সারাজীবন তো একটা কাজের মেয়ের মতোই কণাকে ট্রিট করে গেলে। জীবনে তো কোনোদিন মায়ের মতো ভালোবাসনি। একা একাই বড় হয়েছে কণা। না পেয়েছে কোনোদিন মায়ের ভালোবাসা না পেয়েছে কোনদিন বাবার ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকেছে এক বাইরের মহিলার কাছে। সেই মহিলা চলে গেলে একা একাই থেকেছে।রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে কাঁদলেও তুমি কখনো দেখতে যাওনি। বাড়িতে চার চারটা গাড়ি থাকার পরও হেঁটে, রিকসায় বাসে করে ভার্সিটি গিয়েছে। এতগুলো কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও ছোট আম্মু তোমার জামা কাপড় কণাকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়েছ। রাতে তোমার জামা কাপড় ধুয়ে গোসল করে জ্বর বাধালেও তুমি কখনো দেখতে যাওনি। বরং সেই অসুস্থ মেয়েকে দিয়ে তোমার ভাইয়ের মেয়ের জন্য রান্না করিয়েছ। কাজের লোক না আসলে বাড়ির প্রতিটা কোণা কণাকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়েছ। এখন চোখ থেকে কুমিরের অশ্রু বের করছো। তুমি মা জাতির কলংক।পৃথিবীর কোনো সন্তানের যাতে তোমার মত মা না হয়। আর আব্বু আজকে তোমার চোখের কোণে পানি কেনো? আজকে তোমার আর ছোট আম্মুর তো খুশির দিন। তোমরা গিয়ে পার্টি করো। মেয়েটা তো তোমাদের কাছে টাকা পয়সা কিছু চাইতো না। শুধু মাত্র একটু ভালোবাসা চাইতো। ভালোবাসা তো অনেক দূরে থাক তোমরা তো কোনোদিন কণার সাথে ভালো ব্যবহারই করনি। কাজের লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেও কণার সাথে কোনোদিন করনি। আর আব্বু তোমার উচিত ছিল না কণাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা। যেহেতু তোমার ভাই নেই কণার বাবার দায়িত্বটা তো তোমারই নেওয়ার দরকার ছিল। কণার বাবার অভাব পুরণ, বাবার মতো ভালোবাসা। বাবার মতো ভালোবাসা তো অনেক দূরের কথা কোনোদিন জেঠুর মতোও ভালোবাসনি। কণার সাথে তো কোনোদিন কথাও বলনি। ভাইয়াকে বলেছ কণাকে বলতে কখন কোনোদিন ভার্সিটিতে যাতে তোমার বা ছোট আব্বুর পরিচয় মানে কণা যে এই বাড়ির মেয়ে সেই পরিচয় যাতে না দেয়।
হাত তালি দিতে দিতে একটা লোক বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। যাকে দেখে সবাই চমকে ওঠে। সবার চোখ ছলছল করে ওঠে। লোকটির চোখ দিয়েও অঝর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা।
বাহ বাহ আমার এত এত অর্থ সম্পদ থাকার পরেও আমার এক মাত্র মেয়েকে কাজের লোকদের মতো বড় হতে হয়েছে। আমার টাকা পয়সা দিয়ে ভোগ বিলাসীতা করছে অন্যরা। আয়েস করে জীবন কাটিয়েছে অন্যরা। তোমরা বোধ হয় আমাকে চিনতে পারছ না। ভিতরে অহংকার জমে গেলে কেউ আর কাউকে চিনতে পারে না। যাই হোক নিজের পরিচয় নিজেই দেই। আমি তাহসিন আহম্মেদ এই বাড়ির ছোট ছেলে।
অহি টলমল চোখে তাহসিন আহম্মেদের (কণার বাবা ) দিকে তাকায়। আস্তে বলে, ছোট আব্বু।
তুমি কে?
ছোট আব্বু আমি অহি।
তুই আমার অহি মা।
অহি দৌড়ে গিয়ে তাহসিন আহম্মেদকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দেয়।
ছোট আব্বু আজকে তোমাকে দেখে যে সব থেকে বেশি খুশি হতো আজ সেই নেই। জানো ছোট আব্বু কণা তোমার জন্য রোজ কাঁদত। কেঁদে কেঁদে বলত, বাবা দেখো তোমার মেয়ে কাঁদছে। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে তাই না? বাবা তুমি কেনো আমাকে একলা ফেলে চলে গেলে? কেনো আমার জীবনটা অন্ধকারে ভরিয়ে দিয়ে গেলে? ফিরে এসো না বাবা। শত অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করত। ওর মনে আশা ছিল একদিন তুমি ফিরে আসবে। তুমি এসে সব ঠিক করে দেবে। তারও একটা ছোট পরিবার হবে। দেখো কণার বিশ্বাস জিতে গেলো তুমি ফিরে এসেছ। কিন্তু আজকে কণায় নেই। হয়তো আমাদের কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। মেয়ে হওয়া কী দোষ? ছেলে মেয়ে দুজনকেই তো আল্লাহই সৃষ্টি করেছে তাই না?
মানে? মেয়ে হওয়া দোষের কেনো হবে?
তাহলে কণা হয়েছে বলে তুমি চলে গিয়েছিলে কেনো? ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি মেয়ে হয়েছে বলে তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেছো। তোমার চলে যাওয়ার পিছনে নাকি কণা দায়ি। ছোট আম্মু তার স্বামি হারিয়েছে কণার জন্য। আব্বু তার ভাই হারিয়েছে কণার জন্য। এ বাড়ির প্রত্যেকটা লোক কণাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিকভাবে অত্যাচার করেছে।
মেয়ে হয়েছে বলে আমি চলে গেছি তোকে কে বলেছে?
ছোট আম্মু, আব্বু বলেছে, নার্স যখন বলেছিল কংগ্রেস আপনার মেয়ে হয়েছে। তখন তুমি কণার মুখ না দেখেই দৌড়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এসেছিলে। আর হসপিটালে ফিরে যাওনি। এটার জন্যই সবাই কণাকে অবহেলা করেছে অত্যাচার করেছে।
( অহি তাহসিন আহম্মেদকে কণার সাথে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা খুলে বলে। কীভাবে সবাই কণাকে অপমান করেছে? সব খুলে বলে। )
তাহসিন আহম্মেদ কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু বাজ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
আমি কতটা হতভাগা নিজের মেয়ের সুখের কারণ তো হতেই পারলাম না। এতোবছর ধরে আমার জন্য আমার মেয়েটা কষ্টই পেয়ে গেলো। নিজেকে আজকে অক্ষম মনে হচ্ছে। আমার মতো বাবা যেনো পৃথিবীতে কোনো মেয়ের না হয়।
তাহসিন।
চুপ একদম চুপ। তোমার ঐ মুখে আমার নাম নিবে না। তোমাকে দেখে আমার ঘৃণা হচ্ছে। একটা মানুষ এতটা খারাপ কী করে হয়? মা নাকি মমতাময়ী হয় আর তুমি কাল নাগীন। মা নাকি সন্তানের জন্য সবকিছু করতে পারে আর তুমি? সারাজীবন শুধু নিজেরটাই বুঝে গেলে স্বার্থপর মহিলা কোথাকার? তোমার মুখটাও আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না। কণা তো তোমার মেয়ে ছিল ওর সাথে এতো অন্যায়, অত্যাচার কী করে করলে? তুমি কী সত্যিই মা হওয়ার যোগ্য? কণাকে চরিত্রহীন অপবাদ দিতেও পিছুপা হওনি। আই জাস্ট হেইট ইউ। হেইট ইউ।
তাহসিন ভাই আমার কথাটা শোন......
কী শুনব বলো? আর কী শোনার বাকি আছে? আর ভাই কাকে বলছো? আমি তো তোমার উপস সরি আপনার ভাই নাহ। কণা যদি আপনার ভাইয়ের মেয়ে না হয় তাহলে আমিও তো আপনার ভাই নাহ। আপনার ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। আর আমার মেয়ে এতো বছর ধরে অত্যাচারিত হলো। ঐদিন হাসপাতালে নার্স যখন আমাকে বলল আমার মেয়ে হয়েছে। তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল। আমি আগে মহুয়ার কোনো টেস্ট করায়নি। আল্লাহ যা দিবে তাতেই আমরা খুশি। তবু আমার একটা ইচ্ছে ছিল আমার যাতে একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান দেয়ে। আল্লাহ আমার সেই ইচ্ছে পুরণও করছিল। কিন্তু তাকে দেখার সৌভাগ্যটা আমার হয়নি। যখন কণার মুখ দেখতে যাব তখনি মনে পড়ে আমি স্বর্ণের লকেট নিয়ে আসিনি। তারাহুরা করে চলে আসাই ভুলে লকেটটা বাসায় ফেলে এসেছি। আমাদের বংশের একটা নিয়ম আছে খালি হাতে কন্যার সন্তানের মুখ দেখা যাবে না। তাই আমি ঐ লকেটটা আনার জন্যই কণার মুখ না দেখেই দৌড়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে আমার কাউকে বলে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত খুশিতে সেই কথাটাই আমি ভুলে গিয়েছিলাম। এটাই হয়তো আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিল।
অহি মা আমাকে এক গ্লাস পানি দিবি।
তাহসিন আহম্মেদ এই কথাটা বলার সাথে সাথেই মিতু দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দেয়। এক ঢোকে সম্পূর্ণ গ্লাস খালি করে ফেলে তাহসিন আহম্মেদ। এদিকে মহুয়া জাহানের চোখ দিয়ে বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আজকে তার চোখের পানি কেউ মুছে দিচ্ছে না। আজকে তার খুব মনে পড়ছে কণার কথা। তিনি যখন তিশান আহম্মেদের কথা মনে করে কাঁদতেন তখন কণা এসে চোখের পানি মুছে দিত। কিন্তু তখন তিনি ঝামটা মেরে কণার হাত সরিয়ে দিতেন। তিশান আহম্মেদ আবার বলা শুরু করে,
পার্কিং এড়িয়া থেকে গাড়ি বের করার কথাও বেমালুম ভুলে যায়। রাস্তায় এসে মনে পড়ে হসপিটালে তো গাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তখন উল্টে আর পার্কিং এড়িয়াতে যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই একটা রিকসা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই।আভিয়ানের স্কুলটা ছিল হসপিটাল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে। হুট করে আমার চোখ যায় রাস্তার পাশে। আভিয়ান রাস্তার কিনার ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে ছুটে আসছে তীব্র বেগে একটা ট্রাক।
পার্কিং এড়িয়া থেকে গাড়ি বের করার কথাও বেমালুম ভুলে যায়। রাস্তায় এসে মনে পড়ে হসপিটালে তো গাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তখন উল্টে আর পার্কিং এড়িয়াতে যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই একটা রিকসা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই।আভিয়ানের স্কুলটা ছিল হসপিটাল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে। হুট করে আমার চোখ যায় রাস্তার পাশে। আভিয়ান রাস্তার কিনার ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে ছুটে আসছে তীব্র বেগে একটা ট্রাক। আশেপাশে কোনো মানুষ ছিল না। আমি ছিলাম রাস্তার বিপরীত পাশে। আমি রিকশা থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে আভিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই। কিন্তু নিজে আর সরে যেতে পারিনি। ট্রাকটা আমাকে এতো জুড়ে ধাক্কা দেয় যে আমি ছিটকে গিয়ে রাস্তার অপর পাশে পড়ি।
তাহসিন আহম্মেদের গলা আটকে আসছে। কথা বলতে গিয়েও বার বার থেমে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আরেক গ্লাস পানি খেলে হয়তো ভালো লাগতো। কিন্তু এই বাসার পানি আর মুখে দিতে ইচ্ছে করছে না।
যখন চোখ খুলি নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। কিন্তু তখন আমার কিছু মনে ছিল না। পুরোনো কোনো কথা, আমার পরিচয়, আমার পরিবারের কথা। যারা আমাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল এতো বছর আমি তাদের সাথেই ছিলাম। আমি যখন নিজের পরিচয় বলতে পারছিলাম নাহ। কোনো স্মৃতিই মনে পড়ছিল না। তখন উনারা পত্রিকা বিঙ্গাপন দেন। কিন্তু আমার খোঁজে কেউ আসে না। তাই উনারা আমাকে নিজেদের সাথে নিয়ে চলে যায়। আমাকে যারা হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল। তারা অত্যন্ত ভদ্রলোক ছিলেন। এতো বছর ধরে উনারা আমাকে নিজের পরিবারে লোকের মতো ভালোবেসেছেন, আগলে রেখেছে।
মহুয়া জাহান চোখের জল মুছে বলে, তুমি হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একদিন পড়ে মেসেজ দিয়েছিলে যে, তুমি আমার সাথে সংসার করতে চাও না। কারণ আমি নাকি কোনোদিন ছেলে সন্তান জন্ম দিতে পারব না। তুমি এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলে সেই কবিরাজ নাকি তোমাকে বলেছে ছেলে সন্তানের মুখ দেখতে হলে দ্বিতীয় বিয়ে করতে হবে।
মহুয়া আর কত মিথ্যা নাটক করবে? কত মিথ্যা কথা বলবে? যেখানে এক্সিডেন্ট হওয়ার দুই দিন পর আমার ঙ্গান ফিরেছিল সেখানে আমি তোমাকে একদিন পরে মেসেজ কী করে দিবো? আর আমার তো কিছু মনেই ছিল না। কবিরাজের কথাটা টেনে এনে তুমি তোমার কথাটা যুক্তিহীন করে দিয়েছ। যারা আমাকে খুব কাছ থেকে চিনে সবাই জানে আমি কবিরাজে বিশ্বাসই নয়। এক কথায় আমি কবিরাজদের ঘৃণা করি। তার কারণটা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়। তোমার মতো ঘৃণ্য মহিলার সাথে আর যাই হোক আমার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। আজকেই আমি তোমাকে ডিবোর্স দিব।
তাহসিন আহম্মেদ কাকে যেনো একটা ফোন দেয়। ফোন করে বলে, এক ঘন্টার মাঝে ডিবোর্স পেপার রেডি করে বাসায় নিয়ে আসে। বাসার ঠিকানা বলে দেয়। মহুয়া জাহান শুধু নিরবে চোখের জল ফেলছে। তিনি জানেন তাহসিন আহম্মেদকে আটকানোর সাধ্য উনার নেই।
অহি মা আমাকে কণার একটা ছবি দেখাবি। সরাসরি আমার মেয়েকে দেখার ভাগ্য হয়তো আমার হবে না। কত ইচ্ছে ছিল আমার মেয়েকে আমি কোলে নিয়ে ঘুরবো। গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াব। কোলে নিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিব। সাইকেল চালানো শিখাব। আমি বাসায় দেরি করে আসলে সে অভিমানে গাল ফুলিয়ে রাখবে আমি চকলেট দিয়ে তার অভিমান ভাঙাব। আমার মেয়ে আমার হাত ধরে স্কুলে যাবে। সেই সব ইচ্ছে আমার আর পুরণ হলো না। হয়তো আমি কোনো পাপ করেছিলাম সেই পাপের শাস্তিই পেয়েছি। আমার পাপের শাস্তি হিসেবে আমার মেয়ের জীবনটাও তছনছ হয়ে গেলো। আমার সাথে দেখা না হোক আমার মেয়ে যেখানে আছে যেনো ভালো থাকে।
ছোট আব্বু তুমি আমার সাথে আসো। কণার রুমে গিয়ে আমি তোমাকে কণার ছবি দেখাচ্ছি।
মিতু এগিয়ে এসে বলে, অহি আফা কণা আফার ঘরে যায় লাভ নাই। এই কুটনি বেডি ( মহুয়া জাহানকে উদ্দেশ্য করে) আর ঐ বুইড়া বেডা ( তিশান আহম্মেদকে উদ্দেশ্য করে) দুই সয়তান মিলে......
মিতুকে থামিয়ে দিয়ে তিশান আহম্মেদ রেগে চিৎকার করে বলে, এই মেয়ে তোর সাহস হয় কী করে আমাদের এভাবে অপমান করার? বেশি কথা বললে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিব।
মিতু নিজের হাতের ঝাড়ুটা ছুড়ে মারে। ছাড়ুটা গিয়ে পড়ে তিশান আহম্মেদের পায়ের ওপর। তিশান আহম্মেদ জলন্ত অগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে ওঠে। মিতু তিশান আহম্মেদের রাগকে জাস্ট পাত্তা না দিয়ে বলে,
করুম না আইনেগোর মতো খারাপ মাইনষের বাড়িত কাম। গায়ে গতরে খাটতে পারলে কামের অভাব হইবো না। কাম থেকে ছাড়াইয়া দিবেন কী আমি নিজেই ছাইড়া দেম। তবু আজগা চুপ থাহুম না। হগলেই কণা আফা সাথে যেভাবে অমানুষের মতো আচারণ করছেন সব কমু। হেতারা দুইজন মিইল্লা কণার আফার জিনিস কণার আফার রুম থেইক্কা ফিইক্কা মাইরে ফেলে দিছে। আর কইছে, কণা আফা তাদের কাছে মরা। কণা নামে কাউরে তারা চিনে না। আভিয়ান দাদা বাবু সব নিয়া গিয়া নদীর পাড়ে আগুন ধরাইয়া দিয়ে ছাই নদীর পানিতে ফালাইয়া দিছে।
তাহসিন আহম্মেদ ঠাসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আভিয়ানের গালে। ড্রয়িংরুমে নিস্তব্ধতা। নিস্তব্ধতা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তাহসিন আহম্মেদের চিৎকারে সাথে কেঁপে ওঠে সবাই।
তোর জন্য এতো বছর ধরে আমি আমার পরিবার থেকে আমার মেয়ের থেকে দূরে ছিলাম। আর তুই আমার মেয়ের ওপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার করে গেলি। শুধু অত্যাচার করেই ক্ষান্ত হোসনি। ও নিখোঁজ হওয়ার পর ওর জিনিসগুলোও পুড়িয়ে ফেললি।
আভিয়ান একদম চুপ করে আছে কোনো কথাই বলছে না। তাহসিন আহম্মেদ যে তাকে থাপ্পড় মারল এতে তার কোনো হেলদুলই নেই। যে ছেলেকে কেউ কড়া গলায় কথা শুনালে তাকে থাপ্পড়ায়া আসত। আর আজকে সেই ছেলেকে থাপ্পড় মারার পরও সে নিশ্চুপ। সবাই অবাক হয়ে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আভিয়ানের মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই। একদম স্টিল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো তার বডিটাই এখানে প্রাণটা নেই
তাহসিন আহম্মেদ মহুয়া জাহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, তুই যদি মেয়ে না হতিস তাহলে ঠাসস ঠাসস করে দুইটা থাপ্পড় মেরে তোর গাল লাল করে দিতাম। নেহাত আমার মা মেয়েদের গায়ে হাত তুলার শিক্ষা দেয়নি। আর আপনি যদি আমার থেকে বয়সে বড়। আর আমার মায়ের পেটের ভাই না হতেন তাহলে আমি আপনাকে কী করতাম আমি নিজেও জানি না।
৮৮
তাহসিন আহম্মেদ সোফায় বসে আছে সাফাতের ফোনটা হাতে নিয়ে। ফোনের স্কিনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফোনে স্কিনে ভাসছে কণার হাসোজ্জ্বল একটা ছবি। তাহসিন আহম্মেদ কণার ছবিতে হাত বুলাছে। তাহসিন আহম্মেদের চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে ফোনের স্কিনে। কলিংবেল বেঁজে ওঠলো। মিতু গিয়ে দরজা খুলে দিতেই বাসার ভিতরে প্রবেশ উকিলের ড্রেস পড়ে একজন ভদ্রলোক। লোকটি তাহসিন আহম্মেদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
মি. চৌধুরী আপনার কথা মতো ডিবোর্স পেপার রেডি করে নিয়ে আসছি।
তাহসিন আহম্মেদ ডিবোর্স পেপারটা নিয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়াই সাইন করে দেয়। ডিবোর্স পেপারটা মহুয়া জাহানের দিকে এগিয়ে দেয়। মহুয়া জাহান নিতে না চাইলে তাহসিন আহম্মেদের ধমকে নিয়ে নেয়। উনিও সাইন করে দেয়। হয়তো অপরাধবোধ থেকেই।
আজকে থেকে তোমার সাথে আমার কোনো রকম কোনো সম্পর্ক নেই। না তুমি আমার স্ত্রী না আমি তোমার স্বামী। অহি মা আসিরে। ভালো থাকিস।
ছোট আব্বু তুমি কোথায় যাচ্ছো? তুমি তোমার বাসা ছেড়ে চলে যাবে।
কে বললো চলে যাবো? আমি আবার ফিরে আসবো কণাকে সাথে। কণাকে ছাড়া এই বাসায় থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে। কণাকে যেদিন খোঁজে পাবো সেদিন এই বাসায় আসবো। সেদিন কণা কাজের মেয়ে হয়ে নয় রাজকন্যা হয়ে তার রাজত্বে প্রবেশ করবে।
ছোট আব্বু আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে যাবে। এই অমানুষদের মাঝে থাকতে আমার একদমই ভালো লাগে। কণাকে ছাড়া আমারও এই বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসে। সাফাতের সাথে সাফাতের বাসায় যেতাম। কিন্তু বিয়ের আগে ঐ বাড়িতে যাওয়া তো ঠিক না।
তুই এতো হেজিটেড করছিস কেনো? তোকে আমার সাথেই নিয়ে যাবো। তুই তো আমার আরেক মেয়ে। এদের মাঝে তোকে আমি কিছুতেই রাখব না।
অহি কোথাও যাবে না। অহি আমার মেয়ে। অহি আমার সাথেই থাকবে।
আমি তোমার মেয়ে না। যেদিন থেকে তুমি কণাকে নিজের কাছে মৃত মনে করেছ। সেদিন থেকে তোমার অহিও মারা গেছে। এখন যে অহি বেঁচে আছে তার সাথে তিশান আহম্মেদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই অহি না তিশান আহম্মেদের মেয়ে আর না তিশান আহম্মেদ অহির বাবা।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া