বিকালে রাস্তার মাঝে আনমনে হাঁটছিলাম। তখন একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লেগে ঐ ছেলের হাতের ফাইলের সমস্ত কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিচে পড়ে যায়। আমি সরি বলে যখন ছেলেটির কাগজগুলো তুলতে সাহায্য করছিলাম। তখন ছেলেটার একটা সার্টিফিকেটে আমার চোখ আটকে যায়। সার্টিফিকেটটা হাতে নেই। সার্টিফিকেট থেকে জানতে পারি ছেলেটার নাম আভিয়ান। আমার মনে আশার আলো জেগে ওঠে।
আমি ছেলেটার নাম, ঠিকানা, পরিচয় সব জেনে নেই। ছেলেটাকে সরি বলে চলে যায়। বাসায় গিয়ে লোক লাগিয়ে ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেই। খোঁজ নিয়ে আমার সন্দেহটাই ঠিক হয়। ঐ আভিয়ানই ছিল তোমার ভাই। তারপর বহু কাঠ খড় ফুরিয়ে আভিয়ানের সাথে দেখা করি। আমি নিজের পরিচয় দেই। নিজের পরিচয় দিতেই আভিয়ান আমাকে চিনে ফেলে। তারপর আমি আভিয়ানকে তোমার কথা জিঙ্গেস করি। তোমার কথা জিঙ্গেস করতেই আভিয়ান থম মেরে যায়। হুট করে আভিয়ান হাউ মাউ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আচমকা এভাবে কেঁদে দেওয়ায় ভয় পেয়ে যায়। তোমার কিছু হলো না তো? এটা ভেবেই বুকের ভিতর চিন চিন ব্যথা অনুভব করি। সেদিন আভিয়ান কাঁদতে কাঁদতে বলে,
কণা ভালো নেই ভাইয়া। একদমি ভালো নেই। সবাই ওর ওপর অত্যাচার করে। ওকে কেউ ভালোবাসে না। ছোট আম্মু ওকে ঠিক মতো খেতে দেয় না। ছোট আম্মু রেগে গেলে কণাকে ধরে মারধর করে। স্টোর রুমে আটকে রাখে। আমার জন্য কেউ কিছু বলতে পারে না। আমার সামনে ভালো ব্যবহার করলেও আমার আড়ালে সবাই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কণা সবকিছু মুখে বুজে সহ্য করে নেয়। একটু প্রতিবাদ ও করে না। ছোট আম্মু যখন ওকে গালা গাল করত তখন ছোট আব্বুর ছবি বুকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে অভিযোগ করত। তখন নিজেকে অক্ষম মনে হতো। ইচ্ছে করত ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যায়। কিন্তু সেই সামর্থ আমার নেই। আমি যতটা পারি আগলে রাখার চেষ্টা করি। তবু আমি ব্যর্থ ভাই। বড় ভাই হয়ে ছোট বোনের জন্য কিছু করতে পারি না। আদিয়াত ভাইয়া তুমি কণাকে নিয়ে এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাও। নাহলে পাষাণ মানুষগুলো কণাকে ভালো থাকতে দিবে না। আমি তোমার দুইটা পায়ে পড়ি দয়া করে তুমি কণাকে এখান থেকে নিয়ে চলে যাও। কণার এতো কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছি না।
সেদিন আভিয়ানের কান্না দেখে আমি নিজেও কেঁদে দিয়েছিলাম। এটাই হয়তো কোনো বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা। বোনের সুখের জন্য নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতেও দুই বার ভাবে না। তুমি খুব ভাগ্যবতী আভিয়ানের মতো একটা ভাই পেয়েছ। তখন তোমাকে আমার সাথে নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না। তোমার মামার জন্য তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতে পারতাম না। কারণ উনার নজর ছিল তোমাদের প্রোপার্টি ওপর। তাই তিনি ছোটবেলা থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন তোমার সাথে অমিতের বিয়ে দিবে। তোমার বয়সও ১৮ বছর ছিল না যে তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবো। একটা কথা তো জানো, আঘাতে আঘাতে মানুষ পাথর হয়ে যায়। তোমার পাশে আভিয়ান ছিল বলে তুমি প্রতিবাদ করতে শিখোনি। যখন মানুষ নিজের পাশে কাউকে পায় না। তখন দুর্বল মানুষও ঘুরে দাঁড়ায়। নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করে। তাই আমার প্লেন মতো আভিয়ান তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল তুমি নিজের প্রতি হওয়া অন্যায় অবিচারের জন্য প্রতিবাদ কর। কাজের মেয়ের মতো ঐ বাড়িতে পড়ে না থেকে নিজের অধিকারের জন্য লড়াই কর। কেউ তোমাকে অপমান করলে মুখ বুজে সহ্য না করে উল্টে তাকে কথা শুনিয়ে দেও। কেউ তোমাকে দুটো থাপ্পড় মারলে তাকে তুমি চারটে থাপ্পড় মার। আভিয়ান সবার সামনে তোমাকে অপমান করলেও আড়ালে ঠিকই তোমার খেয়াল রাখত। তোমার সমস্ত ইনফরমেশন আমাকে দিত। তুমি কখন কী কর সব আমাকে বলত।
আদিয়াত কথাগুলো বলে লম্বা শ্বাস নেই। আজকে আদিয়াতের ভীষণ শান্তি অনুভব হচ্ছে। কণাকে সব জানিয়ে দিতে পেরে নিজেকে তার অনেক হালকা লাগছে। এদিকে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে কণা। যতই আদিয়াতকে প্রমিস করুক। চোখ তো কারো বারণ শুনে না। চোখ দুটো যে বড্ড অবাধ্য। একদম মালিকের বারণ শুনতে চায় না।
৯৮
আদিয়াত রুমে ঢুকে দেখে কণা এই গরমের মাঝেও কাথা মুরি দিয়ে ঘুমুচ্ছে। অবশ্য রুমে শীত শীত ভাব। এসি পাওয়ার ফুল দেওয়া। আদিয়াত ভালো করেই জানে কণা এখনো জেগে আছে। আদিয়াত বাঁকা হেসে টুপ করে কণার কাথার ভিতরে ঢুকে পড়ে। কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষতে থাকে।
কণা কিছুতেই ঘুমের অভিনয় করে শুয়ে থাকতে পারছে না। আদিয়াতের এমন ঘাঢ়তর স্পর্শে তার সারা শরীর অবস হয়ে আসছে। আদিয়াত কণাকে নিজের দিকে ঘুরায়। আদিয়াত নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে যায় কণার মুখের দিকে। দুজনের নিশ্বাস দুজনের চোখ মুখে আছড়ে পড়ছে। দুজনের নিশ্বাস ভারী হয়ে আসতেই কণা ধপ করে চোখ খুলে ফেলে। আদিয়াত কণার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
ঘুম শেষ আফা?
আদিয়াতের মুখে আফা শুনে কণার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। কণা রেগে আদিয়াতের কলার চেপে ধরে বলে,
আমি আপনার আফা লাগি?
অবশ্যই। আমি যদি তোমার ভাই হই তাহলে তুমি আমার বোন তাই না?
আরেকবার বোন বললে খুন করে ফেলবো আপনাকে।
কেনো বলব না? অবশ্যই বলবো। তুমি যতবার ভাই ডাকবে আমিও ততবার তোমাকে বোন ডাকব।
আরেকবার বোন বললে আপনার ঠোঁট শিলি করে দিব।
তুমি ভাই ডেকো না আমিও আফা ডাকব না।
৯৯
সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে। শুধু আদিয়াত উপস্থিত নেই। আদিয়াত সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেই কোথাও একটা চলে গেছে। যাওয়ার আগে কণাকে যাস্ট বলে গেছে একটা জরুরি কাজ আছে। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। কণা টেবিলে বসে ফোন স্ক্রল করছে। সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে শুধু কণা ছাড়া। মহুয়া জাহান কণার সামনে এক প্লেট নুডুলস রাখে। নুডুলসে একটু বেশিই তেল। নুডুলস দেখে নাক সিটকাই কণা।
রাহেলা বেগম কণার সামনে থেকে নুডুলসের প্লেইটটা সরিয়ে কণার সামনে দুইটা স্যান্ডউইস, একটা সিদ্ধ ডিম আর এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস রাখে। মহুয়া জাহান রেগে বলে,
আপনি এই খাবারগুলো সরিয়ে দিলেন কেনো? কণা সকালবেলা নুডুলস খেতে অনেক পছন্দ কর।
আপনি তো দেখি সব জেনে বসে আছেন।
জানব না আমার মেয়ে।
কণা সকালে ওয়লি খাবার খেতে পছন্দ করে না। আর সকালবেলা এসব তেলে তেলে খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
উফ মামুনি চুপ করতো। তুমি আমার মামুনি তুমি আমাকে যা ইচ্ছে খেতে দিতে পার তার জন্য তুমি অন্য কারো কাছে জবাব কেনো দিচ্ছো? আমার না নিজের হাতে খেতে একদম ইচ্ছে করছে না তুমি আমাকে একটু খাইয়ে দাও।
মহুয়া জাহান আগ বাড়িয়ে বলে, আমি তোকে খাইয়ে দেই।
কণা মহুয়া জাহানের মুখের ওপর না করে দেয়। মহুয়া জাহান মুখ কালো করে ফেলে। রাহেলা বেগম কণাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে থাকে। কণা তৃপ্তি সহকারে খেতে থাকে। মহুয়া জাহান রেগে তাকিয়ে আছেন রাহেলা বেগমের দিকে। খাওয়ার মাঝে হঠাৎ কলিংবেল বেঁজে ওঠে।
মহুয়া জাহান গিয়ে দরজা খোলে দেয়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হেলাল রহমান, রেশমি রহমান আর ছোঁয়া। মহুয়া জাহান নিজের বাপের বাড়ির লোকদের দেখে খুশিতে অাত্নহারা হয়ে যায়। তাদের নিয়ে এসে ড্রয়িংরুমের বসায়।
হেলাল রহমান আর তার পরিবার মুলত এসেছে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করতে। সবাই ব্রেকফাস্ট শেষ করে ডাইনিং রুম ছেড়ে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়। বড়রা গিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়ে। তাহসিন আহম্মেদকে দেখে হেলাল রহমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাহসিন আহম্মেদ নিউজ পেপারে নিজের মুখ গুঁজে দেয়। হেলাল রহমান তাহসিন আহম্মেদ কিছু না বলে তিশান আহম্মেদের সাথে কথা বলতে শুরু করে।
ভাই সাহেব অহি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে। তিশানও ফিরে এসেছে। এখন তো ছোঁয়া আর আভিয়ানের বিয়েতে কোনো বাধা রইল না।
নাহ। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাক।
ছোঁয়া আভিয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ছোঁয়ার থেকে আভিয়ানের হাত ছাড়িয়ে ধাক্কা মেরে ছোঁয়াকে ফেলে দেয়। হুট করে সবার সামনে মেয়েটি আভিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। বিস্ময়ে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
ছোঁয়া আভিয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ছোঁয়ার থেকে আভিয়ানের হাত ছাড়িয়ে ধাক্কা মেরে ছোঁয়াকে ফেলে দেয়। ছোঁয়ার চিৎকারে সবাই নজর ওদের ওপর পড়ে। হুট করে সবার সামনে মেয়েটি আভিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। বিস্ময়ে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
আদিয়াতও উপস্থিত হয় ড্রয়িংরুমে। সবাই অবাক হলেও আদিয়াত একদম স্বাভাবিক। আভিয়ানও অবাক হয়েছে তবে সবার মত না। কেউ মেয়েটির মুখ দেখতে পাচ্ছে না। আভিয়ানকে জড়িয়ে ধরায় মেয়েটির পিছনের দিক শুধু দেখা যাচ্ছে। পিঠ পর্যন্ত হালকা ব্রাউন কালার চুলগুলোর জন্য মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। সবাই ওদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকার আভিয়ানের ভীষণ লজ্জা লাগছে। আভিয়ান নিজের থেকে মেয়েটিকে ছাড়াতে চাইলে মেয়েটি আরো আঁকড়ে ধরে আভিয়ানকে।
আভিয়ান মেয়েটির কানে ফিসফিস করে কিছু বলে। ফট করেই মেয়েটি আভিয়ানকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সবাই মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে যায়। সবাই অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির পরনে জিন্সের প্যান্ট আর লাল রঙের কুর্তি। গলায় কালো রঙের একটা স্কার্ফ ঝুলানো। মেয়েটির গায়ের রঙ ধবধবে সাদা। অনেকটা বিদেশীদের মতো। মেয়েটির গোল গাল চেহেরায় বিদেশী ভাব স্পষ্ট।
ছোঁয়া মেয়েটির সাথে নিজেকে মিলিয়ে দেখছে। মেয়েটির সৌন্দর্যের ধারে কাছেও তার সৌন্দর্য যায় না। মেয়েটি তার থেকে যেমন সুন্দরী তেমনি লম্বা। ড্রয়িমরুমের নিস্তব্ধতা কেটে যায় কণার চিৎকারে।
ঐশি আপু।
কণা দৌড়ে গিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে। মেয়েটিও কণাকে জড়িয়ে ধরে। মেয়েটিকে দেখে কণাদের পরিবারের সবার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ছোঁয়া ঐশিকে ভালো করে দেখে বুঝতে পারে এটা কণার ফুফির মেয়ে। ঐশির আভিয়ানকে জড়িয়ে ধরা কণাদের পরিবারের সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। কারণ ঐশির আভিয়ানের বেষ্টফ্রেন্ড। শুধু স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না ছোঁয়া। তার মনে হচ্ছে কিছু গণ্ডগোল আছে।
একে সবাই এসে ঐশির সাথে কথা বলে। কেমন আছে? একা এসেছে নাকি সাথে আহানাও এসেছে? আসতে অসুবিধা হয়নি তো? এ্যায়ারপোর্ট থেকে একা একা আসল কেনো? বাসায় ফোন করলেই তো কেউ গিয়ে নিয়ে আসত এক্সেট্রা এক্সেট্রা। ঐশির চোখ যায় তাহসিন আহম্মেদের দিকে। ঐশি দৌড়ে গিয়ে তাহসিন আহম্মেদকে জড়িয়ে ধরে।
ছোট মামা তুমি কেমন আছ?
আমি ভালো আছিরে মা। তুই কেমন আছিস?
আমিও ভালো আছি। জানো তোমাকে আমি কত মিস করেছি এতোদিন? সবাই তোমার নামে কতো বাজে কথা বলত। কিন্তু আমি কারো কথা কোনদিন বিশ্বাস করিনি। আমার বিশ্বাস ছিল তোমার ওপর। আমি জানতাম আমার মামা এমন একটা তুচ্ছ কারণে কখনো আমাদের ছেড়ে যেতে পারে না। জানো ঐ কুটনি মহিলা ( মহুয়া জাহান) তোমার নামে কত খারাপ খারাপ কথা বলছে সবার কাছে?
তাহসিন আহম্মেদ ঐশির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মহুয়া জাহান ঐশির কথায় রাগে ফুসছে। মহুয়া জাহান ছোটবেলা থেকেই ঐশিকে সহ্য করতে পারে না। ঐশিও দেখতে পারে না মহুয়া জাহানকে। তাদের মাঝে সাপে নেউলের সম্পর্ক। মহুয়া জাহান এতক্ষণে ঐশির সাথে লেগে যেত কিন্তু এখন সে কথা বললে সবকিছু তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।
ঐশি ছোট বেলা থেকেই তাহসিন আহম্মেদের জন্য পাগল ছিল। ঐশির ছোট মামা তার সাথে থাকলে তার আর কিছু লাগে না। তাহসিন আহম্মেদও ঐশিকে ভীষণ ভালোবাসতেন। সারাদিন তারা দুজন এক সাথেই থাকত। যেটা মহুয়া জাহান একদমই সহ্য করতে পারতেন নাহ। উনি তখন ঐ পিচ্চি মেয়েটাকে হিংসা করতেন। উনার মনে হতো ঐশি তার অধিকারে ভাগ বসাচ্ছে। দুইদিন পর তার সন্তান হলে তাদের ভালোবাসায়, অধিকারে ভাগ বসাবে। তাই তিনি তাহসিন আহম্মেদের সাথে ঐশিকে একদম সহ্য করতে পারতেন নাহ। ঐশি সবার উদ্দেশ্যে বলে,
তোমরা সবাই এখানে এভাবে বসে আছো কেনো?
তিশান আহম্মেদ খুশিতে গদ গদ হয়ে ঐশিকে বলে, তোকে তো বলায় হয়নি। আমরা আভিয়ানের সাথে ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক করেছি। কিছুদিন পর ওদের চার হাত এক করে দিব।
ছোঁয়া মেয়েটা দেখতে ভীষণ মিষ্টি তাই না?
ঐশি আভিয়ানের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, আভিয়ান এই বিয়েতে রাজি?
কেনো রাজি হবে না? আভিয়ানের জন্যই এই বিয়েটা ঠিক করেছি। আভিয়ান আর ছোঁয়া দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তাই আমরা আর আপত্তি করি নাই। তারা দুজন যদি সুখে থাকে তাহলে সেখানে আমাদের নাক না গলানোই ভালো। আহানাকে আমি ফোন করে বলবো ভেবেছিলাম তার আগেই তুই চলে এলি। এই বিয়ের সব দায়িত্ব তোর। তোর ব্রেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে বলে কথা।
আভিয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,
তা তো অবশ্যই। এমন ব্যবস্থা করব যে জন্মের মতো বিয়ে করার শখ মিটে যাবে।
ঐশির কথা শুনে সবাই অবাক। ঐশির কথা সবার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আভিয়ান অসহায় দৃষ্টিতে ঐশির দিকে তাকিয়ে আছে। আদিয়াত মিটমিটি হাসছে। আভিয়ানকে এমন অসহায় অবলাদের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে আদিয়াত নিজের হাসি চেপে রাখতে না পেরে ফিক করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়ে।
গতকাল রাতে আভিয়ান বলছিল, জীবনে বিয়ে করতে হয় দুইটা। নাহলে নাকি বিয়ের আসল মানে বোঝা যায় না। প্রথম বিয়েটা করতে হয় এক্সপিরিয়েন্সের জন্য। আর দ্বিতীয়টা করতে হয় সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য। সবাই তাকিয়ে দেখেন আভিয়ানের দুইটা হবু বউ।
আভিয়ান দাঁত কটমট করে আদিয়াতের দিকে তাকায়। কিন্তু আদিয়াত তো আদিয়াত। সে আভিয়ানের রাগকে জাস্ট পাত্তা দেয়। আভিয়ান বিড়বিড় করে বলে,
যার জন্য করি চুরি সেই বলে চুর।
ছোঁয়া এতক্ষণ চুপ থাকলেও এখন আর চুপ থাকতে পারে না। চিৎকার করে বলে, দুইটা হবু বউ মানে কী?
কণা বলে, তুর্ণ ভুল বলছে একটা হবু বউ হবে আর সেটা হবে ঐশি আপু। তুমি তো দুইদিন পরে মারা যাবে। ভাইয়া তো আর সারাজীবন বউ ছাড়া থাকবে না। ভাইয়া চায় না তার নামের পাশে দুইটা বিয়ে করার ট্যাগ লাগুক। তাই ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে হবে না। ভাইয়ার সাথে ঐশি আপুর বিয়ে হবে।
ছোঁয়া এবার আভিয়ানের কলার চেপে ধরে বলে, আভিয়ান কণা এসব কী বলছে? আমি তো তোমার ভালোবাসা তাহলে এই মেয়েটা তোমার হবু বউ হয় কী করে?
কণা যা বলছে সব সত্যি। ঐশি আমার হবু বউ। ঐশি মাই হার্ট।
তাহলে আমি কে?
ঐশি ধাক্কা মেরে ছোঁয়াকে আভিয়ানের থেকে দুরে সরিয়ে দেয়। ঐশি চিৎকার করে বলে, একদম তুই আমার আভিয়ানকে স্পর্শ করবি না। আমি চাই না তোর মতো একটা নোংরা মেয়ের হাতের স্পর্শ আমার আভিয়ানের শরীরে পরুক। তোর থেকে পতিতারও অনেক ভালো। আর যায় হোক তারা কারো জীবন নিয়ে খেলে না।
ছোঁয়া ছলছল নয়নে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, আভিয়ান তুমি কিচ্ছু বলবে না? এই মেয়েটা আমার নামে এতো বাঁজে কথা বলছে তাও তুমি চুপ করে থাকবে?এক সময় আমার সাথে কেউ গলা উচিয়ে কথা বলতে পারত না তোমার জন্য। আমার দিকে কেউ চোখ তুলেও তাকাতে পারত না তোমার জন্য। আর আজকে সেই তোমার সামনে বাইরের একটা মেয়ে আমাকে এতো খারাপ কথা বলছে। আর তুমি চুপ করে আছো? আমাদের এতোদিনের ভালোবাসা কিছুদিনের মাঝেই ফিকে হয়ে গেলো। এখন আর আমাকে তোমার ভালো লাগে না। আমি পুরোনো হয়ে গেছি। তাই আমাকে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইছ। মানুষ ঠিকই বলে, ছেলের সুন্দরের পূজারী। সেটা আজকে তুমি প্রমাণ করে দিলে। আমার থেকে সুন্দরী আপডেট মেয়ে আমাকে ভুলে গেলে। দুদিন পরে দেখা যাবে নতুন কাউকে পেয়ে এই মেয়েটাকে ছু.....
আভিয়ান জুরে চিৎকার দিয়ে বলে, যাস্ট সাট আপ। যেটা বলতে চেয়েছও সেটা আর উচ্চারণ করো না। ঐশিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে, সি ইজ মাই লাইফ। যাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। ওকে ছাড়া জীবনের একটা মুহূর্তও কাটানোর কথা ভাবতেও পারি না। ও আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। ওর সাথে এক মুহূর্ত কথা না বললে আমার নিশ্বাস আটকে যায়। আর তুমি তাকে বাইরের মেয়ে বলছে। যার বসবাস আমার সম্পূর্ণ হৃদয় জুড়ে।
চলবে...
Write:- তাসনিম জাহান রিয়া