এই মেসেজটা দেখে কণার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে। ছেলেটিকে কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কণার কোনো গালি মনে পড়ছে না। এখন কণার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেনো যে বন্যার কাছ থেকে কিছু গালি শিখে রাখলো না। মানুষ বলে, জীবনে সবকিছু শিখে রাখতে হয়। কারণ সময় মতো সবকিছু কাজে লাগে।
বন্যার কাছ থেকে গালি শিখে রাখলে তো এখন ঐ বজ্জাত ছেলেরে গালিগুলো দিতে পারতো। কণার এসব চিন্তা ভাবনার মাঝে আমার মেসেজ আসে।
কী গো হবে না আমার গার্লফ্রেন্ড? তুমি আমাকে সব সময় সময় দিবে। আমার সাথে ফোনে কথা বলবে। আমার সাথে ঘুরাঘুরি করবে। আর আমার বউ সারাদিন বাসায় থাকবে আমাদের মাঝে কোনোদিন ইন্টারফেয়ার করতে আসবে না। আচ্ছা যাও বেশি দিন না মাত্র ২ মাসের জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড হও।
এবার কণার কান্না আসছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। তখনি কণার ফোন বেজে ওঠলো। কণা ফোনের দিকে না তাকিয়েই কলটা রিসিভ করলো।
কী হবে না আমার গার্লফ্রেন্ড? আমার সাথে কথা বলার জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর সেখানে আমি নিজে থেকে তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অফার দিচ্ছি। ভাবতে পারছো তুমি কত লাকি?
লোকটার কন্ঠ শুনেই কণা হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়। কণার কান্নার শব্দ শুনে লোকটার বুকের ভিতর মোচর দিয়ে ওঠে। সে হয়তো ভাবেনি কণা এভাবে কেঁদে দিবে।
আপনি খুব খারাপ। আপনি আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছেন। যেই আপনাকে ভালো লাগতে শুরু করলো অমনি আপনিও আপনার রূপ পাল্টে ফেললেন। সবাই এক। সবাই শুধু আমাকে কষ্ট দিতে জানে। আপনিও আমাকে কষ্ট দিলেন। আমি ভেবেছিলাম আপনি অন্যদের থেকে আলাদা কিন্তু না আপনিও সবার মতো। ফোন দিবেন নাহ আপনি আর আমাকে।
কান্না করতে করতে কথাগুলো বললো কণা। কান্না করার জন্য কণার কথা বার বার জড়িয়ে যাচ্ছিলো। ওপাশ থেকে ব্যস্ত কন্ঠে বলে,
ধূলিকণা কান্না থামাও। বাবুইপাখি আমার প্লিজ কান্না থামাও। আমি তো জাস্ট মজা করে কথাগুলো বলেছি। আমি ভাবিনি তুমি কথাগুলো সিরিয়াসলি নিয়ে নিবে আর এভাবে কেঁদে দিবে। আই'ম সরি বাবুইপাখি।
বদ লোক শুধু আমাকে কষ্ট দেওয়ার ধান্ধা তাই না? আমি আর আপনার সাথে কথা বলবো না। আপনি যদি আমাকে আরেক বার ফোন দিছেন তো আপনার খবর আছে। আপনার সাথে আড়ি। ( নাক টেনে টেনে )
কণার এমন নাক টেনে টেনে বাচ্চাদের মতো কথা শুনে হেসে দেয় ওপাশের লোকটি। লোকটির হাসির শব্দ শুনে কণা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
আরেকবার হাসলে আমি আপনার দাঁত ভেঙে ফেলবো। আমি কাঁদছি আর আপনি হাসছেন
পঁচা লোক আপনার সাথে কথা নাই। আমাকে আর একদম ফোন দিবেন নাহ।
আচ্ছা যাও আর ফোন দিবো নাহ যদি তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।
আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।
যতক্ষণ না প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছো ততক্ষণ আমি ফোন দিতেই থাকবো।
আপনি তো আমাকে ফোন দিতেই পারবেন নাহ। কারণ আমি ফোন বন্ধ করে রাখবো।
তুমি ফোন বন্ধ করে রাখলে আমি তোমার বাসায় চলে যাবো।
তাতে আমার কী?
তোমারই তো সব। তোমার কী মনে হয় আমি ভীতু প্রেমিকদের মতো পাইপ বেয়ে বেলকনি দিয়ে তোমার রুমে যাবো? তাহলে একদমই ভুল ভাবছো। আমি এরকম কিছু করবো না। আমি তোমাদের বাসার মেইন ডোর দিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করবো আর সবাইকে বলবো আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড। তুমি আমার সাথে রাগ করে আমার ফোন ধরছো না। তাই
বাসায় চলে এসেছি।
আপনি খুব ডেন্জারাস লোক। আপনার আশেপাশে থাকায় বিপদজনক। এখন তাড়াতাড়ি বলুন আপনার কী প্রশ্ন করার আছে আমাকে? প্রশ্ন উত্তর দেওয়ার পরে আপনি আর কোনোদিন আমাকে ফোন দিবেন নাহ।
''ঐ পোলা তোর লজ্জা করে না ঘরে বউ রেখে আমার সাথে লুতুপুতু করতে চাইছিস।'' তুমি এই কথাটা কেনো বলেছিলে।
আপনার জন্যই তো বলেছি। আপনি একটা লুচ্চা ব্যাটা। বিশ্ব বিখ্যাত লুচ্চা।
আমি লুচ্চা। কিছু না করেও এতো ভয়ানক একটা উপাধি পায়ে গেলাম। তাও আবার বিশ্ব বিখ্যাত লুচ্চার উপাধি। তা ম্যাডাম আপনার কোন দিকে আমাকে লুচ্চা মনে হয় বা আমি আপনার সাথে অসভ্যতামি করেছি?
অসভ্যতামি তো করেছেনই। আমার কপালে কিস করেছেন। আবার বলেছেন, ''আমার দ্বিতীয় কিসটা তোমার নামে করে দিলাম।''
তো ম্যাডামের রাগটা এখানে। ওহ না এটা রাগ না জেলাসি। আমার তো নিজেকে ভাগ্যমান মনে হচ্ছে আমার ধূলিকণা আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করছে। আমার ধূলিকণা আমার মতো তুমিও প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে।
একদমই না।
একদমই হ্যাঁ। প্রেমে পড়লে মানুষ বোকা হয়ে যায়। আর তুমিও বোকা হয়ে গেছো। সামান্য একটা কথার মানে বুঝতে পারোনি। আমার সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা আমার মায়ের। আমার মা না থাকলে হয় তো আমি নামক ব্যক্তিটির কোনো অস্তিত্বই থাকতো না।
কণার আর বুঝতে বাকি থাকে না। কেনো লোকটি বলেছিল, ''আমার দ্বিতীয় কিসটা তোমার নামে করে দিলাম।'' তাই কণা লজ্জায় কথা বলার মাঝখানে ফট করে ফোন কেটে দেয়। সে কতকিছু ভাবছিলো লোকটি সম্পর্কে। এখন তার লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।
কণা ফোনটা বুকের সাথে চেপে ধরে আকাশের দিকে তাকায়। অবশেষে তারও নিজের কেউ হলো একান্ত নিজের। যে শুধু তাকেই ভালোবাসে।
৪৭
সাফাত ভাইয়ার দুইটা চোখ
যেনো দুই নালা বন্দুক
গুল্লি মাইরা ভাঙলো
অহির মনেরই সিন্দুক রে
মনেরই সিন্দুক।
আমি অহির কাধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে গানের লাইনগুলো গাইছি।
উফ কণা থামবি।
কেনো?
আমি লজ্জা পাচ্ছি।
আপনি এতো লজ্জা কেনো পাচ্ছেন?
কণা বেশি বেশি কিন্তু হয়ে যাচ্ছে।
বেশি বেশি কোথায় হলো? তোদের জন্য এতকিছু করলাম। আর তুই এটা বলছিস না সাফাত ভাইয়া তোকে কেমনে প্রোপোজ করছে।
আমি তোকে বলেছিলাম এতকিছু করতে। তোরা এমন প্লেন করলি যে, আমি শুধু একটুর জন্য হার্ট এ্যাটাক করি নাই।
আচ্ছা শুন নাহ। সাফাত ভাইয়া কী তোকে এভাবে ( অহিকে পিছন জড়িয়ে ধরে বললাম ) জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলেছিল অহি বেবি আমি তোমাকে ভালোবাসি। নাকি ঠোঁটে ঠাস করে চুমু খেয়ে বলেছিল, আমার ফিউচার বেবিদের আম্মু আমি তোমাকে ভালোবাসি।
অহি লজ্জা পেয়ে নিজেকে আমার থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। আমি রেডি হয়ে নিলাম ভার্সিটি যাওয়ার জন্য।
৪৮
অতি মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছি না। না না মনোযোগী হওয়ার ভান করছি। আমরা তো ক্লাসে বসে আড্ডা মারছি। কারণ এই স্যারের ক্লাসটা একদমই ভালো লাগে না। এক লাইন বোঝায় আর বলে ঠিক আছে। যেটা একদমই বিরক্তিকর। এই স্যারের ক্লাস কোনোদিন মনোযোগ দিয়ে করছি নাকি বলে মনে পড়ে না।
আমি, অহি আর বন্যা যখন আমাদের কথা বলায় ব্যস্ত তখন আমাদের ক্লাসে কিছু টিচারসহ সিনিয়র সিটিজেনরা প্রবেশ করেন। মানে ভার্সিটির সিনিয়র স্টুডেন্টরা। এক স্যার আমাদের উদ্দেশ্যে বলে,
ডিয়ার স্টুডেন্ট আমাদের ভার্সিটিতে ২৬ তারিখ একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। যেটা প্রত্যেক বছরই হয়। এই অনুষ্ঠানে অন্য ভার্সিটির স্টুডেন্টরাও আসবে। চিপ গেস্ট হিসেবে আসবে বিজন্যাসম্যান আদিয়াত আয়মান। তিনি এই প্রথম আমাদের ভার্সিটিতে আসছেন। তাই আমরা চাই আমাদের বেস্টটা দিতে। তোমরা যে যেটাতে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। সেটার নাম লিখিয়ে আসবে সিনিয়রদের কাছে। আর হ্যাঁ ড্রেস কোড ঠিক করে দিবে সিনিয়ররা।
কথাগুলো বলে স্যার সিনিয়রদের নিয়ে চলে যায়। স্যার চলে যেতেই বন্যা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
২৬ তারিখ হতে আর তিন দিন বাকি। আর তিন দিন পরে আমি আমার ক্রাশকে সরাসরি দেখতে পাবো।
তোর তো কতো ক্রাশই আছে। তুই কাকে দেখার কথা বলছিস?
আদিয়াত আয়মানকে। উনি দেখতে কি হ্যান্ডসাম আর হট। কিন্তু মেয়েদের একদমই সহ্য করতে পারে না।
ব্যাটা মনে হয় ছ্যাকা খাইছিলো তাই মেয়েদের সহ্য করতে পারে না।
৪৯
আমি আর অহি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছি। দুজন রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি করছি। আমি হর হর মুভি দেখবো। কিন্তু অহি দেখবে না কারণ সে ভয়। হঠাৎ একটা নিউস দেখে আমি আর অহি থামকে যাই। আমার হাত থেকে রিমোট পড়ে যায়। অহি চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।
আমি আর অহি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছি। দুজন রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি করছি। আমি হর হর মুভি দেখবো। কিন্তু অহি দেখবে না কারণ সে ভয়। হঠাৎ একটা নিউস দেখে আমি আর অহি থামকে যাই। আমার হাত থেকে রিমোট পড়ে যায়। অহি চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।
অহির চিৎকার শুনে ইতিমধ্যে সবাই ড্রয়িংরুমে এসে উপস্থিত হয়েছে। টিভিতে চলা নিউসটা দেখে সবাই থমকে যায়। মহুয়া জাহান চিৎকার দিয়ে নিচে বসে পড়ে। সব চ্যানেলেই একই নিউস।
ডক্টর হেলাল রহমানের ছেলে অমিত রহমানের ডেড বডি পাওয়া গেছে রাস্তার পাশে। কে বা কারা যেনো অমিত রহমানকে নিঃসংশ ভাবে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গেছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে যে অমিত রহমানকে নিজের ফুফাতো বোনকে রেপ করার চেষ্টা করাই পুলিশ এরেস্ট করে। ঐদিন রাতেই জেল থেকে পালিয়ে যায় অমিত রহমান। আরো জানা গেছে যে অমিত রহমান এর আগে ৬ টা মেয়েকে রেপ করেছে আর ৫ টা মেয়েকে রেপ করার চেষ্টা করেছিল। উপযুক্ত প্রমানের অভাবে আর ক্ষমতার জুড়ে সব কেইস ধামা চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন অমিত রহমান।
অমিত ভাইয়ার বডির অবস্থা ভয়ংকর। খুব কাছের মানুষ ছাড়া বলতে পারবে না যে এটা অমিত ভাইয়া। সারা শরীর এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। কপালের ওপর বড় বড় করে লিখা আমি অমিত রহমান। আমি একজন ধর্ষক।
আমি নিজেকে সামলে নেই। এখন অহির সেন্স ফিরিয়ে এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে। এসবে অহির ফোবিয়া আছে। আমি আভিয়ান ভাইয়াকে বললাম অহিকে নিয়ে অহির রুমে যেতে। আভিয়ান ভাইয়া অহিকে কোলে নিয়ে অহির রুমে চলে যায়। আম্মু নিচে বসে চিৎকার করে কাঁদছে।
আমি মারা গেলেও কী আম্মু এভাবে কাঁদবে? নিজের ভাবনায় নিজেরই হাসি পাচ্ছে। আম্মু তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না। আমি মারা গেলে কাঁদার পরিবর্তে খুশি হবে।
৫০
বিছানায় আধ শোয়া হয়ে হুমায়ুন আহম্মেদের বৃষ্টি বিলাস উপন্যাসটি পড়ছিলাম। হুট করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। বৃষ্টি দেখে খুশিতে আমার মন নেচে ওঠলো। আজকে নিজেকে হার্টলেস মানুষ মনে হচ্ছে। এতো বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো আমাদের বাসায় তার কোনো প্রভাবই পড়লো না আমার ওপর। বরং অন্যদিনের তুলনায় আজকে আমার মনটা বেশি ফুরফুরে। যারা অমিত ভাইয়াকে এভাবে মেরেছে তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। অমিতের মতো একটা জানোয়ারকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে বলে।
আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল সাদা শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজার। ইচ্ছেটা আর পুরণ করা হয়নি। আমি ডিসাইড করেছি এখন থেকে আমার মন যা চায় আমি তাই করবো। কাবার্ড থেকে একটা সাদা শাড়ি বের করে পড়ে নিলাম। দুই হাত ভর্তি নীল রঙের কাচের চুড়ি পড়ে নিলাম। খোপা করা চুলগুলো খোলে দিলাম। পায়ে আলতা পড়লাম।
ড্রেসিংটেবিলের ওপর থেকে নুপুর জোড়া হাতে নিলাম। ভাবছি এখানে পড়বো নাকি ছাদে গিয়ে নুপুড় পড়বো । নুপুড়ের শব্দ শুনলে বড় আম্মু বুজে যাবে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছি। তাহলে আর আমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দিবে না। কারণ বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার কান ব্যথা শুরু হয়ে যায়। নুপুড় জোড়া হাতে নিয়ে পা টিপে টিপে ছাদে চলে গেলাম। রেলিংয়ের ওপর বসে নুপুড় পায়ে পড়ে নিলাম।
আমাদের ছাদে অনেক ধরনের ফুল গাছ আছে। আমি সাদা রঙের গোলাপ ফুল নিয়ে কানে গুজে নিলাম। তারপর চোখ বন্ধ করে দুই হাত প্রসারিত করে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পড়ে কাধে কারো হাত স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। চোখ খুলে তাড়াতাড়ি পিছন ঘুরে তাকাই। আমার পিছনে অহি দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে ভয় পেতে দেখে অহি খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।
ঐ মাইয়া তোরে আমি কতদিন না করছি হুট হাট করে আমাকে পিছন থেকে ধরবি না।
তুই না করলেই আমাকে শুনতে হবে। আমি এখন থেকে প্রত্যেকদিন হুট হাট করে পিছন থেকে তোকে জড়িয়ে ধরবো। তোকে চিমটি কাটবো।
অহি কথা বলছে আর আমি এক দৃষ্টিতে অহির দিকে তাকিয়ে আছি। আমি ভ্রু কুচকে অহির দিকে তাকিয়ে অহিকে প্রশ্ন করি।
তুই এমন সাদা পেত্নী সেজে ছাদে আসছিস কেনো?
তুই যে কারণে আসছিস আমিও সেই কারণে আসছি।
আসবি ভালো কথা। তাহলে আমি যেভাবে সেজেছি তুই সেম টু সেম এমন করে সেজেছিস কেনো?
আমার ইচ্ছে করছে তাই।
তোর ইচ্ছে করলেই হবে। আমি তোর নামে মামলা করবো।
মামলা পড়ে করিস এখন বৃষ্টি উপভোগ কর। বৃষ্টি থেমে গেলে পড়ে আবার আফসোস করতে হবে।
আমিও আর কিছু না বলে অহির সাথে তাল মিলিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পরে,
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমার চোখ যায় ছাদের দরজার দিকে। সাফাত ভাইয়া ছাদের দরজার। প্রথমে সাফাত ভাইয়াকে দেখে অবাক হয়ে গেলেও। পরক্ষণেই মনে পড়ে সাফাত ভাইয়া হয়তো আভিয়ান ভাইয়ার সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে ডিসকাস করতে আসছে।
সাফাত ভাইয়া একদৃষ্টিতে অহির দিকে তাকিয়ে এক পা এক পা করে ছাদের ভিতরে প্রবেশ করছে। সাফাত ভাইয়া এখনো আমাকে খেয়াল করেনি। আমি চুপি চুপি ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলাম।
সাফাত একেবারে অহির পিছনে এসে দাঁড়ায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। অহির সাদা শাড়িতে বৃষ্টির পানিতে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। সাফাত পিছন থেকে অহিকে জড়িয়ে ধরে। অহি চমকে চোখ খুলে ফেলে।
কণা এটা কিন্তু ঠিক না। একটু আগে তুই আমাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে দিলি তোকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরছি বলে। এখন তুই নিজেও এরই কাজ করলি।
সাফাত কিছু না বলে এক হাত দিয়ে অহির কাধ থেকে চুল সরিয়ে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় অহির কাধে। নিজের কাধে পুরুষালি ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে ওঠে অহি। অহি বুঝতে পারে এটা কণা না বরং তার ভালোবালা। অহি নিজের পেটের ওপর থাকা সাফাতের হাতটা খামছে ধরে।
আভিয়ান সাফাতকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদের দরজার কাছে চলে আসে। ছাদে এসে অহিকে আর সাফাতকে এভাবে দেখে নিচে চলে যায়। যতই হোক বড় ভাই বলে কথা। নিজের বোনের রোমান্স টাইমে গিয়ে পড়ে নিজেরই লজ্জায় পড়তে হবে।
সাফাত অহিকে নিজের দিকে ঘুরায়। অহিকে কিছু বলতে না দিয়ে মুহুর্তের মাঝেই দুজনের অধর জোড়া এক করে দেয়।
৫১
আভিয়ান আমার ....... হাচ্চু ...... আমার ক .... হাচ্চু।
ভাই আমার তুই আর কথা বলিস না। তোর কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে এবার শহিদ হয়ে যাবো। তোকে কে বলেছিলো বৃষ্টিতে ভিজে আমার বোনের সাথে রোমান্স করতে। তুই জানিস না বৃষ্টির ফোটা গায়ে পড়লেই তোর ঠান্ডা লেগে যায়। আর আজকে তো তুই পাক্কা আধ ঘন্টা ভিজছিস। নে বুঝ এবার আমার বোনের সাথে রোমান্স করার মজা।
তুই কী করে জানলি আমি তোর বোনের সাথে রোমান্স করছিলাম? তার মানে তুই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলি? ছিঃ ছিঃ আভিয়ান তোর লজ্জা করার দরকার। লুকিয়ে লুকিয়ে ছোট বোনের সাথে তার হবু জামাইয়ের রোমান্স দেখিস।
খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে রোমান্স করলো লুকিয়ে লুকিয়ে রোমান্স দেখার প্রয়োজন পড়ে না। তোরা হয়তো ছাদটাকে নিজেদের বেডরুম ভাবছিলি। ভাগ্যিস বড়রা কেউ ছাদে যায়নি।
নিচ থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে না।
হুম।
নিচে আবার কী হলো?
আমি কী করে বলবো? তুইও যেখানে আমিও সেখানে। চল নিচে গিয়ে দেখি।
হুম চল।
______________
সাফাত আর আভিয়ান নিচে এসে দেখে। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছোঁয়া, মহুয়া জাহান, রেশমি রহমান বিলাপ করছে। হেলাল রহমান কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছেনা । আর তার পাশে গম্ভীর মুখে বসে আছেন তিশান আহম্মেদ। হেলাল রহমান ছোঁয়া, মহুয়া জাহান আর রেশমি রহমানকে ধমক দিয়ে বলেন,
থামবে তোমরা। তোমাদের কান্নার আওয়াজে এখন আমি হার্ট এ্যাটাক করবো। মরছে তো মরছে সাথে আমার সব মান সম্মান ডুবিয়ে দিয়ে গেছে।
হেলাল রহমানের কথায় রেশমি রহমান তেঁতে ওঠে বলেন,
সবাই তো আর তোমার মতো পাষাণ নাহ। তোমার ছেলেকে যে কেউ খুন করেছে সেদিকে তোমার কোনো হেলদুল আছে তুমি পড়ে আছো মান সম্মান নিয়ে।
হেলাল রহমান চিৎকার করে বলে,
তোমার ঐ বদমাইস ছেলের জন্য তোমাদের মতো কেঁদে কেঁদে বন্যা বানাবো। যে হেলাল রহমান সবার কাছে ন্যায়ের প্রতীক ছিল। সেই হেলাল রহমানকে দেখে মানুষ থুতু মারে। চিন্তা করতে পারছো তোমার ছেলে আমার পজিশন কোথায় নামিয়েছে।
মেইন ডোর দিয়ে বাসায় প্রবেশ করতে করতে একটা ছেলে বলে,
এখন চিন্তা করে কী করবে? যখন চিন্তা করার দরকার ছিল তখন তোমরা চিন্তা করো নাই। আমার কথাটা তোমরা কানে তুলো নাই। অমিতের এই অবস্থা আর তোমাদের এই অবস্থার জন্য শুধু মাত্র তোমরা দায়ি।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া