আকাশ, আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনার হাতটা একটু ধরতে পারি...?
মেয়েটা, আচ্ছা ধরেন তবে একটা শর্তে।
আকাশ, বলেন আমি আপনার সব শর্ত মানতে রাজি আছি, মেয়েটার শর্ত শুনে আকাশ লাফ দিয়ে মাটিতে বসে যায়...!
মেয়েটা, সারাজীবন এভাবে আমার হাত ধরে রাখতে হবে, কখনো ছাড়তে পারবেন না...?
আকাশ, তো অবাক মেয়েটা কি বললো, ওর তো স্বপ্ন মনে হচ্ছে এই সব কিছু, এই আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন...?
মেয়েটা, না মজা করবো কেন, আমি সত্যি বলছি....!
আকাশ, তো মহাখুশি, সে কল্পনাও করতে পারছে না ওর সাথে কি ঘটছে, হা সারাজীবন আপনার হাত ধরে রাখবো কখনো আপনার হাত ছাড়বো না।
মেয়েটা, তাহলে চলেন এখন আমাকে আইসক্রিম খাওয়াবেন...? আকাশ, আচ্ছা চলো, আর তোমার নামটা কি সেটাই তো জানা হলো না..?
মেয়েটা, আমার নাম মালিহা ইসরাত মানহা...
আকাশ, বাহ সুন্দর নাম তো..!
মানহা, ধন্যবাদ আপনাকে...!
আকাশ, এই এই এবার আর আপনি আপনি করো না, তুমি করেই বলো....? মানহা, আচ্ছা...!
দুজনে মিলে আইসক্রিম খাচ্ছে আকাশ তো কোন এক স্বপ্নেররাজ্যে হারিয়ে গেছে, দুজনে অনেকটা সময় এক সাথে বসে সময় কাটায়, দুজন অনেকটা ফ্রি হয়ে গেছে, আকাশ মানহাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে সে বাসায় চলে যায়, আকাশ শুয়ে শুয়ে মানহাকে নিয়ে ভাবছে, এমন সময় ফোনটা বেজে উঠে, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ঐ হ্যাকার মেয়েটা ফোন করেছে, আকাশের তো রাগ উঠে গেছে, কত সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম মেয়েটা একদম বারোটা বাজিয়ে দিলো।
আকাশ, ফোন রিসিভ না করে ফোনটা বালিশের পাশে ফেলে রাখে।
মালিহা, তো একটার উপরে একটা ফোন করেই যাচ্ছে, আকাশ, খুব বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে, এই কি হয়েছে এতবার ফোন দিচ্ছো কেন...?
মালিহা, তুই ফোন রিসিভ করতে এত দেরি কেন করলি....? আকাশ, আরে আজিব তো আমার কি কাজ থাকতে পারে না নাকি...?
মালিহা, এই শোন তোর কি কাজ আমি ভালো করেই জানি, ঐ মেয়েটার সাথে আজকে বেশ ভালোই তো লাইন লাগিয়েছিস, তোকে এতবার নিষেধ করার পরেও আমার কথা কানে ঢুকে নি....?
আকাশ, একটা জিনিস মাথায় কাজ করছে না, যত যাই করি মালিহার কানে কি করে যায় এই সব কিছু এই এই লিসেন..?
আমি কি করবো না করবো এতে তোমার কি হা, তুমি কি আমার বিয়ে করা বউ নাকি....? না আমার জিএফ....?
মালিহা, হা আমি তোর বউ আমিই তোর জিএফ, আর আমি এই রাগ গলাবো তোর কোন সমস্যা...?
আকাশ, এহ আসছে কোথা থেকে চেনা নেই জানা নেই বউ দাবী করতে, শুনো একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দেই, আমি মানহাকে ভালোবাসি, সো এরপর থেকে আমাকে আর বিরক্ত করবা না, আর তোমার যা মনে চায় তাই করো, আইডি হ্যাক করবা কি না করবা করো, আমি অন্য একাউন্ট অপেন করবো...
মালিহা, তোর মুখ ফুটেছে হা, দ্বারা তোর ব্যবস্থা করছি, আমিও দেখবো মানহার সাথে তুই কি ভাবে রিলেশন করিস।
আকাশ, মালিহা রেগে মেগে ফোন কেটে দিলো, ধুর তুই আমার কিছুই করতে পারবি না, আকাশ আবার মানহাকে নিয়ে ভাবা শুরু করে, ইশ মেয়েটার নাম্বারটা নেওয়া উচিৎ ছিলো, না হয় এখন কথা বলতে পারতাম, অনেকটা সময় মানহার চিন্তায় বিভোর ছিলাম, নাহ একটু ফেসবুক থেকে ঘুরে আসি, ফেসবুকে ঢুকে দেখি মালিহা আমাকে ব্লক করে দিয়েছে,আর আমার আইডি থেকে নিক নেইম টাও কেটে দিয়েছে, এটা দেখে কি যে আনন্দ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবো না, কারন আপদটা নিজে থেকেই বিদায় হয়েছে।
এমন সময় আম্মু ডাক দিয়ে বললো নাস্তা করে নিয়ে শার্টটা গায়ে দিতে আমাকে নিয়ে নাকি কোন এক আন্টির বাসায় যাবে।
নাস্তা করে নিয়ে আম্মুর সাথে বের হলাম, আম্মু গাড়ি নিতে হবে নাকি...?
আম্মু, আরে নাহ কাছেই বাসা ওদের, আকাশ, ওহ আচ্ছা আম্মু আগে আগে হাটছে আর আমি আম্মুর পিছে পিছে, আম্মু একটা বাড়ির সামনে গিয়ে থেমে গেলো আর আমাকে বললো শুরুতে ঢুকে কিন্তু সালাম দিবি...?
আকাশ, আচ্ছা আম্মু, তবে আমি বেশ অবাক, কারন এই ফ্লাটে মানহারাও থাকে।
ভিতরে ঢুকে আম্মুর কথা মত আন্টিকে সালাম দিলাম,
আন্টিতো আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কি কান্না, আম্মুও কান্না করছে, আমার মাথায় যেন কিছুই কাজ করছে না, আম্মু আমার সাথে আন্টির পরিচয় করিয়ে দিলো।
আম্মু, এটা হচ্ছে তোর আন্টি উনাদের সাথে আমাদের পরিচয় তোর জন্মের আগে থেকেই, এতদিন কিছু ঝামেলার কারনে সম্পর্ক খারাপ ছিলো, কিন্তু আজ আবার তোর আন্টি ফোন দিয়ে আমাকে আসতে বললো।
আন্টি আর আম্মু বসে বসে গল্প করছে, আর আমি একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে আছি, একদম মেজাজ খারাপ হচ্ছে, উনারা উনাদের মত গল্প করছে আর মাঝে আমাকে একা একা বসিয়ে রেখেছে।
আন্টি, আমার হাবভাব দেখে বুঝতে পারলো আমার বিরক্ত লাগছে, আকাশ তোমার হয়তো বিরক্ত লাগছে আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি একটা কাজ করো উপরের রুমে আমার মেয়ে আছে ওর সাথে গিয়ে গল্প করো, আন্টি উপরের রুমটা দেখিয়ে দিলো।
আমি, উপরের রুমে গিয়ে গিয়ে দেখি আন্টির মেয়ে বসে বসে কি যেন করছে অন্যদিকে ফিরে।
এইযে আমি আসতে পারি মেয়েটা, আমার গলার আওয়াজ শুনে এই দিকে যখন ফিরলো আমি তো ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম, আল্লাহ এ তো মানহা..
মানহাও আমাকে দেখে অবাক।
আকাশ,তুমি...? মানহা, হা আমি কেন...?
আকাশ, তার মানে তুমিই আন্টির মেয়ে...?
মানহা, বুঝলাম না...?
আকাশ, এত কিছু তুমি বুঝবে না বাদ দাও,
আচ্ছা আমাকে ভিতরে আসতে বলবে না...?
মানহা, পাগল নাকি ভিতরে আসতে বলবো মানি তুমি কে...? চিনিনা জানি না ভিতরে কেন আসতে বলবো...?
আকাশ, মানহা কি বলছো এই সব...?
মানহা, হা ঠিকিই বলছি তুমি কে....?
আকাশ, ভুলে গেছো বিকালেই তো তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হলো...?
মানহা, কিসের সম্পর্ক কোথাকার সম্পর্ক? আমি কি পাগল নাকি যার তার সাথে সম্পর্ক করবো, আর বিশেষ করে তোমার মত লম্পট ছেলের সাথে তো ভুলেও না, ফেসবুকে সারাদিন মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকো, তোমার মত ছেলের সাথে আমি করতে যাবো সম্পর্ক...?
আকাশ, কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, বিকালেই তো ভালো ছিল মেয়েটা, এই অল্প সময়ের মধ্যে কি এমন হলো, আর আমি ফেসবুকে মেয়েদের সাথে কথা বলি সেটা সে কি করে জানলো, মাথার মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
মানহা, এই তুমি এখনো বেহায়ার মত দাঁড়িয়ে আছো, কথা কি বলেছি কানে ঢুকেনি...? বের হও আমার রুম থেকে এখনি...?
আকাশ, আরে কি এমন করলাম যে এমন বকাবকি করছো...?
মানহা, এই ছেছড়া কথা কম বলো, আর আমার রুম থেকে বের হও, না হয় কিন্তু খারাপ হবে,
আকাশ, মন খারাপ করে নিচে চলে আসে, নিচে এসে চেয়ারে বসে আছে।
আন্টি, আরে আকাশ চলে এলে যে..?
আকাশ, আসলে আন্টি উনি একটু কাজ করছেন, আর আমি এখানেই ঠিক আছি, আপনারা কথা বলুন..!
আম্মু আর আন্টি গল্প করছে, আর এদিকে আমার ভিতরে তো ফেটে যাচ্ছে, মাত্র বিকালেই রিলেশন করলাম, এক মাধান অতিক্রম না করতেই রিলেশন শেষ, কচুপোড়া কপাল এর থেকে ভালো ছিলো তো আমি মালিহার সাথে রিলেশন করতাম, নাহ বাসায় গিয়ে ওকে ফোন করবো।
কিন্তু উনাদের গল্পই তো শেষ হচ্ছে না, মরার মত চেয়ারের উপরে বসে আছি, বেশ রাতে হয়েছে বাসায় ফিরতে ফিরতে, ভাবতেছি মালিহাকে ফোন দিবো, পরে ভাবলাম নাহ বেশ রাত হয়ে গেছে এখন ফোন দিলে খারাপ দেখায় সকালে দিবো, কিন্তু মানহার ব্যবহারটা কোন ভাবেই ভুলতে পারছি না, কোন কারন ছাড়া সে আমায় কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো, এখন তো আমি মেয়েদের সাথে তেমন কথাও বলি না।
এই জন্যেই মানুষ বলে, যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে তুমি ভালোবাসো, তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে নয়, কারন তোমাকে যে ভালোবাসে সে তোমার জন্য করবে, আর তুমি যাকে ভালোবাসো তুমি তার জন্য করবে...!
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মালিহাকে ফোন দিলাম, ফোন ঢুকছে না নাম্বার বন্ধ আসছে,কিরে মেয়েটা ফোন কেন অফ করে দিলো।
সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেছে এর মাঝে মালিহাকে অনেকবার ফোন করেছি সে রিসিভ করেনি, এভাবে দিন পার হয়ে গেলো, মালিহার নাম্বার অফ, কেন জানি খুব খারাপ লাগছে মেয়েটার জন্য - ফেসবুক পরিচয় একটা মেয়ের জন্য এতটা খারাপ লাগছে মানুষ শুনলে পাগল বলবে।
এভাবে তিনদিন পার হয়ে গেলো মালিহা নাম্বার অপেন করার কোন নাম গন্ধ নাই, চতুর্থদিন মালিহা আমাকে নিজেই ফোন দিলো।
মালিহা, এই কি হয়েছে এতবার ফোন দিলে যে....?
আকাশ মালিহা আমার ভুল হয়ে গেছে আমি তোমায় ভালোবাসি....? মালিহা কেন এখন কেন....? আমি যখন বলেছি তখন তোমার এই সমস্তকিছু কোথায় ছিলো....?
আকাশ, প্লিজ রাগ করো না আচ্ছা তোমার সাথে আমি দেখা করতে চাই...?
মালিহা ইম্পসিবল তোমার মত ছেলের সাথে আমি কখনোই দেখা করবো না, আকাশ প্লিজ মালিহা একবার?
মালিহা, আচ্ছা যাও দেখা করবো, আজকে বিকালে অনন্যা পার্কে চলে এসো...?
আকাশ, বিকাল বেলা রেডি হয়ে অনন্যা পার্কে যায়,পার্কে গিয়ে বসে আছে মালিহা এখনো আসছে না,আকাশ পার্কের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছে, হটাৎ পাশে একটা গাছের নিচে নজর পড়ে, সে লক্ষ্য করে দেখে মানহা।
চলবে...
লেখকঃ- আকাশ মাহমুদ