> তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব ৪৯, ৫০ - Bangla Love Story - প্রেমের গল্প - ভালোবাসার গল্প - Bangla New Story - রোমান্টিক গল্প - দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প
-->

তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব ৪৯, ৫০ - Bangla Love Story - প্রেমের গল্প - ভালোবাসার গল্প - Bangla New Story - রোমান্টিক গল্প - দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প

আভিয়ান জুরে চিৎকার দিয়ে বলে, যাস্ট সাট আপ। যেটা বলতে চেয়েছও সেটা আর উচ্চারণ করো না। ঐশিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে, সি ইজ মাই লাইফ। যাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। ওকে ছাড়া জীবনের একটা মুহূর্তও কাটানোর কথা ভাবতেও পারি না। ও আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। ওর সাথে এক মুহূর্ত কথা না বললে আমার নিশ্বাস আটকে যায়। আর তুমি তাকে বাইরের মেয়ে বলছো। যার বসবাস আমার সম্পূর্ণ হৃদয় জুড়ে। ওকে ছুড়ে ফেলে দিব এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। তোমার মতো প্রোস্টিটিউট এর সাথে ঐশির একদম তুলনা করবে না।

আভিয়ান।

চুপ একদম চুপ। এতদিন তোমার অনেক কথা শুনেছি না চাইতেও। যেখানে তোমাকে দেখলেই আমার ঘৃণা হয় সেখানে তোমার কথায় আমায় উঠতে বসতে হয়েছে। যে মেয়ে সামন্য সম্পদের জন্য নিজের মামাতো ভাইয়ের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে।আর যায় হোক সে কারো ভালোবাসা হতে পারে না। না জানি কত সম্পদের জন্য কত ছেলের সাথে........। আমার ঘৃণা পাওয়ার যোগ্যতাও তোমার নেই সেখানে ভালোবাসা তো অনেক দূরের কথা। 

আভিয়ান তুমি এসব কী বলছ? আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি আর কাউকে না। বিশ্বাস করো। 

বিশ্বাস আর তোমাকে? হা হা হা! তোমার আর বিষধর সাপের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে চায়। তোমার মতো মেয়েরা কাউকে ভালোবাসতে পারে না। এরা শুধু টাকাকে ভালোবাসে। তাই তোমার এসব নাটক বন্ধ কর। আমি নিজেই ক্লান্ত তোমার সাথে অভিনয় করতে করতে। তুমি এতজনের সাথে অভিনয় করে ক্লান্ত হও না। আর কী জানো বলেছিলে? ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। সব ছেলেরাই সুন্দরের পূজারী। সব ছেলেরা যদি সুন্দরের পূজারী হতো তাহলে তোমার মায়ের মত একটা কালো মেয়ে তোমার বাবার সাথে থাকত না। এই আভিয়ান আবরার কখনোই সুন্দরের পূজারী না। সে ভালোবাসে সুন্দর একটা মনকে। যেটা তোমার মাঝে নেই। তোমার বাইরের দিকটাই সুন্দর ভিতরে একটা কুৎসিত মন আছে। আমি একজনকেই মনে প্রাণে ভালোবাসি। ঐশিকে আমি আজকে থেকে নয় যখন আমার বয়স ১২ তখন থেকে ভালোবাসি। 

হেলাল রহমান এবার আর চুপ করে থাকলেন নাহ। তিনি বুজতে পারছেন এখন চুপ করে থাকলে রাজ্য আর রাজকুমার দুটোই হারাবেন তিনি। হেলাল রহমান গর্জে ওঠে বলে, আভিয়ান তুমি ফাজলামো পেয়েছ? এতদিন আমার মেয়ের সাথে প্রেম প্রেম খেলে। এখন বলছ অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসো। তুমি আমার মেয়ের চরিত্রের ওপর আঙ্গুল তুলছ। আমার তো মনে হয় তোমার নিজেরই চরিত্রের ঠিক নেই। জীবনটা কোনো ছিনেমা না যে, তুমি আমার মেয়ের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে তার চরিত্রের ওপর দোষ দিয়ে, অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলবে আর আমি চুপচাপ মেনে নিব। তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে না করলে আমি তোমার নামে কেইস করব। জেলের ভিতর গিয়ে পরে ঐশিকে বিয়ে করো। 

আদিয়াত বাঁক হেসে বলে, কে জেলের ভিতর থাকবে আর কে বাইরে থাকবে তা তো সময়ই বলে দিবে।

মানে? 

মানেটা একটু পরেই জানতে পারবেন। আমি যাদের অপেক্ষা করছি তারা আসলেই আপনাকে মানের ম, ন সব বুঝিয়ে দিব। 

আপনাকে আমাদের জন্য আর অপেক্ষা করতে হবে না। আমরা অনেকক্ষণ আগেই এসেছি। ইনফ্যাক্ট আপনাদের সব কথাই আমরা শুনেছি। 

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জিয়ান কথাটা বলে। জিয়ানের সাথে সাফাত আর তার বাবাও আছে। আর একটু পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। নোমান আর বন্যা। পাঁচ জনই বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। আদিয়াত এবার বলে, 

মিস্টার হেলাল রহমান আপনাকে এখন মানে বুঝাব অতিত ঘেটে। তাহলে কী বলুন শুরু করা যাক? আপনার সব কুকর্ম পাস হবে। এতোদিন যে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে অভিনয় করছিলেন। আজকে সেই মুখোশ খুলে যাবে। বেরিয়ে আসবে আপনার আসল চেহেরা।। 

তাহসিন আহম্মেদ আদিয়াত উদ্দেশ্য করে বলে, ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে যা বলার সোজাসুজি বলে দাও। 

বলছি। এই হেলাল রহমান যাকে আপনারা পরম আত্নীয় ভাবেন। উনি আপনাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় শত্রু। উনার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে এ বাড়ির সমস্ত সম্পত্তি নিজের করে নেওয়া সেটা যেকোনো উপায়েই হোক। আপনার সাথ মহুয়া জাহানের বিয়ের পর থেকেই উনার নজর পড়ে এ বাড়ির টাকা-পয়সা আর ধন-সম্পদের ওপর। উনারও কিছু কম ছিল না আপনাদের থেকে। কিন্তু মানুষ জাতি হচ্ছে লোভী। কোনো কিছুতে সন্তুষ্ট হতে জানে না তারা। যত পায় আরও তত চায়। উনি প্লেন করেন এই সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার। কিন্তু কোনো ভাবেই উনি সফল হতে পারেন নাহ। কিন্তু উনার হাতে সুযোগ আপনা আপনি এসে ধরা দেয় তাহসিন আহম্মেদের এক্সিডেন্টে। আপনাদের আত্নীয় সজনের মাঝে হেলাল রহমানই একমাত্র জানতেন তাহসিন আহম্মেদের এক্সিডেন্টের ব্যাপারে। কারণ এক্সেডেন্টের কিছক্ষণ পরেই হেলাল রহমান উপস্থিত হয়ে সেই স্পটে। উনি আপনাকে পাননি ঠিকই কিন্তু আপনার ফোনটা ঠিকই পেয়েছিলেন। তিনি ঐ ফোনটা নিয়ে চলে যান এবং একদিন পর উনিই মিস মহুয়া জাহানকে মিস্টার তাহসিন আহম্মেদের ফোন থেকে মেসেজ দেন। মেসেজটা ছিল এমন। ''তুমি আমার সাথে সংসার করতে চাও না। কারণ আমি নাকি কোনোদিন ছেলে সন্তান জন্ম দিতে পারব না। তুমি এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলে সেই কবিরাজ নাকি তোমাকে বলেছে ছেলে সন্তানের মুখ দেখতে হলে দ্বিতীয় বিয়ে করতে হবে।''

হেলাল রহমান ভীতু গলায় বলে, মিথ্যে কথা। সব মিথ্যা কথা। আমি তো জানতামই না তাহসিনের এক্সিডেন্ট হইছে। তাহলে আমি ঐ জায়গায় উপস্থিত হব কী করে? তুমি কী ভাবছ তোমার এসব বানানো মিথ্যা কথা সবাই বিশ্বাস করছে। কেউ বিশ্বাস করছে না। তোমার কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই। 

আহ চুপ করুন তো। আগে আমার কথাটা শেষ করতে দিন। কথা শেষ হওয়ার পর আমার আপনার বিরুদ্ধে করা প্রত্যেকটা অভিযোগের প্রমাণ দিব। একটু প্রমাণ তো আপনি নিজেও করে দিচ্ছেন। সবাই জানে হেলান রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করলে উনি বাঘের মতো গর্জে ওঠে। আর আজকে আমি উনার বিরুদ্ধে এতগুলো অভিযোগ করছি আর উনি মিনমিনিয়ে কথা বলছেন। 

আদিয়াতের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় হেলাল রহমান। হেলাল রহমান বুঝতে পারছেন এই ছেলেটার নজর তীক্ষ্ণ। কোনো কিছুই আদিয়াতের নজর এড়ায়। উনি এটাও বুঝতে পেরেছেন আদিয়াত সামনে প্রত্যেকটা পা সাবধানে ফেলতে হবে। উনার একটা ভুল পদক্ষেপ উনাকে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম। আদিয়াত আবার বলতে শুরু করে,

উনি এতটুকু করেই ক্ষান্ত হননি। উনার প্লেন ছিল অমিতের সাথে কণা আর আভিয়ানের সাথে ছোঁয়ার বিয়ে দিবেন। অমিত একটু ফাজিল টাইপের হওয়ায় মহুয়া জাহান অমিতকে একটু অন্য রকম চোখে দেখতেন। ছোঁয়া আর জিয়ানকে ভীষণ ভালোবাসতেন মহুয়া জাহান। একটা ছেলের জন্য তাহসিন আহম্মেদ উনাকে ছেড়ে চলে গেছেন এটা মহুয়া জাহান মানতে পারেননি। উনার কণার প্রতি মনের ভিতর একটা সুপ্ত রাগ জন্মায়। আর সেই রাগটাই কাজে লাগান হেলাল রহমান। ক্রমাগত মহুয়া জাহানের মন কণার প্রতি বিষিয়ে দিতে থাকেন। আর মহুয়া জাহান কণার সাথে অমানবিক আচারণ করতে শুরু করেন। হেলাল রহমান আর রেশমি রহমান সব সময় কণার সামনে ভালো সাঁজার অভিনয় করতেন। 

আদিয়াত থামে আভিয়ান বলা শুরু করে, কণা বড় হতে থাকে অত্যাচার সহ্য করে। আর হেলাল রহমান প্লেন করতে থাকে অমিতের সাথে কণার বিয়ে দেওয়ার আর আমার সাথে ছোঁয়ার। উনার প্লেনটা আরও সহজ করে দেয় ছোঁয়া। আমাকে প্রোপোজ করে। কিন্তু আমি ছোঁয়াকে রিজেক্ট করে দেই। কারণ আমি ঐশিকে ভালোবাসতাম। ছোঁয়া আমাকে প্রোপোজ করার কিছুদিন পর আমার দেখা হয় আদিয়াত ভাইয়ার সাথে। ( আভিয়ান আদিয়াতের সাথে দেখা হওয়া থেকে পরিচয় হওয়া পর্যন্ত সমস্ত কথা খোলে বলে।) আমি আদিয়াত ভাইয়ার প্লেন মতো ছোঁয়ার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করার জন্য ছোঁয়াকে প্রোপোজ করি। 

ততদিনে ছোঁয়া তার মামাতো ভাইয়ের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। বাপ যেমন মেয়ে তো তেমনি হবে। ছোঁয়ারও প্রচুর লোভ টাকা পয়সার প্রতি। ছোঁয়া তার বাবার সমস্ত প্লেন জেনে ফেলেছিল ততদিনে। দুই বাপ মেয়ে মিলে নতুন করে প্লেন করে। ছোঁয়ার মামাতো ভাইও মোটামুটি বড় লোক ছিল। তাই হেলাল রহমান নতুন প্লেন করে। 
 

ততদিনে ছোঁয়া তার মামাতো ভাইয়ের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। বাপ যেমন মেয়ে তো তেমনি হবে। ছোঁয়ারও প্রচুর লোভ টাকা পয়সার প্রতি। ছোঁয়া তার বাবার সমস্ত প্লেন জেনে ফেলেছিল ততদিনে। দুই বাপ মেয়ে মিলে নতুন করে প্লেন করে। ছোঁয়ার মামাতো ভাইও মোটামুটি বড় লোক ছিল। তাই হেলাল রহমান নতুন প্লেন করে। আমার সাথে ছোঁয়ার নাম মাত্র বিয়ে দিয়ে। আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার সমস্ত সম্পত্তি উনার নাম করে নিয়ে। ছোঁয়ার সাথে তার মামাতো ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবেন। 

উনার প্লেন মতোই সবকিছু চলছিল। ছোঁয়া আমাকে খুশি রাখত ফোনে কথা বলে, সঙ্গ দিয়ে। আর ওর মামাতো ভাইকে খুশি রাখত আমার বলতেও লজ্জা লাগছে। এভাবেই চলতে থাকে দিন। হেলাল রহমানের প্লেনে জল ঢেলে দিয়ে ছোঁয়ার মামাতো ভাই ছোঁয়াকে ইউস করে টিস্যু পেপারের মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। যাকে সে ভালোবাসতো ছোঁয়ার সাথে যাস্ট টাইম পাস করতো। একজন হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ায় ছোঁয়া আমার পিছনে আটার মতো লেগে যায়। 

হেলাল রহমান কণার সাথে অমিতের বিয়ে দিবে বলে। অমিতকে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসতে বলে। অমিত দেশে আসতেই অমিতকে নিয়ে এই বাসায় আসে। এই প্লেনেও জল ঢেলে দিল উনার ছেলে। অমিতের খারাপ নজর পড়ে কণার ওপর। লালসার জেগে ওঠে। সুন্দরী মেয়ে দেখলে অমিত নিজেকে ঠিক রাখতে পারত না। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মি. খানের মেয়েকে টিজ করার দায়ে দুই মাস জেলে ছিল। পরে পুলিশকে টাকা খাইয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসে। কুত্তা তো কুত্তায়। মানুষ বলে না কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। তেমনি অমিত ভালো হওয়ার ছিল না। কণাকে রেপ করতে চায় কিন্তু আমার জন্য পারে না।
 

এবার আদিয়াত বলা শুরু করে, অমিতের মৃত্যুর জন্য মিস ছোঁয়া কণাকে দায়ী করে। উনার এটা মনে হয় যে, কণা অমিতকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে না দিলে অমিতের কিছু হত না। অমিত বেঁচে থাকত। তাই উনি উনার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সাথে মিলে প্লেন করেন কণাকে মেরে ফেলার। সেটা আভিয়ান জেনে যায়। জেনে যায় বলতে ছোঁয়ার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আভিয়ানকে বলে দেয় মিস ছোঁয়ার প্লেন সম্পর্কে। মিস ছোঁয়া প্লেন মোতাবেক ভার্সিটির ফাংশানের দিন কণার কাছে ক্ষমা চান এবং বলেন যে, উনার ক্যান্সার আর মাত্র পাঁচ মাস বাঁচবে। কণাও সরল মনে বিশ্বাস করে ফেলে। একবার যাচাই করে পর্যন্ত দেখে না। মিস ছোঁয়া কণার বোতলের পানিতে বিষ মিশিয়ে দেয় সুযোগ বুঝে। আভিয়ান সেটা জেনে যায়। কণা যখন পানি খেতে যায়। তখন আভিয়ান কণাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মারে। যার ফলে কণার হাত থেকে পানির বোতলটা নিচে পড়ে যায়। 

কণা ভাবে সেইদিনের ঘটনা। কণা করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হাতে থাকা পানির বোতলের ক্যাপটা খোলে যখনি পানি খেতে যাবে তখনি কেউ ধাক্কা মারে। ফলে কণার হাতে থাকা পানির বোতলটা নিচে পড়ে যায়। কণা রেগে মেগে সামনে তাকিয়ে দেখে আভিয়ান তার সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কণা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আভিয়ান তার ফ্রেন্ডদের নিয়ে কণাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আদিয়াতের কথায় কণার ভাবনায় ছেদ ঘটে। 

হেলাল রহমান নিজের প্লেন চেইন্জ করে। অমিত খুন হওয়ায় জিয়ানের সাথে কণার বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। জিয়ানকে সেই কথা বললে জিয়ান সাথে সাথে নাকোচ করে দেয়। কণাকে সে বোনের মতো দেখে। তার পক্ষে কণাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব না। হেলাল রহমান অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু জিয়ান উনার সিদ্ধান্তে অটুট। হেলাল রহমান কোনো দিশা না পেয়ে কণাকে খুন করার প্লেন করে। প্লেন অনুযায়ী ভার্সিটি থেকে ট্যুরে গেলে কণাকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় লোক দিয়ে।

মিস্টার হেলাল রহমান কথাগুলোর পক্ষে প্রমাণ দিতে বলছিলেন নাহ। এখনি সব প্রুফ করে দিব। মিস্টার আকবার। 

মিস্টার আকবর নামটা শুনেই হেলাল রহমান চমকে ওঠে। নামটা শোনার পর থেকে বুকের ভিতরে ভয় দলা পাকিয়ে গেছে উনার। একটু পরে মিস্টার আকবর বাসার ভিতর প্রবেশ করে। যাকে দেখে আৎকে ওঠে হেলাল রহমান। এই মিস্টার আকবরই যে তার সব চেয়ে কাছের বন্ধু। যার কাছে উনি উনার জীবনের সবকিছু শেয়ার করেন। মিস্টার আকবর উনার জীবনে এমন কোনো সিক্রেট নেই যেটা জানেন নাহ। হেলাল রহমান ভাবছেন মিস্টার আকবর এখানে কী করছেন? উনার সাথে কোনো ভাবে বেঈমানি করবেন না তো। 

মিস্টার আকবর চুপ করে না থেকে সমস্ত কিছু বলুন। আর আপনার পরিচয়টাও দেন। 

আমি মো.  আকবর। হেলাল রহমানের বন্ধু। হেলাল রহমানের সব কুকর্মের কথা আমি জানি আর তার প্রমাণও আমার কাছে আছে। আমি মিস্টার আদিয়াত আয়মানকে হেলাল রহমানের করা প্রত্যেকটা অন্যায় এবং প্লেন সম্পর্কে বলেছি। আর তার সমস্ত প্রমাণ আমার ফোনে আছে। মিস্টার আকবর উনার ফোনে কতগুলো ভিডিও চালু করেন। ভিডিওগুলো ছিল হেলাল রহমানের। যেখানে উনি উনার করা প্রত্যেকটা অন্যায়ের কথাটা স্বীকার করেছেন। 

হেলাল রহমান এসে মিস্টার আকবরের কলার চেপে ধরেন। চিৎকার করে বলেন, আকবর তুই আমার সাথে বেঈমানি করলি। তুই আমার বন্ধু হয়ে এটা করতে পারলি। 

মিস্টার আকবর নিজের কলার থেকে হেলাল রহমানের হাতটা ঝামটা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলেন, কীসের বন্ধুত্ব? তুই একদিন বলেছিলি, টাকার সামনে সমস্ত সম্পর্ক তুচ্ছ। তুই তোর রক্তের সাথে বেঈমানি করতে পারিস আর আমি করলেই দোষ? এই সত্যিগুলো স্বীকার করার জন্য মিস্টার আদিয়াত আয়মান আমাকে ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। 

কথাগুলো বলে মিস্টার আকবর চলে যান। আদিয়াত আবার আরেক জনকে ডেকে ওঠে, 

নীলা ভিতরে এসো। 

একটা মেয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। মেয়েটাকে দেখে ছোঁয়া চমকে ওঠে। কারণ এই সেই মেয়ে যাকে ছোঁয়া কণাকে খুন করার কথা বলেছিল। মেয়েটি ডানে বামে না তাকিয়ে সত্যিটা বলে চলে যায়। মেয়েটি চলে যেতেই একটা লোক আসে। লোকটাকে দেখে কণার কাছে বাঁশ গাছ মনে হচ্ছে। লোকটি এসে বলা শুরু করে, 

হেলাল রহমান আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন কণা ম্যাডামকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার জন্য। আমি উনার কথা মতোই ঐদিন কণা ম্যাডামকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। 

আদিয়াতের ফোন বেঁজে ওঠে। আদিয়াত ফোনটা রিসিভ করে। 

আপনারা চলে আসছেন? 

_____________

ভিতরে আসুন। 

আদিয়াত কথাটা বলার সাথে সাথেই কিছু পুলিশ বাড়িতে প্রবেশ করে। পুলিশকে দেখেই ছোঁয়া গিয়ে রেশমি রহমানের আঁচল ধরে উনার পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। রেশমি রহমান ছোঁয়ার হাত থেকে আঁচলটা ছাড়িয়ে দূরে সরে দাঁড়ান। ছোঁয়া বিস্মিত হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রেশমি রহমান ঘৃণিত দৃষ্টিতে উনার মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। রেশমি রহমানের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে এটা উনার মেয়ে। রেশমি রহমানের নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। উনি হেলাল রহমানের মতো একটা মানুষের সঙ্গ দিয়ে আসছেন, সংসার করেছেন। উনি জানতেন হেলাল রহমান সম্পত্তির লোভে কণাকে ছেলের বউ আর আভিয়ানকে মেয়ের জামাই করতে চান। কিন্তু জানতেন নাহ উনার স্বামী লোভে পড়ে এতো জঘন্য কাজ করেছেন। 

১০০

একটু আগেই ছোঁয়া, হেলাল রহমান আর ঐ ছেলেটাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। ছোঁয়া পুলিশের সাথে যাবে না বলে সেকি কান্না। কণার পায়ে পর্যন্ত পড়ে গেছিল। ছোঁয়ার কান্নায় কারো মন গলেনি। রেশমি রহমান এই বাসা থেকে বেরিয়ে যান।বেরিয়ে যাওয়ার আগে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে যান। রেশমি রহমানের পিছন পিছন জিয়ানও চলে যায়। উনারা চলে যেতেই তাহসিন আহম্মেদ নিজের রুমে চলে যান। কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসেন হাতে অনেকগুলো টাকা আর কিছু কাগজপত্র নিয়ে। মহুয়া জাহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, 

আমি তোমাকে ঠকাব না। তোমার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে বলে আমি তোমাকে তোমার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করব না। তুমি তোমার প্রাপ্য পাবে। বরং প্রাপ্য থেকে অনেক বেশিই পাবে। 

তাহসিন আহম্মেদ মহুয়া জাহানের হাতে টাকাগুলো আর কাগজ পত্রগুলো ধরিয়ে দিলেন। 

এখানে তোমার প্রাপ্য টাকা আছে। আর এই দলিলটা হচ্ছে আমার বনানির ফ্ল্যাটের। বনানির ফ্ল্যাটটা তোমার নামে লিখে দিয়েছি। এখন আমাদের জীবন আর আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। তোমাকে সব সময় দেখলে আমাদের পুরোনো গাঁ কখনো শুকাবে না। কণা তোমাকে দেখলে ওর প্রত্যেক মুহুর্তে মনে পড়বে ওর প্রতি করা অমানবিক আচারণের কথা। 



চলবে...



Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া






NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner