আমি তোমার মেয়ে না। যেদিন থেকে তুমি কণাকে নিজের কাছে মৃত মনে করেছ। সেদিন থেকে তোমার অহিও মারা গেছে। এখন যে অহি বেঁচে আছে তার সাথে তিশান আহম্মেদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই অহি না তিশান আহম্মেদের মেয়ে আর না তিশান আহম্মেদ অহির বাবা।
মেয়ের কথা শুনে থমকে যায় তিশান আহম্মেদ। অহির কথাগুলো উনার কলিজায় গিয়ে তীরের মতো বিধছে। মেয়ের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখে ভিতর থেকে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছেন তিশান আহম্মেদ। অহি আর তাহসিন আহম্মেদ চলে যায় বাসা থেকে। তিশান আহম্মেদ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অহি আর তাহসিন আহম্মেদের যাওয়ার দিকে। উনার মনে হচ্ছে উনার কলিজাটা কেউ নিয়ে যাচ্ছে। এতদিন পর উনার মেয়ে উনার কাছে ফিরে এসেছে। কিন্তু উনি একটু ভালো করে কথাও বলতে পারলেন নাহ।
তিশান আহম্মেদ মাথা নিচু করে রুমে চলে যান। আভিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিস বাঁজাতে বাঁজাতে চলে যায়। এমন একটা ভাব করে চলে গেলো যেনো এখানে কিছুই হয়নি। বা এখানে যা হলো তাতে তার কিছু আসে যায় না। আফিফা বেগম মহুয়ার জাহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে ড্রয়িংরুম ছেড়ে চলে যান। নিজের স্বামী আর মহুয়া জাহানকে দেখে এখন তার ঘৃণা হচ্ছে। উনাদের জন্যই আফিফা বেগম নিজের মেয়েকে কাছে পেয়েও পেল নাহ। মহুয়া জাহান এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
৮৯
জিয়ান একটা কফিশপে বসে আছে। তার সামনে বসে আছে একটা মেয়ে। মেয়েটা আর কেউ না তার প্রেয়সী। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে সে তার প্রেয়সীকে নিজের করে পেয়েছে। জিয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। চোখের পলক পড়ছে না। জিয়ানে এমন দৃষ্টিতে মেয়েটি লজ্জা পেয়ে লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেলে। জিয়ান মেয়েটির হাত মুঠোয় নিয়ে বলে,
এভাবে হেসো না গো প্রেয়সী বুকে বড় লাগে। ( বুকের বাম পাশে মেয়েটির হাত চেপে ধরে বলে)
নওমি তুমি নিজেও জানো না তুমি আমার জীবনে কী? তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। তুমিহীন একটা দিন কাটানোর কথাও আমি ভাবতে পারি না।
আমিও আপনাকে ছাড়া এক মুহূর্ত কাটানোর কথা ভাবতে পারি না। কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো?
কথা দিলাম এই হাত যে একবার ধরেছি মৃত্যুর আগে আর ছাড়ব না। তুমি জানো আমার সব আপনজন একে একে আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে আমার কাছ থেকে। প্রথম ভাইয়া আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলো। তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। তারপর কণা নিখোঁজ, অহি অসুস্থ। অহি সুস্থ হলেও কণার খোঁজ কেউ দিতে পারল না। হারিয়ে গেলো আমার বোন আমার বেষ্টফ্রেন্ড। আমার জীবন থেকে আমার একটা প্রিয় মানুষ হারিয়ে গেলো।
চিন্তা করবেন নাহ কণাকে ঠিক খোঁজে পাওয়া যাবে।
৯০
কণা বিছানায় শুয়ে ল্যাপটপে একটা বেবির ছবি দেখছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে। বেবির মায়াবী মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আদিয়াত এসে ধপাস করে কণার পাশে শুয়ে পড়ে। কণা একটু বিরক্ত হয়ে বলে,
আপনি ভূতের মতো এসে ধপাস ধুপাস করে শুয়ে পড়ো কেনো?
আই'ম দ্যা গ্রেইট আদিয়াত আয়মান তাই? এখন বলো তুমি এই কিউট বেবিটার ছবি দেখে হাসছো কেনো?
আমাদের এমন একটা কিউট বেবি হলে কেমন হবে?
পিচ্চির দেখা যায় আমার বাবুর আম্মু হবার খুব শখ। কিন্তু সরি ম্যাডাম আমি কোনো পিচ্চি কে দিয়ে আমার বেবি আনব না।
আমি পিচ্চি না ওকে। আমার বয়স ১৮ বছর ৯ মাস ৭ দিন। হুহ।
সে যাই হোক তোমার বয়স এখনো বিশ হয়নি। আর তোমার পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো বেবি নিবো না বুঝছ? তাই এসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে পড়াশোনা মনোযোগ দাও।
কথাগুলো বলে আদিয়াত টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আদিয়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কণা ভেংচি কেটে মুখ ভেঙিয়ে বলে,
সে যাই হোক তোমার বয়স এখনো বিশ হয়নি। আর তোমার পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো বেবি নিবো না বুঝছ? তাই এসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে পড়াশোনা মনোযোগ দাও। এ্যাহ শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা। বেবি হলে কী পড়াশোনা করা যাবে না। আমার তো এমন একটা কিউট বেবি চাই। ( ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে।) সময় মতো বিয়ে হলে তিন চারটা পিচ্চির আম্মু থাকতাম। আর আমাকে নাকি পিচ্চি বলে।
কণা ল্যাপটপ অফ করে দিয়ে রাহেলা বেগমের কাছে চলে যায়। কণা ঠিক করেছে আজকে উনার সাথেই থাকবে। আদিয়াতের সাথে থাকবে না। আদিয়াতকে বউলেস করে দিয়ে শাশুড়ী মায়ের সাথে ঘুমুবে সে।
_____________
আদিয়াত ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে কণাকে রুমে পায় না। আদিয়াত মুচকি হাসে। কারণ সে জানে কণা কোথায় আছে? তার পিচ্চি বউকে পিচ্চি বলায় রেগে গেছে। তাই রাগ করে তাকে বউলেস করে দিয়ে শাশুড়ী মায়ের সাথে ঘুমানোর জন্য চলে গেছে। আদিয়াত টাওয়াল দিয়ে মুখটা ভালো করে মুছে টাওয়ালটা বেলকনিতে রেখে তার মায়ের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
৯১
মামুনি আজকে আমি তোমার সাথে ঘুমাব।
কেনো আদিয়াতের সাথে ঝগড়া হইছে বুঝি?
তুর্ণর সাথে ঝগড়া করেই তোমার সাথে আমাকে থাকতে হবে? আমি এমনিতে তোমার সাথে থাকতে পারি না। আজকে আমার ইচ্ছে হইছে আমি আমার মামুনির সাথে ঘুমাব। তাই এসেছি। তোমার প্রবলেম হলে চলে যাচ্ছি।
এক থাপ্পড় খাবি। আমি কখন বললাম আমার প্রবলেম হবে। তুই আমার সাথে সারাজীবন থাকলেও আমার প্রবলেম নেই। আদিয়াতের সাথে ঝগড়া করেই তো তুই আমার সাথে থাকতে চাস। নাহলে তো ধরে বেঁধেও তোকে আমার সাথে রাখা যায় না। তুর্জয় তুমি আদিয়াতের সাথে গিয়ে শুয়ে পড়। আজকে আমরা দুই মা মেয়ে একসাথে ঘুমাব।
মাম্মা তোমরা তো ঘষেটি বেগমের মতো ষড়যন্ত্র শুরু করছ। ষড়যন্ত্র করে আমাকে আর পাপাকে বউলেস করে দিচ্ছ।
তুর্জয় আহম্মেদ একটু কেঁশে বলে, আরে বাপ আমারে টানস ক্যান? তুই বউ ছাড়া থাকতে পারিস না বললেই তো হয়।
তুমি তো খুব বউ ছাড়া থাকতে পারো। সারা রাত ছটফট করো। যাও একটু ঘুমাও আমার ঘুম হারাম করে দিয়ে। মাম্মা ভেবে আমাকে যেভাবে ঝাপটে জড়িয়ে ধরো। আমার ধম বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে যায়।
আদিয়াতের কথা শুনে তুর্জয় আহম্মেদের কাঁশি ওঠে যায়। কণা তুর্জয় আহম্মেদের দিকে পানি এগিয়ে দেয়। তুর্জয় আহম্মেদ ঢক ঢক করে পানিটা খেয়ে ফেলে। উনি ভেবে পাচ্ছেন নাহ তার ছেলে এমন নির্লজ্জ কী করে হলো? এই ছেলে আর কিছুক্ষন এখানে থাকলে নির্ঘাত তুর্জয় আহম্মেদ হার্ট এ্যাটাক করবেন। যেভাবে লাগামহীন কথা বার্তা বলে। আর কী কী যেনো বলে দেয় আল্লাহ মাবুদ জানে।
তুই তোর বউকে নিয়ে যা। তোর এসব কথা শুনে আমার প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে।
চলো ধূলিকণা।তোমার শ্বশুড় মশাই তার বউকে ছাড়া থাকতে পারে না। তাই তাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে না থেকে আমার সাথে চল।
আমি যাব না।
তোমাকে তো যেতেই হবে। আমরা নিউ ম্যারিড কাপল রোমান্সের একটা ব্যাপার স্যাপার আছে না।
আদিয়াত কণাকে তুলো নেয়। কণার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সে কল্পনাও করতে পারিনি আদিয়াত তার বাবা মার সামনে কোলে তুলে নিবে। কণা ছাড়া পাবার জন্য হাত পা ছুড়া শুরু করে। কণাকে রুমে এনে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
আমি অনেক নির্লজ্জ দেখছি। কিন্তু আপনার মতো দেখি নাই। উনাদের সামনে কোলে তুলে নিলেন। উনারা কী ভাবছেন বলুন তো? লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেলো।
আমি আগেও বলেছি আদিয়াত আয়মান একটাই। তাই তার কাজ কর্মের সাথে অন্য কারো মিল পাবে না। উনারা কিছুই ভাবছে না। উনারা জানেন উনাদের ছেলে বউ পাগল। বউ ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না।
লুচ্চা। ( বিড়বিড়য়ে)
ছিঃ নিজের হাজবেন্ডকে এসব বলতে নেই। যাকগে এসব আজেবাজে কথা বলে আমার রোমান্টিক মুডের বারটা বাঁজাতে চাই নাহ।
আদিয়াত কণার দিকে একটু এগিয়ে যেতেই কণা পিছিয়ে যায়। আদিয়াত আরেকটু এগিয়ে যায় কণা পিছাতে গিয়ে বিছানায় পড়ে যায়। আদিয়াক বাঁকা এসে কণার দিকে একটু ঝুঁকে যায়।
__________
আদিয়াত বিছানায় আধ শোয়া হয়ে শুয়ে আছে। আদিয়াতের বুকে মাথা রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কণা। আদিয়াতের চোখে ঘুম নেই। সে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভেবে চলেছে। হয়তো কোনো প্লেন সাজাতে ব্যস্ত।
আদিয়াত বিছানায় আধ শোয়া হয়ে শুয়ে আছে। আদিয়াতের বুকে মাথা রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কণা। আদিয়াতের চোখে ঘুম নেই। সে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভেবে চলেছে। হয়তো কোনো প্লেন সাজাতে ব্যস্ত। কিছু একটা ভেবে আদিয়াত বাঁকা হাসে। কিছুটা ভাবার অভিনয় করে বলে,
উমমম তুমি তো ফিরে যাবে সবার কাছে খুব তাড়াতাড়ি। কিন্তু আগের সেই তুমিটা আর থাকবে না। আমি তোমাকে শুধু বাহির থেকে নয় ভিতর থেকেও চেইন্জ করে দিব। যাকে দেখে সবার ছোট খাটো একটা হার্ট এ্যাটাক হলেও হতে পারে। তোমার ওপর করা অত্যাচারের প্রতিশোধ তো আমি একে একে নিব। কাউকে ছাড়ব না। সে তোমার মা হোক বা আংকেল।
আদিয়াত আয়মান মানুষকে শারীরিক কষ্ট দিয়ে নয় মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে মারে। মানসিক যন্ত্রণা বড়ই অদ্ভুত যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণা মানুষকে ভিতর থেকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে পারে। কারণ মানসিক যন্ত্রণা এমন এক যন্ত্রণা যা না পারে কারো কাছে প্রকাশ করতে আর না পারে নিজের মাঝে চেপে রাখতে।
আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি আমার প্রেয়সীকে নিয়ে সবার জীবন নরক করে দিতে। মিসেস মহুয়া জাহান উপস সরি মিস মহুয়া জাহান আর মিস্টার তিশান আহম্মেদ আপনাদের বোঝাব প্রিয়জনদের কাছ থেকে ঘৃণা আর অবহেলা পেলে ঠিক কতটা যন্ত্রণা হয় বুকের ভিতর।
৯২
আজকে অহি আর সাফাত ভার্সিটি যাচ্ছে। নোমান আর বন্যা জানে না যে অহি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এসেছে। সাফাত বলতে চেয়েছিল কিন্তু অহি মানা করে দেয়। অহি ওদের সারপ্রাইজ দিতে চাই।
অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই অহি আর সাফাত ভার্সিটি এসে পৌছায়। সাফাত গাড়ি পার্ক করে আসলে দুজন একসাথে ভার্সিটিতে ঢুকে। অহিকে দেখে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করে। অহি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লাইব্রেরীর দিকে চলে যায়। পিছন পিছন সাফাতও আসে। অহি লাইব্রেরীর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। অহি একদম ঠিক ধারণা করেছিল বন্যা আর নোমান লাইব্রেরীতে আছে। তাদের দুজনের মাঝে কিছু নিয়ে তুমুল ঝগড়া চলছে। অহি আর সাফাত দুজন পিছন থেকে গিয়ে বন্যা আর নোমানের চোখ ধরে ফেলে।
হুট করে এভাবে কেউ চোখ ধরায় বন্যা আর নোমান চমকে ওঠে। তারা ঝগড়া থামিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কে পিছন থেকে চোখ ধরছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না কে চোখ ধরেছে। তখন সাফাত আর অহি, নোমান আর বন্যার কানে কানে বলে,
বল তো আমি কে?
স্পর্শ চিনতে না পারলেও অহি আর সাফাতের কন্ঠ চিনতে তারা দুজন একদমই ভুল করে না। বন্যা আর নোমান তাদের চোখ ছাড়িয়ে পিছন ঘুরে অহি আর সাফাতকে জড়িয়ে ধরে।
তোরা কেমন আছিস?
আমরা ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস?
তোদের ছাড়া কেমনে ভালো থাকি? তোদের কতটা মিস করেছি বলে বুঝাতে পারব না।
তা তোরা কী নিয়ে ঝগড়া করছিস?
সাফাত ভাইয়া আমি বলছি।
না আমি বলছি।
৯৩
আদিয়াত যেখানে যাচ্ছে কণাও পিছন পিছন যাচ্ছে। আদিয়াতকে শান্তিতে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না। এক কথায় আদিয়াতকে কণা জ্বালিয়ে মারছে। কণা আইসক্রিম খেতে চায়। কিন্তু আদিয়াতের এক কথা এখন আইসক্রিম খাওয়া যাবে না। আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে। তাই আইসক্রিম খাওয়া যাবে না। কণা কণার কথায় অটুট। আদিয়াতও আদিয়াতের কথায় অটুট। আদিয়াত ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে পড়ে। কণা আদিয়াতের কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে নিজে ধপাস করে আদিয়াতের কোলে বসে পড়ে।
এসব কী হচ্ছে কণা?
কোথায় কী হচ্ছে? আমি তো জাস্ট আমার বরের কোলে বসলাম। এতেও আপনার সমস্যা? ( ঠোঁট উল্টে)
কোলে বসে আর কিস করো। কিছুতেই কিছু হবে না। আমি কোনো ভাবেই তোমাকে আইসক্রিম খেতে দিব না। আইসক্রিম খেলেই তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে। মনে নেই তোমার গত মাসে আইসক্রিম খেয়ে ঠান্ডা লাগিয়ে কী অবস্থা করেছিলে তুমি নিজের?
আপনি এমন কেনো? সারাদিন শুধু বকা বকি
আর বকা বকি। আর ভালো লাগে না। আমি আপনার একমাত্র কিউট পিচ্চি বউ। কোথায় আদর করে আইসক্রিম খাওয়াবেন তা না। সারাদিন শুধু ধমকা ধমকি।
আদর করে আইসক্রিম খাওয়াব কেনো? আদর করে মিষ্টি খাওয়াব। কী খাবে নাকি মিষ্টি?
অসভ্য।
অসভ্য যখন বললে অসভ্যের মতো তো কাজটা করতেই হয়। কি বল?
আদিয়াত কণার চুলের ভাজে আলতো করে হাত রেখে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। কণা চোখ বড় বড় করে আদিয়াতের দিকে তাকাই। এতে আদিয়াতের মাঝে কোনো হেলদুল নেই সে কণাতেই মত্ত্ব। বেশ কিছুক্ষণ পর আদিয়াত কণাকে ছেড়ে দেয়। কণা আদিয়াতের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। আদিয়াত কণা দৃষ্টিটাকে জাস্ট পাত্তা না দিয়ে হাত দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে,
টেস্টটা কিন্তু ধারুণ ছিল। এর থেকে বেস্ট মিষ্টি কিছু হতেই পারে না। এরকম মিষ্টি পেলে আইসক্রিম খাওয়ার দরকার আছে? ( চোখ টিপ দিয়ে )
বেয়াদপ ছেলে।
কথাটা বলে কণা আদিয়াতের কোল থেকে ওঠে চলে যায়। আদিয়াত কণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তার বউটা এখনো পিচ্চিই রয়ে গেলো।
________________
কণা রুম থেকে বের হয়ে দেখে রুমের সামনে করিডরে আরুহি দাঁড়িয়ে আছে। আরুহি কণাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কণা মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। সে এই মুহূর্তে এই মেয়েটাকে সহ্য করতে পারছে না। অপমান করে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পরেও বেহায়ার মতো আবার চলে আসছে। কণা চলে যেতে গিয়েও যায় না। দৌড়ে রুমে ঢুকে আরুহির মুখের ওপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। এদিকে আরুহি আহম্মকের মতো দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না কণা এমন বিহেভ কেনো করছে?
কণা বিড়বিড়য়ে বলে, নির্লজ্জ মেয়ে। লজ্জা করে না বিবাহিত পুরুষদের দিকে নজর দিতে। একে তুর্ণের আশেপাশেও ঘেষতে দেওয়া যাবে না। এসব মেয়েদের একদম বিশ্বাস নেই।
কণাকে বিড়বিড় করতে দেখে আদিয়াত বলে, ওখানে দাঁড়িয়ে কী বিড়বিড় করছো? চলে গিয়ে আবার দৌড়ে এসে দরজা কেনো বন্ধ করে দিলে? রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে নাকি?
আপনার রোমান্সের গোষ্ঠী কিলায়। আমি মরি আমার জ্বালায়। আর উনি আছেন রোমান্স নিয়ে।
কে আমার বউকে এতো জ্বালাচ্ছে? নামটা বলো শুধু ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিব।
ঘুষি মেরে আমার আপনার নাক ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। আপনাকে এতো সুন্দর হতে কে বলেছিল? সব মেয়েরা শুধু নজর দেয়। আপনাকে নিয়ে রাস্তা ঘাটে বের হওয়া যায় না। সব মেয়েরা শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে। আপনি বিবাহিত জেনেও আপনাকে নিয়ে টানাটানি করে।
আমার পিচ্চি বউটা বুঝি জেলাস?
হুহ খুব জেলাস ফিল হচ্ছে। ইচ্ছে করছে আপনাকে কালি লাগিয়ে কালো করে দেয়।
৯৪
কেটে গেছে আরো দুইটা মাস। সবাই সবার লাইফে হেপি। শুধু কষ্টে আছে মহুয়া জাহান আর তিশান আহম্মেদ। আফিফা বেগম রোজ নিজের মেয়ের সাথে কথা বলেন। তিশান আহম্মেদ কথা বলতে গেলেই অহি ফোন কেটে দেয়। অহি তার সিদ্ধান্তে অটুট।সে তিশান আহম্মেদ নামক কোনো ব্যক্তির সাথে কথা বলবে না। মহুয়া জাহান এখন সারাদিন রুমের এক কোণে পড়ে থাকেন। প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে একদমই বের হন নাহ। নিজের কাজের জন্য তিনি অনুতপ্ত। কিন্তু এখন অনুতপ্ত হয়ে তো লাভ নেই। সময় থাকতে সম্পর্কের মূল্য দেননি। তাই তো উনার সব প্রিয়জন উনার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। এখন তিনি কণার জন্য রোজ কাঁদেন। কাঁদলেও তো লাভ নেই কণা তো ফিরবে না। ফিরলেও আগের কণাকে হয়তো ফিরে পাবেন নাহ। যে উনার কাছ থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য উনার পিছু পিছু ঘুরতো।
আজ প্রায় ৫ মাস পর কণা তার নিজের বাড়িতে ফিরে আসছে। সাথে আদিয়াত আর তার বাবা মাও আছে। কণা এখনো আদিয়াতের বাবা মাকে ছেড়ে কোথাও যায় না। যেখানেই যায় উনাদের সাথেই নিয়ে যায়। আদিয়াত কণাদের বাসার সামনে গাড়িটা দাঁড় করায়। গাড়ি থেকে বের হয় কণা। বাড়িটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কণা চোখের কোণে অশ্রু বিন্দু ভিড় করছে।
কণা তাড়াতাড়ি করে অশ্রু কণা মুছে নেয়। চোখে সানগ্লাস পড়ে নেয়। কণা এখন আর তার চোখের জল কাউকে দেখায় না। যার তার জন্য চোখের জলও ফেলে না। কণাকে আদিয়াত বাইরে থেকে এবং ভিতর থেকে একজন কঠিন মানুষ তৈরি করে ফেলছে। কণা একটা হোয়াইট কালার গ্রাউন পড়ে আছে। গলায় একটা পেনডেইন্ট যেটাতে আদিয়াতের নাম খোদায় করে লেখা। হাতে একটা ডায়মন্ডের ব্রেসলেইট। কণা পোশাক আশাকে এখন আভিজাত্যের ছোঁয়া। আগের কণা আর এখনোর কণার মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। আগের সেই দয়ার সাগর কণা আর নেই।
কণা ধীর স্থিরে হেঁটে বাসার ভিতর প্রবেশ করে। কণা একবার বাসার ভিতরে চোখ বুলিয়ে নেয়। এতদিন পর নিজের মেয়েকে দেখে চোখ ছলছল করে ওঠে মহুয়া জাহানের। দৌড়ে এসে কণাকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কণা ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দেয় মহুয়া জাহানকে।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া