এখানে তোমার প্রাপ্য টাকা আছে। আর এই দলিলটা হচ্ছে আমার বনানির ফ্ল্যাটের। বনানির ফ্ল্যাটটা তোমার নামে লিখে দিয়েছি। তোমার একাউন্টে প্রতি মাসে তোমার হাত খরচের টাকা চলে যাবে। এখন আমাদের জীবন আর আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। তোমাকে সব সময় দেখলে আমাদের পুরোনো গাঁ কখনো শুকাবে না। কণা তোমাকে দেখলে ওর প্রত্যেক মুহুর্তে মনে পড়বে ওর প্রতি করা অমানবিক আচারণের কথা। আমি চাই না আমার আর আমার মেয়ের জীবনে মহুয়া নামক কোনো কালো ছায়া পড়ুক। প্লিজ তুমি এ বাসা থেকে চলে যাও। আমাদের ভালো থাকতে দাও।
মহুয়া জাহান তাহসিন আহম্মেদের দিকে ছলছল চোখে তাকাই। কিন্তু তাহসিন আহম্মেদ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কণা মহুয়া জাহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
তুমি তো কোনো বাচ্চা ছিলে না যে যা বলবে তা শুনেই লাফাবে। অন্যের প্ররোচনায় নিজের বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলবে। অন্যের কথায় দিনের পর দিন আমার ওপর অত্যাচার করে গেছে। শারীরিক মানসিক কোনো ভাবেই অত্যাচার করতে বাধ যাওনি। আমার সামনে তুমি ছোঁয়াকে নিয়ে রং ঢং করতে। ছোঁয়াকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে। আমাকে তো কোনো দিন খাইয়ে দাওনি বরং গলায় খাবার আটকে গেলে তুমি পানি না দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে। আমার প্রিয় খেলনাগুলো কেড়ে নিয়ে ছোঁয়াকে দিয়ে দিতে। সেই সব কথা না হয় বাদই দিলাম। কারণ আমি জীবনে অনেক অপূর্ণতা নিয়ে বড় হয়েছি। তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। কারণ মায়ের মতো একটা শাশুড়ী মা পেয়েছি। মায়ের মতো কী বলছি? মামুনিই তো আমার মা। মায়ের ভালোবাসা দিয়েছে, আমার সব অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণ করেছে। তিন বেলা আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। আমার জন্য নিজের বোনের মেয়েকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আর তুমি চরিত্রহীনা তকমা আমার গায়ে লাগাতেও বাধ যাওনি। নিজের ভাইয়ের চরিত্রহীন ছেলের জন্য আমাকে প্রোস্টিটিউটের সাথে তুলনা করতে দুই বার ভাবনি। এতকিছুর পরও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিতাম। যদি তুমি মন থেকে ক্ষমা চাইতে।
কণা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, তুমিই তোমার ভাই আর ভাইয়ের মেয়ের মতন। তুমি আরাম আয়েশে ,ভোগ বিলাশে জীবন যাপন করতে চাও। তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া,আমাকে প্রতি তোমার ভালোবাসা, দরদ উতলে পড়া সব আব্বুকে দেখানোর জন্য। তুমি আব্বুকে দেখাতে চাও যে, তুমি ভুল বুঝে সত্যিই অনুতপ্ত। তাই সবকিছু ঠিক করে ফেলতে চাও। আসলে তা না তুমি সবকিছু করছ লোক দেখানোর জন্য আর আর আব্বুকে দেখানোর জন্য যদি আব্বু এসব দেখে গলে যায় আর ক্ষমা করে দেয়। তোমার আর নাটক করার দরকার নেই। তোমার আরাম আয়েশে থাকার ব্যবস্থা আব্বু করে দিয়েছে। এর পরেও যদি তোমার না হয় আমাকে বলো। আমি তোমার একাউন্টে প্রত্যেক মাসে মোটা একটা এমাউন্ট পাঠিয়ে দিব।
মহুয়া জাহান তাচ্ছিল্য সরে বলে, অন্যের টাকার ফুটানি আমাকে দেখাস।
তুমিও তো এতোদিন আমার আব্বুর টাকার আমাকে ফুটানি দেখাতে। আর অন্যের টাকায় না আমার নিজের হাজবেন্ডের টাকায় তোমাকে ফুটানি দেখাচ্ছি। তুর্ণের টাকা মানেই আমার টাকা। তোমাকে এসব বলে লাভ নেই। তোমার মতো নীচ মন মানসিকতার মানুষ এসব বুঝবে না। জানো আল্লাহর কাছে প্রতিদিন বলি তোমার মতো মা যেনো আল্লাহ আমার শত্রুকেও না দেয়। তোমাকে জঘন্য মা বলতে পারি না। কারণ তুমি আমাকে জন্ম দিয়েছ। প্লিজ তুমি এখান থেকে চলে যাও। আমাদের একটু মুক্তি দাও তুমি।
কথাগুলো বলে কণা চোখের পানি মুছতে মুছতে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
পত্রিকায় রোজ দেখতাম বাবার হাতে ছেলে / মেয়ে খুন। মায়ের হাতে ছেলে/মেয়ে খুন। টাকার লোভে মা মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে। মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করল ছেলেটি। মেয়ে হয়েছে বলে পরিবার সবাই মিলে মেয়েটার ওপর অত্যাচার করে। এমনি কি নিজের মাও বাধ যায়নি। এক সময় মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। সেই মেয়েটি রেপড। কিন্তু এসব দেখে আমার বিশ্বাস হত না। মা-বাবা ও এমন হতে পারে এটা বিশ্বাস হতো না। কিন্তু সেই প্রমাণ হিসেবে আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনাকে দেখেই বিশ্বাস হয়ে গেলো মা-বাবা ও এমন হতে পারে। কণা তো আপনার কাছে বেশি কিছু চাইতো না। একটু ভালোবাসা আর এটেনশন আশা করত আপনার কাছ থেকে। কিন্তু সেটা আপনি কখনো বোঝার চেষ্টা করেননি। হয়তো বোঝেও না বোঝার ভান করে থেকেছেন। একটা কথা হয়তো নিশ্চয়ই শুনেছেন রিভেঞ্জ অব নেচার। প্রকৃতির ঠিক প্রকৃতি নিয়মে বদলা নিবেই।
আদিয়াত কণার পিছু পিছু চলে যায়। আভিয়ান সুযোগ বুঝে কেটে পড়ে। ঐশি তাকে একা পেলেই গিলে খাবে। তাহসিন আহম্মেদও নিজের রুমে চলে যায়। মহুয়া জাহান নিঃশব্দে বাসা থেকে বের হয়ে যান। অহি আর আফিফা বেগম নোমান, বন্যা, সাফাত আর আনোয়ার চৌধুরীকে নিয়ে যান ওনাদের সাথে। আভিয়ানকে নিজের রুমে যেতে দেখে ঐশিও আভিয়ানের পিছু পিছু চলে যায়।
ড্রয়িংরুমের মাঝখানে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন তিশান আহম্মেদ। অনুশোচনার আগুনে উনার ভিতর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। উনি কী করে কণার কাছে ক্ষমা চাইবেন? সেই মুখ তো উনি রাখেননি। মহুয়া জাহানের সাথে তাল মিলিয়ে কণার ওপর কম
কম অন্যায় অবিচার তো করেননি। কণার সাথে ভালো করে দুটো কথা তো দূরে থাক কোনোদিন কথায় বলেননি। সত্যিটা জানার পরও খারাপ ব্যবহার করেছেন। তিশান আহম্মেদের নিজের কাছেই নিজেকে ছোট লাগছে। বড্ড আফসোস হচ্ছে উনার। এখন যদি আবার অতিতে ফিরে যেতে পারতেন। তাহলে উনি উনার করা প্রত্যেকটা ভুল শুধরে নিতেন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এটা একেবারেই অসম্ভব।
১০১
আভিয়ান নিজের রুমে ঢুকে দরজা অফ করতে যাবে তার আগেই ঐশি টুপ করে রুমে ঢুকে পড়ে। ঐশিকে দেখে আভিয়ান দুই পা পিছিয়ে যায়। ঐশি ঠাসস করে দরজাটা লক করে দেয়। দরজা বন্ধে শব্দ শুনে আভিয়ান লাফিয়ে ওঠে। আভিয়ানে আত্না কাঁপছে, বুক ধড়ফড় করছে। ঐশি আভিয়ানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঐশির মুখ থমথমে। চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে। আভিয়ান একটা ঢোক গিলে পিছিয়ে যাচ্ছে। আভিয়ান বেশি পিছনে যেতে পারে না। তার আগেই ঐশি কলার ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
ঐশি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, খুব সখ না তোর বিয়ে করার। আজকে তোর বিয়ে করার শখ বের করবো। বুঝাব তোকে কতো ধানে কত চাল হয়।
তুমি এসব কী বলছ? এটা তো আমাদের প্লেনের মাঝে ছিল। তুমি ভুলে গেছো? আমার আর ছোঁয়ার বিয়ের কথা চলতে থাকবে তখনি তুমি এন্ট্রি নিবা।
তাহলে তুই এভাবে ছোঁয়ার সাথে চিপকে ছিলি কেনো? এখন বল এটাও আমাদের প্লেনের মাঝে ছিল। খুব ভালো লাগে তাই না অন্য মেয়েদের সাথে চিপকে থাকতে। তাদের সাথে জড়াজড়ি করতে, চুম্মা চুম্মি করতে।
নাউযুবিল্লাহ তুমি এসব কী বলছো? এসব শোনাও পাপ। আমার মন, প্রাণ, কলিজা, লিভার, কিডনি সবকিছু জুড়ে শুধুই তুমি। আমি অন্য মেয়েদের সাথে কেনো চিপকে থাকব?
আমার সামনে এখন সাধু পুরুষ সাজা হচ্ছে তাই না? মেয়ে দেখলেই তো তোমার চুলকানি শুরু হয়ে যায়। কখন গিয়ে ফ্লাট করবে, চিপকে থাকবে।
আস্তাগফিরুলল্লাহ। তুমি আমার মতো ছেলের নামে এসব বাজে অপবাদ দিতে পার না। আমি কতো ভদ্র ছেলে জানো? সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ছোঁয়াকে কেনোদিন ছুঁয়েও দেখেনি। বরং ও জড়িয়ে ধরলে আমি এক ঘন্টা ধরে শাওয়ার নিছি।
আভিয়ানের কথা শেষ হতে না হতেই ঐশি এক প্রকার ঝাপিয়ে পড়ে আভিয়ানের ওপর। ঐশি আভিয়ানের ঘাড় জুরে কামড় দিয়ে ধরে। আভিয়ান হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমন আকস্মিক আক্রমনে তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
১০২
আদিয়াতের বুকে মাথা রেখে হেঁচকি তুলে কাঁদছে কণা। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে আদিয়াতের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। রুমের আসার পর থেকেই কণা কেঁদেই চলেছে। কোনো থামাথামি নেই ননস্টপ কান্না কাটি। আদিয়াতও বাধা দেয় না। কাঁদলে মানুষের মন হালকা হয়। বুকের ওপর পাথর নেমে যায়। হয়তো এটাই কণার শেষ কান্না।
তুর্ণ আমার জীবনটা কেনো এমন হলো? আর চার পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো আমার জীবন কেনো হলো না? আর চার পাঁচটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো কেনো বেড়ে ওঠলাম না আমি? কেনো সবার মতো আমার শৈশব কাল কাটলো না? মা নাকি মমতাময়ী। সন্তানের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দেয়। সন্তানের ভালোর জন্য নিজের প্রাণও দিয়ে দিতে পারে? তাহলে আমার মা কেনো এমন হলো? কেনো আমার জন্মের পরে আমার বাবা হারিয়ে গেলো?
কণার এতো এতো প্রশ্নের উত্তর আদিয়াতের কাছে একটাই সেটা হলো জানি না। আদিয়াতের কাছে কণার কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই। সবকিছু হয়ে আল্লাহর ইচ্ছায়। তিনিই জানেন কণার সাথে কেনো এমন হলো? আদিয়াত একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
কণার এতো এতো প্রশ্নের উত্তর আদিয়াতের কাছে একটাই সেটা হলো জানি না। আদিয়াতের কাছে কণার কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই। সবকিছু হয়ে আল্লাহর ইচ্ছায়। তিনিই জানেন কণার সাথে কেনো এমন হলো? আদিয়াত একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
কণার কষ্ট কমানোর ক্ষমতা যদি আদিয়াতের কাছে থাকত। তাহলে আদিয়াত নিজের জীবন দিয়ে হলেও কণার কষ্ট লাগব করত। কিন্তু সেই ক্ষমতা তো আদিয়াতের নেই। সে চাইলেও কণার শৈশব কাল ফিরিয়ে দিতে পারবে না। পারবে না সে কণার স্মৃতি থেকে তার কষ্টের দিনগুলো মুছে দিতে।
১০৩
ভার্সিটির ক্যান্টিনের বসে আছে কণা, অহি, বন্যা, নোমান, সাফাত, আভিয়ান আর ঐশি। আদিয়াত কণা, অহি, আভিয়ান আর ঐশিকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিয়ে অফিসে চলে গেছে। ঐশি বাসায় একা থেকে বোর হয়ে যাবে। তাই
ওদের সাথে চলে আসছে। সবার মন মেজাজ ফুরফুরে থাকলেও কণার মুড অফ। বন্যা কণার মুড ঠিক করার জন্য বলে,
ছোঁয়া তো দুইদিন পরে নামকরা গায়কা হয়ে যাবে। আমি জাস্ট কল্পনা করছি আমি ছোঁয়ার কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
অহি বন্যার পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে, ছোঁয়া জেলে বসে থেকে নামকরা সিঙ্গার হয়ে যাবে। ফাজলামো করস?
ফাইজলামি না সত্যি। ছ্যাকা খেয়ে সবাই এখন সিঙ্গার হয়ে যায়। ছোঁয়া তো দুই দুইটা ছেলের কাছ থেকে ছ্যাঁকা খায়ছে। ছোঁয়া জেলে বসে গান গায়ছে।
আভিয়ান আভিয়ান আভিয়ান আমায় ব্যথা দিয়াছে,
মনের মাঝে আভিয়ানের নাকি অন্য কেউ আছে।
ওরে আভিয়ান আভিয়ান আভিয়ান আমায়
ধোকা দিয়াছে,
মনের মাঝে আভিয়ানের নাকি অন্য কেউ আছে।
মনের মাঝে আভিয়ানের নাকি অন্য কেউ আছে।
তাইতো তারে ভুলতে আমি নেশার নৌকা বায়,
প্রতি রাইতে নেশার নৌকায় জেলের ভিতর যায়।
বন্যা গানটা শেষ করে বলে, হেই গাইস আমার গানটা কেমন ছিল?
সাফাত আর আভিয়ান চিৎকার করে বলে, অসাধারণ ছিল ভাবি।
আভিয়ান আর সাফাত ভাবি ডাকায় বন্যা লজ্জায় লাল, নীল হয়ে যাচ্ছিল। যেনো পৃথিবীর সমস্ত লজ্জা এসে তাকে গ্রাস করছে। কিন্তু পরমুহূর্তেই নোমানের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। চোখ দিয়ে যেনো আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। যেনো নোমানকে ধ্বংস করে দিবে।
আরে আমি তো বুঝতেই পারেনি এই গানটা ছোঁয়া গায়ছিলো নাকি বন্যা। গান গাওয়ার সময় তোমাকে পুরাই ছোঁয়া ছোঁয়া লাগছিলো।
কথাটাই বলে নোমান মাথা চুলকায়। সে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে। এখন বন্যা যে তার মাথার চুল একটাও আস্ত রাখবে না সেটা নোমান ভালো করেই জানে। বন্যা নোমানের চুল ধরে টানতে থাকে আর এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আর সবাই ওদের মারামারি দেখে হাসছে। যাকে বলে ফ্রীতে বিনোদন নিচ্ছে।
কণার ফোন বেঁজে ওঠে। সবার দৃষ্টি এখন কণার দিকে। নোমান আর বন্যাও মারামারি থামিয়ে কণার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই ভাবছে আদিয়াত ফোন দিছে। অহি ঠাট্টা করে বলে,
আহা কণার প্রতি জিজুর কি ভালবাসা। কণাকে ছাড়া এক সেকেন্ডও থাকতে পারে না। ট্রুরু লাভ।
কণা কিছু না বলে সবার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে। সবার দিকে ফোনটা ঘুরিয়ে নামটা দেখায়।
দেখ তোদের জিজুর ভালোবাসা। অফিসে গেলে বউকে ভুলে যায়। আমার এখন তুর্ণের অফিস যাওয়া একদম সহ্য হয় না। অফিসের প্রতি আমার সতীন সতীন ফিলিংস আসে।
ফোনের স্কিনে জিয়ানের নামটা দেখে সবার মুখ চুপসে যায়। সবাই ভাবলো আদিয়াত ফোন দিছে। আর এ নিয়ে কণার সাথে সবাই ফাজলামো করবে। কিন্তু তাদের সেই আশায় জল ঢেলে দিল জিয়ান। কণা সবার দিকে একবার তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।
হ্যালো!
হ্যালো! কণা তোরা সবাই কী একসাথে আছিস?
হ্যাঁ। আমরা সবাই একসাথে। কিন্তু কেনো?
তোদের সবাইকে আমার খুব প্রয়োজন।
কী হয়ছে ভাইয়া? কারো কোনো বিপদ হয়ছে? মামির কিছু হয়ছে?
ফোনে বলা পসিবল না। তোরা সবাই আমার সাথে দেখা কর।
তুমি কোথায়? আমাদের এড্রেস বলো। আমরা সবাই আসছি।
............................
আচ্ছা। তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আসার চেষ্টা করছি।
ওকে তাড়াতাড়ি আয়।
কণা ফোনটা কান থেকে নামাতেই দেখে কয়েক জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার চোখেই কৌতূহল।
আমাদের সবাইকে এখন এই এড্রেসে ( .............. ) যেতে হবে। আমাদের জন্য জিয়ান ভাইয়া অপেক্ষা করছে। আমার মনে হচ্ছে জিয়ান ভাইয়া কোনো বিপদে পড়ছে।
সাফাত তাড়া দিয়ে বলে, এখানে বসে থাকলে তো আমরা কিছু জানতে পারব না। জানার জন্য জিয়ানের সাথে দেখা করতে হবে। এখন বসে না থেকে সবাই চল।
১০৪
গাড়ি এসে থামে একটা কাজি অফিসের সামনে। আমরা কাজি অফিসের নামটা দেখে অবাক হয়ে যায়। সবার মনে একটাই প্রশ্ন জিয়ান কাজি অফিসের সামনে কী করছে? আমাদের আরো অবাক করে দিয়ে নওমি আপু বধু বেশে জিয়ান ভাইয়ার সাথে এসে দাঁড়ায়। আমরা এক প্রকার লাফিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। এক প্রকার ছুটে গিয়ে জিয়ান ভাইয়ার সামনে দাঁড়ায়।
তোমরা কাজি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আর নওমি আপু তুমি এমন বউ সেজে আছো?
নওমিকে তার বাবা জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল একটা মাতাল, বদমাইস, বখাটে ছেলের সাথে। তাই নওমি বাসা থেকে পালিয়ে আসছে। আর আমরা এখন বিয়ে করব। আর সাক্ষী দিবা তোমরা।
ওকে। চল।
তারপর সবাই মিলে কাজি অফিসের ভিতরে ঢুকে। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। অবশেষে নওমি আর জিয়ান বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সুখে, দুঃখে সারাজীবন দুজন দুজনের পাশে থাকার শপথ করে। জিয়ান আর নওমির বিয়ে শেষ হতেই সাফাত অহিকে অনুরোধ সুরে বলে,
চল না আমরাও বিয়ে করে ফেলি।
চল করে ফেলি। বাসার কাউকে এ বিয়ে ব্যাপার এখন কিছু বলব না। তুমি প্রতিষ্ঠিত হলে পরে বলব।
ওকে।
আভিয়ান আর ঐশি দুজন একসাথে বলে আমরাও বিয়ে করব।
নোমান আর বন্যা বলে, আমরা দুজনও আছি।
কণা বলে, আমি বাদ যাব কেনো? আমিও আবার বিয়ে করব।
কণার কথা শুনে সবাই কণার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাই। সবার তাকানো দেখে কণা সবার চোখের ভাষা বুঝে ফেলে।
আরে তোমরা ভুল বুঝছো। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করব না। আমি তো তুর্ণকেই বিয়ে করব।
তোদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে আবার বিয়ে করতে চাইছিস কেনো?
একবার বিয়ে হয়ছে তো কী হয়ছে? আমি আর তুর্ণ আবার বিয়ে করব। এখানে গণ বিবাহ হচ্ছে আর আমি আর তুর্ণ সেই গণ বিবাহে অংশগ্রহণ করব না। তা কী করে হয়?
কণার নিজেপ ফোনটা বের করে আদিয়াতকে কল করে। একবার রিং হয়ে কেটে যায়। আদিয়াত ফোন রিসিভ করে না। দুই বারের মাথায় আদিয়াত ফোন ধরে। ফোন ধরেই কণাকে কিছু বলতে না দিয়েই আদিয়াত নিজেই বলতে শুরু করে,
সরি সরি ধূলিকণা।আমি ড্রাইভ করছিলাম তাই ফোন রিসিভ করতে লেইট হয়ে গেছে। প্লিজ রাগ করো না।
আরে নাহ আমি রাগ করি নাই। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
আমি তোমাকে ভার্সিটি থেকে আনতে যাচ্ছি। তারপর দুজন মিলে ঘুরতে যাব।
ঘুরাঘুরি ক্যান্সেল। আপনি এখনি কাজি অফিসে আসুন।
কাজি অফিসে কেনো আসব?
আমরা দুজন বিয়ে করব তাই।
মানে?
কণা আদিয়াতকে সবটা খোলে বলে। সবটা শুনে আদিয়াত বাঁকা হেসে বলে,
আমার বিয়ে করতে কোনো অসুবিধা নেই তোমাকে। নতুন করে বিয়ে হবে আমাদের। নতুন করে বাসর ঘর সাজানো হবে আমাদের। তারপর বাসর হবে আমাদের। আমি তোমাকে অনেক আ........
আদিয়াতকে কথা শেষ করতে না দিয়ে কণা ফোন কেটে দেয়। আদিয়াতের এমন লাগামহীন কথা শুনে লজ্জায় কণার গাল লাল হয়ে যাচ্ছিল, কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মাঝেই আদিয়াত এসে উপস্থিত হয় কাজি অফিসে। তারপর এক এক করে সবার বিয়ে পড়ানো শুরু করা হয়।
১০৫
পাঁচ বছর পর
ভালোবাসার মানুষটির
চোখের দিকে তাকালে
পুরো পৃথিবী দেখা যায়
সেই ভালোবাসা চলে গেলে
গোটা পৃথিবী আঁধারে ঢেকে যায়
তুমি আমার পৃথিবীটা আধারে ঢেকে দিলে। আমার পৃথিবীর কোথাও আলো নেই।
আমার স্বপ্ন গুলোতে দেয়ালে জমে থাকা শেওলার মত শেওলা পরে গেছে।
সেই শেওলা পরিষ্কার করে নতুন করে স্বপ্ন দেখানোর মতো কেউ নেই। তুমি তো খুৃব ভালো আছো আমাকে ছেড়ে তাই না? কিন্তু আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া। আমি পারিনি তোমাকে ভুলে অন্য কারো হতে। আমি শুধু তোমারই আছি। #তুমি_আমার_প্রেয়সী ছিলে আছো থাকবে।
তোমাকে একদিন বলেছিলাম, তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্তও থাকতে পারি না। দম বন্ধ হয়ে আসে। তখন তুমি বলেছিলে, আমি মারা গেলে কী করবে? তখন আমি বলেছিলাম, যেদিন তুমি এই পৃথিবীতে থাকবে না সেদিন আমিও থাকব না। আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচতে পারব না। সেদিন তুমি আলতো হেসে বলেছিলে, কেউ কারো জন্য মারা যায় না। এটা জাস্ট তার মনের কল্পনা। একদিন তুমিও আমাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে যাবে। দেখো আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া