আদিয়াত তার পকেট থেকে ফোনটা বের করে কণার চোখের সামনে তার আর কণার মেসেজ চোখের সামনে ধরে। কণা আর তার কিছু ছোটবেলার ছবি কণাকে দেখায়। যেগুলো একমাত্র তুর্ণের কাছেই থাকার কথা অন্য কারো কাছে নাহ। সোফা থেকে ওঠে গিয়ে আদিয়াত তার কিছু সার্টিফিকেট এনে কণাকে দেখায়।
এতগুলো প্রমাণ দেওয়ার পরেও যদি তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে না পারো। তাহলে আমার কিছু করার নাই।
আপনি তুর্ণ আদিয়াত যেই হোন না কেনো? আমি আপনার সাথে এই বাসায় থাকতে পারব নাহ।
কেনো? কী সমস্যা এই বাসায় থাকলে? বা আমার সাথে থাকলে?
আপনি বুঝতে পারছেন নাহ? আমি কী বুঝাতে চাইছি?
আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।
আমি আর আপনি এতবড় একটা বাসায় একা থাকি। যদি এই বাসায় ভূত থাকে। আর এভাবে একা একটা বাসায় দুজন অবিবাহিত ছেলে মেয়ে তো থাকা ঠিক নাহ।
তুমি কী আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না?
আমি আপনাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।
তাহলে.......
আমি আমতা আমতা করছি। বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছি। এই কথা বলার পর উনি আমাকে রাম ধমক দিবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। আদিয়াত কণার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
বাই এনি চান্স তুমি বাইরের লোকের কথা ভাবছ না তো? বাইরের লোক কী বলল না বলল তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কিছু মানুষের কাজই অন্যের নিন্দা করা। তাই কে কী বলল তাতে আমি কান দেয় নাহ।
আপনি কান না দিলেও আমি দেই়। লোকের কথা আপনার কিছু না আসলেও আমার অনেক কিছু আসে যায়।
তাহলে আজকে থেকে কান দিবে না।
আপনি বললেই হল নাকি।
তোমার যখন এত সমস্যা তখন প্রবলেম তো সলভ করতেই হয়। আমরা আজকেই বিয়ে করব।
কীহহহহহহ! ( অনেকটা অবাক হয়ে )
তুমি এত অবাক হচ্ছ কেনো? তুমি কী আমাকে বিয়ে করতে চাও নাহ?
আপনাকে বিয়ে করতে চাই নাহ। সেটা আবার কখন বললাম।
তার মানে তুমি রাজি। তুমি ১ ঘন্টা অপেক্ষা কর। সবকিছু রেডি হয়ে যাবে।
আরে আমার কথাটা তো শুন.......
তোমার সব কথা বাসর ঘরে শুনব। ( চোখ টিপ দিয়ে বলে)
আদিয়াত কাউকে কল করতে করতে বাসার বাইরে চলে যায়। আমি আহম্মকের মতো সোফায় বসে আছি। বাসার কাউকে না জানিয়ে একা একা বিয়ে করে ফেলব। বাসার কাউকে জানিয়েই বা কী করব? তারা তো আমার লাইফের কোনো ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করে না। আমাকে তো তাদের একজন বলে মনেই করে না। তাই তাদের জানিয়ে বিয়ে করি বা না জানিয়ে বিয়ে করি। তাতে তাদের কিছু আসে যায় নাহ। অহি, বন্যা, জিয়ান ভাইয়া, সাফাত ভাইয়া, নোমান ভাইয়া আর বড় আম্মু সবাই তো আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তাদের না জানিয়ে আমি বিয়ে করে ফেলব।
৭৪
জিয়ান আজকে আবার সেই গ্রামে আসছে। গ্রামের নাম বকুলতলি ( গ্রামের নামটা কাল্পনিক। বাস্তবে যদি এই নামে গ্রাম থেকে থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক আমি অবগত নই।) অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এই গ্রামটি। গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে একটা নদী। নদীর দুই ধারে কাশবন দিয়ে ঘেরা। নদীর মাঝে কিছু হাঁস সাতার কাটছে। নদীর পাড়ে কিছু ছাগল ঘাস খাচ্ছে।
নদীতে কিছু ছেলে মেয়েরা সাঁতার কাটছে। কিছু মেয়ে একটা বড় গাছের নিচে গোল্লা ছুট খেলছে। মৃদু বাতাস বইছে। বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে দুলছে ধান গাছের ডগা।
বরাবর জিয়ান এই গ্রামে আসে এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে। কিন্তু আজকে আসছে ভিন্ন কারণে। আজকে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য তার চোখে আটকাচ্ছে নাহ। কারণ তার চোখ তো খোঁজছে তার প্রেয়সীকে। তার প্রেয়সীর সৌন্দর্যের কাছে এই সৌন্দর্য কিছুই নাহ। জিয়ান গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে। কিন্তু তার মায়াবতীকে দেখতে পাচ্ছে না। তাই জিয়ান পা বাড়ায় সামনের দিকে। জিয়ান মনে মনে বলছে,
কোথায় গেলে মায়াবতী? আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো মায়াবতী? তোমাকে দেখার জন্য যে কেউ বেকুল হয়ে আছে। তার বার্তা কী তোমার কাছে পৌছায় না মায়াবতী?
জিয়ান এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার মায়াবতীর দেখা সে পাচ্ছে না। জিয়ান কাউকে তার মায়াবতীর কথা জিঙ্গেসও করতে পারছে না। কারণ সে তো তার মায়াবতীর নামই জানে না। জিঙ্গেস করবে কী করে? কারো মনো মুগ্ধকর হাসির শব্দে থমকে যায় জিয়ান। জিয়ান মনে মনে বলে,
এত সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে। আমিও কী যা তা বলি না। এত সুন্দর করে হাসতে পারবে না কেনো? কণা হাসলেও তো মনে হয় মুক্ত ঝরে।
কিন্তু এই মেয়ের হাসিটা কণার হাসির থেকেও বেশি সুন্দর।
জিয়ান নিজের ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে হাসির শব্দ অনুসরণ করে। যে হাসছিল তাকে দেখে জিয়ানের চোখ অটোমেটিকলি বড় বড় হয়ে যায়। এই তো তার মায়াবতী।
জিয়ানের ফোনটা বেঁজে ওঠে। বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করে। ওপাস থেকে যা বলল তা শুনে জিয়ানের পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। জিয়ানকে ফোন তার এক বন্ধু করছে। ফোন করে ঐ এক্সিডেন্টের ঘটনা খুলে বলছে। জিয়ান একটা প্রজেক্টের কাজে কিছুদিনের জন্য ঢাকার বাইরে গিয়েছিল। আর সেখান থেকে ফিরে নিজের বাসায় না গিয়ে এই গ্রামে চলে আসছে। তাই সে অহি আর কণার সাথে ঘটে যাওয়া এক্সিডেন্টের কথা জানে না। আর জানবেই কী করে তাকে তো কেউ জানায়নি?
আমি সবার কাছে এতটা পর হয়ে গেলাম। এত বড় একটা এক্সিডেন্ট ঘটে গেছে। আর আমাকে কেউ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।
জিয়ান রেগে ফোনটা মাটিতে আচার মারে। তারপর ধুপ ধাপ পা ফেলে সেখান থেকে চলে যায়।
৭৫
পার্লারের মেয়েরা আমাকে রেডি করাচ্ছে। তাহার মায়ের কড়া নির্দেশ উনার বউ মাকে পরীর মত কর সাজাতে হবে। আরো ১ ঘন্টা পরে আমার সাজ কম্পলিট হয়। সাজানো কম্পলিট হতেই পার্লারের মেয়েরা চলে যায়। আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক ঘুরে নিজেকে দেখছি। আমি নিজেকে নিজেই চিন্তে পারছি না। এত বাড়ি মেকআপের তলে আমিটাই যেনো চাপা পড়ে গেছি।
_________________
ফুলে ফুলে সাজানো একটা রুমে বসে আছি। একটু আগেই আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই আমরা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। সারাজীবন হাতে হাত রেখে পাশে থাকার প্রতিঙ্গা করেছি। আমাদের বিয়েতে উনার বন্ধুরা দুয়েকটা কাজিন ছিল। উনার বাবা-মা আমাদের থেকে অনেকটা দুরে থাকায়। আমাদের বিয়েতে এটেন্ড করতে পারেনি।
চারদিকে ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। ফুল আর ক্যান্ডেল দিয়ে রুমটা সুন্দর করে সাজানো। এত কম সময়ে এত সুন্দর করে সাজানো হয়ে যাবে আমি ভাবতে পারিনি। ফুলে সজ্জিত বিছানায় এক হাত লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছি। ঘোমটা আমি দিতে চায়নি সামিয়া আপু ( উনার বন্ধুর ওয়াইফ) জুড় করে দিয়ে দিয়েছে। বাসর ঘরে নাকি এভাবে বসে থাকতে হয়। যাওয়ার সময় বলে গেছে উনি রুমে আসলে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে।
কিন্তু আমি তো করব নাহ। আমি জানি উনি আমাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে দিবেন নাহ। সিনেমার একটা ডায়লগ মারবে। আমি সালাম করার জন্য ঝুঁকতে গেলে উনি আমার হাত ধরে আটকে দিয়ে বলবেন, তোমার স্থান আমার পায়ে নয়। আমার বুকে। আমি তো উনাকে বাংলা সিনেমার ডায়লগ মারার সুযোগই দিব নাহ।
আমি ১০ মিনিট ধরে বসে আছি। এতেই যেন আমার অসহ্য লাগছে। সামিয়া আপু বলেছিল বাসর রাতে বরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কোমড় ব্যথা হয়ে যায়। সামিয়া আপু উনার বাসর রাতে পাক্কা ২ ঘন্টা বসে থাকার পর উনার বর এসেছিল।
খট করে দরজা খোলার আওয়াজে আমি একটু নড়েচড়ে বসি। এতক্ষণ লজ্জা না লাগলেও। এখন ভীষণ লজ্জা লাগছে। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। উনি ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমার বুক ধুকপুক করছে।
আদিয়াত কণাকে পিঞ্চ মেরে বলে,
শুনছিলাম বাসর রাতে স্ত্রীরা নাকি তাদের স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। আমার কপালটাই পুড়া। আমার সেই ভাগ্য হলো না।
আদিয়াত কণাকে পিঞ্চ মেরে বলে,
শুনছিলাম বাসর রাতে স্ত্রীরা নাকি তাদের স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। আমার কপালটাই পুড়া। আমার আর সেই ভাগ্য হলো না।
আমি আপনাকে সালাম করতে যায় আর আপনি সিনেমার মত ডায়লগ মারেন। তোমার স্থান আমার পায়ে নয় আমার বুকে। আপনাকে আমি ভাব নেওয়ার সুযোগই দিব না। হুহ।
আমার বউ তো একটা চিজ ভুলেই গিয়েছিলাম। ( বিড়বিড় করে)
আদিয়াত কণার সামনে বসে। কণার ঘোমটা উপরে তুলে থুতনি ধরে বলে,
মাশাল্লাহ। আমার বউয়ের উপর যেনো কারো নজর না লাগে।
আদিয়াতের কথা শুনে কণা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে কণাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। আদিয়াত কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে থুতনি রেখে বলে,
দুজনকে দেখে একদম পারফেক্ট কাপল মনে হচ্ছে তাই না? যেনো আমাদের দুজনের জন্ম দুজনের জন্যই হয়েছে। উই আর মেইড ফর ইচ আদার।
আমি আয়নায় পলকহীন ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আজকে একটা মেরুন রঙের শেরওয়ানী পড়েছেন। মেরুন রঙে উনাকে অনেক সুন্দর লাগছে। যেনো এই রঙটা উনার জন্যই শুধু। এই রঙে অন্য কাউকে মানাবেই না। সত্যিই আমি অনেক লাকি। তাই তো উনার মত একজনকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। উনি প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্ন পুরুষ। প্রত্যেকটাই মেয়েই এমন একটা জীবনসঙ্গী চায়। যে ভালোবাসবে, কেয়ার করবে, বিশ্বাস করবে।
এভাবে তাকিয়ে থেকো না নজর লেগে যাবে।
যাও ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসো। নামাজ পড়ব। আজকে থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু হবে। এখন থেকে একসাথে পথ চলা শুরু।
আদিয়াত কণার সমস্ত গয়না একে একে খুলে দেয়। খুব সুন্দর করে যত্ন সহকারে চুলগুলো খোলে দেয়।
আদিয়াত কণার হাতে একটা পিংক কালার জর্জেট শাড়ি তুলে দেয়। কণা কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
অল্প কিছুক্ষণ পরেই কণা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আদিয়াত ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাতেই থমকে যায়। তার চোখ জোড়া আটকে যায় শাড়ি পরিহিতা রমনীর উপর।
কণা আঙ্গুলে শাড়ির আঁচল পেছাতে পেছাতে এসে আদিয়াতের সামনে দাঁড়ায়। কণা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে লজ্জায় আদিয়াতের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। আদিয়াতের এমন ঘোর লাগা দৃষ্টি কণাকে অস্বস্তি আর লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে।
আদিয়াত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। সে চোখই সরাতে পারছে না তার প্রেয়সীর থেকে। শাড়িতেই নারী। বাঙালি নারীর সৌন্দর্য শাড়িতেই প্রকাশ পায়। এই কথাগুলো আগে আদিয়াত বিশ্বাস করত না। কিন্তু আজকে তার এই কথাগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। কণা আমতা আমতা করে বলে,
নামাজ পড়বেন নাহ?
হুহ।
কণা এবার চিৎকার করে বলে, নামাজ পড়বেন নাহ?
আদিয়াতের ধ্যান ভেঙে যায় কণার চিৎকারে। যে হকচকিয়ে বলে, কিছু বলছিলে?
আপনার মন কোথায় থাকে? এতক্ষণ ধরে চিৎকার করে আপনাকে আমি কী বললাম?
আমার মন তো তোমার কাছে।
হয়ছে আপনার ফাজলামো বন্ধ করুন। চলুন নামাজ পড়ি।
তারপর দুজন নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ পড়া শেষ হতেই আদিয়াত কণার সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর খুব সুন্দর করে কণার চোখে কাজল পড়িয়ে দেয়। খোপা করা চুলগুলো একটানে খোলে দেয়। ঝর ঝর করে রেশমি কালো কোমর অব্দি ঘন চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে পড়ে। আদিয়াত কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয়।
তুমি নিজেও জানো না ধূলিকণা তোমার চুলের ঘ্রাণ আমাকে কতটা এট্রাক্ট করে।
আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ করে এভাবে কোলে তুলে নেওয়ায় কণা ভয় পেয়ে যায়।
আপনি আমাকে পেয়েছেনটা কী? আটার বস্তা? কথা নাই বার্তা নাই হুট হাট কোলে তুলে নেন।
তুমি আটার বস্তা হতে যাবে কেনো? তুমি তো আমার একমাত্র মিষ্টি বউ। আর তোমার যা ওয়েট তাতে তুমি আটার বস্তা না বড় জোড় তুলোর বস্তা হতে পারবে।
আপনি আমার ওজন নিয়ে কথা শোনাচ্ছেন?
আরে না আমি আমার সুইট বউকে কথা শুনাতে পারি। আমি তো জাস্ট সত্যিটা বললাম।
আদিয়াত কথা বলতে বলতে কণাকে নিয়ে সুইমিংপুলের কাছে নিয়ে আসে। কণাকে কোল থেকে নামিয়ে আদিয়াত সুইমিংপুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পড়ে। কণাকেও তার সাথে বসিয়ে দেয়। কিন্তু কণা পানিতে পা ডুবায় নাহ।
কী হলো? পানিতে পা না ডুবিয়ে পা গুটিয়ে বসে আছ কেনো?
পানিতে পা ডুবালে শাড়ি ভিজে যাবে তো।
ভিজতে দাও।
কণাও সুইমিংপুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পড়ে। আদিয়াত কণাকে ইশারায় আকাশের দিকে তাকাতে বলে। আজকে পূর্ণিমা। আজকে আকাশে গোলাকার রুটির মতো পূর্ণ চাঁদ ওঠেছে। চাঁদের আলো পানিতে পড়ায় পানি ঝলমল করছে। পানিতে চাঁদের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে।
কণা আদিয়াতের এক হাত জড়িয়ে ধরে আদিয়াতের কাধে মাথা রাখে। কণা তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আদিয়াত তাকিয়ে আছে কণার দিকে।
__________
আদিয়াত বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে কণাকেও দাঁড় করায়। কণার চোখে একটা কালো কাপড় বেঁধে দেয়।
আরে কী করছেন? চোখ কেনো বাধছেন?
সারপ্রাইজ।
কণা আদিয়াতের হাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকে। একটা জায়গায় গিয়ে আদিয়াত কণার হাত ছেড়ে দেয়। কণা চোখের ওপর থেকে কালো কাপড়টা সরিয়ে দেয়। কণা অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। আদিয়াত রিং হাতে কণার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
হয়নি বলা কোনোদিন ভালোবাসি। বলবও না আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুধু বলব পাশে থাকব সারাজীবন। এই হাত দুটি যখন একবার ধরেছি যত বাধা বিপদ আসুক কখনই ছাড়ব না। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমার গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দিব না। থাকবে তো আমার পাশে? যাবে না তো কখন আমাকে ছেড়ে?
সারাজীবন আপনার পাশে থাকব। কখন আপনাকে ছেড়ে যাব না।
কণা হাত বাড়িয়ে দেয়। কণার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। এটা খুশির কান্না। আদিয়াত কণার হাতে রিংটা পড়িয়ে দেয়। হাতের পিঠে একটা কিস করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে কণার চোখের পানি মুছে দেয়।
আমি এত কষ্ট করে সবকিছু এরেন্জ করলাম। আর তুমি তা না দেখে কান্না করছ।
কণা এবার ভালো করে চারপাশে চোখ বুলায়। এখন তারা যেখানে আছে কুঁডেঘর টাইপ। ছোট লাইট দিয়ে ঘরটা সুন্দর করে সাজানো। একটা বিছানাও পাতা আছে। সাদা বেড সিটের ওপর লাল রঙের গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে লাভের ভিতর A+K লেখা। আদিয়াত কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,
আরেকটু কাছে আসতে চাই তোমার, আরও কাছে;নিশ্বাস ছোঁয়া দূরত্বে- তাকাতে চাই তোমার চোখে।আমি কি আছি! চোখের তারায় মুগ্ধতার আবেশে।তোমার হৃদয় মণিকোঠায় আঁকা আছে কি-আমার অবয়ব! হৃদয় বর্ণালীর আস্তরণের তুলিতে।তোমাকে বুঝতে চাই, হৃদয়ের সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে,অনুধাবন করতে চাই, ভালবাসার মর্মার্থ -ঐ চোখে চেয়ে।তোমার গভীর কালো মায়া মায়া চোখে হারিয়ে গেছি,প্রেমে পড়ে গেছি একেবারে- কাছে পাবার ব্যাকুলতায়।
কণা পিছন ঘুরে আদিয়াতকে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াত হালকা হেসে কণাকে কোলে তুলে নেয়। বেডে সুইয়ে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
৭৬
এখন বাজে সকাল ৮ টা। হেলাল রহমান আভিয়ান আর ছোঁয়ার বিয়ের ব্যাপারে তিশান আহম্মেদের সাথে কথা বলতে এসেছে। হেলাল আহম্মেদের সামনে সোফায় বসে আছে তিশান আহম্মেদ। গম্ভীর হয়ে বসে আছে। বাইরে থেকে গম্ভীর হয়ে থাকলেও ভিতর থেকে রাগে ফুসছে।
তিশান আহম্মেদ বুঝতে পারছেন নাহ হেলাল রহমানের কান্ড ঙ্গান। মানুষ কতটা গর্দভ হলে এই সময় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। তিশান আহম্মেদের মেয়ের এই অবস্থা আর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। আর উনি ধুমধাম করে এখন উনার ছেলের বিয়ে দিবে। তিশান আহম্মেদের ইচ্ছে করছে হেলাল রহমানকে কড়া কিছু কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে তিনি সেটা পারছেন নাহ।
আভিয়ান চুপচাপ সোফার এক পাশে বসে ফোনের মাঝে ডুবে আছে। যেনো এই মুহূর্তে তার একমাত্র কাজ ফোন স্ক্রল করা। তাই সে দিন দুনিয়া ভুলে ফোনের ভিতর ডুবে আছে। আভিয়ানের ড্রয়িংরুমে বসে থাকার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু মহুয়া জাহানের জন্য ওঠতেও পারছে না। মহুয়া জাহান আভিয়ানের এক হাত ধরে সোফায় বসে আছে। এটার জন্য আভিয়ান ভীষণ বিরক্ত। সে বাচ্চা নাকি যে তার হাত ধরে বসে থাকতে হবে।
তিশান ভাই আমি চাইছিলাম বিয়েটা একটু তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে। বয়স হচ্ছে। আজ আছি কাল নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাওয়া ভালো। আমিও নিশ্চিন্ত হতে পারব মেয়েটাকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলে। ছোঁয়ার জন্য আভিয়ানের থেকে যোগ্য আর কেউ হতেই পারে না।
কিন্তু.......
তিশান ভাই এখানে কিন্তু আসছে কেনো? এখানে চেনা জানার তো কিছু নেই। আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। আমার মেয়েকে আপনারা ছোটবেলা থেকে দেখছেন আমারও আপনার ছেলেকে ছোটবেলা থেকে দেখছি। আর ওরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে। তাই এখানে কিন্তুর কোনো প্রশ্নই আসে না।
চলবে...
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া