ছিঃ তুই এতো নিচ আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে। আগে তো শুধু তোকে অপয়া, অলক্ষ্মী ভাবতাম। এখন দেখি তুই চরিত্রহীনা। কোন কুক্ষনে যে তোকে জন্ম দিতে গিয়েছিলাম। জন্মের সময় তোকে লবণ খাইয়ে কেনো যে মেরে ফেললাম না। জন্মের সময় মেরে ফেললে আজকে এই দিন আমাকে দেখতে হতো না।
আম্মুর কথাগুলো শুনে আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। অন্যকেউ বললে হয়তো মানা যেতো। কিন্তু নিজের মা অবিশ্বাস করলে সেটা মানা যায় না। মা কী বলছি উনি তো কোনোদিন আমার মায়ের মতো বিহেভ করেননি। ছোটবেলা থেকেই নিজের ভাইয়ের মেয়েকে নিয়েই মেতে থেকেছেন। আর আমাকে সবসময় অবহেলা অবঙ্গা করেছে।
চুপ করো ছোট মা।
কেনো চুপ করবো। তুই জানিস এই কণা কী করছে?
হুম বলো কণা কী করছে? আমিও শুনতে চাই যে কণা কী এমন করছে যে তুমি মা হয়ে নিজের মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করছো। ওহ তুমি তো আবার কণার মা না। সে যাইহোক বলো,
আমার বলতেও লজ্জা লাগছে।
অহি আম্মুকে থামিয়ে বলে, তোমার আবার লজ্জাও লাগে। আমি তো মনে করতাম তোমার লজ্জা সরম বলতে কিছু নাই।
অহি তুই কিন্তু আমাকে অপমান করছিস।
আরে না ছোট মা আমি তোমাকে অপমান করতে পারি। আমি তো যাস্ট কথার কথা বললাম। তুমি তোমার কথা কান্টিনিউ করো।
কণা আর আভিয়ান সারা রাত একসাথে ছিল এক রুমে ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
কার রুমে ছিল?
কণার রুমে।
তার জন্য তুমি ভাইয়াকে কথা না শুনিয়ে কণাকে কেনো শুনাচ্ছো? ভাইয়া যেহেতু কণার রুমে তাহলে এখানেই প্রমানিত সব দোষ ভাইয়ার। ভাইয়া কণার কাছে এসেছে কণা ভাইয়ার কাছে যায়নি।
অহি সব যেনোও এই কথা বলছে কেনো? (মনে মনে)
অহি তুই......
অহি আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে বলে। তাই আমিও আর কথা না বলে চুপ করে গেলাম।
আমি জানি আভিয়ানের এখানে কোনো দোষ নেই। মেয়েরা যদি ছেলেদের সিডিউস করে তাহলে ছেলেরা তো মেয়েদের কাছে যাবেই।
আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে তুমি একজন মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের ব্যাপারে এভাবে কথা বলছো। আরে ছোট মা কণা তো তোমার নিজের মেয়ে। ১০ মাস ১০ দিন যে মেয়েকে নিজের গর্ভে ধারণ করেছো তার প্রতি তোমার একটু মায়া দয়াও কাজ করে না। তুমি না জেনে কণাকে কত কিছু বলে দিলে। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন কণা কালকে সারা রাত আমার সাথে আমার রুমে ছিল।
আমি জানি তুই কণাকে বাঁচানোর জন্য এসব বলছিস।
ইতিমধ্যে ড্রয়িংরুমে বড় মা, বড় আব্বু আর মেইড সবাই এসে উপস্থিত হয়েছে।
ছোট মা।
হঠাৎ আভিয়ান ভাইয়ার কন্ঠ শুনে আমি চমকে যায়। আমরা সবাই পিছনে তাকাই। আভিয়ান ভাইয়া মাথা চেপে ধরে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো ড্রিংক করার জন্য এখন মাথা ব্যথা করছে। আমি আভিয়ান ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছি। আমি জানি আভিয়ান ভাইয়াও এখন আমার নামে মিথ্যা বানিয়ে বানিয়ে বলবে। কারণ উনি তো আমাকে অপমান করার কোনো সুযোগই ছাড়েন না। আর আজকে আমাকে অপমান করার এতো বড় সুযোগ নিশ্চয়ই ছেড়ে দিবেন না।
আমি জানি আভিয়ান ভাইয়াকে কেউ কিছু বলবে না। যা বলার আমাকেই বলবে। কারণ এই সমাজে ছেলেদের দোষ কারো চোখে পড়ে না। দুজন ছেলে মেয়ে পালিয়ে গেলে দোষ সব সময় মেয়েটারই হয়। সারা এলাকা রটে যায় ঐ বাড়ির মেয়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু মেয়েটার সাথে যে একটা ছেলেও পালিয়ে গেছে সেটা কারো চোখেই পড়বে না। কারণ তখন তো মেয়েটার পরিবারকে অপমান করতে ব্যস্ত থাকে সবাই।
অপেক্ষা করছি আভিয়ান ভাইয়া কখন অপমান করবে সেটার জন্য। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আভিয়ান ভাইয়া এমন একটা কথা বললো যা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। আমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না।
ব্যাস ছোট মা। অনেক বলে ফেলেছো। এবার আমি বলবো তুমি শুনবে। তুমি সবকিছুতে কেনো কণার দোষ খোঁজ। যেখানে কণার কোনো দোষ নেই সেখানেও তুমি কণার দোষ খোঁজ। কালকে রাতের ঘটনাটা যাস্ট একটা এক্সসিডেন্ট ছিল। এতে কণার কোনো হাতই ছিল না। কালকে রাতে অতিরিক্ত ড্রিংকস করা ফলে আমি নিজের ওপর কনট্রোল হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই ভুল করে নিজের রুমে না গিয়ে কণার রুমে চলে গিয়েছিলাম। যাইহোক নেক্সট টাইম যেনো এ বিষয়ে কাউকে কোনো কথা বলতে না শুনি।
কথাগুলো বলে ভাইয়া দম নেই। মাথাটা আরেকটু জুড়ে চেপে ধরে হয়তো বেশিই ব্যথা করছে।
মিতু একটা স্ট্রং কফি করে আমার রুমে দিয়ে যাস। তাড়াতাড়ি দিয়ে যাবি মাথা প্রচণ্ড ব্যথা করছে।
কথাটা বলেই আভিয়ান ভাইয়া হনহনিয়ে চলে যায়। আমি দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসি।
৩১
বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছি। আমার জীবনে সুখ ধরা দিয়েও দেয় না। ভাবছি কালকে রাতের ঘটনা।
ফ্ল্যাশবেক
আভিয়ান ভাইয়া আমার ওপর ঢলে পড়ার একটু পড়েই ঘুমিয়ে যায়। আমি ভাবছি আভিয়ান ভাইয়াকে নিয়ে আমি এখন কী করবো? উনি যে ভারী উনাকে উনার রুম অবধি পৌছে দেওয়া আমার মতো চিংড়ি মাছের পক্ষে অসম্ভব।
এই মরা আর মরার জায়গা পেলো না। এরে এখন মরার ওপর খাড়ার মতো মনে হচ্ছে। ( বিড় বিড় করে)
উনাকে তো আমি নড়াতেও পারছি না। আল্লাহ আমি এই ড্রামকে নিয়ে এখন কী করবো? হঠাৎ মনে হলো আমার হাতে তো ফোন আছে। দিলাম অহিকে কল। কিন্তু ফোন ওয়েটিংয়ে বলছে। মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো।
এরা দুই ভাই বোন আমারে পাইছে কী? একটা আমার ওপর বস্তার মতো পড়ে আছে আরেকটা প্রেম করতে ব্যস্ত। আল্লাহ সব মরা কি আমার কপালেই জুটে। (বিড় বিড় করে)
আমার ফোনটা বেজে ওঠলো। আমি তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম। এই ড্রামের ওজন আর সহ্য করতে পারছি না।
অহির বাচ্চা তাড়াতাড়ি আমার রুমে আয়।
কেনো?
তোর কেনো তোরে গুইল্লা খাওয়ামু। তাড়াতাড়ি আমার রুমে আয়।
আচ্ছা এক মিনিট দাঁড়া আমি আসছি।
কিছুক্ষণের মাঝে অহি চলে আসে।
কী হয়ছে কণা এতো রাতে ডাকলি কেনো?
আগে তোর ভাইরে ধর পড়ে বলছি।
ভাইয়া এখানে কী করছে?
তুই ধরবি নাকি তোর ভাইকে ছেড়ে দিবো।
আরে বাবা ধরছি তো।
দুজন মিলে আভিয়ান ভাইয়াকে আমার রুমের বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
এখন বল ভাইয়া এখানে কীভাবে এলো? আর এমন মরার মতো ঘুমুচ্ছে কেনো?
তোর ভাই প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে মদ খায়ছে। মদ খেয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আসছিলো। ক্ষমা চাওয়ার জন্য আসছিলো না তো আমারে ভর্তা বানাতে আসছিলো। এখন তোর রুমে চল অনেক ঘুমে পাইছে।
ভাইয়াকে এই অবস্থায় এখানে একলা রেখে যাবো?
একলা রেখে যাবি কেনো তুই থাক। ভাইয়ের জন্য যখন এতো দরদ উতলায়ে পড়তাছে। তাহলে সারা রাত জেগে সেবা কর।
চেতস ক্যান আমি তো এমনি বলছি। চল ঘুমাবি। আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।
তারপর অহির সাথে ঘুমাতে গেলাম। ছিটে ফোট ঘুমও আমার চোখে ধরা দিলো না। সারা রাত ছটফট করতে করতেই কাটলো। একেতো একজন সাথে ঘুমাইছি তার ওপর নতুন বিছানা। উফ অসহ্য। অহির বাচ্চা নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। ইচ্ছে করছে এক লাতি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দেই। সকালে তাড়াতাড়ি আমার রুমে চলে যায়। উদ্দেশ্য রুম থেকে জামা কাপড় নিয়ে অহির রুমে গিয়ে ফ্রেশ হবো। রুম থেকে যখন জামা কাপড় নিয়ে বের হবো তখনি আম্মু আমাকে দেখে ফেলে। আমার হাত ধরে টানতে টানতে ড্রয়িংরুম নিয়ে আসে।
কিরে এখনো রেডি হসনি ভার্সিটি যাবি না?
অহির কথায় আমার ভাবনায় ছেদ ঘটে। অহির দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে অহিকে নিয়ে ভার্সিটির যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলাম।
৩২
ভার্সিটি থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে গেলো। কারণ মামা-মামি মানে ছোঁয়ার আব্বু-আম্মু আসছে। সাথে ছোঁয়া আর আরেকটা ছেলে আসছে। ছেলেটাকে কোথাও দেখছি দেখছি মনে হচ্ছে লাগছে তবু চিনতে পারছি না। একটা গান আছে না, চেনা চেনা তবু অচেনা।
সে যাইহোক আমি চুপি চুপি আমার রুমে চলে আসলাম। কারণ মামা-মামি আমাকে দেখলেই আদিখ্যেতা শুরু করে দেবে। যেটা আমার মোটেও ভালো লাগে না। উনারা আমাকে একটু বেশিই আদর করেন। যেটা আমার সহ্য হয় না। কথায় আছে না অতি ভক্তি চুরের লক্ষণ। উনাদের ব্যাপারটাও আমার এমন মনে হয়। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলাম উদ্দেশ্য ছাদে যাবো। হঠাৎ করে ঐ ছেলে এসে আমার সামনে দাঁড়ায়।
তুমি কণা এম আই রাইট?
জ্বী।
কেমন আছো?
জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
আমাকে জিঙ্গেস করলে না আমি কেমন আছি?
আপনাকে দেখে তো সুস্থ সবল একদম ফিট লাগছে। আর অসুস্থ হলে নিশ্চয়ই এখানে বেড়াতে আসতেন নাহ?
তুমি আমার সাথে এরকম করে কথা বলছো কেনো?
অপরিচতদের সাথে কথা বলতে আমার আনইজি লাগে।
তুমি আমার সাথে এরকম করে কথা বলছো কেনো?
অপরিচতদের সাথে কথা বলতে আমার আনইজি লাগে।
তুমি মেবি আমাকে চিনতে পারো নাই?
জ্বী না।
তুমি আমাকে চিনতে না পারলেও আমি তোমাকে ঠিকই চিনতে পেরেছি। তুমি ছোটবেলায় দেখতে যেমন ছিলে এখনো ঠিক তেমনি আছো।
আপনার কথা শেষ হয়েছে। আমি কী এখন যেতে পারি?
তুমি আমাকে চিনতে পারছো না আমি তোমার মামার ছেলে অমিত। ছোটবেলায় তুমি আমাকে অমি ভাইয়া বলে ডাকতে। আগে তোমাদের বাসায় আসলে তুমি আমার কোল থেকে নামতেই চায়তে না। এখনো চাইলে কোলে নিতে পারি। কী বলো নিবো নাকি? ( ভ্রু নাচিয়ে আমার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত স্ক্যান করে কথাটা বলে।)
ভাইয়া আগে আমি ছোট ছিলাম এখন ছোট নেই। তাই কথাগুলো একটু বুঝে শুনে বলবেন।
আরে এমন করছো কেনো আমি তো যাস্ট মজা করলাম।
ভাইয়া মজা করার একটা লিমিট থাকে।
কী হয়ছে?
তেমন কিছু হয়নি আভিয়ান। আমরা যাস্ট কথা বলছিলাম।
সত্যি। (আভিয়ান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন।)
হুম উনি আমাকে কোলে নিতে চাইছেন। আগে উনি আমাদের বাসায় আসলে আমি উনার কোল থেকে নামতে চাইতাম না। তাই এখন কোলে নিতে চাইছেন।
ওহ তাই নাকি? তা অমি ভাইয়া শুধু কণাকে কোলে নিবে আমাকে নিবে না। আমিও তো আগে তোমার কোল থেকে নামতে চাইতাম না। নিবা নাকি কোলে আমাকে?
অমি ভাইয়া আপনি বরং আভিয়ান ভাইয়াকে কোলে নেন। ভাইয়ার অন্যের কোলে ওঠতে অনেক ভালো লাগে। ( দাঁত কেলিয়ে কথাটা বললাম )
আভিয়ান ভাইয়া আরেকটু অমি ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলো।
ভাইয়া আগে আমাকে কোলে নেও তারপরে কণাকে নিও।
আভিয়ান ভাইয়ার এমন কথায় অমি ভাইয়ার কপালের ঘাম ছুটে গেছে। উনি এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন। হয়তো কী করবেন বুঝতে পারছেন নাহ ? উনি কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলেন,
আমাকে মনে হয় কেউ ডাকছে।
আপনাকে কেউ ডাকছে বলে মনে হয় না কারণ আমি তো শুনতে পেলাম না।
কণা তোমার কানে মনে হয়ে প্রবলেম হয়ছে ডক্টর দেখাও। আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম আমাকে কেউ ডাকছে।
কথাটা বলে দ্রুততার সঙ্গে ঐ জায়গা ত্যাগ করে অমিত ভাইয়া। এমন একটা ভাব করলেন যেনো এখান থেকে পালাতে পারলেই উনি বাঁচেন।
৩৩
সবাই ডিনার করতে বসেছে। আমার একপাশে আভিয়ান ভাইয়া আরেকপাশে অহি। আমার সোজা অমিত ভাইয়া তার এক পাশে ছোঁয়া আরেকপাশে মামি। কর্ণারের দিকে বড় আব্বু আর মামা। আম্মু আর বড় মা সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। খেতে বসে এমন বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানলে এখন ডিনার করার জন্যই বসতাম না। অমিত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। যতবার উনার দিকে চোখ পড়ছে ততবারেই দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।
আরে কণা তুমি তো খাচ্ছো না। শুধু খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছো। তোমার কী খাবার ভালো লাগছে না? চিকেনটা তো অসাধারণ হয়ছে খেয়ে দেখো।
আমার খাওয়া শেষ। আপনার যখন ভালো লাগছে তাহলে আপনি বেশি বেশি করে খান।
কথাটা বলে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে রুমে চলে এলাম। রুমে আসতেই মেসেজ টোন বেজে ওঠলো। মেসেজ ওপের করে দেখি ঐ চিঠি প্রেরক পাঠিয়েছে।
শুনো ধূলিকণা তোমার ঐ সো কল্ড মামাতো ভাইয়ের থেকে দূরে থাকবে। তোমার ঐ মামাতো ভাইকে আমার একদম সুবিধার লাগে না। তুমি শুধু আমার শুধুই আমার প্রেয়সী। আমি চাই না আমার জিনিসে অন্য কেউ নজর দেখ। আমি আমার জিনিসের প্রতি খুব পসেসিভ। আর তুমি তো আমার কলিজা। তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আমি তার চোখ তুলে ফেলবো। বুঝতে পেরেছ।
আমি অন্সার দিলাম, হুম।
প্রায় সাথে সাথেই লোকটি রিপলাই দিলো মনে হয় আমার মেসেজেরই অপেক্ষাই ছিল।
যেখানে তোমার অস্বস্তি হয় সেখানে থাকো কেনো? যখন তোমার ঐ সো কল্ড মামাতো ভাই তোমাকে কোলে নেওয়ার কথা বললো তুমি কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় মারলে না কেনো? মুখ বুজে অন্যায় সহ্য না করে প্রতিবাদ করতে শিখো ধূলিকণা। তুমি বড্ড সহজ সরল কিন্তু তোমার মতো সবাই সহজ সরল না। সবাই মুখোশ পড়ে থাকে। তুমি যাকে যেমন ভাবো সে কিন্তু তেমন না। কে তোমার ভালো চায় আর কে তোমার ক্ষতি চায় সেটা তোমাকে বুঝতে শিখতে হবে।
কণা কী করো?
হঠাৎ আমার রুমে এতো রাতে পুরুষালি কন্ঠ শুনে আমি চমকে যায়। অতিরিক্ত চমকে যাওয়ার ফলে হাত থেকে ফোনটা বিছানায় পড়ে যায়। আমি সাথে সাথেই ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাই। রুমে ঢুকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে কথাটা বললো অমিত ভাইয়া।
আপনি এখানে এতো রাতে?
কণা তুমি এতো রাত কোথায় দেখলে? মাত্র ৮ টা বাজে।
রাত ৮ টা আপনার মাত্র মনে হচ্ছে?
তা নয়তো কী?
কথাটা বলেই উনি ধপ করে বিছানায় আমার পাশে বসে পড়লেন। উনাকে এভাবে বসতে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। লাফ দিয়ে বিছানার আরেক সাইডে চলে যাই।
কী হলো ঐদিকে চলে গেলে কেনো?
প্লিজ আমার রুম থেকে চলে যান।
কেনো?
আপনি সত্যিই বুঝতে পারছেন নাহ আমি কেনো আপনাকে চলে যেতে বলছি?
না।
উনার এমন দায়সারা উত্তর শুনে মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠলো। উনি বুঝতে পারছেন নাহ নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করছেন?
আপনি বুঝতে পারছেন নাহ নাকি বুঝতে চাইছেন নাহ?
আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।
আপনি এতো রাতে একটা অবিবাহিত মেয়ের রুমে আসতে পারেন না। আপনিও একজন অবিবাহিতা ছেলে। কেউ দেখলে বাজে কথা বলবে।
বাজে কথা বলার কী আছে? আমি তোমার মামাতো ভাই বাইরের কেউ না তাই তোমার রুমে আসতেই পারি।
না পারেন নাহ। আপনি আমার মামাতো ভাই ভাই নাহ। তাই আপনি যখন তখন আমার রুমে আসতে পারেন নাহ।
তুমি আমাকে ইগনোর কেনো করছো?
উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে কথাটা বললেন।
প্লিজ আপনি দূরে গিয়ে বসুন। আমি ছেলেদের সাথে এতো কথা বলিনি।
উনি খপ করে আমার হাত ধরে ফেললেন। একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসেন।
সত্যি বলতে কণা আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। প্রতি মুহূর্তে ইচ্ছে করে তোমাকে দেখি। কিন্তু তুমি আমাকে আসার পর থেকেই ইগনোর করছো। আই লাভ ইউ কণা। আই কান্ট লিভ উইথ ইউ।
দেখুন এটা সম্ভব না। আপনি সম্পর্কে আমার ভাই হন। হাতটা ছাড়ুন।
আমি তোমার ভাই না মামাতো ভাই হই। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন।
না ছাড়বো না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার উত্তর পাচ্ছি।
দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আমার হাতটা ছাড়ুন।
না।
আমি ঠাস করে উনার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। উনি আমার হাত ছেড়ে দেন। গালে হাত দিয়ে আমার দিকে ক্রুদের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি এক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে রুমে বাইরে চলে এলাম।
৩৪
ছাদে ফোনে গেইম খেলছি। যখন আমার মন ভালো থাকে না তখন আমি গেইম খেলি। অমিত ভাইয়ার সম্পর্কে বললে কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না। অমিত ভাইয়া বানিয়ে মিথ্যা বললে সেটাই সবাই বিশ্বাস করবে।
কণা।
হঠাৎ আভিয়ান ভাইয়ার কন্ঠ শুনে চমকে যায়। আমার একটা বড় সমস্যা যখন কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তাই থাকি তখন হঠাৎ করে কেউ কথা বললে আমি ভয় পেয়ে যাই। চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখি আভিয়ান ভাইয়া আমার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আভিয়ান ভাইয়ার থেকে চোখ সরিয়ে আমার দৃষ্টি আবার ফোনের দিকে স্থির করি।
কণা তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
হুম বলুন।
আমার দিকে তাকা।
আমি চোখ দিয়ে না কান দিয়ে শুনবো। তাই আপনার দিকে তাকানোর কোনো প্রয়োজন মনে করছি না।
আমার ওপর এখনো রেগে আছিস?
আপনার ওপর কেনো রাগ করতে যাবো? মানুষ রাগ, অভিমান সবকিছু করে আপন জনের ওপর। আপনি আমার কে হন যে আমি আপনার ওপর রাগ করবো।
তুই আমার সাথে এমন করে কেনো কথা বলছিস?
কেমন করে কথা বলছি?
আমাকে আপনি করে কেনো বলছিস?
অপরিচিতদের মানুষ আপনি করেই বলে।
আমি তোর অপরিচিত?
তা নয়তো কী?
আমি জানি কণা আমি অনেক ভুল করেছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। মানুষ মাত্রই ভুল। কেউ ভুল করলে তাকে শুধরানোর সুযোগ দেওয়া উচিত। আমার ভুল শুধরানোর একটা সুযোগ আমাকে দিবি না কণা?
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া