৪৮ ঘন্টার আগে আমরা কিছু বলতে পারব না। ৪৮ ঘন্টার আগে ঙ্গান না ফিরলে লাইফ রিস্ক আছে এমনকি কোমায় চলে যেতে পারে। ব্রেইন এ গুরুতর আঘাত পেয়েছে যার কারণে স্মৃতিশক্তি চলে যেতে পারে। আর এখন সেন্স ফিরে আসলে কথা বলতে পারবে না। মাথায় আঘাত পাওয়ার আগে উনি কিছু নিয়ে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। যার কারণে মস্তিষ্কে রক্ত চলা চল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই এখন সেন্স ফিরলেও আগের মত স্বাভাবিক হতে পারবে না। হাত-পা নাড়াতে পারবে না। আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি। বাকিটা আল্লাহর হাতে। আপনারা দোয়া করুন যাতে ৪৮ ঘন্টার আগে সেন্স ফিরে আসে।
কথাগুলো বলে ডক্টর চলে যায়। ডক্টরের কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। আভিয়ান আবার ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। আভিয়ান ফোন বের করে তার এক ফ্রেন্ডকে কল দেয়। কণা হোটেলে আছে কী না জিঙ্গেস করতেই। তার বন্ধু জানায় কণা হোটেলে নাই। সে এখন কী করবে বুঝতে পারছে না? একদিকে অহির এই অবস্থা আরেক দিকে কণা নিখোঁজ। আভিয়ান দিশেহারা হয়ে পড়ছে।
কেটে গেছে ২ ঘন্টা এখন অহির ঙ্গান ফিরে নি। সাফাতের ঘুম ভেঙে গেছে অনেক আগেই সে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে হাসপাতালের করিডরের চেয়ারে। ঘুম ভাঙার পর থেকে কারো সাথে একটা কথাও বলেনি। ঘুম ভাঙার পর জাস্ট একবার জিঙ্গেস করেছিল অহি কেমন আছে? তার পর আর কোনো কথা বলে নাই। থম মেরে বসে আছে।
সাফাত এলোমেলো পা ফেলে কেবিনের ভিতর ঢুকে। অহির বেডের পাশে রাখা টুলে ধপ করে বসে পড়ে। অহির হাত মুঠোয় নিয়ে অজস্র চুমু দিতে শুরু করে। অহির হাতে ভিজে গেছে সাফাতের চোখের পানি দিয়ে।
৭১
ও কেমন আছে এখন?
স্যার এখন ভালো আছে। বেশি আঘাত পায়নি। মাথায় হালকা একটু আঘাত পেয়েছে। হাত পা ছিলে। আমি এন্টিসেপটিক দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি।
তাহলে এখন ঙ্গান ফিরছে না কেনো?
ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি। ৪ থেকে ৫ ঘন্টার মাঝে ঘুম ভেঙে যাবে। তবে খেয়াল রাখবেন কোনো ভাবে উত্তেজিত যাতে না হয়। আচ্ছা তাহলে আমি আসি স্যার।
ওকে।
আদিয়াত কণার মাথার কাছে বিছানায় বসে পড়ে। কণার এক হাত মুঠোয় নিয়ে আরেক হাত দিয়ে কণার মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে।
যার জন্য তোমার এই অবস্থা আমি তাকে ছাড়ব না। তার জীবন নরক বানিয়ে দিব। একে একে সব প্রিয়জন কেড়ে নিয়ে একা করে দিব। বুঝাব আপনজন কেড়ে নেওয়ার কষ্ট কতখানি। তাদের বুঝিয়ে দিব আদিয়াত আয়মানের কলিজায় হাত দেওয়ার দুঃসাহস দেখালে তার পরিণতি কী হতে পারে।
আদিয়াত একটু ঝুকে কণার কপালে কিস করে।
_________________
পিট পিট করে চোখ খুলে কণা। চোখের সামনে আবিষ্কার করে অপরিচত জায়গা। মাথায় অসয্য যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথা চেপে ধরে অনেক কষ্টে বালিসে হেলান দিয়ে ওঠে বসে। চারপাশে চোখ বুলায়। কিন্তু রুমটা একদমি অপরিচিত। আগে কখন এখানে এসেছে বলে তার মনে পড়ছে না। রুমটা অনেক সুন্দর করে গুছানো এবং পরিপাটি। কণা আরও বেশি অবাক হয়ে যায় এই রুমে তার ছবি দেখে। রুমের প্রত্যেকটা দেয়াল জুড়ে শুধু তার ছবি। সব থেকে বেশি অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে কণা ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত যত ছবি তুলছে সব ছবি এখানে আছে। এছাড়াও অনেক ছবি আছে।
আমি কী মারা গেছি? এত উচু পাহাড় থেকে পড়ে গেলে বেঁচে থাকা সম্ভব না। আমি সত্যি মরে ভূত হয়ে গেছি। আমি মারা গেলে উনার কী হবে? এতক্ষণে হয়তো জেনে গেছেন আমি পাহাড় থেকে পড়ে গেছি। উনি কী পাগল হয়ে গেছেন নাকি আমাকে ভুলে গেছেন?
কণা এবার চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল, আল্লাহ গো আমি মরে গেলাম। আমার এখন বিয়ে হয়নি। আমার কিউট গুলুমুলু বাচ্চাগুলোকে এখনো দেখা হয়নি। আমার বিয়েতে জামাই নিয়ে নাগীন ডান্স করা হয়নি। কনে সেজে ছবি তুলা হয়নি। অহির ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়নি। আল্লাহ গো আমি এত এত স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে কী করে মরে গেলাম?
আদিয়াত কণার রুমের সামনে এসে থমকে যায়। কণা বিলাপ করে কাঁদছে। কণার অদ্ভুত সব কথা শুনে আদিয়াতের প্রচুর হাসি পাচ্ছে। আদিয়াত মনে মনে বলে, এই মেয়ে ভাবছে সে মারা গেছে। ওহ গড একটা পিচ্চি মেয়ের প্রেমে আমি কী করে পড়লাম।
কণা এখন কেঁদেই যাচ্ছে। আদিয়াতের হঠাৎ মনে পড়ল ডক্টর বলেছিল কণা যাতে উত্তেজিত না হয়। আর এই মেয়ে তো রিতি মতো চিৎকার চেঁচামেচি করছে। আদিয়াত রুমে ঢুকে দেয় এক ধমক।
হেই স্টুপিড গার্ল একদম চুপ করে থাক।
কারো ধমক শুনে কণা চুপ করে যায়। ভয়ে তার আত্না কাঁপছে। এত জুড়ে ধমক তাকে আগে কেউ কখন দেয়নি। হঠাৎ কণার মনে পড়ল সে তো ভূত। তাহলে সে ভয় পাচ্ছে কেনো? ভূত কাউকে ভয় পায় নাহ। কণা সামনে তাকিয়ে থমকে যায়।
তার সামনে সয়ং আদিয়াত আয়মান দাঁড়িয়ে আছে। কালো রঙের টাউজার, কালো রঙের টি শার্ট। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। হয়তো মনে হয় একটু আগে শাওয়ার নিয়ে আসছে। হাতে খাবারের ট্রে।
কণা ভাবছে উনিও কী মরে ভূত হয়ে গেছেন। আহারে কত মেয়ের মন ভেঙে গেল। কণার ভাবনার মাঝে আদিয়াত কণার কাছে এগিয়ে আসে। খাবার ট্রে টা বেড সাইট টেবিলের ওপর রাখে। তারপর ধপ করে কণার পাশে বসে পড়ে। কণার বিশ্বাস হচ্ছে না আদিয়াত আয়মান তার পাশে বসে আছে। অতঃপর ভাবল ব্যাটা ভুত হয়ে গেছে তাই এডিটিউট চলে গেছে। কণা আরেকটু এগিয়ে গেলে আদিয়াতের দিকে।
আচ্ছা ভূতেরা কী শাওয়ার নেয়?
কণা প্রশ্নে থমকে যায় আদিয়াত। এই মেয়ে তাকে ভুত ভাবছে। কথাটা ভেবেই আদিয়াত উচ্চ স্বরে এসে দেয়। কণা মুগ্ধ হয়ে আদিয়াতের হাসি দেখছে।
আপনার হাসিটা খুব সুন্দর। একদম আমার কল্পনার ভালোবাসার মানুষের মত।
তাই নাকি?
হুম।
কণা হাত বাড়িয়ে আদিয়াত হাসলে যে জায়গায় টোল পড়ে সেই জায়গায় হাত বুলাতে থাকে। হুট করে আদিয়াত দুজনের অধর জোড়া এক করে দিল। এতক্ষণে কণার ঘুমের রেশ কেটে যায়।
ঘুম থেকে ওঠে আবল তাবল বকার স্বভাব কণার আছে। এতক্ষণ ঘুমের ঘুরে থাকায় তার সাথে কী হচ্ছিল সে বুঝতে পারেনি। যখন বুঝতে পারল তখন থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করতে লাগল। কিন্তু আদিয়াতের ছাড়ার কোনো নামই নেই। কিছুক্ষণ পর আদিয়াত কণাকে ছেড়ে দেয়। ছাড়া পাবার সাথে সাথে কণা ছিটকে আদিয়াতের থেকে দুই হাত দুরে সরে যায়। তা দেখে আদিয়াক বাঁকা হাসে। কণা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে,
অসভ্য, অভদ্র, লুচ্চু ব্যাটা। মেয়ে দেখলেই চুম্মা চুম্মি করতে মন চায় তাই় নাহ। এমনে সবার সামনে এত ভাব দেখায় যে, মেয়েদের থেকে এলার্জি আছে। মেয়েদের ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না। আর তলে টেম্পু চালান তাই নাহ?
আদিয়াত বাচ্চাদের মত হামাগুড়ি দিয়ে কণার একদম কাছে চলে আসে। কণা পিছনে যেতে যেতে একেবারে বিছানার কিনারে চলে গেছে। আর পিছানোর জায়গা নাই। এখন পিছাতে গেলে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে যেতে হবে। আদিয়াত আরেকটু এগিয়ে আসতেই কণা তার মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে দেয়।
আদিয়াত কণার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে, মেয়ে দেখলে চুম্মা চুম্মি করতে ইচ্ছে করে না। শুধু তোমাকে দেখলেই করে। ইচ্ছে তোমার ঐ সুইট ঠোঁটগুলো কামড়ে খেয়ে ফেলি।
আদিয়াত কণার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে, মেয়ে দেখলে চুম্মা চুম্মি করতে ইচ্ছে করে না। শুধু তোমাকে দেখলেই করে। ইচ্ছে তোমার ঐ সুইট ঠোঁটগুলো কামড়ে খেয়ে ফেলি।
কণা ভয় পেয়ে সরে যেতে চায়। যদি সত্যি সত্যি তার ঠোঁট কামড়ে খেয়ে ফেলে। কিন্তু ওঠতে গিয়ে কোমড়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। কণা মনে করতে থাকে তখনকার ঘটনাটা। কণা অহিকে ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে পড়ে যায়। গড়িয়ে গড়িয়ে পাহাড় থেকে পড়ার সময় একটা পাথরে সাথে লেগে কপালে আঘাত পায়। একটা আগাছা ডাল পায় সেটা আকড়ে ধরে। হঠাৎ কণার মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হতে থাকে। এক সময় হাত ফসকে পড়ে যায় একটা গাছের ওপর। তখনি কোমড়ে প্রচন্ড আঘাত পায়। যন্ত্রণায় ঙ্গান হারায় কণা। কণার এইটুকুই মনে আছে। পড়ে কী হয়েছে তার মনে নাই। কণা আদিয়াতের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
এটা কোন জায়গা? আমি এখানে আসলাম কী করে? আপনি আমার সাথে কী করছেন? আপনি কে বলুন তো? আমার তো এখন পাহাড়ের গাছে ঝুলে থাকার কথা?
একসাথে এতগুলো প্রশ্ন শুনে আদিয়াত আলতো হাসে। সে জানে কণা কৌতূহলী মেয়ে।
এটা আমার ফার্ম হাউজ।আমি তোমাকে এখানে নিয়ে আসছি। যেহেতু আমি তোমাকে এখানে নিয়ে আসছি সেহেতু আমারই তো তোমার সাথে থাকার কথা তাই নয় কী? তুমি পাহাড়ের গাছে ঝুলছিলে সেখানকার কিছু লোক তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। তা তুমি পাহাড় থেকে পড়লে কী করে? ( আদিয়াত জেনেও না জানার ভান করে প্রশ্ন করে। )
কেউ কী ইচ্ছে করে পাহাড় থেকে পড়ে। আমি পাহাড়ে ওঠার পর কেউ পিছন থেকে জুড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
যে ধাক্কা দিয়েছিল তুমি তাকে দেখেছিলে?
আমি ডানে বামে মাথা নাড়ায় যার অর্থ না। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই পড়ে যায়।
ওহ।
আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি আমার সাথে এত কথা বলছেন। আমি আপনার সম্পর্কে যতটুকু শুনেছি আপনার তো মেয়েদের থেকে এলার্জি আছে।
মেয়েদের থেকে এলার্জি থাকলেও। আমার প্রেয়সীর থেকে এলার্জি নেই। আমি মেয়েদের থেকে দূরত্ব বজায়া রেখে চলি। কারণ আমি আমার প্রেয়সী ছাড়া অন্য কারো সংস্পর্শে আসতে চায় নাহ।
উনার কথা শুনে আমার মাথা হ্যাং হয়ে যায়। উনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। বলছে, মেয়েদের থেকে এলার্জি থাকলেও উনার প্রেয়সীর থেকে এলার্জি নেই। উনার প্রেয়সী ছাড়া অন্য কারো সংস্পর্শে আসতে চান নাহ। আবার আমাকে কিস করছেন। আমি কী মেয়ে না ছেলে? তাই উনাকে জিঙ্গেস করলাম,
আপনার প্রেয়সী ছাড়া অন্য কারো সংস্পর্শে আসতে চান নাহ। আবার আমাকে কিস করছে? আপনি কী মদ খেয়ে আসছেন?
আমি তো আমার প্রেয়সীকেই কিস করছি।
উনার কথা শুনে আমি থমকে যায়। আমি উনার প্রেয়সী কবে থেকে হলাম। আমি কিছু বুঝতে পারছি না তাই উনার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি। আদিয়াত হালকা হেসে বলে,
তুমি আমাকে চিনতে পারছ না তাই নাহ? চেনার কথাও না। সেই ছোটবেলায় দেখেছ। আমাকে হয়ত প্রায় ভুলে গেছ। তুমি আমার চোখের দিকে তাকাও।
আমি উনার চোখের দিকে তাকাই। চোখের দিকে তাকিয়ে আমি যেনো কোনো নেশায় পড়ে যাচ্ছি। উনার ধূসর রঙের চোখের মনিগুলো আমাকে আকৃষ্ট করছে উনার প্রতি। উনার চোখের সাথে কারো চোখের মিল খুঁজে পাচ্ছি। আমি চমকে পিছনে চলে যায়। পড়ে যেতে নিলে উনি আমার হাত ধরে টেনে উনার কাছে নিয়ে আসেন। কোমড়ে ব্যথা পেলেও সেদিকে পাত্তা দেয় নাহ। আমার মাথায় এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরছে।
আপনি সে কী করে হতে পারেন? তার নাম ছিল আয়মান তুর্ণ। আর আপনার আদিয়াত আয়মান।
তুমি হয়ত আমার সম্পূর্ণ না জানো না। আমার নাম আদিয়াত আয়মান তুর্ণ।
এমনিতে তুর্ণের ওপর তার পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে। এখন কণার মনে আরো অনেক অভিমান ভীর জমে। তার তুর্ণ তার আশেপাশে থেকেও তার সামনে আসেনি। ছোটবেলা তুর্ণ তাকে না বলে হুট করে হারিয়ে গিয়েছিল। আদিয়াত চলে যাওয়ার পর কণা প্রতিদিন আদিয়াতদের তালা বন্ধ বাসার সামনে যেত। প্রত্যেকটা রাত পার করত আদিয়াতের জন্য কান্না করতে করতে। কণা অভিমান করে আদিয়াতের থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে। আদিয়াত কণার হাত ধরে টেনে তার কোলে বসিয়ে দেয়। কণা ব্যথায় আর্তনাদ করে ওঠে।
আহহহহহহ
কী হয়ছে কণা?
কণা কথা না বলে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। চোখ থেকে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছে পানি। কোমড়ে প্রচণ্ড ব্যথা পাচ্ছে। আদিয়াত বুঝতে পারছে না কণা কেনো চিৎকার করল। এদিকে কণা কোনো কথাও বলছে না। আদিয়াত ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে। কণা এক হাত কোমড়ে চেপে ধরে বসে আছে। আদিয়াত বুঝতে পারে কণা হয়ত কোমড়ে ব্যথা পেয়ছে। তবু জিঙ্গেস করে,
তুমি পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার সময় ব্যথা পেয়েছিলে?
কণা উপর নিচ মাথা ঝাকায়। আদিয়াত দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। অল্প কিছুক্ষণ পরে আদিয়াত দৌড়ে আসে হাতে একটা স্প্রে নিয়ে। কণার পিছনে এসে বসে। জামায় হাত দিতে গেলে কণা ছিটকে সরে যায়। ছিটকে সরে যাওয়ায় আবার ব্যথায় আর্তনাদ করে। আদিয়াত কণাকে চেপে ধরে জামা হালকা একটু সরিয়ে কোমড়ে স্প্রে করে দেয়।
কণা এতক্ষণ ব্যথায় চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলেও এখন লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। লজ্জায় কণার গাল লাল হয়ে গেছে। কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে।
কণাকে লজ্জা পেতে দেখে আদিয়াত বাকা হেসে বলে, লজ্জা পেলে তোমার গালগুলো টমেটোর মতো হয়ে যায়। তোমার টমেটোর মতো টসটসে গালগুলো দেখলে ইচ্ছে করে শুধু কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলি। কী বলো? দিব নাকি একটা কামড়।
৭২
কেটে গেছে গোটা একটা দিন। অহির এখনো সেন্স আসেনি। সাফাত অহির হাত ধরে এক ধ্যানে অহির দিকে তাকিয়ে আছে। সাফাত ১ সেকেন্ডের জন্যও অহির পাস থেকে সরেনি। আফিফা বেগম কাদঁতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তিনি এখন হসপিটালে ভর্তি।
নোমান বন্যাকে হোটেলে রেখে এসেছে। বন্যা যেতে চায়নি নোমান জোড় করে রেখে এসেছে। ভার্সিটির স্যার মেমরাও চলে গেছেন। আভিয়ান করিডোরের চেয়ারে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। পাশেই তিশান আহম্মেদ কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছেন। পাশে ছোঁয়ার বাবা-মাও আছে। মহুয়া জাহান কেবিনে আফিফা বেগমের পাশে বসে আছেন। এদিকে যে নিজের মেয়ে নিখোঁজ সেদিকে উনার কোনো হেলদুল নেই। নোমান আভিয়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
আভিয়ান,, আভিয়ান,, আভিয়ান।
চোখ খুলে তাকায় নোমানের দিকে। আভিয়ানের চোখগুলো লাল টকটকে হয়ে আছে।
কণার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আভিয়ান আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। কণা থাকল বা না থাকল এতে তার কিচ্ছু আসে যায় না। কণার সম্পর্কে জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার মাঝে নেই। এমন একটা হাব ভাব করছে আভিয়ান।
যে নিজে থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় তার খোঁজ পাওয়া কী সম্ভব?
কথাটা শুনে সবাই পিছনে তাকাই আভিয়ান বাধে। সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখে উক্ত কথাটা ছোঁয়া বলছে। তিশান আহম্মেদ গম্ভীর গলায় বলে,
তুমি কী বলতে চাইছো?
আমি বলতে চাইছি যে, নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে কী হাজার খুঁজলেও পাওয়া যায়? কণা তো নিজে থেকে হারিয়ে গেছে। তাই চিরুনি তল্লাশী করলেও কণাকে খোঁজে পাবেন নাহ।
নোমান রেগে বলে, তোমার এসব স্টুপিড কথা বার্তা তোমার কাছেই রাখ। তোমার এসব ফালতু কথা শোনার আগ্রহ কারো কাছে নেই।
কণার কোনো বিপদ হয়েছে। নাহলে অহির এই অবস্থায় কণা কোথাও যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারে নাহ।
নোমানের কথা শুনে ছোঁয়া অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ছোঁয়া এভাবে হাসায় সবাই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেলে। ছোঁয়া হাসতে হাসতে বলে,
অহির এই অবস্থার জন্য তো কণায় দায়ী।
নোমান অবাক হয়ে জিঙ্গেস করে, মানে?
কণা অহিকে ধাক্কা মেরে পাহাড় থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিল। সেই প্লেনে সফল হতে পারেনি আমার জন্য। কণা যখন অহিকে ধাক্কা দিতে যায় তখন অহি দেখে ফেলি। অহি কণার হাত ধরে ফেলে। আর আমি সম্পূর্ণ দৃশ্যটা দেখে ফেলি। কণা আমাকে খেয়াল করে অহির থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে অহিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। অহি.......
ছোঁয়া সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই কেউ চিৎকার করে বলে,
বন্ধ কর তোমার এসব নাটক। তুমি বললে আর আমরা বিশ্বাস করে ফেলব যে কণা অহিকে ধাক্কা দিয়ে পাহাড় ফেলে দিতে চেয়েছিল। কণা নিজের থেকে বেশি অহিকে ভালোবাসে। কণা হাসতে হাসতে অহির জন্য প্রাণ দিয়ে দিতে পারে। সেখানে কণা অহির ক্ষতি করবে এটা হয়তো কণা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নাহ।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া