> ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ৯, ১০ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প
-->

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ৯, ১০ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প

মধু রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য কিন্তু ওর মাথায় ঘুরছে অন্যকিছু।কালকে মায়ের দরজায় আড়ি পেতে শোনা কথাগুলো মধুকে বেশ প্যারা দিচ্ছে।কি করা উচিত সেটাও মাথায় আসছে না।আর যাইহোক বিয়ে আটকাতে হবে যেকোনো মূল্যে।এগুলো ভাবতে ভাবতে মধু রেডি হয়ে বের হতে নিলেই পিছন থেকে আইরিন রহমান বলল"মধু,আজকে কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরবি।"

মধু ঘাড় কাত করে সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে পড়লো।কিন্তু মনটা কোনো ক্রমেই সায় দিচ্ছে না তাড়াতাড়ি ফিরতে।মধু কলেজে পৌঁছে দেখলো আজ আরিয়া আসে নি।আরিয়া আসলেও ওর সাথে বিষয়টা শেয়ার করা যেতো।মধু চুপচাপ সারা ক্লাস বসে ছিলো।মাথায় কোনো পড়া ঢুকছেই না।ঢুকবেই বা কিভাবে এতো টেনশনে কিছুই ভাবা যায় না।

কলেজ শেষ হলো দুপুর ২.০০ টায়।মধু কলেজ থেকে বেরিয়ে কিছুটা হাটতেই দেখলো ইয়াদ ফোনে কথা বলতে বলতে উল্টোদিক থেকে হাটছে।এতো চিন্তার মাঝেও মধুর মনটা খুশি হয়ে গেলো।বর্ষার গুমোট আকাশ চিরে এক ফালি রোদ উঁকি দিলো।মধু ইয়াদের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ইয়াদ মধুকে দেখে একটু হেসে ফোনের অপর পাশের ব্যাক্তিকে বলল"আচ্ছা দোস্ত এখন রাখি।পরে কথা হবে।"

এটা বলে ফোন রেখে দিয়ে মধুর দিকে তাকিয়ে বলল"তারপর,কি খবর?বাসায় যাচ্ছো?"

"হ্যাঁ একটু আগে কলেজ ছুটি হয়েছে।এখন বাসায়ই যাচ্ছি।আপনি?"

"ঘুরতে বের হয়েছি।ভাল্লাগছিলো না বাসায়।ইফাজ ভাইতো সকালে বেরিয়েছে আর ইরিন প্রাইভেটে।আমিই অকর্মা।"

ইয়াদ কথা শুনে মধু মৃদু শব্দে হেসে উঠলো।মধুর এখন একটা অদ্ভুত ইচ্ছে হচ্ছে।মন চাইছে অনেক্ক্ষণ ইয়াদের সাথে হাটতে।কিন্তু আদৌও কি এটা হবে!মধুকে চুপচাপ কিছু চিন্তা করতে দেখে ইয়াদ বলল"কি ভাবছো?"

"যা ভাবছিলাম তা আপনাকে বললে আপনি হয়তো রাগ করবেন।"

ইয়াদ চেহারা হাসি ফুটিয়ে বলল"করবো না।তুমি বলো।"

"সত্যি?" মধু সন্দিহান গলায় বলল।

"হুম।" ইয়াদ কৌতুহলী হয়ে জবাব দিলো।

"ইয়ে মানে আর কি আমি চাইছিলাম আপনার সাথে একটু হাঁটতে।বেশি না দশ/পনেরো মিনিট হলেই চলবে।"

মধুর কথা শুনে ইয়াদ মুখটা গম্ভীর করে ফেললো।ইয়াদের গম্ভীর মুখ দেখে মধু ভয় পেয়ে গেলো।মনে মনে নিজেকেই গালি দিতে লাগলো।কিন্তু ইয়াদ নিজের এই গম্ভীর ভাব আর ধরে রাখতে পারলো না জোরেজোরে হেসে দিলো।হাসির বেগ কমে যাওয়ার পর ইয়াদ বলল"সিরিয়াসলি এটা বলতে এতো সংকোচ ছিলো তোমার!আমি তো ভেবেছি কি না কি ইচ্ছে করছে তোমার!আচ্ছা চলো তোমার ইচ্ছা পূরণ করবো।"

মধু খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।মধুর খুশি থেকে ইয়াদ অবাক হলো।সে কি খুশির কোনো কথা বলেছে!মধু হঠাৎ ইয়াদের অবাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে পেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল"চলুন যাওয়া যাক।"

"হ্যাঁ চলো।"

হাটঁতে হাঁটতেই মধু বলল"জানেন কাল যখন ইরিনের থেকে আমার খাতাটা নিয়ে আসছিলাম তখন নিশি আপুর সাথে দেখা হয়েছিলো সিড়িতে।"

"কিছু বলেছিলো?"

"হ্যাঁ জিগ্যেস করেছিলো আমি কেনো আপনাদের বাসায় গিয়েছিলাম।"

"তুমি কি বললে?"

"এটা বলতে পারবো না।" মধু নিচের ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকালো।

"বলো না প্লিজ।আমি কিচ্ছু বলবো না প্রমিস।"

"বাহ!এতো কৌতুহল!"

"হ্যাঁ,বলো না।" ইয়াদ অনুরোধের সুরে বলল।

"বলেছিলাম 'তোমার এক্সকে চুম্মা দিতে"

এটা বলেই মধু হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো।আর ইয়াদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ মধুর দিকে তারপর হো হো করে হাসতে লাগলো।হাসির বেগ কমতেই বলল"যা জবাব দিয়েছো আমার অনেক ভাল্লাগছে।তারপর আর কিছু বলে নাই?"

"শাসিয়েছে আমাকে।আমিও শাসায় দিছি।" 

"ভালো করছো।একদম ওকে প্রশ্রয় দিবা না।নিজেকে যে কি মনে করে আল্লাহ মালুম!"

"আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?"

"এতক্ষণ যা বললে তাতেই কিছু মনে করি না অতএব এটাতেও করবো না।নিঃসন্দেহে বলে ফেলো।আর তুমি কি বলবে তা কিছুটা আন্দাজ করেছি আমি।তবুও বলো।"

"আপনার আর নিশি আপুর ব্রেকাপ কেনো হলো?"

ইয়াদ হালকা একটু হেসে বলল"আমার মনে হয়েছিলো তুমি এই প্রশ্নটাই করবে।তাই হলো!আচ্ছা শোনো তবে।আমি ওর দুইবছরের সিনিয়র।আমাদের রিলেশনশিপ শুরু হয় যখন ও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো আর আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।ভালোই চলছিলো।প্রতিদিন সকালে ওকে কলেজে দিয়ে আমি ভার্সিটিতে যেতাম।দুজনে একসাথে ফিরতাম।যেখানে আমার লাস্টের ক্লাস আমি করতাম না ওর সাথে ফিরবো বলে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া বন্ধ করেছি ওর জন্য।মেয়ে বন্ধুদের ওর ভালো লাগতো না।তাই আমিও যতোটা পারি এড়িয়ে চলতাম।কখনো ফোনের পাসওয়ার্ড,ফেসবুক পাসওয়ার্ড,কোনোকিছুর পাসওয়ার্ড চাই নাই।ওর ফোন আমার সামনে খোলা পড়ে থাকলেও আমি দেকতাম না।আমি বিশ্বাস করতাম ওকে!একদিন আমাকে সন্দেহ করে বলেছিলো আমার ফোন ও দুইদিনের জন্য নিবে।আমি বিনাবাক্যে দিয়েছি।একদিন মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে চিটাগং গিয়েছিলাম।ওকে বলেছিলাম আসতে দুই তিনদিন লাগবে।ও মন খারাপ করেছিলো।তো মামাতো ভাইয়ের গায়ে হলুদের রাতে আমার ফোনে রাসেলের ফোন আসে।রাসেল আমার বন্ধু।একসাথে চলাফেরা করি।রাসেল বলল ফোনে নাকি কিসের ভিডিও পাঠিয়েছে।আমি বললাম পরে দেখবো।রাসেল বলল এখনই দেখতে।তো ওর কথা মতো ভিডিও লিংক ওপেন করতেই আমার চোখেমুখে অন্ধকার নেমে এলো।ও আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ভাইয়ের সাথে একবিছানায়।আমি কোনোমতে বিশ্বাস করতে পারলাম না।হলুদের রাতেই আব্বু আম্মুকে মিথ্যে বলে চলে এলাম এখানে।আসতে আমার সকাল হলো।সারারাত না ঘুমিয়ে আমার চোখ লাল হয়ে গেছিলো।মুখের অবস্থা ভয়াবহ!আমি ওকে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বললাম।ও আসলে ওকে ভিডিওটা দেখাতেই ও মুখটা নিচে নামিয়ে রাখলো।আমি চেচিয়ে বলতে লাগলাম এটা সত্যি কি না!ও বলল এটা সত্যি!এতোটা ভেঙে পড়েছিলাম আমি!ওর আমার সাথে রিলেশনের আগেও আরো অনেকের সাথেই ছিলো রিলেশন।আমি সবকিছু মাফ করেছিলাম কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।নিজের ভালোবাসা কে মিথ্যা মনে হতে লাগলো।ও সেদিন ব্রেকাপ করে চলে গিয়েছিলো।আমাদের দেড় বছরের রিলেশন ছিলো।আমি বোঝাতে পারবো না কি যে অবস্থা হয়েছিলো আমার!ইরিন সব জানতো!সেইসময়টা ইরিন বড়বোনের মতো পাশেছিলো।আস্তে আস্তে সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসলাম।পুরোনো যাদের সাথে সম্পর্ক খারাপ করেছিলাম সবার সাথে যোগাযোগ করেছি।বন্ধুদের নিয়ে হেব্বি ট্যুর দিয়েছি।এখন এটাকে আর কষ্ট মনে হয় না।মনেহয় আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে নিজ হাতে।কোটি কোটি শুকরিয়া।আমি ওকে সারাজীবন মনে রাখবো তফাৎ এতটুকুই ওকে মনে পড়তেই আমার মন ঘৃণায় বিষিয়ে উঠবে।

মধু ব্যাথিত গলায় বলল"অনেক খারাপ লাগলো।এতো ভালোবাসা পেয়েও কেউ হারায়!তবে আমি একটা অন্যায় করে ফেলেছি!"

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল"কি?"

মধু ঢোক গিলে বলল"আসলে যেদিন আপনি বাসায় এসেছিলেন সেদিন থেকেই নিশি আপু আপনাকে খাবার পাঠাতো।আর ওটা এসে আমার রুমের জানালয় আটকাতো।আমি ওগুলো খেয়ে আপনারা নামে চিরকুট পাঠিয়ে আরো চাইতাম।আর আপুও পাঠাতো।পরে যখন আপনারা সিড়িতে কথা বলছিলেন আমি শুনেছিলাম।আমার খুব অপরাধ বোধ হচ্ছিলো।সরি!"

ইয়াদ হাসলো আর বলল"আমি জানি।"

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল"কিভাবে?"

"নিশি যখন চিরকুটগুলো আমাকে দেখিয়েছিলো।আমি দেখেই বুঝেছিলাম ওগুলো আমার না।আর আমি তোমাকে সন্দেহ করি।তারপর তোমার খাতায় তোমার লেখা আর চিরকুটের লেখা মেলাতেই শিউর হয়েছিলাম।"

মধু অপরাধীর মতো মুখ করে বলল"সরি।"

"ইট’স ওকে।ফুচকা খাবে?সামনে ফুচকার দোকান আছে।"

"চলুন।" মধু বলল।

ইয়াদ আর মধু বিভিন্ন কথা বলতে বলতে ফুচকা খেয়ে আরো কিছুক্ষণ হাটলো তারপর বাসার দিকে ফিরলো।বলাবাহুল্য দশ/পনেরো মিনিটের জায়গায় দুজনে দেড়ঘন্ট বকবক করেছে।বাসার সামনে এসে ইয়াদ বলল"এভাবে মাঝেমধ্যে ঘুরলে মন্দ হয় না।কি বলো!"

"আমিও তাই বলি।"

"আচ্ছা বাসায় যাও।আমি এখন যাবো না।আমার একটু কাজ আছে।"

"আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।"

এটা বলে মধু বাসার ভেতরে চলে গেলো।আর ইয়াদ সামনের দিকে হাটতে লাগলো।ঘরের দরজার সামনে এসে মধুর মাথায় হাত পড়লো।একি!মা তো তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছিলো আর আমি দেড়ঘন্টা পরে আসছি।আজকে আমারে জবাই দিবে।মধুর মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই ও নিচে নেমে সামনের ফার্মেরি থেকে একটা ব্যান্ডেজের কাপড় কিনে হাতে বেধে নিলো।তারপর বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই ওর মা খুললো।আইরিন রহমান রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মধুর ব্যান্ডেজের দিকে চোখ পড়ে আইরিন রহমানে।বকা না দিয়ে তিনি শিথিল গলায় বললেন"কিভাবে হলো?"

"পড়ে গিয়ে ছিলে গেছে।"

"বেশি ব্যাথা করছে?"

"হুম" মধু ইনোসেন্ট চেহারা বানিয়ে বলল।

"ঘরে গিয়ে ব্যাথার ঔষুধ খেয়ে নে।"

মধু ঘরের দরজা বন্ধ করে খুশীতে গড়াগড়ি খেলো।আজ অনেকদিন পর ভাল্লাগছে মধুর!


মধু চুল আঁচড়াচ্ছে আর চিন্তা করছে কিভাবে কৌশলে ছেলেটা তাড়ানো যায় আর মা কিছু বলতেও না পারে।এমন কাজ করতে হবে যাতে সাপ ও না মরে লাঠিও না ভাঙে।মধু চুল আঁচড়িয়ে চোখে আইলেনার দিয়ে তৈরি হলো।মধুর মা এসে বলল"তুই রেডি?ওরা অপেক্ষা করছে।"

"হ্যাঁ আমি রেডি।" মধু আইরিন রহমানের দিকে চেয়ে বলল।আইরিন রহমান মধুকে আগা গোড়া এক পলক দেখে বলল"কাটা জায়গাটা আঁচলের নিচে রাখবি।"

মধু মুখটা স্বাভাবিক রাখলেও ওর হাসি আসছে।নিজেকে কন্ট্রোল করে হাতটা শাড়ির নিচে রাখলো।মধুর মা ওকে ছেলেপক্ষের সামনে নিয়ে গেলেন।সামনে তিনজন বসা।দুপাশে বাবা মা আর মাঝখানে লজ্জাবতী গাছের মতো চুপসে আছে ছেলে।ছেলে কে দেখেও মধুর হাসি পেলো।কেমন মদন মার্কা।দেখলেই বোঝা যায় এই ছেলে শারিরীক দিক দিয়ে বড়ো হলেও মানসিক দিক দিয়ে এখনো নাবালক।এই নাবালক ছেলে কে কিভাবে বিয়ে করবো!একে প্রতিবেলায় খাইয়ে দিতে হবে।ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে।একটু বকা দিলেই মায়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে বিচার দিবা।এগুলো ভেবেই মধুর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।মনেমনে বলল"না..না এই ছেলেকে বিয়ে করার চেয়ে কলাগাছে ঝুলে পড়া ভালো।"তবে এতোকিছুর মাঝেও একটা বিষয় ভেবে ভালো লাগলো মধুর যে বলদটাকে ভাগাতে বেশি পরিশ্রম লাগবে না।মধুর এসব ভাবনায় ছেদ পড়লো ছেলের মায়ের কথায়।

"তুমি কোন ক্লাসে পড়ো মামনি?"

"ইন্টার পরীক্ষা দিবো আন্টি।" মধু কৃত্রিম একটা হাসি মুখে ঝুলিয়ে বলল।

"মাশাল্লাহ!তোমার কোনো পছন্দ আছে?আগে কি কেউ ছিলো?"

"না আন্টি।" মধু ছোটো করে জবাব দিলো।

"রান্না পারো?"

"হালকা পারি।"

"আচ্ছা।বিয়ের পর পড়তে চাও?"

মধু মনেমনে বলল'বিয়ে হয় কি না আগে সেটা দেখেন।'কিন্তু মহিলার জবাবে বলল"জ্বি আন্টি।"

"আচ্ছা,তোমার কিছু বলার আছে?"

"হ্যাঁ,আমি একটু উনার সাথে কথা বলতে চাই।" মধু মৃদু আওয়াজে বলল।

"অবশ্যই।" মহিলাটা এটা বলে ছেলেকে নির্দেশ দিলেন মধুর সাথে যেতে।মধু ওকে নিয়ে বারান্দায় এলো।তারপর পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক পলক দেখে বলল"বিয়ে কাকে বলে আপনি জানেন?"

ছেলেটা ফ্যালফ্যাল করে মধুর দিকে তাকিয়ে আছে।ওর তাকানো দেখে মধু মনেমনে বলল"কাকে কি বলছি আমি!" কিন্তু একে কি করে বিদায় করবো!হঠাৎ বারান্দা দিয়ে মধুর নজর গেলো নিচে দাড়িয়ে থাকা নিশির ওপর।মধু হালকা জোরে ডাক দিলো নিশিকে।

"নিশি আপু!"

নিশি নিজের নাম শুনতে পেয়ে ওপরে তাকিয়ে দেখলো মধু ওকে হাত নাড়ছে।নিশি মনেমনে রেগে থাকলেও মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে নিজেও হাত নাড়ালো।নিশি হাত নাড়তেই মধু ছেলেটাকে বলল"দেখো মেয়েটা তোমাকে হাত নাড়ছে,তোমাকে দেখে হাসছে।"

মধুর কথা শুনে ছেলেটা নিশির দিকে তাকালো।তারপর মধুর দিকে তাকিয়ে বলল"ও আমাকে দেখে হাসছে কেনো?আমাকে কি খারাপ লাগছে দেখতে?"

"আরে না বোকা।ও তোমাকে পছন্দ করে।"

মধুর কথা শুনে ছেলেটা কি বুঝলো কে জানে কিন্তু নিশির দিকে তাকিয়ে নিজেও ওকে হাত নেড়ে হাসলো।কিন্তু বিষয়টা নিশির দৃষ্টিগোচর হলো না।এবার মধু নরম কন্ঠে বলল"তোমার ওকে ভালো লেগেছে?"

ছেলেটা লাজুক হেসে মাথা নাড়ালো।

"তুমি ওর সাথে কথা বলতে চাও?"

ছেলেটা আবার মাথা নাড়িয়ে বলল"হুম।"

"কিন্তু ও তো তোমার সাথে কথা বলবে না।"

ছেলেটা মন খারাপ করে বলল"কেনো?আমি কি পঁচা ছেলে?আমি তো সবকথা শুনি।"

"না তুমি ভালো ছেলে।কিন্তু তুমি যদি ওকে বিয়ে করো তাহলেই ও তোমার সাথে কথা বলবে।"

ছেলেটা উৎফুল্ল গলায় বলল"আমি ওকে বিয়ে করবো।"

"এইতো ভালো ছেলের মতো কথা।এখন মাকে গিয়ে বলবে 'মা আমি নিশিকে বিয়ে করবো'।

" কিন্তু মা না করে দিলে কি করবো?"

"কান্না করবা।কান্না করলে মা রাজি হবে।"

ছেলেটা নিজের হাত দিয়ে মধুর গাল স্পর্শ করে বলল"তুমি কতো ভালো!"

"তুমিও।আচ্ছা চলো আমরা যাই।"

মধু ছেলেটাকে নিয়ে রুমে আসতেই ছেলেটা ওর মায়ের পাশে গিয়ে বলল"মা আমি নিশিকে বিয়ে করবো।"

ওর কথায় সবাই তাজ্জব বনে গেলে।আর মধু মনেমনে বলল"এবার আমি শুধু সার্কাস দেখবো।"

ছেলেটার মা ওকে ধমক দিয়ে বলল"মাহির কি বলছো তুমি এগুলো?"

ছেলেটা এবার বাচ্চাদের মতো মায়ের সামনে বসে কান্না করে দিয়ে বলল"মা আমি নিশিকে বিয়ে করবো।"ছেলের কথা শুনে মহিলা পড়েছে বিপাকে।ছেলের মা আইরিন রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল"আপনাকে পরে জানাবো আমরা।আজ আসি।"

আইরিন রহমান রেগে বলল"আপনার ছেলে যে প্রতিবন্ধী সেটা আগে বলেন নি কেনো?এখনি বের হোন।"

মহিলা আর ওনার স্বামী ছেলেটাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে নিয়ে গেলো।ওর চলে যাওয়ার পর মধু আইরিন রহমানকে খোঁচা মেরে বলল"আম্মু ছেলেটা কিন্তু ভালো তাই না?"

"তোর মাথা।এগুলো যে কোথা থেকে আসে কে জানে!"

এটা বলে আইরিন রহমান নিজের ঘরে চলে গেলেন।আর মধু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে বলল"তুমি পাতায় পাতায় চললে আমিও শিরায় শিরায় চলি মিসেস আইরিন রহমান।"

মধু আয়নার সামনে দাড়িয়ে একবার নিজেকে দেখলো।তারপর আস্তে আস্তে নিজের সাজসজ্জা মুছতে লাগলো।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসলো।আজকে মনটা ভালো।তবে ভালো লাগার মূল কারণটা মধু ধরতে পারছে না।দুপুরে ইয়াদের সাথে সময় কাটানো নাকি ছেলেপক্ষকে তাড়ানো!কোনটা মধুর মন ভালোর কারণ?যাইহোক মধু পড়ায় মন দিলো।

সাড়ে দশটা বাজে মধু পড়াশেষ করে টেবিল থেকে উঠলো।এখন খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে হবে।মধু ডাইনিং রুমে এসে খেতে বসলো।মধুর মা বলল"কালকে আমরা কুমিল্লা যাবো।"

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল"কেনো?"

"তোর খালাতো বোন সাইকার বিয়ে।"

"ও আচ্ছা।" 

"এখন গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিস।"

মধু মনেমনে খুশী হলো।কিন্তু মুখে কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে উঠতে না উঠতেই আইরিন রহমানের রহমানের ফোনে কল আসলো।আরিয়া ফোন দিয়েছে।মধু রিসিভ করে বলল"হ্যাঁ বল।"

"তোর জন্য খুশীর খবর আছে।"

মধু কৌতুহলী হয়ে বলল"কি খুশীর খবর?"

"তোর জন্য দুটো টিউশনি খুঁজে পেয়েছি।ক্লাস ফাইভের দুটো বাচ্চা।জমজ ভাই।দুটোকে একসাথে পড়াবি।মাসে পাঁচ হাজার দিবে।কনফার্ম করবো?"

"ভালোই হলো করে দে।কবে থেকে পড়াতে হবে?"

"সামনের মাস থেকে।"

"আচ্ছা শোন আমি তিনদিন কলেজে আসবো না।"

"কেনো?"

"খালাতো বোনের বিয়ে।কুমিল্লা যেতে হবে।"

"ও,,,আচ্ছা।সাবধানে থাকিস।"

"আচ্ছা।রাখি আল্লাহ হাফেজ।" মধু ফোনটা রেখে দিলো।এতক্ষণ মনটা ভালো ছিলো আর এখন আরো ভালো হয়ে গেলো।আল্লাহ যখন দেয় মনেহয় সবখুশী একসাথেই দেয়।মধু নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগ গুছানো শুরু করলো।ব্যাগ গুছিয়ে শুয়ে পড়লো।কালকে সকালেই রওনা দিতে হবে।
--------------
বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে মধু।অনেকদিন পর এতো ভালো লাগছে।শীতল বাতাস মধুর চোখেমুখে আঁছড়ে পড়ছে।দ্রুত গতিতে বাস ছুটে চলছে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে।কুমিল্লা যাওয়ার পথে অনেক গাছপালা আর ধান ক্ষেত।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।মধু মনেমনে বলল'ইশ!ইয়াদকে নিয়ে যদি এই ধান ক্ষেতগুলোর আইল ধরে হাঁটা যেতো!আমি সামনে হাটবো আর ও পিছনে।' মধু এগুলো ভাবছে আর লজ্জায় লাল হচ্ছে।কিন্তু এগুলো কি সম্ভব!হয়তো না!তবে কল্পনা করতে দোষ কোথায়!বাস্তবে না হলেও কল্পনায়ই আমরা এভাবে হাটবো!মধু মৃদু হাসলো।

বাসটা এখন মেঘনা ব্রিজের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।বাস থেকে নদীটাকে এতো সুন্দর লাগছে বোঝানো সম্ভব না।নদীতে মালবাহী জাহাজ,নৌকা,আর স্টিমার চলছে।মেঘনা এতো বিশাল যে এর শেষটা চোখে পড়ে না।যতোদূর চোখ যায় শুধু মেঘনার বিশালতা চোখে পড়ে।মধুর তখনকার মতো এখনও ইচ্ছে করছে ছোট একটা ডিঙি নৌকায় ইয়াদ আর ও ভাসবে মেঘনার বুকে!মধু মেঘনার দিকে তাকিয়ে দৃশ্যটা কল্পনা করতে করতে চোখ বন্ধ করলো।

মেঘনা ব্রীজ পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন ওদের বাস কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট আছে।একটু পরই পৌঁছে যাবে খালাদের বাড়ি।মধু হাতঘড়িতে দেখলো এখন সকাল ৯.০০ টা বাজে।মাত্র তিনঘণ্টা লেগেছে কুমিল্লা আসতে।

মধুর খালার বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম থানায়।ওটা খিলা ইউনিয়নে পড়ে।মধুরা খিলা বাজারে এসে পড়েছে।এখান থেকে ওর খালাতো ভাই শিহাবের সাথে ওদের বাড়ি যাবে।ইতিমধ্যে শিহাবও এসে পড়েছে।এখন যাওয়ার পালা।



চলবে...



Writer:- Arshi Ayat





NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner