ফেসবুকে ঢুকে দেখি আসলেই একাউন্ট আবার হ্যাক করে নিছে মেয়েটা, এখন কি করবো ভয়ে ভয়ে বাসার দিকে গেলাম,বাসায় ঢুকেই দেখি আব্বু একটা রোলার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে...
ও আল্লাহ আমি শেষ...
আব্বু, কিরে বান্দর পোলা তুই তো দেখি একদম পাক্কা প্রেমিক রে...? সাদিয়ারে কি বলে ডাকছ...?
বাবুর আম্মু, ময়নামতি।
আকাশ, আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি,আর আব্বু রোলারটা হাতে নিয়ে আমাকে গেঁজাইতেছে, পাশ থেকে আম্মু তো খিটখিট করে করে হাসতেছে।
আব্বু, কিরে কথা বলিস না কেন...?
তোরে আজকে আমি বলে রোলারটা হাতে নিয়ে আমার দিকে তেঁড়ে আসলো,আমি তো সোজা রুমে দৌড়, রুমে ঢুকেই দরজা আটকে দিছি, আর মনে মনে ঐ মেয়ের গুষ্টি উদ্ধার করতেছি, ছেমড়ি তোরে খালি হাতের সামনে একবার পাই, তোর চুল সব গুলা কাইটা নিয়া শাগ রান্না করুমু।
এদিকে আব্বু দরজার ঐপাশ থেকে চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে, তুই কত সময় এভাবে দরজা বন্ধ করে থাকবি,একসময় না এক সময় তো বের হবি, তখন মজা বুঝাবো...!
আকাশ, আব্বু সেই আশা ভুলে যাও, আমি আর রুম থেকে বের হবো না,রুমে বসেই তোমার বউমার সাথে কথা বলবো।
আব্বু, ওরে বান্দর তোরে হাতের সামনে পাই একবার।
আকাশ, কিচ্ছুই করতে পারবা না, আর আম্মু তুমি তোমার আব্বুরে থুক্কু তোমার হাসবেন্ডরে এখান থেকে নিয়ে যায়, দরজা আমি খুলবো না।
আকাশের আব্বু তো রাগে ফুলতেছে, আকাশের আম্মু হইছে এবার চলে আসো।
আকাশের আব্বু, এই তুমি আমাকে আটকাবে না, যাও ছেলের হয়ে ওকালতি করতে হবে না, ওর পিঠের চামড়া তুলে ফেলবো আজকে।
আকাশ, আব্বু এবার কিন্তু তোমার পিঠের চামড়া থাকবে না, আম্মু তোমার জামাই কি করছে জানো...?
আম্মু, কি করছে.....?
আকাশ, পাশের বাসার কাজের মহিলা আছে না...?
আকাশের আম্মু তো রেগে মেগে আগুন, পাশের বাসার কাজের মহিলার সাথে কি করেছে....?
বল তাড়াতাড়ি....?
আকাশ, না থাক বলমু না আমার শরম করে
এই সব কথা আমার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারবো না।
আম্মু, এই জন্যই তো বলি বদমাইশ লোকটা বাহিরে গেলে এত দেরি করে কেন বাড়ি ফিরে, দাঁড়াও আজকে তোমায় মজা বুঝাচ্ছি!
আকাশের আব্বু তো পুরা থ, ওরে বাটপার ওরে বাটপার, বাপের উপরে বাটপারি,নালায়েক, চুতিয়াবাজ পোলা বাপেরই ফাঁসাই দিলো,তোরে খালি একটা বার হাতের সামনে পাই তোর হাড়-গোড় একটাও জায়গায় খুজে পাবি না।
আম্মু, ঐ তোমার কত্ত বড় সাহস আমার সামনে আমার পোলারে বকা দাও, আমার ছেলে তো অবুঝ, তাই একটু আকটু দুষ্টামি করে, কিন্তু তুমি তো বুইড়া,তুমি কেমনে এই কাজ করছো,তোমার আজকে ভাত নাই ঘরে, এই আকাশ তুই বের হ রুম থেকে, দেখি তোর গায়ে কে হাত দেয়...?
আকাশ, রুম থেকে বের হয়ে আব্বুর সামনে চুলে হাত দিয়ে দুইটা ঝাঁকা দিলাম, শার্টের কলারটাও উপরে তুলে দিলাম।
আব্বুর অবস্থা নাজেহাল কিছু বলার মত ক্ষমতা নাই এখন উনার, কারন মহারানী ভিক্টোরিয়াকে আমি হাত করে ফেলেছি।
আম্মু, যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে, আজকে ঐ লোকের কোন খাবার নাই।
আকাশ, ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলাম - আম্মু যত ভালো ভালো খাবার ছিলো সব আমার পাতে তুলে দিলো, আমার লক্ষ্যি ছেলে খা বেশি করে, ঐ লোকের খাবার ও আজকে তুই খা, ঐ লোকটাকে আজকে কোন খাবার দিবো না।
আকাশের আব্বু, গেলাম ছেলেরে শাসন করতে কিন্তু ছেলে উল্টা আমাকে ফাঁসাই দিলো। মা ছেলের খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশের আব্বু।
আকাশ, আমি বলি কি আম্মু খাইতে দিও অল্প করে, না হয় দেখ যেমনে করে তাকাই আছে আমাদের দিকে, পেটে গিয়েও খাবার গুলা হজম হবে না..!
আম্মু,হা ঠিক বলেছিস,
এই যে সাহেব আসেন অল্প খেয়ে যান.........?
আকাশের আব্বু চুপচাপ গিয়ে খেতে বসে,
আকাশের আম্মু, প্লেটে অল্প কিছু ভাত দেয় আর একটা ডিম দেয়, ধরেন এগুলা খেয়ে শেষ করেন।
আকাশের আব্বু, আমি শুধু ডিম আর এই অল্প কয়টা ভাত খাবো যে...
আকাশ, আম্মু লোকটা বেশি কথা বলতেছে, দয়া মায়া করে খেতে দিছো কেন সেটাই ভুল হইছে খাবার গুলা নিয়ে নাও।
আম্মু, হা ঠিক বলেছিস,এই যে দেন খেতে হবে না।
আব্বু,
আচ্ছা আচ্ছা খাচ্ছি।
আম্মু, তাহলে চুপচাপ কথা ছাড়া গিলেন...!
আকাশ, খেয়ে দেয়ে রুমে চলে আসলাম,ফেসবুকে ঢুকবো তখনি মনে হলো ফেসবুক একাউন্ট মেয়েটা আবার হ্যাক করে নিছে, এখন কি করবো, ঐ মেয়েটার নাম্বার তো আছে ফোন করি মেয়েটাকে।
মেয়েটার নাম্বারে ফোন করতেই ফোনটা সাথে সাথে রিসিভ করলো, মনে হয় এত সময় আমার এই অপেক্ষা করছিলো।
আকাশ, এই যে আপনি আবার আমার একাউন্ট কেন হ্যাক করেছেন...?
আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি....?
মেয়েটা, তুই আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছিস, তোকে মানা করেছিলাম কারোর সাথে কথা না বলতে কারোর দিকে না তাকাতে, এটা বলা সত্যেও তুই ঐ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলি কোন সাহসে...?
আকাশ, আচ্ছা আমি কোন মেয়ের দিকে তাকাবো না কথা বলবো তাতে আপনার কি এমন জাতপাত যায়...?
মেয়েটা, না বলছি না তুই শুধু আমার সাথে কথা বলবি.....!
আকাশ, কেন এমন কোনো নিয়ম আছে নাকি যে আপনার সাথেই শুধু আমার কথা বলতে হবে...?
মেয়েটা, হা আছে কারন আমি তোমাকে ভালো...
বলতে গিয়ে থেমে গেলো...!
আকাশ, হা কি আপনি আমাকে...?
মেয়েটা, নাহ কিছু না আর আমি এতকিছু জানি না - যেটা বলেছি সেটাই, এর ব্যতিক্রম কিছু হলে তোমার খবর করে ছেড়ে দিবো।
আকাশ, আচ্ছা দেখা যাবে এবার পাস টা দেন...?
মেয়েটা,দিচ্ছি ওয়েট করো....!
আকাশ, ভাবতেছে মেয়েটা কে যে তার সাথে এমন শুরু করেছে,আর কেনই বা এমন করতেছে, মেয়েটা কি আমাকে ভালোটালো বাসে নাকি, আচ্ছা মেয়েটাকে দেখা দরকার।
একটু পর মেয়েটা মেসেজ করে পাস দিলো,
আকাশ, পাস টা নিয়ে আইডিতে ঢুকে,আইডিতে ঢুকে তো বেক্কলের মত তাকিয়ে আছে।
কারন ওর নিক নেমের মধ্যে দেওয়া মালিহার জামাই, সে বুঝে গেছে মেয়েটার নাম মালিহা।
আকাশের যেন রাগ উঠে গেছে, তাও সে দমিয়ে রেখে শিশির কণা আইডিটাতে মেসেজ করে,আচ্ছা আপনার কির একটা ছবি দেওয়া যাবে....?
মালিহা, দেওয়ার যাবে তবে পুরো ফেইসটা দেখতে পারবা না...?
আকাশ, যেমন এই হোক আমার চলবে,আকাশ মনে মনে ভাবে এটা যদি ওর পরিচিত কেউ হয় ওর শরীরের গঠন দেখে বুঝে যেতে পারবো।
মালিহা, একটু পর একটা ছবি সেন্ট করে,
আকাশ, আকাশ তো দেখে পুরো টাশকি,মেয়েটা মুখে হাত দিয়ে ছবি দিছে কিন্তু আকাশ বুঝে গেছে মেয়েটা হুর, কারন ওর হাত আর কপাল দেখে বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা রূপবতী...
আর আকাশ ওকে আগে কখনো দেখে নাই।
মালিহা, দেখা হয়েছে আমাকে...?
আকাশ, চেহারা ঢাকা ভালো করে দেখা যায় না...!
মালিহা, আচ্ছা কোন সমস্যা নাই,এক সময় সরাসরি তোমার সামনে চলে আসবো..!
আকাশের ও কেন জানি মেয়েটার প্রতি দূর্বলতা কাজ করছে, দুজনে অনেকটা সময় কথা বলে,
মালিহা, এই অনেক হয়েছে এবার ঘুমাও পরে কথা বলবো...!
আকাশ, আচ্ছা তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো,
আকাশ তারপর লাইন থেকে বের হয়ে যায়,
বিকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটু হাটতে বের হয়, বাসার পাশের রোডটা দিয়েই ঘুরঘুর করছে, এমন সময় হটাৎ দেখে সেদিনের মেয়েটা, আকাশ মেয়েটার দিকে হা হয়ে এক নজরে তাকিয়ে আছে,
মেয়েটা, আকাশকে ক্রস করে চলে যায়, আকাশ তো ওর দিকে ভ্যবলার মত তাকিয়ে আছে,একটু পর খেয়াল হয় মেয়েটা ওকে ক্রস করে অনেকটা দূর চলে গেছে, আকাশ দৌড়ে মেয়েটার কাছে যায়, এই যে আপনার সাথে একটু কথা আছে....?
মেয়েটা, মিটমিট করে করে হাসছে,
আকাশ, এই যে এভাবে হাসার কি আছে, একটু কথাই তো বলতে চেয়েছি।
মেয়েটা, আচ্ছা জ্বি বলুন...?
আকাশ, আচ্ছা আপনি এত সুন্দর কেন....?
আপনাকে যখনি দেখি নজর এই ফেরাতে পারি না, অন্য এক দুনিয়ায় হারিয়ে যাই....!
মেয়েটা, এখনো মিটমিট করে হাসছে,
আপনি কি আমার প্রশংসা করছেন না লাইন মারছেন কোন টা...?
আকাশ, ছি ছি ঐ সব না,তবে আসলে কেন জানি আপনাকে দেখলে আমার হুশ উড়ে যায়,
মেয়েটা, ওহ ভালো তো।
আকাশ, আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনার হাতটা ধরতে পারি....?
মেয়েটা, আচ্ছা ধরেন তবে একটা শর্তে....?
আকাশ, বলেন আমি সব শর্তে রাজি আছি...?
মেয়েটার শর্ত শুনে আকাশ একটা লাফ দিয়ে মাটিতে বসে যায়.!
চলবে...
Writer:- আকাশ মাহমুদ