তিশান ভাই এখানে কিন্তু আসছে কেনো? এখানে চেনা জানার তো কিছু নেই। আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। আমার মেয়েকে আপনারা ছোটবেলা থেকে দেখছেন আমারও আপনার ছেলেকে ছোটবেলা থেকে দেখছি। আর ওরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে। তাই এখানে কিন্তুর প্রশ্নই আসে না। আমি চাচ্ছিলাম আগামী শুক্রবার ওদের চার হাত এক করে দিতে।
আভিয়ান ঝটকা মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় মহুয়া জাহানের হাত থেকে। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে,
আপনার কী কমনন্সেস নেই? বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুদ্ধি কী হাঁটুর নিচে চলে গেছে? আমাদের ফেমিলির এই অবস্থা আপনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন। আপনার কী মনে হয় এখানে কারো বিয়ে নিয়ে মাতামাতি করার মন আছে? আগামী শুক্রবার কেনো আরো ১০০ টা শুক্রবার আসলেও আমি বিয়ে করব না। যে পর্যন্ত না অহি সুস্থ হয়ে যায়। আপনার মেয়েকে বিয়ে দেবার যদি এতো তাড়া থাকে। তাহলে আপনার মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিন। আমার কিংবা আমার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই।
কথাগুলো বলে আভিয়ান এক মুহূর্ত দেড়ি না করে সোফা থেকে ওঠে পড়ে। ধুপ ধাপ পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠতে থাকে। ছোঁয়া আভিয়ানের পিছনে যেতে নিলে আভিয়ান দাঁড়িয়ে পড়ে। আভিয়ান পিছনে না ঘুরেই বলে,
আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চায়। আমার রুমে ইনফ্যাক্ট আমার রুমের আশেপাশেও যেনো কেউ না আসে।
আভিয়ান পুনরায় সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়। ছোঁয়া, হেলাল রহমান আর রেশমি রহমান অবাক চোখে আভিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তিশান আহম্মেদ সোফা থেকে ওঠে নিজের রুমে চলে যায়। মহুয়া জাহান হেলাল রহমানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
ভাইয়া উনাদের কথায় কিছু মনে কর না। বাসার পরিস্থিতি তো বুঝতেই পারছ। কারো মন মানসিকতায় ভালো নেই। আভিয়ান অহিকে ভীষণ ভালোবাসে তাই তোমার সাথে এমন বিহেভ করে ফেলছে। আর তোমারও এই সময় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা ঠিক হয়নি।
৭৭
বন্যা ভার্সিটির ক্যান্টিনে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। তার মন ভালো নেই। আজকে যদি অহি, কণা আর সাফাত থাকত তাহলে এতক্ষণ ক্যান্টিন মাতিয়ে রাখত হৈ হৈ করে। এসব ভেবেই বন্যার কান্না পাচ্ছে। আজ কতগুলো দিন হলো কারো সাথে কারো দেখা হয় না, কথা হয় না। বন্যা তার ফোনে পাঁচজনের একটা গ্রুপ ফটো বের করে। ছবিটা তারা নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে তুলেছিল। সাফাত অহির চুল টেনে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অহি চোখ মুখ কুচকে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কণা নোমানের চুল ধরে টানছে। আর তাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বন্যা মুহূর্তটাকে ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে। বন্যা কণার হাসি মুখের ছবিটাতে হাত বুলিয়ে বলে,
কণা তুই কোথায়? আমাদের রেখে কোথায় হারিয়ে গেলি? আমাদের কথা কী তোর মনে পড়ে না? তুই তো বলেছিলি কখনো আমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাবি নাহ। তাহলে আজকে কোথায় হারিয়ে গেলি। তুই কী জানিস অহির কথা?
বন্যার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে ফোনের স্কিনে। নোমান তার একটা হাত বন্যার থুতনির কাছে রাখে। বন্যার চোখের পানিগুলো নোমানের হাতের তালুতে পড়ে। নোমান আরেক হাত বাড়িয়ে বন্যার চোখের পানিগুলো মুছে দেয়।
আমার বন্যা রাণীর চোখের পানিগুলো এত সস্তা হয়ে গেলো। যে এখন আর আগমন বার্তা না পাঠিয়ে হুট হাট চলে আসে।
বন্যা অশ্রু সিক্ত চোখে নোমানের দিকে তাকায়। অন্য সময় হলে হয়তো নোমানের কথা শুনে হেসে দিত।
ডোন্ট ক্রাই। অশ্রু সিক্ত নয়নে তোমাকে মানায় নাহ। তোমাকে ক্রোধান্বিত নয়নে মানায়। আর আমার বন্যা তো স্ট্রং গাল। তাই না?
নোমান সব আবার আগের মত কবে ঠিক হয়ে যাবে? কবে কণা ফিরে আসবে? কবে অহি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসবে। আমার পাঁচজন একসাথে কবে এই ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিব? বল না?
সব ঠিক হয়ে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে। কণাকে তো খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। খুব তাড়াতাড়ি কণাকে খোঁজে পাব আর খুব তাড়াতাড়ি অহিও সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসবে। ( আশ্বস্ত ভরা কন্ঠে বলে)
নোমান বন্যাকে মিথ্যা বলে শান্তনা দিলেও। নিজে শান্ত হতে পারছে না। কী করে পারবে? আজকে কতগুলো দিন হয়ে গেলো কণার কোনো খোঁজ নেই। অহির শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি।
৭৮
আদিয়াতকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে কণা। জানালা দিয়ে সুর্যের আলো এসে কণার চোখ মুখে আছড়ে পড়ছে। সূর্যের আলো থেকে বাঁচার জন্য কণা আদিয়াতের বুকে মুখ লুকায়। আদিয়াতও কণাকে ভালো করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। কিন্তু কণার ঘুম বেশিক্ষণ স্থির হলো না। শুয়া থেকে লাফ মেরে ওঠে বসে পড়ল। সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায় আদিয়াতের। কণা নড়াচড়া করার ফলে তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল অনেক আগেই। যাতে কণার ঘুম ভেঙে না যায় তার জন্যই শুয়ে ছিল।
কণাকে কান্না করতে দেখে আদিয়াত শুয়া থেকে ওঠে বসে। কণার দু গালে হাত রেখে চোখের পানিগুলো মুছে শান্ত গলায় জিঙ্গেস করে,
কী হয়ছে? খারাপ স্বপ্ন দেখেছ?
অহি ভালো নেই। আমাকে প্লিজ ঐ বাসায় নিয়ে চলুন নাহ। আচ্ছা না নিয়ে যান অহি, বন্যা, সাফাত ভাইয়া আর নোমান ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিন নাহ। ওরা কেউ ভালো নেই আমাকে ছাড়া। আমার মন বলছে অহির কোনো বিপদ হয়েছে। প্লিজ আমাকে একটা বার কথা বলিয়ে দিন নাহ। আপনার কাছে আর কিচ্ছু চাইব নাহ।
তুমি জীবনে প্রথম আমার কাছে কিছু চাইলে। অন্য কিছু চাইলে হয়তো আমি নিজের জান দিয়ে হলেও তোমার চাওয়াটা পুরণ করতাম। কিন্তু আমি তোমার এই চাওয়াটা পূর্ণ করতে পারব না। আমি কিছুতেই তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিব না। আমি বলছি তো অহি সুস্থ আছে। তুমি কী আমাকে বিশ্বাস কর না?
কণা কিছু না বলে আদিয়াতকে জড়িয়ে ধরে।
আমি তোমাকে এখন কারো সাথে যোগাযোগ করতে দিতে পারব না। আমি চাই না তুমি অহির কথা জানো। তুমি যদি ওদের সাথে যোগাযোগ কর তাহলে জানতে পেরে যাবে অহির অসুস্থতার কথা। মিথ্যা বলার জন্য সরি প্রেয়সী। আমি তোমাকে সত্যিটা জানতে দিব না। ( মনে মনে )
আদিয়াত কণার মাথায় কিস করে বলে, আজকে তোমাকে আমার বাবা-মার কাছে নিয়ে যাব। আমার মাম্মার সাথে দেখা হলে তোমার মন একদম ভালো হয়ে যাবে। ওহ সরি আজকে থেকে তো আমার একার মাম্মা না তোমার তো মাম্মা। তাড়াতাড়ি গোসল করে রেডি হয়ে নাও। তোমাকে নিয়ে একটু পরেই বের হয়ে যাবে।
৭৯
আভিয়ান ছাদের ওপর বসে আছে। উদাস হয়ে একটা ফুল গাছের দিকে তাকিয়ে আছে।
তখনি আভিয়ানের ফোনটা বেঁজে ওঠে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখেই আভিয়ানের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেশ দেখা যায়।
আভিয়ান তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে।
হ্যালো
__________________
আপনাকে ভুলে গেলে তো মনে করব।
__________________
আই মিস ইউ টু।
__________________
আমিও অপেক্ষায় আছি ক.............
আভিয়ান আর কথাটা সম্পূর্ণ করলা না। কারণ তাকে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে গাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাই। তাকে ছোঁয়া পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে। আভিয়ান সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
ছোঁয়া তুমি এখানে কেনো এসেছো? আমি বলেছি না আমাকে একটু একা থাকতে দিতে। ( ধমক দিয়ে কথাটা বলে)
তুমি এভাবে কথা বলছ কেনো?
কীভাবে কথা বলছি?
ছোঁয়া আভিয়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়। ইনোসেন্ট মুখ করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
তখনকার জন্য সরি। আমি জানি তোমাদের মনের অবস্থা এখন ভালো নেই। আমারও মনের অবস্থা ভালো নেই। অহির এই অবস্থা। আমি জানতাম আব্বু তোমাদের এখানে বিয়ের কথা বলতে এসেছে। সরি বলছি তো এখনো কী আমার ওপর রাগ করে থাকবে?
এই দেখ কানে ধরে সরি বলছি। প্লিজ রাগ করে থেকো না।
আভিয়ান ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি কী তোমার ওপর রাগ করে থাকতে পারি?
__________________
আভিয়ান শাওয়ার নিচ্ছে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে। শরীর ঘষতে লাল করে ফেলছে। আরো আধা ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
৮০
মাম্মা আর পাপা কাউকে বলি নাই যে আজকে তোমাকে নিয়ে আসব। আমি ভাবছি উনারা দুজন তোমাকে দেখে কী করবে? সারপ্রাইজড হবে না শকড।
কণা দাঁড়িয়ে আছে তার শ্বশুরবাড়ির দরজার সামনে পাশে আদিয়াতও দাঁড়িয়ে আছে। আদিয়াত হাত বাড়িয়ে কলিংবেল বাজায়। দরজার খোলে দেয় ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে একটা মেয়ে। আদিয়াতকে দেখেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।
কণা দাঁড়িয়ে আছে তার শ্বশুরবাড়ির দরজার সামনে পাশে আদিয়াতও দাঁড়িয়ে আছে। আদিয়াত হাত বাড়িয়ে কলিংবেল বাজায়। দরজার খোলে দেয় ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে একটা মেয়ে। আদিয়াতকে দেখেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াতের পাশে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে মেয়েটা খেয়ালই করেনি।
কণা এক দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না মেয়েটা সম্পর্কে আদিয়াতের কী হয়? বোন? নাকি অন্য কিছু? আদিয়াত এক ঝটকাই আরুহিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আরুহিকে ধাক্কা মেরে দুরে ফেলে দেয়।
কণা আরুহিকে ধরতে গেলে আদিয়াত কণার হাত ধরে ফেলে। উল্টো দিকে ঘুরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আরুহি এই বাসায় থাকলে কণাকে এখানে কিছুতেই রাখবে না। কণার লাইফ নিয়ে বিন্দু মাত্র রিস্ক সে নিবে না। আরুহিকে আদিয়াত এক ফোটা বিশ্বাসও করে না।
কী হলো আপনি চলে যাচ্ছেন কেনো? বাসার ভিতরে যাবেন নাহ?
না।
কেনো?
আদিয়াত কিছু বলার আগেই রাহেলা বেগম এসে উপস্থিত হয়। আরুহি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
আদিয়াত তুমি আমাকে এভাবে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে। তোমার সাথে এই মেয়েটা কে?
রাহেলা বেগম আরুহির কথাটা যাস্ট পাত্তা দিলেন নাহ। তিনি জানেন আদিয়াত এমনি এমনি কিছু করে না। আর এটাও জানেন আদিয়াত আরুহি কিছু না করলে ধাক্কা দেওয়ার জন্যও আরুহিকে টার্চ করবে না। রাহেলা বেগম আরুহির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেন। আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে,
কীরে তোরা ঐদিক ফিরে আছিস কেনো? বাসার ভিতরে আসবি না? তোরা আসবি আমাকে আগে বললে কত কিছু রেডি করে রাখতাম। তোর বাবা তোদের দুজনকে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে যাবে। তোরা একটু দাঁড়া আমি বরণ ডালা নিয়ে আসি। বরণ করার পর বাসার ভিতরে আসবি।
মাম্মা আমরা বাসার ভিতরে আসব না।
কেনো?
মাম্মা আমি তোমাকে অনেকদিন আগে একটা কথা বলেছিলাম। তোমার হয়তো মনে নেই। আমি মনে করিয়ে দেই। আমি বলেছিলাম, এই মেয়ে (আরুহি) যেদিন আমাদের বাসা থেকে যাবে সেদিন আসবো। এই মেয়ে যতক্ষণ আমাদের বাসায় থাকবে ততক্ষণ আমি বাসার ত্রি-সীমানাই আসবো না। আর এখন তো আমার সাথে কণা আছে।
কণা আদিয়াতের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। মাথায় হালকা ঘোমটা দিয়ে রাহেলা বেগমের সামনে দাঁড়ায়। কণা রাহেলা বেগমকে ঝুঁকে সালাম করতে গেলেই রাহেলা বেগম আটকে দেয়।
পায়ে না বুকে আয়।
রাহেলা বেগমকে কণা জড়িয়ে ধরে।
তোকে তুই করে ডাকলাম বলে তুই কী আমার ওপর রাগ করলি? রাগ করলে তুমি করেই ডাকব।
একদম না। তুমি আমাকে তুই করেই ডাকবে আর আমি তোমাকে তুমি করে। বুঝছ?
হুম বুঝেছি। আর তুই আমাকে মাম্মা বলে ডাকবি।
আমি তোমাকে মাম্মা বলে ডাকব না।
কেনো? তুই আমাকে নিজের আপন ভাবিস না। তাই তো মাম্মা বলে ডাকছিস না।
উফ তোমার কী আমাকে ইংরেজ বলদ মনে হয় যে, মাম্মা মাম্মা করব। আমি তো তোমাকে মামুনি বলে ডাকব।
আদিয়াত রেগে বলে, তুমি আমাকে অপমান করছ। তুমি আমাকে ইংরেজ বলদ বলছ?
বলার কী আছে? আপনি নিজেই তো সারাদিন প্রুভ করেন। দেখতেও বলদের মতো আর সারাদিন বিলায়ের মতো ম্যা ম্যা করে। হুহ।
আরুহি রেগে বলে, এই মেয়ে কে তুমি? তোমার সাহস কী করে হয় আদিয়াতকে অপমান করার? আন্টি তুমি এই মেয়েকে নিয়ে এতো আদিক্ষেতা কেনো করছ?
আদিয়াত কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুর্যয় আহম্মেদ ( আদিয়াতের বাবা) আসে। উনি এসে আদিয়াত আর কণাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কণাকে তিনি আগেই দেখেছিলেন আদিয়াতের ফোনে। তাই উনার কণাকে চিনতে একটুও অসুবিধে হয়নি। কণা আদিয়াতের দিকে তাকায়। আদিয়াত কণাকে ইশারায় বলে, পাপা। কণা গিয়ে তুর্জয় আহম্মেদকে সালাম করে।
তুর্জয় আহম্মেদ কণার মাথায় হাত রেখে মুচকি হেসে বলে, বেঁচে থাক মা। এবার আমার একটা মেয়ে গেলাম। ঘরে লক্ষি এসেছে।
তোমরা কণাকে দেখে নিয়েছ এখন আমরা চলে যাব। আর কণা তুমি যদি কিছু বলতেও চাও আমি শুনব না। তোমার এখনি আমার সাথে যেতে হবে।
রাহেলা বেগম মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে, তুই তোর ভাব অন্য জায়গায় গিয়ে দেখা। তুই থাকতে চাইলে থাক না থাকলে নাই। আমি আমার মেয়েকে কোথাও যেতে দিব না।
আমি আমার বউকে এখানে কিছুতেই থাকতে দিব না। আমার বউ আমার সাথে যাবে। আমি যেখানে আমার বউ সেখানে।
তুর্যয় আহম্মেদ বলে, তুমি এই বাসায় কেনো থাকতে চাইছ না? কী সমস্যা এখানে থাকলে।
বউ মানে কী? আদিয়াত তুমি কখন বিয়ে করলে? তুমি কী করে আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পার? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদিয়াত। দেখ এই মেয়ের থেকে আমি অনেক বেশি সুন্দরী এবং স্মার্ট। দেখ এই মেয়ে গাইয়াদের মতো শাড়ি পড়ে আছে।
যাস্ট সাট আপ। তোমার সাহস কী করে হয় আমার ওয়াইফকে অপমান করার। তুমি কী আমার অভিভাবক? যে তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে বিয়ে করতে হবে। তুমি আমাকে ভালোবাসো নাকি আমার সুন্দর ফেইস আর টাকা পয়সা কে? কণার সাথে তুমি নিজের তুলনা দিচ্ছ। কণার নখের যোগ্যও তুমি না। বাঙালি নারীর সৌন্দর্য শাড়িতেই। তোমাদের মতো মর্ডান ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া মেয়েদের আমি ঘৃণা করি। নেক্সট টাইম যদি কোনো ভাব কণাকে তুমি ইনসাল্ট করার চেষ্টা কর। তাহলে থাপড়ায়া তোমার গাল লাল করে দিব।
আদিয়াত একটু দম নিয়ে বলে, পাপা তোমার উত্তর নিশ্চয়ই পেয়ে গেছো। এই মেয়ে পদে পদে কণাকে ইনসাল্ট করার চেষ্টা করবে। এই মেয়ে যেদিন এই বাসা থেকে চলে যাবে সেদিন আমি এই বাসায় আসব।
৮১
সাফাত অহির হাত ধরে বসে আছে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তবে এটা কষ্টের না সুখের কান্না। ডক্টর বলেছে, অহি হয়ত খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। অহির শারীরিক অবস্থা আগের থেকে অনেকটা বেটার।
অহি তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও। আমি তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। তোমার মুখে আমার নামটা শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছি। আমার মন বেকুল হয়ে আছে তোমার কন্ঠসর শোনার জন্য।
সাফাত অহির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। সে আর পারছে না তার প্রেয়সীকে এভাবে দেখতে। তার প্রেয়সী তো এমন নিরব নিস্তব্ধ ছিল না। সে তো তার হাসি, খুশি, বাচাল রাণীকে ফিরে পেতে চায়।
অহি তুমি খুব খারাপ। তুমি আমাদের সবার কষ্টটা দেখতে পাচ্ছো না। তুমি বলো না তুমি কণাকে খুব ভালোবাসো। তুমি আমাদের কাউকে ভালোবাসো না। না আমাকে না কণাকে। তুমি যদি কণাকে ভালোবাসতে তাহলে কণার বিপদের সময় এভাবে চুপ করে থাকতে পারতে না। আমি জানি কণার ব্যাপারে অল্প কিছু হলেও তুমি জানো। তোমার মাধ্যমেই আমরা জানতে পারব কণা কোথায় আছে? প্লিজ অহি চোখ খোল না। প্লিজ একবার আমার দিকে তাকাও না।
৮২
মহুয়া জাহান আর তিশান আহম্মেদ কণার সমস্ত জিনিস বাইরে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। কণার একটা ছবি গিয়ে পড়ে আভিয়ানের পায়ের কাছে। ছবির কাঁচটা ভেঙে গেছে ফ্রেমটাও ফেটে গেছে। আভিয়ান ছবিটা হাতে তুলে নেয়। ছবিটা হাতে নেওয়ার সময় ভাঙা কাঁচ দিয়ে আভিয়ানের হাত কেটে যায়। আভিয়ান সেটাকে পাত্তা না দিয়ে উনাদের প্রশ্ন করে,
তোমরা এইগুলো বাইরে ছুঁড়ে ফেলছ কেনো?
তিশান আহম্মেদ রেগে বলে, ফেলব না তো কী করবো? ওর জন্য আজকে অহির এই অবস্থা। এখন তো শুধু ওর জিনিস ছুঁড়ে ফেলছি। ঐ বজ্জাত মেয়েকে সামনে পেলে ওকে খুন করে ফেলতাম।
মহুয়া জাহান এগিয়ে এসে বলে, আমি জানতাম কণা অহিকে সহ্য করতে পারে না। কারণ সবাই ওর থেকেও অহিকে ভালোবাসে। মনে মনে যে অহির প্রতি এতো ঘৃণা পুষে রেখেছে সেটা বুঝতে পারিনি। ওর ঘৃণায় অহির এই অবস্থা। আল্লাহ আমি কী পাপ করেছিলাম যে, ওর মতো একটা খারাপ মেয়ে আমার গর্ভে দিয়েছিলে।
এই জিনিসপত্র কী এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখবে?
না। সব একসাথে করে বাগানে পুড়িয়ে ফেলব।
আভিয়ান রেগে বলে, এই মেয়ের জিনিসপত্রের ছাইও আমি এ বাড়িতে দেখতে চায় না। সব জিনিসপত্র নিয়ে নদীর পাড়ে যাচ্ছি। সবকিছু সেখানে পুড়িয়ে ছাই নদীতে ফেলে দিব। এই মেয়ের সমস্ত স্মৃতি আমাদের জীবন থেকে মুছে ফেলব।
আভিয়ান একটা সার্ভেন্টকে ডেকে বলে কণার ব্যবহৃত সমস্ত জিনিস গাড়িতে তুলতে। সার্ভেন্টরা সবকিছু গাড়িতে তুলে দেয়। আভিয়ান চলে যায় কণার সমস্ত জিনিস নিয়ে।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া