন্যায় করেছেন। ভুলের জন্য ক্ষমা করা যায় কিন্তু অন্যায়ের জন্য না। আপনি দিনের পর দিন আমাকে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে অত্যাচার করেছেন। আপনি ভার্সিটির সবার সামনে আমাকে অপমান করেছেন। ক্যাম্পাসের সবার সামনে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। আপনার জন্য ভার্সিটিতে নিজের পরিচয় দিতে পারি নাই। প্লিজ আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন নাহ আমি আপনাকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবো না।
৩৫
বেলকনিতে ঐ চিঠি প্রেরকের দেওয়া পাখিটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
মিদু
ধূলিকণা,, ধূলিকণা,, ধূলিকণা।
তুই আমাকে চিনলি কী করে? বুঝলি কী করে যে আমি ধূলিকণা? আমি তো ধূলিকণা না হয়ে অন্য কেউ হতে পারতাম।
ধূলিকণা,, ধূলিকণা,, ধূলিকণা।
তোকে যে এখানে পাঠিয়েছে তাকে তুই চিনিস? সে কে?
আয়না,, আয়না,, আয়না।
নামটা শুনেই আমার বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। চোখের সামনে ভেসে ওঠছে কিছু পুরোনো স্মৃতি। পুরোনো কিছু কথা কানে বাজছে।
আমরা দুজন বিয়া করলে অনেক ভালো হবে।
কেনো?
আমাদের দুজনের একসাথে নিক নেইম হবে আয়না। কী সুন্দর না?
আমি কান চেপে ধরে নিচে বসে পড়লাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কেনো পুরোনো স্মৃতি আমার পিছু ছাড়ে না।
____________
সুর্যের আলো চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ ঢলে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করি। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আমি থ। কালকে রাতে তো আমি বেলকনিতে ছিলাম তাহলে বিছানায় আসলাম কী করে? কে নিয়ে আসলো? আমার তো ঘুমের মাঝে হাঁটার অভ্যাস নাই তাহলে এখানে আসলাম কী করে? আর ভাবতে পারছি না মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে। আজকে শুক্রবার তাই ভার্সিটি যাওয়ার তাড়া নেই। কতক্ষণ চুপ করে বিছানার ওপর বসে থাকি। কিন্তু মাথা ব্যথা কমছে না। রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি তাই মাথা ব্যথা করছে।
বিছানা থেকে নেমে খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি। সাড়ে সাতটা বাজে। ৫ মিনিট আগে ঐ চিঠি প্রেরক একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। হয়তো আমি যখন ওয়াশরুমে ছিলাম তখনি পাঠিয়েছে।
ধূলিকণা
তুমি আর চুল খুলে ঘুমাবা না। তুমি জানো তোমার এলোমেলো খোলা চুল, ঘুম ঘুম চোখ দেখলে আমার ভিতরে ঝড় বয়ে যায়। ইচ্ছে করে তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেই। তোমাকে ছুঁয়ে দিলে কী খুব বেশি অন্যায় হয়ে যাবে? খোলা চুলগুলো নিজের হাতে ঠিক করে দেই। তোমার চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ আছে যেটা আমায় খুব করে তোমার কাছে টানে। ইচ্ছে করে তোমার খুব কাছে চলে যায়। পিছন থেকে তোমায় আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক ডুবিয়ে দেই। তুমি লজ্জা পাচ্ছো। একটু বেশিই লজ্জা পাচ্ছো। থাক আজকে আর বললাম নাহ। কারণ আমি চাই না তোমার লজ্জা রাঙা মুখ আমি ছাড়া অন্য কেউ দেখুক। সেটা দেখার অধিকার শুধুই আমার আর কারো নয়।
ইতি
তোমার অপ্রত্যাশিত কেউ
আচ্ছা আমি কী সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি? আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার গালের লাল আভাই বলে দিচ্ছে আমি লজ্জা পাচ্ছি। উনার কথায় যদি আমি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। উনি এই কাজগুলো করলে আমি কী করবো? আমি এসব কী ভাবছি? লোকটা বলেছে আমার অপ্রত্যাশিত কেউ। তার মানে আমি আশা করি না এমন কেউ। কে হতে পারে? আমাকে জানতেই হবে?
কী করে জানবো? মনে হয়ে না বোম মারলেও উনার পেট থেকে কোনো কথা বের হবে। কী করা যায়? হুম পেয়েছি। আমি উনাকে মেসেজ দিলাম।
আপনি যদি আজকের মাঝে আপনার পরিচয় না দেন তাহলে আপনার নাম্বার ব্লক করে দিব। আপনি যে কাজগুলো পছন্দ করেন নাহ সেই কাজগুলো বেশি বেশি করে করবো। বলেছিলেন নাহ অমি ভাইয়ার থেকে দূরে থাকতে। আপনি পরিচয় না দিলে আমি অমি ভাইয়ার কোলে ওঠে বসে থাকব।
মেসেজটা পাঠিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে চলে গেলাম। কিচেনে গিয়ে একটা স্যান্ডউইস খেয়ে। এক মগ কফি নিয়ে রুমে চলে এলাম। বেলকনিতে গিয়ে মিদুর সাথে কথা বলতে বলতে কফিটা শেষ করলাম। তারপর রুমে এসে ফোনটা চেক করলাম নাহ লোকটা কোনো মেসেজ দেয়নি। ফোনটা সাইলেন্ট করে শুয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য একটা লম্বা ঘুম দেওয়ার।
৩৬
ঘুম ভাঙলো ১২ টা ৫৭ মিনিটে। কোনো মতে বিছানা থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে দৌড় দিলাম লাঞ্চ করার জন্য। ফোন চেক করার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। লাঞ্চ করার সময় অমিত ভাইয়া অনেক ভাবে জ্বালিয়েছে। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারি নাই। জানি কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না। কোনো মতে লাঞ্চ শেষ করে রুমে চলে এলাম। ফোনটা হাতে নিতেই আমার চোখ ছানাবড়া। ৭৬ টা মিসডকল আর অসংখ্য মেসেজ ঐ চিঠি প্রেরকের নাম্বার থেকে।
হেই ইডিয়েট মেয়ে তোমার সাহস কী করে হয়? ঐ ছেলের কোলে ওঠার কথা বলার।
কী হলো মেসেজের আন্সার দেও না কেনো?
হেই স্টুপিড গার্ল ফোন ধরো না কেনো?
একবার তোমাকে সামনে পায় জীবনের মতো অন্য ছেলের কোলে ওঠার সখ গুছিয়ে দেবো।
এরকম অসংখ্য মেসেজ। এতো মেসেজ দেখার সময় নাই।
আপনি কে? আপনার ছবি না দিলে আমি সত্যি সত্যি অমি ভাইয়ার কোলে ওঠে বসে থাকবো।
মেসেজ দিতে দেরি হলেও মেসেজের রিপলাই আসতে দেরি হয়নি। মনে হয় উনি আমার মেসেজ এরই অপেক্ষা করছিলেন।
কী তখন থেকে অমি ভাইয়া অমি ভাইয়া করছো? আরেকবার অমি ভাইয়া ডাকলে থাপড়ায়া তোমার দাঁত ফেলে দিবো।
সামান্য নাম সংক্ষিপ্ত করে বলছি বলে উনি এতো রেগে যাচ্ছেন। আহা কী জেলাসি? উনার জেলাসি দেখে আমি মিটিমিটি হাসছি। উনাকে আরেকটু জেলাস ফিল করানো যাক।
অমি ভাইয়া ডাকি বা অমি জানু ডাকি তাতে আপনার কী?
দেখো ধুলিকণা আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।
আপনি রেগে গেল আমার কী? আমি অপরিচিত মানুষদের রাগকে পাত্তা দেই না। পরিচিত হলে একটা কথা ছিল। আমি অপিরিচদের সাথে কথা বলি না। আর আপনাকে তো কোনোদিন দেখি নাই। তাই আপনার সাথে কথা বলার কোনো প্রশ্নই আসে না। টাটা।
তুমি আমাকে রাগানোর জন্য এসব বলছো তাই না? যাতে আমি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে আমার পরিচয় বলে দেই। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আমি তোমাকে পরিচয় দিবো না। তোমার সাথে সরাসরি দেখা করবো।
উনি এতো সহজে রাজি হয়ে যাবেন আমি সেটা কল্পনাও করি নাই। উনি আমার সাথে দেখা করবেন। উফ খুশিতে আমার নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
উনার মেসেজ দেখে আমার ভ্রু আপনা আপনি কুচকে যায়। উনি আবার কী শর্ত দিবেন?
কী শর্ত?
তোমাকে শাড়ি পড়ে আসতে হবে। আমার দেওয়া শাড়িটা পড়ে আসতে হবে। চুলগুলো খোলে আসবে। আমি তোমার খোলা চুলে শিউলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিবো।
ওকে ডান।
আমি খুশি মনে রেডি হতে লাগলাম। লালা শাড়ি পড়ে হাতে লাল কাঁচের চুড়ি পড়ি। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দেই। চোখে কাজল দেই। এক জোর ইয়ার রিং পড়ে চুলগুলো খোলে দেই। ব্যাস আমি রেডি। আমার কোথাও যেতে কারো পারমিশন লাগে না। আমি নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করি। আমি পার্সটা হাতে নিয়ে যখনি রুম থেকে বের হতে যাবো তখনি অমিত ভাইয়া রুমে প্রবেশ করে দরজা লক করে দেয়।
কী হলো আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেনো?
তুমি বুঝো না একটা রুমে একা একটা মেয়ে থাকলে একটা ছেলে এসে কেনো দরজা বন্ধ করে দেয়।
আপনি আমার রুম থেকে বের হয়ে যান। নাহলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
উনি খপ করে আমার শাড়ির আঁচল ধরে ফেলেন।
যত ইচ্ছা চিৎকার করো। তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না। সবাই লাঞ্চ করে যে যার রুমে রেস্ট নিচ্ছে। আর এ বাড়ির প্রত্যেকটা রুম সাউন্ড প্রুব তুমি তো জানোই।
উনি খপ করে আমার শাড়ির আঁচল ধরে ফেলেন।
যত ইচ্ছা চিৎকার করো। তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না। সবাই লাঞ্চ করে যে যার রুমে রেস্ট নিচ্ছে। আর এ বাড়ির প্রত্যেকটা রুম সাউন্ড প্রুফ তুমি তো জানোই। তাই যত ইচ্ছা চিল্লাও কোনো লাভ নেই।
আমি আমার শাড়ির আঁচল ধরে টানছি। উনি আমার শাড়ির আঁচল হাতে পেচিয়ে পেচিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি উনার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই। আমার হাতে থাপ্পড় খেয়ে যেনো উনি আরো বেশি হিংস্র হয়ে গেলেন।
তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে থাপ্পড় মারলি। এই অমিতের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস কারোর নেই। আর তুই আমার গায়ে দুই দুইবার হাত তুললি। এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে। আজকে তোর তেজ আর রুপের অহংকার আমি চিরতরে গুছিয়ে দিবো। আজকে তোর এমন অবস্থা করবে যে তোর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও সবার আত্না কেঁপে ওঠবে। তুই বেঁচে থাকলি নাকি মরে গেলি তাতে কারো কিছু আসে যায়। তুই মরে গেলেও কেউ এটা নিয়ে বেশি ভাবতে যাবে না। যেখানে নিজের মা ভাববে না সেখানে অন্য কেউ কেনো ভাবতে যাবে।
কথাটা বলে উনি আমার আরেকটু কাছে চলে এলেন।
দেখুন আমার কাছ থেকে দুরে যান। একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন নাহ। আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে আমি আপনাকে জানে মেরে দিবো।
আমি হাতের কাছে একটা ফুলদানি পেলাম। ফুলদানি দিয়ে উনাকে আঘাত করতে যাব তার আগেই উনি আমার হাত মোচড়ে ফুলদানিটা নিচে ফেলে দেন। আজকে মনে মনে খুব করে চাইছি এই চিঠি প্রেরক এসে যেনো সুপারম্যানের মতো আমাকে এই সয়তানের কাছ থেকে বাঁচিয়ে নেয়।
উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেন। আমি ওঠার চেষ্টা করতেই অমিত ভাইয়া আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরেন। আমার চোখে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আজকের পর থেকে এই সমাজের সবার কাছে ঘৃণার পাত্রী হয়ে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। আদোও কী বেঁচে থাকবো? না আমি আর ভাবতে পারছি না।
আমি এভাবে হার মানতে পারি না। নিজেকে এই সয়তানের হাত থেকে বাঁচাতে হবে আমাকে। আমি উনার হাতে একটা কামড় দেই। অমিত ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিতেই আমি দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে উনাকে নিচে ফেলে দেই। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে দরজা খোলার জন্য লক ঘুরাই তখনি অমিত ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
এতো জুড়ে চেপে ধরেছে যে আমি নড়তেও পারছি না। অমিত ভাইয়া হাত দিয়ে ঘষে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক এলোমেলো করে দেয়। অমিত ভাইয়া আমার গলায় কামড় বসিয়ে দেয়। আমার ঠোঁটের সাথে যখনি ঠোঁট মিলাতে যাবেন তার আগেই কেউ উনাকে স্বজুড়ে লাথি মারে। তাকিয়ে দেখি আভিয়ান ভাইয়া। আভিয়ান ভাইয়াকে দেখে আমার দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
আভিয়ান ভাইয়া এসে অমিত ভাইয়াকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করেন। অমিত ভাইয়াকে মারতে মারতে প্রায় আধমরা করে ফেলছে। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আভিয়ান ভাইয়া অমিত ভাইয়ার কলার ধরে টানতে টানতে উনাকে নিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে যান।
আমি দেয়াল ঘেষে বসে পড়ি। আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অজস্র অশ্রু।
বাবা দেখো তোমার মেয়ে কাঁদছে। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে তাই না? বাবা তুমি কেনো আমাকে একলা ফেলে চলে গেলে? কেনো আমার জীবনটা অন্ধকারে ভরিয়ে দিয়ে গেলে? তুমি থাকলে হয়তো আমার জীবনটাও আর পাঁচটা মেয়ের মতো হতো। আমার সবকিছু থেকে কিছুই নেই। দেখো বাবা সবকিছু থেকেও তোমার মেয়ে এতিমের মতো বড় হচ্ছে। এই শহরে আমার আপন বলতে কেউ নেই। বাবা তোমার মেয়ে এই পৃথিবীতে বড্ড একা।
কণার এমন বুক ফাটা আর্তনাদে আরেকজন কাঁদছে তার সাথে। তার চোখ থেকেও অজস্র অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
৩৭
আভিয়ান অমিতের কলার ধরে টানতে টানতে এনে ড্রয়িংরুমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। অমিত গিয়ে পড়ে তিশান আহম্মেদের ( আভিয়ানের আব্বু )পায়ের কাছে। তিশান আহম্মেদ আর হেলাল রহমান ( অমিতের বাবা ) ড্রয়িংরুমে একসাথে বসে কথা বলছিলেন। অমিতকে এভাবে নিজের পায়ের কাছে পড়তে দেখে দাঁড়িয়ে যায় তিশান আহম্মেদ।
অমিতের এই অবস্থা কী করে হলো আভিয়ান? অমিত আমাদের গেস্ট। তুমি তার কলার ধরে টেনে এনে এভাবে ফেলতে পারো না। ( চিৎকার করে )
তিশান আহম্মেদের চিৎকার শুনে কিচেন থেকে দৌড়ে আসে আফিফা বেগম, মহুয়া জাহান আর রেশমি রহমান ( অমিতের মা )। অমিতের এমন অবস্থা দেখে তিন জনই থমকে যায়। রুম থেকে আসে ছোঁয়া। নিজের ভাইয়ের এমন করুন অবস্থা দেখে দৌড়ে আসে অমিতের কাছে ছোঁয়া। অমিতের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।
ঐ কুত্তার বাচ্চা যে এখনো জীবিত আছে এটা ওর বাপের ভাগ্য। ইচ্ছে করছে জানে মেরে দেই।
কথাটা বলে আভিয়ান আরেকটা লাথি মারে অমিতকে।
আভিয়ান এসব কী হচ্ছে? তুমি আভিয়ানকে মারছো কেনো?
বাবা কি হয়নি বলো? এই বাড়িতে এতোগুলো মানুষ থাকা সত্ত্বেও এই কুত্তার বাচ্চা কণার রুমে কী করে ঢুকে?
মানে।
সবাই লাঞ্চ করে যে যার রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে। আমি ড্রয়িংরুমে বসে কিছুক্ষণ টিভি দেখি। কণার রুমে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো কণা রুমে আটকে গেছে। রুমের দরজা ধরে টানছে কিন্তু খুলছে না এমন মনে হলো। আমি কণাকে হেল্প করার জন্য দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। আমি রুমের ভিতর ঢুকে এমন একটা দৃশ্য দেখবো তা কল্পনাও ভাবতে পারিনি। আমি রুমে ঢুকে দেখি এই অমিতের বাচ্চা জোর করে কণার সাথে অসভ্যতামু করার চেষ্টা করছে।
মহুয়া জাহান এগিয়ে এসে বলেন, আমি বিশ্বাস করি না অমিত কণার সাথে এমন করেছে।
কণা,, কণা,, কণা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আয়।
আভিয়ান চিৎকার করে কণাকে ডাকে। কিছুক্ষণ পরে অহি কণাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। কণার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে হঠাৎই তিশান আহম্মেদের বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। সেকি তার ভাইয়ের অংশকে ঠিকভাবে দেখে রাখতে পারেনি। পরক্ষণেই তার মনে হলো এই মেয়ের জন্যই তার ভাই আজকে তার সাথে নেই। তিশান আহম্মেদ মুখ ফিরিয়ে নেয় কণার থেকে।
ছোট মা তুমি কী এখনো বলবে তোমার ভাইয়ের ছেলে নির্দোষ?
হ্যাঁ বলবো। আমি জানি আমার অমিত সোনা এমন কিছু করতেই পারে না। এই মেয়ে এমন সং সেজে হয়তো অমিতকে সিডিউস করার চেষ্টা করার চেষ্টা করছে। যতই হোক পুরুষ মানুষ তো নারীতে তো আসক্ত হবে।
ছোট মা তুমি কী সত্যিই কণার মা? নিজের মেয়ে সম্পর্কে এমন কথা বলতে তোমার একটুও লজ্জা করছে না।
না লজ্জা করছে না। এ আমার মেয়ে হতেই পারে না। ওর মতো নির্লজ্জ মেয়ের আমার দরকার নেই।
আম্মু।
চুপ একদম চুপ। তুই আমাকে আম্মু বলে ডাকবি না । শুধু মাত্র তোর জন্য আমি আমার স্বামী সংসার সব হারিয়েছি।
ব্যাস আম্মু অনেক বলে ফেলেছো। এতো বছর ধরে তোমাদের এক অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। আমার তো মনে হয় আব্বু আমার জন্য নয় তোমার জন্য এই বাসা থেকে চলে গেছে। তোমার মতো একটা মানুষের সাথে আর যাই হোক সংসার করা যায় না। আব্বু এই বাসা থেকে চলে গিয়ে ভালোই করেছে। নাহলে তোমার মতো একটা মহিলার সাথে সংসার করে আব্বুর জীবন নরক হয়ে যেতো।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া