জিয়ান কণাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে কণাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। জিয়ান গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। দুজন গাড়িতে বসতেই দম ফাটা হাসিতে ফেটে পড়ে। জিয়ান ড্রাইভ করে কিছু দূর এসে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে আবার হাসি শুরু করে দেয়।
আমি কীভাবে এতক্ষণ হাসি থামিয়ে রাখছিলাম এটা একমাত্র আমি জানি।
আমি আর কী বলবো? তোর এক্টিং দেখে আমি টাস্কি খাইছিলাম। এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু আমার সত্যি মনে হচ্ছিল। তোর এক্টিং দেখে বোঝার উপায় নেই যে তুই এক্টিং করছিলি। কত কষ্টে যে আমি হাসিটা কনট্রোল করছি তোকে বলে বোঝাতে পারব না। তুই তো জানিস আমি আবার হাসি আটকে রাখতে পারি না। শেষ মুহুর্তে তোর কান্না দেখে আমার আরো হাসি পাচ্ছিল। তাই তোকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।
জিয়ান ভাইয়া তুমি কত ভালো এক্টিং করছ সেটা তুমি নিজেও জানো না। আমার তো মনে হচ্ছিল তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড আর আমার সাথে রাগ করে আছ। জিয়ান ভাইয়া তুমি যদি এক্টিং করতা। তাহলে অনেক নাম করতে পারতা।
তুইও।
দুজন আবার ফিক করে হেসে দেয়। কণা হাসি থামিয়ে বলে,
থ্যাংকস।
কেনো?
তুমি যা করছ আমার বান্ধবীর জন্য তাতে শুধু থ্যাংকস অতি সামান্য। দুজন ভালোবাসার মানুষকে এক করে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছ।
আমি তোর বান্ধবীর জন্য কিছু করি নাই সবকিছু নিজের জন্য করছি। ধন্যবাদ তো আমার তোকে দেওয়া উচিত। অহি যদি সময় মত মেসেজ না দিত তাহলে যে কী হত? নিজের বাসর রাতের কথা কল্পনা করেই আমার হার্ট এ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। বন্যা যদি ভদ্র মেয়ে হত তাহলে বাসর ঘরে ঢুকতেই আমাকে বলত, আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। আপনি আমার দেহ পাবেন কিন্তু মন পাবেন নাহ। আর যদি গুন্ডি টাইপের মেয়ে হত তাহলে বলত, আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।। আপনি যদি আমার কাছে আসার বা স্পর্শ করার চেষ্টা করেন তাহলে আমি আপনাকে খুন করে ফেলব। উফ খুব বাঁচা বেঁচে গেলাম। যদি একবার বন্যার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যেত। তাহলে বিয়ে করেও সিঙ্গেলদের মত জীবন কাটাতে হত।
জিয়ানের কথা শেষ হতে না হতেই কণা আবার দম ফাটা হাসিতে ফেটে পড়ল।
জিয়ান ভাইয়া বাসায় গিয়ে মামা, মামিকে কী করে সামলাবে?
তোর আর আমার জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে তা আল্লাহই ভালো জানে।
ছোঁয়া তোমার বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানত না তাই না?
ছোঁয়া কী করে জানবে? আমি নিজেই তো জানতাম নাহ আজকে আমার বিয়ে ছিল। আব্বু-আম্মু না জানিয়ে সব কিছু ঠিক করে ফেলেছিল। ছোঁয়া খালামনির বাসায় যাওয়ার পর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। ও থাকলে এসব জামেলা হতো না।
হুম।
গ্রামে ঘুরতে যাবি?
কণা নাক সিটকে বলে, আমি আর গ্রামে যাব না।
কেনো?
ভুলে গেলে নাকি গত বার তোমার সাথে গ্রামে গিয়ে কাঁদায় পড়ে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় এসে তিনদিন জ্বরে ভুগেছিলাম।
কাঁদায় মাখার সুযোগ নাই। ঐ গ্রামটা অনেক সুন্দর। অন্য সব গ্রামের থেকে একদম আলাদা। রাস্তাও সুন্দর। চল না? প্লিজ? প্লিজ? তোকে নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে নৌকায় উঠাব।
আচ্ছা চল।
জিয়ান ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দেয়। আমি একমনে তাকিয়ে আছি ব্যস্ত নগরীর দিকে। হঠাৎ আমার ফোনটা বেঁজে ওঠে। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তের আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে ওঠে। আমি ফোনটা রিসিভ করি।
ধূলিকণা,, ধূলিকণা আই'ম সো হেপি।
আপনি এত খুশি কেনো?
আর চারদিন পর আমি তোমার সাথে দেখা করব।
সত্যি।
সত্যি।
তিনবার সত্যি বলেন।
সত্যি, সত্যি, সত্যি। আচ্ছা এখন রাখি। পরে কথা বলব।
আচ্ছা বাই।
বাই।
কণা কান থেকে ফোনটা নামাতেই জিয়ান তড়িৎগতিতে প্রশ্ন করে,
কীরে তুইও কী তলে তলে টেম্পু চালাস নাকি?
ছিঃ জিয়ান ভাইয়া তুমি এসব চিপ টাইপ কথা বল।
এটাকে চিপ টাইপ কথা বলে?
বলে নাহ?
না। আচ্ছা আগে বল ছেলেটা কে?
আমি নিজেও জানি না।
এটা আবার কেমন কথা?
উনার সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। উনার নাম পরিচয় কিছুই জানি না।
এটা তো নব্বই দশকের প্রেম কাহিনী হয়ে গেলো। কেউ কাউকে না দেখে কেউ কাউকে না চিনে প্রেম। বোইন তোরা তো ইতিহাস গড়ে ফেলবি। আজকের যুগের পোলাপান নাকি না দেখে ভালোবাসে।
এই তুমি চুপ চাপ গাড়ি চালাও তো। আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছ। পরে আবার এক্সিডেন্ট করবা।
মনে তোরে দেইখা আমি মিনিটে মিনিটে ক্রাশ খায় যে তোর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকব।
তুমি মেয়েদের মত এত পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া কর কেনো?
তুই মানছিস তাহলে মেয়েরা ঝগরুটে।
তুমি চুপ করবা। নাহলে তোমাকে একটা উস্টা মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিব। আজাইরা।
জিয়ান ভাইয়া আর কোনো কথা না বলে এক মনে ড্রাইভ করতে থাকে। আমি প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। গ্রামের পরিবেশ কত সুন্দর। স্নিগ্ধ ,নির্মল বাতাস। কোলাহল মুক্ত পরিবেশ।চারদিক দিয়ে সবুজ গাছ পালায় ভরা। হুট করে গাড়ি থেমে যাওয়ায় আমি খুব বিরক্ত হয়ে যায়। বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলি,
জিয়ান ভাইয়া এবারও আগের বারের মত বল না যে গাড়ি টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে। এবার যদি এমন কিছু বল তাহলে একটা বাড়ি দিয়ে তোমার মাথা ফাটিয়ে দিব।
কিন্তু জিয়ান ভাইয়া কোনো কথা বলে না। আমি এবার জিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকাই। জিয়ান ভাইয়া গাড়ির স্টেয়ারিং ধরে স্টেইট বসে আছে।
জিয়ান ভাইয়া,, জিয়ান ভাইয়া।
কিন্তু জিয়ান ভাইয়ার কোনো সারা শব্দ নেই। জিয়ান ভাইয়ার আবার রিয়েকশন বাটন কাজ করা বন্দ করে দিয়েছে নাকি। জিয়ান ভাইয়া এক ধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকাই। আমাদের গাড়ির সামনে দিয়ে খুব রূপবতী একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। জিয়ান ভাইয়া ঐ মেয়েটার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি এবার জিয়ান ভাইয়াকে জোরে একটা ধাক্কা দিলাম। আমার ধাক্কা দেওয়ায় জিয়ান ভাইয়া একটু নড়েচড়ে বসে।
কী প্রেমে পড়লা নাকি?
কণা আমি আমার মনের মানুষ পেয়ে গেছি।
৬৬
কেটে গেছে এক দিন। ঐ দিন বাসায় এসে জিয়ান ভাইয়া সত্যিটা বলে দিতেই সবাই অনেক রেগে যায়। জিয়ান ভাইয়া সবাইকে অনেক বুঝায়। এট লাস্ট আমাদের অভিনয় করার কারণটা বুঝে। বন্যার আব্বু নোমান ভাইয়াকে মেনেও নেই নি আবার নাও করে দেয়নি। উনার সম্মতির লক্ষণই বেশি। আমি এখন ব্যগ গুছাতে ব্যস্ত। কারণ আমরা ভার্সিটি থেকে ট্যুরে সাঁজেক যাব। আগামীকাল আমরা সবাই দুই দিনের জন্য ট্যুরে সাঁজেক যাব ভার্সিটি থেকে। সকাল ৭ বেজে ৩০ মিনিটে সবাইকে ভার্সিটির মাঠে উপস্থিত থাকতে বলেছেন স্যার এবং মেমরা। কালকে যেহেতু আগে ঘুম থেকে ওঠতে হবে তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।
৬৭
ভার্সিটির মাঠে দাঁড়িয়ে আছি আমি, বন্যা, অহি আর ছোঁয়া। সবাই লাফালাফি করে বাসে ওঠছে। আমরা ৪ জন দাঁড়িয়ে আছি ধীর সুস্থে বাসে উঠব বলে। সবাই ওঠে পড়লে আমরা চার জন ওঠে পড়ি। আমরা সবার পিছনের সিটে গিয়ে বসি। আমরা বসতেই বাস চলতে শুরু করে। চাউন্ড বক্সে গান বাজছে। সেই গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে সবাই। গানের প্রতিটা লাইনের সাথেই সবাই গলা মিলাচ্ছে। একেক জনের গলা একেক রকম তাই বিশ্রী শোনা যাচ্ছে। কেউ আবার বেসুরে গলায় চিৎকার করে গাইছে। আমরাও বসে না থেকে তাদের সাথে তাল মিলাতে শুরু করলাম।
____________________
অবশেষে আমরা সাঁজেক এসে পৌছালাম। এর মাঝে একবার নাস্তা খাওয়ার জন্য ৩০ মিনিট সময় দিয়েছিল।আমাদের বাস একটা হোটেলের সামনে দাঁড়ায়। হোটেল সম্পূর্ণটা আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্টদের জন্য বুকিং করা হয়েছে। রিসেভশন থেকে চাবি রুমে চলে এলাম। আমরা ৪ জন এক রুমে থাকব।
____________________
বিকালের দিকে আমরা সবাই কলাংক পাহাড় যাই। পাহাড়ে ওঠার জন্য স্যার-মেমরা বাঁশ নিতে বলে। আমরা বাঁশের সাহায্যে ওঠছিলাম। হঠাৎ করে কেউ আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়।আমি অহির সাথে থাকায় অহির হাত চেপে ধরি। টাল সামলাতে না পেরে দুজনই পাহাড় থেকে পড়ে যেতে নিলে আমি অহির হাত ছেড়ে দেই। আমি একা পাহাড় থেকে পড়ে গেলাম।
বিকালের দিকে আমরা সবাই কলাংক পাহাড় যাই। পাহাড়ে ওঠার জন্য স্যার-মেমরা বাঁশ নিতে বলে। আমরা বাঁশের সাহায্যে ওঠছিলাম। আমার পা কিছুতে আটকে যায়। তাকিয়ে দেখি একটা গর্তে আমার পা পড়ে গেছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখে অহিও দাঁড়িয়ে যায়। অহি আমাকে জিঙ্গেস করে,
কী হয়ছে?
গর্তে পা পড়ে গেছে।
আটকে যায়নি তো?
না। গর্তের সাইজ আমার পা থেকে অনেকটা বড়।
আমি গর্ত থেকে পা তুলে আবার হাঁটা শুরু করলাম। আমি আর অহি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সবার থেকে অনেকটা পিছনে পড়ে যাই। অবশেষে আমরা পাহাড়ের ওপরে এসে পৌছায়। আমি আর অহি সবার পিছনে।
হঠাৎ করে কেউ আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়।আমি অহির সাথে থাকায় অহির হাত চেপে ধরি। আচমকা এভাবে ধরায় অহি টাল সামলাতে পারে না। টাল সামলাতে না পেরে দুজনই পাহাড় থেকে পড়ে যেতে নিলে আমি অহির হাত ছেড়ে দেই। অহিকে ধাক্কা দিয়ে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেই। আমি একা পাহাড় থেকে পড়ে গেলাম। কণা অহির হাত ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা দেওয়ায় অহি পাহাড় থেকে না পড়লেও অহির মাথা গিয়ে পড়ে একটা পাথরের ওপর।
আআআআআয়া
অহির চিৎকার শুনে সবাই পিছনে তাকায়। পিছনে তাকিয়ে সবাই থমকে যায়। অহির মাথা পাথরে পড়ায় মাথা ফেটে গেছে। অহির রক্তে পাথরটা লাল হয়ে গেছে। এমনকি জায়গাটাও রক্তে লাল হয়ে গেছে। অহির এমন অবস্থা দেখে সাফাতের পৃথিবী থমকে যায়। আভিয়ান দৌড়ে তার বোনের কাছে যায়। আভিয়ানের পিছনে সবাই ছুটে যায় অহির কাছে। ততক্ষণে অহি ঙ্গান হারিয়ে ফেলছে। সবাই অহিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কণার কথা সবাই বেমালুম ভুলে গেছে।
সবাই অহির কাছে ছুটে গেলেও সাফাত নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর পা চলছে না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখছে। মাথা ঘুরে পড়ে যায় সাফাত। সাফাত চোখের সামনে রক্ত দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। সাফাতের ভয়ংকর ফোবিয়া আছে। রক্ত দেখলেই ভয়ে অঙ্গান হয়ে যায়।
নোমান খেয়াল করে দেখে অহির কাছে সবাই আসলেও সাফাত আসেনি। নোমানের একটা কথা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি পিছনে তাকায়। পিছনে তাকিয়ে দেখে সাফাত অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে।
৬৮
অহির অপারেশন চলছে। অপারেশন থ্রিয়েটারের সামনে বসে আছে ভার্সিটির কিছু স্যার, মেম, কিছু সিনিয়র স্টুডেন্ট, নোমান, বন্যা ছোঁয়া এবং আভিয়ান। সাফাত একটা কেবিনে ঘুমুচ্ছে। ডক্টর ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে।নাহলে সাফাত আবার পাগলামি শুরু করে দিবে। ঙ্গান ফেরার পর অনেক পাগলামু করছে অপারেশন থ্রিয়েটারের ভিতরে ঢোকার জন্য। সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল সাফাতের এমন পাগলামু দেখে। সাফাতকে আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না তাই ডক্টর ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে।
আভিয়ান চোখ বন্ধ করে হসপিটালে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা চেয়ারগুলোতে বসে আছে। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। তার সাদা শার্টটা অহির রক্তে লাল হয়ে আছে। সে কিছুতেই অহির এই অবস্থা মেনে নিতে পারছে না। বুকের ভিতরে খালি খালি লাগছে। তার বোনটা আদো বাঁচবে নাকি সে জানে না। অপারেশন থ্রিয়েটারের ভিতরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তার ছোট বোনটা। তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারছে না। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অক্ষম মনে হচ্ছে তার।
অহিকে সে কখন সামান্যতম আঘাত পেতে দেয়নি ছোটবেলা থেকে। আর তার বোন আজকে এত কষ্ট পাচ্ছে। আভিয়ান মনে মনে প্রতিঙ্গা করছে যার জন্য তার বোনের এই অবস্থা তাকে সে কিছুতেই ছাড়বে না। তার বোন যতটুকু কষ্ট পাচ্ছে তার থেকে হাজারগুন বেশি কষ্ট তাকে পেতে হবে। তার পায়ে ধরে মৃত্যু ভিক্ষা চাইবে কিন্তু সে দিবে না। তিলে তিলে মরতে হবে তাকে। আভিয়ানের প্যান্টের পকেটে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে তার বুকের ভিতর ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
কীভাবে বলবে তার মাকে অহির কথা? অহির ফোন বন্ধ পেয়েই হয়তো তাকে কল দিয়েছে। কারণ তার সাথে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট আগে তার মায়ের সাথে কথা হয়েছে। ফোন রিসিভ করতেই যদি তার মা জিঙ্গাস করে, অহি কোথায়? অহি কেমন আছে? অহির ফোন বন্ধ কেনো? তখন সে কী উত্তর দিবে। মা-বাবা নাকি সন্তানের বিপদ আগে থেকে আঁচ করতে পারে। সন্তান কোনো বিপদ হলে তারা বুঝতে পারে। আভিয়ান কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে।
হ্যালো আভিয়ান! অহি কোথায়? আর কণা কোথায়? দুজনের ফোন বন্ধ কেনো? বল না ওরা কোথায়? আমার টেনশন হচ্ছে তো। মনটা কেমন কু ডাকছে। তুই তো বড় ওরা তো ছোট এতো দূরে কী করছে কে জানে?
আভিয়ান কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে, মা অহির একটা এক্সিডেন্ট হয়ছে।
ঐ পাশ থেকে আর কোনো শব্দ আভিয়ানের কানে এলো না। নোমান এসে আভিয়ানের কাধে হাত রাখে। আভিয়ান নোমানকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দেয়। হয়ত এতক্ষণ ধরে এমন একটা আশ্রয় খুঁজছিল কাঁদার জন্য। নোমান আভিয়ানকে বাধা দেয় না। মাঝে মাঝে কাঁদা ভালো। মন হালকা হয়। ভিতরে জমে থাকা কষ্ট কমে।
৬৯
সাফাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আনোয়ার চৌধুরী ( সাফাতের বাবা )। উনার চোখের কোণে পানি চিক চিক করছে। সাঁজেক এসেছিলেন একটা কাজে। নোমান খবর দেওয়ার সাথে সাথে ছুটে চলে আসেন। নিজের চোখে অহির জন্য পাগলামি করতে দেখেছে সাফাতকে। সে জানত তার ছেলে অহিকে ভালোবাসে। কিন্তু এতটা ভালোবাসেন সেটা উনি বুঝতে পারেননি। আজ যদি অহির কিছু হয়ে যায় তাহলে তার ছেলের কী হবে? সাফাত তো পাগল হয়ে যাবে।
সাফাত আনোয়ার চৌধুরী সম্পর্ক বাবা ছেলের মত নই বেস্টফ্রেন্ডের মত। প্রথম দেখায় কেউ চট করে বলে দিতে পারবে না উনারা বাবা ছেলে। আনোয়ার চৌধুরী অল্প বয়সে বিয়ে করায় সাফাত আর তার বাবার এইজ ডিফারেন্স বেশি না। আনোয়ার চৌধুরীর চেহারায় এখন বয়সের ছাপ পড়ে নাই। সাফাত তার বাবার কাছে সবকিছু শেয়ার করে।
সাফাত যখন ৮ বছরের তখন তার মা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়। সাফাতের মা যখন এক্সিডেন্ট করে তখন সে নিজের চোখে সেই এক্সিডেন্ট দেখে। নিজের মায়ের রক্তে মাখা লাস। নিজের মায়ের এই ভয়ংকর মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। ভয়ে অঙ্গান হয়ে যায়।
ঙ্গান ফেরার পর থেকে কারো সাথে কথা বলত না। সারাদিন রুম থেকে বের হত না। নিজের মায়ের একটা ছবি বুকে জড়িয়ে বসে থাকত। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করত না। আনোয়ার চৌধুরীর সময় ছিল না ছেলের খোঁজ নেওয়ার। কারণ তিনি নিজেও ভেঙে পড়েছিলেন স্ত্রীর মৃত্যু। নিজের স্ত্রী মৃত্যু সুখে এতোটাই কাতর ছিলেন যে ছেলের খোঁজ নেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন।
তাদের সামলানোর মত কেউ ছিল না। আনোয়ার চৌধুরী প্রেম করে বিয়ে করায় উনার ফেমিলি সাফাতের মাকে মেনে নেই নি। মেনে না নেওয়ার আরেকটা কারণ ছিল। সাফাতের মা এতিম ছিলেন। আনোয়ার চৌধুরীর বাবা-মা একটা এতিম মেয়েকে তাদের ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিবেন নাহ। তাই আনোয়ার চৌধুরী নিজের বাড়ি নিজের আপন জনদের ছেড়ে চলে আসেন।
৭০
আভিয়ান গিয়ে বন্যাকে জিঙ্গেস করে, বন্যা কণা কোথায়?
অহির এমন অবস্থা অন্য কোথাও তো যাবে না। এখানে হয়তো কোথাও আছে। ( কথাটা বলতে বলতে বন্যা চারপাশে একবার চোখ বুলায়। কিন্তু কণাকে কোথাও দেখতে পায় নাহ। ) কণা এখানে নাই তো কোথায় গেলো?
তোমরা তো একসাথে থাক। তুমি জানো না কণা কোথায়? ( কিছুটা রেগে চিৎকার করে )
নোমান কিছু একটা ভেবে বলে, কণাকে আমি পাহাড়েও দেখি নাই। কণা যখন পাহাড়ে ওঠছিল তখন একবার দেখছিলাম। কিন্তু পাহাড়ের ওঠার পর বা অহির এক্সিডেন্টের সময় আর দেখি নাই।
আল্লাহ আমি এখন কী করব? বাড়ির সবাইকে আমি এখন কী বলব? আম্মু আসার সময় আমাকে বার বার বলছিল কণা আর অহির যেনো খেয়াল রাখি। আমি দুজনের থেকে একজনেরও খেয়াল রাখতে পারি নাই। একজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আরেক জন নিখোঁজ। আল্লাব জানে কণা কেমন আছে? কোনো বিপদ হয়ছে কী না?
আভিয়ান ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। তখনি অপারেশন থ্রিয়েটারের লাইট অফ হয়ে যায়। ভিতর থেকে একজন ডক্টর বের হয়ে আসে। সবাই ছুটে ডক্টরের কাছে যায়। আভিয়ান সবার আগে প্রশ্ন করে,
ডক্টর অহি কেমন আছে?
অপারেশন সাকসেসফুল তবে...
বন্যা ভীত গলায় বলে, তবে কী ডক্টর?
৪৮ ঘন্টার আগে আমরা কিছু বলতে পারব না। ৪৮ ঘন্টার আগে ঙ্গান না ফিরলে লাইফ রিস্ক আছে এমনকি কোমায় চলে যেতে পারে। আর এখন সেন্স ফিরে আসলে কথা বলতে পারবে না।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া