> ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ১১, ১২ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প
-->

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব ১১, ১২ - Bangla Love Story - ভালবাসার গল্প - Love Story Bangla - প্রেমের গল্প

খিলা থেকে একটা সি এন জি নেওয়া হলো খালাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।সামনে শিহাব ভাই বসেছে আর মধুরা পিছনে বসেছে।গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে সি এন জি চলছে।কোথাও দুপাশে পুকুর তো কোথাও ধান ক্ষেত।মাত্র আধঘন্টা লাগলো বান্দুয়াইন পৌঁছাতে।এখানেই খালাদের বাড়ি।মধুরা সি এন জি থেকে নেমে একটু হাটলো।বাড়ির উঠানে আসতেই মধুর বড় খালা আইরিন রহমানকে জড়িয়ে ধরলো।আর সাইকা এসে মধু আর মিলিকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ওদের ভেতরে নেওয়া হলো।আরো অনেক আত্মীয় স্বজন আসছে।আজকে সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ।মামিরা আর খালারা কাজ করছে।মামারা বাজারে গেছে।শিহাব মধুদের বাসায় দিয়ে চলে গেছে ফুল আনতে।আরাফ  গেছে বাবুর্চির সাথে কথা বলতে।আরাফ,সাইকা আর শিহাব তিন ভাইবোন।মেঝো খালার কোনো ছেলে মেয়ে নাই।আর সবচেয়ে ছোট আইরিন রহমান মানে মধুর আম্মু।উনিই তিনবোনের মধ্যে ছোট।সবমিলিয়ে মধুর খালাতো ভাই দুইটা আর বোন একটা।
-----------------
একটু জিরিয়ে নিতেই মধুর আম্মু এসে বলল"ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বের করে গোসল করতে যা।সাথে মিলিকেও নিস।"

"কোথায় করবো গোসল?"

"পুকুরে গিয়ে কর।সাইকাও গেছে।ওর সাথে যা।"

"আচ্ছা।"মধু জামা কাপড়সহ মিলিকে নিয়ে পুকুরপাড়ে গেলো।গিয়ে দেখে সাইকা কোমর পানিতে নেমে গোসল করছে।মেয়েরা এখনা গোসল করে ছেলেরা মসজিদের সামনে একটা পুকুর আছে সেটায় করে।এই পুকুরঘাট'টা মোটা কাপড় দিয়ে বাঁধাই করা তাই রাস্তা থেকে কেউ দেখতে পায় না।সাইকা মধুকে হাত দিয়ে ইশারা করলো পানিতে নামার জন্য।মধু মিলিকে ঘাটের কিনারায় নিয়ে গিয়ে জিগ্যেস করলো" তুই কি আমার সাথে নামবি?"

"না আমার ভয় করে।" মিলি ভীত গলায় বলল।

"আচ্ছা তাহলে মগ দিয়ে গোসক করে নে।সাবান, শ্যাম্পু সবই আছে।"

মিলি ওপরে থেকেই গোসল করে ভেজা জামা কাপড় নিয়ে ঘরে চলে গেলো সেখানে পাল্টাবে।ওর এখানে পাল্টাতে লজ্জা লাগে।অবশ্য লজ্জা লাগারই কথা সবসময় চার দেয়ালের মধ্যে পাল্টানোর অভ্যাস হওয়ায় এখন এখানে আন ইজি লাগবেই।তবে গ্রামের মানুষ এখনো এভাবেই পাল্টায়।মিলি চলে যাওয়ার পর মধু সাইকাকে বলল"আপু ছেলে কি করে?"

সাইকা সাবান মাখতে মাখতে বলল"ইন্জিনিয়ার সাহেব।"বলেই সাইকা হাসলো।

"তুমি কি দেখছো ছেলেকে?"

"আরে গত তিনবছর ধরে তো দেখেই আসতেছি।"

"মানে?" মধু অবাক হয়ে গেলো।

"আমাদের রিলেশনের বিয়ে।কাউকে বলিস না যেনো?জানিসই তো আমাদের ফ্যামিলিতে প্রেমের বিয়ে মেনে নেয় না।"

মধু উত্তেজিত হয়ে বলল"আচ্ছা কাউকে বলবো না।কিন্তু কিভাবে কি হলো এটা বলো।"

"আরে শোন তোর দুলাভাই ঘটকরে দিয়া বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাইছে।আব্বায় বলছে আমারে দেখতে আসতে।তো তোর দুলাভাই তার পরিবার নিয়া আমারে দেখতে আসছে।তারপর আমরা এমন ভাবে ছিলাম যেনো কেউ না বুঝতে পারে আমাদের মাঝে কিছু আছে।আর সবচেয়ে মজা লাগছে যখন ওর মা ওরে জিগ্যেস করছিলো 'হিমেল তোর কি মেয়ে পছন্দ হইছে?' তখন ও নিচের দিকে তাকাইয়া বলছে 'মা তোমার পছন্দ হলেই হলো।" তারপর শ্বাশুড়ি মা আমারে আংটি দিয়া গেছে।তখন ওর কথা শুইনা আমার প্রচুর হাসি পাইছে।কিন্তু সবাই সব সবকিছু বুঝে যাবার ভয়ে হাসি নাই।

সবশুনে মধু হাসতে হাসতে বলল"আপু তোমরা সেই লেভেলের বাটপারি করছো।"

"কিচ্ছু করার নাই রে।আপোষে হইলা আমরা এমন করতাম না।বাড়িতে যদি বলতাম তাহলে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিতো।" 

"হুম,ভালোই করছো।কিছু মিথ্যা যদি সবকিছু ঠিক রাখতে পারে তাহলে ওটাই ভালো।এভাবে তোমরাও খুশী পরিবারও রাজি।আচ্ছা আপু এই তিনবছরে কি একবারও ধরা পড়ো নাই?"

"না বান্ধবীরা বাচায় দিসে।"

"বাহ!আচ্ছা যদি ভাইয়ার ফ্যামিলি যদি তোমারে না পছন্দ করতো তাহলে কি করতে?"

"এগুলো বলিস না বোন।এই চিন্তায় আমার দুইরাত ঘুম হয় নাই।"

মধু সাইকার কথায় হেসে দিলো।সাইকা ওর হাসি দেখে বলল"হাসিস না।আমি টেনশনে প্রায় মরেই যেতে নিছিলাম।"

"যাক মরো নাই তো।উল্টো বিয়ে করতেছো।"

"হুম তোর কি খবর?কাউকে পছন্দ করিস নাকি।"

সাইকার কথা শুনে মধুর চোখের সামনে ইয়াদের চেহারা ভেসে উঠলো।কিন্তু তবুও মধু হেসে বলল"আরে না আপু কি যে বলো!এখনো কাউকে পছন্দ হয় নাই।"

"আরে থাকলে বল আমি কাউকে বলবো না।"

"আরে না আপু কেউ নেই।থাকলে বলতাম তোমাকে।"

তারপর আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা আর৷ হাসাহাসি করে দুজনেই গোসল সেরে উঠে এলো।

তারপর ছেলেদের আগে খাবার দাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে মেয়েরা বসলো।এই বিষয়টা মধুর একবারেই অপছন্দ!কেনো মেয়েদেরই ছেলেদের পরে খেতে হবে?ভালো না লাগলেও কিছু করার নেই।কিছু বলতে গেলেই হামলে পড়বে সবাই।আর বলবে মেয়ে বেয়াদব হয়ে গেছে।তাই আর মধু কিছু বললো না।চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো।
-------------------
এখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে।উঠানে পাটি বিছিয়ে সব মুরুব্বিরা বসে একে একে সাইকার গায়ে হলুদ দিচ্ছে।আর গায়ে হলুদের পরই পাশের ঘরের এক ভাবী সাইকাকে মেহেদী পরাচ্ছে।মধুর প্রচুর বোরিং লাগছে।এটাকে গায়ে হলুদ বলে!ওফফ!কোনো মজা নাই প্রতিবন্ধীর মতো বসে থাকা ছাড়া।মধু ওইখান থেকে উঠে বাড়ির পেছনে চলে গেলো যেখানে রান্নাবান্না হচ্ছে।অন্তত ওখানের থেকে এখানে থাকা ভালো।রান্নার লোভনীয় ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।মধু একপাশে মোড়া পেতে বসে রান্না দেখতে লাগলো।কিন্তু পাঁচ মিনিট পর আর বসে থাকতে পারলো না মশার জ্বালায়।তাই হাটাহাটি শুরু করলো।কতক্ষণ আর এভাবে থাকা যায়।পড়াশোনা নাই,টিভি নাই।অসহ্য!তারচেয়ে না আসাই ভালো ছিলো।হঠাৎ মধুর মা পেছন থেকে ওকে ডেকে বলল"মধু,ইরিন ফোন দিয়েছে।নে কথা বল।"

আইরিন রহমান মধুকে ফোনটা দিয়ে চলে গেলো।মধু কানে দিয়ে 'হ্যালো' বলতেই ইরিন বলল"মধু তুমি নাকি কুমিল্লা গেছো?"

"হ্যাঁ খালাতো বোনের বিয়েতো তাই।"

"ও আচ্ছা।ইয়াদ ভাইয়াও কালকে রাতে কুমিল্লা গেছে ট্যুরে ওর বন্ধুদের সাথে।"

ইরিনের কথাশুনে মধুর লাফাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল"ও তাই নাকি?কুমিল্লার কোথায় আসছে?"

"জানি না তো ভাইয়া কিছু বলে নাই শুধু বলছে কুমিল্লা ট্যুরে যাবে।"

"ও আচ্ছা।"

"কি করো তুমি?" ইরিন বলল

"এইতো বোরিং হয়ে বসে আছি।"

"কেনো আজ না গায়ে হলুদ।"

"হুম,কিন্তু কোনো মজাই হচ্ছে না।শহরের আর গ্রামের গায়ে হলুদ আলাদা।"

"ওহ!আচ্ছা।ছবি তুললে আমাকে দিও।"

"আচ্ছা দিবো।তুমি কি করো?"

"আমি তোমার সাথে কথা বলছি।" বলেই ইরিন হাসলো।সাথে মধুও হাসলো।

মধুর মুখটা এতক্ষণ একশো ওয়াটের বাতির মতো জ্বললেও এখন ঠুস করে নিভে গেছে।এতো বড় কুমিল্লার কই আছে কে জানে!ওর সাথে কি আদৌও দেখা হবে!মধুর তবুও এতটুকু ভেবে ভালো লাগছে যে ইয়াদ এখানেই আছে।আল্লাহ চাইলে হয়তো দেখা হতেও পারে।তারপর মধু আর ইরিন আরো অনেক্ক্ষণ কথা বলল।
---------------
রাত দশটা বাজতেই গায়ে হলুদ শেষ।সবাই খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে গেছে।মধু,মিলি আর সাইকা একসাথে শুয়েছে।মধ্যরাতে মধুর ঘুম ভেঙে যায় এখনি ওয়াশরুমে যেতে হবে কিন্তু ওয়াশরুম বাড়ির বাইরে।ঘট থেকে বেরিয়ে একটু হাটলেই ওয়াশরুম।এমনিতেই মধু ভীতু।তার ওপর আবার বাইরে ওয়াশরুম।আর এখন না গেলেই নয়।মধু সাইকাকে ধাক্কা দিয়ে উঠানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সাইকা উঠলো না।এতোরাতে আর কাউকে ডাকাও যাবে না।তাই অগত্যা একটা টর্চ লাইট আর বুকে সাহস নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।গাড় অন্ধকার মধুর গা ভয়ে ছমছম করছে।আবার ওয়াশরুমের পাশেই তেতুল গাছ।মধু শুনেছে তেতুল গাছে নাকি ভূত থাকে।মধু ঢোক গিলতে গিলতে হাঁটছে। হঠাৎ পিছন থেকে কারো ভয়ানক হাসির শব্দ আসতেই মধু ফ্রিজ হয়ে গেলো।অতিকষ্টে ঘাড় ঘুরাতেই দেখলো.....


হঠাৎ পেছন থেকে কারো ভয়ানক হাসির শব্দ আসতেই মধু ফ্রিজ হয়ে গেলো।অতিকষ্টে ঘাড় ঘুরাতেই দেখলো কেউ নেই।আর হাসির শব্দটাও নেই।এবার মধু আরো ভয় পাচ্ছে।হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়েছে।মধু ঠিক করেছে যতোকিছুই হোক ও পিছনে তাকাবে না সরাসরি ওয়াশরুমে যাবে।তো যেই ভাবা সেই কাজ।মধু আর পিছনে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।কোনোমতে কাজ সেরে বেরিয়ে কলপাড়ে হাত ধুয়েই ঘরের দিকে হাটা শুরু করলো।হঠাৎ ঘরের সামনে আসতেই সেই ভয়ানক হাসির শব্দটা আবার শোনা গেলো।মধু তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে দরজা আটকে সাইকার পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলো।মধুর প্রচন্ড ভয় করছে।অনেক্ক্ষণ দাঁত মুখ খিঁচে চোখ বন্ধ রাখার পর আবার ঘুম চলে এলো মধুর।
-------------
বাচ্চাদের চিল্লাচিল্লিতে মধুর ঘুম ভাঙলো।পিটপিট করে চোখ মেলতেই দেখলো পাশে সাইকা,মিলি কেউই নেই ওদের বদলে আসিফ,সৈকত ওরা বসে একটা আরেকটার চুল টানছে।আসিফ আর সৈকত ছোট মামার ছেলে।সৈকত বড় আর আসিফ ওর দুই বছরের ছোটো।মধু উঠে বসে দেয়াল ঘড়িতে তাকাতেই দেখলো আট'টা বাজে।আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে কলপাড়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ব্রাশ করে রান্নাঘরে আসতেই দেখলো মামিরা,খালারা আর ওর মা সহ কথা বলছে আর রুটি বানাচ্ছে।মধু আশেপাশে সাইকা কে না দেখে সারা বাড়ি খুঁজলো।অবশেষে না পেয়ে ধানক্ষেতের আইল ধরে হাটতে লাগলো।চারপাশটা সবুজে ছেয়ে আছে।মধু ডান দিকে তাকিয়ে মাঠ দেখতে দেখতে হাটছিলো।হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে কাঁদার মধ্যে পড়ে গেলো।ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো যে মধু কাদায় পড়ে যাওয়ার পাঁচ সেকেন্ড পর বুঝতে পারলো আসলে কি হয়েছে।প্রচন্ড রাগ উঠলো মধুর কে এই আকাম করেছে সেটা দেখার জন্য তাকাতেই মধু বিষ্ময়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলো।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ওর।ওর সামনে স্বয়ং ইয়াদ দাড়িয়ে আছে।আর নিজের হাতটা মধুর দিকে বাড়িয়ে ধরে রেখেছে।মধু ইয়াদের হাতে নিজের হাতটা দিতেই ইয়াদ মধুকে টেনে তুললো।তারপর বলল"সরি আপু আমি দেখি নি।"এটা বলেই চলে যেতে নিলেই মধু ইয়াদের পথ আটকে দাড়ালো তারপর বলল"এই,এই আপনি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেনো?"

"এক্সকিউজ মি আপনি কি আমাকে চেনেন?"

"আরে কি বলেন এতো তাড়াতাড়ি সবকিছু ভুলে গেলেন নাকি?আমি মধু।"

"সিরিয়াসলি,তুমি মধু?"সন্দেহের দৃষ্টিতে জিগ্যেস করলো ইয়াদ।

"হ্যাঁ।" মধু অভিমানের সুরে বলল

এবার ইয়াদ বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে হাসতো লাগলো।হাসি থামতেই বলল"ওহ!সরি তোমার পুরো মুখে কাঁদা লেগে থাকায় চিনতে পারি নি।"

মধু মুখ বাকিয়ে বলল"আপনিই তো ফেলেছেন আমাকে।"

"আচ্ছা বাবা সরি।তারপর বলো তুমি কুমিল্লায় কি করো?"

মধু আর ইয়াদ আইল ধরে হাঁটতে লাগলো।মধু ইয়াদের প্রশ্নের উত্তরে বলল"আমার খালাতো বোনের বিয়েতে এসেছি।"

"আচ্ছা এইকথা।তুমি আমাকে দাওয়াতই দিলে না।"

"আপনার সাথে তো কথাই হয় নি।তবে এখন দিলাম আজকে আপনার দাওয়াত।আজকে আপুর বিয়ে।"

"ধন্যবাদ দাওয়াতের জন্য কিন্তু আসতে পারবো না।বন্ধুদের সাথে ঘুরবো।"

"ওহ!এখন কোথায় যাচ্ছেন?"

"সামনে খাল'টা দেখছো না!ওটার ওপাড়ের মাঠে এখন আমরা বন্ধুরা মিলে ফুটবল খেলবো।চাইলে দেখতে পারো।"

"আমি দেখবো।" মধু উৎফুল্ল হয়ে বলল।

"চলো তাহলে।আর শোনো খালের পানিতে মুখটা ধুয়ে নিও।"

"আচ্ছা।"
তারপর মধু খালের এপাশেই থকলো আর ইয়াদ ওপাশে চলে গেলো।এপাশ থেকে ওপাশ ভালো ভাবেই দেখা যায়।ফুটবলের কোড করা হলো।তারপর সবাই রেডি হতে লাগলো।ইয়াদ শার্ট খুলে ফেললো।নিচে স্যান্ডো গেঞ্জি ছিল।আর প্যান্টকে হালকা গুটিয়ে নিলো।সবাই চলে আসার পরই খেলা শুরু হয়ে গেলো।অনেকেই দেখছে খেলা।হাড্ডা হাড্ডি লড়াই চলছে মাঠে।কোনো পক্ষেই গোল হচ্ছে না।অনেকসময় পর ইয়াদের টিমে একটা গোল হলো।তারপর আবার খেলা শুরু হলো।সবাই দৌড়াচ্ছে বলের পেছনে।কে কার থেকে বল নিবে আর গোল দিবে এই চিন্তায় আছে।আস্তে আস্তে সূর্যের তাপও বাড়ছে।আনুমানিক পৌনে দশটাতো বাজেই।সব ছেলেদের শরীর থেকে দরদর করে ঘাম পড়ছে।রোদে ঘামের ফোটাগুলো চিলিক দিচ্ছে।তারপর পরের গোলটা ইয়াদ'রা একটুর জন্য দিতে পারে নি।তবে নিজেরা গোল খাওয়া থেকে বেঁচেছে।তারপর আবার পুরোদমে খেলা চলছে।খেলা দেখতে দেখতে কখন যে এগারোটা বেজে গেছে খবর নেই।মধুর হুশ আসতেই খেলা রেখেই বাড়ির দিকে দৌড় দিলো।এতো দেরি হয়ে গেছে!এখন মা জানলেই ইচ্ছামতো মারবে।মধু তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতেই ওর বড় খালার মুখোমুখি পড়লো।তিনি ভ্রু কুঁচকে বলল"দৌড়াচ্ছিস কেনো?কোথায় গিয়েছিলি?"

"ঐতো একটু এদিকেই গিয়েছিলাম।"

"ও,,,আচ্ছা যা গিয়ে গোসল করে রেডি হয়ে নে।দুপুরেই তো বরযাত্রী চলে আসবে।"

"ওও,,,খালামনি সাইকা আপু কোথায়?"

"গোসলে করতে গেছে মিলিকে নিয়ে।"

"আপু পার্লারে যাবে না?"

"এই বাড়ির মেয়েরা পার্লারে যায় না।ওর বান্ধবীরা সাজিয়ে দিবে।"

"ও,আচ্ছা।আমি তাহলে গোসল করতে যাই।"
মধু দৌড়ে ঘরে গিয়ে ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বের করে পুকুর পাড়ে চলে গেলো।
----------------
বরযাত্রী চলে এসেছে তবুও সাইকাকে সাজানো হয় নি।বিয়ের পর যখন বরযাত্রী খেতে বসবে তখন সাজানো হবে।সাইকাকে ঘিরে অনেক মুরুব্বি আর ওর বান্ধবীরা বসে আছে।বাইরে থেকে কাজির কন্ঠ শোনা গেলো।তিনি ভেতরে এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।তারপর সাইকাকে বললেন কবুল বলতে।সাইকা একটু চুপ করে রইলো।সবাই বলার পর আস্তে আস্তে কবুল বলল।এরপর সবাই আলহামদুলিল্লাহ পড়লো।কাজি বেরিয়ে যেতেই ওর বান্ধবীরা মিলে ওকে সাজানো শুরু করলো।আর মধু 
ওই ঘর থেকে বের হতেই দেখলো বড় খালার ঘরে ছোট বাচ্চাদের খেতে দেওয়া হয়েছে।এতক্ষণ ধরে মধু এটাই চাইছিলো।তাই ওখানে গিয়ে বাচ্চাদের পাশে বসে পড়লো।ওকে বসতে দেখে মেঝো খালা বলল"কি রে মধু তুই এখানে বসেছিস কেনো?"

"খিদেয় পেট ব্যাথা করছে খালা।আমাকে খাবার দাও।"

"সোনা আরেকটু অপেক্ষা কর।সাইকাকে বিদায় দিয়ে তারপর আমরা খাবো।এখন খেলে মানুষ খারাপ বলবে।"
অগত্যা মধুর উঠে যেতে হলো।খাওয়া নিয়ে এতো তামাশা সত্যিই অসহ্য!এখন খেলে খারাপ কেনো বলবে সেটাই মধুর মাথায় ঢুকছে না।মধু মনেমনে ভাবলো"এভাবে ক্যাবলার মতো ওয়েট করতে পারবো না।কিছু একটা করতে হবে।হঠাৎ মাথায় একটা আইডিয়া আসলো।'মধু চট করে মেঝো খালার রুমে গিয়ে ওনার শোকেস থেকে একটা কাঁচের প্লেট নামিয়ে মেঝো খালার কাছে এলো।তারপর ওনার সামনে প্লেট টা ধরে বলল"খালামনি,এই প্লেটে একটু ভালো করে সাজিয়ে দাও।"

ওর খালামনি ধমকে বলল"তোকে বললাম না পরে খেতে।তর সইছে না একবারে।"

"আরে খালামনি আমার জন্য না তো।সাইকা আপুর বান্ধবীর আম্মুর জন্য।বড় খালা মনি আমাকে বলল তোমাকে গিয়ে বলতে।" মধু ব্যাস্ত গলায় বলল।

"ও,,আচ্ছা সেটা আগে বলবি তো।প্লেট টা দে এবার।"

মধু প্লেট টা এগিয়ে দিতেই উনি ভালোমতো পোলাও,মাংস,ডিম,সালাদ,আরো হাবিজাবি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো।মধু প্লেট টা নিয়ে চুপচাপ রান্নাঘরে চলে গেলো।রান্নাঘরে আপাতত কেউ নেই।মধু রান্নাঘরে ঢুকেই দরজাটা আটকে খাওয়া শুরু করলো।অর্ধেক খাওয়া শেষ হতেই কেউ একজন দরজা খুলতেই মধু ফ্রিজ হয়ে গেলো।দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো আরাফ দাঁড়িয়ে আছে।আরাফ ওকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল"কি রে মধু তুই এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছিস কেনো?"

মধু ধরা পড়া গলায় বলল"আসলে আমার অনেক ক্ষিধে পেয়েছে কিন্তু খালামনি বলছে পরে সাইকা আপুকে বিদায় দিয়ে খেতে।তাই এখানে বসে খাচ্ছি।"

মধুর কথা শুনে আরাফ হাসতে হাসতে বলল"যা আমার রুমে গিয়ে খা।এখানে খেলে এমনিতেও ধরা পড়বি।"

"কিন্তু এখন বের হবো কিভাবে?" মধু অসহায়ের সুরে বলল।

"তোর প্লেট টা আমার হাতে দে।আমি প্লেট টা আমার ঘরে রেখে আসছি।তুই হাত ধুয়ে ওখানে চলে যাস।"

"আচ্ছা ভাইয়া।"
আরাফ মধুর প্লেট নিয়ে চলে গেলো।মধু রান্নাঘরে কলসির থেকে পানি নিয়ে হাতটা ধুয়ে আরফের ঘরে চলে গেলো।আরাফ নিজের পড়ার টেবিলে ওর প্লেট টা ঢেকে রেখেছে।মধু গিয়ে আবার খেতে বসলো।খাওয়া শেষ করে প্লেট টা ধুয়ে আবার মেঝোখালা মনির শোকেসে রেখে দিয়ে বের হতেই কান্নাকাটি শুনতে পেলো।মানে সাইকাকে বিদায় দিচ্ছে।মধু গিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো।সাইকা সবাইকে ধরে ধরে কাঁদছে।কান্নাকাটি একটু কমলে শিহাব আর আরাফ সাইকাকে গাড়িতে তুলে দিলো।সাইকার সাথে মিলি গেলো।এটা নাকি নিয়ম কনের সাথে কেউ একজন যায়।প্রথমে সবাই চেয়েছিলো মধু যাক কিন্তু মধুর মা মানা করে দেওয়ায় মিলি গেলো সাইকার সাথে।
---------------
সাইকাকে বিদায় দেওয়ার পর মধুর মা আর মধুর মেঝো খালা সাইকার মাকে শান্তনা দিতে লাগলো।একমাত্র মেয়েকে বিদায় দিয়ে তিনি ভেঙে পড়েছেন।মধু কিছুক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধান খেতে চলে এলো।এখন বিকেল।সূর্যটা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়েছে।হালকা একটা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে ধান ক্ষেতের ওপর দিয়ে।মধু হাঁটতে হাঁটতে খালের পাড়ে চলে এলো।সকালেও এসেছিলো ইয়াদের খেলা দেখার জন্য কিন্তু পরে আর যাওয়ার সময় কথা হলো না।আচ্ছা ইয়াদকে খেলা শেষ হওয়ার পর মধুকে খুঁজেছিলো নাকি ওর মনেই ছিলো।মধু আস্তে আস্তে কিনারা বেয়ে নেমে খালের প্রবাহিত পানির ধারায় হাত ভিজালো।কি শীতল পানি!আশেপাশে তেমন কেউ নেই।মধু উঠে দাড়ালো।তারপর আবার ধান ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতে লাগলো।এইমুহুর্তে মধুর একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে।মধু গুনগুনিয়ে গাওয়া শুরু করলো
"তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।"
----------------
বাসায় তেমন মেহমান নেই।আর মধুর সমবয়সী তো কেউই নেই।সব খালা,মামী,মার বয়সী।তার বড়খালার রুমে বসে কথা বলছে।আরাফ,শিহাব বাইরে গেছে।মধুর বোরিং লাগছে।ও বড়খালার রুমে ঢুকতে গিয়েই থমকে দাড়ালো।ভেতর থেকে ওর মায়ের গলার আওয়াজ আসছে।তিনি বলছেন"সাইকার তো বিয়ে হয়ে গেছে।এরপর মধুর বিয়ে দিবো।দুই তিনমাসের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দিবো।"

তারপর কেউ একজন বলল"হুম,আপা আপনার মেয়েতো বড় হইছেই।আমি একটা ছেলেরে চিনি খুব ভালো।আপনি বললে আমি আসতে বলমু।"

"আচ্ছা আগে সাইকার বউ ভাত হোক।ওর বউ ভাতের পরেরদিন আসতে বইলো।"

আইরিন রহমানের কথা শেষ হতেই ওর বড় খালা বলল"তুই এতো তাড়াহুড়ো লাগিয়েছিস কেনো রে?সাইকা অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর ওর বিয়ে দিয়েছি আমরা।আর তোর মেয়েতো এখনো ইন্টার পরীক্ষাই দেয় নি।"

"সাইকাতো ভালো।কিন্তু আমার মেয়ের তো ভরসা নাই কোন সময় কার সাথে ভেগে যায় ঠিক নাই।বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে পারলেই বাঁচি।" আইরিন রহমান বললেন।

মধু এরপর আর ওখানে দাড়ালো না।সাইকার রুমে এসে বালিশের ওপর শুয়ে কান্না করতে লাগলো।হঠাৎ কেউ একজন ওর মাথাশ হাত রাখতেই কান্না থামিয়ে উঠে বসতেই দেখলো.......



চলবে...



Writer:- Arshi Ayat


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner